অনলাইন ডেস্ক
১৯১৬ সালের ১৬ মে, ইউরোপের দুই বড় শক্তির মাঝারি সারির দুই কূটনীতিক ব্রিটিশ নাগরিক স্যার মার্ক সাইকস এবং ফরাসি ফ্রাঁসোয়া জর্জেস-পিকো একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তি করা হয়েছিল মূলত মধ্যপ্রাচ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে ইউরোপীয় শক্তিগুলোর মধ্যে ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য। ওপরে প্রদর্শিত মানচিত্রটিই সাইকস ও পিকোর স্বাক্ষরিত মানচিত্র। এই দুই কূটনীতিক কীভাবে তৎকালীন ক্ষয়িষ্ণু অটোমান (উসমানীয়) সাম্রাজ্যকে ফরাসি ও ব্রিটিশ প্রভাববলয়ে বিভক্ত করেছিলেন, তার স্পষ্ট চিত্র আছে এতে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেন বিশাল ভূখণ্ডের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল, যার মধ্যে ছিল আজকের ইরাক, জর্ডানের বেশির ভাগ অংশ এবং ইসরায়েলের কিছু এলাকা। অন্যদিকে ফ্রান্সের পরিকল্পনা ছিল লেভান্ত উপকূলের (ভূমধ্যসাগরের পূর্ব উপকূল) বেশির ভাগ অংশ, তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চল এবং অটোমান সাম্রাজ্যের জনবহুল এলাকা আলেপ্পো (বর্তমানে সিরিয়ায় অবস্থিত) ও মসুলের (বর্তমানে ইরাকে অবস্থিত) ওপর কর্তৃত্ব স্থাপন করা। এই গোপন চুক্তির আওতায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অন্যান্য মিত্রশক্তি; যেমন ইতালি ও রাশিয়াও তুরস্কের কিছু অংশের ওপর নিজেদের দাবি জানিয়েছিল। রুশদের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা ছিল ইস্তাম্বুল শাসন করা এবং একসময়ের বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যের মহান রাজধানীতে অর্থোডক্স চার্চের প্রাধান্য পুনরুদ্ধার করা।
তবে সাইকস-পিকো পরিকল্পনাটি বাস্তবে রূপ নেয়নি। বলশেভিক বিপ্লবের পর সোভিয়েত সূত্রগুলো এই চুক্তির নথিপত্র প্রকাশ করলে এর অস্তিত্ব জনসমক্ষে আসে। অটোমান সাম্রাজ্যের পতন, পরবর্তী চুক্তি এবং ঔপনিবেশিক স্বার্থের পরিবর্তন—সবকিছু মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত এই অঞ্চলের মানচিত্র কূটনীতিক জুটির ১৯১৬ সালের প্রথম চুক্তিতে যেভাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, তার চেয়ে অনেক আলাদা রূপ নেয়, যা দ্য ইকোনমিস্ট প্রকাশিত এক গ্রাফে দেখানো হয়েছে।
তবে এক অর্থে ওই মানচিত্রেই এক শতাব্দী ধরে চলতে থাকা সংকট ও অচলাবস্থার নকশা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর স্বাধীন আরব জাতির আকাঙ্ক্ষাকে প্রথমে উৎসাহিত করা হয় পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে এবং পরে তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়। ব্রিটিশরা শেষ পর্যন্ত ইরাক ও জর্ডানে নতুন রাজা বসায়, তারা ফিলিস্তিনিদের তীব্র ক্ষোভের মুখেও জায়নবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াও দ্রুততর করে। ফরাসি ঔপনিবেশিক পরিকল্পনাকারীরা আধুনিক সিরিয়া ও লেবানন প্রতিষ্ঠার সময় সাম্প্রদায়িক বিভাজন আরও বাড়িয়ে তোলে এবং কুর্দিরা একটি রাষ্ট্রবিহীন জাতিগত সংখ্যালঘু হিসেবে উপেক্ষিত থেকে যায়।
যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই অঞ্চলের রাজনৈতিক যে সীমারেখা ছিল, তার সঙ্গে ঔপনিবেশিকদের টানা রেখাগুলো পুরোপুরি মেলেনি, তবু ঔপনিবেশিক শক্তির অলিন্দে রচিত সাইকস-পিকো চুক্তি আরব বিশ্বের অনেকের মনে আরও অনেক বড় কিছুর প্রতীক হয়ে উঠেছিল। এই বিষয়ে ‘আ লাইন ইন দ্য স্যান্ড: ব্রিটেন, ফ্রান্স অ্যান্ড দ্য স্ট্রাগল দ্যাট শেপড দ্য মিডল ইস্ট’ গ্রন্থের লেখক জেমস বার বলেন, ‘যুদ্ধপরবর্তী (প্রথম বিশ্বযুদ্ধ) মীমাংসার ফলে সৃষ্ট বিশ্বাসঘাতকতার অনুভূতিই শুধু নয়, বরং বিদেশি হস্তক্ষেপের কারণে এই অঞ্চলে যে দুর্বলতা সৃষ্টি হয়, মূলত তারই সংক্ষিপ্ত রূপ সাইকস-পিকো চুক্তি।’
আরব জনতুষ্টিবাদী নেতারা তাঁদের জাতীয়তাবাদকে যৌক্তিকভাবে পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভের ভিত্তিতে চাগিয়ে তুলেছিলেন। কারণ, পশ্চিমা ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলো কয়েক দশক ধরে এই অঞ্চলের বিষয়াবলিতে নিয়ন্ত্রণ ও হস্তক্ষেপ করে আসছিল এবং আজও যাঁরা মধ্যপ্রাচ্যকে নতুন করে গড়তে চান, তাঁরা চুক্তির আপাতকৃত্রিমতাকে এক নতুন অচলাবস্থা তৈরির ভিত্তি হিসেবে মনে করেন।
ইরাকের ইরবিল প্রদেশের জাতিগত কুর্দি এবং সেখানকার সাবেক গভর্নর নাউজাদ হাদী মাওলুদ ‘দ্য নিউ ইয়র্কার’-এর রবিন রাইটকে বলেন, ‘সাইকস-পিকো চুক্তি এবং এর ফলে সৃষ্ট সব সমস্যার কারণে শত শত মানুষ নিহত হয়েছে। এটি ইতিহাসের গতিপথ এবং প্রকৃতি পরিবর্তন করেছে।’ ইরাকের কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকারের আরেক শীর্ষ কর্মকর্তাও এক টুইটে এই একই সুর প্রতিধ্বনিত করেন।
যাহোক, সাম্প্রতিক সময়ে কথিত সাইকস-পিকো চুক্তির ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের জন্য উর্বর প্রচারণার হাতিয়ার হয়ে ওঠে। ২০১৪ সালে গোষ্ঠীটি অনলাইনে এক প্রচারণামূলক ভিডিও পোস্ট করে, যেখানে তাদের সদস্যদের সিরিয়া ও ইরাকের মরুভূমির সীমান্তে একটি ধূলিময় প্রাচীর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিতে দেখা যায়। তারা ঘোষণা করে, তারা সাইকস-পিকোর ইতিহাস ‘ধ্বংস’ করছে।
তবে এক শ বছর পুরোনো ঔপনিবেশিক চুক্তিকে মধ্যপ্রাচ্য সংকটের ‘আদি পাপ’ হিসেবে দেখানো একদিকে যেমন সুবিধাজনক, তেমনই কিছুটা সরলও বটে। এটি অটোমান সাম্রাজ্যের ভূমি ভাগাভাগির আগের বহুত্ববাদী সমাজের ইতিহাস এবং পরবর্তী দশকগুলোতে আরব শাসকদের বহু বছরের কুশাসনের বিষয়টি উপেক্ষা করে। এই কুশাসনই সিরিয়া ও ইরাকের মতো দেশগুলোতে বর্তমানে বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক বিভেদকে উসকে দিয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের সংকট নিয়ে ‘পশ্চিমা বিশ্বের ভুল নিয়ে যা বলা হয়, তা যথেষ্ট সত্য, তবে রাষ্ট্রগুলোর নিজেদের ব্যর্থতার আত্মসমালোচনা তাতে অনুপস্থিত’—বলে মন্তব্য করেন ওয়াশিংটন পোস্ট ও নিউইয়র্ক টাইমস-এর সাংবাদিক অ্যান্থনি শাদিদ। ২০১১ সালে তিনি এই মন্তব্য করেন। সে সময় স্বৈরাচারী শাসন ও কপট রাজনীতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়া আরব রাষ্ট্রগুলোর পুরোনো ব্যবস্থা অবশেষে ভেঙে পড়ছে বলে মনে হচ্ছিল; যদিও শেষ পর্যন্ত আসলে তা হয়নি।
শাদিদ লিখেছিলেন, ‘রাষ্ট্রগুলো বহুত্ববাদ এবং সর্বজনীন নাগরিকত্বের বোধ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। দুর্বল শাসনব্যবস্থা সুন্নি, শিয়া, খ্রিষ্টান ইত্যাদি সংকীর্ণ পরিচয়বাদী রাজনীতিকে উসকে দিয়েছে।’ মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতার উৎসের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ঔপনিবেশিক ইতিহাসের সঙ্গে এসব সমস্যার সম্পর্ক সামান্যই। তিনি বলেন, ‘আরও স্পষ্টভাবে বলতে গেলে, বহু শিক্ষিত তরুণ-যুবক হতাশ। রাষ্ট্রের দেওয়া মৌলিক সুবিধা হয়তো তাদের আছে, কিন্তু কোনো ভবিষ্যৎ নেই, সেই পুরোনো ধারণা—আগামীকাল গতকালের চেয়ে ভালো হবে—সেটিও অনুপস্থিত।’
তা ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক গবেষক স্টিভেন কুক ও আমর লেহেতা ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনে লিখেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের সীমান্ত ‘কোনো ফাঁকা মানচিত্রে খেয়ালখুশিমতো টানা রেখা নয়’ বরং এগুলো আগের অটোমান প্রশাসনিক ইউনিটগুলোকে প্রতিফলিত করে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক চুক্তি ও আলোচনার ফলস্বরূপ এটি তৈরি হয়েছে। পুরোনো ঘটনাগুলো ছিল এমন একটি প্রক্রিয়া, যা মধ্যপ্রাচ্যের বাইরেও অসংখ্য সীমান্তকে সংজ্ঞায়িত করেছে। আর সাইকস-পিকো চুক্তির আলোচনার পর যে দেশগুলো তৈরি হয়েছে, সেগুলোকে মানচিত্র থেকে সহজে মুছে ফেলা যায় না।
স্টিভেন কুক ও আমর লেহেতা বলেন, ‘গত এক শ বছরে এই সীমান্তগুলো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে—যেমন মিসর, ইরান বা এমনকি ইরাক—এগুলো এমন ভূমিকে সংজ্ঞায়িত করেছে, যা দীর্ঘকাল ধরে মূলত সুসংহত সাংস্কৃতিক পরিচয়ের আবাসস্থল ছিল, যা আধুনিক যুগের জন্য অর্থপূর্ণ। অন্যান্য নতুন সত্তা—যেমন সৌদি আরব এবং জর্ডান—গত শতাব্দীতে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে। যদিও কয়েক শতাব্দী আগে কেউ জর্ডানের পরিচয়ের কথা ভাবেনি, এখন একটি জাতি বিদ্যমান এবং এর আঞ্চলিক অখণ্ডতা জর্ডানের জনগণের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’
কুক এবং লেহেতা উপসংহারে বলেছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে আজ যে সংঘাতগুলো চলছে, সেগুলো আসলে সীমান্তের বৈধতা বা সিরিয়া, ইরাক বা লিবিয়া নামক স্থানের বৈধতা নিয়ে নয়। বরং এই দেশগুলোর অভ্যন্তরে সংঘাতের উৎস হলো কারা তাদের শাসন করার অধিকার রাখে।’ সেই তিক্ত প্রতিযোগিতার উত্তর ১০০ বছর আগে আঁকা মানচিত্রের রেখায় খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ওয়াশিংটন পোস্টে লিখিত ঈশান থারুরের নিবন্ধ থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
১৯১৬ সালের ১৬ মে, ইউরোপের দুই বড় শক্তির মাঝারি সারির দুই কূটনীতিক ব্রিটিশ নাগরিক স্যার মার্ক সাইকস এবং ফরাসি ফ্রাঁসোয়া জর্জেস-পিকো একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তি করা হয়েছিল মূলত মধ্যপ্রাচ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে ইউরোপীয় শক্তিগুলোর মধ্যে ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য। ওপরে প্রদর্শিত মানচিত্রটিই সাইকস ও পিকোর স্বাক্ষরিত মানচিত্র। এই দুই কূটনীতিক কীভাবে তৎকালীন ক্ষয়িষ্ণু অটোমান (উসমানীয়) সাম্রাজ্যকে ফরাসি ও ব্রিটিশ প্রভাববলয়ে বিভক্ত করেছিলেন, তার স্পষ্ট চিত্র আছে এতে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেন বিশাল ভূখণ্ডের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল, যার মধ্যে ছিল আজকের ইরাক, জর্ডানের বেশির ভাগ অংশ এবং ইসরায়েলের কিছু এলাকা। অন্যদিকে ফ্রান্সের পরিকল্পনা ছিল লেভান্ত উপকূলের (ভূমধ্যসাগরের পূর্ব উপকূল) বেশির ভাগ অংশ, তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চল এবং অটোমান সাম্রাজ্যের জনবহুল এলাকা আলেপ্পো (বর্তমানে সিরিয়ায় অবস্থিত) ও মসুলের (বর্তমানে ইরাকে অবস্থিত) ওপর কর্তৃত্ব স্থাপন করা। এই গোপন চুক্তির আওতায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অন্যান্য মিত্রশক্তি; যেমন ইতালি ও রাশিয়াও তুরস্কের কিছু অংশের ওপর নিজেদের দাবি জানিয়েছিল। রুশদের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা ছিল ইস্তাম্বুল শাসন করা এবং একসময়ের বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যের মহান রাজধানীতে অর্থোডক্স চার্চের প্রাধান্য পুনরুদ্ধার করা।
তবে সাইকস-পিকো পরিকল্পনাটি বাস্তবে রূপ নেয়নি। বলশেভিক বিপ্লবের পর সোভিয়েত সূত্রগুলো এই চুক্তির নথিপত্র প্রকাশ করলে এর অস্তিত্ব জনসমক্ষে আসে। অটোমান সাম্রাজ্যের পতন, পরবর্তী চুক্তি এবং ঔপনিবেশিক স্বার্থের পরিবর্তন—সবকিছু মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত এই অঞ্চলের মানচিত্র কূটনীতিক জুটির ১৯১৬ সালের প্রথম চুক্তিতে যেভাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, তার চেয়ে অনেক আলাদা রূপ নেয়, যা দ্য ইকোনমিস্ট প্রকাশিত এক গ্রাফে দেখানো হয়েছে।
তবে এক অর্থে ওই মানচিত্রেই এক শতাব্দী ধরে চলতে থাকা সংকট ও অচলাবস্থার নকশা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর স্বাধীন আরব জাতির আকাঙ্ক্ষাকে প্রথমে উৎসাহিত করা হয় পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে এবং পরে তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়। ব্রিটিশরা শেষ পর্যন্ত ইরাক ও জর্ডানে নতুন রাজা বসায়, তারা ফিলিস্তিনিদের তীব্র ক্ষোভের মুখেও জায়নবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াও দ্রুততর করে। ফরাসি ঔপনিবেশিক পরিকল্পনাকারীরা আধুনিক সিরিয়া ও লেবানন প্রতিষ্ঠার সময় সাম্প্রদায়িক বিভাজন আরও বাড়িয়ে তোলে এবং কুর্দিরা একটি রাষ্ট্রবিহীন জাতিগত সংখ্যালঘু হিসেবে উপেক্ষিত থেকে যায়।
যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই অঞ্চলের রাজনৈতিক যে সীমারেখা ছিল, তার সঙ্গে ঔপনিবেশিকদের টানা রেখাগুলো পুরোপুরি মেলেনি, তবু ঔপনিবেশিক শক্তির অলিন্দে রচিত সাইকস-পিকো চুক্তি আরব বিশ্বের অনেকের মনে আরও অনেক বড় কিছুর প্রতীক হয়ে উঠেছিল। এই বিষয়ে ‘আ লাইন ইন দ্য স্যান্ড: ব্রিটেন, ফ্রান্স অ্যান্ড দ্য স্ট্রাগল দ্যাট শেপড দ্য মিডল ইস্ট’ গ্রন্থের লেখক জেমস বার বলেন, ‘যুদ্ধপরবর্তী (প্রথম বিশ্বযুদ্ধ) মীমাংসার ফলে সৃষ্ট বিশ্বাসঘাতকতার অনুভূতিই শুধু নয়, বরং বিদেশি হস্তক্ষেপের কারণে এই অঞ্চলে যে দুর্বলতা সৃষ্টি হয়, মূলত তারই সংক্ষিপ্ত রূপ সাইকস-পিকো চুক্তি।’
আরব জনতুষ্টিবাদী নেতারা তাঁদের জাতীয়তাবাদকে যৌক্তিকভাবে পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভের ভিত্তিতে চাগিয়ে তুলেছিলেন। কারণ, পশ্চিমা ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলো কয়েক দশক ধরে এই অঞ্চলের বিষয়াবলিতে নিয়ন্ত্রণ ও হস্তক্ষেপ করে আসছিল এবং আজও যাঁরা মধ্যপ্রাচ্যকে নতুন করে গড়তে চান, তাঁরা চুক্তির আপাতকৃত্রিমতাকে এক নতুন অচলাবস্থা তৈরির ভিত্তি হিসেবে মনে করেন।
ইরাকের ইরবিল প্রদেশের জাতিগত কুর্দি এবং সেখানকার সাবেক গভর্নর নাউজাদ হাদী মাওলুদ ‘দ্য নিউ ইয়র্কার’-এর রবিন রাইটকে বলেন, ‘সাইকস-পিকো চুক্তি এবং এর ফলে সৃষ্ট সব সমস্যার কারণে শত শত মানুষ নিহত হয়েছে। এটি ইতিহাসের গতিপথ এবং প্রকৃতি পরিবর্তন করেছে।’ ইরাকের কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকারের আরেক শীর্ষ কর্মকর্তাও এক টুইটে এই একই সুর প্রতিধ্বনিত করেন।
যাহোক, সাম্প্রতিক সময়ে কথিত সাইকস-পিকো চুক্তির ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের জন্য উর্বর প্রচারণার হাতিয়ার হয়ে ওঠে। ২০১৪ সালে গোষ্ঠীটি অনলাইনে এক প্রচারণামূলক ভিডিও পোস্ট করে, যেখানে তাদের সদস্যদের সিরিয়া ও ইরাকের মরুভূমির সীমান্তে একটি ধূলিময় প্রাচীর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিতে দেখা যায়। তারা ঘোষণা করে, তারা সাইকস-পিকোর ইতিহাস ‘ধ্বংস’ করছে।
তবে এক শ বছর পুরোনো ঔপনিবেশিক চুক্তিকে মধ্যপ্রাচ্য সংকটের ‘আদি পাপ’ হিসেবে দেখানো একদিকে যেমন সুবিধাজনক, তেমনই কিছুটা সরলও বটে। এটি অটোমান সাম্রাজ্যের ভূমি ভাগাভাগির আগের বহুত্ববাদী সমাজের ইতিহাস এবং পরবর্তী দশকগুলোতে আরব শাসকদের বহু বছরের কুশাসনের বিষয়টি উপেক্ষা করে। এই কুশাসনই সিরিয়া ও ইরাকের মতো দেশগুলোতে বর্তমানে বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক বিভেদকে উসকে দিয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের সংকট নিয়ে ‘পশ্চিমা বিশ্বের ভুল নিয়ে যা বলা হয়, তা যথেষ্ট সত্য, তবে রাষ্ট্রগুলোর নিজেদের ব্যর্থতার আত্মসমালোচনা তাতে অনুপস্থিত’—বলে মন্তব্য করেন ওয়াশিংটন পোস্ট ও নিউইয়র্ক টাইমস-এর সাংবাদিক অ্যান্থনি শাদিদ। ২০১১ সালে তিনি এই মন্তব্য করেন। সে সময় স্বৈরাচারী শাসন ও কপট রাজনীতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়া আরব রাষ্ট্রগুলোর পুরোনো ব্যবস্থা অবশেষে ভেঙে পড়ছে বলে মনে হচ্ছিল; যদিও শেষ পর্যন্ত আসলে তা হয়নি।
শাদিদ লিখেছিলেন, ‘রাষ্ট্রগুলো বহুত্ববাদ এবং সর্বজনীন নাগরিকত্বের বোধ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। দুর্বল শাসনব্যবস্থা সুন্নি, শিয়া, খ্রিষ্টান ইত্যাদি সংকীর্ণ পরিচয়বাদী রাজনীতিকে উসকে দিয়েছে।’ মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতার উৎসের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ঔপনিবেশিক ইতিহাসের সঙ্গে এসব সমস্যার সম্পর্ক সামান্যই। তিনি বলেন, ‘আরও স্পষ্টভাবে বলতে গেলে, বহু শিক্ষিত তরুণ-যুবক হতাশ। রাষ্ট্রের দেওয়া মৌলিক সুবিধা হয়তো তাদের আছে, কিন্তু কোনো ভবিষ্যৎ নেই, সেই পুরোনো ধারণা—আগামীকাল গতকালের চেয়ে ভালো হবে—সেটিও অনুপস্থিত।’
তা ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক গবেষক স্টিভেন কুক ও আমর লেহেতা ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনে লিখেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের সীমান্ত ‘কোনো ফাঁকা মানচিত্রে খেয়ালখুশিমতো টানা রেখা নয়’ বরং এগুলো আগের অটোমান প্রশাসনিক ইউনিটগুলোকে প্রতিফলিত করে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক চুক্তি ও আলোচনার ফলস্বরূপ এটি তৈরি হয়েছে। পুরোনো ঘটনাগুলো ছিল এমন একটি প্রক্রিয়া, যা মধ্যপ্রাচ্যের বাইরেও অসংখ্য সীমান্তকে সংজ্ঞায়িত করেছে। আর সাইকস-পিকো চুক্তির আলোচনার পর যে দেশগুলো তৈরি হয়েছে, সেগুলোকে মানচিত্র থেকে সহজে মুছে ফেলা যায় না।
স্টিভেন কুক ও আমর লেহেতা বলেন, ‘গত এক শ বছরে এই সীমান্তগুলো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে—যেমন মিসর, ইরান বা এমনকি ইরাক—এগুলো এমন ভূমিকে সংজ্ঞায়িত করেছে, যা দীর্ঘকাল ধরে মূলত সুসংহত সাংস্কৃতিক পরিচয়ের আবাসস্থল ছিল, যা আধুনিক যুগের জন্য অর্থপূর্ণ। অন্যান্য নতুন সত্তা—যেমন সৌদি আরব এবং জর্ডান—গত শতাব্দীতে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে। যদিও কয়েক শতাব্দী আগে কেউ জর্ডানের পরিচয়ের কথা ভাবেনি, এখন একটি জাতি বিদ্যমান এবং এর আঞ্চলিক অখণ্ডতা জর্ডানের জনগণের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’
কুক এবং লেহেতা উপসংহারে বলেছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে আজ যে সংঘাতগুলো চলছে, সেগুলো আসলে সীমান্তের বৈধতা বা সিরিয়া, ইরাক বা লিবিয়া নামক স্থানের বৈধতা নিয়ে নয়। বরং এই দেশগুলোর অভ্যন্তরে সংঘাতের উৎস হলো কারা তাদের শাসন করার অধিকার রাখে।’ সেই তিক্ত প্রতিযোগিতার উত্তর ১০০ বছর আগে আঁকা মানচিত্রের রেখায় খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ওয়াশিংটন পোস্টে লিখিত ঈশান থারুরের নিবন্ধ থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ ক্যাম্পেইন এগিয়ে নিতে বিশ্বের দেশগুলোর ওপর বিশাল শুল্ক আরোপ করেছিলেন। যদিও পরে সেই শুল্ক তিনি ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন। কিন্তু চীনের ওপর তিনি শুল্ক বাড়িয়েই চলেছেন। জবাবে চীনও যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় কাছাকাছি পরিমাণে
১ দিন আগেমার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একসময় অনেকগুলো দেশের বিরুদ্ধে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করতে চেয়েছিলেন। তবে এই যুদ্ধে এখন যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র প্রতিপক্ষ বলা যায় চীনকেই। এর ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। গতকাল বুধবার ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, চীন ছাড়া অন্য কোনো দেশের পণ্যের ওপর তিনি...
৪ দিন আগেশুল্কযুদ্ধের হুংকার দিয়ে শুরু করলেও মাত্র এক সপ্তাহের মাথায় ট্রাম্পকে পিছু হটতে হলো। শেয়ার ও বন্ডবাজারের অস্থিরতা, ক্ষুদ্র ব্যবসার ক্ষতি ও বৈশ্বিক আর্থিক বাজারে ধস তাঁকে নীতিগত ইউ-টার্ন নিতে বাধ্য করেছে। তবে এই সাময়িক যুদ্ধবিরতি বিশ্ববাজারে স্বস্তি আনলেও চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিতই
৪ দিন আগেবাংলাদেশ, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার মতো ছোট দেশগুলোকে অর্থনৈতিক সমন্বয়ে জোর দিতে দেখা যাচ্ছে। অর্থনৈতিক সমন্বয় বলতে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের প্রভাব মোকাবিলায় অর্থনীতিতে পরিবর্তন বা সমন্বয় আনার চেষ্টাকে বোঝানো হচ্ছে।
৬ দিন আগে