Ajker Patrika

মায়ের কান্না সহ্য হতো না, ক্ষোভ থেকে চাচি ও তাঁর শিশুকে হত্যা কিশোরের

চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২৩, ১৬: ০৭
মায়ের কান্না সহ্য হতো না, ক্ষোভ থেকে চাচি ও তাঁর শিশুকে হত্যা কিশোরের

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে পৈতৃক সম্পত্তির ভাগবাঁটোয়ারা নিয়ে পূর্ববিরোধকে কেন্দ্র করে ঘুমন্ত চাচি ও তাঁর শিশুসন্তানকে লাকড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে এক কিশোর। ওই কিশোরকে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শুভ রঞ্জন চাকমা। 

ঘটনাটি ঘটেছে চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকার পাঁচরা গ্রামে। হত্যাকাণ্ডের শিকার গৃহবধূ আয়েশা আক্তার নিপা ওই গ্রামের দুবাইপ্রবাসী আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতে আয়েশা আক্তার নিপা ও তাঁর আট বছর বয়সী শিশু আলী আহসান মুজাহিদকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ ভোররাতে অভিযান চালিয়ে ওই কিশোর ও তাঁর ভাই মঈনুল হাসান শুভকে আটক করেছে। এ ঘটনায় পরে নিপার বাবা জালাল আহমেদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা কয়েক জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন। 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা জানান, হত্যাকাণ্ডের শিকার গৃহবধূ আয়েশা আক্তার নিপার স্বামী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে তাঁর বড় ভাই মো. সিরাজ ও মেজ ভাই মীর হোসেনের দীর্ঘদিন যাবৎ পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে এলাকায় ও থানায় একাধিকবার সালিশ হয়। বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রায় সময় তাদের মধ্যে ঝগড়া লেগে থাকত। ঝগড়া শেষে আটক কিশোরের মা ফাতেমা বেগম সন্তানদের সামনে কান্নাকাটি করতেন। এ নিয়ে সন্তানদের মধ্যে একটা ক্ষোভ কাজ করত। আটক কিশোর একই এলাকার স্থানীয় কওমি মাদ্রাসার কিতাব বিভাগের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। ঈদের ছুটি থাকায় সে বাড়িতেই অবস্থান করছিল। গতকাল সন্ধ্যা থেকে সে নিরুদ্দেশ ছিল। 

ওসি আরও বলেন, ‘আমরা হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ঘরের ভেতর বিছানায় গৃহবধূর রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখি। লাশের পাশে রক্তমাখা লাকড়ির তিনটি টুকরা ও ঘরের সিঁড়িতে একটি টুপি পাওয়া যায়। এ সময় আমাদের ওই কিশোরের বড় ভাই মঈনুল হাসান শুভ জানায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে তাঁর ছোট ভাইকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তখনই সন্দেহ হয়, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ওই কিশোর জড়িত থাকতে পারে। তাৎক্ষণিক তার মাদ্রাসায় খোঁজ নিয়ে সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে ভোররাতে মাদ্রাসার শিক্ষকেরা আমাদের খবর দেয়, সে মাদ্রাসায় এসে ঘুমাচ্ছে। আমরা তাকে ভোররাতেই মাদ্রাসা থেকে আটক করে থানায় নিয়ে আসি।’ 

ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদে ওই কিশোর পুলিশকে বলে, সম্পত্তির বিরোধকে কেন্দ্র করে চাচা ও জেঠাদের সঙ্গে তার মায়ের ঝগড়া হতো। মা তাদের সামনে কান্নাকাটি করতেন। বিষয়টি তার সহ্য হতো না। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সে ঘরের ছাদের সিঁড়ির রুম দিয়ে কৌশলে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে লুকিয়ে ছিল। এ সময় তার চাচি ও চাচাতো ভাই পার্শ্ববর্তী আজিজুল ইসলামের বাড়িতে দাওয়াতে ছিল। গভীর রাতে চাচি লাইট জালিয়ে ঘুমিয়ে পড়লে ঘরের ভেতরে থাকা শক্ত লাকড়ি দিয়ে প্রথমে চাচিকে সজোরে মাথায় আঘাত করে। এ সময় চাচি বাঁচার জন্য চিৎকার করলে পাশে ঘুমিয়ে থাকা শিশু আলী আহসান মুজাহিদ জেগে উঠলে তাকেও সজোরে আঘাত করে হত্যা করে ঘরের ছাদের পাশের গাছ দিয়ে নিচে নেমে পালিয়ে যায়। 

আটক কিশোরের মা ফাতেমা বেগম বলেন, ‘আমি এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমরা তিন জা একসঙ্গে গত রাতে দাওয়াতে ছিলাম। রাতে চিৎকার শুনে সবার মতো আমিও ঘর থেকে বের হয়ে জানতে পারি, আমার জা ও তার শিশুসন্তান খুন হয়েছে। এখন পুলিশের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, আমার ছেলে নাকি এই দুজনকে হত্যা করেছে।’ 

হত্যাকাণ্ডের শিকার আয়েশা আক্তার নিপার বাবা জালাল আহমেদ বলেন, তাঁর মেয়ের জামাই আনোয়ার হোসেনের ভাইয়ের ছেলে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে পুলিশের কাছে শিকার করেছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমার মেয়েকে সম্পত্তির জন্য তাঁর ভাশুর পুত্ররা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যা করেছে। আমি এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই।’ 

চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, ‘ইতিমধ্যে মা ও ছেলেকে হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটন করা হয়েছে। গৃহবধূর বাবা জালাল আহেমদ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনার মূল আসামি কিশোরকে হেফাজতে আনা হয়েছে।’ 

চৌদ্দগ্রাম ও নাঙ্গলকোট সার্কেলের এএসপি জাহিদুল ইসলাম বলেন, পারিবারিক বিরোধের কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কিশোরকে পুলিশি হেফাজতে আনা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি না, তা তদন্ত করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত