Ajker Patrika

রাতের আঁধারে ‘কোপা ড্রেজার’ দিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি

মুলাদী (বরিশাল) প্রতিনিধি 
মুলাদীতে রাতের আঁধারে ফসলি জমি থেকে কোপা ড্রেজার দিয়ে মাটি তোলা হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
মুলাদীতে রাতের আঁধারে ফসলি জমি থেকে কোপা ড্রেজার দিয়ে মাটি তোলা হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশালের মুলাদীতে রাতের আঁধারে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে স্থানীয় বিএনপি কর্মীরা বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার সফিপুর ইউনিয়নের চরমালিয়া ও ভেদুরিয়া গ্রামের মাঝে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ায় ধীরে ধীরে খালের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ঝুঁকির মুখে পড়েছে প্রায় ২০ একর ফসলি জমি। চরমালিয়া গ্রামের কামাল সিকদার ও কাঞ্চন সিকদারের নেতৃত্বে সাত-আটজন বিএনপি নেতা-কর্মী ফসলি জমি নষ্ট করে মাটি কেটে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন জমির মালিকেরা। এ ব্যাপারে স্থানীয় কৃষক ও জমির মালিকেরা ফসলি জমি রক্ষার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত আবেদন করলে এখন দিনের বদলে রাতের আঁধারে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সফিপুর ইউনিয়নের চরমালিয়া ও ভেদুরিয়া বিলের বেশির ভাগ জমিতে আমন, বোরো ধান, পাট, সরিষাসহ দুই-তিনটি ফসল হয়। কয়েক মাস আগে ওই গ্রামের কাঞ্চন সিকদার ও কামাল সিকদারের নেতৃত্বে এলাকার কয়েকজন বিএনপি কর্মী ‘কোপা ড্রেজার’ ব্যবসা শুরু করেন। তাঁরা ওই ড্রেজার দিয়ে জোরপূর্বক ফসলি জমির মাটি নিয়ে এলাকার ডোবা ও নিচু জমি ভরাটের ব্যবসা করছেন। এসব ব্যবসায়ী ডোবা ভরাটের জন্য টাকা নিলেও জমির মালিকদের কোনো টাকা-পয়সা দেন না। রাতের আঁধারে মাটি কেটে নেওয়ায় মালিকেরা জমি রক্ষা করতে পারছেন না।

চরমালিয়া গ্রামের বাসিন্দা নান্নু আকন জানান, জমির মালিকদের না জানিয়ে বিএনপি কর্মীরা ডোবা, পুকুর, নিচু এলাকা ভরাটের জন্য ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ায় সেখানে পুকুর তৈরি হয়েছিল। অব্যবহৃত মাটি নেওয়ায় বর্তমানে খাল তৈরি হচ্ছে। এতে অনেক ফসলি জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এভাবে মাটি কেটে নিতে থাকলে দুই গ্রামের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

ভেদুরিয়া গ্রামের জমির মালিক মোতালেব হোসেন সরদার অভিযোগ করেন, ফসলি জমি রক্ষার জন্য ইউএনওর কাছে আবেদনের পর বিএনপির লোকজন প্রশাসনকে ম্যানেজ করে রাতের আঁধারে ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটছেন। তাঁদের কিছু বললে এলাকাছাড়া করার হুমকি দিচ্ছেন।

সফিপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বার) মো. হান্নান চৌকিদার বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে যুবলীগের সদস্য সেলিম মল্লিক ড্রেজারটি দিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে ব্যবসা করতেন। এখন ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী কাঞ্চন সিকদার ড্রেজারটি কিনে নিয়েছেন। তিনি কামাল সিকদার, রশিদ সিকদারসহ এলাকার বিএনপির লোকজন নিয়ে মাটি ভরাটের ব্যবসা করছেন। তাঁদের বাধা দিয়েও ফসলি জমি রক্ষা করা যাচ্ছে না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কাঞ্চন সিকদার নিজেকে ইউনিয়ন বিএনপি কর্মী পরিচয় দিয়ে বলেন, বিগত দিনে আওয়ামী লীগের লোকেরা ওই বিল থেকে মাটি কেটে ব্যবসা করতেন, তখন কেউ প্রতিবাদ করেননি। বর্তমানে বিএনপির লোকজন ব্যবসা করবেন, এতে বাধা দেওয়ার কিছু নেই। জমির মালিকদের অনুমতি ছাড়া মাটি কেটে বিক্রি করা হয় না।

ইউএনও মো. নিজাম উদ্দিন জানান, ফসলি জমি রক্ষায় স্থানীয় বাসিন্দাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ পাঠিয়ে ড্রেজার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন আবার রাতের আঁধারে মাটি কাটার বিষয়ে স্থানীয় কৃষক ও জমির মালিকেরা অভিযোগ করেছেন। রাতে অভিযান চালিয়ে ড্রেজার বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত