মো. জহিরুল হক বাবু বুড়িচং (কুমিল্লা)
কুমিল্লার ময়নামতির পান চাষের সঠিক ইতিহাস জানা না গেলেও পানচাষি পরিবারগুলোর তথ্যমতে প্রায় ২০০ বছর ধরে এই অঞ্চলে পানের আবাদ হচ্ছে। এলাকার সূত্রে জানা যায়, একসময় ময়নামতির বিভিন্ন গ্রামের শত শত পরিবার পানের চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করত। সাম্প্রতিক সময়ে শ্রমিকের মজুরি ও উৎপাদনমূল্য বেড়ে যাওয়ায় দিনদিন কমে যাচ্ছে পানচাষির সংখ্যা। তবু বংশপরম্পরায় গ্রামগুলোতে পানের চাষ করে ঐতিহ্য ধরে রেখেছে প্রায় শতাধিক পরিবার।
কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি একটি ইউনিয়ন। দেশের অন্যতম প্রাচীন প্রত্নসম্পদে সমৃদ্ধ এই জনপদের হরিণধরা, বাগিলারা, বাজেবাহেরচর, মইনপুর গ্রামগুলো পাশাপাশি অবস্থিত। সুদীর্ঘকাল থেকে এই গ্রামগুলোতে শত শত সনাতন ধর্মাবলম্বীর বসবাস। এদের অন্যতম পেশা ছিল তাঁত ও পানের চাষ। অপেক্ষাকৃত উঁচু ভূমি হওয়ায় বছরজুড়েই এসব এলাকা ছিল বন্যামুক্ত। এই এলাকার মানুষ তাঁত চালানোর পাশাপাশি পানের চাষ করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।
এ বিষয়ে সিন্দুরিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ক্রীড়া সংগঠক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, 'ময়নামতিতে তাঁত আর পানের চাষ বহু পরিবারের আয়ের অন্যতম উৎস ছিল। আগে এসব গ্রামে দূরদূরান্ত থেকে পাইকাররা পানের জন্য আসত।'
হরিণধরা গ্রামে গিয়ে কথা হয় শংকর দাস নামের এক পানচাষির সঙ্গে। তিনি বলেন, 'বাবার মুখে শুনেছি, ছয় পুরুষ ধরে বংশপরম্পরায় পানের চাষ চলছে। বর্তমানে আমিও পানের চাষ ধরে রেখেছি।'
পান চাষের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, 'উল্লেখিত তিন-চার গ্রামে স্বাধীনতা-পরবর্তী শত শত পানচাষি পরিবার ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে পানের বরজ করতে বাঁশসহ অন্যান্য উপকরণ সার, কীটনাশক, শ্রমিকের বাজারমূল্য বেড়ে যাওয়া, অপেক্ষাকৃত কম দামে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে পান আমদানি করা—এক কথায় উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে বাজারমূল্যের সাদৃশ্য না থাকায় দিনদিন বহু পরিবার পান চাষে আগ্রহ হারিয়ে অন্য পেশায় ঝুঁকছে। আবার পানের চাষ অনেক অলাভজনক হওয়ায় কোনো কোনো পরিবারের লোকজন বিদেশে চলে যাচ্ছেন, কেউ-বা শহরে-বন্দরে চাকরি নিয়ে শহরবাসীও হয়ে গেছেন।'
এ বিষয়ে হরিণধরা গ্রামের বাবুল দত্ত, দীপক দাস, স্বপন দে, সুমন দত্ত, লিটন দেসহ আরও অনেক পানচাষি বলেন, 'এক বিঘা জমিতে পানের বরজ বানিয়ে পানগাছ রোপণসহ সার-কীটনাশকে খরচ হয় প্রায় ৩ লাখ টাকা। এর থেকে বর্ষাকালে প্রতিদিন ৮০টায় এক বিড়া হিসেবে ২৫-৩০ বিড়া পান সংগ্রহ করা যায়। জমি শুকিয়ে গেলে উৎপাদনও অনেকটা কমে আসে। সে সময় ১২-১৪ বিড়া পান সংগ্রহ করা হয়।'
চাষিদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, বর্ষার তুলনায় শীতে পানের মূল্য তিন গুণ বেশি থাকে। অপেক্ষাকৃত উঁচু জমি হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমের ফাল্গুন, চৈত্র মাসে জমিতে সেচ দেওয়া হয়। জমি থেকে প্রতিদিনই পানপাতা তোলা হয়, যা চাষিদের ভাষায় ‘পান ভাঙা’ বলে। এখানকার উৎপাদিত পানপাতা প্রতিদিন ময়নামতির সেনানিবাস টিপরা বাজার, সাহেবের বাজার, দেবপুর, কংসনগর বাজারে বিক্রি করেন চাষিরা।
এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী দেবীদ্বার উপজেলার জাফরগঞ্জে সাপ্তাহিক রোববার ও বুধবারের হাটের দিনে পান বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকাররা এসব পান কিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রর জন্য নিয়ে যান।
এ বিষয়ে বাগিলারা গ্রামের প্রান্তোষ সাহা, হারাধন পাল, নৃপেন্দ্র দত্তসহ কয়েকজন পানচাষি বলেন, 'প্রতিদিনই পানের বরজ পরিচর্যা করতে হয়। এক বিঘা জমিতে প্রায় ৩ লাখ টাকা খরচ করে সেখান থেকে ৪-৫ লাখ টাকার পান বিক্রি করা যায়।'
পানচাষিরা আরও বলেন, 'বংশপরম্পরায় কয়েক শ বছরের এই পারিবারিক ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তাঁদের ইচ্ছাশক্তিই প্রধান। এই এলাকায় পানচাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে কখনো কৃষি বিভাগের লোকজনদের দেখা মেলেনি, পানগাছ রোগাক্রান্ত হলে চাষিরা ছুটে যান স্থানীয় কীটনাশকের দোকানে। সরকার সারা দেশের অন্যান্য চাষিদের সার, বীজসহ বিভিন্নভাবে প্রণোদনা দিলেও ময়নামতির পানচাষিরা সবকিছু থেকেই বঞ্চিত। এখানকার পানচাষিরা সাহায্য-সহযোগিতার অভাবে দিনদিন পান চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।'
এ বিষয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, 'ময়নামতি ইউনিয়নের চারটি গ্রামের প্রায় ২ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হচ্ছে। অন্য কৃষকদের পরামর্শসহ প্রণোদনার ব্যবস্থা থাকলেও পানচাষিদের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই।'
পান চাষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতার বিষয়ে জানতে চাইলে বুড়িচং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আফরিনা আক্তার বলেন, 'বুড়িচং উপজেলায় পানচাষিদের বিষয়ে কৃষি বিভাগের কাছে কোনো তথ্য নেই। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত পানচাষিদের কোনো পরামর্শ, প্রণোদনা বা সার, কীটনাশক প্রদান করা হয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে ভবিষ্যতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস প্রদান করেন তিনি।'
কুমিল্লার ময়নামতির পান চাষের সঠিক ইতিহাস জানা না গেলেও পানচাষি পরিবারগুলোর তথ্যমতে প্রায় ২০০ বছর ধরে এই অঞ্চলে পানের আবাদ হচ্ছে। এলাকার সূত্রে জানা যায়, একসময় ময়নামতির বিভিন্ন গ্রামের শত শত পরিবার পানের চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করত। সাম্প্রতিক সময়ে শ্রমিকের মজুরি ও উৎপাদনমূল্য বেড়ে যাওয়ায় দিনদিন কমে যাচ্ছে পানচাষির সংখ্যা। তবু বংশপরম্পরায় গ্রামগুলোতে পানের চাষ করে ঐতিহ্য ধরে রেখেছে প্রায় শতাধিক পরিবার।
কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি একটি ইউনিয়ন। দেশের অন্যতম প্রাচীন প্রত্নসম্পদে সমৃদ্ধ এই জনপদের হরিণধরা, বাগিলারা, বাজেবাহেরচর, মইনপুর গ্রামগুলো পাশাপাশি অবস্থিত। সুদীর্ঘকাল থেকে এই গ্রামগুলোতে শত শত সনাতন ধর্মাবলম্বীর বসবাস। এদের অন্যতম পেশা ছিল তাঁত ও পানের চাষ। অপেক্ষাকৃত উঁচু ভূমি হওয়ায় বছরজুড়েই এসব এলাকা ছিল বন্যামুক্ত। এই এলাকার মানুষ তাঁত চালানোর পাশাপাশি পানের চাষ করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।
এ বিষয়ে সিন্দুরিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ক্রীড়া সংগঠক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, 'ময়নামতিতে তাঁত আর পানের চাষ বহু পরিবারের আয়ের অন্যতম উৎস ছিল। আগে এসব গ্রামে দূরদূরান্ত থেকে পাইকাররা পানের জন্য আসত।'
হরিণধরা গ্রামে গিয়ে কথা হয় শংকর দাস নামের এক পানচাষির সঙ্গে। তিনি বলেন, 'বাবার মুখে শুনেছি, ছয় পুরুষ ধরে বংশপরম্পরায় পানের চাষ চলছে। বর্তমানে আমিও পানের চাষ ধরে রেখেছি।'
পান চাষের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, 'উল্লেখিত তিন-চার গ্রামে স্বাধীনতা-পরবর্তী শত শত পানচাষি পরিবার ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে পানের বরজ করতে বাঁশসহ অন্যান্য উপকরণ সার, কীটনাশক, শ্রমিকের বাজারমূল্য বেড়ে যাওয়া, অপেক্ষাকৃত কম দামে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে পান আমদানি করা—এক কথায় উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে বাজারমূল্যের সাদৃশ্য না থাকায় দিনদিন বহু পরিবার পান চাষে আগ্রহ হারিয়ে অন্য পেশায় ঝুঁকছে। আবার পানের চাষ অনেক অলাভজনক হওয়ায় কোনো কোনো পরিবারের লোকজন বিদেশে চলে যাচ্ছেন, কেউ-বা শহরে-বন্দরে চাকরি নিয়ে শহরবাসীও হয়ে গেছেন।'
এ বিষয়ে হরিণধরা গ্রামের বাবুল দত্ত, দীপক দাস, স্বপন দে, সুমন দত্ত, লিটন দেসহ আরও অনেক পানচাষি বলেন, 'এক বিঘা জমিতে পানের বরজ বানিয়ে পানগাছ রোপণসহ সার-কীটনাশকে খরচ হয় প্রায় ৩ লাখ টাকা। এর থেকে বর্ষাকালে প্রতিদিন ৮০টায় এক বিড়া হিসেবে ২৫-৩০ বিড়া পান সংগ্রহ করা যায়। জমি শুকিয়ে গেলে উৎপাদনও অনেকটা কমে আসে। সে সময় ১২-১৪ বিড়া পান সংগ্রহ করা হয়।'
চাষিদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, বর্ষার তুলনায় শীতে পানের মূল্য তিন গুণ বেশি থাকে। অপেক্ষাকৃত উঁচু জমি হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমের ফাল্গুন, চৈত্র মাসে জমিতে সেচ দেওয়া হয়। জমি থেকে প্রতিদিনই পানপাতা তোলা হয়, যা চাষিদের ভাষায় ‘পান ভাঙা’ বলে। এখানকার উৎপাদিত পানপাতা প্রতিদিন ময়নামতির সেনানিবাস টিপরা বাজার, সাহেবের বাজার, দেবপুর, কংসনগর বাজারে বিক্রি করেন চাষিরা।
এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী দেবীদ্বার উপজেলার জাফরগঞ্জে সাপ্তাহিক রোববার ও বুধবারের হাটের দিনে পান বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকাররা এসব পান কিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রর জন্য নিয়ে যান।
এ বিষয়ে বাগিলারা গ্রামের প্রান্তোষ সাহা, হারাধন পাল, নৃপেন্দ্র দত্তসহ কয়েকজন পানচাষি বলেন, 'প্রতিদিনই পানের বরজ পরিচর্যা করতে হয়। এক বিঘা জমিতে প্রায় ৩ লাখ টাকা খরচ করে সেখান থেকে ৪-৫ লাখ টাকার পান বিক্রি করা যায়।'
পানচাষিরা আরও বলেন, 'বংশপরম্পরায় কয়েক শ বছরের এই পারিবারিক ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তাঁদের ইচ্ছাশক্তিই প্রধান। এই এলাকায় পানচাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে কখনো কৃষি বিভাগের লোকজনদের দেখা মেলেনি, পানগাছ রোগাক্রান্ত হলে চাষিরা ছুটে যান স্থানীয় কীটনাশকের দোকানে। সরকার সারা দেশের অন্যান্য চাষিদের সার, বীজসহ বিভিন্নভাবে প্রণোদনা দিলেও ময়নামতির পানচাষিরা সবকিছু থেকেই বঞ্চিত। এখানকার পানচাষিরা সাহায্য-সহযোগিতার অভাবে দিনদিন পান চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।'
এ বিষয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, 'ময়নামতি ইউনিয়নের চারটি গ্রামের প্রায় ২ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হচ্ছে। অন্য কৃষকদের পরামর্শসহ প্রণোদনার ব্যবস্থা থাকলেও পানচাষিদের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই।'
পান চাষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতার বিষয়ে জানতে চাইলে বুড়িচং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আফরিনা আক্তার বলেন, 'বুড়িচং উপজেলায় পানচাষিদের বিষয়ে কৃষি বিভাগের কাছে কোনো তথ্য নেই। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত পানচাষিদের কোনো পরামর্শ, প্রণোদনা বা সার, কীটনাশক প্রদান করা হয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে ভবিষ্যতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস প্রদান করেন তিনি।'
গাজীপুরের শ্রীপুরে এক অটোরিকশা চালককে হাত ও পায়ের রগ কেটে হত্যার পর সড়কে ফেলে রাখার অভিযোগ উঠেছে তাকওয়া পরিবহনের স্টাফের বিরুদ্ধে। মামলা নিতে গড়িমসির অভিযোগ তুলে তাকওয়া পরিবহনের বন্ধের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ...
২৩ মিনিট আগেজয়পুরহাটের আক্কেলপুরে তিন কৃষকের খরের গাদা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল সোমবার রাতে উপজেলার চেঁচুরিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানান, প্রান্তিক কৃষক শাজাহান আলী, আব্দুস সোবহান ও রোজাউল করিম ধান মাড়াই করে গরুর খাদ্য হিসেবে তাঁদের বাড়ির পাশে খলায় খরের গাদা তৈরি করেন।
১ ঘণ্টা আগেনরসিংদীর রায়পুরার দুর্গম চরাঞ্চলে অভিযান চালিয়ে ২০ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। গতকাল সোমবার (৩ মার্চ) ভোর থেকে দিনব্যাপী উপজেলার মির্জাচর ইউনিয়নের একটি দুর্গম চরে এ অভিযান চালানো হয়।
১ ঘণ্টা আগেনাটোরের লালপুরে বাবার ট্রলির নিচে চাপা পড়ে নিহত হয়েছে শিশুসন্তান। আজ সোমবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার ২ নম্বর ঈশ্বরদী ইউনিয়নের কাজীপাড়া গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শিশুর নাম মো. মুরসালিন (৩)। সে ওই গ্রামের মো. পিন্টুর ছেলে।
১ ঘণ্টা আগে