আজকের পত্রিকা ডেস্ক

১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের বর্তমান সংবিধান গৃহীত হয়। আর এর পর থেকেই এই সংবিধানকে সইতে হয়েছে বহু আঘাত। শুরুতে এটি ছিল গণতন্ত্রের দলিল, কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই শুরু হয় অন্তহীন সব সংশোধনী, যার মাধ্যমে একের পর এক সামরিক অভ্যুত্থান আর একনায়কতন্ত্রকে বৈধতা দেওয়া হতে থাকে।
তবু ১৫ বছর ধরে এই সংবিধান পাকিস্তানকে অন্তত ওপরে ওপরে হলেও বেসামরিক শাসনের এক আবরণে মুড়ে রেখেছিল। কিন্তু গত মাসে সেই ছবিটাও পাল্টে গেল। পার্লামেন্টে তড়িঘড়ি করে ২৭তম সংশোধনী পাস হতেই সমালোচক আর বিশ্লেষকেরা একে ‘সাংবিধানিক অভ্যুত্থান’ বলে ধিক্কার জানালেন। তাঁদের মতে, এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের বুকে সিপাহসালারদের আধিপত্য চিরস্থায়ী করা হলো।
পাকিস্তানের পার্লামেন্টে বিরোধী জোট তেহরিক তাহাফুজ আইন-ই-পাকিস্তানের চেয়ারম্যান মেহমুদ খান আচাকজাই সোজাসাপটা বললেন, ‘পাকিস্তানে এখন আর কোনো সংবিধান নেই। বিচার বিভাগ নেই। নেই কোনো সামাজিক চুক্তি। এই সংশোধনী দেশের বিরুদ্ধে এক অমার্জনীয় অপরাধ। ওরা একজন মানুষকে সবার ওপর রাজা বা যেন শাহেনশাহ বানিয়ে বসিয়েছে।’
সবাই বুঝল, এই ২৭তম সংশোধনীর আসল সুবিধাভোগী একজনই। তিনি ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান হিসেবে তিনি এমনিতেই দেশটির সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি ছিলেন। তবে এখন তিনি দেশটির ইতিহাসের অন্যতম শক্তিশালী সিপাহসালারে পরিণত হতে চলেছেন, যার হাতে থাকবে সাবেক সামরিক একনায়কদের মতো অগাধ সুযোগ-সুবিধা।
মুনির কেবল সেনাবাহিনীরই নন, নৌ ও বিমানবাহিনীরও দেখভাল করবেন। তাঁর পাঁচ বছরের মেয়াদ নতুন করে শুরু হবে এবং তা আবারও বাড়ানোর সুযোগ থাকবে। এর মানে, অন্তত আগামী এক দশক তিনি এই পদে থেকে যেতে পারেন, যা এক নজিরবিহীন ঘটনা। তাঁকে ফৌজদারি বিচার থেকেও আজীবনের জন্য দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ, এই সংশোধনী পাকিস্তানের আগে থেকেই কোণঠাসা বিচার বিভাগের ওপর এক সরাসরি আক্রমণ। সুপ্রিম কোর্টের বদলে আসছে নতুন এক সাংবিধানিক আদালত, যার বিচারকদের বেছে নেবে সরকার। প্রতিবাদে বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ বিচারক পদত্যাগ করেছেন। তাঁদের দাবি, নির্বাহী ও সামরিক ক্ষমতার ওপর যেটুকু নিয়ন্ত্রণ বাকি ছিল, সেটাও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের মানব ভূগোলের প্রভাষক এবং পাকিস্তান বিশেষজ্ঞ আয়াজ মালিক বললেন, ‘এটা অন্য মোড়কে সামরিক শাসন বা মার্শাল ল ছাড়া আর কিছুই নয়। পাকিস্তানে অতীতে সরাসরি সামরিক শাসনের সময়ে আমরা ঠিক এমনটাই ঘটতে দেখেছি।’ জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্কও এই সংশোধনীর সমালোচনা করে সতর্ক করলেন। এর ফলে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের মূলনীতির ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, মুনির ঠিক মোক্ষম সময়ে নিজের চালটি চেলেছেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে কারচুপি আর পক্ষপাতের বিস্তর অভিযোগ ওঠার পর পাকিস্তানের বর্তমান জোট সরকারকে সবাই দুর্বল, জনবিচ্ছিন্ন এবং অবৈধ বলে মনে করে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তারা পুরোপুরি মুনিরের সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল—যাকে আয়াজ মালিক ‘মিলিটারি ভেন্টিলেটর’ বলে অভিহিত করেছেন।
এদিকে গত মে মাসে প্রতিবেশী ও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের সঙ্গে সংঘাত শুরু হওয়ার পর মুনির জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। সীমান্তে দুই পক্ষই ড্রোন আর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল। পাকিস্তান কয়েকটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ধ্বংস করার দাবি করার পর মুনির ভারতের বিরুদ্ধে বিজয় ঘোষণা করেন, যার ফলে দেশজুড়ে এক উগ্র দেশপ্রেম আর যুদ্ধজয়ের উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়ে। মালিকের মতে, ভারতের সঙ্গে এই সংঘাত মুনিরের জন্য ছিল রীতিমতো ‘স্বর্গ থেকে পাওয়া উপহার’ বা গডসেন্ড, যা তাঁকে পাঁচ-তারকা জেনারেলে উন্নীত করেছে।
মুনির নিজেকে বিশ্বনেতা হিসেবেও তুলে ধরতে শুরু করেছেন। ভারত ও পাকিস্তানকে যুদ্ধের কিনারা থেকে ফিরিয়ে আনার কথিত ভূমিকার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য পাকিস্তান মনোনীত করার পর ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মুনির নজিরবিহীনভাবে দুটি বৈঠক করেন। হোয়াইট হাউসের দরজা পাকিস্তানের জন্য এক দশক ধরে বন্ধ ছিল। মুনির সেই বরফ গলিয়ে দেশকে আবার আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে এনেছেন—এমনকি ট্রাম্পের ‘প্রিয় ফিল্ড মার্শাল’ খেতাবও জুটেছে তাঁর কপালে। এসব তাঁর অবস্থানকে আরও উঁচুতে নিয়ে গেছে। গত সেপ্টেম্বরে সৌদি আরবের সঙ্গে পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের সময়ও মুনির ছিলেন একদম সামনের সারিতে।
অনেকের মতে, মুনিরের হাতে এখন ঠিক কতটা ক্ষমতা, তা বোঝা যায় ২৭তম সংশোধনী পাসের গতি দেখে। আগের সংশোধনীগুলো নিয়ে পার্লামেন্টে সপ্তাহের পর সপ্তাহ তর্ক-বিতর্ক ও কাটাছেঁড়া চলত। আর এটি? মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সিনেট এবং নিম্নকক্ষে প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সামান্য কিছু পরিবর্তনসহ তরতর করে পাস হয়ে গেল।
ব্রিটিশ থিংকট্যাংক চ্যাথাম হাউসের এশিয়া-প্যাসিফিক প্রোগ্রামের সহযোগী ফেলো ফারজানা শেখ বললেন, ‘বর্তমানে আমাদের এমন এক রাজনৈতিক সরকার রয়েছে যার বৈধতা এতটাই নড়বড়ে যে সেনাবাহিনীর সমর্থন ছাড়া এর আসলে কোনো অস্তিত্বই থাকত না। আর মুনির এই সুযোগটাই পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছেন।’
ফারজানা শেখ জোর দিয়েই বললেন, পাকিস্তানের ইতিহাসজুড়েই দেখা গেছে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের সাময়িক স্বার্থসিদ্ধির জন্য বারবার সেনাবাহিনীকে সুযোগ করে দিয়েছে। তবে তিনি এ-ও যোগ করেন যে ‘কিন্তু যেভাবে দুটি দল নতি স্বীকার করল, তা সত্যিই বিস্ময়কর।’
এর পরিণাম যে ভয়াবহ, সে কথাও মনে করিয়ে দিলেন তিনি। ফারজানা শেখের ভাষায়, ‘এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই যে একটি জবাবদিহিমূলক সরকার কিংবা গণতন্ত্রের পথে উত্তরণের ক্ষেত্রে এটি এক বড়সড় ধাক্কা—হয়তো সবচেয়ে বড় ধাক্কা। এই সাংবিধানিক সংশোধনী মুনিরকে দায়মুক্তির সঙ্গে কাজ করার লাইসেন্স দিয়ে দিল। পরিস্থিতিটা অত্যন্ত বিপজ্জনক।’
তিন বাহিনীর ওপর মুনির যেভাবে একচ্ছত্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছেন, তা নিয়ে সেনাবাহিনীর ভেতরেও গুঞ্জন শুরু হয়েছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারের ওপর তাঁর কর্তৃত্ব নিয়ে উদ্বেগ দানা বাঁধছে। কারও কারও আশঙ্কা, মুনির, যাকে অনেকেই একজন ‘বেপরোয়া খেলোয়াড়’ এবং কট্টর মতাদর্শী হিসেবে চেনেন, বিশেষত ভারতের ব্যাপারে যার অবস্থান বেশ কঠোর, তিনি এখন পারমাণবিক কমান্ডের ওপর এমন এক নিয়ন্ত্রণ পেলেন, যার কোনো নজির নেই।
এক অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেনারেল, যিনি রোষানলে পড়ার ভয়ে পরিচয় গোপন রেখেছেন—এই সংশোধনীকে ‘বিপর্যয়কর’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি জানান, ‘নৌ ও বিমানবাহিনীর মতো অন্যান্য বাহিনীর মধ্যে ইতিমধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। প্রস্তাবিত এই সংশোধনী প্রতিরক্ষা কাঠামোর কোনো কাজে আসবে না; বরং এটি কেবল একজন ব্যক্তিরই স্বার্থরক্ষা করবে।’
তিনি আরও যোগ করলেন, বেসামরিক সরকারের নজরদারি পুরোপুরি সরিয়ে দিয়ে পারমাণবিক কমান্ডকে এককভাবে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসাটা ‘গভীরভাবে সমস্যাজনক’। প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এই সংশোধনীর পক্ষে ভোট দিয়েছেন। তিনি এসব সমালোচনাকে উড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী রাষ্ট্রেরই অংশ। তারা যদি ভালো কাজ করে, তবে আমরা তাদের সমর্থন করি এবং তাদের পাশে থাকি।’ তিনি আরও বলেন, ‘পার্লামেন্ট ফিল্ড মার্শাল মুনিরকে দায়মুক্তি দিয়েছে। কারণ, তিনি দেশের জন্য ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন। তিনি সর্বেসর্বা হয়ে গেছেন—এটা নিছকই জল্পনা।’
তবে কারও কারও মতে, এই সংশোধনী কেবল একটি দীর্ঘদিনের অঘোষিত ব্যবস্থাকেই আইনি রূপ দিল, যে ব্যবস্থায় সেনাবাহিনীই মূলত দেশ চালায় এবং রাজনীতির কলকাঠি নাড়ে। সেনাপ্রধান হওয়ার পর থেকে মুনিরকেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) ওপর দমনপীড়নের মূল কারিগর হিসেবে দেখা হয়েছে। পাকিস্তানি রাজনীতিতে সামরিক হস্তক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ জানানোর অপরাধে ইমরান খান ও পিটিআইয়ের জ্যেষ্ঠ নেতারা এখন কারাগারে। বর্তমান মন্ত্রিসভার অর্থমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উভয়েই মুনিরের মনোনীত হিসেবে পরিচিত।
কিংস কলেজ লন্ডনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহযোগী অধ্যাপক ওয়াল্টার ল্যাডউইগ জোর দিয়ে বললেন, ‘এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব অত্যন্ত গভীর।’ তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে যদি কখনো ক্ষমতাকে সেনাবাহিনী থেকে সরিয়ে পুনরায় বেসামরিক নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হয়, তবে এই সংশোধনী বাতিল করা হবে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। মুনিরকে সরানো এখন প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি কিংবা তাঁর পূর্বসূরি যেকোনো সেনাপ্রধানকে সরানোর চেয়েও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
বিশ্লেষকেরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, মুনিরের এই নতুন ক্ষমতার সঙ্গে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও জড়িয়ে আছে। পাকিস্তান বর্তমানে দুটি অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদী বিদ্রোহের মোকাবিলা করছে, সেই সঙ্গে প্রতিবেশী ভারত ও আফগানিস্তানের সঙ্গেও বৈরিতা চলছে। তা ছাড়া দেশটি এমন এক তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা সমাধানে তিনি এখনো ব্যর্থ।
আয়াজ মল্লিক বলেন, মুনিরই পাকিস্তানের প্রথম জেনারেল নন, যিনি বছরের পর বছর ক্ষমতা ধরে রাখার পরিকল্পনা করেছেন। দেশের শেষ সামরিক একনায়ক পারভেজ মোশাররফেরও এমন পরিকল্পনা ছিল, যা কয়েক দশক ধরে বিস্তৃত ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যাপক জনরোষের মুখে তাঁর পতন ঘটে। তিনি বলেন, ‘ইতিহাস সাক্ষী, জেনারেলদের এই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাগুলো পাকিস্তানে কখনোই শেষমেশ টেকে না। যদি অর্থের জোগান না থাকে, তবে পুরো সাজানো বাগানই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে।’
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের বর্তমান সংবিধান গৃহীত হয়। আর এর পর থেকেই এই সংবিধানকে সইতে হয়েছে বহু আঘাত। শুরুতে এটি ছিল গণতন্ত্রের দলিল, কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই শুরু হয় অন্তহীন সব সংশোধনী, যার মাধ্যমে একের পর এক সামরিক অভ্যুত্থান আর একনায়কতন্ত্রকে বৈধতা দেওয়া হতে থাকে।
তবু ১৫ বছর ধরে এই সংবিধান পাকিস্তানকে অন্তত ওপরে ওপরে হলেও বেসামরিক শাসনের এক আবরণে মুড়ে রেখেছিল। কিন্তু গত মাসে সেই ছবিটাও পাল্টে গেল। পার্লামেন্টে তড়িঘড়ি করে ২৭তম সংশোধনী পাস হতেই সমালোচক আর বিশ্লেষকেরা একে ‘সাংবিধানিক অভ্যুত্থান’ বলে ধিক্কার জানালেন। তাঁদের মতে, এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের বুকে সিপাহসালারদের আধিপত্য চিরস্থায়ী করা হলো।
পাকিস্তানের পার্লামেন্টে বিরোধী জোট তেহরিক তাহাফুজ আইন-ই-পাকিস্তানের চেয়ারম্যান মেহমুদ খান আচাকজাই সোজাসাপটা বললেন, ‘পাকিস্তানে এখন আর কোনো সংবিধান নেই। বিচার বিভাগ নেই। নেই কোনো সামাজিক চুক্তি। এই সংশোধনী দেশের বিরুদ্ধে এক অমার্জনীয় অপরাধ। ওরা একজন মানুষকে সবার ওপর রাজা বা যেন শাহেনশাহ বানিয়ে বসিয়েছে।’
সবাই বুঝল, এই ২৭তম সংশোধনীর আসল সুবিধাভোগী একজনই। তিনি ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান হিসেবে তিনি এমনিতেই দেশটির সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি ছিলেন। তবে এখন তিনি দেশটির ইতিহাসের অন্যতম শক্তিশালী সিপাহসালারে পরিণত হতে চলেছেন, যার হাতে থাকবে সাবেক সামরিক একনায়কদের মতো অগাধ সুযোগ-সুবিধা।
মুনির কেবল সেনাবাহিনীরই নন, নৌ ও বিমানবাহিনীরও দেখভাল করবেন। তাঁর পাঁচ বছরের মেয়াদ নতুন করে শুরু হবে এবং তা আবারও বাড়ানোর সুযোগ থাকবে। এর মানে, অন্তত আগামী এক দশক তিনি এই পদে থেকে যেতে পারেন, যা এক নজিরবিহীন ঘটনা। তাঁকে ফৌজদারি বিচার থেকেও আজীবনের জন্য দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ, এই সংশোধনী পাকিস্তানের আগে থেকেই কোণঠাসা বিচার বিভাগের ওপর এক সরাসরি আক্রমণ। সুপ্রিম কোর্টের বদলে আসছে নতুন এক সাংবিধানিক আদালত, যার বিচারকদের বেছে নেবে সরকার। প্রতিবাদে বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ বিচারক পদত্যাগ করেছেন। তাঁদের দাবি, নির্বাহী ও সামরিক ক্ষমতার ওপর যেটুকু নিয়ন্ত্রণ বাকি ছিল, সেটাও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের মানব ভূগোলের প্রভাষক এবং পাকিস্তান বিশেষজ্ঞ আয়াজ মালিক বললেন, ‘এটা অন্য মোড়কে সামরিক শাসন বা মার্শাল ল ছাড়া আর কিছুই নয়। পাকিস্তানে অতীতে সরাসরি সামরিক শাসনের সময়ে আমরা ঠিক এমনটাই ঘটতে দেখেছি।’ জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্কও এই সংশোধনীর সমালোচনা করে সতর্ক করলেন। এর ফলে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের মূলনীতির ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, মুনির ঠিক মোক্ষম সময়ে নিজের চালটি চেলেছেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে কারচুপি আর পক্ষপাতের বিস্তর অভিযোগ ওঠার পর পাকিস্তানের বর্তমান জোট সরকারকে সবাই দুর্বল, জনবিচ্ছিন্ন এবং অবৈধ বলে মনে করে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তারা পুরোপুরি মুনিরের সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল—যাকে আয়াজ মালিক ‘মিলিটারি ভেন্টিলেটর’ বলে অভিহিত করেছেন।
এদিকে গত মে মাসে প্রতিবেশী ও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের সঙ্গে সংঘাত শুরু হওয়ার পর মুনির জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। সীমান্তে দুই পক্ষই ড্রোন আর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল। পাকিস্তান কয়েকটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ধ্বংস করার দাবি করার পর মুনির ভারতের বিরুদ্ধে বিজয় ঘোষণা করেন, যার ফলে দেশজুড়ে এক উগ্র দেশপ্রেম আর যুদ্ধজয়ের উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়ে। মালিকের মতে, ভারতের সঙ্গে এই সংঘাত মুনিরের জন্য ছিল রীতিমতো ‘স্বর্গ থেকে পাওয়া উপহার’ বা গডসেন্ড, যা তাঁকে পাঁচ-তারকা জেনারেলে উন্নীত করেছে।
মুনির নিজেকে বিশ্বনেতা হিসেবেও তুলে ধরতে শুরু করেছেন। ভারত ও পাকিস্তানকে যুদ্ধের কিনারা থেকে ফিরিয়ে আনার কথিত ভূমিকার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য পাকিস্তান মনোনীত করার পর ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মুনির নজিরবিহীনভাবে দুটি বৈঠক করেন। হোয়াইট হাউসের দরজা পাকিস্তানের জন্য এক দশক ধরে বন্ধ ছিল। মুনির সেই বরফ গলিয়ে দেশকে আবার আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে এনেছেন—এমনকি ট্রাম্পের ‘প্রিয় ফিল্ড মার্শাল’ খেতাবও জুটেছে তাঁর কপালে। এসব তাঁর অবস্থানকে আরও উঁচুতে নিয়ে গেছে। গত সেপ্টেম্বরে সৌদি আরবের সঙ্গে পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের সময়ও মুনির ছিলেন একদম সামনের সারিতে।
অনেকের মতে, মুনিরের হাতে এখন ঠিক কতটা ক্ষমতা, তা বোঝা যায় ২৭তম সংশোধনী পাসের গতি দেখে। আগের সংশোধনীগুলো নিয়ে পার্লামেন্টে সপ্তাহের পর সপ্তাহ তর্ক-বিতর্ক ও কাটাছেঁড়া চলত। আর এটি? মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সিনেট এবং নিম্নকক্ষে প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সামান্য কিছু পরিবর্তনসহ তরতর করে পাস হয়ে গেল।
ব্রিটিশ থিংকট্যাংক চ্যাথাম হাউসের এশিয়া-প্যাসিফিক প্রোগ্রামের সহযোগী ফেলো ফারজানা শেখ বললেন, ‘বর্তমানে আমাদের এমন এক রাজনৈতিক সরকার রয়েছে যার বৈধতা এতটাই নড়বড়ে যে সেনাবাহিনীর সমর্থন ছাড়া এর আসলে কোনো অস্তিত্বই থাকত না। আর মুনির এই সুযোগটাই পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছেন।’
ফারজানা শেখ জোর দিয়েই বললেন, পাকিস্তানের ইতিহাসজুড়েই দেখা গেছে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের সাময়িক স্বার্থসিদ্ধির জন্য বারবার সেনাবাহিনীকে সুযোগ করে দিয়েছে। তবে তিনি এ-ও যোগ করেন যে ‘কিন্তু যেভাবে দুটি দল নতি স্বীকার করল, তা সত্যিই বিস্ময়কর।’
এর পরিণাম যে ভয়াবহ, সে কথাও মনে করিয়ে দিলেন তিনি। ফারজানা শেখের ভাষায়, ‘এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই যে একটি জবাবদিহিমূলক সরকার কিংবা গণতন্ত্রের পথে উত্তরণের ক্ষেত্রে এটি এক বড়সড় ধাক্কা—হয়তো সবচেয়ে বড় ধাক্কা। এই সাংবিধানিক সংশোধনী মুনিরকে দায়মুক্তির সঙ্গে কাজ করার লাইসেন্স দিয়ে দিল। পরিস্থিতিটা অত্যন্ত বিপজ্জনক।’
তিন বাহিনীর ওপর মুনির যেভাবে একচ্ছত্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছেন, তা নিয়ে সেনাবাহিনীর ভেতরেও গুঞ্জন শুরু হয়েছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারের ওপর তাঁর কর্তৃত্ব নিয়ে উদ্বেগ দানা বাঁধছে। কারও কারও আশঙ্কা, মুনির, যাকে অনেকেই একজন ‘বেপরোয়া খেলোয়াড়’ এবং কট্টর মতাদর্শী হিসেবে চেনেন, বিশেষত ভারতের ব্যাপারে যার অবস্থান বেশ কঠোর, তিনি এখন পারমাণবিক কমান্ডের ওপর এমন এক নিয়ন্ত্রণ পেলেন, যার কোনো নজির নেই।
এক অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেনারেল, যিনি রোষানলে পড়ার ভয়ে পরিচয় গোপন রেখেছেন—এই সংশোধনীকে ‘বিপর্যয়কর’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি জানান, ‘নৌ ও বিমানবাহিনীর মতো অন্যান্য বাহিনীর মধ্যে ইতিমধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। প্রস্তাবিত এই সংশোধনী প্রতিরক্ষা কাঠামোর কোনো কাজে আসবে না; বরং এটি কেবল একজন ব্যক্তিরই স্বার্থরক্ষা করবে।’
তিনি আরও যোগ করলেন, বেসামরিক সরকারের নজরদারি পুরোপুরি সরিয়ে দিয়ে পারমাণবিক কমান্ডকে এককভাবে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসাটা ‘গভীরভাবে সমস্যাজনক’। প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এই সংশোধনীর পক্ষে ভোট দিয়েছেন। তিনি এসব সমালোচনাকে উড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী রাষ্ট্রেরই অংশ। তারা যদি ভালো কাজ করে, তবে আমরা তাদের সমর্থন করি এবং তাদের পাশে থাকি।’ তিনি আরও বলেন, ‘পার্লামেন্ট ফিল্ড মার্শাল মুনিরকে দায়মুক্তি দিয়েছে। কারণ, তিনি দেশের জন্য ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন। তিনি সর্বেসর্বা হয়ে গেছেন—এটা নিছকই জল্পনা।’
তবে কারও কারও মতে, এই সংশোধনী কেবল একটি দীর্ঘদিনের অঘোষিত ব্যবস্থাকেই আইনি রূপ দিল, যে ব্যবস্থায় সেনাবাহিনীই মূলত দেশ চালায় এবং রাজনীতির কলকাঠি নাড়ে। সেনাপ্রধান হওয়ার পর থেকে মুনিরকেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) ওপর দমনপীড়নের মূল কারিগর হিসেবে দেখা হয়েছে। পাকিস্তানি রাজনীতিতে সামরিক হস্তক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ জানানোর অপরাধে ইমরান খান ও পিটিআইয়ের জ্যেষ্ঠ নেতারা এখন কারাগারে। বর্তমান মন্ত্রিসভার অর্থমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উভয়েই মুনিরের মনোনীত হিসেবে পরিচিত।
কিংস কলেজ লন্ডনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহযোগী অধ্যাপক ওয়াল্টার ল্যাডউইগ জোর দিয়ে বললেন, ‘এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব অত্যন্ত গভীর।’ তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে যদি কখনো ক্ষমতাকে সেনাবাহিনী থেকে সরিয়ে পুনরায় বেসামরিক নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হয়, তবে এই সংশোধনী বাতিল করা হবে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। মুনিরকে সরানো এখন প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি কিংবা তাঁর পূর্বসূরি যেকোনো সেনাপ্রধানকে সরানোর চেয়েও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
বিশ্লেষকেরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, মুনিরের এই নতুন ক্ষমতার সঙ্গে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও জড়িয়ে আছে। পাকিস্তান বর্তমানে দুটি অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদী বিদ্রোহের মোকাবিলা করছে, সেই সঙ্গে প্রতিবেশী ভারত ও আফগানিস্তানের সঙ্গেও বৈরিতা চলছে। তা ছাড়া দেশটি এমন এক তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা সমাধানে তিনি এখনো ব্যর্থ।
আয়াজ মল্লিক বলেন, মুনিরই পাকিস্তানের প্রথম জেনারেল নন, যিনি বছরের পর বছর ক্ষমতা ধরে রাখার পরিকল্পনা করেছেন। দেশের শেষ সামরিক একনায়ক পারভেজ মোশাররফেরও এমন পরিকল্পনা ছিল, যা কয়েক দশক ধরে বিস্তৃত ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যাপক জনরোষের মুখে তাঁর পতন ঘটে। তিনি বলেন, ‘ইতিহাস সাক্ষী, জেনারেলদের এই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাগুলো পাকিস্তানে কখনোই শেষমেশ টেকে না। যদি অর্থের জোগান না থাকে, তবে পুরো সাজানো বাগানই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে।’
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের বর্তমান সংবিধান গৃহীত হয়। আর এর পর থেকেই এই সংবিধানকে সইতে হয়েছে বহু আঘাত। শুরুতে এটি ছিল গণতন্ত্রের দলিল, কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই শুরু হয় অন্তহীন সব সংশোধনী, যার মাধ্যমে একের পর এক সামরিক অভ্যুত্থান আর একনায়কতন্ত্রকে বৈধতা দেওয়া হতে থাকে।
তবু ১৫ বছর ধরে এই সংবিধান পাকিস্তানকে অন্তত ওপরে ওপরে হলেও বেসামরিক শাসনের এক আবরণে মুড়ে রেখেছিল। কিন্তু গত মাসে সেই ছবিটাও পাল্টে গেল। পার্লামেন্টে তড়িঘড়ি করে ২৭তম সংশোধনী পাস হতেই সমালোচক আর বিশ্লেষকেরা একে ‘সাংবিধানিক অভ্যুত্থান’ বলে ধিক্কার জানালেন। তাঁদের মতে, এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের বুকে সিপাহসালারদের আধিপত্য চিরস্থায়ী করা হলো।
পাকিস্তানের পার্লামেন্টে বিরোধী জোট তেহরিক তাহাফুজ আইন-ই-পাকিস্তানের চেয়ারম্যান মেহমুদ খান আচাকজাই সোজাসাপটা বললেন, ‘পাকিস্তানে এখন আর কোনো সংবিধান নেই। বিচার বিভাগ নেই। নেই কোনো সামাজিক চুক্তি। এই সংশোধনী দেশের বিরুদ্ধে এক অমার্জনীয় অপরাধ। ওরা একজন মানুষকে সবার ওপর রাজা বা যেন শাহেনশাহ বানিয়ে বসিয়েছে।’
সবাই বুঝল, এই ২৭তম সংশোধনীর আসল সুবিধাভোগী একজনই। তিনি ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান হিসেবে তিনি এমনিতেই দেশটির সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি ছিলেন। তবে এখন তিনি দেশটির ইতিহাসের অন্যতম শক্তিশালী সিপাহসালারে পরিণত হতে চলেছেন, যার হাতে থাকবে সাবেক সামরিক একনায়কদের মতো অগাধ সুযোগ-সুবিধা।
মুনির কেবল সেনাবাহিনীরই নন, নৌ ও বিমানবাহিনীরও দেখভাল করবেন। তাঁর পাঁচ বছরের মেয়াদ নতুন করে শুরু হবে এবং তা আবারও বাড়ানোর সুযোগ থাকবে। এর মানে, অন্তত আগামী এক দশক তিনি এই পদে থেকে যেতে পারেন, যা এক নজিরবিহীন ঘটনা। তাঁকে ফৌজদারি বিচার থেকেও আজীবনের জন্য দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ, এই সংশোধনী পাকিস্তানের আগে থেকেই কোণঠাসা বিচার বিভাগের ওপর এক সরাসরি আক্রমণ। সুপ্রিম কোর্টের বদলে আসছে নতুন এক সাংবিধানিক আদালত, যার বিচারকদের বেছে নেবে সরকার। প্রতিবাদে বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ বিচারক পদত্যাগ করেছেন। তাঁদের দাবি, নির্বাহী ও সামরিক ক্ষমতার ওপর যেটুকু নিয়ন্ত্রণ বাকি ছিল, সেটাও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের মানব ভূগোলের প্রভাষক এবং পাকিস্তান বিশেষজ্ঞ আয়াজ মালিক বললেন, ‘এটা অন্য মোড়কে সামরিক শাসন বা মার্শাল ল ছাড়া আর কিছুই নয়। পাকিস্তানে অতীতে সরাসরি সামরিক শাসনের সময়ে আমরা ঠিক এমনটাই ঘটতে দেখেছি।’ জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্কও এই সংশোধনীর সমালোচনা করে সতর্ক করলেন। এর ফলে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের মূলনীতির ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, মুনির ঠিক মোক্ষম সময়ে নিজের চালটি চেলেছেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে কারচুপি আর পক্ষপাতের বিস্তর অভিযোগ ওঠার পর পাকিস্তানের বর্তমান জোট সরকারকে সবাই দুর্বল, জনবিচ্ছিন্ন এবং অবৈধ বলে মনে করে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তারা পুরোপুরি মুনিরের সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল—যাকে আয়াজ মালিক ‘মিলিটারি ভেন্টিলেটর’ বলে অভিহিত করেছেন।
এদিকে গত মে মাসে প্রতিবেশী ও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের সঙ্গে সংঘাত শুরু হওয়ার পর মুনির জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। সীমান্তে দুই পক্ষই ড্রোন আর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল। পাকিস্তান কয়েকটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ধ্বংস করার দাবি করার পর মুনির ভারতের বিরুদ্ধে বিজয় ঘোষণা করেন, যার ফলে দেশজুড়ে এক উগ্র দেশপ্রেম আর যুদ্ধজয়ের উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়ে। মালিকের মতে, ভারতের সঙ্গে এই সংঘাত মুনিরের জন্য ছিল রীতিমতো ‘স্বর্গ থেকে পাওয়া উপহার’ বা গডসেন্ড, যা তাঁকে পাঁচ-তারকা জেনারেলে উন্নীত করেছে।
মুনির নিজেকে বিশ্বনেতা হিসেবেও তুলে ধরতে শুরু করেছেন। ভারত ও পাকিস্তানকে যুদ্ধের কিনারা থেকে ফিরিয়ে আনার কথিত ভূমিকার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য পাকিস্তান মনোনীত করার পর ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মুনির নজিরবিহীনভাবে দুটি বৈঠক করেন। হোয়াইট হাউসের দরজা পাকিস্তানের জন্য এক দশক ধরে বন্ধ ছিল। মুনির সেই বরফ গলিয়ে দেশকে আবার আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে এনেছেন—এমনকি ট্রাম্পের ‘প্রিয় ফিল্ড মার্শাল’ খেতাবও জুটেছে তাঁর কপালে। এসব তাঁর অবস্থানকে আরও উঁচুতে নিয়ে গেছে। গত সেপ্টেম্বরে সৌদি আরবের সঙ্গে পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের সময়ও মুনির ছিলেন একদম সামনের সারিতে।
অনেকের মতে, মুনিরের হাতে এখন ঠিক কতটা ক্ষমতা, তা বোঝা যায় ২৭তম সংশোধনী পাসের গতি দেখে। আগের সংশোধনীগুলো নিয়ে পার্লামেন্টে সপ্তাহের পর সপ্তাহ তর্ক-বিতর্ক ও কাটাছেঁড়া চলত। আর এটি? মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সিনেট এবং নিম্নকক্ষে প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সামান্য কিছু পরিবর্তনসহ তরতর করে পাস হয়ে গেল।
ব্রিটিশ থিংকট্যাংক চ্যাথাম হাউসের এশিয়া-প্যাসিফিক প্রোগ্রামের সহযোগী ফেলো ফারজানা শেখ বললেন, ‘বর্তমানে আমাদের এমন এক রাজনৈতিক সরকার রয়েছে যার বৈধতা এতটাই নড়বড়ে যে সেনাবাহিনীর সমর্থন ছাড়া এর আসলে কোনো অস্তিত্বই থাকত না। আর মুনির এই সুযোগটাই পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছেন।’
ফারজানা শেখ জোর দিয়েই বললেন, পাকিস্তানের ইতিহাসজুড়েই দেখা গেছে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের সাময়িক স্বার্থসিদ্ধির জন্য বারবার সেনাবাহিনীকে সুযোগ করে দিয়েছে। তবে তিনি এ-ও যোগ করেন যে ‘কিন্তু যেভাবে দুটি দল নতি স্বীকার করল, তা সত্যিই বিস্ময়কর।’
এর পরিণাম যে ভয়াবহ, সে কথাও মনে করিয়ে দিলেন তিনি। ফারজানা শেখের ভাষায়, ‘এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই যে একটি জবাবদিহিমূলক সরকার কিংবা গণতন্ত্রের পথে উত্তরণের ক্ষেত্রে এটি এক বড়সড় ধাক্কা—হয়তো সবচেয়ে বড় ধাক্কা। এই সাংবিধানিক সংশোধনী মুনিরকে দায়মুক্তির সঙ্গে কাজ করার লাইসেন্স দিয়ে দিল। পরিস্থিতিটা অত্যন্ত বিপজ্জনক।’
তিন বাহিনীর ওপর মুনির যেভাবে একচ্ছত্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছেন, তা নিয়ে সেনাবাহিনীর ভেতরেও গুঞ্জন শুরু হয়েছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারের ওপর তাঁর কর্তৃত্ব নিয়ে উদ্বেগ দানা বাঁধছে। কারও কারও আশঙ্কা, মুনির, যাকে অনেকেই একজন ‘বেপরোয়া খেলোয়াড়’ এবং কট্টর মতাদর্শী হিসেবে চেনেন, বিশেষত ভারতের ব্যাপারে যার অবস্থান বেশ কঠোর, তিনি এখন পারমাণবিক কমান্ডের ওপর এমন এক নিয়ন্ত্রণ পেলেন, যার কোনো নজির নেই।
এক অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেনারেল, যিনি রোষানলে পড়ার ভয়ে পরিচয় গোপন রেখেছেন—এই সংশোধনীকে ‘বিপর্যয়কর’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি জানান, ‘নৌ ও বিমানবাহিনীর মতো অন্যান্য বাহিনীর মধ্যে ইতিমধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। প্রস্তাবিত এই সংশোধনী প্রতিরক্ষা কাঠামোর কোনো কাজে আসবে না; বরং এটি কেবল একজন ব্যক্তিরই স্বার্থরক্ষা করবে।’
তিনি আরও যোগ করলেন, বেসামরিক সরকারের নজরদারি পুরোপুরি সরিয়ে দিয়ে পারমাণবিক কমান্ডকে এককভাবে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসাটা ‘গভীরভাবে সমস্যাজনক’। প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এই সংশোধনীর পক্ষে ভোট দিয়েছেন। তিনি এসব সমালোচনাকে উড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী রাষ্ট্রেরই অংশ। তারা যদি ভালো কাজ করে, তবে আমরা তাদের সমর্থন করি এবং তাদের পাশে থাকি।’ তিনি আরও বলেন, ‘পার্লামেন্ট ফিল্ড মার্শাল মুনিরকে দায়মুক্তি দিয়েছে। কারণ, তিনি দেশের জন্য ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন। তিনি সর্বেসর্বা হয়ে গেছেন—এটা নিছকই জল্পনা।’
তবে কারও কারও মতে, এই সংশোধনী কেবল একটি দীর্ঘদিনের অঘোষিত ব্যবস্থাকেই আইনি রূপ দিল, যে ব্যবস্থায় সেনাবাহিনীই মূলত দেশ চালায় এবং রাজনীতির কলকাঠি নাড়ে। সেনাপ্রধান হওয়ার পর থেকে মুনিরকেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) ওপর দমনপীড়নের মূল কারিগর হিসেবে দেখা হয়েছে। পাকিস্তানি রাজনীতিতে সামরিক হস্তক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ জানানোর অপরাধে ইমরান খান ও পিটিআইয়ের জ্যেষ্ঠ নেতারা এখন কারাগারে। বর্তমান মন্ত্রিসভার অর্থমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উভয়েই মুনিরের মনোনীত হিসেবে পরিচিত।
কিংস কলেজ লন্ডনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহযোগী অধ্যাপক ওয়াল্টার ল্যাডউইগ জোর দিয়ে বললেন, ‘এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব অত্যন্ত গভীর।’ তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে যদি কখনো ক্ষমতাকে সেনাবাহিনী থেকে সরিয়ে পুনরায় বেসামরিক নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হয়, তবে এই সংশোধনী বাতিল করা হবে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। মুনিরকে সরানো এখন প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি কিংবা তাঁর পূর্বসূরি যেকোনো সেনাপ্রধানকে সরানোর চেয়েও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
বিশ্লেষকেরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, মুনিরের এই নতুন ক্ষমতার সঙ্গে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও জড়িয়ে আছে। পাকিস্তান বর্তমানে দুটি অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদী বিদ্রোহের মোকাবিলা করছে, সেই সঙ্গে প্রতিবেশী ভারত ও আফগানিস্তানের সঙ্গেও বৈরিতা চলছে। তা ছাড়া দেশটি এমন এক তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা সমাধানে তিনি এখনো ব্যর্থ।
আয়াজ মল্লিক বলেন, মুনিরই পাকিস্তানের প্রথম জেনারেল নন, যিনি বছরের পর বছর ক্ষমতা ধরে রাখার পরিকল্পনা করেছেন। দেশের শেষ সামরিক একনায়ক পারভেজ মোশাররফেরও এমন পরিকল্পনা ছিল, যা কয়েক দশক ধরে বিস্তৃত ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যাপক জনরোষের মুখে তাঁর পতন ঘটে। তিনি বলেন, ‘ইতিহাস সাক্ষী, জেনারেলদের এই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাগুলো পাকিস্তানে কখনোই শেষমেশ টেকে না। যদি অর্থের জোগান না থাকে, তবে পুরো সাজানো বাগানই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে।’
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের বর্তমান সংবিধান গৃহীত হয়। আর এর পর থেকেই এই সংবিধানকে সইতে হয়েছে বহু আঘাত। শুরুতে এটি ছিল গণতন্ত্রের দলিল, কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই শুরু হয় অন্তহীন সব সংশোধনী, যার মাধ্যমে একের পর এক সামরিক অভ্যুত্থান আর একনায়কতন্ত্রকে বৈধতা দেওয়া হতে থাকে।
তবু ১৫ বছর ধরে এই সংবিধান পাকিস্তানকে অন্তত ওপরে ওপরে হলেও বেসামরিক শাসনের এক আবরণে মুড়ে রেখেছিল। কিন্তু গত মাসে সেই ছবিটাও পাল্টে গেল। পার্লামেন্টে তড়িঘড়ি করে ২৭তম সংশোধনী পাস হতেই সমালোচক আর বিশ্লেষকেরা একে ‘সাংবিধানিক অভ্যুত্থান’ বলে ধিক্কার জানালেন। তাঁদের মতে, এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের বুকে সিপাহসালারদের আধিপত্য চিরস্থায়ী করা হলো।
পাকিস্তানের পার্লামেন্টে বিরোধী জোট তেহরিক তাহাফুজ আইন-ই-পাকিস্তানের চেয়ারম্যান মেহমুদ খান আচাকজাই সোজাসাপটা বললেন, ‘পাকিস্তানে এখন আর কোনো সংবিধান নেই। বিচার বিভাগ নেই। নেই কোনো সামাজিক চুক্তি। এই সংশোধনী দেশের বিরুদ্ধে এক অমার্জনীয় অপরাধ। ওরা একজন মানুষকে সবার ওপর রাজা বা যেন শাহেনশাহ বানিয়ে বসিয়েছে।’
সবাই বুঝল, এই ২৭তম সংশোধনীর আসল সুবিধাভোগী একজনই। তিনি ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান হিসেবে তিনি এমনিতেই দেশটির সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি ছিলেন। তবে এখন তিনি দেশটির ইতিহাসের অন্যতম শক্তিশালী সিপাহসালারে পরিণত হতে চলেছেন, যার হাতে থাকবে সাবেক সামরিক একনায়কদের মতো অগাধ সুযোগ-সুবিধা।
মুনির কেবল সেনাবাহিনীরই নন, নৌ ও বিমানবাহিনীরও দেখভাল করবেন। তাঁর পাঁচ বছরের মেয়াদ নতুন করে শুরু হবে এবং তা আবারও বাড়ানোর সুযোগ থাকবে। এর মানে, অন্তত আগামী এক দশক তিনি এই পদে থেকে যেতে পারেন, যা এক নজিরবিহীন ঘটনা। তাঁকে ফৌজদারি বিচার থেকেও আজীবনের জন্য দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ, এই সংশোধনী পাকিস্তানের আগে থেকেই কোণঠাসা বিচার বিভাগের ওপর এক সরাসরি আক্রমণ। সুপ্রিম কোর্টের বদলে আসছে নতুন এক সাংবিধানিক আদালত, যার বিচারকদের বেছে নেবে সরকার। প্রতিবাদে বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ বিচারক পদত্যাগ করেছেন। তাঁদের দাবি, নির্বাহী ও সামরিক ক্ষমতার ওপর যেটুকু নিয়ন্ত্রণ বাকি ছিল, সেটাও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের মানব ভূগোলের প্রভাষক এবং পাকিস্তান বিশেষজ্ঞ আয়াজ মালিক বললেন, ‘এটা অন্য মোড়কে সামরিক শাসন বা মার্শাল ল ছাড়া আর কিছুই নয়। পাকিস্তানে অতীতে সরাসরি সামরিক শাসনের সময়ে আমরা ঠিক এমনটাই ঘটতে দেখেছি।’ জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্কও এই সংশোধনীর সমালোচনা করে সতর্ক করলেন। এর ফলে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের মূলনীতির ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, মুনির ঠিক মোক্ষম সময়ে নিজের চালটি চেলেছেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে কারচুপি আর পক্ষপাতের বিস্তর অভিযোগ ওঠার পর পাকিস্তানের বর্তমান জোট সরকারকে সবাই দুর্বল, জনবিচ্ছিন্ন এবং অবৈধ বলে মনে করে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তারা পুরোপুরি মুনিরের সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল—যাকে আয়াজ মালিক ‘মিলিটারি ভেন্টিলেটর’ বলে অভিহিত করেছেন।
এদিকে গত মে মাসে প্রতিবেশী ও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের সঙ্গে সংঘাত শুরু হওয়ার পর মুনির জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। সীমান্তে দুই পক্ষই ড্রোন আর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল। পাকিস্তান কয়েকটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ধ্বংস করার দাবি করার পর মুনির ভারতের বিরুদ্ধে বিজয় ঘোষণা করেন, যার ফলে দেশজুড়ে এক উগ্র দেশপ্রেম আর যুদ্ধজয়ের উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়ে। মালিকের মতে, ভারতের সঙ্গে এই সংঘাত মুনিরের জন্য ছিল রীতিমতো ‘স্বর্গ থেকে পাওয়া উপহার’ বা গডসেন্ড, যা তাঁকে পাঁচ-তারকা জেনারেলে উন্নীত করেছে।
মুনির নিজেকে বিশ্বনেতা হিসেবেও তুলে ধরতে শুরু করেছেন। ভারত ও পাকিস্তানকে যুদ্ধের কিনারা থেকে ফিরিয়ে আনার কথিত ভূমিকার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য পাকিস্তান মনোনীত করার পর ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মুনির নজিরবিহীনভাবে দুটি বৈঠক করেন। হোয়াইট হাউসের দরজা পাকিস্তানের জন্য এক দশক ধরে বন্ধ ছিল। মুনির সেই বরফ গলিয়ে দেশকে আবার আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে এনেছেন—এমনকি ট্রাম্পের ‘প্রিয় ফিল্ড মার্শাল’ খেতাবও জুটেছে তাঁর কপালে। এসব তাঁর অবস্থানকে আরও উঁচুতে নিয়ে গেছে। গত সেপ্টেম্বরে সৌদি আরবের সঙ্গে পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের সময়ও মুনির ছিলেন একদম সামনের সারিতে।
অনেকের মতে, মুনিরের হাতে এখন ঠিক কতটা ক্ষমতা, তা বোঝা যায় ২৭তম সংশোধনী পাসের গতি দেখে। আগের সংশোধনীগুলো নিয়ে পার্লামেন্টে সপ্তাহের পর সপ্তাহ তর্ক-বিতর্ক ও কাটাছেঁড়া চলত। আর এটি? মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সিনেট এবং নিম্নকক্ষে প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সামান্য কিছু পরিবর্তনসহ তরতর করে পাস হয়ে গেল।
ব্রিটিশ থিংকট্যাংক চ্যাথাম হাউসের এশিয়া-প্যাসিফিক প্রোগ্রামের সহযোগী ফেলো ফারজানা শেখ বললেন, ‘বর্তমানে আমাদের এমন এক রাজনৈতিক সরকার রয়েছে যার বৈধতা এতটাই নড়বড়ে যে সেনাবাহিনীর সমর্থন ছাড়া এর আসলে কোনো অস্তিত্বই থাকত না। আর মুনির এই সুযোগটাই পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছেন।’
ফারজানা শেখ জোর দিয়েই বললেন, পাকিস্তানের ইতিহাসজুড়েই দেখা গেছে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের সাময়িক স্বার্থসিদ্ধির জন্য বারবার সেনাবাহিনীকে সুযোগ করে দিয়েছে। তবে তিনি এ-ও যোগ করেন যে ‘কিন্তু যেভাবে দুটি দল নতি স্বীকার করল, তা সত্যিই বিস্ময়কর।’
এর পরিণাম যে ভয়াবহ, সে কথাও মনে করিয়ে দিলেন তিনি। ফারজানা শেখের ভাষায়, ‘এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই যে একটি জবাবদিহিমূলক সরকার কিংবা গণতন্ত্রের পথে উত্তরণের ক্ষেত্রে এটি এক বড়সড় ধাক্কা—হয়তো সবচেয়ে বড় ধাক্কা। এই সাংবিধানিক সংশোধনী মুনিরকে দায়মুক্তির সঙ্গে কাজ করার লাইসেন্স দিয়ে দিল। পরিস্থিতিটা অত্যন্ত বিপজ্জনক।’
তিন বাহিনীর ওপর মুনির যেভাবে একচ্ছত্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছেন, তা নিয়ে সেনাবাহিনীর ভেতরেও গুঞ্জন শুরু হয়েছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারের ওপর তাঁর কর্তৃত্ব নিয়ে উদ্বেগ দানা বাঁধছে। কারও কারও আশঙ্কা, মুনির, যাকে অনেকেই একজন ‘বেপরোয়া খেলোয়াড়’ এবং কট্টর মতাদর্শী হিসেবে চেনেন, বিশেষত ভারতের ব্যাপারে যার অবস্থান বেশ কঠোর, তিনি এখন পারমাণবিক কমান্ডের ওপর এমন এক নিয়ন্ত্রণ পেলেন, যার কোনো নজির নেই।
এক অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেনারেল, যিনি রোষানলে পড়ার ভয়ে পরিচয় গোপন রেখেছেন—এই সংশোধনীকে ‘বিপর্যয়কর’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি জানান, ‘নৌ ও বিমানবাহিনীর মতো অন্যান্য বাহিনীর মধ্যে ইতিমধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। প্রস্তাবিত এই সংশোধনী প্রতিরক্ষা কাঠামোর কোনো কাজে আসবে না; বরং এটি কেবল একজন ব্যক্তিরই স্বার্থরক্ষা করবে।’
তিনি আরও যোগ করলেন, বেসামরিক সরকারের নজরদারি পুরোপুরি সরিয়ে দিয়ে পারমাণবিক কমান্ডকে এককভাবে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসাটা ‘গভীরভাবে সমস্যাজনক’। প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এই সংশোধনীর পক্ষে ভোট দিয়েছেন। তিনি এসব সমালোচনাকে উড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী রাষ্ট্রেরই অংশ। তারা যদি ভালো কাজ করে, তবে আমরা তাদের সমর্থন করি এবং তাদের পাশে থাকি।’ তিনি আরও বলেন, ‘পার্লামেন্ট ফিল্ড মার্শাল মুনিরকে দায়মুক্তি দিয়েছে। কারণ, তিনি দেশের জন্য ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন। তিনি সর্বেসর্বা হয়ে গেছেন—এটা নিছকই জল্পনা।’
তবে কারও কারও মতে, এই সংশোধনী কেবল একটি দীর্ঘদিনের অঘোষিত ব্যবস্থাকেই আইনি রূপ দিল, যে ব্যবস্থায় সেনাবাহিনীই মূলত দেশ চালায় এবং রাজনীতির কলকাঠি নাড়ে। সেনাপ্রধান হওয়ার পর থেকে মুনিরকেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) ওপর দমনপীড়নের মূল কারিগর হিসেবে দেখা হয়েছে। পাকিস্তানি রাজনীতিতে সামরিক হস্তক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ জানানোর অপরাধে ইমরান খান ও পিটিআইয়ের জ্যেষ্ঠ নেতারা এখন কারাগারে। বর্তমান মন্ত্রিসভার অর্থমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উভয়েই মুনিরের মনোনীত হিসেবে পরিচিত।
কিংস কলেজ লন্ডনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহযোগী অধ্যাপক ওয়াল্টার ল্যাডউইগ জোর দিয়ে বললেন, ‘এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব অত্যন্ত গভীর।’ তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে যদি কখনো ক্ষমতাকে সেনাবাহিনী থেকে সরিয়ে পুনরায় বেসামরিক নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হয়, তবে এই সংশোধনী বাতিল করা হবে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। মুনিরকে সরানো এখন প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি কিংবা তাঁর পূর্বসূরি যেকোনো সেনাপ্রধানকে সরানোর চেয়েও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
বিশ্লেষকেরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, মুনিরের এই নতুন ক্ষমতার সঙ্গে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও জড়িয়ে আছে। পাকিস্তান বর্তমানে দুটি অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদী বিদ্রোহের মোকাবিলা করছে, সেই সঙ্গে প্রতিবেশী ভারত ও আফগানিস্তানের সঙ্গেও বৈরিতা চলছে। তা ছাড়া দেশটি এমন এক তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা সমাধানে তিনি এখনো ব্যর্থ।
আয়াজ মল্লিক বলেন, মুনিরই পাকিস্তানের প্রথম জেনারেল নন, যিনি বছরের পর বছর ক্ষমতা ধরে রাখার পরিকল্পনা করেছেন। দেশের শেষ সামরিক একনায়ক পারভেজ মোশাররফেরও এমন পরিকল্পনা ছিল, যা কয়েক দশক ধরে বিস্তৃত ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যাপক জনরোষের মুখে তাঁর পতন ঘটে। তিনি বলেন, ‘ইতিহাস সাক্ষী, জেনারেলদের এই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাগুলো পাকিস্তানে কখনোই শেষমেশ টেকে না। যদি অর্থের জোগান না থাকে, তবে পুরো সাজানো বাগানই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে।’
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
৮ ঘণ্টা আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১০ ঘণ্টা আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
১৪ ঘণ্টা আগে
জেলবন্দী পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ঘিরে রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। তাঁর পরিবার এখন ‘প্রুফ অব লাইফ’ দাবি করছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতিতে উত্তরণের সেই যাত্রা ও ব্যক্তিগত স্মৃতি তুলে ধরেছেন ভারতের কংগ্রেস নেতা, কূটনীতিক ও লেখক শশী থারুর।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের বর্তমান সংবিধান গৃহীত হয়। আর এর পর থেকেই এই সংবিধানকে সইতে হয়েছে বহু আঘাত। শুরুতে এটি ছিল গণতন্ত্রের দলিল, কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই শুরু হয় অন্তহীন সব সংশোধনী, যার মাধ্যমে একের পর এক সামরিক অভ্যুত্থান আর একনায়কতন্ত্রকে বৈধতা দেওয়া হতে থাকে।
২১ ঘণ্টা আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১০ ঘণ্টা আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
১৪ ঘণ্টা আগে
জেলবন্দী পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ঘিরে রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। তাঁর পরিবার এখন ‘প্রুফ অব লাইফ’ দাবি করছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতিতে উত্তরণের সেই যাত্রা ও ব্যক্তিগত স্মৃতি তুলে ধরেছেন ভারতের কংগ্রেস নেতা, কূটনীতিক ও লেখক শশী থারুর।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের বর্তমান সংবিধান গৃহীত হয়। আর এর পর থেকেই এই সংবিধানকে সইতে হয়েছে বহু আঘাত। শুরুতে এটি ছিল গণতন্ত্রের দলিল, কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই শুরু হয় অন্তহীন সব সংশোধনী, যার মাধ্যমে একের পর এক সামরিক অভ্যুত্থান আর একনায়কতন্ত্রকে বৈধতা দেওয়া হতে থাকে।
২১ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
৮ ঘণ্টা আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
১৪ ঘণ্টা আগে
জেলবন্দী পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ঘিরে রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। তাঁর পরিবার এখন ‘প্রুফ অব লাইফ’ দাবি করছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতিতে উত্তরণের সেই যাত্রা ও ব্যক্তিগত স্মৃতি তুলে ধরেছেন ভারতের কংগ্রেস নেতা, কূটনীতিক ও লেখক শশী থারুর।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের বর্তমান সংবিধান গৃহীত হয়। আর এর পর থেকেই এই সংবিধানকে সইতে হয়েছে বহু আঘাত। শুরুতে এটি ছিল গণতন্ত্রের দলিল, কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই শুরু হয় অন্তহীন সব সংশোধনী, যার মাধ্যমে একের পর এক সামরিক অভ্যুত্থান আর একনায়কতন্ত্রকে বৈধতা দেওয়া হতে থাকে।
২১ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
৮ ঘণ্টা আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১০ ঘণ্টা আগে
জেলবন্দী পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ঘিরে রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। তাঁর পরিবার এখন ‘প্রুফ অব লাইফ’ দাবি করছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতিতে উত্তরণের সেই যাত্রা ও ব্যক্তিগত স্মৃতি তুলে ধরেছেন ভারতের কংগ্রেস নেতা, কূটনীতিক ও লেখক শশী থারুর।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জেলবন্দী পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ঘিরে রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। তাঁর পরিবার এখন ‘প্রুফ অব লাইফ’ দাবি করছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতিতে উত্তরণের সেই যাত্রা ও ব্যক্তিগত স্মৃতি তুলে ধরেছেন ভারতের কংগ্রেস নেতা, কূটনীতিক ও লেখক শশী থারুর।
ইমরান খান একসময় পাকিস্তানের সংস্কার ও জাতীয় পুনর্জাগরণের স্বপ্ন হিসেবে বিবেচিত হতেন। সেই মানুষটাই ২০২৩ সাল থেকে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে বন্দী। ৭২ বছর বয়সী এই নেতাকে ঘিরে এখন গুজব ছড়িয়েছে—তাঁকে ‘হত্যা’ করা হয়েছে। তাঁর ছেলে কাসিম খান এখন বাবার জীবিত থাকার প্রমাণ ও মুক্তি দাবি করেছেন। এসব গুজব সত্য হলে এটি হবে এমন একটি জীবনের করুণ পরিসমাপ্তি, যে জীবন আন্তর্জাতিক অঙ্গনের খ্যাতি, জাতীয় নেতৃত্ব এবং শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক নির্যাতনের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছিল।
১৯৫২ সালে লাহোরে সম্ভ্রান্ত পশতু পরিবারে জন্ম ইমরানের। লাহোরের অ্যাচিসন কলেজ, রয়্যাল গ্রামার স্কুল উর্সেস্টার ও অক্সফোর্ডের কেবল কলেজে শিক্ষাগ্রহণ। ৭০-এর দশকের শুরুতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ এবং ১৯৯২ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ঐতিহাসিক শিরোপা জয় তাঁকে ক্রিকেট-পুরাণের অমর নায়ক বানিয়ে দেয়।
কৌশল, দূরদর্শিতা ও দলকে এক সুতায় গেঁথে রাখার ক্ষমতা তাঁকে দলের অভ্যন্তরীণ বিভাজনের মধ্যেও অসামান্য নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
ক্রিকেট থেকে জনসেবায়
ক্রিকেট ছাড়ার পর তিনি গড়ে তোলেন শওকত খানম ক্যানসার হাসপাতাল। এটি তাঁর মায়ের স্মৃতিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের প্রথম বৃহৎ ক্যানসার হাসপাতাল। সাধারণ মানুষের দানে পরিচালিত এই হাসপাতাল তাঁর জনপ্রিয়তা ও জন-আস্থারই প্রমাণ।
কিন্তু ইমরানের জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়টি পুরোপুরি রাজনীতিকে ঘিরে। ১৯৯৬ সালে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রতিষ্ঠা করলেও দলটি দীর্ঘ সময় প্রান্তিক পর্যায়ে ছিল। ২০১০ সালের পর থেকে তাঁর দুর্নীতিবিরোধী বার্তা, জাতীয় মর্যাদার প্রতিশ্রুতি এবং ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণা দেশজুড়ে তরুণদের মধ্যে অভূতপূর্ব সাড়া তোলে।
২০১৮ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু ‘নয়া পাকিস্তানের’ স্বপ্ন দেখালেও তাঁর শাসনকালজুড়ে ছিল অর্থনৈতিক অস্থিরতা, কূটনৈতিক চাপ ও সেনাবাহিনীর শক্তিশালী প্রভাব—যা শেষ পর্যন্ত তাঁর পতনের কারণ হয়।
শশী থারুর তাঁর জীবনের তিনটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ইমরান খানকে দেখেছেন।
প্রথম পরিচয়—থারুর যখন জাতিসংঘে কর্মরত, তখন নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে ইমরান খানের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। থারুর বলেন, ইমরানের সহজ-সরল আচরণ ও সবার সঙ্গে মিশে যাওয়ার ক্ষমতা তাঁকে মুগ্ধ করে।
দ্বিতীয় পর্যায়—ইমরান তখন অবসরপ্রাপ্ত ক্রিকেটার হিসেবে নিয়মিত ভারতে আসতেন, বিভিন্ন টেলিভিশনে টক শোতে অংশ নিতেন। থারুরের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা হতো। থারুর বলেন, ইমরান ছিলেন স্পষ্টভাষী, বুদ্ধিদীপ্ত এবং প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করতে আগ্রহী। ভারত–পাকিস্তান উত্তেজনা সত্ত্বেও ভারতে তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল অনেক, বিশেষ করে নারীদের মধ্যে।
ইমরান খানের সঙ্গে শশী থারুরের সবচেয়ে স্মরণীয় সাক্ষাৎটি হয় ২০১৭ সালে ইসলামাবাদে এশিয়ান পার্লামেন্টারি সম্মেলনে। ইমরান তখন বিরোধী দলের নেতা। তিনি থারুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান। নিরাপত্তার অজুহাতে পাকিস্তান সরকার থারুরকে হোটেলের বাইরে যেতে দেয়নি। তখন ইমরান নিজেই ছয়জন সহকর্মী নিয়ে হোটেলে যান।
থারুর বলেন, ‘আমাদের সাক্ষাৎটি রাজনৈতিক ছিল না—পুরোটা ছিল ইতিহাস নিয়ে। ইমরান আমার ‘‘An Era of Darkness’’ বই পুরোটা পড়েছেন। সেখান থেকে কিছু উদ্ধৃতি টেনে তিনি আমাকে প্রশ্ন করেন, মতামত দেন, উপমহাদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য নিয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি জানান। ইমরান আমাকে পাকিস্তানে এসে ইতিহাস নিয়ে বক্তৃতা দেওয়ার আমন্ত্রণও জানান। তবে তা আর বাস্তবায়িত হয়নি।’
থারুর আরও বলেন, সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ক্ষমতায় এলেও ইমরান ছিলেন বৈপরীত্যের প্রতীক। ভারতের সঙ্গে শান্তি চান, কিন্তু সামরিক গোয়েন্দাব্যবস্থার সীমাবদ্ধতায় বাধাপ্রাপ্ত হন। দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান নিলেও নিজেই অভিযোগের মুখে পড়েন। অর্থনীতি সামাল দিতে গিয়ে চাপে পড়েন।
২০২২ সালে সেনা হস্তক্ষেপে ক্ষুব্ধ হয়ে ইমরান ‘ডিপ স্টেট’-এর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। সেনাবাহিনী তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট সংগঠিত করে। এরপর শুরু হয় ধারাবাহিক মামলা, গ্রেপ্তার ও রাজনৈতিক অস্থিরতা। ২০২৩ সালে তিনি কারাবন্দী হন। অনেকের মতো থারুরও মনে করেন, ওই মামলার রায় ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে না দেওয়া, জেলের পরিবেশ, দলের সঙ্গে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন—এসব তাঁর বিচ্ছিন্নতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। বোনেরা জেলের বাইরে বিক্ষোভ করলে পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ ওঠে।
এখন তাঁর মৃত্যু নিয়ে গুজব ছড়িয়েছে। কেউ বলছে, সামরিক গোয়েন্দা মহলের ভেতরকার একটি অংশ তাঁকে হত্যা করেছে। এ বিষয়ে কোনো সরকারি বক্তব্য নেই। তবে এই নীরবতা রহস্য আরও গভীর করছে। যদি এটা সত্য হয়, তবে এটি পাকিস্তানের রাজনীতির ইতিহাসে আরও এক অন্ধকার অধ্যায় হয়ে থাকবে।
থারুর মনে করেন, ইমরানের জীবনের পরিসমাপ্তি পাকিস্তানের আরও এক জনপ্রিয় নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর পরিণতিরই প্রতিধ্বনি। তিনিও ভেবেছিলেন, সামরিক প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বে যেতে পারবেন। কিন্তু এর জন্য তাঁকে জীবন দিতে হয়েছিল।
থারুর জানান, তাঁর কাছে ইমরান থেকে যাবেন সেই মানুষ হিসেবে—যিনি ইসলামাবাদের হোটেলে এসে এক ঘণ্টা ধরে ইতিহাস নিয়ে কথা বলেছিলেন এবং রাজনীতির বাইরে একজন চিন্তাশীল, আবেগপ্রবণ ও দৃঢ় বিশ্বাসী মানুষ হিসেবে।

জেলবন্দী পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ঘিরে রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। তাঁর পরিবার এখন ‘প্রুফ অব লাইফ’ দাবি করছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতিতে উত্তরণের সেই যাত্রা ও ব্যক্তিগত স্মৃতি তুলে ধরেছেন ভারতের কংগ্রেস নেতা, কূটনীতিক ও লেখক শশী থারুর।
ইমরান খান একসময় পাকিস্তানের সংস্কার ও জাতীয় পুনর্জাগরণের স্বপ্ন হিসেবে বিবেচিত হতেন। সেই মানুষটাই ২০২৩ সাল থেকে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে বন্দী। ৭২ বছর বয়সী এই নেতাকে ঘিরে এখন গুজব ছড়িয়েছে—তাঁকে ‘হত্যা’ করা হয়েছে। তাঁর ছেলে কাসিম খান এখন বাবার জীবিত থাকার প্রমাণ ও মুক্তি দাবি করেছেন। এসব গুজব সত্য হলে এটি হবে এমন একটি জীবনের করুণ পরিসমাপ্তি, যে জীবন আন্তর্জাতিক অঙ্গনের খ্যাতি, জাতীয় নেতৃত্ব এবং শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক নির্যাতনের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছিল।
১৯৫২ সালে লাহোরে সম্ভ্রান্ত পশতু পরিবারে জন্ম ইমরানের। লাহোরের অ্যাচিসন কলেজ, রয়্যাল গ্রামার স্কুল উর্সেস্টার ও অক্সফোর্ডের কেবল কলেজে শিক্ষাগ্রহণ। ৭০-এর দশকের শুরুতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ এবং ১৯৯২ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ঐতিহাসিক শিরোপা জয় তাঁকে ক্রিকেট-পুরাণের অমর নায়ক বানিয়ে দেয়।
কৌশল, দূরদর্শিতা ও দলকে এক সুতায় গেঁথে রাখার ক্ষমতা তাঁকে দলের অভ্যন্তরীণ বিভাজনের মধ্যেও অসামান্য নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
ক্রিকেট থেকে জনসেবায়
ক্রিকেট ছাড়ার পর তিনি গড়ে তোলেন শওকত খানম ক্যানসার হাসপাতাল। এটি তাঁর মায়ের স্মৃতিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের প্রথম বৃহৎ ক্যানসার হাসপাতাল। সাধারণ মানুষের দানে পরিচালিত এই হাসপাতাল তাঁর জনপ্রিয়তা ও জন-আস্থারই প্রমাণ।
কিন্তু ইমরানের জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়টি পুরোপুরি রাজনীতিকে ঘিরে। ১৯৯৬ সালে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রতিষ্ঠা করলেও দলটি দীর্ঘ সময় প্রান্তিক পর্যায়ে ছিল। ২০১০ সালের পর থেকে তাঁর দুর্নীতিবিরোধী বার্তা, জাতীয় মর্যাদার প্রতিশ্রুতি এবং ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণা দেশজুড়ে তরুণদের মধ্যে অভূতপূর্ব সাড়া তোলে।
২০১৮ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু ‘নয়া পাকিস্তানের’ স্বপ্ন দেখালেও তাঁর শাসনকালজুড়ে ছিল অর্থনৈতিক অস্থিরতা, কূটনৈতিক চাপ ও সেনাবাহিনীর শক্তিশালী প্রভাব—যা শেষ পর্যন্ত তাঁর পতনের কারণ হয়।
শশী থারুর তাঁর জীবনের তিনটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ইমরান খানকে দেখেছেন।
প্রথম পরিচয়—থারুর যখন জাতিসংঘে কর্মরত, তখন নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে ইমরান খানের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। থারুর বলেন, ইমরানের সহজ-সরল আচরণ ও সবার সঙ্গে মিশে যাওয়ার ক্ষমতা তাঁকে মুগ্ধ করে।
দ্বিতীয় পর্যায়—ইমরান তখন অবসরপ্রাপ্ত ক্রিকেটার হিসেবে নিয়মিত ভারতে আসতেন, বিভিন্ন টেলিভিশনে টক শোতে অংশ নিতেন। থারুরের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা হতো। থারুর বলেন, ইমরান ছিলেন স্পষ্টভাষী, বুদ্ধিদীপ্ত এবং প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করতে আগ্রহী। ভারত–পাকিস্তান উত্তেজনা সত্ত্বেও ভারতে তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল অনেক, বিশেষ করে নারীদের মধ্যে।
ইমরান খানের সঙ্গে শশী থারুরের সবচেয়ে স্মরণীয় সাক্ষাৎটি হয় ২০১৭ সালে ইসলামাবাদে এশিয়ান পার্লামেন্টারি সম্মেলনে। ইমরান তখন বিরোধী দলের নেতা। তিনি থারুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান। নিরাপত্তার অজুহাতে পাকিস্তান সরকার থারুরকে হোটেলের বাইরে যেতে দেয়নি। তখন ইমরান নিজেই ছয়জন সহকর্মী নিয়ে হোটেলে যান।
থারুর বলেন, ‘আমাদের সাক্ষাৎটি রাজনৈতিক ছিল না—পুরোটা ছিল ইতিহাস নিয়ে। ইমরান আমার ‘‘An Era of Darkness’’ বই পুরোটা পড়েছেন। সেখান থেকে কিছু উদ্ধৃতি টেনে তিনি আমাকে প্রশ্ন করেন, মতামত দেন, উপমহাদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য নিয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি জানান। ইমরান আমাকে পাকিস্তানে এসে ইতিহাস নিয়ে বক্তৃতা দেওয়ার আমন্ত্রণও জানান। তবে তা আর বাস্তবায়িত হয়নি।’
থারুর আরও বলেন, সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ক্ষমতায় এলেও ইমরান ছিলেন বৈপরীত্যের প্রতীক। ভারতের সঙ্গে শান্তি চান, কিন্তু সামরিক গোয়েন্দাব্যবস্থার সীমাবদ্ধতায় বাধাপ্রাপ্ত হন। দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান নিলেও নিজেই অভিযোগের মুখে পড়েন। অর্থনীতি সামাল দিতে গিয়ে চাপে পড়েন।
২০২২ সালে সেনা হস্তক্ষেপে ক্ষুব্ধ হয়ে ইমরান ‘ডিপ স্টেট’-এর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। সেনাবাহিনী তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট সংগঠিত করে। এরপর শুরু হয় ধারাবাহিক মামলা, গ্রেপ্তার ও রাজনৈতিক অস্থিরতা। ২০২৩ সালে তিনি কারাবন্দী হন। অনেকের মতো থারুরও মনে করেন, ওই মামলার রায় ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে না দেওয়া, জেলের পরিবেশ, দলের সঙ্গে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন—এসব তাঁর বিচ্ছিন্নতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। বোনেরা জেলের বাইরে বিক্ষোভ করলে পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ ওঠে।
এখন তাঁর মৃত্যু নিয়ে গুজব ছড়িয়েছে। কেউ বলছে, সামরিক গোয়েন্দা মহলের ভেতরকার একটি অংশ তাঁকে হত্যা করেছে। এ বিষয়ে কোনো সরকারি বক্তব্য নেই। তবে এই নীরবতা রহস্য আরও গভীর করছে। যদি এটা সত্য হয়, তবে এটি পাকিস্তানের রাজনীতির ইতিহাসে আরও এক অন্ধকার অধ্যায় হয়ে থাকবে।
থারুর মনে করেন, ইমরানের জীবনের পরিসমাপ্তি পাকিস্তানের আরও এক জনপ্রিয় নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর পরিণতিরই প্রতিধ্বনি। তিনিও ভেবেছিলেন, সামরিক প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বে যেতে পারবেন। কিন্তু এর জন্য তাঁকে জীবন দিতে হয়েছিল।
থারুর জানান, তাঁর কাছে ইমরান থেকে যাবেন সেই মানুষ হিসেবে—যিনি ইসলামাবাদের হোটেলে এসে এক ঘণ্টা ধরে ইতিহাস নিয়ে কথা বলেছিলেন এবং রাজনীতির বাইরে একজন চিন্তাশীল, আবেগপ্রবণ ও দৃঢ় বিশ্বাসী মানুষ হিসেবে।

১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের বর্তমান সংবিধান গৃহীত হয়। আর এর পর থেকেই এই সংবিধানকে সইতে হয়েছে বহু আঘাত। শুরুতে এটি ছিল গণতন্ত্রের দলিল, কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই শুরু হয় অন্তহীন সব সংশোধনী, যার মাধ্যমে একের পর এক সামরিক অভ্যুত্থান আর একনায়কতন্ত্রকে বৈধতা দেওয়া হতে থাকে।
২১ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
৮ ঘণ্টা আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১০ ঘণ্টা আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
১৪ ঘণ্টা আগে