Ajker Patrika

নামের মিলে নিরপরাধ অসুস্থ যুবকের কারাবাস, ঋণ করে জামিন করালেন দরিদ্র বাবা

ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি
নামের মিলে নিরপরাধ অসুস্থ যুবকের কারাবাস, ঋণ করে জামিন করালেন দরিদ্র বাবা

আদালতে বা থানায় কোনো মামলা নেই। শুধু নামের মিলের কারণে কারাভোগ করতে হলো আরিফ হোসেন (৩৬) নামের এক নির্দোষ ব্যক্তিকে। পুলিশের একজন সহকারী উপপরিদর্শকের (এএসআই) গাফিলতির কারণে মামলার আসামি না হয়েও মৃগীরোগী আরিফকে এক দিন কারাবাস করতে হয়। পরে আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হন তিনি। 

যে মামলায় আরিফকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে, সেই মামলার আসামি আরিফ বর্তমানে ইতালিপ্রবাসী। 

ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের সাহাপুর ও ইছাপুরা পাশাপাশি দুটি গ্রাম। জমি-সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে সাহাপুর গ্রামের কাশেম আলীর স্ত্রী রোকেয়া বেগম তাঁর দেবর আমিন উল্ল্যার ছেলে আরিফসহ (২৬) কয়েকজনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন। ওই মামলায় অভিযুক্ত আরিফের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আসে ফরিদগঞ্জ থানায়। 

থানার এএসআই নুরুন্নবী পরোয়ানা ভালো করে না দেখে গত ২৩ নভেম্বর বেলা ১১টার দিকে ওই ইউনিয়নের ইছাপুরা গ্রামের আমিন হকের ছেলে আরিফ হোসেনকে গ্রেপ্তার করে থানায় নেন। ওই দিনই তাঁকে চাঁদপুর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। 

আরিফের পরিবারের জামিন আবেদন আদালতে মঞ্জুর হলে পরদিন দুপুর ২টার দিকে আরিফ মুক্তি পান। বাড়িতে এসে জানতে পারেন, যে মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল; সে মামলার প্রকৃত আসামি সাহাপুর গ্রামের আরিফ। ২৬ নভেম্বর চাঁদপুর আদালত থেকে মামলার নথি উঠিয়ে তাঁরা বিষয়টি নিশ্চিত হন। 

আরিফের বাবা আমিন হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পুলিশের এএসআই নুরুন্নবী আমার ছেলে আরিফের নামে ওয়ারেন্ট আছে বলে রাস্তা থেকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যান। তাঁর নামে কোনো মামলা নেই এবং মৃগীরোগী বললেও পুলিশ তাতে কর্ণপাত করেনি। পরে জানতে পারি পার্শ্ববর্তী সাহাপুর গ্রামের কাশেম আলীর স্ত্রী রোকেয়া বেগমের করা মামলার আসামি হিসেবে আমার ছেলেকে আটক করা হয়েছে। অথচ ওই মামলার আসামি আরিফ বর্তমানে ইতালিপ্রবাসী। আমি ধারদেনা করে ছেলেকে জামিনে মুক্ত করেছি।’ 

মামলার বাদী রোকেয়া বেগম বলেন, ‘পুলিশ যে আরিফকে ধরেছে, সে আমার মামলার আসামি আরিফ না। আমার দেবরের ছেলে আরিফ বর্তমানে প্রবাসে রয়েছে।’ 

সাহাপুরের আরিফ বর্তমানে ইতালিতে রয়েছেন বলে তাঁর ভাই মাসুদ হোসেন নিশ্চিত করেছেন। 

ফরিদগঞ্জ থানার এএসআই নুরুন্নবী বলেন, ‘ওয়ারেন্টের সঙ্গে নাম-ঠিকানা মিলে যাওয়ায় তাঁকে আমি আটক করি। আদালত মনে করলে আমাকে তলব করবে।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। সঠিক কি না খোঁজ নিয়ে দেখব। পুলিশ কর্তৃক নির্দোষ কেউ হয়রানির শিকার হলে দুঃখ প্রকাশ করছি। পুলিশ মানুষের জান মালের নিরাপত্তার স্বার্থে কাজ করে আসছে। ঘটনা সত্য হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনাকবলিত বাসে ট্রাকের ধাক্কা, দুই যাত্রী নিহত

ফরিদপুর প্রতিনিধি
দুর্ঘটনাকবলিত বাস। ছবি: আজকের পত্রিকা
দুর্ঘটনাকবলিত বাস। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় গভীর রাতে দুর্ঘটনাকবলিত একটি যাত্রীবাহী বাসে পেছন থেকে দ্রুতগতির ট্রাকের ধাক্কায় দুই যাত্রী নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত পাঁচজন। হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিহত ও আহত ব্যক্তিরা দুর্ঘটনাকবলিত বাস থেকে নেমে সামনে দাঁড়িয়েছিল। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গা উপজেলার তাড়াইল বাসস্ট্যান্ড এলাকার ভাঙ্গামুখী লেনে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন পাবনার বেড়া থানার বনগ্রামের ফারজানা বেগম (৩০) এবং মাগুরা জেলার মিনহাজুল রহমান শাকিল (২৪)। এ সময় ফারজানা বেগমের কোলে থাকা দেড় বছরের শিশুকন্যা জান্নাতুল গুরুতর আহত হয়। শিশুটিকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ঢাকা থেকে সাতক্ষীরাগামী ‘যমুনা লাইনের’ একটি যাত্রীবাহী বাস প্রথমে সামনে থাকা একটি ট্রাককে ধাক্কা দেয়। এতে বাসের সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এই সময় বাসের ১০ থেকে ১২ জন যাত্রী নেমে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছিল। কিছুক্ষণ পর আরেকটি মালবাহী ট্রাক দ্রুতগতিতে এসে দাঁড়িয়ে থাকা বাসটির পেছনে সজোরে ধাক্কা দেয়। ফলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা চাপা পড়ে ও ছিটকে যায়।

ওসি জানান, ঘটনাস্থলেই মিনহাজুল নামে যুবক মারা যান। আহত ব্যক্তিদের ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক ফারজানা বেগমকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর কোলে থাকা শিশুটিকে তাৎক্ষণিকভাবে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এই ঘটনায় দুর্ঘটনাকবলিত বাস ও ট্রাক আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খাগড়াছড়িতে শিক্ষিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেপ্তার

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি 
গ্রেপ্তার লিটন ত্রিপুরা। ছবি: সংগৃহীত
গ্রেপ্তার লিটন ত্রিপুরা। ছবি: সংগৃহীত

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় এক স্কুলশিক্ষিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে লিটন ত্রিপুরা (২৪) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়।

‎মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে ওই শিক্ষিকা তাঁর বন্ধুকে নিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে আলুটিলা এলাকায় বেড়াতে যান। ওই সময় লিটন ত্রিপুরা তাঁদেরকে অনুসরণ করেন। আলুটিলায় তারেং এলাকায় পৌঁছানোর পর মোটরসাইকেলচালক লিটন অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ওই শিক্ষিকাকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের পর ১০ হাজার টাকাও দাবি করেন। পরে ভুক্তভোগীর বন্ধু স্থানীয় সেনাক্যাম্পে খবর দিলে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় বাসিন্দারা মিলে লিটন ত্রিপুরাকে আটক করে। এরপর তাঁকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। 

মাটিরাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে আমরা ধর্ষণের অভিযোগে মোটরসাইকেলচালক লিটন ত্রিপুরাকে গ্রেপ্তার করি। তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইন মামলা হয়েছে। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যমুনা রেলসেতুর পিলারে ফাটল, কর্তৃপক্ষ বলছে গঠনগত কোনো সমস্যা নয়

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি  
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ২৭
পিলারে দেখা যায় চুলের মতো সরু ফাঁকা। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
পিলারে দেখা যায় চুলের মতো সরু ফাঁকা। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

যমুনা রেলসেতুর পিলারে দেখা দেওয়া কিছু ফাটলের ছবি সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ বলছে, এগুলো আসলে ফাটল নয়, বরং প্রচণ্ড গরমের কারণে সৃষ্ট সূক্ষ্ম ‘হেয়ার ক্র্যাক’ বা সরু ফাটল। বৃহস্পতিবার থেকে একাধিক ফেসবুক পেজে এসব ফাটলের ছবি দেখা যাচ্ছে।

যমুনা রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের সহকারী প্রধান প্রকৌশলী মো. নাইমুল হক বলেন, যমুনা রেলসেতুতে কোথাও কোনো ফাটল ধরেনি। কোনো পিলারে ফাটলের চিহ্নও নেই। একটি চক্র এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে ফাটলের ছবি তৈরি করেছে এবং সেগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে গুজব ছড়িয়েছে।

যমুনা রেলসেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক মার্ক হ্যাবি বলেন, রেলসেতুর পশ্চিম প্রান্তের ৮-১০টি পিলারের নিচে হেয়ার ক্র্যাক শনাক্ত হয়েছে। এসব জায়গায় ইতিমধ্যে রেজিন বা বিশেষ আঠার প্রলেপ দিয়ে মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে।

মার্ক হ্যাবি আরও বলেন, এটি কোনো নির্মাণ ত্রুটি নয়, এমনকি ‘হানিকম্ব’ সমস্যাও নয়। প্রচণ্ড গরম ও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে কংক্রিটের নিচে শূন্য দশমিক ১ থেকে ৩ মিলিমিটার পর্যন্ত সূক্ষ্ম ফাঁক তৈরি হয়েছে। এতে সেতুর গঠন বা স্থায়িত্বে কোনো প্রভাব পড়বে না।

প্রকল্প ব্যবস্থাপক জানান, এসব হেয়ার ক্র্যাক ধীরে ধীরে ঘষে মেরামত করা হচ্ছে। সেতুর কাঠামো বা ট্রেন চলাচলে কোনো ঝুঁকি নেই। তিনি অভিযোগ করেন, কেউ কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছবি বড় করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর।

উল্লেখ্য, যমুনা সেতুর প্রায় ৩০০ মিটার ভাটিতে ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে দেশের দীর্ঘতম রেলসেতু। ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুতে রয়েছে ৫০টি পিলার ও ৪৯টি স্প্যান। এটি ২০২৫ সালের ১৮ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।

সেতুটিতে আসা-যাওয়ার দুটি লাইন (ডুয়েলগেজ ট্র্যাক) রয়েছে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন সেতুর একটি লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নরসিংদীতে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় ইজিবাইকের চালকসহ নিহত ৩

নরসিংদী প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নরসিংদীর মাধবদীতে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের চালকসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মাধবদীর রাইনাদী এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন সদর উপজেলার নুরালাপুর ইউনিয়নের রাইনাদী গ্রামের আজিজুল ইসলামের ছেলে সিয়াম মিয়া (২২), আলতাফ হোসেনের ছেলে সাব্বির হোসেন (২৮) ও রবিউল ইসলামের ছেলে অটোচালক ফাহিম মিয়া (৩০)।

নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা জানান, রাতে ইজিবাইকে করে তিনজন মাধবদীর দিক থেকে রাইনাদী এলাকায় যাচ্ছিলেন। ইজিবাইকটি মহাসড়ক পার হওয়ার সময় ঢাকা থেকে সিলেটগামী দ্রুতগতির বাসটি ইজিবাইককে চাপা দেয়। এ সময় দুজন ঘটনাস্থলে নিহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যান আরও একজন।

ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন বলেন, দ্রুতগতির যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় ঘটনাস্থলে দুজন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও একজন মারা গেছেন। ঘটনার পর পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে। বাসটি জব্দ করা হলেও পালিয়ে গেছেন বাসের চালক ও তাঁর সহযোগী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত