রুখসানা কাজল
আমাদের তারুণ্যকে তিনি একঘেয়ে স্বপ্ন থেকে বের করে এনেছিলেন। চুরমার করে দিয়েছিলেন তথাকথিত সুখসম্পন্ন জীবনের কল্পনা বিলাসকে। আমরা কেবলই অনিমেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। কখনো মাধবীলতা। আমাদের স্বপ্নে ঢুকে পড়েছিল শ্রেণিহীন সমাজব্যবস্থার দীপ্র আহ্বান। রাজপথ সে তো ছিল রণাঙ্গন। নব্বইয়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী বাদে আমরা সবাই ছিলাম অনিমেষ। এরশাদ বিরুদ্ধ আন্দোলনে তখন প্রতিদিন মিছিল, মিটিং। সন্ধ্যায় ট্রাক মিছিল। স্লোগানে, গানে ঢাকা শহর ছাড়িয়ে আমাদের আন্দোলন ছড়িয়ে গিয়েছিল দেশের প্রতিটি কোণে।
বিপ্লবের লাল কাজল আমাদের উদ্বুদ্ধ করে তুলেছিল তীব্র লড়াইয়ের মানসিকতায়। ক্লান্তিতে ভেঙে পড়লে আমরা ডেস্ক খুলে বের নিতাম কালবেলা, কালপুরুষকে। যখন খবর পেতাম ‘অমুক’কে অ্যারেস্ট করে নিয়ে গেছে, সে এক বিশাল আন্দোলন ফুঁসে উঠত বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে।
আমাদের এই স্বপন সাহসের নির্মাতা আজ অসীমের ডাকে চলে গেলেন মহা নিলয়ে। আংরাভাসার জলে যে স্বপ্ন তিনি বুনে নিয়েছিলেন, স্বর্গছেড়া চা বাগানের পথ বেয়ে যিনি দুই বাংলার তারুণ্যকে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন সেই প্রিয় মানুষ, প্রিয় লেখক সমরেশ মজুমদার আজ এই নশ্বর পৃথিবীকে ফেলে চলে গেলেন।
কালের নিয়মে বয়েস বেড়েছিল লেখকের মানব শরীরের। অসুস্থ ছিলেন অনেক দিন। একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। কিন্তু আজ, তিনি পৃথিবীর জাগতিক জীবন থেকে ছুটি নিলেন।
সমরেশ মজুমদার জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪২ সালের ১০ মার্চ। শৈশব কেটেছে ডুয়ার্সের চা বাগানের সবুজে। জলজংগলের সঙ্গে চা বাগানের শ্রমিক কুলিদের জীবন তাঁর মনকে করে তুলেছিল সংবেদনশীল।
১৯৬০ সালে তিনি কলকাতা এসেছিলেন জেলা শহর জলপাইগুড়ি জেলা ইশকুলের শিক্ষা শেষ করে। স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
মঞ্চনাটক দিয়ে শুরু করেছিলেন সাহিত্যচর্চা। প্রথম উপন্যাস ‘দৌড়’ প্রচণ্ড গতিময়তা নিয়ে লেখা।
দৌড় দিয়ে খুলেছিলেন উপন্যাস লেখার জগতের দ্বার। এরপর উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ। সে এক অবাক সাহিত্য যাত্রা। আমরা জেনে যাচ্ছিলাম নকশাল আন্দোলন সম্পর্কে। ধারণা হচ্ছিল পুঁজিবাদী রাক্ষসদের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে কত কত তরুণ মেধাবী প্রাণের ঝরে যাওয়া সম্পর্কে। আরও জেনে যাচ্ছিলাম, নকশাল নেতা চারু মজুমদারের জীবন। একজন স্বপ্নবাজ মানুষ অসহায়ের মতো মারা গেলেও তাঁর স্বপ্ন ছড়িয়ে পড়েছিল দুই বাংলার তরুণদের মধ্যে। ভুল কি শুদ্ধ সে বিচার না করে আমরা কেবল শুদ্ধ করে নিয়েছিলাম, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার দুর্জয় সাহসকে।
আমাদের তারুণ্যের সেই স্বপ্ন নকশাল আন্দোলনের মতোই চুরচুর হয়ে গেছে। সমরেশ মজুমদার সেই চূর্ণবিচূর্ণ স্বপ্নকে নিয়ে লিখলেন ‘মৌষলকাল’। উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষের শেষতম সংযোজন।
সমরেশ মজুমদার ১৯৮২ সালে পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার। ভারতের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারেও তিনি ভূষিত হয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে, ‘বঙ্গবিভূষণ’ খেতাব দিয়ে সম্মানিত করেছিলেন। আজ তিনি ভেসে গেলেন আংরাভাসার জলে।
যারা বিশ্বাস করেন, কবি সাহিত্যিক, লেখক, ঔপন্যাসিকেরা ভবিষ্যৎ দেখতে পান, তাঁরা ঠিক বলেন। আজকের বাংলাদেশ ও ভারতে যে উদ্বাহু ক্ষমতার নির্লজ্জ প্রকাশ এবং বাস্তবায়ন হচ্ছে, যে রাষ্ট্রব্যবস্থায় গরিবের কোনো স্থান নেই, বেঁচে থাকার জন্য মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তের প্রতিনিয়ত নাভিশ্বাস উঠছে, নারীর অসম্মান, শিশুর নিরাপত্তার অভাব দেখা দিচ্ছে, সমরেশ মজুমদার কিন্তু বলে গেছেন, এইই হচ্ছে ‘মৌষলকাল’।
বিক্ষিপ্ত মনে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি প্রিয় লেখককে।
বাংলাদেশকে বড্ড ভালোবাসতেন তিনি। বইমেলায় এলে খুশি হতেন। জেনে গিয়েছিলেন, বাংলাদেশের পাঠকরাও তাঁকে বড় ভালোবাসত। আজ আমাদের শোকের দিন। আমাদের রাত আজ কালো হয়ে নেমে এসেছে বুকের কাছে। আমরা অনিমেষ–মাধবীলতা হতে চেয়েও পারিনি। কিন্তু বড় ভালোবেসেছি লেখক সমরেশ মজুমদারকে। আমাদের শ্রদ্ধা বহতা রইল প্রিয়।
আমাদের তারুণ্যকে তিনি একঘেয়ে স্বপ্ন থেকে বের করে এনেছিলেন। চুরমার করে দিয়েছিলেন তথাকথিত সুখসম্পন্ন জীবনের কল্পনা বিলাসকে। আমরা কেবলই অনিমেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। কখনো মাধবীলতা। আমাদের স্বপ্নে ঢুকে পড়েছিল শ্রেণিহীন সমাজব্যবস্থার দীপ্র আহ্বান। রাজপথ সে তো ছিল রণাঙ্গন। নব্বইয়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী বাদে আমরা সবাই ছিলাম অনিমেষ। এরশাদ বিরুদ্ধ আন্দোলনে তখন প্রতিদিন মিছিল, মিটিং। সন্ধ্যায় ট্রাক মিছিল। স্লোগানে, গানে ঢাকা শহর ছাড়িয়ে আমাদের আন্দোলন ছড়িয়ে গিয়েছিল দেশের প্রতিটি কোণে।
বিপ্লবের লাল কাজল আমাদের উদ্বুদ্ধ করে তুলেছিল তীব্র লড়াইয়ের মানসিকতায়। ক্লান্তিতে ভেঙে পড়লে আমরা ডেস্ক খুলে বের নিতাম কালবেলা, কালপুরুষকে। যখন খবর পেতাম ‘অমুক’কে অ্যারেস্ট করে নিয়ে গেছে, সে এক বিশাল আন্দোলন ফুঁসে উঠত বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে।
আমাদের এই স্বপন সাহসের নির্মাতা আজ অসীমের ডাকে চলে গেলেন মহা নিলয়ে। আংরাভাসার জলে যে স্বপ্ন তিনি বুনে নিয়েছিলেন, স্বর্গছেড়া চা বাগানের পথ বেয়ে যিনি দুই বাংলার তারুণ্যকে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন সেই প্রিয় মানুষ, প্রিয় লেখক সমরেশ মজুমদার আজ এই নশ্বর পৃথিবীকে ফেলে চলে গেলেন।
কালের নিয়মে বয়েস বেড়েছিল লেখকের মানব শরীরের। অসুস্থ ছিলেন অনেক দিন। একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। কিন্তু আজ, তিনি পৃথিবীর জাগতিক জীবন থেকে ছুটি নিলেন।
সমরেশ মজুমদার জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪২ সালের ১০ মার্চ। শৈশব কেটেছে ডুয়ার্সের চা বাগানের সবুজে। জলজংগলের সঙ্গে চা বাগানের শ্রমিক কুলিদের জীবন তাঁর মনকে করে তুলেছিল সংবেদনশীল।
১৯৬০ সালে তিনি কলকাতা এসেছিলেন জেলা শহর জলপাইগুড়ি জেলা ইশকুলের শিক্ষা শেষ করে। স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
মঞ্চনাটক দিয়ে শুরু করেছিলেন সাহিত্যচর্চা। প্রথম উপন্যাস ‘দৌড়’ প্রচণ্ড গতিময়তা নিয়ে লেখা।
দৌড় দিয়ে খুলেছিলেন উপন্যাস লেখার জগতের দ্বার। এরপর উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ। সে এক অবাক সাহিত্য যাত্রা। আমরা জেনে যাচ্ছিলাম নকশাল আন্দোলন সম্পর্কে। ধারণা হচ্ছিল পুঁজিবাদী রাক্ষসদের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে কত কত তরুণ মেধাবী প্রাণের ঝরে যাওয়া সম্পর্কে। আরও জেনে যাচ্ছিলাম, নকশাল নেতা চারু মজুমদারের জীবন। একজন স্বপ্নবাজ মানুষ অসহায়ের মতো মারা গেলেও তাঁর স্বপ্ন ছড়িয়ে পড়েছিল দুই বাংলার তরুণদের মধ্যে। ভুল কি শুদ্ধ সে বিচার না করে আমরা কেবল শুদ্ধ করে নিয়েছিলাম, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার দুর্জয় সাহসকে।
আমাদের তারুণ্যের সেই স্বপ্ন নকশাল আন্দোলনের মতোই চুরচুর হয়ে গেছে। সমরেশ মজুমদার সেই চূর্ণবিচূর্ণ স্বপ্নকে নিয়ে লিখলেন ‘মৌষলকাল’। উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষের শেষতম সংযোজন।
সমরেশ মজুমদার ১৯৮২ সালে পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার। ভারতের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারেও তিনি ভূষিত হয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে, ‘বঙ্গবিভূষণ’ খেতাব দিয়ে সম্মানিত করেছিলেন। আজ তিনি ভেসে গেলেন আংরাভাসার জলে।
যারা বিশ্বাস করেন, কবি সাহিত্যিক, লেখক, ঔপন্যাসিকেরা ভবিষ্যৎ দেখতে পান, তাঁরা ঠিক বলেন। আজকের বাংলাদেশ ও ভারতে যে উদ্বাহু ক্ষমতার নির্লজ্জ প্রকাশ এবং বাস্তবায়ন হচ্ছে, যে রাষ্ট্রব্যবস্থায় গরিবের কোনো স্থান নেই, বেঁচে থাকার জন্য মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তের প্রতিনিয়ত নাভিশ্বাস উঠছে, নারীর অসম্মান, শিশুর নিরাপত্তার অভাব দেখা দিচ্ছে, সমরেশ মজুমদার কিন্তু বলে গেছেন, এইই হচ্ছে ‘মৌষলকাল’।
বিক্ষিপ্ত মনে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি প্রিয় লেখককে।
বাংলাদেশকে বড্ড ভালোবাসতেন তিনি। বইমেলায় এলে খুশি হতেন। জেনে গিয়েছিলেন, বাংলাদেশের পাঠকরাও তাঁকে বড় ভালোবাসত। আজ আমাদের শোকের দিন। আমাদের রাত আজ কালো হয়ে নেমে এসেছে বুকের কাছে। আমরা অনিমেষ–মাধবীলতা হতে চেয়েও পারিনি। কিন্তু বড় ভালোবেসেছি লেখক সমরেশ মজুমদারকে। আমাদের শ্রদ্ধা বহতা রইল প্রিয়।
সামগ্রিকভাবে পশ্চিমা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিল্পকর্মকে ‘বুর্জোয়া’ ও ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ বলে চিহ্নিত করে নিষিদ্ধ করা হয় চীনে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই শেকসপিয়ারের সব সাহিত্যকর্ম—যেমন হ্যামলেট, ম্যাকবেথ, রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট, ওথেলো ইত্যাদি—চীনে নিষিদ্ধ হয়, কারণ সেগুলোতে চীনা কমিউনিস্ট আদর্শের ‘সঠিক রাজনৈতিক
১৪ দিন আগেকবি নজরুল ইসলামের বহুল পরিচিতি ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে, কিন্তু নজরুল উঁচুমার্গের ‘সাম্যবাদী কবি’ও বটেন। নজরুলের সাম্যচিন্তা তাঁর জীবনের বাস্তবতা থেকে উদ্ভূত। তাঁর শৈশব-কৈশোরের জীবন-অভিজ্ঞতা, তাঁর যৌবনের যাপিত জীবন তাঁকে বাস্তব পৃথিবীর দারিদ্র্য, অসমতা ও অসাম্যের সঙ্গে পরিচিত করেছে অত্যন্ত নগ্নভাবে...
১৪ দিন আগেবাংলা সাহিত্যে জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের মধ্যে নজরুল অন্যতম। সাধারণত জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের বেলায় দেখা যায় কালের সীমা অতিক্রম করলে তাঁদের নাম ইতিহাসের পাতায় আর পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে নজরুলের জীবন ও সাহিত্য কালের সীমা অতিক্রম করে আজও পাঠকপ্রিয় হয়ে আছে। এর মূলে রয়েছে তাঁর সচেতন জীবনবোধ...
১৪ দিন আগেনজরুলকে ভুল ভাবে পড়ার আরেকটি বড় উদাহরণ হলো তাঁকে প্রায়শই রবীন্দ্রনাথের ‘প্রতিপক্ষ’ হিসেবে দাঁড় করানোর রাজনৈতিক প্রবণতা। এই আইডেনটিটি পলিটিকস শুধু বিভাজন তৈরি করে না, নজরুলের মৌলিক অবস্থানকেও বিকৃত করে।
১৫ দিন আগে