Ajker Patrika

শান্ত নির্বাচনে ইভিএম নিয়ে ক্ষুব্ধ ভোটার

নাজমুল হাসান সাগর ও মো. আসাদুজ্জামান, গাজীপুর থেকে 
আপডেট : ২৬ মে ২০২৩, ১৫: ২৯
Thumbnail image

গাজীপুরের ধীরাশ্রম আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে সকাল ৮টায় ভোট দিতে এসেছিলেন মাইমুনা ইসলাম। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরও তিনি ভোট দিতে পারছিলেন না। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, পাঁচজন করে ভোটারকে ভোটকক্ষে ঢোকানো হচ্ছে। তাঁদের ভোট দেওয়া শেষ হতে প্রায় আধা ঘণ্টা লাগছে। তিনি এখনো ভোটকক্ষে যেতে পারেননি।

গতকাল বৃহস্পতিবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনেক কেন্দ্রেই দেখা গেছে ভোটে ধীরগতি। ভোটকক্ষের বাইরে লাইনে শতাধিক মানুষ থাকলেও এগোচ্ছিল ধীরে। এ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে ক্ষোভও দেখা যায়। কেউ কেউ দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে তর্কে জড়ান। কর্মকর্তারা বলেছেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) সম্পর্কে অনেকে না জানায় ভোট নিতে দেরি হচ্ছে।

গাজীপুরে এবারই প্রথম ইভিএমে ভোট হলো। নতুন এই পদ্ধতি ভোটারদের ভোট দিতে জটিলতায় ফেলতে পারে এমন সংশয় ছিল অনেকের। গতকাল প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে কোনো না কোনো কারণে আলোচনায় এসেছে ইভিএম।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনে গতকাল সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ করা হয়। তবে কিছু কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি থাকায় ৪টার পরও ভোট নেওয়া হয়।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম নির্বাচন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পর্যবেক্ষক ও বেশির ভাগ মানুষও সন্তোষ প্রকাশ করেন।

তবে যা কিছু সমস্যা, এর কেন্দ্রে ছিল ইভিএম। নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৮৬ জন। ৪৮০টি কেন্দ্রের জন্য ইভিএম ছিল ৫ হাজার ২৪৬টি। কেন্দ্র ঘুরে জানা গেছে, বয়স্ক ও নারী ভোটাররা ইভিএমে ভোট দিতে সমস্যায় পড়েন। কয়েকবার ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়া বোঝানোর পরও অনেকে উল্টাপাল্টা বাটন চেপেছেন। এ কারণে কোথাও কোথাও ইভিএম নষ্ট হয়েছে। একজনকে বোঝাতে কয়েক মিনিট লেগে যাওয়ায় ভোট গ্রহণ ধীর হয়ে গেছে।

টঙ্গীর মরকুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ড. মসউদ ইকবাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাঁর কেন্দ্রে ৮টি বুথ ও ১২টি ইভিএম রয়েছে। ভোট গ্রহণ শুরুর পর একটি ইভিএম নষ্ট হয়েছিল। পরে সেটি ঠিক করা হয়। সকাল ১০টার দিকে কেন্দ্র ঘুরে দেখার সময় আরেকটি ইভিএম নষ্ট পাওয়া যায়। সেটিও ঠিক করা হয়। তিনি জানান, বয়স্ক মানুষ অনেকে না বুঝে উল্টাপাল্টা চাপ দেওয়ায় ইভিএম নষ্ট হয়েছে। এতে ভোট গ্রহণ সাময়িক বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। একজনের ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্যজনের ভোট নেওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে সমস্যা আরও বেশি হয়। 

পোলিং এজেন্ট একজনের
টঙ্গীর বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী আজমত উল্লা খানের পোলিং এজেন্ট ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট পাওয়া যায়নি। নির্বাচনী কর্মকর্তারা বলেন, তাঁদের কাছে যে নাম জমা দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা সেগুলোই দেখছেন। এর বাইরে যাঁরা আসেননি, তাঁদের খবর জানেন না।

৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের রেনেসা নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কেবল নৌকার এজেন্ট দেখে জানতে চাইলে দায়িত্বরত কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তাঁর কাছে যেসব পোলিং এজেন্টের নাম জমা পড়েছে, তাঁরা সবাই নৌকার। অন্য কোনো প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট তিনি পাননি।

স্থানীয় অনেকে বলেন, টঙ্গীতে আজমতের প্রভাব বেশি থাকায় নৌকার এজেন্ট বেশি। অন্যদিকে গাজীপুর শহরের আশপাশে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের প্রভাব বেশি থাকায় সেখানে তাঁর মা জায়েদা খাতুনের পোলিং এজেন্ট আছেন।

গাজীপুরের কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোট দেওয়ার পর গোপনীয়তা ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছেন শহিদুল ইসলাম নামের এক ভোটার। তাঁর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এই কেন্দ্রে ইভিএমের ব্যালট ইউনিট পরিবর্তন করা হয়।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করে জানান, কোনো কেন্দ্রে ভোটার ভোট না দিয়ে ফেরত গেছেন এ রকম ঘটনা নেই। সকালে কোনো কোনো কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিতি বেড়েছে।

নারীদের সরব উপস্থিতি
প্রতিটি কেন্দ্রে নারী ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে। সকাল থেকেই ছিল নারী ভোটারদের লাইন। টঙ্গীর ১৫টি কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, পুরুষ কেন্দ্রের চেয়ে নারীদের কেন্দ্রে লাইন দীর্ঘ। তবে ইভিএম সম্পর্কে ধারণা না থাকায় নারীদের ভোট গ্রহণে একটু সমস্যায় পড়তে হয়েছে কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনিসুর রহমান বলেন, কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার অভিযোগ কেউ করেননি। গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, বেশ শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গাজীপুর সিটি নির্বাচন সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত