Ajker Patrika

চট্টগ্রামের আনোয়ারা: মেডিকেল বর্জ্য খালে, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

  • উপজেলায় রয়েছে অর্ধশতাধিক প্রাইভেট ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার
  • মাত্র একটি প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য নিয়ে যান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কর্মীরা
মো. ইমরান হোসাইন,কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম)
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪১
নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ৫০টির বেশি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার কান্দুরিয়া খালে। ছবি: আজকের পত্রিকা
নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ৫০টির বেশি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার কান্দুরিয়া খালে। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার চাতরী ইউনিয়নের কান্দুরিয়া খাল। এই খাল তো সংরক্ষণ করা হচ্ছেই না, উল্টো সেখানে ফেলা হচ্ছে মেডিকেল বর্জ্য। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ৫০টির বেশি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে সেখানে। এতে খালটি যেমন ভরাট হয়ে যাচ্ছে, তেমনি আশঙ্কা বাড়ছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির।

সম্প্রতি উপজেলার চাতরী টালেন মোড় ও কালাবিবি দিঘির মোড়ে কান্দুরিয়া খাল ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন কলকারখানা, হোটেল-রেস্তোরাঁর ময়লা বর্জ্যের সঙ্গে খালে ফেলা হয়েছে চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত জীবাণুযুক্ত তুলা, ব্যান্ডেজ, সুই, সিরিঞ্জ, কাচের বোতল বা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ। এসবের বেশির ভাগ পচে-গলে একাকার হয়ে আছে। স্থানীয়রা বলছেন, বৃষ্টি কিংবা পানির সঙ্গে পরে সেগুলো মিশছে নদী বা পার্শ্ববর্তী কৃষিজমিতে। এতে যেমন পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, তেমনি বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

চাতরী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আবুল মনসুর বলেন, খালটি এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। শুধু ক্লিনিক বা হাসপাতালের বর্জ্য নয়, উপজেলার বিভিন্ন কলকারখানার বর্জ্যও এই কান্দুরিয়া খালে ফেলা হয়। খালটি রক্ষায় গত বছর খননের জন্য আবেদন করা হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মোড় থেকে শুরু করে কালাবিবি দিঘিতে যেসব ক্লিনিক বা হাসপাতাল রয়েছে, সেসব ক্লিনিক ও হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা প্রতি রাতে বা ভোরে খালে ফেলেন এসব বর্জ্য। প্রতিবাদ করলে সড়কে কিংবা বাড়ি ও দোকানের আশপাশে ফেলে যান। এ বিষয়ে কারও নজর নেই।

স্থানীয় কৃষক পুলক দাশ বলেন, ‘একসময় খালটা ভরসা ছিল কৃষিকাজের পানির জন্য। এখন খাল শুধু নামে আছে। বিভিন্ন হাসপাতালের ময়লা ও মারাত্মক বর্জ্যের কারণে খালের পানি আর কৃষিকাজে আমরা ব্যবহার করতে পারি না।’

আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানা যায়, হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার নিয়ম থাকলেও এখানে তা মানা হচ্ছে না বছরের পর বছর। অনেককে খোলা জায়গা বা খালে এসব বর্জ্য ফেলতে দেখা যায়। উপজেলায় শতাধিক চিকিৎসকের চেম্বার রয়েছে। প্রাইভেট ক্লিনিক, হাসপাতালসহ অর্ধশতাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারও রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বর্জ্য ফেলার কোনো স্থান নেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরির বর্জ্য নিয়ে যায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নগর সেবা নামের একটি সংস্থা।

এদিকে আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও বর্জ্য আলাদাভাবে নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। গতকাল বুধবার বিকেলে হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের পাশেই পরিত্যক্ত স্টাফ কোয়ার্টারের প্রবেশপথটি একটি ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। এখানে হাসপাতালের বর্জ্যসহ সব ধরনের আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এতে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে যাওয়ার পথটি যেন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে বর্জ্য আলাদাভাবে নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। কিছু সময় পরপর নির্ধারিত স্থানে পুড়িয়ে ফেলা হয়। এটি খুবই বিপজ্জনক। জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। আমি এ বিষয়ে অবগত ছিলাম না। এখন যেহেতু জেনেছি, বিষয়টা দ্রুত পর্যবেক্ষণ করে ব্যবস্থা নেব।’

কালাবিবি দিঘি এলাকার আনোয়ারা হলি হেলথ ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম জামিল উদ্দিন চৌধুরী খালে বর্জ্য ফেলার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘হাসপাতালে বর্জ্য তিন ধরনের। কিছু বর্জ্য পুড়ে এবং মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়, আর কিছু খালে। চাতরী ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে আমাদের একটি চুক্তি হয় বর্জ্য অপসারণের জন্য। কিন্তু তারা কোনো স্থান না নেওয়ায় খালে ফেলতে হচ্ছে। আমি প্রশাসনকে অনুরোধ করব, এসব বর্জ্য ফেলার জন্য নির্দিষ্ট কোনো স্থান বা ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং চাতরী ইউনিয়নের প্রশাসক তাহমিনা আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, হাসপাতালের এসব বর্জ্য খালে ফেলা মারাত্মক অপরাধ এবং পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর। শিগগির এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাটহাজারীতে বৈঠকে ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত

হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি 
নিহত রবিউল ইসলাম ওরফে বাবু। ছবি: সংগৃহীত
নিহত রবিউল ইসলাম ওরফে বাবু। ছবি: সংগৃহীত

হাটহাজারীতে বিয়ের সামাজিক বৈঠকে (পানসল্লা) ছুরিকাঘাতে মো. রবিউল ইসলাম ওরফে বাবু (৪০) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুজন। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ৮টার দিকে উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়ন এলাকার মুছা সওদাগরের বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে।

নিহত রবিউল ইসলাম মুছা সওদাগর বাড়ির মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হক কোম্পানির বড় ছেলে। তিনি নাজিরহাট ঘাট স্টেশন এলাকার ব্যবসায়ী ছিলেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাতে মুছা সওদাগরের বাড়িতে একটি বিয়ের প্রস্তুতিমূলক সামাজিক বৈঠক (পানসল্লা) চলছিল। এ সময় বৈঠকে রবিউল ইসলামের সঙ্গে একই বাড়ির জসিমের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে জসিম ঘর থেকে চাকু এনে বাবুর গলায় আঘাত করে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই রবিউল ইসলামের মৃত্যু হয়।

ছুরিকাঘাতের সময় উপস্থিত রবিউল ইসলাম বাবুর ভাই ইমরুল হোসেন বাচ্চু (৩৫) ও চাচাতো ভাই ইমন (২১) বাবুকে উদ্ধার করতে গেলে জসিম তাঁদেরকেও চাকু দিয়ে আঘাত করেন। আহত দুজনকে নাজিরহাট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন জসিমকে আটক করে হাটহাজারী মডেল থানা-পুলিশকে জানায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।

হাটহাজারী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুর কাদের ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি এখন ঘটনাস্থলে আছি। স্থানীয় উত্তেজিত জনতার কারণে এখন পর্যন্ত জসিমকে হেফাজতে নেওয়া সম্ভব হয়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পঞ্চগড়ে আজ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ০৪
হালকা কুয়াশায় ঢেকে আছে চারপাশ। গরুর গায়ে কাপড় জড়িয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা
হালকা কুয়াশায় ঢেকে আছে চারপাশ। গরুর গায়ে কাপড় জড়িয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা

পঞ্চগড়ে শীতের তীব্রতা প্রতিদিনই বাড়ছে। আজ এই মৌসুমের সর্বনিম্ন ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস। সকাল ৯ টায় রেকর্ড হওয়া এ তাপমাত্রায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৪ শতাংশ।

আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, গত কয়েক দিন তাপমাত্রা ১১ থেকে ১৩ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে। শুক্রবার ১২, বৃহস্পতিবার ছিল ১২ দশমিক ৫, বুধবার ১২ দশমিক ২, মঙ্গলবার ১১ দশমিক ৭, সোমবার ১৩ দশমিক ৩, রোববার ১৩ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ২৭ ডিগ্রি।

শনিবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হালকা কুয়াশায় ঢেকে আছে চারপাশ। প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া মানুষের চলাচল কম। কেউ কেউ গরম কাপড় জড়িয়ে কাজে বের হলেও অনেকেই শীতের তীব্রতার কারণে ঘরে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। সূর্য ওঠার পরও রোদের তাপ তেমন পাওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে নদীতে বালুশ্রমিকেরা শীতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন। সকাল থেকেই নদীতে নেমে বালু তুলতে হয় তাঁদের। শীতের পানিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে কাজ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।

করতোয়া নদীর বালুশ্রমিক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভোরে নদীর পানি এত ঠান্ডা থাকে যে শরীর জমে আসে। তবু কাজ না করলে ঘরে খাবার জুটবে না। হাত-পা অসাড় হয়ে আসে, অনেক সময় দাঁড়িয়েও থাকা যায় না। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ করাও কষ্টকর হয়ে পড়ছে।’

দিনমজুর আসিমদ্দিন জানান, শীতের জন্য কাজ কমে গেছে। সকালে কুয়াশায় কিছু দেখা যায় না, হাত-পা কাঁপতে থাকে। শরীর ঠিকমতো সাড়া না দেওয়ায় কাজের গতি কমে গেছে।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে দ্রুত। সর্দি-কাশি, জ্বর, অ্যালার্জি, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টে শিশু ও বৃদ্ধ রোগীদের ভিড় বেড়েছে হাসপাতালে। চিকিৎসকদের মতে, হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যাওয়া এবং দিন-রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য শরীরের ওপর চাপ ফেলছে। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকা মানুষ বেশি ঝুঁকিতে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘শীত আরও কিছুদিন বাড়তে পারে। আজ তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি রেকর্ড হয়েছে, সামনে তাপমাত্রা আরও কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এনসিপির জেলা ও নগর আহ্বায়ক দুই মেরুতে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩০
মোবাশ্বের আলী ও সাইফুল ইসলাম
মোবাশ্বের আলী ও সাইফুল ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জেলা ও মহানগরের বিরোধ এখন তুঙ্গে। জেলা কমিটির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম আওয়ামী দোসর অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে মাঠে নেমেছেন নগর আহ্বায়ক মোবাশ্বের আলীর অনুসারীরা।

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে সাইফুলের ছবি ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ছড়িয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন রাজশাহীতে ছাত্র-জনতার ওপর দুই হাতে পিস্তল নিয়ে গুলি করা রুবেলের সঙ্গে একটি সংবাদ সম্মেলনে থাকার ভিডিও। তাই তাঁকে আওয়ামী দোসর আখ্যা দিয়ে তাঁর পদত্যাগ চাওয়া হচ্ছে।

গত ২৯ নভেম্বর এনসিপির জেলার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। এতে আহ্বায়ক করা হয় সাইফুল ইসলামকে। তখন থেকেই মহানগর নেতা মোবাশ্বের আলীর সঙ্গে তাঁর দূরত্ব। এখন তা প্রকাশ্যে এসেছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২৯ নভেম্বর ১০৫ সদস্যবিশিষ্ট জেলা কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। পরদিন কয়েকজন জুলাই যোদ্ধা সংবাদ সম্মেলন করে সাইফুলের পদত্যাগ দাবি করেন। পরদিন পর্যটন মোটেলে পরিচিতি সভায় গিয়ে মহানগর যুবশক্তি ও ছাত্রশক্তির কিছু নেতা-কর্মী সভা পণ্ড করার চেষ্টা করেন। সেদিন সাইফুল ইসলামকে কারণ দেখিয়ে পাঁচজন পদত্যাগ করেন। বুধবার পদত্যাগ করেন আরও পাঁচজন।

এদিকে মহানগর ছাত্র ও যুবশক্তি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কিছুসংখ্যক জুলাই যোদ্ধা গত বুধবার সন্ধ্যায় নগরের চণ্ডীপুর কদমতলা মোড়ে মশাল মিছিল করেন। সাইফুলের কোচিং সেন্টারে তালা লাগিয়ে দেন।

সেদিন তাঁরা সাইফুলের পদত্যাগের দাবিতে এনসিপির মহানগর কার্যালয়ে তালা দেন। এতে কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন নগর আহ্বায়ক মোবাশ্বের। পরে রাতে তালা কেটে কার্যালয় থেকে বের হন তিনি। সেই রাতেই নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি এখন প্রাণসংশয়ে আছেন। নানা রকম হুমকির কথা জেনেছেন। তাঁর কিছু হলে নগর কমিটির নেতারা দায়ী থাকবেন।

নগর আহ্বায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে জেলা আহ্বায়ক বলেন, ‘তিনি আমাকে কোনো কারণ ছাড়াই প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছেন। আগে ইনডিরেক্টলি তাঁর লোকজনকে আমার বিরুদ্ধে লাগিয়েছেন। এখন ডিরেক্টলি করছেন।’

জানতে চাইলে মোবাশ্বের আলী বলেন, সাইফুল ইসলাম চিহ্নিত আওয়ামী দোসর। কেন্দ্রকে সব বলেছি। এই ছেলেরা আন্দোলন করছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের দাবির সঙ্গে একমত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রণোদনার পরও গম আবাদ ছাড়ছেন চাষিরা

সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও 
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ২৬
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কৃষি বিভাগের নানা প্রণোদনা, উঠান বৈঠক, প্রদর্শনী আর বীজ-সার সহায়তা সত্ত্বেও ঠাকুরগাঁও জেলায় গম চাষ উদ্বেগজনক হারে কমছে। গত পাঁচ মৌসুমে জেলায় গমের আবাদি জমি কমেছে ২৫ হাজার ৯৫০ হেক্টর। কৃষকেরা বলছেন, ভুট্টা ও সরিষার মতো ফসল গমের চেয়ে কম খরচে বেশি লাভ দিচ্ছে বলে তাঁরা গম ছেড়ে অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঠাকুরগাঁও জেলা কার্যালয়ের তথ্য বলছে, ২০১৯-২০ মৌসুমে জেলায় ৫০ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছিল, উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৬৮৫ টন। এর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে ২০২৪-২৫ মৌসুমে আবাদ নেমেছে ২১ হাজার ৫০ হেক্টরে; উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৮৩ হাজার ৬০৮ টন।

চলতি ২০২৫-২৬ রবি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৪৫ টন। কিন্তু ডিসেম্বরের শুরুতেই দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে মাত্র ৪ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে। কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা মনে করছেন, গত মৌসুমের চেয়েও এবার লক্ষ্যমাত্রা অনেক কম পূরণ হবে।

এ নিয়ে কথা হয় সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের কৃষক নূরে আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গমের জন্য লম্বা শীত লাগে। এখন শীত কমে গেছে, আবার বীজ ভালো পাওয়া যায় না, শ্রমিকও পাওয়া যায় না।

লাভও কম।’ একই এলাকার কৃষক জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘ভুট্টায় সেচ কম লাগে, পরিচর্যা কম, খরচ কম। বিঘায় ৪০-৪৫ মণ ফলন হয়। গমে ১৩-১৪ মণ। দামও ভুট্টার ভালো পাই। তাই কয়েক বছর ধরে ভুট্টাতেই ঝুঁকছি।’

সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের দেবেশ চন্দ্র রায় জানান, তিনি আগে ১০ বিঘা জমিতে গম করতেন। এখন পুরোটাই ভুট্টা।

‘বিঘায় খরচের দ্বিগুণের বেশি লাভ হয় ভুট্টায়। গমে লোকসানের ভয় থাকে। হরিপুর উপজেলার আমগাঁও ইউনিয়নের কৃষক জাহের আলী

বলেন, ‘আগে পাঁচ-ছয় বিঘা গম করতাম। এখন এক বিঘাও করি না। সব জমিতে ভুট্টা।’

জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাসিরুল আলম বলেন, জেলায় মাছ, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার বেড়েছে ব্যাপক। প্রাণিখাদ্য তৈরিতে ভুট্টার চাহিদা বেড়েছে। এ কারণে কৃষকেরা ভুট্টার দিকে ঝুঁকছেন। তিনি জানান, ভুট্টার প্রণোদনা এখন বন্ধ করে গমের প্রণোদনা বাড়ানো হয়েছে। চলতি মৌসুমে ২৭ হাজার ৫০০ কৃষককে ২৭ হাজার ৫০০ বিঘা জমির জন্য ২০ কেজি করে বীজ ও ২০ কেজি করে সার দেওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঠাকুরগাঁও জেলার উপপরিচালক মো. মাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষকেরা লাভের ফসলের দিকে যাচ্ছেন। গমের পরিবর্তে ভুট্টা ও সরিষায় ঝুঁকছেন। তবু গমের আবাদ বাড়াতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রণোদনার পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে।’

তবে কৃষকের মুখে একই কথা—লাভ না হলে প্রণোদনা দিয়েও গম চাষ বাড়ানো যাবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত