ইলন মাস্ক। বিশ্বের শীর্ষ ধনী। তবে সব মহলেই সর্বাধিক আলোচিত নামগুলোর একটি। বাণিজ্য, অর্থনীতি, রাজনীতি—এমনকি ভূরাজনৈতিক অঙ্গনেও তাঁর সরব উপস্থিতি। অনেকে ইলন মাস্ককে বিশ্বের জন্য আশীর্বাদ মনে করেন। তবে কেউ বলেন উন্মাদ! সে যা-ই হোক, তিনি যে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে অতি গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি, সেটি কেউ অস্বীকার করতে পারে না। তিনি এমন এক চরিত্র, যাঁকে পছন্দ না করলেও উপেক্ষা করা যায় না।
তবে বিশ্লেষকদের অনুমান, ইলন মাস্কের অতিমানবীয় সাফল্য ম্লান হয়ে যেতে পারে, তাঁর মানবজাতির ত্রাতা হতে ওঠার তীব্র আকাঙ্ক্ষার কারণে।
কয়েক দিন পরপরই ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান পৃথিবীর কক্ষপথে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে। এতে অনেকের হয়তো ধারণা হয়েছে যে বিষয়টা এখন ডালভাত! কিন্তু সবাই তা ভাবেন না। যেমন চলতি বছরের ১ ডিসেম্বর যখন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যান্ডেনবার্গ স্পেস ফোর্স বেস থেকে ফ্যালকন-৯ রকেট উৎক্ষেপণ করা হচ্ছিল সেখানে উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
একজন ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স প্রস্তুতিকৃত ফ্যালকন-৯ রকেটের প্রশংসা করে বলেন, ‘এটি যেন কখনোই পুরোনো হয় না! অনেকটা আমাদের জনপ্রিয় এসিডিসি কনসার্টের মতো।’ তবে বিষয়টি কেবলই এসিডিসি কনসার্টের মতো নয়। কারণ, সেদিন ফ্যালকন-৯ রকেটে করে যে স্যাটেলাইট উৎক্ষিপ্ত হয়েছিল, তা মূলত একটি ভূরাজনৈতিক ভার বয়ে নিয়ে গেছে মহাশূন্যে। সেটিতে ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা স্যাটেলাইট। উত্তর কোরিয়ার গোয়েন্দা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কয়েক দিনের মাথায়ই এটি কক্ষপথে পাঠাল দক্ষিণ কোরিয়া।
এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সঙ্গে আরও একটি ইতিহাস বা মাইলফলক জড়িত। সেটি হলো স্যাটেলাইটটির প্রস্তুতকারক ছিলেন আয়ারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি কলেজ ডাবলিনের শিক্ষার্থীরা। দেশটিতে তৈরি প্রথম কোনো স্যাটেলাইট এটি।
তবে ঘটনা যা-ই হোক, এই উৎক্ষেপণের কৃতিত্বের বড় একটি অংশই গেছে ফ্যালকন-৯এর মালিক স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কের ঝুলিতে। কারণ, বিভিন্ন দেশের স্যাটেলাইট নিয়ে এরই মধ্যে স্পেসএক্স প্রায় ২৫০ বার মহাকাশে গেছে। এ ছাড়া, টেসলা ও এক্সের মতো প্রতিষ্ঠান দিয়েও বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন ইলন মাস্ক।
কিন্তু সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বেশ কিছু বিতর্কিত মন্তব্য ইলন মাস্ককে মহাকাশ বিজ্ঞানের একজন বাচাল শিক্ষার্থীর কাতারে নামিয়ে দিয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি ইহুদিবিদ্বেষী মন্তব্যকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। পরে তিনি নিজেই তাঁর এই কাজকে ‘বোকামি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। এ ছাড়া রয়েছে, তাঁর ইসরায়েল সফর। এই সফরকে শান্তির বার্তা প্রচারের উদ্দেশ্যে বলে দাবি করলেও অনেকে মনে করছেন, তিনি মূলত ইহুদি বিদ্বেষের অভিযোগ কাটাতে ইসরায়েল সফর করেছেন। আবার অনেকে বলছেন, ইহুদি বিদ্বেষের অভিযোগ তুলে বেশ কয়েকটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান এক্স থেকে বিজ্ঞাপন তুলে নিয়েছে। এই পরিস্থিতি প্রশমনের উদ্দেশ্যেও তিনি ইসরায়েল সফর করে থাকতে পারেন।
এর বাইরেও ইলন মাস্ক বলেছেন, ‘তিনি পৃথিবীর যেকোনো মানুষের চেয়ে পরিবেশ ও জলবায়ু সুরক্ষায় সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন।’
এমন বিতর্কিত অবস্থানের কারণে নির্মোহভাবে মূল্যায়ন করতে হলে ইলন মাস্ককে অনেকে জিনিয়াস বললেও বিতর্কিত বিষয়গুলোও সামনে আনতে হয়। ভ্যান্ডেনবার্গে সেদিনের উৎক্ষেপণে উপস্থিত থাকা এক তরুণ ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী বলেন, ‘ইলন মাস্ককে এখনো বিপুলসংখ্যক মানুষ কাল্ট হিসেবে অনুসরণ করে। তিনি স্পষ্টতই একজন খুব সমস্যাজনক মানুষ। অবিশ্বাস্য মানসিক জোর ও অস্থির অতীতকে সফল ভবিষ্যতে পরিণত করার জন্য তিনি অনেকের কাছেই আকর্ষণীয়। ভক্তদের মাঝে তাঁর অবস্থান এতটাই দৃঢ় যে যদি বলেন মানুষ পানির ওপর দিয়ে হাঁটতে পারবে, তবে সেটিও ভক্তরা বিশ্বাস করবে!’
স্পষ্ট বিনিয়োগ, নতুন উদ্যোগ এবং উদ্ভাবনে এই সময়ে মাস্কের জুড়ি পাওয়া ভার। তিনি বিপুল টাকার মালিকও। কিন্তু তাঁর যে চরিত্র দাঁড়িয়ে গেছে, সেটি নিয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে। প্রশ্ন উঠতে পারে, দাম্ভিকতা কি কেবল বিজনেস পাইওনিয়ারের জন্যই প্রযোজ্য? যে ব্যক্তি ভূমি, মহাকাশ ভ্রমণে বিপ্লব ঘটাতে প্রকৌশল, শক্তি ও অর্থনীতির রীতিনীতিকে চ্যালেঞ্জ করেছেন; তিনি যত বড়ই হন কেন, তিনি তাঁর গুরুত্বের কারণে শালীনতার প্রচলিত নিয়ম লঙ্ঘন করতে পারেন? নাকি তিনি নিজেই নিজেকে প্রচার করার মিশনে মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছেন এবং তাঁর মধ্যে নিজেকে ত্রাতা হিসেবে ভাবার আত্মবিশ্বাস তৈরি করেছে?
এসব প্রশ্নের উত্তর জটিল। ইলন মাস্কের কৌতুক অনেক সময়ই বালখিল্য হয়। প্র্যাংক থেকে শুরু করে তিনি মানুষের গাঁজা সেবন নিয়ে পর্যন্ত তামাশা করেন। এই বিষয়টি মাস্ককে একজন প্রথাবিরোধী বিজনেস ম্যাগনেট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের মতো গুরুগম্ভীর বিষয়ে সাধারণের আড্ডার পর্যায়ে নামিয়ে এনেছেন।
তবে মাস্ক কেবল হাস্যরসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। তিনি প্রায়ই বিভিন্ন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিদের আক্রমণ করে বসেন। অনেকে এসব কারণে তাঁর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
সে যা-ই হোক, প্রথাবিরোধী বিপণন কৌশল ঠিকই মাস্কের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, টেসলার কথা। প্রতিষ্ঠানটি প্রথাগত বিজ্ঞাপন না দিয়েই একপ্রকার মাস্কের কথার জোরে বিপুল পরিমাণ গাড়ি বিক্রি করেছে।
মাস্কের নিজেকে প্রদর্শন করে বেড়ানোর বিষয়টিতে প্রাণের ছোঁয়া রয়েছে, রয়েছে সরস বুদ্ধিমত্তা। একই সঙ্গে নিজের মধ্যে একটি জেদি মনোভাবও রয়েছে তাঁর। ফলে মাস্কের জাদু কোথায় শেষ হবে, আর কোথায় তাঁর পাগলামি শুরু হবে না নির্ণয় করা আসলেই দুষ্কর।
ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান টেসলার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৭৫০ বিলিয়ন ডলার। ফরচুন ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী, স্পেসএক্সের বর্তমান বাজারমূল্য ১৭৫ বিলিয়ন ডলার। ইতিহাসে বেসরকারি খাতের কোনো কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) বাজারমূল্য এত হয়নি কখনো।
এরপরও ইলন মাস্ক কেন এমন দুর্বোধ্য ও অস্বাভাবিক আচরণ করেন, তা স্পষ্ট নয়। তবে সিএনএনের সাবেক সাংবাদিক ওয়াল্টার আইজ্যাকসন লিখিত মাস্কের জীবনীতে বলা হয়েছে, মাস্কের এমন আচরণ আসলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণেও হয়ে থাকতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, একবার মজা করে মাস্কের এক বন্ধু তাঁর ফোন কেড়ে নিয়ে হোটেলের লকারে বন্ধ করে রেখেছিলেন যাতে মাস্ক টুইট করতে না পারেন। সারা দিন মোটামুটি ভালো গেলেও রাত ৩টার দিকে মাস্ক হোটেলের কর্মচারীদের লকার খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
এর বাইরে আরেকটি বিষয় এখন স্পষ্ট হয়ে গেছে, ইলন মাস্কের টুইটগুলো যতই আপাত ক্ষতিকর হোক না কেন, তাতে তাঁর প্রতিষ্ঠানের ক্রেতা বা বিনিয়োগকারীদের খুব একটা আসে যায় না।
তবে যে বছর টুইটার (বর্তমান এক্স) কিনে নেন, সে বছর টেসলার শেয়ার দর পড়ে গিয়েছিল ব্যাপকভাবে। এর বড় কারণ টুইটার কেনার টাকার জোগাড় করতে টেসলায় নিজের অনেক শেয়ার বিক্রি করায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা সংকট তৈরি হওয়া।
অবশ্য বছর ঘুরতে না ঘুরতেই দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় টেসলা। একই ভাবে, স্পেসএক্স যদি শেয়ারবাজারে চলে আসে, কোনো সন্দেহ নেই যে—বিপুলসংখ্যক বিনিয়োগকারী এতে অর্থ লগ্নি করবেন। এ ক্ষেত্রে মাস্কের চরিত্রের অপর দিকগুলোকে—যে দিকটা খুবই মেধাবী, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন—বিনিয়োগকারীরা আমলে নেবেন।
তবে মাস্কের চরিত্রের সবচেয়ে সমস্যাজনক বিষয় হলো নিজেকে মানবজাতির ত্রাতা বা ত্রাণকর্তা ভাবার প্রবণতা। টেসলা থেকে শুরু করে স্পেসএক্স হয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) বিষয় নিয়ে মাস্ক এমনভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান যেন, তিনি মানবজাতির ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। বিশেষ করে জলবায়ু-সংক্রান্ত দুর্যোগ প্রতিরোধ, মানুষ আন্তগ্রহ প্রাণীতে উন্নীত করা, বুদ্ধিতে যন্ত্র যেন মানুষকে ছাড়িয়ে যেতে না পারে সেটি নিশ্চিত করা এবং বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক মহাপ্রলয় যেন শুরু না হয়—সে বিষয়ে ওকালতি করে তিনি এই ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার চেষ্টা করছেন।
এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করার সময় যেন ইলন মাস্ক খামখেয়ালি গ্রিক দেবতাদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তিনি মনে করেন, তাঁর হাতেই মানবজাতির ভবিষ্যৎ। তাঁর এমন ধারণার প্রমাণ মেলে গত ৩০ নভেম্বর যখন তিনি টেসলার সাইবার ট্রাক পিকআপের উদ্বোধন করেন, তখন করা এক মন্তব্য থেকে। সে সময় তিনি বলেন, ‘অবশেষে ভবিষ্যৎকে প্রকৃতই ভবিষ্যৎ বলে মনে হচ্ছে!’
মানবজাতিকে রক্ষার দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেওয়া আজকাল ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ফ্যাশন খুবই বিপজ্জনক। গত মাসে বিশ্বকে দুর্বৃত্ত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিপদ থেকে রক্ষার লক্ষ্যে প্রণীত একটি সনদ প্রায় অকেজো করে দিয়েছে চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই। বছরখানেক আগে ক্রিপ্টো প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত স্যাম ব্যাংকম্যান ফ্রাইড দাবি করেছিলেন, তিনি এফটিএক্স ক্রিপ্টো-এক্সচেঞ্জের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক ঝুঁকি নিয়েছিলেন, এটা তিনি মানবতার সেবার লক্ষ্যেই করেছিলেন।
বিশ্বে এ ধরনের মিশনারি আগ্রহ ব্যবসায় নতুন নয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি মার্কিন উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবক হেনরি ফোর্ডকে শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান বাড়াতে আগ্রহী করে তুলেছিল। শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি, সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজ, ট্রেড ইউনিয়নের মতো ধারণা তিনি এনেছিলেন।
হেনরি ফোর্ড সব সময় যুদ্ধের বিরোধী ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িয়ে পড়ার বিরোধিতা করে তিনি বলেছিলেন, ‘যুদ্ধ হচ্ছে কিছু লোভী বিনিয়োগকারীর মানুষ ধ্বংস করে টাকা বানানোর কৌশল।’ এই বিনিয়োগকারী বলতে তিনি সেই সময় ধনী ইহুদিদেরই বুঝিয়েছিলেন। তবে যুদ্ধকালে ব্যবসা তিনি ঠিকই করেছেন। ইংল্যান্ডের জন্য যুদ্ধবিমান বানিয়েছে তাঁর কোম্পানি, নাৎসি জার্মানিকেও যুদ্ধের সরঞ্জাম সরবরাহ করতেন ফোর্ড। এসব মিলিয়ে বিতর্কিত হয়ে পড়েন হেনরি ফোর্ড। কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারক এবং শ্রমিকদের ত্রাতা হয়ে উঠতে চাওয়া ফোর্ডকে ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ আখ্যা দেওয়া হয়।
একইভাবে ইলন মাস্কের ঔদ্ধত্যও খর্ব হতে পারে। যেমন, সাইবার ট্রাক নিয়ে মাস্ক বড় বড় কথা বললেও বাজারে আসার পর সেটির বেশ কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে। যেমন, চালকদের একটি দরজার হাতল খুঁজে পেতে সমস্যা হচ্ছে।
তবে বড় পরিসরে বিবেচনা করলে হয়তো ইলন মাস্কের মানবিক ত্রুটিগুলো তাঁর প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনী জ্ঞানের সামনে উপেক্ষিত হয়। বিশেষ করে বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রচলন, পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট উদ্ভাবন তাঁকে মানবজাতির ইতিহাসে স্মরণীয় করে রাখবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে তাঁর জন্যও হয়তো হেনরি ফোর্ডের মতো ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। মুষ্টিমেয় কিছু লোক তাঁকে তাঁর অস্থির চরিত্রের জন্য গালাগাল দিতে থাকবে; বাকিরা মনে রাখবে তাঁর সৃষ্টিশীল মনন ও উদ্ভাবনের জন্য।
দ্য ইকোনমিস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
ইলন মাস্ক। বিশ্বের শীর্ষ ধনী। তবে সব মহলেই সর্বাধিক আলোচিত নামগুলোর একটি। বাণিজ্য, অর্থনীতি, রাজনীতি—এমনকি ভূরাজনৈতিক অঙ্গনেও তাঁর সরব উপস্থিতি। অনেকে ইলন মাস্ককে বিশ্বের জন্য আশীর্বাদ মনে করেন। তবে কেউ বলেন উন্মাদ! সে যা-ই হোক, তিনি যে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে অতি গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি, সেটি কেউ অস্বীকার করতে পারে না। তিনি এমন এক চরিত্র, যাঁকে পছন্দ না করলেও উপেক্ষা করা যায় না।
তবে বিশ্লেষকদের অনুমান, ইলন মাস্কের অতিমানবীয় সাফল্য ম্লান হয়ে যেতে পারে, তাঁর মানবজাতির ত্রাতা হতে ওঠার তীব্র আকাঙ্ক্ষার কারণে।
কয়েক দিন পরপরই ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান পৃথিবীর কক্ষপথে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে। এতে অনেকের হয়তো ধারণা হয়েছে যে বিষয়টা এখন ডালভাত! কিন্তু সবাই তা ভাবেন না। যেমন চলতি বছরের ১ ডিসেম্বর যখন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যান্ডেনবার্গ স্পেস ফোর্স বেস থেকে ফ্যালকন-৯ রকেট উৎক্ষেপণ করা হচ্ছিল সেখানে উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
একজন ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স প্রস্তুতিকৃত ফ্যালকন-৯ রকেটের প্রশংসা করে বলেন, ‘এটি যেন কখনোই পুরোনো হয় না! অনেকটা আমাদের জনপ্রিয় এসিডিসি কনসার্টের মতো।’ তবে বিষয়টি কেবলই এসিডিসি কনসার্টের মতো নয়। কারণ, সেদিন ফ্যালকন-৯ রকেটে করে যে স্যাটেলাইট উৎক্ষিপ্ত হয়েছিল, তা মূলত একটি ভূরাজনৈতিক ভার বয়ে নিয়ে গেছে মহাশূন্যে। সেটিতে ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা স্যাটেলাইট। উত্তর কোরিয়ার গোয়েন্দা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কয়েক দিনের মাথায়ই এটি কক্ষপথে পাঠাল দক্ষিণ কোরিয়া।
এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সঙ্গে আরও একটি ইতিহাস বা মাইলফলক জড়িত। সেটি হলো স্যাটেলাইটটির প্রস্তুতকারক ছিলেন আয়ারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি কলেজ ডাবলিনের শিক্ষার্থীরা। দেশটিতে তৈরি প্রথম কোনো স্যাটেলাইট এটি।
তবে ঘটনা যা-ই হোক, এই উৎক্ষেপণের কৃতিত্বের বড় একটি অংশই গেছে ফ্যালকন-৯এর মালিক স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কের ঝুলিতে। কারণ, বিভিন্ন দেশের স্যাটেলাইট নিয়ে এরই মধ্যে স্পেসএক্স প্রায় ২৫০ বার মহাকাশে গেছে। এ ছাড়া, টেসলা ও এক্সের মতো প্রতিষ্ঠান দিয়েও বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন ইলন মাস্ক।
কিন্তু সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বেশ কিছু বিতর্কিত মন্তব্য ইলন মাস্ককে মহাকাশ বিজ্ঞানের একজন বাচাল শিক্ষার্থীর কাতারে নামিয়ে দিয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি ইহুদিবিদ্বেষী মন্তব্যকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। পরে তিনি নিজেই তাঁর এই কাজকে ‘বোকামি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। এ ছাড়া রয়েছে, তাঁর ইসরায়েল সফর। এই সফরকে শান্তির বার্তা প্রচারের উদ্দেশ্যে বলে দাবি করলেও অনেকে মনে করছেন, তিনি মূলত ইহুদি বিদ্বেষের অভিযোগ কাটাতে ইসরায়েল সফর করেছেন। আবার অনেকে বলছেন, ইহুদি বিদ্বেষের অভিযোগ তুলে বেশ কয়েকটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান এক্স থেকে বিজ্ঞাপন তুলে নিয়েছে। এই পরিস্থিতি প্রশমনের উদ্দেশ্যেও তিনি ইসরায়েল সফর করে থাকতে পারেন।
এর বাইরেও ইলন মাস্ক বলেছেন, ‘তিনি পৃথিবীর যেকোনো মানুষের চেয়ে পরিবেশ ও জলবায়ু সুরক্ষায় সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন।’
এমন বিতর্কিত অবস্থানের কারণে নির্মোহভাবে মূল্যায়ন করতে হলে ইলন মাস্ককে অনেকে জিনিয়াস বললেও বিতর্কিত বিষয়গুলোও সামনে আনতে হয়। ভ্যান্ডেনবার্গে সেদিনের উৎক্ষেপণে উপস্থিত থাকা এক তরুণ ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী বলেন, ‘ইলন মাস্ককে এখনো বিপুলসংখ্যক মানুষ কাল্ট হিসেবে অনুসরণ করে। তিনি স্পষ্টতই একজন খুব সমস্যাজনক মানুষ। অবিশ্বাস্য মানসিক জোর ও অস্থির অতীতকে সফল ভবিষ্যতে পরিণত করার জন্য তিনি অনেকের কাছেই আকর্ষণীয়। ভক্তদের মাঝে তাঁর অবস্থান এতটাই দৃঢ় যে যদি বলেন মানুষ পানির ওপর দিয়ে হাঁটতে পারবে, তবে সেটিও ভক্তরা বিশ্বাস করবে!’
স্পষ্ট বিনিয়োগ, নতুন উদ্যোগ এবং উদ্ভাবনে এই সময়ে মাস্কের জুড়ি পাওয়া ভার। তিনি বিপুল টাকার মালিকও। কিন্তু তাঁর যে চরিত্র দাঁড়িয়ে গেছে, সেটি নিয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে। প্রশ্ন উঠতে পারে, দাম্ভিকতা কি কেবল বিজনেস পাইওনিয়ারের জন্যই প্রযোজ্য? যে ব্যক্তি ভূমি, মহাকাশ ভ্রমণে বিপ্লব ঘটাতে প্রকৌশল, শক্তি ও অর্থনীতির রীতিনীতিকে চ্যালেঞ্জ করেছেন; তিনি যত বড়ই হন কেন, তিনি তাঁর গুরুত্বের কারণে শালীনতার প্রচলিত নিয়ম লঙ্ঘন করতে পারেন? নাকি তিনি নিজেই নিজেকে প্রচার করার মিশনে মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছেন এবং তাঁর মধ্যে নিজেকে ত্রাতা হিসেবে ভাবার আত্মবিশ্বাস তৈরি করেছে?
এসব প্রশ্নের উত্তর জটিল। ইলন মাস্কের কৌতুক অনেক সময়ই বালখিল্য হয়। প্র্যাংক থেকে শুরু করে তিনি মানুষের গাঁজা সেবন নিয়ে পর্যন্ত তামাশা করেন। এই বিষয়টি মাস্ককে একজন প্রথাবিরোধী বিজনেস ম্যাগনেট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের মতো গুরুগম্ভীর বিষয়ে সাধারণের আড্ডার পর্যায়ে নামিয়ে এনেছেন।
তবে মাস্ক কেবল হাস্যরসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। তিনি প্রায়ই বিভিন্ন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিদের আক্রমণ করে বসেন। অনেকে এসব কারণে তাঁর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
সে যা-ই হোক, প্রথাবিরোধী বিপণন কৌশল ঠিকই মাস্কের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, টেসলার কথা। প্রতিষ্ঠানটি প্রথাগত বিজ্ঞাপন না দিয়েই একপ্রকার মাস্কের কথার জোরে বিপুল পরিমাণ গাড়ি বিক্রি করেছে।
মাস্কের নিজেকে প্রদর্শন করে বেড়ানোর বিষয়টিতে প্রাণের ছোঁয়া রয়েছে, রয়েছে সরস বুদ্ধিমত্তা। একই সঙ্গে নিজের মধ্যে একটি জেদি মনোভাবও রয়েছে তাঁর। ফলে মাস্কের জাদু কোথায় শেষ হবে, আর কোথায় তাঁর পাগলামি শুরু হবে না নির্ণয় করা আসলেই দুষ্কর।
ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান টেসলার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৭৫০ বিলিয়ন ডলার। ফরচুন ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী, স্পেসএক্সের বর্তমান বাজারমূল্য ১৭৫ বিলিয়ন ডলার। ইতিহাসে বেসরকারি খাতের কোনো কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) বাজারমূল্য এত হয়নি কখনো।
এরপরও ইলন মাস্ক কেন এমন দুর্বোধ্য ও অস্বাভাবিক আচরণ করেন, তা স্পষ্ট নয়। তবে সিএনএনের সাবেক সাংবাদিক ওয়াল্টার আইজ্যাকসন লিখিত মাস্কের জীবনীতে বলা হয়েছে, মাস্কের এমন আচরণ আসলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণেও হয়ে থাকতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, একবার মজা করে মাস্কের এক বন্ধু তাঁর ফোন কেড়ে নিয়ে হোটেলের লকারে বন্ধ করে রেখেছিলেন যাতে মাস্ক টুইট করতে না পারেন। সারা দিন মোটামুটি ভালো গেলেও রাত ৩টার দিকে মাস্ক হোটেলের কর্মচারীদের লকার খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
এর বাইরে আরেকটি বিষয় এখন স্পষ্ট হয়ে গেছে, ইলন মাস্কের টুইটগুলো যতই আপাত ক্ষতিকর হোক না কেন, তাতে তাঁর প্রতিষ্ঠানের ক্রেতা বা বিনিয়োগকারীদের খুব একটা আসে যায় না।
তবে যে বছর টুইটার (বর্তমান এক্স) কিনে নেন, সে বছর টেসলার শেয়ার দর পড়ে গিয়েছিল ব্যাপকভাবে। এর বড় কারণ টুইটার কেনার টাকার জোগাড় করতে টেসলায় নিজের অনেক শেয়ার বিক্রি করায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা সংকট তৈরি হওয়া।
অবশ্য বছর ঘুরতে না ঘুরতেই দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় টেসলা। একই ভাবে, স্পেসএক্স যদি শেয়ারবাজারে চলে আসে, কোনো সন্দেহ নেই যে—বিপুলসংখ্যক বিনিয়োগকারী এতে অর্থ লগ্নি করবেন। এ ক্ষেত্রে মাস্কের চরিত্রের অপর দিকগুলোকে—যে দিকটা খুবই মেধাবী, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন—বিনিয়োগকারীরা আমলে নেবেন।
তবে মাস্কের চরিত্রের সবচেয়ে সমস্যাজনক বিষয় হলো নিজেকে মানবজাতির ত্রাতা বা ত্রাণকর্তা ভাবার প্রবণতা। টেসলা থেকে শুরু করে স্পেসএক্স হয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) বিষয় নিয়ে মাস্ক এমনভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান যেন, তিনি মানবজাতির ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। বিশেষ করে জলবায়ু-সংক্রান্ত দুর্যোগ প্রতিরোধ, মানুষ আন্তগ্রহ প্রাণীতে উন্নীত করা, বুদ্ধিতে যন্ত্র যেন মানুষকে ছাড়িয়ে যেতে না পারে সেটি নিশ্চিত করা এবং বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক মহাপ্রলয় যেন শুরু না হয়—সে বিষয়ে ওকালতি করে তিনি এই ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার চেষ্টা করছেন।
এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করার সময় যেন ইলন মাস্ক খামখেয়ালি গ্রিক দেবতাদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তিনি মনে করেন, তাঁর হাতেই মানবজাতির ভবিষ্যৎ। তাঁর এমন ধারণার প্রমাণ মেলে গত ৩০ নভেম্বর যখন তিনি টেসলার সাইবার ট্রাক পিকআপের উদ্বোধন করেন, তখন করা এক মন্তব্য থেকে। সে সময় তিনি বলেন, ‘অবশেষে ভবিষ্যৎকে প্রকৃতই ভবিষ্যৎ বলে মনে হচ্ছে!’
মানবজাতিকে রক্ষার দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেওয়া আজকাল ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ফ্যাশন খুবই বিপজ্জনক। গত মাসে বিশ্বকে দুর্বৃত্ত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিপদ থেকে রক্ষার লক্ষ্যে প্রণীত একটি সনদ প্রায় অকেজো করে দিয়েছে চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই। বছরখানেক আগে ক্রিপ্টো প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত স্যাম ব্যাংকম্যান ফ্রাইড দাবি করেছিলেন, তিনি এফটিএক্স ক্রিপ্টো-এক্সচেঞ্জের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক ঝুঁকি নিয়েছিলেন, এটা তিনি মানবতার সেবার লক্ষ্যেই করেছিলেন।
বিশ্বে এ ধরনের মিশনারি আগ্রহ ব্যবসায় নতুন নয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি মার্কিন উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবক হেনরি ফোর্ডকে শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান বাড়াতে আগ্রহী করে তুলেছিল। শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি, সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজ, ট্রেড ইউনিয়নের মতো ধারণা তিনি এনেছিলেন।
হেনরি ফোর্ড সব সময় যুদ্ধের বিরোধী ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িয়ে পড়ার বিরোধিতা করে তিনি বলেছিলেন, ‘যুদ্ধ হচ্ছে কিছু লোভী বিনিয়োগকারীর মানুষ ধ্বংস করে টাকা বানানোর কৌশল।’ এই বিনিয়োগকারী বলতে তিনি সেই সময় ধনী ইহুদিদেরই বুঝিয়েছিলেন। তবে যুদ্ধকালে ব্যবসা তিনি ঠিকই করেছেন। ইংল্যান্ডের জন্য যুদ্ধবিমান বানিয়েছে তাঁর কোম্পানি, নাৎসি জার্মানিকেও যুদ্ধের সরঞ্জাম সরবরাহ করতেন ফোর্ড। এসব মিলিয়ে বিতর্কিত হয়ে পড়েন হেনরি ফোর্ড। কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারক এবং শ্রমিকদের ত্রাতা হয়ে উঠতে চাওয়া ফোর্ডকে ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ আখ্যা দেওয়া হয়।
একইভাবে ইলন মাস্কের ঔদ্ধত্যও খর্ব হতে পারে। যেমন, সাইবার ট্রাক নিয়ে মাস্ক বড় বড় কথা বললেও বাজারে আসার পর সেটির বেশ কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে। যেমন, চালকদের একটি দরজার হাতল খুঁজে পেতে সমস্যা হচ্ছে।
তবে বড় পরিসরে বিবেচনা করলে হয়তো ইলন মাস্কের মানবিক ত্রুটিগুলো তাঁর প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনী জ্ঞানের সামনে উপেক্ষিত হয়। বিশেষ করে বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রচলন, পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট উদ্ভাবন তাঁকে মানবজাতির ইতিহাসে স্মরণীয় করে রাখবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে তাঁর জন্যও হয়তো হেনরি ফোর্ডের মতো ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। মুষ্টিমেয় কিছু লোক তাঁকে তাঁর অস্থির চরিত্রের জন্য গালাগাল দিতে থাকবে; বাকিরা মনে রাখবে তাঁর সৃষ্টিশীল মনন ও উদ্ভাবনের জন্য।
দ্য ইকোনমিস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
ডোনাল্ড ট্রাম্প মনে করেন, তিনিই বিশ্ব চালাচ্ছেন। তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষা সীমাহীন। কিন্তু এটি বিপজ্জনক ঔদ্ধত্যেরও ইঙ্গিত দেয় এবং একটি গুরুতর প্রশ্ন তোলে—এই বিশৃঙ্খল ও প্রতিহিংসাপরায়ণ প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে পৃথিবী কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? দ্য আটলান্টিককে দেওয়া নতুন এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী আধিপত্য...
৯ ঘণ্টা আগেবড় প্রশ্ন হলো, ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনো সামরিক পদক্ষেপ নেবে কি না? ২০১৯ সালে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৪০ ভারতীয় পুলিশ নিহত হয়। এরপর পেহেলগামের হামলাই ছিল কাশ্মীরে সবচেয়ে প্রাণঘাতী। এমনকি এটি ১৯৮৯ সালে কাশ্মীরে ভারতীয় নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর থেকে সেখানকার
১৭ ঘণ্টা আগেবিশ্লেষকদের মতে, ভারত হয়তো কিছুটা সংযত আচরণই করবে। কারণ, দেশটির সামরিক বাহিনী এখনো পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ফলে, তাদের প্রকাশ্যে এনে যুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার মধ্যে ঝুঁকি আছে। ২০১৮ সালে ভারতীয় পার্লামেন্টের এক প্রতিবেদনে দেশের ৬৮ শতাংশ সামরিক সরঞ্জামকে ‘পুরোনো মডেলের’, ২৪ শতাংশকে...
২ দিন আগেসংবাদ বা তথ্যের সংলাপমূলক উপস্থাপন চর্চার উত্থানের পাশাপাশি, পাঠকেরা এখন চ্যাটবটকে ফলোআপ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন, চাহিদামতো সারসংক্ষেপের জন্য অনুরোধ করেন, এমনকি বিরোধপূর্ণ বিষয়ের ব্যাখ্যাও এআই–এর কাছে চাওয়া হয়। ফলে পাঠকেরা সংবাদ পাঠে চিরাচরিত নিষ্ক্রিয় গ্রহীতা থেকে সক্রিয় অংশগ্রহণকারীতে রূপান্তরিত হচ্ছে
৩ দিন আগে