Ajker Patrika

বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস: অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রতিদিন জন্ম নিচ্ছে শত রোহিঙ্গা শিশু

ইফতিয়াজ নুর নিশান, উখিয়া (কক্সবাজার)
আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৩, ১২: ৪৬
Thumbnail image

কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরগুলোতে প্রতিবছরই বাড়ছে নিজ দেশ মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা। বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) যৌথভাবে করা সর্বশেষ প্রকাশিত (৩১ মে) জনসংখ্যা পরিসংখ্যানে জানা গেছে, কক্সবাজার ও ভাসানচরের ৩৪টি ক্যাম্পে বাস করা সহায়তা পাওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ৯ লাখ ৬১ হাজার ১৭৫ জন। তবে বেসরকারি হিসেবে নির্যাতিত এই জনগোষ্ঠীর সাড়ে ১২ লাখের বেশি মানুষ বর্তমানে বাংলাদেশে বাস করছে। 

ইউএনএইচসিআর ২০২২ সালে জানিয়েছিল, প্রতিদিন গড়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৯০ জন শিশু জন্ম নেয়। তবে এই এক বছরে রোহিঙ্গা জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং সহায়তা পান না এমন রোহিঙ্গারা হিসাবের বাইরে থাকায় ধরে নেওয়া যায় প্রতিদিন জন্ম নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুর সংখ্যা এখন ১০০ কিংবা তার বেশি। এই রোহিঙ্গা শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছে তাদের পরিবার।

এক বছর আগে (২০২২ সালের জুন) ইউএনএইচসিআরের রেজিস্ট্রেশন সেক্টরের আওতায় নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত শরণার্থী মিলিয়ে সহায়তা পায় এমন রোহিঙ্গার সংখ্যা ছিল ৯ লাখ ২৯ হাজার ৬০৬, অর্থাৎ গেল এক বছরেই এ সংখ্যা বেড়েছে ৩১ হাজার ৫৬৯। 

একই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে নতুন করে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ছিল ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯৭২।   

ইউএনএইচসিআরের হিসাবে গত ছয় বছরে ১ লাখ ৮৭ হাজার ২০৩ জন শিশু জন্ম নিয়েছে। তবে জন্ম নেওয়া অনেক রোহিঙ্গা শিশু হিসেবে না আসায় প্রকৃত সংখ্যাটা আরও বেশি। 

ইউএনএইচসিআরের তথ্যে জানা যায়, ১ লাখ ৯৮ হাজার ৯১০ আশ্রিত পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ৫২ শতাংশই শিশু, যাদের ৭ শতাংশের বয়স অনূর্ধ্ব ৪ বছর। এ ছাড়া ৫-১১ বছর বয়সী শিশু ১১ শতাংশ। 

উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গা বাস করে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের ১৫ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে, যা সংখ্যায় ৫৬ হাজার ৫৭৬। 

এই রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম হয়েছে বাংলাদেশেইএই ক্যাম্পের ডি-৯ ব্লকের বাসিন্দা মোহাম্মদ  আইয়ুব (২৯)। মাত্র এক সপ্তাহ আগেই তৃতীয় সন্তানের বাবা হয়েছেন এই রোহিঙ্গা যুবক। মা-বাবা ও তিন ভাই-বোনসহ বাংলাদেশে আসার এক বছর পর ২০১৮ সালের শেষের দিকে বিয়ে করেন তিনি। পাঁচ বছরে তার পরিবারে যোগ হয়েছে স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে। 

আশ্র‍য়জীবনে নিজের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত আইয়ুব বলেন, ‘নিজের দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছি বাঁচার জন্য। আমার ঘরে এখন তিন সন্তান আছে, যদি আমরা মিয়ানমারে ফিরতে না পারি, জানি না তাদের ভাগ্যে কী লেখা আছে।’ 

আজ ১১ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বৃদ্ধির হার, বিশ্বের জনবহুল দেশগুলোর একটি বাংলাদেশের জন্যও তৈরি করছে নানা প্রতিকূলতা।

এদিকে ক্যাম্প এলাকায় বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় থাকার ফলে প্রতিদিনই ঘটছে হত্যাকাণ্ড, অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধ। শিশুদের নিরাপত্তা নিয়েও অভিভাবকদের মাঝে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা কাজ করছে। 

গত শুক্রবার উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসা-আরএসওর সংঘর্ষে প্রাণ হারায় পাঁচজন। গেল এক সপ্তাহেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আটটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। 

রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জুবায়ের আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রতিদিন বিভিন্ন ঘটনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্থিরতা বিরাজ করে, এর প্রভাব পড়ছে শিশুদের মধ্যেও। তারা ট্রমায় ভুগছে, অভিভাবকেরা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। এসব থেকে উত্তরণে প্রত্যাবাসনের বিকল্প নেই।’ 

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শামসুদ্দৌজা নয়ন বলেন, ‘আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার প্রায় সাড়ে ৩ শতাংশ। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও মিয়ানমারে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক শোষণ ও তীব্র বৈষম্যের কারণে বাংলাদেশে মানবিক আশ্রয় নেওয়া এই জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দেওয়া অব্যাহত আছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারীদের খেলায় আর নাক গলাবে না, দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইল ভাঙচুরকারীরা

বিয়ে করলেন সারজিস আলম

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়ছে শ্রীলঙ্কা, ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচ কোথায় দেখবেন

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় ফরিদপুরের ২ জনকে গুলি করে হত্যা

সাবেক শিক্ষার্থীর প্রাইভেট কারে ধাক্কা, জাবিতে ১২ বাস আটকে ক্ষতিপূরণ আদায় ছাত্রদলের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত