Ajker Patrika

হাট ছড়াতে পারে ডেল্টা ধরন

ফায়সাল করিম, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১৮ জুলাই ২০২১, ১২: ৪৭
হাট ছড়াতে পারে ডেল্টা ধরন

নগরীতে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত জেলা থেকে আসছে ট্রাক ট্রাক গরু—সঙ্গে দলে দলে ব্যাপারীরাও। অথচ এসব জেলায় গত মে মাস থেকে করোনার ভারতীয় ধরন ছড়াতে শুরু করে। ভয়াবহ হয়ে ওঠে সংক্রমণ। জুনে এ ধরনের হটস্পট হয়ে ওঠায় সীমান্তের ২১ জেলায় জারি করা হয় কঠোর বিধিনিষেধ ও লকডাউন। 

দুই মাসে এসব জেলায় পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হলেও এখনো থামেনি সংক্রমণ আর মৃত্যু। অথচ এর মধ্যেই এসব জেলা থেকে কোরবানির পশু আর বিপুলসংখ্যক ব্যাপারী আসছেন চট্টগ্রামের হাটে। ফলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে নতুন করে এসব হাট করোনার হটস্পট হয়ে পড়ে কি না। 

নগরীর তিনটি পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে—এসব জেলা থেকে গরু নিয়ে আসা ব্যাপারীদের অধিকাংশই মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। কোনো ধরনের তাপমাত্রা পরীক্ষা ও তদারকি ছাড়াই তাঁরা হাটে আসছেন। মাস্ক ও সামাজিক দূরত্ব ছাড়াই ক্রেতার সঙ্গে করছেন দরদাম। 

বিবিরহাট গরুর বাজারের ইজারাদার মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘শনিবার পর্যন্ত বাইরের জেলা থেকে অন্তত ২৫০ ট্রাক গরু এসেছে। আসবে আরও ৫০০ ট্রাকের মতো। এসব ট্রাকে গড়ে পাঁচ থেকে ছয়জন করে ব্যাপারী এসেছেন।’ অর্থাৎ বাইরের জেলার অন্তত সাড়ে চার হাজার ব্যাপারী ও ব্যবসায়ীর কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠবে এই বাজার। যাঁদের অধিকাংশই কুষ্টিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, যশোর, রংপুর, নাটোর ও লালমনিরহাটের মতো সীমান্ত জেলার।

অন্যদিকে সাগরিকার ইজারাদারদের তথ্যে, বিবিরহাটের মতো এখানেও বাইরের জেলার চার–পাঁচ হাজার গরুর ব্যাপারী ভিড় করবেন। 

গতকাল শনিবার দুপুরে বিবিরহাট বাজারে কথা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক গরুর ব্যাপারীর সঙ্গে। করোনার ঝুঁকি থাকায় স্বাস্থ্যবিধি মানছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘করোনা–টরোনা আমাদের কিছু করবে না। তবে পকেটে মাস্ক রেখেছি। প্রয়োজন হলে পরব।’

বিবিরহাট বাজারে অধিকাংশ বিক্রেতাকেই স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। সাগরিকা গরু বাজারের ভাগিনার মাঠে কুষ্টিয়া থেকে গরু নিয়ে এসেছেন ব্যাপারী আলমগীর। দলে দলে ক্রেতা এলেও কোনো মাস্ক ছিল না তাঁর মুখে। কথায় কথায় জানা গেল, গত জুনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তাঁর শাশুড়ি। তবুও কেন মাস্ক ছাড়া বেচাবিক্রি করছেন—জিজ্ঞেস করতেই উত্তর দিলেন, ‘এসব অসুস্থ আর বুড়োদের ভয়।’ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে কর্তৃপক্ষের তৎপরতা থাকলেও হাটের ভেতরে ব্যাপারীদের নিয়ম মানাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আল ফোরকান  বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রামে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি নিয়ে নতুন করে একটি জরিপ করছি। সীমান্তের জেলা থেকে আসা গরু ব্যবসায়ীদের কঠোর স্বাস্থ্যবিধির আওতায় আনা না গেলে এখানে নিশ্চিতভাবেই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের আধিক্য দেখা দেবে।’

জেলা সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘আমি মনে করি ইতিমধ্যেই কমিউনিটি সংক্রমিত হয়ে গেছে। যাঁদের করোনা হচ্ছে, বেশির ভাগের ভারতীয় ধরনই হবে। হাটে যদি স্বাস্থ্যবিধি মানা না হয়, তবে এটি তো আরও ছড়িয়ে পড়বেই।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা বেগম নেলী বলেন, ‘এটি নিয়ে আমরাও চিন্তায় আছি। তাই হাটে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে আমরা আগের চেয়ে বেশি তৎপরতা চালাচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত