
ভারতের নির্বাচন কমিশন দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থদাতাদের তালিকা প্রকাশ করেছে গত ১৪ মার্চ। ওই তালিকায় নাম থাকা কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের নানা দুর্নীতি থেকে রেহাই ও নানা সুযোগ–সুবিধা পেতে রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থ দিয়েছিল। যথারীতি তারা পেয়েছেও সেসব ছাড়।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা এসব প্রতিষ্ঠানের রাজনৈতিক আঁতাত নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার তথ্যানুযায়ী, ২০১৮ সালে ইলেকটোরাল বন্ড স্কিম চালু করার পর থেকে ৩০টি ধাপে ১৬ হাজার ৫১৮ কোটি রুপির বন্ড ছাড়া হয়। বন্ড কেনায় শীর্ষে রয়েছে বিতর্কিত লটারি ব্যবসায়ী মার্টিন সান্তিয়াগোর সংস্থা ‘ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস’। এই প্রতিষ্ঠান কিনেছে মোট ১ হাজার ৩৬৮ কোটি রুপির বন্ড।
বন্ড কেনায় টাকার অঙ্কে তাদের পরেই রয়েছে বিখ্যাত তেলুগু ব্যবসায়ী কৃষ্ণা রেড্ডির সংস্থা ‘মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড’। তারা ৯৬৬ কোটি রুপির নির্বাচনী বন্ড কিনেছে। মূলত হায়দরাবাদ কেন্দ্রিক এই সংস্থা একাধিক সরকারি প্রকল্পের ঠিকাদারি পেয়েছে। এ ছাড়া মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সহযোগী সংস্থা ‘ওয়েস্টার্ন ইউপি পাওয়ার ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড’ ২২০ কোটি রুপির বন্ড কিনেছে।
ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোকে পাঁচ বছর ধরে তহবিল জোগানো শীর্ষ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে বেদান্ত লিমিটেড, ভারতী এয়ারটেল, আরপিএসজি গ্রুপ ও এসেল মাইনিংসহ অন্য বৃহত্তম ভারতীয় কোম্পানি। এদের মধ্য কেবল সান্তিয়াগোর সংস্থাই নয়, বন্ড কেনার দিক থেকে প্রথম ৩০টি সংস্থার ১৪ টিতেই গত কয়েক বছরে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে সিবিআই, ইডি কিংবা আয়কর দপ্তর (আইটি)।
বিজেপির নির্বাচনী বন্ড কেনার পর ফিউচার গেমিংয়ের ওপর ভারতীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নজরদারি কমেছে। বলতে গেলে এরপরই অন্য ভারতীয় কোম্পানিগুলোও নির্বাচনী বন্ড কেনার দিকে ঝুঁকতে থাকে।
রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার সূচনা
ভারতের বৃহত্তম রিয়েল এস্টেট কোম্পানি হয়ে ওঠার আগে ডিএলএফ গ্রুপ বিপদে পড়লেই সাহায্যের জন্য কংগ্রেস নেতাদের কাছে ধরনা দিত। ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিটি আশির দশকে কুশল পাল সিংয়ের নেতৃত্বে বড় সফলতার মুখ দেখে। সিং আত্মজীবনীতে লিখেছেন, কংগ্রেস নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সঙ্গে তাঁর একাধিকবার সাক্ষাৎ হয়েছে। গ্রেপ্তার এড়ানোসহ তাঁকে রক্ষা করতেও এগিয়ে এসেছিলেন রাজীব গান্ধী।
২০১২ সালে কংগ্রেস শাসিত হরিয়ানা রাজ্যের গুরগাঁওয়ে একজন আমলা ডিএলএফ গ্রুপ এবং গান্ধী পরিবারের জামাতা রবার্ট ভদ্রর (প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর স্বামী) মধ্যে জমিজমা সংক্রান্ত একটি চুক্তি বাতিল করেন। এ ঘটনা নিয়ে সমালোচনা সৃষ্টি হলে রাজনৈতিক তদন্ত শুরু হয়।
এ নিয়ে সিং আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘রাজীব না থাকলে গুরগাঁওয়ের কাজটা কখনোই হতো না।’ ওই কর্মকর্তাকে সরকার পরে বদলি করে। ঘটনাগুলো বিজেপির প্রচারের খোরাক হয়ে ওঠে। দলটি অভিযোগ করে, এই ঘটনায় গান্ধী পরিবারের দুর্নীতির স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে।
এরপর ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার আগে হরিয়ানায় একটি সমাবেশে বলেছিলেন, ‘তারা (গান্ধী পরিবার) সোনার চামচ নিয়ে জন্মেছে, যেখানে আমি রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মে চা বিক্রি করে বড় হয়েছি। রাহুল গান্ধীর একটি সুপরিচিত বংশ আছে, যেখানে আমি শুধুই সৎ।’
ওই বছর বিজেপি দুর্নীতি বিরোধী প্রচার চালিয়েই জাতীয় নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় এবং প্রথমবার হরিয়ানায় ক্ষমতায় আসে। পাল্টে যায় ডিএলএফের খাতিরের জায়গায়ও। ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের নভেম্বরের মধ্যে ডিএলএফ গ্রুপ বিজেপির ১৭০ কোটি রুপির নির্বাচনী বন্ড কেনে।
যাইহোক, এরপর ২০২৩ সালের এপ্রিলে হরিয়ানার বিজেপি সরকার—পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টকে জানায়, ডিএলএফ–ভদ্রর জমিজমা চুক্তিতে ‘কোনো বিধি লঙ্ঘন হয়নি।’
তবে ডিএলএফের কাছে তাদের অনুদানের ধরন এবং সময় সম্পর্কে মন্তব্যর জন্য যোগাযোগ করলে তারা আল জাজিরার অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
কড়ির বদলে কড়ি
২০১৯ সালের অক্টোবরে বিজেপি সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন আয়কর বিভাগ কর ফাঁকির অভিযোগে ভারতজুড়ে ১৫টি শহরে মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের (এমইএআইএল) সঙ্গে যুক্ত অনেক বাসভবন এবং গেস্ট হাউসে অভিযান চালায়। এরপর থেকে এমইএআইএল এবং বিজেপি সরকারের মধ্যে সম্পর্ক ‘গভীর’ হয়ে ওঠে।
প্রকৃতপক্ষে, এমইএআইএল গত পাঁচ বছরে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে বিজেপিকে ৬৭০ কোটি রুপি দিয়েছে, যার বেশির ভাগই অক্টোবরের অভিযানের পর। এতে এমইএআইএল কোনো দলের একক বৃহত্তম দাতায় পরিণত হয়েছে।
এরপর ২০২২ সালের মার্চে চীন সীমান্তের কাছে লাদাখে কৌশলগত জোজি–লা টানেলের ঠিকাদারি পাওয়ায় ভারত সরকারের পরিবহন মন্ত্রী নিতিন গড়করি সংসদে প্রতিষ্ঠানটির প্রশংসা করেন।
নিলামে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোকে পরাজিত করায় গড়করি বলেন, ‘মেঘা (এমইএআইএল) নিলাম কেনায় সরকারের ৫ হাজার কোটি রুপি বেঁচে গেছে।’
এদিকে ২০২৩ সালের অক্টোবরে তেলেঙ্গানা রাজ্যে নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে এমইএআইএল নির্মিত লিফট–সেচ প্রকল্পের মেডিগড্ডা ব্যারেজের কিছু অংশ ধসে পড়ে। ফলে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বিজেপির চুক্তি নিয়ে রাজ্যে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়।
এরপর তেলেঙ্গানা রাজ্যসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসে। ফলে রাজনৈতিক হাওয়া বদল হলে এমইএআইএলের অনুদানের ঠিকানাও পরিবর্তিত হয়।
জনমত জরিপ অনুসারে, ২০২৩ সালে রাজ্য নির্বাচনের দৌড়ে প্রতিষ্ঠানটি সহযোগী সংস্থা ওয়েস্টার্ন ইউপি পাওয়ার ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের অধীনে আরও বেশি বন্ড কেনে। যার মধ্যে কংগ্রেস পেয়েছে প্রায় ১০০ কোটি রুপি। ফলে তারা কংগ্রেসেরও শীর্ষ দাতা প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে।
মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করলে এমইএআইএল আল জাজিরার অনুরোধে সাড়া দেয়নি। তবে বিজেপির মতো কংগ্রেসও দাবি করেছে, এসব অনুদান নির্বাচনের ফলাফলের ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জ্যেষ্ঠ নেতা আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমাদের দাতা করপোরেটরা এটি করেছে, কারণ আমাদের শাসনের একটি ভালো রেকর্ড রয়েছে।’
এদিকে ২০২০ সালের ২৫ জুন কলকাতাভিত্তিক স্পিরিট প্রস্তুতকারী ও সি–ফুড সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আইএফবি এগ্রো লিমিটেডে ১৫০ জনেরও বেশি সশস্ত্র লোক হামলা চালায় ও ভাঙচুর করে। এরপর প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়। পরদিন কোম্পানিটি ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে চিঠি লিখে জানায়, হামলার সময় পুলিশ কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর মন্ত্রিসভা থেকেও হস্তক্ষেপের আবেদন নিষ্ফল ছিল।
এরপর রাজ্য সরকারের পণ্য ও পরিষেবা কর কর্মকর্তারা কোম্পানির নুরপুর শাখায় অভিযান চালায়। উপায়ন্তর না পেয়ে কোম্পানিটি নির্বাচনী বন্ড কেনা শুরু করে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে দেওয়া নথিপত্র অনুসারে, ২০২২ সালে কোম্পানিটি ৪০ কোটি রুপি মূল্যের বন্ড কেনে। পরে প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুসারে এসব বন্ড কেনা হয়েছিল।’ তৃণমূল কংগ্রেসকে ইঙ্গিত করে কথাটি বললেও তিনি সরাসরি কোনো দলের নাম মুখে নেননি।
কোম্পানিটি ৯২ কোটি রুপি মূল্যের বন্ড কিনেছে। এর মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) ভাগে পড়েছে ৪২ কোটি রুপি। আইএফবি এগ্রো অন্যান্য দলকেও অল্প পরিমাণ অনুদান দিয়েছে। ওডিশা রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজু জনতা দলকে দিয়েছে ৬ কোটি ৩০ লাখ রুপি; বিহারের প্রভাবশালী আঞ্চলিক দল রাষ্ট্রীয় জনতা দলকে ৩৫ কোটি রুপি এবং কংগ্রেসকে দিয়েছে ৫ কোটি রুপি।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় মুখপাত্র গোখলে বলেছেন, আইএফবি এগ্রোর নির্বাহীদের দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। বিজেপি সরকারের অধীনে কেন্দ্রীয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর হুমকি ও চাপে এমন মন্তব্য করেছে।
বিজেপি এবং কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গোখলে আরও বলেন, তৃণমূল অনুদান বেশি পেয়েছে রাজনৈতিক সফলতার জন্য। এর বেশি কিছু নয়। যেই দল নির্বাচনে জিতবে কোম্পানিগুলো তো সেই দলেরই বন্ড কিনবে! এটাই স্বাভাবিক। আপনি তো টাকা অযথা জলে ফেলতে চাইবেন না!
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের অর্থ বিলের মাধ্যমে আইনে একগুচ্ছ সংশোধনী এনে মোদী সরকার ২০১৮ সাল থেকে ইলেকটোরাল বন্ড চালু করে। এর ফলে কোনো ব্যক্তি বা করপোরেট রাজনৈতিক দলগুলোকে চাঁদা দিতে চাইলে, ব্যাংকের মাধ্যমে বন্ড কিনতে পারে। ১ হাজার, ১০ হাজার, ১ লাখ, ১০ লাখ এবং ১ কোটি রুপি মূল্যের বন্ড ছাড়া হয়। রাজনৈতিক দলগুলো নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে সেই বন্ড ভাঙিয়ে নিতে পারে। কিন্তু দাতার পরিচয় গোপন থাকে।
এই বন্ডের ফলে করপোরেট সংস্থার পাশাপাশি বিদেশিরাও রাজনৈতিক দলগুলোকে টাকা দিতে পারে। যার বিনিময়ে ব্যক্তি বা সংস্থা ১০০ শতাংশ কর ছাড় পায়। এই ব্যবস্থায় কোম্পানিগুলো নিজেদের পরিচয় গোপন করে রাজনৈতিক প্রচারে সীমাহীন চাঁদা দিতে পারে। তবে এ নিয়ে নানা সমালোচনার সৃষ্টি হলে গত ফেব্রুয়ারিতে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট এই বন্ড প্রথাকে অসাংবিধানিক বলে রায় দেন।

ভারতের নির্বাচন কমিশন দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থদাতাদের তালিকা প্রকাশ করেছে গত ১৪ মার্চ। ওই তালিকায় নাম থাকা কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের নানা দুর্নীতি থেকে রেহাই ও নানা সুযোগ–সুবিধা পেতে রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থ দিয়েছিল। যথারীতি তারা পেয়েছেও সেসব ছাড়।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা এসব প্রতিষ্ঠানের রাজনৈতিক আঁতাত নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার তথ্যানুযায়ী, ২০১৮ সালে ইলেকটোরাল বন্ড স্কিম চালু করার পর থেকে ৩০টি ধাপে ১৬ হাজার ৫১৮ কোটি রুপির বন্ড ছাড়া হয়। বন্ড কেনায় শীর্ষে রয়েছে বিতর্কিত লটারি ব্যবসায়ী মার্টিন সান্তিয়াগোর সংস্থা ‘ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস’। এই প্রতিষ্ঠান কিনেছে মোট ১ হাজার ৩৬৮ কোটি রুপির বন্ড।
বন্ড কেনায় টাকার অঙ্কে তাদের পরেই রয়েছে বিখ্যাত তেলুগু ব্যবসায়ী কৃষ্ণা রেড্ডির সংস্থা ‘মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড’। তারা ৯৬৬ কোটি রুপির নির্বাচনী বন্ড কিনেছে। মূলত হায়দরাবাদ কেন্দ্রিক এই সংস্থা একাধিক সরকারি প্রকল্পের ঠিকাদারি পেয়েছে। এ ছাড়া মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সহযোগী সংস্থা ‘ওয়েস্টার্ন ইউপি পাওয়ার ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড’ ২২০ কোটি রুপির বন্ড কিনেছে।
ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোকে পাঁচ বছর ধরে তহবিল জোগানো শীর্ষ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে বেদান্ত লিমিটেড, ভারতী এয়ারটেল, আরপিএসজি গ্রুপ ও এসেল মাইনিংসহ অন্য বৃহত্তম ভারতীয় কোম্পানি। এদের মধ্য কেবল সান্তিয়াগোর সংস্থাই নয়, বন্ড কেনার দিক থেকে প্রথম ৩০টি সংস্থার ১৪ টিতেই গত কয়েক বছরে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে সিবিআই, ইডি কিংবা আয়কর দপ্তর (আইটি)।
বিজেপির নির্বাচনী বন্ড কেনার পর ফিউচার গেমিংয়ের ওপর ভারতীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নজরদারি কমেছে। বলতে গেলে এরপরই অন্য ভারতীয় কোম্পানিগুলোও নির্বাচনী বন্ড কেনার দিকে ঝুঁকতে থাকে।
রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার সূচনা
ভারতের বৃহত্তম রিয়েল এস্টেট কোম্পানি হয়ে ওঠার আগে ডিএলএফ গ্রুপ বিপদে পড়লেই সাহায্যের জন্য কংগ্রেস নেতাদের কাছে ধরনা দিত। ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিটি আশির দশকে কুশল পাল সিংয়ের নেতৃত্বে বড় সফলতার মুখ দেখে। সিং আত্মজীবনীতে লিখেছেন, কংগ্রেস নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সঙ্গে তাঁর একাধিকবার সাক্ষাৎ হয়েছে। গ্রেপ্তার এড়ানোসহ তাঁকে রক্ষা করতেও এগিয়ে এসেছিলেন রাজীব গান্ধী।
২০১২ সালে কংগ্রেস শাসিত হরিয়ানা রাজ্যের গুরগাঁওয়ে একজন আমলা ডিএলএফ গ্রুপ এবং গান্ধী পরিবারের জামাতা রবার্ট ভদ্রর (প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর স্বামী) মধ্যে জমিজমা সংক্রান্ত একটি চুক্তি বাতিল করেন। এ ঘটনা নিয়ে সমালোচনা সৃষ্টি হলে রাজনৈতিক তদন্ত শুরু হয়।
এ নিয়ে সিং আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘রাজীব না থাকলে গুরগাঁওয়ের কাজটা কখনোই হতো না।’ ওই কর্মকর্তাকে সরকার পরে বদলি করে। ঘটনাগুলো বিজেপির প্রচারের খোরাক হয়ে ওঠে। দলটি অভিযোগ করে, এই ঘটনায় গান্ধী পরিবারের দুর্নীতির স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে।
এরপর ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার আগে হরিয়ানায় একটি সমাবেশে বলেছিলেন, ‘তারা (গান্ধী পরিবার) সোনার চামচ নিয়ে জন্মেছে, যেখানে আমি রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মে চা বিক্রি করে বড় হয়েছি। রাহুল গান্ধীর একটি সুপরিচিত বংশ আছে, যেখানে আমি শুধুই সৎ।’
ওই বছর বিজেপি দুর্নীতি বিরোধী প্রচার চালিয়েই জাতীয় নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় এবং প্রথমবার হরিয়ানায় ক্ষমতায় আসে। পাল্টে যায় ডিএলএফের খাতিরের জায়গায়ও। ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের নভেম্বরের মধ্যে ডিএলএফ গ্রুপ বিজেপির ১৭০ কোটি রুপির নির্বাচনী বন্ড কেনে।
যাইহোক, এরপর ২০২৩ সালের এপ্রিলে হরিয়ানার বিজেপি সরকার—পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টকে জানায়, ডিএলএফ–ভদ্রর জমিজমা চুক্তিতে ‘কোনো বিধি লঙ্ঘন হয়নি।’
তবে ডিএলএফের কাছে তাদের অনুদানের ধরন এবং সময় সম্পর্কে মন্তব্যর জন্য যোগাযোগ করলে তারা আল জাজিরার অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
কড়ির বদলে কড়ি
২০১৯ সালের অক্টোবরে বিজেপি সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন আয়কর বিভাগ কর ফাঁকির অভিযোগে ভারতজুড়ে ১৫টি শহরে মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের (এমইএআইএল) সঙ্গে যুক্ত অনেক বাসভবন এবং গেস্ট হাউসে অভিযান চালায়। এরপর থেকে এমইএআইএল এবং বিজেপি সরকারের মধ্যে সম্পর্ক ‘গভীর’ হয়ে ওঠে।
প্রকৃতপক্ষে, এমইএআইএল গত পাঁচ বছরে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে বিজেপিকে ৬৭০ কোটি রুপি দিয়েছে, যার বেশির ভাগই অক্টোবরের অভিযানের পর। এতে এমইএআইএল কোনো দলের একক বৃহত্তম দাতায় পরিণত হয়েছে।
এরপর ২০২২ সালের মার্চে চীন সীমান্তের কাছে লাদাখে কৌশলগত জোজি–লা টানেলের ঠিকাদারি পাওয়ায় ভারত সরকারের পরিবহন মন্ত্রী নিতিন গড়করি সংসদে প্রতিষ্ঠানটির প্রশংসা করেন।
নিলামে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোকে পরাজিত করায় গড়করি বলেন, ‘মেঘা (এমইএআইএল) নিলাম কেনায় সরকারের ৫ হাজার কোটি রুপি বেঁচে গেছে।’
এদিকে ২০২৩ সালের অক্টোবরে তেলেঙ্গানা রাজ্যে নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে এমইএআইএল নির্মিত লিফট–সেচ প্রকল্পের মেডিগড্ডা ব্যারেজের কিছু অংশ ধসে পড়ে। ফলে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বিজেপির চুক্তি নিয়ে রাজ্যে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়।
এরপর তেলেঙ্গানা রাজ্যসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসে। ফলে রাজনৈতিক হাওয়া বদল হলে এমইএআইএলের অনুদানের ঠিকানাও পরিবর্তিত হয়।
জনমত জরিপ অনুসারে, ২০২৩ সালে রাজ্য নির্বাচনের দৌড়ে প্রতিষ্ঠানটি সহযোগী সংস্থা ওয়েস্টার্ন ইউপি পাওয়ার ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের অধীনে আরও বেশি বন্ড কেনে। যার মধ্যে কংগ্রেস পেয়েছে প্রায় ১০০ কোটি রুপি। ফলে তারা কংগ্রেসেরও শীর্ষ দাতা প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে।
মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করলে এমইএআইএল আল জাজিরার অনুরোধে সাড়া দেয়নি। তবে বিজেপির মতো কংগ্রেসও দাবি করেছে, এসব অনুদান নির্বাচনের ফলাফলের ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জ্যেষ্ঠ নেতা আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমাদের দাতা করপোরেটরা এটি করেছে, কারণ আমাদের শাসনের একটি ভালো রেকর্ড রয়েছে।’
এদিকে ২০২০ সালের ২৫ জুন কলকাতাভিত্তিক স্পিরিট প্রস্তুতকারী ও সি–ফুড সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আইএফবি এগ্রো লিমিটেডে ১৫০ জনেরও বেশি সশস্ত্র লোক হামলা চালায় ও ভাঙচুর করে। এরপর প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়। পরদিন কোম্পানিটি ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে চিঠি লিখে জানায়, হামলার সময় পুলিশ কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর মন্ত্রিসভা থেকেও হস্তক্ষেপের আবেদন নিষ্ফল ছিল।
এরপর রাজ্য সরকারের পণ্য ও পরিষেবা কর কর্মকর্তারা কোম্পানির নুরপুর শাখায় অভিযান চালায়। উপায়ন্তর না পেয়ে কোম্পানিটি নির্বাচনী বন্ড কেনা শুরু করে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে দেওয়া নথিপত্র অনুসারে, ২০২২ সালে কোম্পানিটি ৪০ কোটি রুপি মূল্যের বন্ড কেনে। পরে প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুসারে এসব বন্ড কেনা হয়েছিল।’ তৃণমূল কংগ্রেসকে ইঙ্গিত করে কথাটি বললেও তিনি সরাসরি কোনো দলের নাম মুখে নেননি।
কোম্পানিটি ৯২ কোটি রুপি মূল্যের বন্ড কিনেছে। এর মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) ভাগে পড়েছে ৪২ কোটি রুপি। আইএফবি এগ্রো অন্যান্য দলকেও অল্প পরিমাণ অনুদান দিয়েছে। ওডিশা রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজু জনতা দলকে দিয়েছে ৬ কোটি ৩০ লাখ রুপি; বিহারের প্রভাবশালী আঞ্চলিক দল রাষ্ট্রীয় জনতা দলকে ৩৫ কোটি রুপি এবং কংগ্রেসকে দিয়েছে ৫ কোটি রুপি।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় মুখপাত্র গোখলে বলেছেন, আইএফবি এগ্রোর নির্বাহীদের দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। বিজেপি সরকারের অধীনে কেন্দ্রীয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর হুমকি ও চাপে এমন মন্তব্য করেছে।
বিজেপি এবং কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গোখলে আরও বলেন, তৃণমূল অনুদান বেশি পেয়েছে রাজনৈতিক সফলতার জন্য। এর বেশি কিছু নয়। যেই দল নির্বাচনে জিতবে কোম্পানিগুলো তো সেই দলেরই বন্ড কিনবে! এটাই স্বাভাবিক। আপনি তো টাকা অযথা জলে ফেলতে চাইবেন না!
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের অর্থ বিলের মাধ্যমে আইনে একগুচ্ছ সংশোধনী এনে মোদী সরকার ২০১৮ সাল থেকে ইলেকটোরাল বন্ড চালু করে। এর ফলে কোনো ব্যক্তি বা করপোরেট রাজনৈতিক দলগুলোকে চাঁদা দিতে চাইলে, ব্যাংকের মাধ্যমে বন্ড কিনতে পারে। ১ হাজার, ১০ হাজার, ১ লাখ, ১০ লাখ এবং ১ কোটি রুপি মূল্যের বন্ড ছাড়া হয়। রাজনৈতিক দলগুলো নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে সেই বন্ড ভাঙিয়ে নিতে পারে। কিন্তু দাতার পরিচয় গোপন থাকে।
এই বন্ডের ফলে করপোরেট সংস্থার পাশাপাশি বিদেশিরাও রাজনৈতিক দলগুলোকে টাকা দিতে পারে। যার বিনিময়ে ব্যক্তি বা সংস্থা ১০০ শতাংশ কর ছাড় পায়। এই ব্যবস্থায় কোম্পানিগুলো নিজেদের পরিচয় গোপন করে রাজনৈতিক প্রচারে সীমাহীন চাঁদা দিতে পারে। তবে এ নিয়ে নানা সমালোচনার সৃষ্টি হলে গত ফেব্রুয়ারিতে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট এই বন্ড প্রথাকে অসাংবিধানিক বলে রায় দেন।

ভারতের নির্বাচন কমিশন দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থদাতাদের তালিকা প্রকাশ করেছে গত ১৪ মার্চ। ওই তালিকায় নাম থাকা কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের নানা দুর্নীতি থেকে রেহাই ও নানা সুযোগ–সুবিধা পেতে রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থ দিয়েছিল। যথারীতি তারা পেয়েছেও সেসব ছাড়।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা এসব প্রতিষ্ঠানের রাজনৈতিক আঁতাত নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার তথ্যানুযায়ী, ২০১৮ সালে ইলেকটোরাল বন্ড স্কিম চালু করার পর থেকে ৩০টি ধাপে ১৬ হাজার ৫১৮ কোটি রুপির বন্ড ছাড়া হয়। বন্ড কেনায় শীর্ষে রয়েছে বিতর্কিত লটারি ব্যবসায়ী মার্টিন সান্তিয়াগোর সংস্থা ‘ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস’। এই প্রতিষ্ঠান কিনেছে মোট ১ হাজার ৩৬৮ কোটি রুপির বন্ড।
বন্ড কেনায় টাকার অঙ্কে তাদের পরেই রয়েছে বিখ্যাত তেলুগু ব্যবসায়ী কৃষ্ণা রেড্ডির সংস্থা ‘মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড’। তারা ৯৬৬ কোটি রুপির নির্বাচনী বন্ড কিনেছে। মূলত হায়দরাবাদ কেন্দ্রিক এই সংস্থা একাধিক সরকারি প্রকল্পের ঠিকাদারি পেয়েছে। এ ছাড়া মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সহযোগী সংস্থা ‘ওয়েস্টার্ন ইউপি পাওয়ার ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড’ ২২০ কোটি রুপির বন্ড কিনেছে।
ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোকে পাঁচ বছর ধরে তহবিল জোগানো শীর্ষ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে বেদান্ত লিমিটেড, ভারতী এয়ারটেল, আরপিএসজি গ্রুপ ও এসেল মাইনিংসহ অন্য বৃহত্তম ভারতীয় কোম্পানি। এদের মধ্য কেবল সান্তিয়াগোর সংস্থাই নয়, বন্ড কেনার দিক থেকে প্রথম ৩০টি সংস্থার ১৪ টিতেই গত কয়েক বছরে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে সিবিআই, ইডি কিংবা আয়কর দপ্তর (আইটি)।
বিজেপির নির্বাচনী বন্ড কেনার পর ফিউচার গেমিংয়ের ওপর ভারতীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নজরদারি কমেছে। বলতে গেলে এরপরই অন্য ভারতীয় কোম্পানিগুলোও নির্বাচনী বন্ড কেনার দিকে ঝুঁকতে থাকে।
রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার সূচনা
ভারতের বৃহত্তম রিয়েল এস্টেট কোম্পানি হয়ে ওঠার আগে ডিএলএফ গ্রুপ বিপদে পড়লেই সাহায্যের জন্য কংগ্রেস নেতাদের কাছে ধরনা দিত। ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিটি আশির দশকে কুশল পাল সিংয়ের নেতৃত্বে বড় সফলতার মুখ দেখে। সিং আত্মজীবনীতে লিখেছেন, কংগ্রেস নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সঙ্গে তাঁর একাধিকবার সাক্ষাৎ হয়েছে। গ্রেপ্তার এড়ানোসহ তাঁকে রক্ষা করতেও এগিয়ে এসেছিলেন রাজীব গান্ধী।
২০১২ সালে কংগ্রেস শাসিত হরিয়ানা রাজ্যের গুরগাঁওয়ে একজন আমলা ডিএলএফ গ্রুপ এবং গান্ধী পরিবারের জামাতা রবার্ট ভদ্রর (প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর স্বামী) মধ্যে জমিজমা সংক্রান্ত একটি চুক্তি বাতিল করেন। এ ঘটনা নিয়ে সমালোচনা সৃষ্টি হলে রাজনৈতিক তদন্ত শুরু হয়।
এ নিয়ে সিং আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘রাজীব না থাকলে গুরগাঁওয়ের কাজটা কখনোই হতো না।’ ওই কর্মকর্তাকে সরকার পরে বদলি করে। ঘটনাগুলো বিজেপির প্রচারের খোরাক হয়ে ওঠে। দলটি অভিযোগ করে, এই ঘটনায় গান্ধী পরিবারের দুর্নীতির স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে।
এরপর ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার আগে হরিয়ানায় একটি সমাবেশে বলেছিলেন, ‘তারা (গান্ধী পরিবার) সোনার চামচ নিয়ে জন্মেছে, যেখানে আমি রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মে চা বিক্রি করে বড় হয়েছি। রাহুল গান্ধীর একটি সুপরিচিত বংশ আছে, যেখানে আমি শুধুই সৎ।’
ওই বছর বিজেপি দুর্নীতি বিরোধী প্রচার চালিয়েই জাতীয় নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় এবং প্রথমবার হরিয়ানায় ক্ষমতায় আসে। পাল্টে যায় ডিএলএফের খাতিরের জায়গায়ও। ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের নভেম্বরের মধ্যে ডিএলএফ গ্রুপ বিজেপির ১৭০ কোটি রুপির নির্বাচনী বন্ড কেনে।
যাইহোক, এরপর ২০২৩ সালের এপ্রিলে হরিয়ানার বিজেপি সরকার—পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টকে জানায়, ডিএলএফ–ভদ্রর জমিজমা চুক্তিতে ‘কোনো বিধি লঙ্ঘন হয়নি।’
তবে ডিএলএফের কাছে তাদের অনুদানের ধরন এবং সময় সম্পর্কে মন্তব্যর জন্য যোগাযোগ করলে তারা আল জাজিরার অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
কড়ির বদলে কড়ি
২০১৯ সালের অক্টোবরে বিজেপি সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন আয়কর বিভাগ কর ফাঁকির অভিযোগে ভারতজুড়ে ১৫টি শহরে মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের (এমইএআইএল) সঙ্গে যুক্ত অনেক বাসভবন এবং গেস্ট হাউসে অভিযান চালায়। এরপর থেকে এমইএআইএল এবং বিজেপি সরকারের মধ্যে সম্পর্ক ‘গভীর’ হয়ে ওঠে।
প্রকৃতপক্ষে, এমইএআইএল গত পাঁচ বছরে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে বিজেপিকে ৬৭০ কোটি রুপি দিয়েছে, যার বেশির ভাগই অক্টোবরের অভিযানের পর। এতে এমইএআইএল কোনো দলের একক বৃহত্তম দাতায় পরিণত হয়েছে।
এরপর ২০২২ সালের মার্চে চীন সীমান্তের কাছে লাদাখে কৌশলগত জোজি–লা টানেলের ঠিকাদারি পাওয়ায় ভারত সরকারের পরিবহন মন্ত্রী নিতিন গড়করি সংসদে প্রতিষ্ঠানটির প্রশংসা করেন।
নিলামে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোকে পরাজিত করায় গড়করি বলেন, ‘মেঘা (এমইএআইএল) নিলাম কেনায় সরকারের ৫ হাজার কোটি রুপি বেঁচে গেছে।’
এদিকে ২০২৩ সালের অক্টোবরে তেলেঙ্গানা রাজ্যে নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে এমইএআইএল নির্মিত লিফট–সেচ প্রকল্পের মেডিগড্ডা ব্যারেজের কিছু অংশ ধসে পড়ে। ফলে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বিজেপির চুক্তি নিয়ে রাজ্যে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়।
এরপর তেলেঙ্গানা রাজ্যসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসে। ফলে রাজনৈতিক হাওয়া বদল হলে এমইএআইএলের অনুদানের ঠিকানাও পরিবর্তিত হয়।
জনমত জরিপ অনুসারে, ২০২৩ সালে রাজ্য নির্বাচনের দৌড়ে প্রতিষ্ঠানটি সহযোগী সংস্থা ওয়েস্টার্ন ইউপি পাওয়ার ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের অধীনে আরও বেশি বন্ড কেনে। যার মধ্যে কংগ্রেস পেয়েছে প্রায় ১০০ কোটি রুপি। ফলে তারা কংগ্রেসেরও শীর্ষ দাতা প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে।
মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করলে এমইএআইএল আল জাজিরার অনুরোধে সাড়া দেয়নি। তবে বিজেপির মতো কংগ্রেসও দাবি করেছে, এসব অনুদান নির্বাচনের ফলাফলের ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জ্যেষ্ঠ নেতা আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমাদের দাতা করপোরেটরা এটি করেছে, কারণ আমাদের শাসনের একটি ভালো রেকর্ড রয়েছে।’
এদিকে ২০২০ সালের ২৫ জুন কলকাতাভিত্তিক স্পিরিট প্রস্তুতকারী ও সি–ফুড সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আইএফবি এগ্রো লিমিটেডে ১৫০ জনেরও বেশি সশস্ত্র লোক হামলা চালায় ও ভাঙচুর করে। এরপর প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়। পরদিন কোম্পানিটি ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে চিঠি লিখে জানায়, হামলার সময় পুলিশ কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর মন্ত্রিসভা থেকেও হস্তক্ষেপের আবেদন নিষ্ফল ছিল।
এরপর রাজ্য সরকারের পণ্য ও পরিষেবা কর কর্মকর্তারা কোম্পানির নুরপুর শাখায় অভিযান চালায়। উপায়ন্তর না পেয়ে কোম্পানিটি নির্বাচনী বন্ড কেনা শুরু করে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে দেওয়া নথিপত্র অনুসারে, ২০২২ সালে কোম্পানিটি ৪০ কোটি রুপি মূল্যের বন্ড কেনে। পরে প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুসারে এসব বন্ড কেনা হয়েছিল।’ তৃণমূল কংগ্রেসকে ইঙ্গিত করে কথাটি বললেও তিনি সরাসরি কোনো দলের নাম মুখে নেননি।
কোম্পানিটি ৯২ কোটি রুপি মূল্যের বন্ড কিনেছে। এর মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) ভাগে পড়েছে ৪২ কোটি রুপি। আইএফবি এগ্রো অন্যান্য দলকেও অল্প পরিমাণ অনুদান দিয়েছে। ওডিশা রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজু জনতা দলকে দিয়েছে ৬ কোটি ৩০ লাখ রুপি; বিহারের প্রভাবশালী আঞ্চলিক দল রাষ্ট্রীয় জনতা দলকে ৩৫ কোটি রুপি এবং কংগ্রেসকে দিয়েছে ৫ কোটি রুপি।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় মুখপাত্র গোখলে বলেছেন, আইএফবি এগ্রোর নির্বাহীদের দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। বিজেপি সরকারের অধীনে কেন্দ্রীয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর হুমকি ও চাপে এমন মন্তব্য করেছে।
বিজেপি এবং কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গোখলে আরও বলেন, তৃণমূল অনুদান বেশি পেয়েছে রাজনৈতিক সফলতার জন্য। এর বেশি কিছু নয়। যেই দল নির্বাচনে জিতবে কোম্পানিগুলো তো সেই দলেরই বন্ড কিনবে! এটাই স্বাভাবিক। আপনি তো টাকা অযথা জলে ফেলতে চাইবেন না!
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের অর্থ বিলের মাধ্যমে আইনে একগুচ্ছ সংশোধনী এনে মোদী সরকার ২০১৮ সাল থেকে ইলেকটোরাল বন্ড চালু করে। এর ফলে কোনো ব্যক্তি বা করপোরেট রাজনৈতিক দলগুলোকে চাঁদা দিতে চাইলে, ব্যাংকের মাধ্যমে বন্ড কিনতে পারে। ১ হাজার, ১০ হাজার, ১ লাখ, ১০ লাখ এবং ১ কোটি রুপি মূল্যের বন্ড ছাড়া হয়। রাজনৈতিক দলগুলো নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে সেই বন্ড ভাঙিয়ে নিতে পারে। কিন্তু দাতার পরিচয় গোপন থাকে।
এই বন্ডের ফলে করপোরেট সংস্থার পাশাপাশি বিদেশিরাও রাজনৈতিক দলগুলোকে টাকা দিতে পারে। যার বিনিময়ে ব্যক্তি বা সংস্থা ১০০ শতাংশ কর ছাড় পায়। এই ব্যবস্থায় কোম্পানিগুলো নিজেদের পরিচয় গোপন করে রাজনৈতিক প্রচারে সীমাহীন চাঁদা দিতে পারে। তবে এ নিয়ে নানা সমালোচনার সৃষ্টি হলে গত ফেব্রুয়ারিতে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট এই বন্ড প্রথাকে অসাংবিধানিক বলে রায় দেন।

ভারতের নির্বাচন কমিশন দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থদাতাদের তালিকা প্রকাশ করেছে গত ১৪ মার্চ। ওই তালিকায় নাম থাকা কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের নানা দুর্নীতি থেকে রেহাই ও নানা সুযোগ–সুবিধা পেতে রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থ দিয়েছিল। যথারীতি তারা পেয়েছেও সেসব ছাড়।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা এসব প্রতিষ্ঠানের রাজনৈতিক আঁতাত নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার তথ্যানুযায়ী, ২০১৮ সালে ইলেকটোরাল বন্ড স্কিম চালু করার পর থেকে ৩০টি ধাপে ১৬ হাজার ৫১৮ কোটি রুপির বন্ড ছাড়া হয়। বন্ড কেনায় শীর্ষে রয়েছে বিতর্কিত লটারি ব্যবসায়ী মার্টিন সান্তিয়াগোর সংস্থা ‘ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস’। এই প্রতিষ্ঠান কিনেছে মোট ১ হাজার ৩৬৮ কোটি রুপির বন্ড।
বন্ড কেনায় টাকার অঙ্কে তাদের পরেই রয়েছে বিখ্যাত তেলুগু ব্যবসায়ী কৃষ্ণা রেড্ডির সংস্থা ‘মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড’। তারা ৯৬৬ কোটি রুপির নির্বাচনী বন্ড কিনেছে। মূলত হায়দরাবাদ কেন্দ্রিক এই সংস্থা একাধিক সরকারি প্রকল্পের ঠিকাদারি পেয়েছে। এ ছাড়া মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সহযোগী সংস্থা ‘ওয়েস্টার্ন ইউপি পাওয়ার ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড’ ২২০ কোটি রুপির বন্ড কিনেছে।
ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোকে পাঁচ বছর ধরে তহবিল জোগানো শীর্ষ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে বেদান্ত লিমিটেড, ভারতী এয়ারটেল, আরপিএসজি গ্রুপ ও এসেল মাইনিংসহ অন্য বৃহত্তম ভারতীয় কোম্পানি। এদের মধ্য কেবল সান্তিয়াগোর সংস্থাই নয়, বন্ড কেনার দিক থেকে প্রথম ৩০টি সংস্থার ১৪ টিতেই গত কয়েক বছরে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে সিবিআই, ইডি কিংবা আয়কর দপ্তর (আইটি)।
বিজেপির নির্বাচনী বন্ড কেনার পর ফিউচার গেমিংয়ের ওপর ভারতীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নজরদারি কমেছে। বলতে গেলে এরপরই অন্য ভারতীয় কোম্পানিগুলোও নির্বাচনী বন্ড কেনার দিকে ঝুঁকতে থাকে।
রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার সূচনা
ভারতের বৃহত্তম রিয়েল এস্টেট কোম্পানি হয়ে ওঠার আগে ডিএলএফ গ্রুপ বিপদে পড়লেই সাহায্যের জন্য কংগ্রেস নেতাদের কাছে ধরনা দিত। ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিটি আশির দশকে কুশল পাল সিংয়ের নেতৃত্বে বড় সফলতার মুখ দেখে। সিং আত্মজীবনীতে লিখেছেন, কংগ্রেস নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সঙ্গে তাঁর একাধিকবার সাক্ষাৎ হয়েছে। গ্রেপ্তার এড়ানোসহ তাঁকে রক্ষা করতেও এগিয়ে এসেছিলেন রাজীব গান্ধী।
২০১২ সালে কংগ্রেস শাসিত হরিয়ানা রাজ্যের গুরগাঁওয়ে একজন আমলা ডিএলএফ গ্রুপ এবং গান্ধী পরিবারের জামাতা রবার্ট ভদ্রর (প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর স্বামী) মধ্যে জমিজমা সংক্রান্ত একটি চুক্তি বাতিল করেন। এ ঘটনা নিয়ে সমালোচনা সৃষ্টি হলে রাজনৈতিক তদন্ত শুরু হয়।
এ নিয়ে সিং আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘রাজীব না থাকলে গুরগাঁওয়ের কাজটা কখনোই হতো না।’ ওই কর্মকর্তাকে সরকার পরে বদলি করে। ঘটনাগুলো বিজেপির প্রচারের খোরাক হয়ে ওঠে। দলটি অভিযোগ করে, এই ঘটনায় গান্ধী পরিবারের দুর্নীতির স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে।
এরপর ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার আগে হরিয়ানায় একটি সমাবেশে বলেছিলেন, ‘তারা (গান্ধী পরিবার) সোনার চামচ নিয়ে জন্মেছে, যেখানে আমি রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মে চা বিক্রি করে বড় হয়েছি। রাহুল গান্ধীর একটি সুপরিচিত বংশ আছে, যেখানে আমি শুধুই সৎ।’
ওই বছর বিজেপি দুর্নীতি বিরোধী প্রচার চালিয়েই জাতীয় নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় এবং প্রথমবার হরিয়ানায় ক্ষমতায় আসে। পাল্টে যায় ডিএলএফের খাতিরের জায়গায়ও। ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের নভেম্বরের মধ্যে ডিএলএফ গ্রুপ বিজেপির ১৭০ কোটি রুপির নির্বাচনী বন্ড কেনে।
যাইহোক, এরপর ২০২৩ সালের এপ্রিলে হরিয়ানার বিজেপি সরকার—পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টকে জানায়, ডিএলএফ–ভদ্রর জমিজমা চুক্তিতে ‘কোনো বিধি লঙ্ঘন হয়নি।’
তবে ডিএলএফের কাছে তাদের অনুদানের ধরন এবং সময় সম্পর্কে মন্তব্যর জন্য যোগাযোগ করলে তারা আল জাজিরার অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
কড়ির বদলে কড়ি
২০১৯ সালের অক্টোবরে বিজেপি সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন আয়কর বিভাগ কর ফাঁকির অভিযোগে ভারতজুড়ে ১৫টি শহরে মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের (এমইএআইএল) সঙ্গে যুক্ত অনেক বাসভবন এবং গেস্ট হাউসে অভিযান চালায়। এরপর থেকে এমইএআইএল এবং বিজেপি সরকারের মধ্যে সম্পর্ক ‘গভীর’ হয়ে ওঠে।
প্রকৃতপক্ষে, এমইএআইএল গত পাঁচ বছরে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে বিজেপিকে ৬৭০ কোটি রুপি দিয়েছে, যার বেশির ভাগই অক্টোবরের অভিযানের পর। এতে এমইএআইএল কোনো দলের একক বৃহত্তম দাতায় পরিণত হয়েছে।
এরপর ২০২২ সালের মার্চে চীন সীমান্তের কাছে লাদাখে কৌশলগত জোজি–লা টানেলের ঠিকাদারি পাওয়ায় ভারত সরকারের পরিবহন মন্ত্রী নিতিন গড়করি সংসদে প্রতিষ্ঠানটির প্রশংসা করেন।
নিলামে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোকে পরাজিত করায় গড়করি বলেন, ‘মেঘা (এমইএআইএল) নিলাম কেনায় সরকারের ৫ হাজার কোটি রুপি বেঁচে গেছে।’
এদিকে ২০২৩ সালের অক্টোবরে তেলেঙ্গানা রাজ্যে নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে এমইএআইএল নির্মিত লিফট–সেচ প্রকল্পের মেডিগড্ডা ব্যারেজের কিছু অংশ ধসে পড়ে। ফলে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বিজেপির চুক্তি নিয়ে রাজ্যে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়।
এরপর তেলেঙ্গানা রাজ্যসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসে। ফলে রাজনৈতিক হাওয়া বদল হলে এমইএআইএলের অনুদানের ঠিকানাও পরিবর্তিত হয়।
জনমত জরিপ অনুসারে, ২০২৩ সালে রাজ্য নির্বাচনের দৌড়ে প্রতিষ্ঠানটি সহযোগী সংস্থা ওয়েস্টার্ন ইউপি পাওয়ার ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের অধীনে আরও বেশি বন্ড কেনে। যার মধ্যে কংগ্রেস পেয়েছে প্রায় ১০০ কোটি রুপি। ফলে তারা কংগ্রেসেরও শীর্ষ দাতা প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে।
মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করলে এমইএআইএল আল জাজিরার অনুরোধে সাড়া দেয়নি। তবে বিজেপির মতো কংগ্রেসও দাবি করেছে, এসব অনুদান নির্বাচনের ফলাফলের ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জ্যেষ্ঠ নেতা আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমাদের দাতা করপোরেটরা এটি করেছে, কারণ আমাদের শাসনের একটি ভালো রেকর্ড রয়েছে।’
এদিকে ২০২০ সালের ২৫ জুন কলকাতাভিত্তিক স্পিরিট প্রস্তুতকারী ও সি–ফুড সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আইএফবি এগ্রো লিমিটেডে ১৫০ জনেরও বেশি সশস্ত্র লোক হামলা চালায় ও ভাঙচুর করে। এরপর প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়। পরদিন কোম্পানিটি ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে চিঠি লিখে জানায়, হামলার সময় পুলিশ কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর মন্ত্রিসভা থেকেও হস্তক্ষেপের আবেদন নিষ্ফল ছিল।
এরপর রাজ্য সরকারের পণ্য ও পরিষেবা কর কর্মকর্তারা কোম্পানির নুরপুর শাখায় অভিযান চালায়। উপায়ন্তর না পেয়ে কোম্পানিটি নির্বাচনী বন্ড কেনা শুরু করে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে দেওয়া নথিপত্র অনুসারে, ২০২২ সালে কোম্পানিটি ৪০ কোটি রুপি মূল্যের বন্ড কেনে। পরে প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুসারে এসব বন্ড কেনা হয়েছিল।’ তৃণমূল কংগ্রেসকে ইঙ্গিত করে কথাটি বললেও তিনি সরাসরি কোনো দলের নাম মুখে নেননি।
কোম্পানিটি ৯২ কোটি রুপি মূল্যের বন্ড কিনেছে। এর মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) ভাগে পড়েছে ৪২ কোটি রুপি। আইএফবি এগ্রো অন্যান্য দলকেও অল্প পরিমাণ অনুদান দিয়েছে। ওডিশা রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজু জনতা দলকে দিয়েছে ৬ কোটি ৩০ লাখ রুপি; বিহারের প্রভাবশালী আঞ্চলিক দল রাষ্ট্রীয় জনতা দলকে ৩৫ কোটি রুপি এবং কংগ্রেসকে দিয়েছে ৫ কোটি রুপি।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় মুখপাত্র গোখলে বলেছেন, আইএফবি এগ্রোর নির্বাহীদের দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। বিজেপি সরকারের অধীনে কেন্দ্রীয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর হুমকি ও চাপে এমন মন্তব্য করেছে।
বিজেপি এবং কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গোখলে আরও বলেন, তৃণমূল অনুদান বেশি পেয়েছে রাজনৈতিক সফলতার জন্য। এর বেশি কিছু নয়। যেই দল নির্বাচনে জিতবে কোম্পানিগুলো তো সেই দলেরই বন্ড কিনবে! এটাই স্বাভাবিক। আপনি তো টাকা অযথা জলে ফেলতে চাইবেন না!
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের অর্থ বিলের মাধ্যমে আইনে একগুচ্ছ সংশোধনী এনে মোদী সরকার ২০১৮ সাল থেকে ইলেকটোরাল বন্ড চালু করে। এর ফলে কোনো ব্যক্তি বা করপোরেট রাজনৈতিক দলগুলোকে চাঁদা দিতে চাইলে, ব্যাংকের মাধ্যমে বন্ড কিনতে পারে। ১ হাজার, ১০ হাজার, ১ লাখ, ১০ লাখ এবং ১ কোটি রুপি মূল্যের বন্ড ছাড়া হয়। রাজনৈতিক দলগুলো নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে সেই বন্ড ভাঙিয়ে নিতে পারে। কিন্তু দাতার পরিচয় গোপন থাকে।
এই বন্ডের ফলে করপোরেট সংস্থার পাশাপাশি বিদেশিরাও রাজনৈতিক দলগুলোকে টাকা দিতে পারে। যার বিনিময়ে ব্যক্তি বা সংস্থা ১০০ শতাংশ কর ছাড় পায়। এই ব্যবস্থায় কোম্পানিগুলো নিজেদের পরিচয় গোপন করে রাজনৈতিক প্রচারে সীমাহীন চাঁদা দিতে পারে। তবে এ নিয়ে নানা সমালোচনার সৃষ্টি হলে গত ফেব্রুয়ারিতে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট এই বন্ড প্রথাকে অসাংবিধানিক বলে রায় দেন।

বিশ্ব রাজনীতিতে আবারও পারমাণবিক যুদ্ধের আতঙ্ক ঘনীভূত হচ্ছে। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র—দুই পরাশক্তির শীর্ষ নেতার সাম্প্রতিক ঘোষণায় এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, শীতল যুদ্ধের পর বিশ্বে যে পারমাণবিক ভারসাম্য তৈরি হয়েছিল, তা এখন ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগে
বিরল খনিজ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের এই টানাপোড়েন আগেও ছিল। চীন বহু বছর ধরে তার বৃহত্তর শিল্পনীতির অংশ হিসেবে এই খনিজগুলোর ওপর প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তাই বিরল খনিজকে কেন্দ্র করে চীনের কৌশলগত বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টার বিপরীতে ট্রাম্প প্রশাসনও পাল্টা খেলায় নেমেছে।
১০ ঘণ্টা আগে
পশ্চিম সুদানের এল-ফাশের শহরে গণহত্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, হাজারো মানুষকে এরই মধ্যে হত্যা করা হয়েছে। শহরটি সুদানের দারফুর অঞ্চলের উত্তর প্রদেশের রাজধানী। সম্প্রতি এটি আধাসামরিক বাহিনী ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস’ (আরএসএফ) দখল করেছে। এটি মূলত সুদানের গৃহযুদ্ধের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী বহিঃপ্রকা
১৫ ঘণ্টা আগে
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্ব রাজনীতিতে আবারও পারমাণবিক যুদ্ধের আতঙ্ক ঘনীভূত হচ্ছে। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র—দুই পরাশক্তির শীর্ষ নেতার সাম্প্রতিক ঘোষণায় এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, শীতল যুদ্ধের পর বিশ্বে যে পারমাণবিক ভারসাম্য তৈরি হয়েছিল, তা এখন ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হঠাৎ ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার কর্মসূচি আবারও শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘অন্য দেশগুলো যেহেতু পরীক্ষায় ব্যস্ত, আমরাও সমানভাবে আমাদের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করব।’ তবে ট্রাম্পের এই বক্তব্যে স্পষ্ট নয়—তিনি সরাসরি পারমাণবিক বোমা পরীক্ষার কথা বলেছেন, নাকি পরমাণু সক্ষম অস্ত্রের মহড়ার কথা বলেছেন।
এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগেই মস্কোর এক সামরিক হাসপাতালে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আরেকটি ‘অজেয়’ অস্ত্র পরীক্ষার দাবি করেন। তিনি জানান, রাশিয়া সফলভাবে ‘পোসাইডন’ নামের পরমাণু-চালিত টর্পেডো পরীক্ষায় সফল হয়েছে। ধারণা করা হয়, এই টর্পেডো প্রায় ৯ হাজার ৬৫০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত যেতে পারে এবং তা কোনোভাবেই প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। পুতিনের ভাষায়, ‘পোসাইডন’ পৃথিবীর যে কোনো আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়েও শক্তিশালী।’
তিনি আরও জানান, বহু প্রতীক্ষিত ‘সারমাত’ বা ‘স্যাটান ২’ ক্ষেপণাস্ত্রও শিগগিরই রুশ সেনাবাহিনীতে যুক্ত হবে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা হতে পারে।
২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে ‘নিউ স্টার্ট’ চুক্তি অনুযায়ী উভয় দেশ পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা সীমিত রাখার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু ২০২৬ সালে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। আর তার আগেই দুই দেশই নতুন অস্ত্র প্রদর্শনের প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
সপ্তাহখানেক আগে পুতিন ঘোষণা দিয়েছিলেন, রাশিয়া সফলভাবে ‘বুরেভেস্টনিক’ নামের পরমাণু-চালিত ক্রুজ মিসাইলের পরীক্ষাও সম্পন্ন করেছে। এই মিসাইল দীর্ঘ সময় ধরে সাবসনিক গতিতে উড়তে পারে বলে দাবি রুশ সামরিক বাহিনীর। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব পরমাণু-চালিত অস্ত্র প্রযুক্তিগতভাবে জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ, বাস্তবে ব্যবহারের জন্য এখনো অপ্রস্তুত।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, রাশিয়ার এই ‘পারমাণবিক ঝনঝনানি’ মূলত সামরিক নয়, কূটনৈতিক চাপের কৌশল। ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় ও পশ্চিমা বিশ্বের কঠোর অবস্থানের কারণে মস্কো চায়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ তার দাবিগুলোর প্রতি মনোযোগী হোক।
কিন্তু পুতিনের এই প্রদর্শনের জবাবে ট্রাম্পের নির্দেশ বিশ্বকে নতুন এক অনিশ্চিত পথে ঠেলে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, দুই শক্তিধর দেশের এই পাল্টাপাল্টি হুমকি পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে আবারও উসকে দেবে। এর ফলে বিশ্বে শীতল-যুদ্ধ পরবর্তী সবচেয়ে ভয়ংকর অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে, যেখানে সামান্য ভুল বোঝাবুঝি বা অসতর্ক কোনো পদক্ষেপ মানবসভ্যতাকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেবে।

বিশ্ব রাজনীতিতে আবারও পারমাণবিক যুদ্ধের আতঙ্ক ঘনীভূত হচ্ছে। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র—দুই পরাশক্তির শীর্ষ নেতার সাম্প্রতিক ঘোষণায় এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, শীতল যুদ্ধের পর বিশ্বে যে পারমাণবিক ভারসাম্য তৈরি হয়েছিল, তা এখন ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হঠাৎ ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার কর্মসূচি আবারও শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘অন্য দেশগুলো যেহেতু পরীক্ষায় ব্যস্ত, আমরাও সমানভাবে আমাদের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করব।’ তবে ট্রাম্পের এই বক্তব্যে স্পষ্ট নয়—তিনি সরাসরি পারমাণবিক বোমা পরীক্ষার কথা বলেছেন, নাকি পরমাণু সক্ষম অস্ত্রের মহড়ার কথা বলেছেন।
এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগেই মস্কোর এক সামরিক হাসপাতালে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আরেকটি ‘অজেয়’ অস্ত্র পরীক্ষার দাবি করেন। তিনি জানান, রাশিয়া সফলভাবে ‘পোসাইডন’ নামের পরমাণু-চালিত টর্পেডো পরীক্ষায় সফল হয়েছে। ধারণা করা হয়, এই টর্পেডো প্রায় ৯ হাজার ৬৫০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত যেতে পারে এবং তা কোনোভাবেই প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। পুতিনের ভাষায়, ‘পোসাইডন’ পৃথিবীর যে কোনো আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়েও শক্তিশালী।’
তিনি আরও জানান, বহু প্রতীক্ষিত ‘সারমাত’ বা ‘স্যাটান ২’ ক্ষেপণাস্ত্রও শিগগিরই রুশ সেনাবাহিনীতে যুক্ত হবে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা হতে পারে।
২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে ‘নিউ স্টার্ট’ চুক্তি অনুযায়ী উভয় দেশ পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা সীমিত রাখার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু ২০২৬ সালে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। আর তার আগেই দুই দেশই নতুন অস্ত্র প্রদর্শনের প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
সপ্তাহখানেক আগে পুতিন ঘোষণা দিয়েছিলেন, রাশিয়া সফলভাবে ‘বুরেভেস্টনিক’ নামের পরমাণু-চালিত ক্রুজ মিসাইলের পরীক্ষাও সম্পন্ন করেছে। এই মিসাইল দীর্ঘ সময় ধরে সাবসনিক গতিতে উড়তে পারে বলে দাবি রুশ সামরিক বাহিনীর। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব পরমাণু-চালিত অস্ত্র প্রযুক্তিগতভাবে জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ, বাস্তবে ব্যবহারের জন্য এখনো অপ্রস্তুত।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, রাশিয়ার এই ‘পারমাণবিক ঝনঝনানি’ মূলত সামরিক নয়, কূটনৈতিক চাপের কৌশল। ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় ও পশ্চিমা বিশ্বের কঠোর অবস্থানের কারণে মস্কো চায়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ তার দাবিগুলোর প্রতি মনোযোগী হোক।
কিন্তু পুতিনের এই প্রদর্শনের জবাবে ট্রাম্পের নির্দেশ বিশ্বকে নতুন এক অনিশ্চিত পথে ঠেলে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, দুই শক্তিধর দেশের এই পাল্টাপাল্টি হুমকি পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে আবারও উসকে দেবে। এর ফলে বিশ্বে শীতল-যুদ্ধ পরবর্তী সবচেয়ে ভয়ংকর অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে, যেখানে সামান্য ভুল বোঝাবুঝি বা অসতর্ক কোনো পদক্ষেপ মানবসভ্যতাকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেবে।

ভারতের নির্বাচন কমিশন দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থদাতাদের তালিকা প্রকাশ করেছে গত ১৪ মার্চ। ওই তালিকায় নাম থাকা কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের নানা দুর্নীতি থেকে রেহাই ও নানা সুযোগ–সুবিধা পেতে রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থ দিয়েছিল। যথারীতি তারা পেয়েছেও সেসব ছাড়।
০৬ এপ্রিল ২০২৪
বিরল খনিজ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের এই টানাপোড়েন আগেও ছিল। চীন বহু বছর ধরে তার বৃহত্তর শিল্পনীতির অংশ হিসেবে এই খনিজগুলোর ওপর প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তাই বিরল খনিজকে কেন্দ্র করে চীনের কৌশলগত বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টার বিপরীতে ট্রাম্প প্রশাসনও পাল্টা খেলায় নেমেছে।
১০ ঘণ্টা আগে
পশ্চিম সুদানের এল-ফাশের শহরে গণহত্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, হাজারো মানুষকে এরই মধ্যে হত্যা করা হয়েছে। শহরটি সুদানের দারফুর অঞ্চলের উত্তর প্রদেশের রাজধানী। সম্প্রতি এটি আধাসামরিক বাহিনী ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস’ (আরএসএফ) দখল করেছে। এটি মূলত সুদানের গৃহযুদ্ধের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী বহিঃপ্রকা
১৫ ঘণ্টা আগে
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের একটি বড় বিতর্কিত বিষয় হলো বিরল খনিজ উপাদান। এই সমস্যার সমাধান করতেই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করার আলোচনা চলছে।
কয়েক মাস ধরে মার্কিন বাণিজ্য আলোচকদের সঙ্গে বিভিন্ন দফায় আলোচনা হলেও চীন গুরুত্বপূর্ণ বিরল খনিজ উপাদান সরবরাহের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে গড়িমসি করে যাচ্ছিল। এমনকি, মার্কিন কোম্পানিগুলোকে দ্রুত বিরল খনিজ লাইসেন্স দেওয়ার আগের নিশ্চয়তাও বাস্তবায়ন করেনি। উল্টো বেইজিং এই মাসের শুরুতে বিরল খনিজ রপ্তানিতে নতুন করে বিধিনিষেধ দেয়, যার ফলে নিষেধাজ্ঞার পরিধি ব্যাপক হারে বাড়ে।
আজ বৃহস্পতিবারের চুক্তির আওতায় চীন নতুন করে চাপানো এসব নিয়ম শিথিল করতে সম্মত হয়েছে। তবে এপ্রিলে ঘোষিত প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞাগুলো সম্ভবত এখনো বহাল আছে।
বিরল খনিজ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের এই টানাপোড়েন আগেও ছিল। চীন বহু বছর ধরে তার বৃহত্তর শিল্পনীতির অংশ হিসেবে এই খনিজগুলোর ওপর প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তাই বিরল খনিজকে কেন্দ্র করে চীনের কৌশলগত বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টার বিপরীতে ট্রাম্প প্রশাসনও পাল্টা খেলায় নেমেছে।
বিরল খনিজ আসলে কী?
রেয়ার আর্থ মিনারেলস বা বিরল মৃত্তিকা খনিজ বলতে পর্যায় সারণির ১৭টি ধাতব উপাদানকে বোঝায়, যার মধ্যে স্ক্যান্ডিয়াম, ইট্রিয়াম এবং ল্যান্থানাইডস অন্তর্ভুক্ত। এগুলো রকেট, যুদ্ধবিমান, স্মার্টফোন, ইলেকট্রিক গাড়ির মোটর, উইন্ড টারবাইন, সোলার প্যানেল, স্যাটেলাইট যোগাযোগব্যবস্থা, এমনকি মিসাইল গাইডেন্স সিস্টেমসহ নানা যন্ত্র তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। একুশ শতকের শিল্প ও সামরিক শক্তির ভিত্তি হিসেবে এই খনিজগুলো পুরোপুরি নির্ভরশীল।
‘বিরল খনিজ’ নামটি কিছুটা ভুল। কারণ, এই উপাদানগুলো পৃথিবীর ভূত্বকের প্রায় সর্বত্র পাওয়া যায়। এগুলো সোনার চেয়েও বেশি পরিমাণে রয়েছে, কিন্তু এগুলোর নিষ্কাশন ও প্রক্রিয়াকরণ করা কঠিন, ব্যয়বহুল এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মধ্যে খনন করা বিরল খনিজ উৎপাদনের ৬১ শতাংশই আসে চীন থেকে। এ ছাড়া বিশ্বজুড়ে প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে ৯২ শতাংশ আউটপুট নিয়ন্ত্রণ করে দেশটি।
বিরল খনিজের ব্যবহার
বিরল খনিজ দৈনন্দিন প্রযুক্তিতে সব জায়গায় ব্যবহৃত হয়—স্মার্টফোন থেকে শুরু করে উইন্ড টারবাইন, এলইডি লাইট এবং ফ্ল্যাট-স্ক্রিন টিভি পর্যন্ত। বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি, সেই সঙ্গে এমআরআই স্ক্যানার এবং ক্যানসার চিকিৎসার জন্যও এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর জন্যও বিরল খনিজ অপরিহার্য। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) ২০২৫ সালের এক গবেষণা অনুসারে, এগুলো এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, সাবমেরিন, লেজার, স্যাটেলাইট, টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র এবং আরও অনেক কিছুতে ব্যবহৃত হয়।
উৎস ও বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রণ
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, খনন করা বিরল খনিজ উৎপাদনের ৬১ শতাংশ আসে চীন থেকে। এর পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে বিরল খনিজ প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে ৯২ শতাংশ আউটপুট নিয়ন্ত্রণ করে দেশটি।
আণবিক ওজন অনুসারে বিরল খনিজ দুই প্রকার—ভারী ও হালকা। ভারী বিরল খনিজগুলো আরও দুর্লভ। নিষ্কাশনের পর এই বিরল খনিজগুলো আলাদা করার সক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের নেই।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ক্রিটিক্যাল মিনারেলস সিকিউরিটি প্রোগ্রামের পরিচালক গ্রেসলিন ভাস্করান সিএনএনকে বলেন, ‘বছরের শুরু পর্যন্ত, ক্যালিফোর্নিয়ায় আমরা যে ভারী বিরল খনিজগুলো উত্তোলন করেছি, সেগুলোকে আলাদা করার জন্য চীনে পাঠাতে হতো।’
তবে, এপ্রিলে ট্রাম্প প্রশাসন চীন থেকে আমদানি পণ্যের ওপর চড়া শুল্ক ঘোষণার পর এই প্রক্রিয়াটি বন্ধ হয়ে যায়। তিনি বলেন, চীন বিরল খনিজ আলাদা করার ক্ষেত্রে আমেরিকার নির্ভরতাকে ‘অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে’।
ভাস্করান জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় বিরল খনিজের মাত্র একটি খনি চালু আছে। অর্থাৎ চীন এই বিরল খনিজে যতটা স্বয়ংসম্পূর্ণ, যুক্তরাষ্ট্র তার ধারেকাছে নেই।
বাণিজ্যযুদ্ধে এর গুরুত্ব কেন
বাণিজ্যযুদ্ধে বেইজিং বিরল খনিজকে দর-কষাকষির প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। আজ বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত অ্যাপেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে সি চিন পিং ও ট্রাম্পের বৈঠকের প্রধান আলোচ্য বিষয় এই বিরল খনিজ।
এই মাসের শুরুতে চীন আরও পাঁচটি বিরল খনিজ উপাদান—হোলমিয়াম, এরবিয়াম, থুলিয়াম, ইউরোপিয়াম, ইটারবিয়াম এবং সম্পর্কিত ম্যাগনেট ও উপকরণগুলোকে বিদ্যমান নিয়ন্ত্রণ তালিকায় যুক্ত করে, যার জন্য রপ্তানি লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে নিয়ন্ত্রিত বিরল খনিজের মোট সংখ্যা ১২-তে পৌঁছায়। চীন বিরল খনিজ উৎপাদন প্রযুক্তিও দেশের বাইরে রপ্তানির জন্য লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করেছে।
তবে বিরল খনিজ নিয়ন্ত্রণে চীনা বিধিনিষেধের বিষয়ে এবারই প্রথম ক্ষুব্ধ হননি ট্রাম্প। গত জুনে ট্রুথ সোশ্যালে তিনি বলেছিলেন, চীন সাতটি বিরল খনিজ এবং সংশ্লিষ্ট পণ্যের ওপর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে বাণিজ্য যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। এরপর তিনি চীনের ওপর আরও শুল্ক আরোপের হুমকি দেন।
বাণিজ্য বিশ্লেষকদের ধারণা, বিরল খনিজের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে চীনের বিধিনিষেধ বিশ্ববাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ এই বস্তুটির জন্য যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা বিরল খনিজ যৌগ ও ধাতুর ৭০ শতাংশই এসেছিল চীন থেকে। তাই বিরল খনিজ নিয়ে বৃহৎ দুই অর্থনীতির দ্বন্দ্ব পুরো বিশ্বে বাণিজ্যযুদ্ধ বাধিয়ে দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের একটি বড় বিতর্কিত বিষয় হলো বিরল খনিজ উপাদান। এই সমস্যার সমাধান করতেই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করার আলোচনা চলছে।
কয়েক মাস ধরে মার্কিন বাণিজ্য আলোচকদের সঙ্গে বিভিন্ন দফায় আলোচনা হলেও চীন গুরুত্বপূর্ণ বিরল খনিজ উপাদান সরবরাহের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে গড়িমসি করে যাচ্ছিল। এমনকি, মার্কিন কোম্পানিগুলোকে দ্রুত বিরল খনিজ লাইসেন্স দেওয়ার আগের নিশ্চয়তাও বাস্তবায়ন করেনি। উল্টো বেইজিং এই মাসের শুরুতে বিরল খনিজ রপ্তানিতে নতুন করে বিধিনিষেধ দেয়, যার ফলে নিষেধাজ্ঞার পরিধি ব্যাপক হারে বাড়ে।
আজ বৃহস্পতিবারের চুক্তির আওতায় চীন নতুন করে চাপানো এসব নিয়ম শিথিল করতে সম্মত হয়েছে। তবে এপ্রিলে ঘোষিত প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞাগুলো সম্ভবত এখনো বহাল আছে।
বিরল খনিজ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের এই টানাপোড়েন আগেও ছিল। চীন বহু বছর ধরে তার বৃহত্তর শিল্পনীতির অংশ হিসেবে এই খনিজগুলোর ওপর প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তাই বিরল খনিজকে কেন্দ্র করে চীনের কৌশলগত বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টার বিপরীতে ট্রাম্প প্রশাসনও পাল্টা খেলায় নেমেছে।
বিরল খনিজ আসলে কী?
রেয়ার আর্থ মিনারেলস বা বিরল মৃত্তিকা খনিজ বলতে পর্যায় সারণির ১৭টি ধাতব উপাদানকে বোঝায়, যার মধ্যে স্ক্যান্ডিয়াম, ইট্রিয়াম এবং ল্যান্থানাইডস অন্তর্ভুক্ত। এগুলো রকেট, যুদ্ধবিমান, স্মার্টফোন, ইলেকট্রিক গাড়ির মোটর, উইন্ড টারবাইন, সোলার প্যানেল, স্যাটেলাইট যোগাযোগব্যবস্থা, এমনকি মিসাইল গাইডেন্স সিস্টেমসহ নানা যন্ত্র তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। একুশ শতকের শিল্প ও সামরিক শক্তির ভিত্তি হিসেবে এই খনিজগুলো পুরোপুরি নির্ভরশীল।
‘বিরল খনিজ’ নামটি কিছুটা ভুল। কারণ, এই উপাদানগুলো পৃথিবীর ভূত্বকের প্রায় সর্বত্র পাওয়া যায়। এগুলো সোনার চেয়েও বেশি পরিমাণে রয়েছে, কিন্তু এগুলোর নিষ্কাশন ও প্রক্রিয়াকরণ করা কঠিন, ব্যয়বহুল এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মধ্যে খনন করা বিরল খনিজ উৎপাদনের ৬১ শতাংশই আসে চীন থেকে। এ ছাড়া বিশ্বজুড়ে প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে ৯২ শতাংশ আউটপুট নিয়ন্ত্রণ করে দেশটি।
বিরল খনিজের ব্যবহার
বিরল খনিজ দৈনন্দিন প্রযুক্তিতে সব জায়গায় ব্যবহৃত হয়—স্মার্টফোন থেকে শুরু করে উইন্ড টারবাইন, এলইডি লাইট এবং ফ্ল্যাট-স্ক্রিন টিভি পর্যন্ত। বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি, সেই সঙ্গে এমআরআই স্ক্যানার এবং ক্যানসার চিকিৎসার জন্যও এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর জন্যও বিরল খনিজ অপরিহার্য। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) ২০২৫ সালের এক গবেষণা অনুসারে, এগুলো এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, সাবমেরিন, লেজার, স্যাটেলাইট, টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র এবং আরও অনেক কিছুতে ব্যবহৃত হয়।
উৎস ও বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রণ
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, খনন করা বিরল খনিজ উৎপাদনের ৬১ শতাংশ আসে চীন থেকে। এর পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে বিরল খনিজ প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে ৯২ শতাংশ আউটপুট নিয়ন্ত্রণ করে দেশটি।
আণবিক ওজন অনুসারে বিরল খনিজ দুই প্রকার—ভারী ও হালকা। ভারী বিরল খনিজগুলো আরও দুর্লভ। নিষ্কাশনের পর এই বিরল খনিজগুলো আলাদা করার সক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের নেই।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ক্রিটিক্যাল মিনারেলস সিকিউরিটি প্রোগ্রামের পরিচালক গ্রেসলিন ভাস্করান সিএনএনকে বলেন, ‘বছরের শুরু পর্যন্ত, ক্যালিফোর্নিয়ায় আমরা যে ভারী বিরল খনিজগুলো উত্তোলন করেছি, সেগুলোকে আলাদা করার জন্য চীনে পাঠাতে হতো।’
তবে, এপ্রিলে ট্রাম্প প্রশাসন চীন থেকে আমদানি পণ্যের ওপর চড়া শুল্ক ঘোষণার পর এই প্রক্রিয়াটি বন্ধ হয়ে যায়। তিনি বলেন, চীন বিরল খনিজ আলাদা করার ক্ষেত্রে আমেরিকার নির্ভরতাকে ‘অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে’।
ভাস্করান জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় বিরল খনিজের মাত্র একটি খনি চালু আছে। অর্থাৎ চীন এই বিরল খনিজে যতটা স্বয়ংসম্পূর্ণ, যুক্তরাষ্ট্র তার ধারেকাছে নেই।
বাণিজ্যযুদ্ধে এর গুরুত্ব কেন
বাণিজ্যযুদ্ধে বেইজিং বিরল খনিজকে দর-কষাকষির প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। আজ বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত অ্যাপেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে সি চিন পিং ও ট্রাম্পের বৈঠকের প্রধান আলোচ্য বিষয় এই বিরল খনিজ।
এই মাসের শুরুতে চীন আরও পাঁচটি বিরল খনিজ উপাদান—হোলমিয়াম, এরবিয়াম, থুলিয়াম, ইউরোপিয়াম, ইটারবিয়াম এবং সম্পর্কিত ম্যাগনেট ও উপকরণগুলোকে বিদ্যমান নিয়ন্ত্রণ তালিকায় যুক্ত করে, যার জন্য রপ্তানি লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে নিয়ন্ত্রিত বিরল খনিজের মোট সংখ্যা ১২-তে পৌঁছায়। চীন বিরল খনিজ উৎপাদন প্রযুক্তিও দেশের বাইরে রপ্তানির জন্য লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করেছে।
তবে বিরল খনিজ নিয়ন্ত্রণে চীনা বিধিনিষেধের বিষয়ে এবারই প্রথম ক্ষুব্ধ হননি ট্রাম্প। গত জুনে ট্রুথ সোশ্যালে তিনি বলেছিলেন, চীন সাতটি বিরল খনিজ এবং সংশ্লিষ্ট পণ্যের ওপর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে বাণিজ্য যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। এরপর তিনি চীনের ওপর আরও শুল্ক আরোপের হুমকি দেন।
বাণিজ্য বিশ্লেষকদের ধারণা, বিরল খনিজের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে চীনের বিধিনিষেধ বিশ্ববাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ এই বস্তুটির জন্য যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা বিরল খনিজ যৌগ ও ধাতুর ৭০ শতাংশই এসেছিল চীন থেকে। তাই বিরল খনিজ নিয়ে বৃহৎ দুই অর্থনীতির দ্বন্দ্ব পুরো বিশ্বে বাণিজ্যযুদ্ধ বাধিয়ে দিতে পারে।

ভারতের নির্বাচন কমিশন দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থদাতাদের তালিকা প্রকাশ করেছে গত ১৪ মার্চ। ওই তালিকায় নাম থাকা কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের নানা দুর্নীতি থেকে রেহাই ও নানা সুযোগ–সুবিধা পেতে রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থ দিয়েছিল। যথারীতি তারা পেয়েছেও সেসব ছাড়।
০৬ এপ্রিল ২০২৪
বিশ্ব রাজনীতিতে আবারও পারমাণবিক যুদ্ধের আতঙ্ক ঘনীভূত হচ্ছে। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র—দুই পরাশক্তির শীর্ষ নেতার সাম্প্রতিক ঘোষণায় এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, শীতল যুদ্ধের পর বিশ্বে যে পারমাণবিক ভারসাম্য তৈরি হয়েছিল, তা এখন ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগে
পশ্চিম সুদানের এল-ফাশের শহরে গণহত্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, হাজারো মানুষকে এরই মধ্যে হত্যা করা হয়েছে। শহরটি সুদানের দারফুর অঞ্চলের উত্তর প্রদেশের রাজধানী। সম্প্রতি এটি আধাসামরিক বাহিনী ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস’ (আরএসএফ) দখল করেছে। এটি মূলত সুদানের গৃহযুদ্ধের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী বহিঃপ্রকা
১৫ ঘণ্টা আগে
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

পশ্চিম সুদানের এল-ফাশের শহরে গণহত্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, হাজারো মানুষকে এরই মধ্যে হত্যা করা হয়েছে। শহরটি সুদানের দারফুর অঞ্চলের উত্তর প্রদেশের রাজধানী। সম্প্রতি এটি আধাসামরিক বাহিনী ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস’ (আরএসএফ) দখল করেছে। এটি মূলত সুদানের গৃহযুদ্ধের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী বহিঃপ্রকাশ।
গত রোববার এল-ফাশের আরএসএফ দখল করে নেয়। এর আগে তারা ১৮ মাস ধরে শহরটি ঘিরে রেখেছিল। এই সময়ে খাবার, ওষুধ ও জরুরি পণ্য প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। শহরের ভেতরে আটকা পড়া লাখো মানুষ ক্ষুধা ও রোগে ভুগছিল। সুদান আড়াই বছর ধরে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত অন্তত ৪০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।
এল-ফাশেরে কী ঘটেছে
রোববার আরএসএফ পুরো শহর দখল করে। তারা অঞ্চলটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর (এসএএফ) শেষ ঘাঁটিটিও দখল করে নেয়। সেনাবাহিনীর হিসেবে বুধবার পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্কের হিসাব অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা কমপক্ষে ১ হাজার ৫০০।
প্রায় ১৮ মাস ধরে অবরুদ্ধ শহরে প্রায় ১২ লাখ মানুষ টিকে ছিল স্রেফ পশুখাদ্য খেয়ে। আরএসএফ ৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্যারিকেড তৈরি করে খাবার ও ওষুধের প্রবেশ বন্ধ করে দেয় এবং মানুষের পালানোর পথও রুদ্ধ করে রাখে। আল–জাজিরার যাচাইকৃত ভিডিওতে দেখা গেছে, আরএসএফ সদস্যরা মানুষকে গুলি করছে, নির্যাতন করছে। আগেও তারা নিজেদের এমন নৃশংসতা ভিডিও করে ছড়িয়েছে।
সুদানি চিকিৎসক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, আরএসএফ গণহত্যা চালাচ্ছে, মানুষকে আটক করছে এবং হাসপাতালগুলোয় হামলা করছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর জানিয়েছে, পালিয়ে যাওয়া মানুষদেরও হত্যা করা হচ্ছে। এসব হত্যার পেছনে জাতিগত উদ্দেশ্যের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে বলেছে, মাটির রং পরিবর্তন ও ছোট ছোট বস্তুসমষ্টি দেখা গেছে, যা মৃতদেহ ও রক্তের চিহ্ন হতে পারে। এই দাগগুলো আরএসএফ দখলের আগে দেখা যায়নি। জাতিসংঘ জানিয়েছে, মাত্র দুই দিনে ২৬ হাজার মানুষ শহর থেকে পালিয়েছে। তারা বেশির ভাগই পায়ে হেঁটে পশ্চিমে টাওয়িলা শহরের দিকে গেছে, যা ৭০ কিলোমিটার দূরে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মতে, এখনো প্রায় ১ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ এল-ফাশেরে আটকা পড়ে আছে।
এদিকে পাশের উত্তর কোরদোফান প্রদেশের বারা শহরেও হত্যাকাণ্ডের খবর এসেছে। ২৫ অক্টোবর আরএসএফ শহরটি দখলের ঘোষণা দেয়। সেখানে সাধারণ মানুষ ও ত্রাণকর্মীদের ওপরও হামলা চালানো হয়েছে। রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্টের আন্তর্জাতিক ফেডারেশন জানিয়েছে, বারায় তাদের পাঁচজন স্বেচ্ছাসেবক নিহত হয়েছেন, তিনজন নিখোঁজ। বারা শহরটি এল-ওবেইদের কাছে, যা এখনো সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে আরএসএফ সেখানে অগ্রসর হচ্ছে।
এল-ফাশের ও এল-ওবেইদ কেন গুরুত্বপূর্ণ
দুই শহরই পশ্চিম সুদানের প্রধান শহর এবং এখন যুদ্ধক্ষেত্র। আরএসএফ ইতিমধ্যে দেশের পশ্চিমাংশে দৃঢ় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা পুরো অঞ্চল দখল করতে চায়। সেনাবাহিনী পূর্ব দিক থেকে আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে ঢোকার চেষ্টা করছে। এল-ফাশের ছিল উত্তর দারফুরের রাজধানী এবং দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর শেষ বড় ঘাঁটি। এটি হারানোর পর দেশ কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে—পূর্বে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ, পশ্চিমে আরএসএফের শাসন।
আরএসএফ এখন দারফুরে নিজেদের সমান্তরাল সরকার গঠন করেছে। সেনাবাহিনী অবস্থান করছে পূর্ব, মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে। এল-ওবেইদ উত্তর কোরদোফান প্রদেশের রাজধানী এবং তেলসমৃদ্ধ শহর। এটি দারফুর ও রাজধানী খার্তুমের মধ্যে কৌশলগত সংযোগস্থল। বর্তমানে এটি সেনাবাহিনীর হাতে, কিন্তু আরএসএফ শহরটির দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
গত ২৫ অক্টোবর আরএসএফ ঘোষণা দেয় যে তারা বারা শহর পুনর্দখল করেছে, যা এল-ওবেইদ থেকে মাত্র ৫৯ কিলোমিটার দূরে। গত সেপ্টেম্বরে সেনাবাহিনী ওই শহরটি আরএসএফের কাছ থেকে পুনরায় নিয়েছিল। এখন আরএসএফ বারা থেকে এল-ওবেইদে হামলা চালাচ্ছে। জুলাই পর্যন্ত সেখানে অন্তত ১ লাখ ৩৭ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল।
দুই পক্ষের বক্তব্য
সোমবার সেনাপ্রধান ও কার্যত রাষ্ট্রপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান বলেন, জনগণকে বাঁচাতে তার বাহিনী এল-ফাশের থেকে সরে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের জনগণের ওপর যা ঘটেছে, তার প্রতিশোধ নেওয়া হবে।’ বুধবার সুদান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুসেইন আল-আমিন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেন।
আরএসএফের নেতা মুহাম্মদ হামদান দাগালো—যিনি হেমেদতি নামেও পরিচিত—দাবি করেন, তারা সুদানকে ‘সত্যিকারের গণতন্ত্রে ঐক্যবদ্ধ’ করতে চান। তিনি বলেন, যারা বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে, তাদের জবাবদিহির মুখোমুখি করা হবে।
আরএসএফ কারা
আরএসএফের যাত্রা শুরু ২০০৩ সালে, দারফুর যুদ্ধের সময়। তখন তাদের নাম ছিল ‘জানজাওয়িদ।’ তারা ছিল এক যাযাবর সশস্ত্র দল। সে সময় তারা প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের পক্ষে লড়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তারা স্থানীয় জাতিগোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালিয়েছিল। মানবাধিকার সংগঠনগুলো একে গণহত্যা হিসেবে বর্ণনা করেছে। এতে ১ লাখ থেকে ৩ লাখ মানুষ নিহত হয় এবং ২৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।
এরপর, ২০১৩ সালে আল-বশির জানজাওয়িদ বাহিনীকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস’ নামে প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৭ সালে আইন করে এই বাহিনীকে স্বাধীন নিরাপত্তা সংস্থার মর্যাদা দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে আরএসএফ গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয় এবং ওমর আল-বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সহায়তা করে। পরে ২০২১ সালে তারা সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলে বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লাহ হামদককে উৎখাত করে। এতে দেশটির বেসামরিক-সামরিক যৌথ শাসনব্যবস্থা শেষ হয়ে যায়।
সংঘাতের শুরু যেভাবে
আরএসএফ নেতা হেমেদতি ও সেনাপ্রধান আল-বুরহানের মধ্যে মতবিরোধ বাড়তে থাকে। মূল প্রশ্ন ছিল—আরএসএফ কবে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত হবে এবং কে দেশের নেতৃত্ব দেবে। ২০২৩ সালে ১৫ এপ্রিল এই বিরোধ পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নেয়। সেনাবাহিনী চায়, আরএসএফ পুরোপুরি তাদের অধীনে আসুক। কিন্তু আরএসএফ স্বাধীন থাকতে চায়।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, দুই পক্ষই যুদ্ধাপরাধ ও নৃশংসতা চালিয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দেয়, দারফুরে আরএসএফ ও তাদের মিত্ররা গণহত্যা চালাচ্ছে। এতে সবচেয়ে বড় বিপদে পড়েছে সাধারণ মানুষ। সুদানি মানবাধিকার সংগঠনগুলো আগে থেকেই সতর্ক করেছিল, আরএসএফ যদি এল-ফাশের দখল করে, তাহলে তা সাধারণ মানুষের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে।
আল–জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পালিয়ে আসা মানুষজন জানিয়েছে—আরএসএফ সদস্যরা ঘরে ঘরে গিয়ে জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে মানুষ হত্যা করছে। এল–ফাশের শহরে সৌদি হাসপাতালেই প্রায় ৫০০ মানুষ নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সেখানে রোগী, স্বাস্থ্যকর্মী ও আশ্রয়প্রার্থী সাধারণ মানুষ ছিল।
আরএসএফ শত শত মানুষকে আটক করেছে। বহু নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, আরএসএফ যেসব শহর দখল করবে, সেখানেও গণহত্যার আশঙ্কা রয়েছে।
এল-ফাশের দখলের ফলে আরএসএফ এখন পুরো দারফুর অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণে। অঞ্চলটি কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি চাদ, লিবিয়া ও দক্ষিণ সুদানের সীমান্তে অবস্থিত এবং সোনার প্রধান উৎসগুলোর একটি। ইতালির আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক গবেষণা সংস্থা আইএসপিআই ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে বলেছে, দারফুরের সোনার জন্য লড়াইই এই যুদ্ধের অন্যতম কারণ।
সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র ও আফ্রিকান ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় বহুবার আলোচনার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কোনো ফল মেলেনি। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, মিশর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত মিলে ‘কোয়াড’ নামে একটি জোট গঠন করেছে। তারা ১২ সেপ্টেম্বর যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনা ঘোষণা করে।
তাদের পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল, তিন মাসের মানবিক বিরতি দেওয়া হবে যাতে ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ করতে পারে। এরপর স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং নয় মাসের মধ্যে বেসামরিক সরকারে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রথমে সেনাপ্রধান আল-বুরহান এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি চান, আরএসএফ ভেঙে দেওয়া হোক। কিন্তু ১৫ অক্টোবর মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসির সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি কিছুটা নমনীয় হন।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে দুই পক্ষের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা হয়। অক্টোবরের শেষে আরও বৈঠকের কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই আরএসএফ এল-ফাশের দখল করে নেয়। এখন আলোচনা কোন পথে যাবে, তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ফলে, এই অবস্থায় আশঙ্কা বাড়ছে যে, যেহেতু দারফুর অঞ্চল প্রায় পুরোটাই আরএসএফের হাতে চলে গেছে, তাহলে কি সুদান আরও একবার ভাঙতে চলেছে। এর আগে, সুদান ভেঙে দক্ষিণ সুদান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়।

পশ্চিম সুদানের এল-ফাশের শহরে গণহত্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, হাজারো মানুষকে এরই মধ্যে হত্যা করা হয়েছে। শহরটি সুদানের দারফুর অঞ্চলের উত্তর প্রদেশের রাজধানী। সম্প্রতি এটি আধাসামরিক বাহিনী ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস’ (আরএসএফ) দখল করেছে। এটি মূলত সুদানের গৃহযুদ্ধের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী বহিঃপ্রকাশ।
গত রোববার এল-ফাশের আরএসএফ দখল করে নেয়। এর আগে তারা ১৮ মাস ধরে শহরটি ঘিরে রেখেছিল। এই সময়ে খাবার, ওষুধ ও জরুরি পণ্য প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। শহরের ভেতরে আটকা পড়া লাখো মানুষ ক্ষুধা ও রোগে ভুগছিল। সুদান আড়াই বছর ধরে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত অন্তত ৪০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।
এল-ফাশেরে কী ঘটেছে
রোববার আরএসএফ পুরো শহর দখল করে। তারা অঞ্চলটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর (এসএএফ) শেষ ঘাঁটিটিও দখল করে নেয়। সেনাবাহিনীর হিসেবে বুধবার পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্কের হিসাব অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা কমপক্ষে ১ হাজার ৫০০।
প্রায় ১৮ মাস ধরে অবরুদ্ধ শহরে প্রায় ১২ লাখ মানুষ টিকে ছিল স্রেফ পশুখাদ্য খেয়ে। আরএসএফ ৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্যারিকেড তৈরি করে খাবার ও ওষুধের প্রবেশ বন্ধ করে দেয় এবং মানুষের পালানোর পথও রুদ্ধ করে রাখে। আল–জাজিরার যাচাইকৃত ভিডিওতে দেখা গেছে, আরএসএফ সদস্যরা মানুষকে গুলি করছে, নির্যাতন করছে। আগেও তারা নিজেদের এমন নৃশংসতা ভিডিও করে ছড়িয়েছে।
সুদানি চিকিৎসক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, আরএসএফ গণহত্যা চালাচ্ছে, মানুষকে আটক করছে এবং হাসপাতালগুলোয় হামলা করছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর জানিয়েছে, পালিয়ে যাওয়া মানুষদেরও হত্যা করা হচ্ছে। এসব হত্যার পেছনে জাতিগত উদ্দেশ্যের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে বলেছে, মাটির রং পরিবর্তন ও ছোট ছোট বস্তুসমষ্টি দেখা গেছে, যা মৃতদেহ ও রক্তের চিহ্ন হতে পারে। এই দাগগুলো আরএসএফ দখলের আগে দেখা যায়নি। জাতিসংঘ জানিয়েছে, মাত্র দুই দিনে ২৬ হাজার মানুষ শহর থেকে পালিয়েছে। তারা বেশির ভাগই পায়ে হেঁটে পশ্চিমে টাওয়িলা শহরের দিকে গেছে, যা ৭০ কিলোমিটার দূরে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মতে, এখনো প্রায় ১ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ এল-ফাশেরে আটকা পড়ে আছে।
এদিকে পাশের উত্তর কোরদোফান প্রদেশের বারা শহরেও হত্যাকাণ্ডের খবর এসেছে। ২৫ অক্টোবর আরএসএফ শহরটি দখলের ঘোষণা দেয়। সেখানে সাধারণ মানুষ ও ত্রাণকর্মীদের ওপরও হামলা চালানো হয়েছে। রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্টের আন্তর্জাতিক ফেডারেশন জানিয়েছে, বারায় তাদের পাঁচজন স্বেচ্ছাসেবক নিহত হয়েছেন, তিনজন নিখোঁজ। বারা শহরটি এল-ওবেইদের কাছে, যা এখনো সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে আরএসএফ সেখানে অগ্রসর হচ্ছে।
এল-ফাশের ও এল-ওবেইদ কেন গুরুত্বপূর্ণ
দুই শহরই পশ্চিম সুদানের প্রধান শহর এবং এখন যুদ্ধক্ষেত্র। আরএসএফ ইতিমধ্যে দেশের পশ্চিমাংশে দৃঢ় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা পুরো অঞ্চল দখল করতে চায়। সেনাবাহিনী পূর্ব দিক থেকে আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে ঢোকার চেষ্টা করছে। এল-ফাশের ছিল উত্তর দারফুরের রাজধানী এবং দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর শেষ বড় ঘাঁটি। এটি হারানোর পর দেশ কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে—পূর্বে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ, পশ্চিমে আরএসএফের শাসন।
আরএসএফ এখন দারফুরে নিজেদের সমান্তরাল সরকার গঠন করেছে। সেনাবাহিনী অবস্থান করছে পূর্ব, মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে। এল-ওবেইদ উত্তর কোরদোফান প্রদেশের রাজধানী এবং তেলসমৃদ্ধ শহর। এটি দারফুর ও রাজধানী খার্তুমের মধ্যে কৌশলগত সংযোগস্থল। বর্তমানে এটি সেনাবাহিনীর হাতে, কিন্তু আরএসএফ শহরটির দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
গত ২৫ অক্টোবর আরএসএফ ঘোষণা দেয় যে তারা বারা শহর পুনর্দখল করেছে, যা এল-ওবেইদ থেকে মাত্র ৫৯ কিলোমিটার দূরে। গত সেপ্টেম্বরে সেনাবাহিনী ওই শহরটি আরএসএফের কাছ থেকে পুনরায় নিয়েছিল। এখন আরএসএফ বারা থেকে এল-ওবেইদে হামলা চালাচ্ছে। জুলাই পর্যন্ত সেখানে অন্তত ১ লাখ ৩৭ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল।
দুই পক্ষের বক্তব্য
সোমবার সেনাপ্রধান ও কার্যত রাষ্ট্রপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান বলেন, জনগণকে বাঁচাতে তার বাহিনী এল-ফাশের থেকে সরে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের জনগণের ওপর যা ঘটেছে, তার প্রতিশোধ নেওয়া হবে।’ বুধবার সুদান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুসেইন আল-আমিন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেন।
আরএসএফের নেতা মুহাম্মদ হামদান দাগালো—যিনি হেমেদতি নামেও পরিচিত—দাবি করেন, তারা সুদানকে ‘সত্যিকারের গণতন্ত্রে ঐক্যবদ্ধ’ করতে চান। তিনি বলেন, যারা বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে, তাদের জবাবদিহির মুখোমুখি করা হবে।
আরএসএফ কারা
আরএসএফের যাত্রা শুরু ২০০৩ সালে, দারফুর যুদ্ধের সময়। তখন তাদের নাম ছিল ‘জানজাওয়িদ।’ তারা ছিল এক যাযাবর সশস্ত্র দল। সে সময় তারা প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের পক্ষে লড়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তারা স্থানীয় জাতিগোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালিয়েছিল। মানবাধিকার সংগঠনগুলো একে গণহত্যা হিসেবে বর্ণনা করেছে। এতে ১ লাখ থেকে ৩ লাখ মানুষ নিহত হয় এবং ২৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।
এরপর, ২০১৩ সালে আল-বশির জানজাওয়িদ বাহিনীকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস’ নামে প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৭ সালে আইন করে এই বাহিনীকে স্বাধীন নিরাপত্তা সংস্থার মর্যাদা দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে আরএসএফ গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয় এবং ওমর আল-বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সহায়তা করে। পরে ২০২১ সালে তারা সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলে বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লাহ হামদককে উৎখাত করে। এতে দেশটির বেসামরিক-সামরিক যৌথ শাসনব্যবস্থা শেষ হয়ে যায়।
সংঘাতের শুরু যেভাবে
আরএসএফ নেতা হেমেদতি ও সেনাপ্রধান আল-বুরহানের মধ্যে মতবিরোধ বাড়তে থাকে। মূল প্রশ্ন ছিল—আরএসএফ কবে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত হবে এবং কে দেশের নেতৃত্ব দেবে। ২০২৩ সালে ১৫ এপ্রিল এই বিরোধ পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নেয়। সেনাবাহিনী চায়, আরএসএফ পুরোপুরি তাদের অধীনে আসুক। কিন্তু আরএসএফ স্বাধীন থাকতে চায়।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, দুই পক্ষই যুদ্ধাপরাধ ও নৃশংসতা চালিয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দেয়, দারফুরে আরএসএফ ও তাদের মিত্ররা গণহত্যা চালাচ্ছে। এতে সবচেয়ে বড় বিপদে পড়েছে সাধারণ মানুষ। সুদানি মানবাধিকার সংগঠনগুলো আগে থেকেই সতর্ক করেছিল, আরএসএফ যদি এল-ফাশের দখল করে, তাহলে তা সাধারণ মানুষের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে।
আল–জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পালিয়ে আসা মানুষজন জানিয়েছে—আরএসএফ সদস্যরা ঘরে ঘরে গিয়ে জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে মানুষ হত্যা করছে। এল–ফাশের শহরে সৌদি হাসপাতালেই প্রায় ৫০০ মানুষ নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সেখানে রোগী, স্বাস্থ্যকর্মী ও আশ্রয়প্রার্থী সাধারণ মানুষ ছিল।
আরএসএফ শত শত মানুষকে আটক করেছে। বহু নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, আরএসএফ যেসব শহর দখল করবে, সেখানেও গণহত্যার আশঙ্কা রয়েছে।
এল-ফাশের দখলের ফলে আরএসএফ এখন পুরো দারফুর অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণে। অঞ্চলটি কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি চাদ, লিবিয়া ও দক্ষিণ সুদানের সীমান্তে অবস্থিত এবং সোনার প্রধান উৎসগুলোর একটি। ইতালির আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক গবেষণা সংস্থা আইএসপিআই ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে বলেছে, দারফুরের সোনার জন্য লড়াইই এই যুদ্ধের অন্যতম কারণ।
সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র ও আফ্রিকান ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় বহুবার আলোচনার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কোনো ফল মেলেনি। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, মিশর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত মিলে ‘কোয়াড’ নামে একটি জোট গঠন করেছে। তারা ১২ সেপ্টেম্বর যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনা ঘোষণা করে।
তাদের পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল, তিন মাসের মানবিক বিরতি দেওয়া হবে যাতে ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ করতে পারে। এরপর স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং নয় মাসের মধ্যে বেসামরিক সরকারে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রথমে সেনাপ্রধান আল-বুরহান এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি চান, আরএসএফ ভেঙে দেওয়া হোক। কিন্তু ১৫ অক্টোবর মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসির সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি কিছুটা নমনীয় হন।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে দুই পক্ষের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা হয়। অক্টোবরের শেষে আরও বৈঠকের কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই আরএসএফ এল-ফাশের দখল করে নেয়। এখন আলোচনা কোন পথে যাবে, তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ফলে, এই অবস্থায় আশঙ্কা বাড়ছে যে, যেহেতু দারফুর অঞ্চল প্রায় পুরোটাই আরএসএফের হাতে চলে গেছে, তাহলে কি সুদান আরও একবার ভাঙতে চলেছে। এর আগে, সুদান ভেঙে দক্ষিণ সুদান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়।

ভারতের নির্বাচন কমিশন দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থদাতাদের তালিকা প্রকাশ করেছে গত ১৪ মার্চ। ওই তালিকায় নাম থাকা কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের নানা দুর্নীতি থেকে রেহাই ও নানা সুযোগ–সুবিধা পেতে রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থ দিয়েছিল। যথারীতি তারা পেয়েছেও সেসব ছাড়।
০৬ এপ্রিল ২০২৪
বিশ্ব রাজনীতিতে আবারও পারমাণবিক যুদ্ধের আতঙ্ক ঘনীভূত হচ্ছে। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র—দুই পরাশক্তির শীর্ষ নেতার সাম্প্রতিক ঘোষণায় এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, শীতল যুদ্ধের পর বিশ্বে যে পারমাণবিক ভারসাম্য তৈরি হয়েছিল, তা এখন ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগে
বিরল খনিজ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের এই টানাপোড়েন আগেও ছিল। চীন বহু বছর ধরে তার বৃহত্তর শিল্পনীতির অংশ হিসেবে এই খনিজগুলোর ওপর প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তাই বিরল খনিজকে কেন্দ্র করে চীনের কৌশলগত বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টার বিপরীতে ট্রাম্প প্রশাসনও পাল্টা খেলায় নেমেছে।
১০ ঘণ্টা আগে
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

পররাষ্ট্রনীতি সব সময় একটি কঠিন ভারসাম্যের ওপর টিকে থাকে। নৈতিক বিশ্বাস আর কড়া বাস্তবতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা সহজ কাজ নয়। রাষ্ট্রগুলো প্রায়ই বড় বড় মূল্যবোধের কথা বলে; কিন্তু সুযোগ এলেই তারা সেই নীতির রং গা থেকে ঝেড়ে ফেলে। আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের সঙ্গে ভারতের সাম্প্রতিক যোগাযোগ এই দ্বন্দ্বের ভালো উদাহরণ।
নয়াদিল্লিতে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর এবং বৈঠকগুলো কৌশলগত দিককে নির্দেশ করে। সেখানে মানবিক ও উন্নয়ন সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে নারী সাংবাদিকদের বাদ দেওয়ার ঘটনা ভারতের নৈতিক অবস্থানের দিকে চোখ খোলে।
ভারতের তালেবান সম্পর্কের তিনটি মূল কারণ। প্রথমত, ভারতের নিরাপত্তার জন্য কাবুলের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। স্থিতিশীল আফগানিস্তান সন্ত্রাসী কার্যক্রম কমাবে। এটি ভারতীয় স্বার্থের জন্য অপরিহার্য। দ্বিতীয়ত, আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের বহু বছরের উন্নয়ন সম্পর্ক আছে। ভারত বহু বছর ধরে সবচেয়ে বড় সহায়তা দিয়েছে। সহায়তা ও অবকাঠামো বজায় রাখা মানে প্রভাবও বজায় রাখা। তৃতীয়ত, এটি এক ধরনের কৌশলগত ঝুঁকি কমানো। আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ক্রমেই বাড়ছে। কাবুলের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করলে পাকিস্তান, চীন ও অন্যান্য শক্তি সুবিধা পাবে।
নয়াদিল্লি আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের কনস্যুলার সুবিধা ও মানবিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। যদিও তালেবানকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি, ভারতের ‘টেকনিক্যাল মিশন’ উন্নত হয়ে ‘দূতাবাসে’ রূপ নিয়েছে। এটি সতর্কতা ও সম্পৃক্ততার সংকেত। তবে তালেবানদের একটি কূটনৈতিক ভুল সফরের আবহ জটিল করেছে। নয়াদিল্লিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নারী সাংবাদিকদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এতে ভারতজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। পরে তালেবান নেতা নারী সাংবাদিকদের জন্য আলাদা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
ভারতের বর্তমান উদ্যোগ বোঝার জন্য অতীতের ইতিহাসও গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম তালেবান শাসনামলে পাকিস্তানের ভারতবিরোধী অবস্থার কারণে সমস্যা হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে আইসি-৮১৪ ফ্লাইট অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কান্দাহারে। সে সময় ভারতের অবস্থান তালেবানের প্রতি অবিশ্বাসী হয়েছিল। এরপর প্রায় ২৫ বছর ধরে তালেবানকে স্বীকৃতি দেয়নি।
বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন। ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, পাকিস্তানের সঙ্গে দূরত্ব, তালেবানের কূটনৈতিক স্বাভাবিকীকরণ চেষ্টা এবং ভারতের কৌশলগত প্রয়োজন নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ২০২১ সালে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার এবং আঞ্চলিক সমীকরণের পুনর্গঠন ভারতের নীরব কূটনীতি, মানবিক সহযোগিতা ও নির্বাচিত সমন্বয় পুনরায় গুরুত্বপূর্ণ করেছে। ভারতের নিজস্ব নীতিগত ইতিহাসও আজকের বিতর্ককে ব্যাখ্যা দেয়। ১৯৭০-এর দশকে ভারত বর্ণবাদী দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিল। ভারত তখন বিশ্বমঞ্চে নৈতিক অবস্থান দেখিয়েছে। এখন আফগান সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করার পেছনে মূলত স্বার্থনির্ভর কারণ আছে।
উত্তরটি আংশিকভাবে বলপ্রয়োগ এবং আংশিকভাবে জরুরি পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত। আফগানিস্তানে মানবিক বিপর্যয়, নিরাপত্তাহীনতা এবং নাজুক রাষ্ট্রব্যবস্থা জটিলতা বাড়িয়েছে। তবে স্বার্থ নৈতিক প্রশ্নকে মুছে দিতে পারে না।
চিন্তাশীল ভারতীয়রা কী করবে? নাগরিক উদ্বেগ বৈধ এবং প্রয়োজনীয়। কূটনৈতিক যোগাযোগ নৈতিকতার বাইরে রাখা যাবে না। চিন্তাশীলদের তিনটি দাবি একসঙ্গে রাখতে হবে: ১. সহায়তা এমনভাবে পরিচালিত হোক যা নারীদের প্রয়োজন অগ্রাধিকার দেয় এবং শিক্ষার ও স্বাস্থ্যসেবায় তাদের প্রবেশাধিকার রক্ষা করে। ২. কূটনৈতিক যোগাযোগ শর্তসাপেক্ষ, পরিমাপযোগ্য এবং প্রত্যাহারযোগ্য হোক। স্বয়ংক্রিয় স্বীকৃতি নয়। লজ্জাজনক সমঝোতা নয়। ৩. দেশের মর্যাদা বিদেশি শক্তির হাতে না হস্তান্তর করা হোক যারা লিঙ্গ সমতার নীতি উপেক্ষা করে।
ভারতের কূটনৈতিক অবস্থান বাস্তবসম্মত ও নৈতিক হতে পারে যদি জবাবদিহি ব্যবস্থাও থাকে। নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও বিরোধী দল সরকারের ওপর চাপ দিতে পারে যাতে শর্তগুলো স্পষ্ট হয়। তালেবান ইস্যু সমকালীন কূটনীতির একটি পাঠ। দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব—জাতীয় স্বার্থ বনাম গণতান্ত্রিক নৈতিক মান। ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয়, কিন্তু আমাদের বর্তমান সিদ্ধান্তকে নির্ধারণ করে না।
নয়াদিল্লির কাজ হলো নৈতিকতা ও বাস্তবতার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করা। জাতীয় নিরাপত্তা ও নাগরিক মর্যাদা উভয়ই রক্ষা করা প্রয়োজন। মহাত্মা গান্ধীর দেশ হিসেবে ভারতকে নিজের প্রতি সত্য থাকতে হবে। কারণ, মহৎ লক্ষ্য কখনো অবৈধ উপায়কে বৈধ করতে পারে না। জনগণকে সব সময় সচেতন থাকতে হবে যে তাদের নামে কী বলা হচ্ছে এবং কী করা হচ্ছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে সংক্ষেপিত

পররাষ্ট্রনীতি সব সময় একটি কঠিন ভারসাম্যের ওপর টিকে থাকে। নৈতিক বিশ্বাস আর কড়া বাস্তবতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা সহজ কাজ নয়। রাষ্ট্রগুলো প্রায়ই বড় বড় মূল্যবোধের কথা বলে; কিন্তু সুযোগ এলেই তারা সেই নীতির রং গা থেকে ঝেড়ে ফেলে। আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের সঙ্গে ভারতের সাম্প্রতিক যোগাযোগ এই দ্বন্দ্বের ভালো উদাহরণ।
নয়াদিল্লিতে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর এবং বৈঠকগুলো কৌশলগত দিককে নির্দেশ করে। সেখানে মানবিক ও উন্নয়ন সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে নারী সাংবাদিকদের বাদ দেওয়ার ঘটনা ভারতের নৈতিক অবস্থানের দিকে চোখ খোলে।
ভারতের তালেবান সম্পর্কের তিনটি মূল কারণ। প্রথমত, ভারতের নিরাপত্তার জন্য কাবুলের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। স্থিতিশীল আফগানিস্তান সন্ত্রাসী কার্যক্রম কমাবে। এটি ভারতীয় স্বার্থের জন্য অপরিহার্য। দ্বিতীয়ত, আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের বহু বছরের উন্নয়ন সম্পর্ক আছে। ভারত বহু বছর ধরে সবচেয়ে বড় সহায়তা দিয়েছে। সহায়তা ও অবকাঠামো বজায় রাখা মানে প্রভাবও বজায় রাখা। তৃতীয়ত, এটি এক ধরনের কৌশলগত ঝুঁকি কমানো। আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ক্রমেই বাড়ছে। কাবুলের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করলে পাকিস্তান, চীন ও অন্যান্য শক্তি সুবিধা পাবে।
নয়াদিল্লি আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের কনস্যুলার সুবিধা ও মানবিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। যদিও তালেবানকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি, ভারতের ‘টেকনিক্যাল মিশন’ উন্নত হয়ে ‘দূতাবাসে’ রূপ নিয়েছে। এটি সতর্কতা ও সম্পৃক্ততার সংকেত। তবে তালেবানদের একটি কূটনৈতিক ভুল সফরের আবহ জটিল করেছে। নয়াদিল্লিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নারী সাংবাদিকদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এতে ভারতজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। পরে তালেবান নেতা নারী সাংবাদিকদের জন্য আলাদা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
ভারতের বর্তমান উদ্যোগ বোঝার জন্য অতীতের ইতিহাসও গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম তালেবান শাসনামলে পাকিস্তানের ভারতবিরোধী অবস্থার কারণে সমস্যা হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে আইসি-৮১৪ ফ্লাইট অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কান্দাহারে। সে সময় ভারতের অবস্থান তালেবানের প্রতি অবিশ্বাসী হয়েছিল। এরপর প্রায় ২৫ বছর ধরে তালেবানকে স্বীকৃতি দেয়নি।
বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন। ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, পাকিস্তানের সঙ্গে দূরত্ব, তালেবানের কূটনৈতিক স্বাভাবিকীকরণ চেষ্টা এবং ভারতের কৌশলগত প্রয়োজন নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ২০২১ সালে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার এবং আঞ্চলিক সমীকরণের পুনর্গঠন ভারতের নীরব কূটনীতি, মানবিক সহযোগিতা ও নির্বাচিত সমন্বয় পুনরায় গুরুত্বপূর্ণ করেছে। ভারতের নিজস্ব নীতিগত ইতিহাসও আজকের বিতর্ককে ব্যাখ্যা দেয়। ১৯৭০-এর দশকে ভারত বর্ণবাদী দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিল। ভারত তখন বিশ্বমঞ্চে নৈতিক অবস্থান দেখিয়েছে। এখন আফগান সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করার পেছনে মূলত স্বার্থনির্ভর কারণ আছে।
উত্তরটি আংশিকভাবে বলপ্রয়োগ এবং আংশিকভাবে জরুরি পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত। আফগানিস্তানে মানবিক বিপর্যয়, নিরাপত্তাহীনতা এবং নাজুক রাষ্ট্রব্যবস্থা জটিলতা বাড়িয়েছে। তবে স্বার্থ নৈতিক প্রশ্নকে মুছে দিতে পারে না।
চিন্তাশীল ভারতীয়রা কী করবে? নাগরিক উদ্বেগ বৈধ এবং প্রয়োজনীয়। কূটনৈতিক যোগাযোগ নৈতিকতার বাইরে রাখা যাবে না। চিন্তাশীলদের তিনটি দাবি একসঙ্গে রাখতে হবে: ১. সহায়তা এমনভাবে পরিচালিত হোক যা নারীদের প্রয়োজন অগ্রাধিকার দেয় এবং শিক্ষার ও স্বাস্থ্যসেবায় তাদের প্রবেশাধিকার রক্ষা করে। ২. কূটনৈতিক যোগাযোগ শর্তসাপেক্ষ, পরিমাপযোগ্য এবং প্রত্যাহারযোগ্য হোক। স্বয়ংক্রিয় স্বীকৃতি নয়। লজ্জাজনক সমঝোতা নয়। ৩. দেশের মর্যাদা বিদেশি শক্তির হাতে না হস্তান্তর করা হোক যারা লিঙ্গ সমতার নীতি উপেক্ষা করে।
ভারতের কূটনৈতিক অবস্থান বাস্তবসম্মত ও নৈতিক হতে পারে যদি জবাবদিহি ব্যবস্থাও থাকে। নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও বিরোধী দল সরকারের ওপর চাপ দিতে পারে যাতে শর্তগুলো স্পষ্ট হয়। তালেবান ইস্যু সমকালীন কূটনীতির একটি পাঠ। দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব—জাতীয় স্বার্থ বনাম গণতান্ত্রিক নৈতিক মান। ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয়, কিন্তু আমাদের বর্তমান সিদ্ধান্তকে নির্ধারণ করে না।
নয়াদিল্লির কাজ হলো নৈতিকতা ও বাস্তবতার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করা। জাতীয় নিরাপত্তা ও নাগরিক মর্যাদা উভয়ই রক্ষা করা প্রয়োজন। মহাত্মা গান্ধীর দেশ হিসেবে ভারতকে নিজের প্রতি সত্য থাকতে হবে। কারণ, মহৎ লক্ষ্য কখনো অবৈধ উপায়কে বৈধ করতে পারে না। জনগণকে সব সময় সচেতন থাকতে হবে যে তাদের নামে কী বলা হচ্ছে এবং কী করা হচ্ছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে সংক্ষেপিত

ভারতের নির্বাচন কমিশন দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থদাতাদের তালিকা প্রকাশ করেছে গত ১৪ মার্চ। ওই তালিকায় নাম থাকা কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের নানা দুর্নীতি থেকে রেহাই ও নানা সুযোগ–সুবিধা পেতে রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থ দিয়েছিল। যথারীতি তারা পেয়েছেও সেসব ছাড়।
০৬ এপ্রিল ২০২৪
বিশ্ব রাজনীতিতে আবারও পারমাণবিক যুদ্ধের আতঙ্ক ঘনীভূত হচ্ছে। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র—দুই পরাশক্তির শীর্ষ নেতার সাম্প্রতিক ঘোষণায় এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, শীতল যুদ্ধের পর বিশ্বে যে পারমাণবিক ভারসাম্য তৈরি হয়েছিল, তা এখন ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগে
বিরল খনিজ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের এই টানাপোড়েন আগেও ছিল। চীন বহু বছর ধরে তার বৃহত্তর শিল্পনীতির অংশ হিসেবে এই খনিজগুলোর ওপর প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তাই বিরল খনিজকে কেন্দ্র করে চীনের কৌশলগত বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টার বিপরীতে ট্রাম্প প্রশাসনও পাল্টা খেলায় নেমেছে।
১০ ঘণ্টা আগে
পশ্চিম সুদানের এল-ফাশের শহরে গণহত্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, হাজারো মানুষকে এরই মধ্যে হত্যা করা হয়েছে। শহরটি সুদানের দারফুর অঞ্চলের উত্তর প্রদেশের রাজধানী। সম্প্রতি এটি আধাসামরিক বাহিনী ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস’ (আরএসএফ) দখল করেছে। এটি মূলত সুদানের গৃহযুদ্ধের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী বহিঃপ্রকা
১৫ ঘণ্টা আগে