Ajker Patrika

গাজীপুরে হাতেম আলী কলেজের ছাত্র খুন, মোবাইলের সূত্র ধরে ৪ ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার

উত্তরা (ঢাকা) প্রতিনিধি
মাহফুজুর রহমান হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার চারজন। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাহফুজুর রহমান হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার চারজন। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরের টঙ্গীতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অধ্যয়নরত হাতেম আলী কলেজের ছাত্র মো. মাহফুজুর রহমান ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে খুন হন। এ ঘটনায় ছিনতাইকারী চক্রের সব সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। র‍্যাব জানিয়েছে, মাহফুজুরের মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের পর আরও দুটি মোবাইল ফোন ছিনতাই করে চক্রটি। পরে মাহফুজের মোবাইল ক্রয় করা ব্যক্তিকে হেফাজতে নিলে তাঁর দেওয়া তথ্যে একে একে চক্রের সব সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন হত্যার ঘটনায় মূল হোতা রাশেদুল ইসলাম (২০), কাওছার আহম্মেদ পলাশ (২৩), রাফসান জনি রাহাত (২৮) ও রাকিব ইসলাম (২৬)। তাঁরা মোটরসাইকেলে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে মোবাইল ফোন ছিনতাই করতেন। ছিনতাই করা মোবাইল ফোন বিক্রির টাকা দিয়ে মাদক ক্রয় করে সারা রাত সেবন ও উল্লাস করতেন।

উত্তরার র‍্যাব-১ কার্যালয়ে আজ রোববার (১৩ জুলাই) দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানান ব্যাটালিয়নটির সিপিসি-২-এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মুহাম্মদ আহনাফ রাসিফ বিন হালিম।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) রাতে গাজীপুরের টঙ্গী ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহফুজ। তাঁর নিথর মরদেহটি ব্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) একটি পিলারের পাশ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত মাহফুজের ভগ্নিপতি মো. জসিম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে টঙ্গী পশ্চিম থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

পরে গাজীপুরের টঙ্গী মাজার বস্তি ও উত্তরখানের আটিপাড়া এলাকায় গতকাল শনিবার (১২ জুলাই) বিকেলে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত মূল হোতা রাশেদুল ইসলামসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মেজর আহনাফ জানান, হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই র‍্যাব-১-এর গোয়েন্দা দল খুনিদের গ্রেপ্তারে ছায়া তদন্ত শুরু করে। অনুসন্ধানে র‍্যাব জানতে পারে, ঘটনার পর রাত ১টার দিকে মাজার বস্তিতে তিনটি মোবাইল বিক্রি করে ছিনতাইকারীরা। যার মধ্যে রিয়েলমি মোবাইলটি ছিল ভিকটিম মাহফুজের। তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় ওই মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বর সংগ্রহ করা হয়।

চারজনকে গ্রেপ্তারের পর র‍্যাবের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা
চারজনকে গ্রেপ্তারের পর র‍্যাবের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

এরই মধ্যে মোবাইল ক্রয় করা রাকিব ফোনটি আরেকজনের কাছে সাড়ে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় ওই মোবাইল ক্রেতাকে হেফাজতে নেওয়া হয়। তারপর তাঁকে মাজার বস্তির বিভিন্ন ছিনতাইকারীদের ছবি দেখানো হলে তিনি রাকিবকে শনাক্ত করেন।

পরে মাজার বস্তি থেকে রাকিবকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রথমে কাওছার আহম্মেদ পলাশ, তাঁর দেওয়া তথ্যে মাহফুজকে ছুরিকাঘাত করা ছিনতাইকারী রাশেদুল ইসলাম ও রাফসান জনি রাহাতকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মেজর আহনাফ আরও জানান, মোবাইল বিক্রেতা রাকিব আগে মাদক কারবারি ছিলেন। বর্তমানে ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে কম মূল্যে মোবাইল সংগ্রহ করেন এবং লাভজনক মূল্যে বিভিন্ন গ্রাহকের কাছে বিক্রি করেন। একই সঙ্গে ছিনতাইকারীরা রাকিবের কাছ থেকে সুইচ গিয়ার ও অন্যান্য ধারালো সরঞ্জামও সংগ্রহ করেছিলেন।

যেভাবে হত্যা করা হয় মাহফুজকে

মেজর আহনাফ জানান, ঘটনার দিন মাহফুজ বরিশাল থেকে একটি বাসে রাত সাড়ে ১১টার দিকে গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় আসেন। এদিকে ছিনতাইকারী চক্রের রাশেদ ও পলাশ টঙ্গী মাজার বস্তিতে মাদক সেবন করেন এবং রাকিবের কাছ থেকে ধারালো অস্ত্র সংগ্রহ করে রাহাতসহ মোটরসাইকেলে করে তিনজন টঙ্গীতে আসেন। তখন মাহফুজকে রাত ১১টা ৩৭ মিনিটে ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন মাহফুজ ছিনতাইকারীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করলে রাশেদ ভিকটিম মাহফুজকে ছুরিকাঘাত করেন এবং পলাশ মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে রাশেদের মোটরসাইকেলযোগে তাঁরা পালিয়ে যান।

তিনি আরও জানান, ভিকটিমকে হত্যা ও ছিনতাইয়ের ঘটনাটি সম্পন্ন করতে মাত্র ৩০ সেকেন্ড থেকে এক মিনিট সময় লেগেছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে ঘটনাস্থলেই ছাত্র মাহফুজ মারা যান।

এদিকে ছিনতাইকারীরা কুর্মিটোলা এলাকায় গিয়ে আরেকটি স্যামসাং মোবাইল ছিনতাই করেন। সেখান থেকে উত্তরার জসিম উদ্দিন এলাকায় এসে আরও একটি মোবাইল ছিনতাই করেন। এরপর তাঁরা টঙ্গীর মাজার বস্তিতে গিয়ে রাকিবের কাছে তিনটি মোবাইল বিক্রি করেন।

গ্রেপ্তার রাকিবের বরাতে মেজর আহনাফ জানান, এর মধ্যে ওই তিনজন ছিনতাই করা তিনটি মোবাইল ফোন নিয়ে রাকিবের কাছে আসেন বিক্রি করতে। এ সময় পলাশের হাতে রক্ত দেখতে পেয়ে ঘটনায় বিষয় জানতে চান রাকিব। তারপর রাকিব রাশেদ ও পলাশকে জানান, মাহফুজকে হত্যার ঘটনায় তাঁদের এলাকায় এসে ছিনতাইকারীদের খুঁজছে পুলিশ। এ খবর শুনে রাশেদ ও পলাশ মোবাইল বিক্রির টাকা না নিয়েই আত্মগোপনে চলে যান। এর আগে তাঁরা শরীরের রক্তের দাগ পরিষ্কার করে যান।

গ্রেপ্তার ছিনতাইকারী ও হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যা মামলার আসামি দুই ভাই নেত্রকোনায় গ্রেপ্তার

‘নৌকা আউট, শাপলা ইন’, সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে এনসিপির চাওয়া

পারটেক্স এমডি রুবেল আজিজের ১১৬ কোটি টাকার সম্পত্তি নিলামে তুলছে ব্যাংক এশিয়া

যশোরে কেন্দ্রের ভুলে বিজ্ঞানের ৪৮ জন ফেল, সংশোধনে জিপিএ-৫ পেল সবাই

জরুরি অবস্থা ঘোষণায় লাগবে মন্ত্রিসভার অনুমোদন, প্রস্তাবে একমত রাজনৈতিক দলগুলো

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত