Ajker Patrika

ইরান-ইসরায়েল ১২ দিনের যুদ্ধ: অর্জনের পাল্লা ভারী কার, ট্রাম্প কী পেলেন

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৪ জুন ২০২৫, ১৭: ১৬
ইরান-ইসরায়েল ১২ দিনের যুদ্ধ: অর্জনের পাল্লা ভারী কার, ট্রাম্প কী পেলেন

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। উভয় পক্ষই লক্ষ্য অর্জনের দাবি করছে। এই ১২ দিনের যুদ্ধের জয়-পরাজয় ও বিভিন্ন পক্ষের অর্জন নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত এখন আলোচনার কেন্দ্রে।

তেহরানের সেন্টার ফর মিডল ইস্ট স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষণা ফেলো আবাস আসলানি সতর্ক করে বলেছেন, ইরান এই যুদ্ধবিরতিকে সতর্কতার সঙ্গে দেখছে, কারণ গাজা ও লেবাননে যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলার ক্ষেত্রে ইসরায়েলের অতীত রেকর্ড ভালো নয়।

আল-জাজিরাকে আসলানি বলেন, ‘এ কারণেই তেহরান সতর্ক এবং কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এটি নিশ্চিত করতে আসেননি। যদি সময় মতো কোনো লঙ্ঘন না হয়, আমি মনে করি ইরান যুদ্ধবিরতি মেনে চলবে।’

আসলানি আরও বলেন, এটি ছিল ইরান এবং ইসরায়েল ও তার সহযোগী যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি যুদ্ধ। দুই মিত্র তাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করা এবং ইরানে ‘শাসন পরিবর্তন’, যা অর্জন করা যায়নি।

তিনি বলেন, ‘আমরা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর কিছু ক্ষতি দেখেছি, কিন্তু দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি কেবল সেই স্থাপনা এবং সরঞ্জামই নয়। ইরান তার পারমাণবিক উপাদান একটি সুরক্ষিত স্থানে সরিয়ে নিয়েছে। তাদের জ্ঞান ও দক্ষতা তো অক্ষত রয়েছে!’ আসলানি আরও যোগ করেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাও ধ্বংস হয়নি, তারা যুদ্ধবিরতি ঘোষণার ঠিক আগেও ইসরায়েলে আঘাত হেনেছে।

আসলানি বলেন, স্বল্পমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘অর্থপূর্ণ’ আলোচনা হতে পারে না, কারণ পারমাণবিক আলোচনা চলাকালীনই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল ইরানে আক্রমণ করেছে।

ইসরায়েলের দাবি: লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের পক্ষে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক সাফল্যের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নিয়েছে।

যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে ইসরায়েলের প্রথম আনুষ্ঠানিক মন্তব্যে বলা হয়েছে, প্রায় দুই সপ্তাহ ইরান আক্রমণের পর ইসরায়েল তার সমস্ত লক্ষ্য এবং ‘তার চেয়েও বেশি’ অর্জন করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েল একটি তাৎক্ষণিক এবং দ্বৈত অস্তিত্বের হুমকি দূর করেছে। পারমাণবিক এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র—এই দুই হুমকির দিকে ইঙ্গিত করেছে ইসরায়েল।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, যুদ্ধের মধ্যে আইডিএফ তেহরানের আকাশের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অর্জন করেছে, ইরানি সামরিক নেতৃত্বের ওপর তীব্র আঘাত হেনেছে এবং ইরানের ডজনখানেক মূল শাসন লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করেছে।

ইসরায়েল ‘ইরানি পরমাণু হুমকি দূর করতে’ সামরিক সহযোগিতার জন্য ট্রাম্প এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।

অতি-ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ বলেছেন, ইসরায়েল ‘ইরানের বিরুদ্ধে অভিযানে একটি অসাধারণ বিজয়’ অর্জন করেছে যা ইসরায়েল রাষ্ট্রের ইতিহাসের পাতায় গৌরবময় অধ্যায় হিসেবে লিপিবদ্ধ থাকবে। স্মোত্রিচ বলেন, ‘একটি সম্যক হুমকি’ দূর করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে গাজায় যেতে হবে, হামাসকে ধ্বংস করতে এবং আমাদের জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে হবে।’

হুমকিতে ট্রাম্পের ভাবমূর্তি

আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, ইরানের ইসলামি প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের বিবাদের সবচেয়ে খারাপ সংকটকাল থেকে একটি জয় নিয়ে বেরিয়ে এসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে মার্কিন হামলার জবাবে কাতার মার্কিন ঘাঁটিতে তেহরানের মাঝারি মাত্রার ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে উত্তেজনা প্রশমনের একটি লক্ষণ হিসেবে ধরে নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল সোমবার তিনি ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করেছেন: ‘অভিনন্দন বিশ্ব, এখন শান্তির সময়!’

ট্রাম্পের এই উচ্ছ্বাস ইঙ্গিত দেয়, তিনি এই সংঘাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুক্ত থাকার প্রয়োজন আপাতত শেষ বলে মনে করছেন।

মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিরতি প্রায়শই ভঙ্গুর এবং ক্ষণস্থায়ী হয়। যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেও ইসরায়েল এবং ইরান উভয় পক্ষের ভয়াবহ হামলা সেদিকেই ইঙ্গিত করে।

কিন্তু মার্কিন স্টিলথ বোমারু বিমানগুলো ইরানে আঘাত করার মাত্র ৪৮ ঘণ্টা পরেই প্রেসিডেন্ট নিজেকে একজন শান্তি স্থাপনকারী এবং দক্ষ চুক্তি সম্পাদনকারী হিসেবে জাহির করতে শুরু করেন।

গতকাল সোমবার রাতে এনবিসি নিউজকে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি যুদ্ধবিরতি অনির্দিষ্টকাল থাকবে। এটি চিরকাল চলবে।’ তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন, ইসরায়েল এবং ইরান আর কখনো পরস্পরের দিকে গোলা ছুড়বে না।

মধ্যপ্রাচ্যকে ‘আমেরিকান প্রেসিডেন্টের জন্য কবরস্থান’ বলা হয়। যেই অঞ্চলের এমন কুখ্যাতি আছে, সেখানে ট্রাম্পের এমন দাবি সত্যিই সাহসী! ট্রাম্পের সমস্ত বিপণন দক্ষতা সত্ত্বেও, আগামী দিনের ঘটনাপ্রবাহই শেষ পর্যন্ত বলে দেবে, ট্রাম্পের এই যুগান্তকারী পদক্ষেপটি বাস্তব নাকি কেবল আরেকটি বিভ্রম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত