Ajker Patrika

বালু উত্তোলনে হুমকির মুখে ইলিশের প্রজনন

  • মানা হচ্ছে না জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটির নির্দেশনা।
  • রাবনাবাদ, পাটুয়া নদীসহ বিভিন্ন চর থেকে বালু তোলা হচ্ছে।
  • আগামী ইলিশ মৌসুমে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
পটুয়াখালী প্রতিনিধি
নদী থেকে খননযন্ত্র (ড্রেজার) দিয়ে চলছে বালু উত্তোলনের কর্মকাণ্ড। ছবি: সংগৃহীত
নদী থেকে খননযন্ত্র (ড্রেজার) দিয়ে চলছে বালু উত্তোলনের কর্মকাণ্ড। ছবি: সংগৃহীত

প্রজননের মৌসুম হওয়ায় ইলিশ ধরায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। ইলিশ রক্ষায় চালানো হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানও। কিন্তু থেমে নেই নদী থেকে খননযন্ত্র (ড্রেজার) দিয়ে বালু উত্তোলনের কর্মকাণ্ড। পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরসংলগ্ন রাবনাবাদ, পাটুয়া নদীসহ জেলার বিভিন্ন নদীর চর থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করছে কয়েকটি অসাধু চক্র। এতে ইলিশের প্রজনন প্রক্রিয়া বিঘ্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে এই সময়ে খননযন্ত্রের কার্যক্রম বন্ধ রাখা অত্যন্ত জরুরি। দ্রুত এসব বন্ধ করা না গেলে আগামী ইলিশ মৌসুমে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলেও সতর্ক করছেন তাঁরা।

ইলিশ প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে সাগরের মোহনা ও নদীতে ড্রেজিং এবং বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটি। পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন জেলার উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির মাসিক সভায়ও জেলার সব স্থানে কোনো ধরনের বালু উত্তোলন কিংবা ড্রেজিং না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু তাঁদের এই সিদ্ধান্ত না মেনে দিনরাত সমান তালে চলছে সাগরের মোহনা ও নদী থেকে বালু উত্তোলনের কর্মকাণ্ড।

সরেজমিনে জেলার কলাপাড়া উপজেলার রামনাবাদ নদীর তীর এলাকায় গত কয়েক দিনে দেখা গেছে, খননযন্ত্র দিয়ে বালু তুলে বাল্কহেডে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জেলার বিভিন্ন এলাকায়।

এ বিষয়ে কথা হয় রামনাবাদ নদীতীরের বাসিন্দা মো. ইয়াকুব আলী সঙ্গে। তিনি বলেন, দিনরাত নির্বিচারে নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এ কারণে ঘরবাড়িও নদীভাঙনের কবলে পড়ার হুমকিতে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বাধা দিতে গেলে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের হুমকি-ধমকির শিকার হতে হয়। অনেক সময় হামলা-মামলা দিয়েও হয়রানি করা হয়। তাই ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।’

রাবনাবাদ নদীতে নোঙর করে থাকা লোড ড্রেজার বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজের কর্মচারী রবিউল ও রাহাত হোসেন বলেন, ‘তিন মাস ধরে এই নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে বালু উত্তোলন করছি। আমাদের কোম্পানির নির্দেশনা অনুযায়ী বালু উত্তোলন করে থাকি। প্রতিদিন ৫-৬টি বাল্কহেড পূর্ণ করে দিই আমরা। মাসে ৬-৭ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করা হয়।’

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. লোকমান আলী বলেন, ইলিশের প্রজনন মৌসুমে ড্রেজার বন্ধ রাখা খুবই জরুরি। কারণ, ইলিশ মাছ নদীতে যখন ডিম ছাড়ে, ডিম পানিতে মিশে যায়। এ সময় ড্রেজার চালানো হলে পানি ও বালুর সঙ্গে অনেক ডিম উঠে আসবে এবং অনেক ডিম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ছাড়া ড্রেজারের শব্দে নদীতে ইলিশের চলাচলেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। তাই ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে এই সময় ড্রেজার বন্ধ রাখা অত্যন্ত জরুরি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এই সময় নদ-নদীতে সব ধরনের ড্রেজিং বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে টাস্কফোর্স কমিটি এবং সেটি জেলা প্রশাসনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত তাঁদের।’

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। যদি কেউ এমনটা করে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাস্তায় নারীকে চড় মেরে বাইকচালক বললেন, ‘নিজের দেশে ফিরে যাও!’

ইরানের জন্য ইসরায়েলকে বিসর্জন দেবে রাশিয়া?

নেতানিয়াহু বাংকারে লুকিয়ে, ট্রাম্পের একটি ফোনকলই যথেষ্ট: ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ইরানের ভান্ডারে কত ক্ষেপণাস্ত্র আছে—কত দিন যুদ্ধ চলবে এতে

মেয়াদের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় চালুর পরিকল্পনা সরকারের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত