Ajker Patrika

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: সবচেয়ে খারাপ যেসব পরিণতি অপেক্ষা করছে

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৪ জুন ২০২৫, ১৬: ১২
ইসরায়েলের রাজধানী তেলআবিবে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। ছবি: টাইমস অব ইসরায়েল
ইসরায়েলের রাজধানী তেলআবিবে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। ছবি: টাইমস অব ইসরায়েল

ইরানের ওপর গতকাল শুক্রবার ভোরের দিকে হঠাৎ বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার মুখে পড়ে ইরান। ইসরায়েলি হামলায় সেনাপ্রধানসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তা ও গুরুত্বপূর্ণ পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। বেসামরিক লোকজনসহ এখন পর্যন্ত ১৩৮ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

ইসরায়েলি হামলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই প্রতিক্রিয়া জানায় ইরান। জেরুজালেম ও রাজধানী তেলআবিবসহ ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে ইরান। এতে বেশ কয়েকটি ভবন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্তত তিনজন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে ইসরায়েল। আহত হয়েছেন আরও অনেকে।

পাল্টাপাল্টি হামলা এখনো চলছে। ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি তেহরানের আবাসিক এলাকাতেও হামলা করছে। বহু বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানির খবর পাওয়া যাচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা এখন চরমে। এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন আছে বলে সরাসরি অভিযোগ করেছে ইরান। বিনা উসকানিতে ইসরায়েলের এমন হামলার পরিণতির দায় যুক্তরাষ্ট্রকেও বহন করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের কর্মকর্তারা।

যুক্তরাষ্ট্র এই হামলার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে। তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি হামলার বিষয়ে আগেই জানতেন। এমনকি মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের এক ঘনিষ্ঠ মিত্রকেও এটি জানানো হয়েছিল। যদিও সেই দেশের নাম তিনি বলেননি।

ইসরায়েলের হামলা শুরুর আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, পরমাণু চুক্তি নিয়ে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা চলছে। তিনি আশা করেন, এই সময় ইসরায়েল এমন কিছু করবে না যাতে আলোচনা ভেস্তে যায়। কিন্তু হামলা শুরুর পরপরই তিনি ইসরায়েলকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিতে শুরু করেছেন। এমনকি সতর্ক করে বলেছেন, ইরান যদি ইসরায়েলে পাল্টা হামলা চালায়, তাহলে ওয়াশিংটন চুপ করে বসে থাকবে না। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করতে চায় ইসরায়েল। তাদের আশা, শেষ পর্যন্ত ইসরায়েলকে রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিশ্রুতি ও দায় থেকে প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে জড়াবে। সেই সঙ্গে ইরানে সরকারের পতন ঘটানোর চেষ্টা করবে তেলআবিব।

এদিকে, বিবদমান দু’পক্ষকেই সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইসরায়েল ও ইরানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। উত্তেজনা প্রশমনে তিনি মধ্যস্থতা করারও প্রস্তাব দিয়েছেন।

সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে দেশগুলো এই সংঘাত নিয়ে এখনো ততটা সরব হয়ে ওঠে। সৌদি আরব মৃদু নিন্দা জানিয়েছে। এই মুহূর্তে সংঘাত ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে। কিন্তু যদি সংযত হওয়ার আহ্বান উপেক্ষিত হয় তাহলে এই সংঘাত আরও তীব্র ও বিস্তৃত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সম্ভাব্য পরিণতি কী হতে পারে?

যুদ্ধে জড়াতে পারে যুক্তরাষ্ট্র

ইরানে ইসরায়েলের হামলার বিষয়ে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই না বলে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও তা মানতে নারাজ তেহরান। তারা মনে করে, ইরানে শুক্রবার ভোরে ইসরায়েলি বাহিনী যে হামিলা চালিয়েছে, তাতে অনুমোদন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের।

বিশ্লেষকদের ধারণা, ইসরায়েলের হামলার প্রতিক্রিয়ায় মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্থাপনায় হামলা করতে পারে ইরান। তাদের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনীর ছাউনি এবং উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি। এ ছাড়া ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক স্থাপনাতেও হামলা করতে পারে ইরান।

ইরানের মিত্র বাহিনী ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও লেবাননের হিজবুল্লাহ অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়লেও ইরাকে তাদের অনুগত মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো এখনো সশস্ত্র ও অক্ষত।

জড়াতে পারে উপসাগরীয় দেশগুলোও

ইরান যদি ইসরায়েলের অত্যন্ত সুরক্ষিত সামরিক ঘাঁটি ও অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তারা উপসাগরীয় অঞ্চলে অপেক্ষাকৃত দুর্বল লক্ষ্যগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে পারে।

বিশেষ করে সেই দেশগুলোর ওপর, যাদের ইরান মনে করে তার শত্রুদের দীর্ঘদিন ধরে সহায়তা ও প্ররোচনা দিয়ে আসছে।

তবে এসব দেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানঘাঁটি রয়েছে। সে ক্ষেত্রে নিজেদের এসব সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইসরায়েলের স্থাপনা রক্ষায় দেরি করবে না যুক্তরাষ্ট্র।

পতন হতে পারে ইরান সরকারের

ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে ইরানে ইসলামি শাসনের পতন ঘটাতে চাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে সামরিক হামলা চালিয়ে যদি তারা তাদের লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়, তাহলে কী হবে?

ইসরায়েল গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে স্পষ্টভাবে বলেছে, ইরানের শাসনকাঠামো পরিবর্তনই তাদের বৃহত্তর লক্ষ্য। ইরানের বর্তমান সরকারের পতন ঘটলে উপসাগরীয় অঞ্চলের কিছু মানুষের, বিশেষ করে ইসরায়েলিদের একাংশের কাছে তা আকর্ষণীয় হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত