Ajker Patrika

খাসজমি ইজারা নিয়ে নিজের জমিতে 'পল্লী হাট' সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

  • ক্ষমতার অপব্যবহার করে এ কাজ করেছেন সাবেক মন্ত্রী জাহিদ মালেক।
  • ইজারাকৃত জমিতে না বসিয়ে নিজ মালিকানাধীন জমিতে বসিয়েছেন হাট।
  • প্রতিদিন সেখান থেকে আদায় করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা খাজনা।
সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি 
আপডেট : ২১ মে ২০২৫, ১১: ৫৫
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া ইউনিয়নের কামতা এলাকায় নিজের জমিতে গড়া সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের পল্লী হাট। ছবি: আজকের পত্রিকা
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া ইউনিয়নের কামতা এলাকায় নিজের জমিতে গড়া সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের পল্লী হাট। ছবি: আজকের পত্রিকা

পাশে সরকারি ইজারাকৃত জমি, তবে সেখানে হাট বসানো হয়নি। ক্ষমতার অপব্যবহার করে কাছে থাকা নিজের মালিকানাধীন জমিতে বসানো হয়েছে সেই ‘পল্লী হাট’। কাজটি করেছেন সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ইজারার জমি পড়ে রয়েছে। হাট বসানো হয়েছে মন্ত্রীর কেনা জমিতে। প্রতিদিন হাট থেকে আদায় করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকার খাজনা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২১ সালে মন্ত্রী থাকাকালে জাহিদ মালেক মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া ইউনিয়নের কামতা এলাকায় প্রায় পাঁচ একর জমি নিজের নামে রেজিস্ট্রি করান। পরে সেখানে ইটের সলিংসহ স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করে গড়ে তোলেন এই পল্লি হাট।

হাটটিকে বৈধতা দিতে প্রায় ৩০০ ফুট দূরে ২৬ শতাংশ সরকারি জমি সরকারের নামে ওয়াক্ফ দেখিয়ে সেখানে হাটের কাগজপত্র তৈরি করা হয় এবং সেটি তাঁর ছেলে ইজারা নেন। কিন্তু বাস্তবে হাট বসানো হয় মন্ত্রীর কেনা জমিতে। আর সরকারি ইজারাকৃত জমি পড়ে রয়েছে অবহেলায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অধীনে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) প্রকল্পের সাধারণ বরাদ্দ থেকে একটি বরাদ্দ নিয়ে ও একই অর্থবছরে আরও একটি বিশেষ প্রকল্প বরাদ্দ নিয়ে নিজ সম্পত্তির ওপর ইটের সলিং করেন জাহিদ মালেক। যদিও এই প্রকল্পের অর্থ পল্লি হাটের পাশের স্থানের নামে এসেছিল। কিন্তু ইউপি সদস্যদের সহযোগিতায় সাবেক এই মন্ত্রী সরকারি বরাদ্দের টাকা নিজের কবজায় নিয়ে নিজ সম্পত্তিতে ব্যয় করেছেন।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সাটুরিয়ার প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় থেকে ধানকোড়া ইউনিয়নের পল্লী হাটের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য কাবিখা প্রকল্প থেকে দুটি অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কাবিখা প্রকল্পের অধীনে পল্লি হাটের উত্তর-পূর্বের ফ্ল্যাট সলিংয়ের জন্য সাধারণ বরাদ্দ থেকে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৯৯০ টাকা দেওয়া হয়। ওই প্রকল্পের সভাপতি ছিলেন ধানকোড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সংরক্ষিত সদস্য ময়না বেগম। ময়না বলেন, ‘আমাকে একটি প্রকল্পের সভাপতি করে কাজের দায়িত্ব দেন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ।’ তবে এর চেয়ে বেশি কিছু তিনি জানেন না বলে মন্তব্য করেন।

একই অর্থবছরে বিশেষ বরাদ্দ থেকে হাটের উত্তর পাশের ইট সলিংয়ের জন্য ৫ লাখ ৭১ হাজার ৪৯২ টাকা দেওয়া হয়। এই প্রকল্পের সভাপতি ছিলেন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ। এ বিষয়ে জানতে রউফের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী বলেন, সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকে জাহিদ মালেক নিজের ভাগ্যোন্নয়নে সক্রিয় হন। যখন তাঁকে আওয়ামী লীগ সরকার মন্ত্রিত্ব দেয়, তখন থেকে মাফিয়া হয়ে ওঠেন। নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে নিজের সম্পত্তি ভরাট করেন। জমি ভরাটের পর কয়েক লাখ টাকা সরকারি বরাদ্দের অর্থ দিয়ে নিজের জমিতে ইটের সলিং করে নেন।

গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সাবেক এই মন্ত্রী বিদেশে থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সার্বিক বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা খলিলুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘এসব প্রকল্পের কাজ আমার সময় হয়নি। আমার আগের কর্মকর্তার সময় হয়েছে। তবে সরকারি অর্থে কোনো ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের কাজ করার নিয়ম নেই। যদি কেউ করে থাকেন, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত