Ajker Patrika

ফেনীতে বন্যা: পাউবোর ‘গাফিলতিতে’ বাঁধের ৩৬ স্থানে ভাঙন

  • গত বছর বন্যায় তিনটি নদীর ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতে ২০ কোটি টাকা ব্যয় পাউবোর।
  • বছর না যেতেই ফের বন্যায় সেই বাঁধের ৩৬ স্থান ভেঙে যায়।
ফেনী প্রতিনিধি
আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৫, ০৭: ৪৬
ফেনীর পরশুরাম উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম হলকা গ্রামে। সম্প্রতি তোলা ছবি। আজকের পত্রিকা
ফেনীর পরশুরাম উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম হলকা গ্রামে। সম্প্রতি তোলা ছবি। আজকের পত্রিকা

ফেনীতে গত বছরের ভয়াবহ বন্যার পর ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বাঁধ মেরামত করা হয়েছিল। কিন্তু বছর না পেরোতেই সেই বাঁধের ৩৬টি স্থানে ভেঙে অন্তত ১১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) চার দিন পর ক্ষয়ক্ষতির তথ্য দিলেও মাঠপর্যায়ে তেমন কোনো তৎপরতা নেই। স্থানীয়দের অভিযোগ, পাউবোর গাফিলতি ও অনিয়মেই প্রতিবছর এই দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।

ফেনী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার গত শনিবার বলেন, শুরুতে শুধু এলাকা ধরে ভাঙনের তথ্য জানানো হয়েছিল। পরে মাঠপর্যায়ে গিয়ে সংখ্যা চূড়ান্ত করা হয়েছে। সে জন্য শুরুতে ভাঙনের সংখ্যা ২০টি থাকলেও এখন তা বেড়ে গেছে।

চার দিন ধরে ভোগান্তিতে থাকা বানভাসিদের অভিযোগ, পাউবোর কোনো কর্মকর্তাই ভাঙনস্থলে আসেননি। তাঁরা বরাদ্দ ও দায় এড়ানোর কৌশল নিয়ে ব্যস্ত আছেন।

জেলার পরশুরাম উপজেলার অলকা এলাকার বাসিন্দা মাসুম চৌধুরী বলেন, ‘পানি আসবে, বাঁধ ভাঙবে, আমরা ভুগব—এ যেন নিয়ম হয়ে গেছে। পাউবোর কর্মকর্তারা শুধু ফাইলের কাজেই ব্যস্ত। এবার আর চুপ থাকব না। টেকসই বাঁধ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’

৮ জুলাই টানা ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় গ্রামের পর গ্রাম পানিবন্দী হয়ে পড়ে। এরপর সেই পানি ছাগলনাইয়া, সদর ও দাগনভূঞা উপজেলায়ও গড়ায়। ১১২টি গ্রামে পানিতে ডুবে যায় লাখো মানুষের ঘরবাড়ি। আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন সাড়ে ৯ হাজারের বেশি মানুষ।

বাঁধ ভাঙন নিয়ে প্রশ্নের মুখে থাকা পাউবো জানিয়েছে, এবার বাঁধের মোট ৩৬টি স্থানে ভাঙন হয়েছে। এর মধ্যে পরশুরামে ১৯ ও ফুলগাজীতে ১৭টি। গত বছরের বন্যার পর ২০ কোটির বেশি টাকায় বাঁধগুলো মেরামত করা হয়েছিল।

ফুলগাজীর কমুয়া এলাকার খামারি মো. হারুন বলেন, ‘গতবার মাছ, হাঁস-মুরগি মিলিয়ে অন্তত ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছিল। প্রতিবারই বাঁধ ভাঙে, পানি আসে, তারপর সবাই আশ্বাস দেয়। এসব এ জনপদে নিয়মে পরিণত হয়েছে।’

পরশুরামের অলকা গ্রামের বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, প্রবাসের কষ্টার্জিত আয় দিয়ে এলাকায় তিলে তিলে গড়া আমার খামারটি বন্যায় তছনছ হয়ে গেছে। অন্তত ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। কীভাবে এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠব, বুঝতে পারছি না।’

ফেনীর মৎস্য, কৃষি ও প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানিয়েছে, এবারের বন্যায় মৎস্য খাতে ৮ কোটি ১২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ৫ হাজার ৫৬৪ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রাণিসম্পদে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬৫ লাখ টাকা।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, বন্যা মোকাবিলায় ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আরও ৪০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে।

গত বছরের বন্যায় ফেনীতে ২৯ জনের মৃত্যু হয়। সেই বন্যায় শতকোটি টাকার ক্ষতির কথা উঠে আসে সরকারি পরিসংখ্যানে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, এবারও পরিস্থিতি সেখানে গিয়ে ঠেকবে, তবে তার আগেই দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি বানভাসিদের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত