Ajker Patrika

নাসরুল্লাহর ওপর হামলায় ইসরায়েলকে যে পরিণতি ভোগ করতে হবে

দ্য গার্ডিয়ান 
আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮: ২৯
Thumbnail image

লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যার লক্ষ্যে গোষ্ঠীর সদর দপ্তরে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরতলির মাটির নিচের হিজবুল্লাহর ঘাঁটিটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই হামলায় হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ। শিয়া ধর্মাবলম্বী সশস্ত্র গোষ্ঠীটির সঙ্গে ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতের সবচেয়ে উদ্বেগজনক ঘটনা এটি। 

গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে নজিরবিহীন হিংসার প্রকাশ ঘটিয়ে ইরানকে সরাসরি হুমকির পাশাপাশি হিজবুল্লাহকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তাঁর বক্তব্যের পরপরই হামলার খবর আসতে থাকে। এক ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে আইডিএফের বরাতে দেশটির সাংবাদিকেরা হামলার তথ্য দিতে থাকেন। নাসরুল্লাহকে লক্ষ্য করেই এই হামলা এবং তখন তিনি সেখানে ছিলেন বলে তাঁরা জানান।

হামলার বিষয়ে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে যেভাবে একের পর এক বিবৃতি দেওয়া হয়, তাতে এই হামলা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তা বোঝা যায়। এমনকি নিউইয়র্কের হোটেলকক্ষ থেকে ফোনে নেতানিয়াহু হামলা চালানোর নির্দেশ দিচ্ছেন— এমন ছবিও প্রকাশ করেছে ইসরায়েল।
 
চলতি মাসে হিজবুল্লাহর ওপর ধারাবাহিক ও লক্ষ্যভিত্তিক হামলা এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সরবরাহ করা পেজার ও ওয়াকিটকির বিস্ফোরণ ঘটানোর মাধ্যমে এটা স্পষ্ট যে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত এড়ানোর স্বার্থে ন্যূনতম নিয়ম-নীতির তোয়াক্বা করেনি ইসরায়েল। 

ইসরায়েলে হামাসের হামলার পরদিন ৮ অক্টোবর হিজবুল্লাহর সঙ্গে সংঘাতে জড়ায় ইসরায়েল। তখন ধরে নেওয়া হয়েছিল, তারা হয়তো হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতাদের হত্যা করবে না। গতকাল ও আগের সাম্প্রতিক হামলাগুলো বলছে ভিন্ন কথা। 

ভৌগোলিকভাবে ইসরায়েল, লেবানন—দুই দেশের গভীরে শিকড় গেড়েছে এই সংঘাত। ইসরায়েল এখন হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারদের লক্ষ্য করে হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশেষ করে লেবাননের দক্ষিণে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার দায়িত্বে থাকা শীর্ষ কমান্ডারদের টাগের্ট করে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। 

মার্কিন বিশেষ দূত অ্যামোস হোচেস্টেইন ও অন্যান্য মধ্যস্থতাকারীকে নিয়ে চলতি বছরের শুরুর দিকে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে আলোচনার পরামর্শ দেন বিভিন্ন কূটনীতিক ও বিশ্লেষকেরা। হিজবুল্লাহ শীর্ষ কমান্ডাররা ইসরায়েলের টার্গেটে পরিণত হবে না— এই বিষয়েও নিশ্চিত করতে বলা হয়।

কিন্তু ১৫ দিন ধরে ইসরায়েল যা করছে, তাতে বড় ধরনের সংঘাতের ক্ষেত্র তৈরি করা হচ্ছিল। ইসরায়েলের নিরাপত্তার কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতাদের লক্ষ্য করে হামলার ব্যর্থ ষড়যন্ত্রের দাবি করা হচ্ছিল। পাশাপাশি জঙ্গি সংগঠনটির বড় পরিকল্পনা ধূলিসাৎ করার জন্যও পাল্টা অভিযানের দাবি করা হয়। এখন বলা যায়, এ সবকিছুই ছিল হিজবুল্লাহকে ধ্বংস করতে ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি ও বহুমুখী প্রচেষ্টার পূর্বাভাস। 

গতকাল শুক্রবার ইসরায়েল যে হামলা চালিয়েছে, তার বিস্তৃত প্রভাব বুঝতে কয়েক দিন লাগতে পারে। এই হামলার মাধ্যমে নেতানিয়াহু ও তাঁর সামরিক প্রধানেরা ইসরায়েলের উত্তরের বাসিন্দাদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি দেশটির সঙ্গে ওই অঞ্চল এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বড় জুয়াখেলায় মেতেছেন। সংঘাতের কারণে উত্তর ইসরায়েলের ১০ হাজারের বেশি বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়ে মানবেতর অবস্থায় লড়ছে।

ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ সংঘাতে মধ্যস্থতা করতে উদ্যোগ নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স। তিন সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে বাইডেন প্রশাসনের দেওয়া প্রস্তাবকে যে নেতানিয়াহু একেবারেই পাত্তা দেননি, শুক্রবারের হামলা তারই প্রমাণ দেয়। বরং বলা যায়, নেতানিয়াহু ও তাঁর সামরিক অধিনায়কেরা গোপনে হামলার নীলনকশা করছিলেন। শুক্রবার জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভাষণে হিজবুল্লাহ ও ইরানকে যে ভাষায় হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে হামলার নকশার গভীর যোগসূত্র আছে। 

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইসরায়েলের হামলা নাসরুল্লাহর সবচেয়ে কাছের ও ঘনিষ্ঠ কৌশলগত মিত্র ইরানকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করছে। ইসরায়েলে হামলা চালাতে হাজার হাজার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করে ইরান নিজের ওপর হামলা প্রতিহত করার যে কৌশল কাজে লাগিয়েছে, সেটাকেই চ্যালেঞ্জ করা হলো।

এখন সবকিছুই ধোঁয়াশা। হিজবুল্লাহর লক্ষাধিক অস্ত্রসম্ভারের অর্ধেক ধ্বংসের যে দাবি বেনামে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে করা হয়েছিল, তা বাস্তব বলে মনে হয় না। যদিও সেসব দাবি পরে আইডিএফ অস্বীকার করেছে। হিজবুল্লাহ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এখনো যুদ্ধ চালিয়ে নিতে বেশ খানিকটা সক্ষম।

তা ছাড়া ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেনসহ ইরানের অন্য মিত্রদের নিজস্ব ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন রয়েছে। হিজবুল্লাহর সমকক্ষ না হলেও সেগুলো প্রয়োজনে শুধু ইসরায়েল নয়, মার্কিন লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধেও ব্যবহার করা হতে পারে।

এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, নাসরুল্লাহর ওপর হামলার ঘটনায় ইরান কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে; আরও বড় সংঘাতে জড়াবে কি না। কারণ, হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতার ওপর হামলার মাধ্যমে ইরানকেও হুমকি দিল ইসরায়েল।

এই হামলার নিন্দা জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বৈরুতে ইরানের দূতাবাস বলেছে, এই হামলা ‘মারাত্মক উত্তেজনাকর পরিবেশ তৈরি করবে, যা খেলার নিয়ম পাল্টে দেবে’ এবং হামলার জন্য ইসরায়েলকে উপযুক্ত শাস্তি ভোগ করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত