Ajker Patrika

অন্ধ হলেও অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

অনেক অনেক বছর আগে এক বুড়ি ছিলেন, অন্ধ কিন্তু জ্ঞানী। তিনি কি শুধুই বুড়ি ছিলেন? সম্ভবত একজন গুরু, কিংবা এক অশান্ত শিশু। আমি এই গল্পটি শুনেছিলাম বা অনেকটা এ রকম কিছু একটা অনেক লোকগাথাতেই উল্লেখ ছিল। অনেকটা এ রকম, ‘একদা এক ছিল বুড়ি। অন্ধ কিন্তু জ্ঞানী।’ গল্পের যে সংস্করণটি আমি জানি, সেখানে বুড়ি ব্যক্তিটি একজন কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানের মেয়ে। যিনি কিনা শহর থেকে দূরে ছোট্ট একটি বাড়িতে বাস করতেন। তাঁর বিচক্ষণতার কথা সবাই জানতেন। তিনি আইন যথাযথভাবে রক্ষার পক্ষে ছিলেন। তিনি তাঁর প্রতিবেশীদের থেকে দূরে দূরে থাকলেও, আচরণে ছিলেন ভীষণ নম্র।

একদিন কয়েকজন তরুণ বুড়ির সঙ্গে দেখা করতে আসে। তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল এটা প্রমাণ করা যে বুড়ির অন্তর্দৃষ্টি বলে কিছু নেই এবং সবটাই তাঁর ভণ্ডামি। তাদের পরিকল্পনাটা ছিল খুব সাধারণ। তাদের নিজেদের প্রতি পুরো বিশ্বাস ছিল যে বুড়ির বাসায় ঢুকে একটি মাত্র প্রশ্ন করেই তারা তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করে ফেলতে পারবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, একদিন তারা বুড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়াল। তাদের ভেতর থেকে একজন প্রশ্ন করল, ‘আমার হাতে একটা পাখি, বলুন তো, এটা জীবিত নাকি মৃত?’

বুড়ি উত্তর করেন না। তিনি অন্ধ, অতিথিদেরই দেখতে পান না, হাতে কী আছে তা তো দূরের কথা।...তবে তিনি কেবল তাদের আগমনের উদ্দেশ্যটা জানেন।

বুড়ির এই দীর্ঘ নীরবতায় তরুণদের পক্ষে হাসি ধরে রাখা বেশ কষ্টকর হচ্ছিল। অবশেষে তিনি শান্ত কিন্তু দৃঢ়কণ্ঠে বললেন, ‘আমি জানি না, তোমরা যে পাখিটাকে ধরে আছ, সেটা জীবিত না মৃত, কিন্তু আমি যেটা জানি সেটা হলো, এটা তোমরা ধরে রেখেছ। এটা তোমাদের হাতেই রয়েছে।’

তাঁর উত্তরের অর্থ হলো—যদি এটা মৃত হয়ে থাকে, তবে তোমরা সেটাকে সেভাবেই পাবে কিংবা হতে পারে তোমরাই এটাকে মেরেছ। এটা জীবিত থাকবে কি না, সেটা তোমাদের সিদ্ধান্ত। যা-ই ঘটুক না কেন সব দায়দায়িত্ব তোমাদের।

আমেরিকান সাহিত্যিক টনি মরিসন ১৯৯৩ সালে নোবেল পুরস্কার পান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত