Ajker Patrika

টং দোকানে বেঁচে থাকার লড়াই সত্তরোর্ধ্ব রতন বেগমের

মো. আনোয়ারুল ইসলাম, ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) 
আপডেট : ১০ জুন ২০২৪, ২২: ০৫
টং দোকানে বেঁচে থাকার লড়াই সত্তরোর্ধ্ব রতন বেগমের

বিস্তীর্ণ মাঠের শেষ প্রান্তে ফাঁকা রাস্তার পাশে চারপাশ খোলা একটি পলিথিনের চালাঘর। মোট আটটি খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে আছে ঘরটি। মাঝখানে বাঁধা বাঁশের কঞ্চিতে ঝুলছে কয়েকটি চিপসের প্যাকেট, ডজনখানেক ছোট চানাচুরের প্যাকেট, লজেন্স, বিস্কুট, ছোট দু-চারটি হুইল পাউডারের প্যাকেট। সব মিলিয়ে ৭০০-৮০০ টাকার পণ্য থাকতে পারে দোকানে ৷ এই টং দোকানের আয় দিয়েই চলছে সত্তর পেরোনো বৃদ্ধা রতন বেগমের জীবনসংগ্রাম। 

জানা যায়, কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া রামনগর হাজারিবাড়ির মৃত আমছের আলীর মেয়ে রতন বেগমের বিয়ে হয় সিলেটের গোয়াইনঘাটের এক ব্যক্তির সঙ্গে। সেখানে একটি কন্যাসন্তান হলেও মারা যায়। মাত্র পাঁচ বছর সংসার করার পর স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় রতন বেগমের। ১৯৭৮ সালে বাবা আমছের আলীর বাড়িতে এসে ওঠেন তিনি। পরে রতন বেগমের বাবা আমছের আলীও মারা গেলে বেঁচে থাকার সংগ্রামে নামতে হয় তাঁকে। দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে তিনি সামান্য টং দোকানের উপার্জন দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বাবারবাড়ি থেকে দুই-আড়াই শ গজ দূরে এটি।

শীতকালে তীব্র শীত এবং বর্ষাকালে ঝড়বৃষ্টিতে সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যেও জীবনের একমাত্র অবলম্বন নড়বড়ে টং দোকানটি আঁকড়ে ধরে জীবনযুদ্ধ করে যাচ্ছেন রতন বেগম। 

শেষ বিকেলে রতন বেগমের টং দোকানে গিয়ে দেখা গেল, গ্রামের নারী ও শিশুরা টুকিটাকি জিনিস কিনছে। কেউ কেউ রতন বেগমের সঙ্গে গ্রামীণ আড্ডায় মেতে ওঠেন। তবে এই বয়সে অনিশ্চিত এই জীবনের পরও রতন বেগমের মুখের কোনায় এক চিলতে হাসি লেগে আছে। 

প্রতিদিন কত টাকা আয় হয় জানতে চাইলে বৃদ্ধা রতন বেগম বলেন, প্রতিদিন গড়ে দেড় শ থেকে দুই শ টাকা আয় হয়, যা দিয়ে কোনো রকমে দুবেলা দুমুঠো খেয়ে বেঁচে আছি। 

বললেন, ‘প্রতিদিন দোকানের মালামাল নিয়ে যেতে-আসাতে অনেক সমস্যা হয়। যদি মালামাল রাখার জন্য একটা ছোট ঘর বানিয়ে দিত সরকার, তাহলে আমার অনেক উপকার হয়।’

রতন বেগম জানালেন, দোকানের কাছে কোনো টিউবউয়েল না থাকায়ও খাওয়ার পানি নিয়ে বড় সমস্যায় আছেন। 
এই টং দোকানটির আয়ে চলেন ব্রাহ্মণপাড়ার মালাপাড়া ইউনিয়নের রামনগর এলাকার রতন বেগমপ্রতিবেশী ষাটোর্ধ্ব সালেহা বেগম বলেন, রতন ১৮-২০ বছর আগে থেকে এখানে খোলা আকাশের নিচে চটে করে সামান্য মালামাল নিয়ে দোকানটি শুরু করেন। পাড়ার নারী ও শিশুরা টুকিটাকি জিনিস কেনে। এ দিয়েই সে কোনো রকমে সংসার চালায়। 

স্থানীয় মো. মোসলেম উদ্দিন ও আব্দুল লতিফ বলেন, ‘তাকে বহু বছর ধরে এখানে দোকান করতে দেখছি। সে মানসিকভাবে অনেক শক্তিশালী। তাকে কখনো কারও কাছে হাত পাততে দেখিনি। দোকানের সামান্য আয় দিয়েই বেশ হাসিখুশি থাকে।’
 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমি অতি শিগগির এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে যতখানি পারা যায় তাঁকে সাহায্য-সহযোগিতা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

মানবিক করিডর না ভূরাজনৈতিক কৌশল? সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতায় উদ্বেগ

আইসিএক্স বাদ দিলে ঝুঁকিতে পড়বে দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব, বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ

‘কলেমা পড়ে বিয়ে’ করা স্ত্রীর ঘরে গিয়ে মধ্যরাতে ঘেরাও পুলিশ কনস্টেবল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত