Ajker Patrika

রুশ নাম, পিতৃনাম আর পদবি

জাহীদ রেজা নূর
রুশ নাম, পিতৃনাম আর পদবি

কোলিয়া আর তোলিয়াকে নিয়ে দুটো স্মৃতিচারণের পর মনে হলো, আরে! নাম দুটোই শেষ হচ্ছে ‘আ’ দিয়ে, আর তাতে মনে হতে পারে এগুলো তো মেয়েদের নাম! কিন্তু যে দুজনের কথা বলা হলো, তারা তো ছেলে! সে রহস্য ভেদ করা হবে আজকের লেখায়। 

কোলিয়া আসলে নিকোলাই থেকে এসেছে। তোলিয়া এসেছে আনাতলি থেকে। আমরা মিখাইল গর্বাচভের কথা বলি। তাঁর বাবা-মা, বন্ধু–বান্ধবেরা মিখাইলকে মিশা নামে ডাকেন। ফিওদর দস্তইয়েভ্স্কিকে ডাকা হয় ফেদিয়া নামে। কারণ, ফিওদরকে আদর করে ফেদিয়া বলা হয়। ভ্লাদিমির ইলিচকে বন্ধুরা ডাকত ভ্লাদ বলে। ভাসিলি হচ্ছে ভাসিয়া, গেন্নাদি হচ্ছে গেনা, দিমত্রি হচ্ছে দিমা, তাকে মিতিয়া বলেও ডাকা হয়। গেওর্গি হচ্ছে গোশা, গোরা, ঝোরা। ইভ্গেনি হলো ঝেনিয়া। মেয়েদের নাম হয় ইভগেনিয়া, সেটার ছোট রূপটাও কিন্তু ঝেনিয়া। মানে ছেলেও ঝেনিয়া, মেয়েও ঝেনিয়া। 

ইভান হলো ভানিয়া। তাহলে বুঝতেই পারছেন তুর্গিয়েনেভকে আপনি ভানিয়া বলেও ডাকতে পারেন। আন্তন চেখভকে তাঁর স্বজনেরা ডাকত আনতোশা বলে। 

আলেক্সান্দর আর আলেক্সান্দ্রা। প্রথমটি ছেলেদের নাম, দ্বিতীয়টি মেয়েদের। কিন্তু আদর করে ডাকলে দুজনকেই বলতে হবে সাশা। সাশাকেই বলা হয় শুরিক। আরও বলা হয় শুরা। 

এবার মেয়েদের নামগুলো নিয়ে কিছু কথা হোক। 
যদি শুনি লেনার কথা, তাহলে অবশ্যই বুঝতে হবে আমরা আসলে ইয়েলেনার কথা বলছি। তেমনি কাতিয়া কিন্তু ইয়েকাতেরিনার ছোট আদুরে রূপ। নাতালিয়াকে আদর করে ডাকা হয় নাতাশা বলে। ওলিয়া যে বলি, তার ভদ্রগোছের রূপটা হচ্ছে ওলগা। আনতোনিনা বা আনতোনিয়াকে ডাকা হয় তোসিয়া বলে। 

এ তো গেল নামের প্রাথমিক পরিচয়। কিন্তু রুশ নামগুলো কেমন হয়, সেটা নিয়েও একটু কথা বলা দরকার। প্রতিটি রুশ নামে থাকে তিনটি ভাগ। প্রথম অংশটি লোকটির নাম, দ্বিতীয় অংশটি পিতৃনাম আর তৃতীয় অংশটি পারিবারিক পদবি। আমরা সেভাবে আমাদের নামগুলো তৈরি করে একটু রগড় করব। 
একটি নাম বেছে নিচ্ছি। হ্যাঁ, বেদনার ঋষি দস্তইয়েভ্স্কির নামটিই বেছে নেওয়া যাক। 

দস্তইয়েভ্স্কির পুরো নাম তাঁর ফিওদর মিখাইলোভিচ দস্তইয়েভ্স্কি। আগে যে কথা বলেছি, সেই সূত্রকে মনে রেখে আমরা বলতে পারি, ফিওদর হচ্ছে লেখকের নাম। অর্থাৎ, কেউ যদি একান্ত আলাপে তাঁর নামটি উচ্চারণ করতে চায়, তাহলে বলতে হবে ফিওদর, ফেদিয়া, ফেদকা। খুব কাছের লোকেরাই পরের দুটো ফর্ম ব্যবহার করতে পারে। এর পরের অংশটা হচ্ছে মিখাইলোভিচ। মিখাইলোভিচের মানে হলো মিখাইলের ছেলে। যদি ছেলে না হয়ে মেয়ে হতো, তাহলে? তাহলে কী হতো, সে আলোচনা তো হবে মেয়েদের একটি নাম বেছে নেওয়ার পর। যাক। আমরা মিখাইলোভিচে এসে ঠেকেছি। তার মানে হলো মিখাইলের ছেলে ফিওদর। এর পর যে অংশটি আছে, সেটি হলো পারিবারিক পদবি। এই পরিবারের সব ছেলের পদবি হবে দস্তইয়েভ্স্কি। আর মেয়ে হলে? আরে! আগেই তো বললাম, সেটা বলব মেয়েদের নামের আলোচনায়। তাহলে আমাদের লেখক দস্তইয়েভ্স্কির নামের মানেটা কী দাঁড়াল? দাঁড়াল: দস্তইয়েভ্স্কি পরিবারের মিখাইলের ছেলে ফিওদর।

ফিওদর দস্তইয়েভ্স্কির এক ছেলের নাম আলেক্সেই দস্তইয়েভ্স্কি। তাহলে তাঁর পুরো নাম কী হবে বোঝা যাচ্ছে? তিনি তো ফিওদরের ছেলে, মিখাইলের ছেলে নন। তাই তাঁর পুরো নাম হবে আলেক্সেই ফিওদোরোভিচ দস্তয়েভ্স্কি। দস্তইয়েভ্স্কি পরিবারের ফিওদরের ছেলে আলেক্সেই। বোঝা গেল? 

এবার মেয়েদের নাম। এই পরিবারেরই একটি মেয়েকে নিয়ে কথা বলি। ওই ফিওদরের মেয়ে সোনিয়াকে বেছে নেওয়া যাক। এবার একটু ভাবুন। তাঁর পিতৃনাম কী হবে? নিশ্চয়ই মিখাইল নয়? হবে ফেওদর। কিন্তু তিনি তো ছেলে নন। ছেলে হলে পিতৃনাম হতো ফিওদোরোভিচ। কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে ‘ওভিচ’ না হয়ে হয় ‘ওভনা’। আর দস্তইয়েভ্স্কি না হয়ে হবে দস্তইয়েভ্স্কায়া। 

যদি পদবি হতো পুশকিন? তাহলে সেই পরিবারের সব মেয়ের নাম হতো পুশকিনা। 
যদি হতো তুর্গিয়েনেভ? তবে হতো তুর্গিনিয়েভা। 
যদি হতো চেখভ? তাহলে হতো চেখভা। পরিষ্কার? 
তাহলে ফিওদর দস্তইয়েভ্স্কির মেয়েটার নাম দাঁড়াল কী? 
সোনিয়া ফিওদোরোভ্না দস্তইয়েভ্স্কায়া। বোঝা গেল? 

একটু ঝালাই করে নিই: 
আন্তন পাভলোভিচ চেখভ মানে হলো চেখভ পরিবারের পাভেলের ছেলে আন্তন। 
লিয়েফ নিকোলায়েভিচ তলস্তোয়ের মানে হলো তলস্তয় পরিবারের নিকোলাইয়ের ছেলে লিয়েভ। 
যদি আন্তনের বোনের নাম হতো ইয়েকারেতিনা, তাহলে সেই পরিবারের মেয়েটার নাম হতো ইয়েকাতেরিনা পাভলোভ্না চেখভা। যদি সে হতো তলস্তয় পরিবারের, তাহলে নাম হতো, ইয়েকাতেরিনা নিকোলায়েভ্না তলস্তোয়া। 
মনে রাখতে পারবেন? 

আমি যদি এই নাম নিয়েই রুশ দেশে জন্মাতাম, তাহলে আমার নাম হতো জাহীদ সিরাজোভিচ হোসেন। 
আমি মেয়ে হলে নাম হতো জাহীদা সিরাজোভ্না হোসেনা। 

আর নয়। আমার নিজেরই মাথা ঘুরছে! 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত