কাঠমান্ডু পোস্টের নিবন্ধ
আজকের পত্রিকা ডেস্ক
দক্ষিণ এশিয়া এখন সার্বভৌম ঋণ তথা সরকারের ঋণ ও রাজস্ব ঘাটতির ভারসাম্য রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছে। স্থায়ী বাজেট ঘাটতির কারণে এ অঞ্চলের ঋণ বিশ্বের অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির তুলনায় দ্রুত বেড়ে গেছে। ২০২৩ সালে সরকারগুলোর গড় ঋণের পরিমাণ পৌঁছেছে মোট জিডিপির ৭৭ শতাংশে।
এর আগে, ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কা ঋণ সংকটে পড়ে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়। ২০২৩ সালে পাকিস্তান অল্পের জন্য একই পরিণতি থেকে রক্ষা পায়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল—আইএমএফের সহায়তা চাওয়ার ঘটনাও বাংলাদেশের পরিস্থিতির গভীরতা তুলে ধরেছে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থনীতি ভারতও এখন জিডিপির ৮০ শতাংশ সমপরিমাণ সরকারি ঋণের বোঝা বহন করছে। অন্যদিকে নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপের মতো ছোট দেশগুলো টিকে থাকতে অনুদানভিত্তিক বা ছাড়সুবিধাযুক্ত ঋণের ওপর নির্ভর করছে।
এই বিপুল ঋণসংকটের ঝুঁকি কেবল এর পরিমাণেই নয়, দেশগুলোর অর্থনৈতিক কাঠামোতেও লুকিয়ে আছে। একদিকে, সীমিত করভিত্তি, অদক্ষ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, জ্বালানি ও অন্যান্য পণ্য আমদানির ওপর অতিনির্ভরতা আর্থিক ব্যবস্থাকে সংকুচিত করেছে। অন্যদিকে, আঞ্চলিক বাণিজ্য ও সহযোগিতার সীমাবদ্ধতা দক্ষিণ এশিয়াকে আরও বেশি নির্ভরশীল করে তুলেছে বাইরের অংশীদারদের ওপর। ঋণের চাপ বাড়ায় উন্নয়ন খাত ও সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমে ব্যয় করার মতো অর্থ কমে যাচ্ছে। ফলে জন–অর্থনীতি ক্রমেই নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে, আর রাষ্ট্রের অগ্রাধিকারও পরিবর্তিত হচ্ছে।
কোভিড–১৯ মহামারি ও রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট করে দিয়েছে। বিশ্ববাজারে মূল্য অস্থিরতার ওপর নির্ভরশীল এই অঞ্চলের দেশগুলো ২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে তীব্র সংকটে পড়ে যায়। ওই সময় জ্বালানি ও খাদ্যের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়। এতে আমদানি ব্যয় বেড়ে যায় এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যায়। রিজার্ভে চাপ পড়ায় সরকারগুলো বাধ্য হয় ঋণ নিতে—দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখা ও জ্বালানি–পণ্য মজুত রাখার জন্য।
এর ফলেই পুরো অঞ্চলে মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে থাকে। এই মূল্যবৃদ্ধি অতিরিক্ত চাহিদার কারণে নয়, বরং আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া ও বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থার ব্যাঘাতের ফল। উদাহরণ হিসেবে, ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কায় ভোক্তা মূল্য বেড়ে যায় ৫০ শতাংশ। পাকিস্তানে ২০২৩ সালে তা ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। এমনকি ‘টাইগার ইকোনমি’ খ্যাত বাংলাদেশেও ২০২৫ সালে মুদ্রাস্ফীতি ৮ শতাংশের বেশি হয়ে যায়। ভারতের বহুমুখী অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল হলেও, রাশিয়ার সঙ্গে ছাড়মূল্যে জ্বালানি চুক্তির সহায়তায় ৩ শতাংশের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি ধরে রাখতে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।
দক্ষিণ এশিয়ার কোটি মানুষের জন্য এখন প্রতিটি বৈশ্বিক সংকটের প্রথম আঘাত আসে পেট্রলপাম্পে ও মুদি দোকানে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন বাণিজ্যিক বাস্তবতা। ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র—যা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় তৈরি পোশাক ক্রেতা—২০ থেকে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে এই অঞ্চলের পোশাক ও শ্রমনির্ভর রপ্তানির ওপর। এতে বাংলাদেশের গার্মেন্টস, শ্রীলঙ্কার অ্যাপারেলস ও ভারতের পোশাক খাতের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা ব্যাপকভাবে কমে গেছে।
রপ্তানি আয়ের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোর জন্য এটি বড় ধাক্কা। কারণ এই শুল্ক তাদের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দিচ্ছে এবং দীর্ঘদিনের কাঠামোগত দুর্বলতাকে আরও গভীর করছে।
দেশীয় অর্থনৈতিক কাঠামোগত সমস্যা—যেমন দুর্বল রাজস্বব্যবস্থা ও রাজনৈতিকভাবে জনপ্রিয় ভর্তুকি—দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সরকারকে বাইরের ধাক্কা সামলানোর ক্ষেত্রে দুর্বল করে তুলেছে। এতে আর্থিক খাতও দুর্বল হয়ে পড়েছে। উদাহরণ হিসেবে পাকিস্তানের কথা বলা যায়। দেশটিতে কৃত্রিমভাবে কমিয়ে রাখা বিদ্যুতের দর ‘সার্কুলার ঋণের’ ফাঁদ তৈরি করেছে, যা ঘুরে ফিরে রাষ্ট্রের ঘাড়েই এসে পড়ে। কারণ, সরকার পর্যাপ্ত রাজস্ব আদায় করতে পারছে না, আবার বেশি ভর্তুকি দিতে গিয়ে অন্য খাতে বরাদ্দ করা অর্থও ভর্তুকি মেটাতে সরিয়ে নিতে হচ্ছে। পুরো অঞ্চলেরই চিত্র এক—ভর্তুকি এখন অর্থনৈতিক প্রয়োজনের চেয়ে রাজনৈতিক স্বার্থের হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তা ছাড়া, দুর্বল করভিত্তি আর্থিক সক্ষমতাকে আরও সীমিত করছে। তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে পাকিস্তানে মাত্র ৩ শতাংশ নাগরিক আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন। ২০২২ সালে বাংলাদেশে তা ছিল মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ, আর ভারতে প্রায় ৭ শতাংশ। শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো সরকারি অর্থের ওপর বড় চাপ সৃষ্টি করছে। এগুলো শুধু অর্থনৈতিক দুর্বলতা নয়, বরং নীতিনির্ধারণে কাঠামোগত ভুল সিদ্ধান্তের ফল। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক শৃঙ্খলার চেয়ে স্বল্পমেয়াদি জনপ্রিয় পদক্ষেপই বেশি প্রাধান্য পায়। এই প্রবণতা সংকটকালে সরকারের কার্যকর সাড়া দেওয়ার সক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং পুনরুদ্ধারের পথকে কঠিন করে তোলে।
জলবায়ু পরিবর্তন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর আর্থিক সংকটকে আরও জটিল করে তুলছে। এই অঞ্চল এখনো বন্যা, তাপপ্রবাহ আর অনিয়মিত মৌসুমি বৃষ্টির মতো জলবায়ু-ঝুঁকির প্রবল শিকার। এসব দুর্যোগ ফসল, জীবিকা, মানববসতি ও অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে। শুধু পাকিস্তানেই ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতি হয় এবং লাখ লাখ মানুষের জীবিকা বিপর্যস্ত হয়। বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান গরমে প্রতিবছর আনুমানিক ২ কোটি ৫০ লাখ কর্মদিবস নষ্ট হয় এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৮০ কোটি ডলার। অন্যদিকে ভারত, নেপাল ও ভুটানে অনিয়মিত জলবায়ুর প্রভাবে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, শীতলীকরণের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় জ্বালানি আমদানি ও সরকারি ব্যয়ও বাড়ছে।
এ ধরনের জলবায়ু-দুর্যোগের পর দেশগুলোকে নতুন করে ঋণ নিতে হয়। কারণ অভিযোজন বা টেকসই উন্নয়ন তহবিলের বড় অংশই ঋণভিত্তিক। ফলে টিকে থাকার লড়াইয়ে সরকারগুলো ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে পড়ে। এতে আর্থিক চাপ বাড়লেও ভবিষ্যৎ ঝুঁকি খুব একটা কমে না। এই অবস্থাকে বলা হচ্ছে ‘জলবায়ু-ঋণ ফাঁদ’—যেখানে দেশগুলোকে প্রথমে দুর্যোগে এবং পরে ঋণের বোঝায় শাস্তি পেতে হয়। যথেষ্ট পরিমাণে স্বল্পসুদ বা অনুদানভিত্তিক তহবিল না থাকলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বারবার জলবায়ুর চক্রাকারে আঘাতের কাছে জিম্মি হয়ে থাকবে।
ঋণমুক্ত সহায়তার পথ যেমন ‘ঋণ-বিনিময়ে জলবায়ু তহবিল’ বা আঞ্চলিক ঝুঁকি-ভাগাভাগি তহবিল দুর্যোগের সময় তাৎক্ষণিক অর্থায়নের সুযোগ দিতে পারে। তবে রাজনৈতিক জটিলতা ও আঞ্চলিক সহযোগিতার অভাবে এসব উদ্যোগের বাস্তবায়ন এখনো খুব ধীর গতির।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার সরকারগুলো বারবার দেউলিয়া পরিস্থিতি এড়াতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বারস্থ হয়েছে। শ্রীলঙ্কাকে ৪০০ কোটি ডলারের আর্থিক সহায়তা দিয়েছে ভারত। পাশাপাশি ২০২৩ সালে দেশটি ১৭০ কোটি ডলারের একটি ‘এক্সটেনডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি’ পেয়েছে, যা দেশটির মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করেছে। তবে সরকারি ঋণের চাপ এখনো টেকসই নয়। পাকিস্তান ২০২৩ সালে ৩০০ কোটি ডলার এবং ২০২৪ সালে আরও ৭০০ কোটি ডলার সহায়তা নিয়েছে আইএমএফ থেকে। এতে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কিছুটা সাফল্য এসেছে, কিন্তু ঋণ পরিশোধেই দেশটির মোট রাজস্ব আয়ের প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যয় হয়।
বাংলাদেশও ৪৭০ কোটি ডলারের একটি আইএমএফ কর্মসূচি নিয়েছে চলতি হিসাব ঘাটতি ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে, যা বিনিময় হার সমন্বয়ের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তবে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এখনো ধীর গতির। ছোট দেশগুলো—যেমন নেপাল ও ভুটান—সংকীর্ণ রাজস্ব ঘাটতির মধ্যে বিদেশি সহায়তা, রেমিট্যান্স ও স্বল্পসুদে ঋণের ওপর নির্ভর করেই টিকে আছে। সব মিলিয়ে এই অঞ্চলে আইএমএফের সহায়তা জরুরি সংকটকালীন সময়ে কিছুটা সময় ও স্বস্তি এনে দিয়েছে। তবে দেশগুলোর উচিত এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে আর্থিক শৃঙ্খলা ও ঋণ ব্যবস্থাপনাকে নতুনভাবে গড়ে তোলা।
মধ্য মেয়াদে দক্ষিণ এশিয়ার দরকার একটি সমন্বিত কাঠামো, যা পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বাড়াবে। এর একটি ভালো উদাহরণ হতে পারে—ভুটান, নেপাল ও ভারতের মধ্যে আঞ্চলিক বিদ্যুৎ বাণিজ্যের সম্ভাবনা, যা বাস্তবায়িত হলে ২০৪০ সালের মধ্যে বছরে প্রায় ৯০০ কোটি ডলার সাশ্রয় সম্ভব। বর্তমানে অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার, যেখানে সম্ভাবনা রয়েছে ৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলার পর্যন্ত—এটি বাড়ানো গেলে বৈশ্বিক সরবরাহ ঝুঁকি মোকাবিলায় সহায়ক হবে।
একই সঙ্গে একটি ঝুঁকি বিমা তহবিল গঠন জরুরি, যা ক্যারিবীয় অঞ্চলের ‘ক্লাইমেট রিস্ক ইন্স্যুরেন্স ফ্যাসিলিটি’-এর মতো কাজ করবে। এতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর দ্রুত আর্থিক সহায়তা পাওয়া যাবে, নতুন ঋণের বোঝা না বাড়িয়ে। এ ধরনের যৌথ ঝুঁকি ভাগাভাগির ব্যবস্থা অঞ্চলটির অর্থনৈতিক দুর্বলতাকে টেকসই শক্তিতে রূপ দিতে পারে—যা পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য কার্যকর প্রণোদনা হতে পারে।
অভ্যন্তরীণ সংস্কারের মাধ্যমে সরকারকে করের আওতা বাড়াতে হবে, রাজনৈতিক কারণে দেওয়া ভর্তুকি কমাতে হবে এবং লোকসানি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামোগত সংস্কার করতে হবে। জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য করলে রাজস্ব ঘাটতি কমানো যাবে, তবে নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে—বিশেষ করে জ্বালানি খাতে।
এ ছাড়া, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে, যাতে তারা স্বচ্ছভাবে ঋণ ব্যবস্থাপনা ও হিসাব প্রকাশ করতে পারে। মধ্যমেয়াদি ব্যয় কাঠামো গ্রহণ এবং বাজেটে জলবায়ু ঝুঁকি অন্তর্ভুক্ত করাও জরুরি। সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে, নতুন ঋণ যেন উৎপাদনশীল বিনিয়োগে ব্যয় হয়, রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য নয়।
দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে—দেশগুলো কি একা লড়াই করবে, নাকি একসঙ্গে মিলে আর্থিক স্থিতি গড়বে। বারবার আইএমএফের সহায়তায় টিকে থাকা নয়, বরং টেকসই প্রবৃদ্ধি ও পারস্পরিক স্থিতিশীলতার দিকেই এগোতে হবে এখন। যৌথ উদ্যোগে এই অঞ্চলই পারে দুর্বলতাকে রূপান্তর করতে অর্থনৈতিক সক্ষমতায়—যা দক্ষিণ এশিয়ার জন্য হতে পারে নতুন সূচনা।
লেখক:
বিজ্ঞান বাবু রেজমি, সুইজারল্যান্ডের ইএইচটি জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির পিএইচডি গবেষক
শিশির ভান্ডারি, নিউইয়র্কভিত্তিক অর্থনীতিবিদ ও গবেষক
কাঠমান্ডু পোস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
দক্ষিণ এশিয়া এখন সার্বভৌম ঋণ তথা সরকারের ঋণ ও রাজস্ব ঘাটতির ভারসাম্য রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছে। স্থায়ী বাজেট ঘাটতির কারণে এ অঞ্চলের ঋণ বিশ্বের অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির তুলনায় দ্রুত বেড়ে গেছে। ২০২৩ সালে সরকারগুলোর গড় ঋণের পরিমাণ পৌঁছেছে মোট জিডিপির ৭৭ শতাংশে।
এর আগে, ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কা ঋণ সংকটে পড়ে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়। ২০২৩ সালে পাকিস্তান অল্পের জন্য একই পরিণতি থেকে রক্ষা পায়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল—আইএমএফের সহায়তা চাওয়ার ঘটনাও বাংলাদেশের পরিস্থিতির গভীরতা তুলে ধরেছে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থনীতি ভারতও এখন জিডিপির ৮০ শতাংশ সমপরিমাণ সরকারি ঋণের বোঝা বহন করছে। অন্যদিকে নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপের মতো ছোট দেশগুলো টিকে থাকতে অনুদানভিত্তিক বা ছাড়সুবিধাযুক্ত ঋণের ওপর নির্ভর করছে।
এই বিপুল ঋণসংকটের ঝুঁকি কেবল এর পরিমাণেই নয়, দেশগুলোর অর্থনৈতিক কাঠামোতেও লুকিয়ে আছে। একদিকে, সীমিত করভিত্তি, অদক্ষ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, জ্বালানি ও অন্যান্য পণ্য আমদানির ওপর অতিনির্ভরতা আর্থিক ব্যবস্থাকে সংকুচিত করেছে। অন্যদিকে, আঞ্চলিক বাণিজ্য ও সহযোগিতার সীমাবদ্ধতা দক্ষিণ এশিয়াকে আরও বেশি নির্ভরশীল করে তুলেছে বাইরের অংশীদারদের ওপর। ঋণের চাপ বাড়ায় উন্নয়ন খাত ও সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমে ব্যয় করার মতো অর্থ কমে যাচ্ছে। ফলে জন–অর্থনীতি ক্রমেই নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে, আর রাষ্ট্রের অগ্রাধিকারও পরিবর্তিত হচ্ছে।
কোভিড–১৯ মহামারি ও রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট করে দিয়েছে। বিশ্ববাজারে মূল্য অস্থিরতার ওপর নির্ভরশীল এই অঞ্চলের দেশগুলো ২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে তীব্র সংকটে পড়ে যায়। ওই সময় জ্বালানি ও খাদ্যের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়। এতে আমদানি ব্যয় বেড়ে যায় এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যায়। রিজার্ভে চাপ পড়ায় সরকারগুলো বাধ্য হয় ঋণ নিতে—দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখা ও জ্বালানি–পণ্য মজুত রাখার জন্য।
এর ফলেই পুরো অঞ্চলে মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে থাকে। এই মূল্যবৃদ্ধি অতিরিক্ত চাহিদার কারণে নয়, বরং আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া ও বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থার ব্যাঘাতের ফল। উদাহরণ হিসেবে, ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কায় ভোক্তা মূল্য বেড়ে যায় ৫০ শতাংশ। পাকিস্তানে ২০২৩ সালে তা ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। এমনকি ‘টাইগার ইকোনমি’ খ্যাত বাংলাদেশেও ২০২৫ সালে মুদ্রাস্ফীতি ৮ শতাংশের বেশি হয়ে যায়। ভারতের বহুমুখী অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল হলেও, রাশিয়ার সঙ্গে ছাড়মূল্যে জ্বালানি চুক্তির সহায়তায় ৩ শতাংশের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি ধরে রাখতে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।
দক্ষিণ এশিয়ার কোটি মানুষের জন্য এখন প্রতিটি বৈশ্বিক সংকটের প্রথম আঘাত আসে পেট্রলপাম্পে ও মুদি দোকানে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন বাণিজ্যিক বাস্তবতা। ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র—যা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় তৈরি পোশাক ক্রেতা—২০ থেকে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে এই অঞ্চলের পোশাক ও শ্রমনির্ভর রপ্তানির ওপর। এতে বাংলাদেশের গার্মেন্টস, শ্রীলঙ্কার অ্যাপারেলস ও ভারতের পোশাক খাতের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা ব্যাপকভাবে কমে গেছে।
রপ্তানি আয়ের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোর জন্য এটি বড় ধাক্কা। কারণ এই শুল্ক তাদের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দিচ্ছে এবং দীর্ঘদিনের কাঠামোগত দুর্বলতাকে আরও গভীর করছে।
দেশীয় অর্থনৈতিক কাঠামোগত সমস্যা—যেমন দুর্বল রাজস্বব্যবস্থা ও রাজনৈতিকভাবে জনপ্রিয় ভর্তুকি—দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সরকারকে বাইরের ধাক্কা সামলানোর ক্ষেত্রে দুর্বল করে তুলেছে। এতে আর্থিক খাতও দুর্বল হয়ে পড়েছে। উদাহরণ হিসেবে পাকিস্তানের কথা বলা যায়। দেশটিতে কৃত্রিমভাবে কমিয়ে রাখা বিদ্যুতের দর ‘সার্কুলার ঋণের’ ফাঁদ তৈরি করেছে, যা ঘুরে ফিরে রাষ্ট্রের ঘাড়েই এসে পড়ে। কারণ, সরকার পর্যাপ্ত রাজস্ব আদায় করতে পারছে না, আবার বেশি ভর্তুকি দিতে গিয়ে অন্য খাতে বরাদ্দ করা অর্থও ভর্তুকি মেটাতে সরিয়ে নিতে হচ্ছে। পুরো অঞ্চলেরই চিত্র এক—ভর্তুকি এখন অর্থনৈতিক প্রয়োজনের চেয়ে রাজনৈতিক স্বার্থের হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তা ছাড়া, দুর্বল করভিত্তি আর্থিক সক্ষমতাকে আরও সীমিত করছে। তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে পাকিস্তানে মাত্র ৩ শতাংশ নাগরিক আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন। ২০২২ সালে বাংলাদেশে তা ছিল মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ, আর ভারতে প্রায় ৭ শতাংশ। শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো সরকারি অর্থের ওপর বড় চাপ সৃষ্টি করছে। এগুলো শুধু অর্থনৈতিক দুর্বলতা নয়, বরং নীতিনির্ধারণে কাঠামোগত ভুল সিদ্ধান্তের ফল। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক শৃঙ্খলার চেয়ে স্বল্পমেয়াদি জনপ্রিয় পদক্ষেপই বেশি প্রাধান্য পায়। এই প্রবণতা সংকটকালে সরকারের কার্যকর সাড়া দেওয়ার সক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং পুনরুদ্ধারের পথকে কঠিন করে তোলে।
জলবায়ু পরিবর্তন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর আর্থিক সংকটকে আরও জটিল করে তুলছে। এই অঞ্চল এখনো বন্যা, তাপপ্রবাহ আর অনিয়মিত মৌসুমি বৃষ্টির মতো জলবায়ু-ঝুঁকির প্রবল শিকার। এসব দুর্যোগ ফসল, জীবিকা, মানববসতি ও অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে। শুধু পাকিস্তানেই ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতি হয় এবং লাখ লাখ মানুষের জীবিকা বিপর্যস্ত হয়। বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান গরমে প্রতিবছর আনুমানিক ২ কোটি ৫০ লাখ কর্মদিবস নষ্ট হয় এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৮০ কোটি ডলার। অন্যদিকে ভারত, নেপাল ও ভুটানে অনিয়মিত জলবায়ুর প্রভাবে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, শীতলীকরণের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় জ্বালানি আমদানি ও সরকারি ব্যয়ও বাড়ছে।
এ ধরনের জলবায়ু-দুর্যোগের পর দেশগুলোকে নতুন করে ঋণ নিতে হয়। কারণ অভিযোজন বা টেকসই উন্নয়ন তহবিলের বড় অংশই ঋণভিত্তিক। ফলে টিকে থাকার লড়াইয়ে সরকারগুলো ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে পড়ে। এতে আর্থিক চাপ বাড়লেও ভবিষ্যৎ ঝুঁকি খুব একটা কমে না। এই অবস্থাকে বলা হচ্ছে ‘জলবায়ু-ঋণ ফাঁদ’—যেখানে দেশগুলোকে প্রথমে দুর্যোগে এবং পরে ঋণের বোঝায় শাস্তি পেতে হয়। যথেষ্ট পরিমাণে স্বল্পসুদ বা অনুদানভিত্তিক তহবিল না থাকলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বারবার জলবায়ুর চক্রাকারে আঘাতের কাছে জিম্মি হয়ে থাকবে।
ঋণমুক্ত সহায়তার পথ যেমন ‘ঋণ-বিনিময়ে জলবায়ু তহবিল’ বা আঞ্চলিক ঝুঁকি-ভাগাভাগি তহবিল দুর্যোগের সময় তাৎক্ষণিক অর্থায়নের সুযোগ দিতে পারে। তবে রাজনৈতিক জটিলতা ও আঞ্চলিক সহযোগিতার অভাবে এসব উদ্যোগের বাস্তবায়ন এখনো খুব ধীর গতির।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার সরকারগুলো বারবার দেউলিয়া পরিস্থিতি এড়াতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বারস্থ হয়েছে। শ্রীলঙ্কাকে ৪০০ কোটি ডলারের আর্থিক সহায়তা দিয়েছে ভারত। পাশাপাশি ২০২৩ সালে দেশটি ১৭০ কোটি ডলারের একটি ‘এক্সটেনডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি’ পেয়েছে, যা দেশটির মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করেছে। তবে সরকারি ঋণের চাপ এখনো টেকসই নয়। পাকিস্তান ২০২৩ সালে ৩০০ কোটি ডলার এবং ২০২৪ সালে আরও ৭০০ কোটি ডলার সহায়তা নিয়েছে আইএমএফ থেকে। এতে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কিছুটা সাফল্য এসেছে, কিন্তু ঋণ পরিশোধেই দেশটির মোট রাজস্ব আয়ের প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যয় হয়।
বাংলাদেশও ৪৭০ কোটি ডলারের একটি আইএমএফ কর্মসূচি নিয়েছে চলতি হিসাব ঘাটতি ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে, যা বিনিময় হার সমন্বয়ের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তবে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এখনো ধীর গতির। ছোট দেশগুলো—যেমন নেপাল ও ভুটান—সংকীর্ণ রাজস্ব ঘাটতির মধ্যে বিদেশি সহায়তা, রেমিট্যান্স ও স্বল্পসুদে ঋণের ওপর নির্ভর করেই টিকে আছে। সব মিলিয়ে এই অঞ্চলে আইএমএফের সহায়তা জরুরি সংকটকালীন সময়ে কিছুটা সময় ও স্বস্তি এনে দিয়েছে। তবে দেশগুলোর উচিত এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে আর্থিক শৃঙ্খলা ও ঋণ ব্যবস্থাপনাকে নতুনভাবে গড়ে তোলা।
মধ্য মেয়াদে দক্ষিণ এশিয়ার দরকার একটি সমন্বিত কাঠামো, যা পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বাড়াবে। এর একটি ভালো উদাহরণ হতে পারে—ভুটান, নেপাল ও ভারতের মধ্যে আঞ্চলিক বিদ্যুৎ বাণিজ্যের সম্ভাবনা, যা বাস্তবায়িত হলে ২০৪০ সালের মধ্যে বছরে প্রায় ৯০০ কোটি ডলার সাশ্রয় সম্ভব। বর্তমানে অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার, যেখানে সম্ভাবনা রয়েছে ৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলার পর্যন্ত—এটি বাড়ানো গেলে বৈশ্বিক সরবরাহ ঝুঁকি মোকাবিলায় সহায়ক হবে।
একই সঙ্গে একটি ঝুঁকি বিমা তহবিল গঠন জরুরি, যা ক্যারিবীয় অঞ্চলের ‘ক্লাইমেট রিস্ক ইন্স্যুরেন্স ফ্যাসিলিটি’-এর মতো কাজ করবে। এতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর দ্রুত আর্থিক সহায়তা পাওয়া যাবে, নতুন ঋণের বোঝা না বাড়িয়ে। এ ধরনের যৌথ ঝুঁকি ভাগাভাগির ব্যবস্থা অঞ্চলটির অর্থনৈতিক দুর্বলতাকে টেকসই শক্তিতে রূপ দিতে পারে—যা পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য কার্যকর প্রণোদনা হতে পারে।
অভ্যন্তরীণ সংস্কারের মাধ্যমে সরকারকে করের আওতা বাড়াতে হবে, রাজনৈতিক কারণে দেওয়া ভর্তুকি কমাতে হবে এবং লোকসানি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামোগত সংস্কার করতে হবে। জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য করলে রাজস্ব ঘাটতি কমানো যাবে, তবে নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে—বিশেষ করে জ্বালানি খাতে।
এ ছাড়া, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে, যাতে তারা স্বচ্ছভাবে ঋণ ব্যবস্থাপনা ও হিসাব প্রকাশ করতে পারে। মধ্যমেয়াদি ব্যয় কাঠামো গ্রহণ এবং বাজেটে জলবায়ু ঝুঁকি অন্তর্ভুক্ত করাও জরুরি। সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে, নতুন ঋণ যেন উৎপাদনশীল বিনিয়োগে ব্যয় হয়, রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য নয়।
দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে—দেশগুলো কি একা লড়াই করবে, নাকি একসঙ্গে মিলে আর্থিক স্থিতি গড়বে। বারবার আইএমএফের সহায়তায় টিকে থাকা নয়, বরং টেকসই প্রবৃদ্ধি ও পারস্পরিক স্থিতিশীলতার দিকেই এগোতে হবে এখন। যৌথ উদ্যোগে এই অঞ্চলই পারে দুর্বলতাকে রূপান্তর করতে অর্থনৈতিক সক্ষমতায়—যা দক্ষিণ এশিয়ার জন্য হতে পারে নতুন সূচনা।
লেখক:
বিজ্ঞান বাবু রেজমি, সুইজারল্যান্ডের ইএইচটি জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির পিএইচডি গবেষক
শিশির ভান্ডারি, নিউইয়র্কভিত্তিক অর্থনীতিবিদ ও গবেষক
কাঠমান্ডু পোস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি যেন উল্টোপাল্টা এক দাবার ছক, যেখানে পুরোনো মিত্ররা দূরে সরে যাচ্ছে, আর আগে যাদের ‘শত্রু’ ভাবা হতো, তারাই এখন হোয়াইট হাউসে জায়গা পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান একেবারে আদর্শ উদাহরণ তৈরি করেছে।
৩ ঘণ্টা আগেগাজায় বিধ্বংসী যুদ্ধের দুই বছর পর অবশেষে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। কিন্তু শান্তির এই মুহূর্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জন্য আশীর্বাদ নয়, বরং নতুন ছয়টি বড় রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জের সূচনা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
২ দিন আগেএ বছরের শুরুতে মাদাগাস্কারের আনতানানারিভো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পানির কল শুকিয়ে যায়। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ২৫ বছর বয়সী মেডিকেল শিক্ষার্থী আনজান্দ্রাইনা আন্দ্রিয়ানাইভো বলেন, ‘এক ফোঁটাও পানি ছিল না, গোসল করার উপায় নেই, টয়লেট ফ্লাশ করা যাচ্ছিল না, এমনকি হাত ধোয়ার পানিও নেই।
২ দিন আগেদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির বিজয়ের ৮০ বছর পেরিয়ে গেছে। বেইজিং, মস্কো ও ওয়াশিংটনে আয়োজিত বহুল আলোচিত বিজয়-উদ্যাপন মিছিলগুলো যেন বন্ধুত্ব আর ধারাবাহিকতার প্রতীকী চিত্র তুলে ধরেছে। কিন্তু এই জাঁকজমকের আড়ালে ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে যুদ্ধপরবর্তী বিশ্বব্যবস্থা, যা একসময় বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি
২ দিন আগে