Ajker Patrika

আঙুরের মাচায় ঝুলছে আতিকুল্লাহর স্বপ্ন

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২৩, ১০: ৪৫
আঙুরের মাচায় ঝুলছে আতিকুল্লাহর স্বপ্ন

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের বরাইয়া গ্রামের মো. আতিকুল্লাহর বাগানে ফলেছে আঙুর। মিষ্টি জাতের এই আঙুর চাষ করে ইতিমধ্যে তিনি এলাকায় সাড়া ফেলেছেন। তাঁর প্রায় এক বিঘা জমির মাচায় থোকায় থোকায় ঝুলছে আঙুর। ষাটোর্ধ্ব এই কৃষক এখন মাচার আঙুর বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করার স্বপ্ন দেখছেন।

আতিকুল্লাহর বাগানের আঙুর দেখতে মানুষ ভিড় করছে। অনেকে তাঁর কাছ থেকে আঙুর চাষের পরামর্শ ও চারা সংগ্রহও করছেন। এই অঞ্চলের মাটিতে আঙুর চাষ করতে দেখে যাঁরা আতিকুল্লাহকে নিয়ে উপহাস করেছিলেন, তাঁরা এখন প্রশংসা করছেন।

আতিকুল্লাহ জানান, আঙুর চাষ নিয়ে ইউটিউবে অনেক ভিডিও দেখেন তিনি। ২০২২ সালে চুয়াডাঙ্গা থেকে কুরিয়ারের মাধ্যমে ৫৫০ টাকা দরে ভারতীয় চয়ন জাতের ১০টি চারা কিনে আনেন তিনি। শুরু করেন চাষ। তবে শুরুটা ভালো হয়নি। কিন্তু সহজে দমে যাননি। পরে সফল হন আঙুর গাছে ফলন আনতে। এ বছর দুই জায়গায় একই জাতের ৫০টি চারা দিয়ে বড় আকারে চাষ শুরু করেছেন। চারা রোপণের সাত মাসের মধ্যে গাছে ফল আসা শুরু করেছে। স্বপ্ন দেখছেন বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করার।

আঙুর চাষের পাশাপাশি চারা উৎপাদনও করছেন কৃষক আতিকুল্লাহ। তাঁর আঙুরের বাম্পার ফলন দেখে আশপাশের কৃষকেরা উদ্বুদ্ধ হয়ে এটি চাষে ঝুঁকছেন। স্থানীয় বিভিন্ন ব্যক্তি ও নার্সারির মালিক তাঁর কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করতে আসেন। তিনি প্রতিটি আঙুরের কলম ২০০ টাকায় বিক্রি করছেন।

কৃষক আতিকুল্লাহ বলেন, ‘প্রথমবার সাত মাসের মাথায় গাছগুলোতে আঙুর ধরেছিল। ২০-২৫ মণ ফল পাই। তবে প্রথম পাওয়া একটি ফলও বিক্রি না করে এলাকার মানুষকে বিলিয়ে দিয়েছি। দ্বিতীয়বারও গাছে বেশ ফল হয়েছে। এবারও বিক্রি করব না।’ যাঁরা বাগানে আসেন, তাঁদের বিনা মূল্যে দিয়ে দেবেন বলে জানান তিনি।

বাগানের আঙুর পরিচর্যা করছেন মো. আতিকুল্লাহআট ফুট দূরত্বে আঙুর গাছের চারা লাগিয়েছেন বলে জানান আতিকুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘চারা লাগানোর আগে জমি প্রস্তুত করে প্রতিটি গর্তে পাঁচ কেজি বিভিন্ন উপাদান দেওয়া হয়। সেগুলো হচ্ছে ইটের গুঁড়া, মোটা বালু ও জৈব সার। এগুলো তিন ফুট গর্ত করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে গর্তে দেওয়া হয়। প্রতিটা গাছের গোড়া মাটি দিয়ে উঁচু করা, যাতে গোঁড়ায় পানি না জমে। আঙুর গাছ যাতে দ্রুত লম্বা হতে পারে এ জন্য উঁচু করে সিমেন্টের খুঁটি দিয়ে মাচা তৈরি করেছেন।’ আঙুরগাছে ৩০ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায় বলে জানান তিনি। 

আতিকুল্লাহর স্ত্রী নূর আক্তার জানান, আঙুরের বাগান নিয়ে তাঁর স্বামী বেশ খাটা-খাটনি করেন। প্রচণ্ড খরার মধ্যেও বাগানে দুই ঘণ্টা পানি দেওয়ার কাজ করেন। স্বামীর কাজে তিনি মাঝেমধ্যে সহযোগিতা করেন। 

বরাইয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম আব্দুস সালাম বলেন, ‘আতিকুল্লাহ অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে বাগানে আঙুর উৎপাদন করছেন।’ বরাইয়া গ্রামের যুবক পারভেজ ব্যাপারী বলেন, ‘আতিকুল্লাহ নানার বাগান দেখে আমরা এলাকার যুবকেরা অনুপ্রাণিত। ষাটোর্ধ্ব এই ব্যক্তি পারলে আমরাও পারব।’

কালীগঞ্জ উপজেলা উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘কৃষি অফিসের সহযোগিতায় সার ব্যবস্থাপনা, পানি ব্যবস্থাপনা ও জৈবিক বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কোনো কীটনাশক ছাড়াই আঙুরের চাষ করছেন আতিকুল্লাহ।’

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা তাসলিম বলেন, ‘দেশে চাষোপযোগী ফলন ও মিষ্টি বেশি হবে এমন জাত যদি উদ্ভাবন করতে পারি, তাহলে যেসব কৃষক শৌখিনভাবে আঙুর চাষ করছেন, তাঁরা আগামীতে বাণিজ্যিকভাবে চাষে ঝুঁকবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত