Ajker Patrika

এ যুগের সাপুড়ে মিজানুর রহমান

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
এ যুগের সাপুড়ে মিজানুর রহমান

তিনি কোনো সাপুড়ের বংশধর নন। পথে পথে ঘুরে কোনো সাপের খেলাও দেখান না। তবুও সাপ ধরা তাঁর কাছে যেন হাতের মোয়া। অজগর হোক বা গোখরো, সবই তাঁর কৌশলের কাছে অনায়াসে বশ মানে। ফণা গুটিয়ে ধরা দেয় তাঁর জালে। 
 
যে সাপই হোক না কেনো, তিনি সাপটি ধরতে সময় নেন মাত্র ২৫ থেকে ৩০ সেকেন্ড। গত দশ বছরে কম করে হলেও ধরেছেন ৫ শতাধিক সাপ। যার ৩০০ শতাধিকই বিষধর। এই তালিকায় আছে বড় কাল কেউটে, ছোট কাল কেউটে, পদ্ম গোখরো, চন্দ্রবোড়া, অজগর ও শঙ্খিনীসহ ভয়ানক সব সাপ। 
 
সাপ ধরার নেশাটা শুরু হয় ২০১০ সালে। তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। কে জানত সেই নেশায় একসময় তাঁর পেশা হয়ে দাঁড়াবে। বলছিলাম চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ বাংলাদেশের একমাত্র ভেনম রিসার্চ সেন্টারের সহকারী গবেষক মিজানুর রহমানের কথা। প্রাণী আর পাখি নিয়ে আগ্রহ তাঁর। এরপরও তিনি বনে গেছেন একজন সাপ গবেষক, অর্থাৎ এই যুগের সাপুড়ে। 

শুরুর গল্প শোনাতে গিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, ‘তখন আমি ক্যাম্পাসে পাখিদের নিয়ে কাজ করি। সাপ নিয়েও ব্যাপক আগ্রহ আমার। একবার এক শিক্ষকের বাসায় একটি দাঁড়াশ সাপ ঢুকে পড়েছিল। সেটি শুনে সাহস করে চলে গেলাম ধরতে। কামড়ও খেয়েছিলাম। তবুও সাপটিকে ছাড়িনি। এভাবেই সাপ ধরার শুরু আমার।’ 

বিষধর আর বিষহীন মিলিয়ে ৫ শতাধিক সাপ ধরেছেন এই আধুনিক সাপুড়ে। তিনি বলেন, এসবের বেশির ভাগই গোখরো, প্রায় ২০০টির মতো হবে। এ ছাড়া কেউটে সাপ ধরেছি ২০টির মতো, শঙ্খিনী ১৫টি, অজগর ৮ থেকে ১০টি, চন্দ্রবোড়াও আছে ৫ থেকে ৭টি। গত দশ বছরে ২০টি জেলায় ঘুরে আমি সাপ ধরেছি। ২০১৯ সালের চাঁদপুরের হাইমচরে একটি চন্দ্রবোড়া (রাসেল ভাইপার) সাপ ধরতে গিয়ে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে ফিরেছিলাম। 

ভেনম রিসার্চ সেন্টারের সহকারী গবেষক মিজানুর রহমানসেই ঘটনাকে তুলে ধরে তিনি আজকের পত্রিকার কাছে বলেন, ‘একটি লেবু গাছের নিচ থেকে সাপটিকে ধরে একটু দূরে এনে ব্যাগে ঢোকানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। তখন হঠাৎ করেই সাপটি আমার পায়ের ঊরু লক্ষ্য করে তীরের মতো ছুটে আসে। বিদ্যুৎবেগে পা সরিয়ে নেই আমি। সাপটি আমার পায়ের পাশ ঘেঁষে গিয়ে সামনে গিয়ে পড়ে। এসব ঘটে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই।’ 

কেউটে সাপ ধরাটা অনেক চ্যালেঞ্জিং জানিয়ে মিজান বলেন, এই কেউটে সাপ ধরতেই সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে আমার। এরা খুব দ্রুত পালিয়ে যায়। ২০১৮ সালে এক রাতেই চবি ক্যাম্পাস থেকে তিনটি কেউটে সাপ ধরেছিলাম। জীবনে কোনো কিং কোবরা ধরতে না পারার একটা আফসোস আছে আমার। এই সাপের মুখোমুখি হওয়ার অপেক্ষায় আছি আমি। 

কেবল সাপ ধরাতেই পারদর্শী নন আধুনিক এই সাপুড়ে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে তার ৭টি গবেষণাপত্র। এর মধ্যে ‘প্রবাল সাপ গিয়ে’ তাঁর গবেষণাটি বাংলাদেশে প্রথম। 
সাপের কামড়ে বহু মানুষ কুসংস্কার আর ওঝাদের কাছে চিকিৎসা নিয়ে মারা যায়। তাই গবেষণা আর সচেতনতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে এই অভিশাপ থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়াই তাঁর অন্যতম লক্ষ্য বলে জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বনশ্রীতে স্বর্ণ ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার আমিনুল ছাত্রলীগের, সুমন শ্রমিক দলের নেতা

থানায় থানায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাদের তালিকা হচ্ছে

সামরিক বাহিনীর ৮ সংস্থা ও স্থাপনার নাম পরিবর্তন

ককটেল ফুটতেই সেলুনে লুকায় পুলিশ, রণক্ষেত্র হয় এলাকা

মসজিদে লুকিয়েও রক্ষা পেলেন না স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও তাঁর ভাই, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিল প্রতিপক্ষ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত