Ajker Patrika

ঈদের ছুটিতে জবির হলে ছাত্রীরা, ‘ডেকে শাসালেন’ প্রভোস্ট

জবি সংবাদদাতা 
আপডেট : ১৬ জুন ২০২৪, ১৬: ২৬
Thumbnail image

ঈদুল আজহার ছুটিতে বাড়িতে না গিয়ে হলে অবস্থান করায় হলে থাকা ছাত্রীদের ডেকে নিয়ে শাসানোর অভিযোগ উঠেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দীপিকা রাণী সরকার ও সহকারী হাউস টিউটর দীপিকা মজুমদারের বিরুদ্ধে। এসব নিয়ে অভিযোগ দিলে বা কথা বললে ছাত্রীদের হলের সিট বাতিলের হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ছাত্রীরা। 

গতকাল শনিবার দুপুর ১২টার দিকে হলের অফিসরুমে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের পর পরীক্ষা থাকায় এবং অনেক ছাত্রী হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ায় ঈদের ছুটিতে বাড়িতে না গিয়ে হলেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ঈদের ছুটিতে হল বন্ধ রাখার কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় প্রায় ২০ জনের মতো ছাত্রী বাড়িতে না গিয়ে হলেই অবস্থান করেন। 

শনিবার দুপুর ১২টার দিকে হলে অবস্থান করা ছাত্রীদের হল প্রভোস্টের অফিসরুমে ডেকে নেন প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দীপিকা রাণী সরকার ও সহকারী হাউস টিউটর দীপিকা মজুমদার। এ সময় দু-তিনজন ছাত্রী সেখানে গেলে তাঁদের বকাঝকা করেন তাঁরা। পরে আরও কয়েকজন ছাত্রী গেলে তাঁদেরও বকাঝকা করা হয়। এ সময় ছাত্রীরা ঈদের ছুটিতে বাড়ি না যাওয়ায় স্টাফরা ছুটি পাননি বলে বকাঝকা করেন এবং ছাত্রীদের শাসান হল প্রভোস্ট ও হাউস টিউটর। 

হলের ডিউটি করতে গিয়ে প্রভোস্ট তাঁর মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে যেতে পারেননি এমন উদাহরণ টেনে ছাত্রীদের বকাঝকা করা হয়। এসব নিয়ে মুখ খুললে কিংবা আন্দোলন করলে ছাত্রীদের হলের সিট বাতিল করে দেওয়া হবে বলেও হুমকি দেন হল প্রভোস্ট। এ ঘটনার পর থেকে ভয়ে এবং বাধ্য হয়ে হলে অবস্থান করা অনেক ছাত্রীই হল ত্যাগ করছেন। অনেকেই হল ত্যাগ করে ঢাকায় আত্মীয়ের বাসায় উঠেছেন। আবার অনেকেই নিজেদের বাড়ির দিকে রওনা হয়েছেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হলে অবস্থান করা এক ছাত্রী বলেন, ‘আমার ঈদের পর পরীক্ষা থাকায় ও হিন্দু হওয়ায় আমি এবার ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যাইনি। গতকাল (শনিবার) দুপুরে প্রভোস্ট ম্যাম এবং সহকারী হাউস টিউটর দীপিকা মজুমদার ম্যাম আমাদের অফিসে ডাকেন। আমরা সেখানে গেলে, কেন ছুটিতেও এখানে আছি, তা নিয়ে বকাঝকা করেন। আমাদের কারণে স্টাফরা ছুটি পাননি, প্রভোস্ট ম্যাম তাঁর মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে যেতে পারেননি—এসব উদাহরণ টেনে টেনে আমাদের বকাঝকা করেন। পরের সব ঈদেই হল বন্ধ রাখা হবে বলে তিনি আমাদের বলেন। এসব নিয়ে কথা বললে বা আন্দোলন করলে হলের সিট বাতিল করে দেওয়া হবে বলেও তিনি হুমকি দেন।’ 

হলে অবস্থানরত আরেক ছাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গতকালের এ ঘটনার পর থেকে অনেকেই ভয়ে হল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। যাঁদের বাসা দূরে, শুধু তাঁরাই যেতে পারছেন না। কেউ কেউ ঢাকার আত্মীয়স্বজনের বাসায় যাচ্ছেন। তাঁরা আমাদের অভিভাবক। আমাদের সুবিধা-অসুবিধা তাঁরা না বুঝলে আর কে বুঝবেন? অথচ এভাবে ডেকে আমাদের বকাঝকা করলেন। আমরা ভয়ে আছি, এসব কথা বলার কারণে আমাদের আবার ডেকে নিয়ে হলের সিট বাতিল করে দেয় কি না।’ 

এ বিষয়ে জানতে সহকারী হাউস টিউটর দীপিকা মজুমদারকে কল দেওয়া হলে তিনি অভিযোগের বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে অস্বীকার করেন। 

হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দীপিকা রাণী সরকার বলেন, ‘তাদের (শিক্ষার্থীদের) বকাঝকা করা হয়েছে এটা মিথ্যা কথা। আমি আরও তাদের ডেকে নিরাপদে থাকার জন্য পরামর্শ দিয়েছি। তাদের বলেছি, দেখো, আমার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী, সেখানে না গিয়ে তোমাদের দেখতে চলে এসেছি। তোমরা আমার মেয়ের মতো। সবাই সাবধানে থাকবে। তারা হয়তো সেটা ভুল বুঝে উল্টাপাল্টা কথা বলে অভিযোগ করেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত