Ajker Patrika

শরতের আকাশটা দেখুন

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)
আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮: ০৮
শরতের আকাশটা দেখুন

এই কদিনে আকাশটা দেখেছেন কেউ?

বৃষ্টি যদি না থাকে তাহলে দেখতে পাবেন নির্মল নীল আকাশের বুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে গুচ্ছ গুচ্ছ শুভ্র মেঘমালা। হ্যাঁ, সাদা মেঘের কথাই বলা হচ্ছে। মেঘদলের দিকে চোখ রাখলেই মনে হবে, সাদা শাড়িতে যেন একঝাঁক তরুণী নাচছে আকাশে। আর তারই নিচে বিস্তীর্ণ জলরাশিতে নীলাকাশের প্রতিচ্ছবি।

একটু বৃষ্টি। আবারও রোদ। দিগন্তজুড়ে সাতরঙা উদ্ভাসে ফুটে ওঠে রংধনু। মানিকগঞ্জে কাঠফাটা রোদ্দুরের পর হঠাৎ বৃষ্টি জুড়িয়ে দেয় মন। শরতের আকাশ কখনো ধোয়া-মোছা বা পরিচ্ছন্ন হয় না। সে তার নীলচে বুকে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘের আবরণকে ঢেকে রাখতে চায়। এককথায় স্বচ্ছ, নির্মল এক ঋতুর নাম শরৎ। ভাদ্র-আশ্বিন এ দুই মাস মিলে শরৎ ঋতু।

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার কালীগঙ্গা নদীর ধার ধরে এগোতেই চোখে পড়বে আকাশ-জলে এক মোহনীয় মায়াবী দৃশ্য। বাতাসের সঙ্গে সন্ধি করে নদীতে চলছে মৃদু ধ্বনি তোলা কয়েকটি পালতোলা ছোট নৌকা। আর দেখা যাবে শরতের কাশফুল।

নদীর পানি কমছে। কিছুদিনের মধ্যেই নদীর ধার ভরে উঠবে কাশফুলে। কত ধরনের ফুল ফুটেছে! এরই মধ্যে যদি অকস্মাৎ আপনার কানে আসে কৃষকের দরাজকণ্ঠে গান, তাহলে বুঝবেন গবাদিপশুর জন্য ঘাস কাটতে এসে ফুরফুরে হয়ে উঠেছে মানুষটার মন।

এর মধ্যে একদিন সময় করে আপনি যদি কোনো এক বিকেলে ঘিওরের বালিয়াখোড়া ও পেঁচারকান্দা এলাকার বিস্তীর্ণ আবাদি জমির চকে আসতেন, তাহলে নিশ্চিতভাবে দেখতে পেতেন কিশোর-কিশোরীদের শাপলা তোলার দৃশ্য। দেখতে পেতেন প্রকৃতির সঙ্গে নেচেছে মানুষের মনও। অনেকেই নৌকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। শাপলা-শালুক আর নীল জলের পটভূমিতে অনেকেই ধারণ করছেন নিজেদের ছবি।

নয়াজলে ফসলের জলকেলিতে যেন মিলন মেলা বসেছে কীটপতঙ্গের। ছোট ছোট পাখির বেপরোয়া দাপাদাপি ও মিষ্টি কলতানে মুখর হয়ে আছে জায়গাটা। শৌখিন মাছ শিকারিরা চোখ রেখেছেন জলে। মেঘের আনাগোনা আর কখনো রোদের ঝিলিক; শরতের স্নিগ্ধ বিকেলবেলার এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য কেবল গ্রামবাংলায়ই সম্ভব।

বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের বাষ্টিয়া, সিংজুরী চক, নিলুয়া বিলের চক, বানিয়াজুরী ইউনিয়নের রাথুরা চকে এখন পদ্ম-শাপলা-শালুকের রাজত্ব। রাথুরা চকে নৌকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে সব বয়সী মানুষ। তুলছে শাপলা। তুলছে ছবি। মুহূর্তে তা জায়গা করে নিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কথা হয় গৃহবধূ লতা খানম আর ফিরোজা আক্তারের সঙ্গে। বিকেলে নৌকায় ঘুরছিলেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল সন্তানেরা। 
‘এখানে আসেন কেন?’

দুজনেই বলেন, ‘শত ব্যস্ততার পরও এই সময়টা খুব উপভোগ করি। ছেলেমেয়েরাও খুব আনন্দ পায়।’

এসেছেন  স্থানীয় স্কুলশিক্ষিকা তানিয়া আফরোজ। তিনি বললেন, ‘শরৎ মানেই গাছে গাছে শিউলি ফোটার দিন। নদীর পাড়ে কিংবা জলার ধারে ফোটে কাশফুল। এ ঋতু আমার অনেক প্রিয়।’

শরতের এই সময়ে নদী ও বিস্তীর্ণ জলরাশির বিলে অনুষ্ঠিত হয় গ্রামবাংলার আদি সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ নৌকাবাইচ। মানিকগঞ্জের ৭টি উপজেলায় কমপক্ষে ৫০টি জায়গায় এই নৌকাবাইচে মানুষের মিলন মেলা বসে। এবারও তার দেখা পাওয়া যাবে। শরতের এই রূপ দেখতে হলে আপনাকে অবশ্যই প্রকৃতির কাছে আসতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত