Ajker Patrika

কুমিল্লা থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত ধাওয়া ও বাসে হামলা চালাল কারা

নোয়াখালী প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ১৯: ০১
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত বাসচালক সোহেল। ছবি: আজকের পত্রিকা
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত বাসচালক সোহেল। ছবি: আজকের পত্রিকা

কয়েকজন মোটরসাইকেল আরোহী ছুটছেন একটি বাসের পেছনে। কয়েক দফায় সামনে-পেছনে করে দীর্ঘ পথ ধরে চলে এই ধাওয়া। ব্যর্থ হয়ে তাঁরা বাস লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এতে বাসের সামনে ও পেছনের কাচ ভেঙে যায়। ইটপাটকেলে মুখে ও গলায় রক্তাক্ত হন বাসচালক সোহেল। তবে ওই অবস্থায় তিনি বাসটি চালিয়ে যাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দেন। আর এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বাসচালক সোহেলের প্রশংসা করছেন অনেকে। তবে চালক সোহেল এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এদিকে বাসটি ধাওয়া করা এবং চালকের ওপর হামলা চালানো ব্যক্তিরা এখনো শনাক্ত হননি। তাঁরা কি ডাকাতির উদ্দেশ্যে, না অন্য কোনো কারণে এ হামলা চালিয়েছিল, তা জানাতে পারেননি চালক। পুলিশও এখন পর্যন্ত ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে পারেনি।

ভুক্তভোগী চালক ও বাসের অন্য কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের পরদিন মঙ্গলবার রাতে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে নোয়াখালীর উদ্দেশে ছেড়ে আসে একুশে এক্সপ্রেসের একটি যাত্রীবাহী বাস। যেখানে চালক, সুপারভাইজর ও হেলপার ছাড়াও ৪১ জন যাত্রী ছিলেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাসটি কুমিল্লার লালমাই এলাকায় পৌঁছালে কয়েকজন মোটরসাইকেলচালক তাঁদের বাসটিকে পেছন থেকে ধাওয়া করেন। মোটরসাইকেল আরোহীরা লাকসাম বাজারের কাছাকাছি পৌঁছতে দু-তিনজন মোটরসাইকেল আরোহী বাসটির সামনে এসে থামার জন্য সংকেত দেন। কিন্তু বাসের গতির সঙ্গে পেরে উঠতে পারেননি। বাসে থাকা যাত্রীরা আতঙ্কে চিৎকার করতে থাকেন।

বাসচালক সোহেল বলেন, কুমিল্লার লালমাই এলাকায় বাসের সামনে ৮-১০টি মোটরসাইকেল এলোমেলো চালাতে থাকেন কয়েকজন। বারবার হর্ন দেওয়ার পর প্রথমে সরে গেলেও পরে দু-তিনটি মোটরসাইকেল বাসের সামনে এসে বারবার থামার জন্য সংকেত দিতে থাকে। সব কটি মোটরসাইকেল ছিল নম্বরবিহীন। ফলে বাসে থাকা যাত্রীরা গাড়ি না থামিয়ে দ্রুত চালাতে বলেন। না থামার কারণে তারা বিপুলাসার পৌঁছে বাস লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছুড়তে থাকে।

হামলার বর্ণনা দিয়ে সোহেল বলেন, ‘চোয়াল ভেঙে গিয়ে আমি মারাত্মকভাবে আহত হই। কিন্তু একবারের জন্য বাস থামাইনি। ওই অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে সুধারাম মডেল থানার ভেতরে চলে আসি।’ হামলাকারীরা চৌমুহনী চৌরাস্তা পর্যন্ত বাস ধাওয়া করতে করতে আসে বলেও জানান চালক।

আহত চালকের ভাই মেহেদী হাসান বলেন, সোহেল বর্তমানে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর মুখের নিচের অংশের চোয়াল ভেঙে যাওয়ায় অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। অপরাধীদের চিহ্নিত করে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন চালকের পরিবারের সদস্যরা।

একুশে পরিবহনের মালিক জহিরুল ইসলাম তারেক বলেন, ডাকাতির চেষ্টাকালে হামলায় বাসের প্রায় দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। নিজের জীবন বাজি রেখে কোনো প্রকার সময়ক্ষেপণ না করে সোহেল গাড়িটি চালিয়ে নিয়ে এসেছেন নিরাপদে। তখনো তাঁর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল, কয়েকজন যাত্রী কাপড় দিয়ে তাঁর রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন। সড়কে আইনশৃঙ্খলার উন্নতির পাশাপাশি এ ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তাদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে তিনি প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রাজীব আহমেদ চৌধুরী বলেন, চালক সোহেলের মাথা ও চোয়ালে বেশ কয়েকটি সেলাই লেগেছে, দুটি দাঁত ভেঙে গেছে। চোয়াল ফেটে যাওয়ায় সার্জারি করা হয়েছে। বর্তমানে তাঁর অবস্থা উন্নতির দিকে।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মোহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, ‘কুমিল্লার লাকসামে কয়েকজন যুবক মোটরসাইকেল নিয়ে বাসটির পিছু নিয়ে ধাওয়া করে এবং পরবর্তী সময়ে বাসটি না থামিয়ে দ্রুত চালালে সেটিতে হামলা চালান। এতে গাড়ি ক্ষতিগ্রস্তসহ চালক আহত হন। হামলাকারীদের উদ্দেশ্য ডাকাতি, নাকি অন্য কিছু ছিল, তা তদন্ত করা হচ্ছে। আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ রহস্য উদ্‌ঘাটন করা সম্ভব হবে। এ ঘটনায় বাসমালিককে একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত