গুঞ্জন রহমান

১৯৯৭ সালের কথা। তখন আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে প্রথম বর্ষের ছাত্র। এক বিকেলের কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা, ক্যাম্পাসের পশ্চিম পাড়া দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলাম কোথাও। হঠাৎ দেখি লুঙ্গি ও স্যান্ডো গেঞ্জি পরিহিত বাবার বয়সী এক ভদ্রলোক এক হাতে হাঁসুয়া বা কাস্তে, অন্য হাতে ঘাসভর্তি বড়সড় একটা ছালার বস্তা নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে হেঁটে আসছেন। ঘাস কাটা এবং তা নিয়ে অত জোরে হেঁটে আসার পরিশ্রমে শরীর ঘর্মাক্ত, খানিকটা হাঁপাচ্ছেনও তিনি। আমি ঝট করে সাইকেল থকে নেমে গিয়ে তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি সালামের জবাব দিয়ে আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন। তারপর বললেন, ‘ফাস্ট ইয়ার?’
আমি লাজুক ভঙ্গিতে বললাম, ‘জি স্যার।’
‘বুঝতে পারছি। ফাস্ট ইয়ার এবং গ্রাম থকে এসেছ। এজন্য এই সব নর্ম এখনো ধরে রেখেছ। আজকাল মুরব্বিদের দেখলে কেউ সাইকেল থেকে নামা তো দূররে কথা, সালামই দেয় না!’
আমি কী বলব ভেবে পেলাম না। তিনি নিজে থেকেই বললেন, ‘শিক্ষকতা করে বড়জোর নিজের আর স্ত্রী-পুত্র পরিবারের পেট চলে হে ছোকরা। আর সাহিত্য করে তো গরুর রাখালের মজুরিটুকুও জোটে না। এই জন্য নিজেই ঘাস কাটতে যাই রোজ, বুঝলে?’
আমি জড়সড় হয়ে বললাম, ‘স্যার, বস্তাটা আমাকে দিন, আমি সাইকেলে করে আপনার বাসায় পৌঁছে দিই।’
‘অ! তুমি দেবে? রোজ দেবে? মানে, রোজ এই সময়ে এসে আমার ঘাসের বস্তা গোয়ালে পৌঁছে দিতে পারবে? নাকি ঘাসও কটে দেবে?’
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। বলার মতো কিছু খুঁজে পেলাম না। স্যার হাসলেন। প্রশ্রয়ের হাসি। হাসতে হাসতেই বললেন, ‘যার যেটা কাজ, তাকে সেটা করতে দিতে হয়। আমার গরুর ঘাস আমাকেই কাটতে হবে, আমাকেই গোয়ালে নিতে হবে। ওসব পোশাকি ভদ্রতা করার মানে হয় না। তোমার ইনটেনশন ভালো সেটা বুঝতে পারছি, কিন্তু যার যার লড়াই তার তার লড়ে যাওয়াই উচিত। যাও যাও। সাইকেলে উঠে কেটে পড়ো।’
এই হলো উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক স্যারের সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাতের হুবহু বর্ণনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রথম বছর থেকেই আমি থিয়েটার করতে শুরু করি। তীর্থক নামক থিয়েটার দলের কর্মী হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আমার পদচারণা শুরু। এর আগ বাবার কর্মসূত্রে আমার নিবাস ছিল গাইবান্ধা জেলার এক পাড়াগাঁয়ের মতো জায়গায়, যার নাম মহিমাগঞ্জ। চিনিকলের কলোনিতে থাকতাম, কাছাকাছি বড় শহর বগুড়ায় যেতাম কেনাকাটা করতে। সে সময় বইপত্র যা পড়তাম, তার মধ্যে সেবা প্রকাশনী আর কিছু ক্ল্যাসিক সাহিত্যের বাইরে সমকালীন লেখক হিসেবে হুমায়ূন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল—এই তিন নামই আমাদের কিশোরমহলে বেশ পরিচিত ছিল।
কবিতায় শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা—এঁদের বাইরে কবি-সাহিত্যিক খুব বেশি চেনা ছিল না। তেমনই একটা সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পা রেখেই জানতে পারলাম, বাংলাদেশের তথা বাংলা ভাষারই অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক হাসান আজিজুল হক এই অঙ্গনের একেবারে ঘরের মানুষ। ঠিক মুরব্বি হিসেবে দেখলেও তাঁকে কিছুটা দূরের মনে হতে পারে, কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গন তথা সবকিছুতেই তিনি এত বেশি কাছের মানুষ ছিলেন যে সামান্যতম দূরত্ব বোঝা যায় এমন কোনো বিশেষণই তাঁর জন্য প্রযোজ্য হয় না। আগেও হয়নি কোনো দিন, পরেও কখনো না। ওই যে বললাম, আটপৌরে লুঙ্গি-গেঞ্জি পরে ঘেমে-নেয়ে একাকার হয়ে ঘাস কাটা রাখালের বেশে তাঁকে আমার প্রথম দেখা; বরাবর তিনি ছিলেন এমনই একজন ঘরের মানুষ, যাঁকে দেখে শিক্ষকসুলভ সমীহ তো জাগেই, কিন্তু গুরুজনসুলভ ভীতি জাগে না। যাঁকে দেখে বাবা-চাচা-মামাদের মতো আপনজন মনে হয়, কিন্তু মাস্টারমশাইসুলভ দূরত্ব ধোপে টেকে না। সে জন্যই বুঝি ওই প্রথম বর্ষের ছাত্র থাকাকালীনই যখন আমাদের পরিবার দিনাজপুর জেলা শহরে স্থায়ী হলো, ছুটিছাঁটায় দিনাজপুরে গিয়ে সেখানকার শিল্পসাহিত্যের মানুষদের কাছে আমি রীতিমতো ঈর্ষার পাত্রে পরিণত হতাম। সেটা এই কারণে যে হাসান আজিজুল হকের মতো মহীরুহের সঙ্গে এই ছেলে চাইলে রোজ দেখা করতে পারে, কথা বলতে পারে, কোনো কারণ ছাড়াই তাঁর বাসায় পর্যন্ত চলে যেতে পারে!
ঠিক এই জায়গাতেই আপত্তি করেছিলেন তাঁর গুণমুগ্ধ সহকর্মী অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম স্যার। তিনি আমাদের সুযোগ পেলেই মনে করিয়ে দিতেন, ‘বাতাসের ভেতরে থেকে তো বাতাসের অস্তিত্ব বোঝা যায় না; তাই তোমরা বুঝতে চাও না, তিনি কত বড় মানুষ। কত বড় একজন চিন্তাশীল মানুষ, সৃজনশীল মানুষ। তাঁর জীবনের প্রতিটি সেকেন্ড মূল্যবান। এই যে তোমরা যখন-তখন হুট করে চলে যাও তাঁর কাছে, তিনি তখন হয় কিছু লিখছেন, নয়তো লেখার কথা ভাবছেন। তোমার কারণে সেই লেখার অপমৃত্যু হলো—এটা কি তুমি বোঝো? তাঁর সঙ্গে তোমার এক ঘণ্টা আড্ডায় তুমি সমৃদ্ধ হবে তাতে সন্দেহ নেই, কিন্তু বঞ্চিত হবে বাংলা সাহিত্য। তিনি ভীষণ সঙ্গপ্রিয় মানুষ, তিনি তোমাদের ভালোবাসেন, প্রশ্রয় দেন—এটা তাঁর মহানুভবতা। কিন্তু তাঁকে তাঁর মতো লিখতে দিতে হবে, নিরিবিলি সময় করে দিতে হবে—এটা তোমাদের দায়িত্ব।’
শহীদুল ইসলাম স্যারের এ কথায় কেউ তেমন কান দেয়নি, সবাই স্যারকে ঘিরে থেকেছে সব সময়, কিন্তু আমি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে চেষ্টা করতাম। পারতপক্ষে তাঁর কাছে ঘেঁষতাম না, একা একা তো কিছুতেই না। এমনিতেই প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনোভাবে তাঁকে দেখতে পেতাম, আলাদা করে একান্তে মিলিত হওয়ার দরকারই বা কী? আর আমি এত ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র যে তাঁর সঙ্গে দুদণ্ড কথা বলার যোগ্যতাও আমার নেই! শুধুই শুনে যাব বলে তাঁকে তাঁর সৃষ্টিকর্ম থেকে সরিয়ে রাখার কোনো অধিকার কি আমার আছে?
রাবির ছাত্র হিসেবে অন্য সবার চেয়ে একটু হলেও আলাদা করে স্যারকে দেখার সৌভাগ্য আমাদের হয়েছিল। আমার মনে পড়ছে, সম্ভবত ১৯৯৭ কিংবা ১৯৯৮ সালের কথা। সেবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থকে সংবর্ধনা দেওয়া হলো মুক্তিযুদ্ধের অকুতোভয় এক বীর যোদ্ধা, যিনি বন্দুক হাতে না নিয়েই এক অসম যুদ্ধ করেছিলেন মহাপরাক্রমশালী পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে এবং জয়ী হয়েছিলেন সেই যুদ্ধে—তিনি মজিবর রহমান দেবদাস স্যার। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সেনা ছাউনি করার এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে নির্বিচারে গণহত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন এই অসীম সাহসী শিক্ষক। পাকিস্তান আর্মির কমান্ডার যখন যুক্তি দিয়েছিলেন—এরা বিধর্মী কাফের, তাই এদের মেরে ফেলায় অন্যায় নেই, তখন এর প্রতিবাদে তিনি নিজের মজিবর রহমান নাম পরিবর্তন করে দেবদাস রেখেছিলেন। পাকিস্তানি আর্মি তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে অমানবিক নির্যাতন করে, যার কারণে তিনি একটা সময় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনার চাকরিটি হারান এই অজুহাতে যে চাকরিতে বহাল থাকার মতো তাঁর মানসিক ভারসাম্য নেই। বঞ্চিত করা হয় তাঁর সারা জীবনের চাকরি থকে অর্জিত অর্থনৈতিক সুবিধা থেকে। প্রকৃতপক্ষে এ সবই ছিল স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের যোগসাজশ।
১৯৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতায় ফিরলে স্যারকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান ও চাকরিজীবনের আর্থিক অর্জন ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়, যার প্রথম পদক্ষেপ ছিল সেই সংবর্ধনা। সেই অনুষ্ঠানে অনিচ্ছাকৃতভাবে বারবার স্যারের নামটি ভুল বললেও আবার সংশোধন করে নিচ্ছিলেন বক্তারা, বিশ্ববিদ্যালয়ের নানান উচ্চপদে আসীন ব্যক্তিরা দেবদাস স্যারকে “আর্থিক সহায়তার আশ্বাস” দিচ্ছিলেন। হঠাৎ অনিচ্ছাকৃতভাবে মঞ্চে উঠে হাসান স্যার ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। তীব্র ভাষায় তিনি এসব ধৃষ্টতার প্রতিবাদ করলেন। চিৎকার করে বললেন, ‘কাকে আপনারা সাহায্য-সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছেন? তাঁর নিজের পাওনা টাকা তাঁকে বুঝিয়ে দিন! সেই টাকা আজকের বাজারদরে কত হয় হিসাব করুন। কে তাঁকে করুণা করে? কার এত বড় সাহস? করুণা পরে করবেন, আগে তো তাঁকে সম্মান দিন! তিনি নিজে তাঁর নাম রেখেছেন দেবদাস, যে নামটি প্রথম সুযোগে আপনাদের মুখে আসছে না, সংশোধন করে বলতে হচ্ছে বারবার! আপনারা কি তাঁকে সম্মান দিতে ডেকেছেন, নাকি আবারও অসম্মান করতে?.... আপনাদের প্রতি আমার আসলেই কোনো আশা নেই। আমি আমার ছাত্রছাত্রীদের প্রতি বলছি। বাবা-মায়েরা, তোমরা এই লোকটিকে দেখো। এই যে ছোটখাটো মানুষটি এখানে বসে আছেন, এঁকে দেখো। কারণ হিমালয় দেখতে যাওয়ার সুযোগ তোমাদের অনেকের হবে না, আজ এই সুযোগে তোমরা স্পর্ধার হিমালয় দেখে নাও। দেখে নাও দেশপ্রেমের আটলান্টিক মহাসাগর। দেখে নাও বিদ্রোহের সাহারা মরুভূমি। দেখে নাও স্বাধীনতার ধ্রুবতারাকে। আর আমাকে একটা কথা দাও। আপস করতে হলে সব বিষয়ে আপস কোরো, কিন্তু মা আর মাতৃভূমির সঙ্গে কোরো না। ভেজাল দিতে হলে সবকিছুতে দিয়ো, কিন্তু স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গে ভেজাল দিয়ো না। ভুলতে হলে সবাইকে ভুলে যেয়ো, কিন্তু এই মাটির প্রকৃত বীর এই মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো দিন ভুলে যেয়ো না।’
আজ, মাত্রই কিছুক্ষণ আগে অনুজপ্রতিম বন্ধুর কাছ থকে জানতে পারলাম, হাসান আজিজুল হক স্যার আর নেই। বাংলা সাহিত্য কাকে হারাল, সে বাংলা সাহিত্যের পাঠক আর সাহিত্যিকেরা জানেন। আমি বড়জোর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে, তাঁকে কাছে থেকে দেখতে পাওয়া সৌভাগ্যবানদের একজন হিসেবে এটুকু বলতে পারি—আপস না করা, ভেজাল না দেওয়া, শেকড়কে কিছুতেই না ভোলা এক অদম্য চেতনা আজ দেহ ত্যাগ করে অনন্তে মিলে গেলেন। এক জীবন্ত কিংবদন্তি আজ শাব্দিক অর্থেই কিংবদন্তি হয়ে গেলেন।

১৯৯৭ সালের কথা। তখন আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে প্রথম বর্ষের ছাত্র। এক বিকেলের কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা, ক্যাম্পাসের পশ্চিম পাড়া দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলাম কোথাও। হঠাৎ দেখি লুঙ্গি ও স্যান্ডো গেঞ্জি পরিহিত বাবার বয়সী এক ভদ্রলোক এক হাতে হাঁসুয়া বা কাস্তে, অন্য হাতে ঘাসভর্তি বড়সড় একটা ছালার বস্তা নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে হেঁটে আসছেন। ঘাস কাটা এবং তা নিয়ে অত জোরে হেঁটে আসার পরিশ্রমে শরীর ঘর্মাক্ত, খানিকটা হাঁপাচ্ছেনও তিনি। আমি ঝট করে সাইকেল থকে নেমে গিয়ে তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি সালামের জবাব দিয়ে আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন। তারপর বললেন, ‘ফাস্ট ইয়ার?’
আমি লাজুক ভঙ্গিতে বললাম, ‘জি স্যার।’
‘বুঝতে পারছি। ফাস্ট ইয়ার এবং গ্রাম থকে এসেছ। এজন্য এই সব নর্ম এখনো ধরে রেখেছ। আজকাল মুরব্বিদের দেখলে কেউ সাইকেল থেকে নামা তো দূররে কথা, সালামই দেয় না!’
আমি কী বলব ভেবে পেলাম না। তিনি নিজে থেকেই বললেন, ‘শিক্ষকতা করে বড়জোর নিজের আর স্ত্রী-পুত্র পরিবারের পেট চলে হে ছোকরা। আর সাহিত্য করে তো গরুর রাখালের মজুরিটুকুও জোটে না। এই জন্য নিজেই ঘাস কাটতে যাই রোজ, বুঝলে?’
আমি জড়সড় হয়ে বললাম, ‘স্যার, বস্তাটা আমাকে দিন, আমি সাইকেলে করে আপনার বাসায় পৌঁছে দিই।’
‘অ! তুমি দেবে? রোজ দেবে? মানে, রোজ এই সময়ে এসে আমার ঘাসের বস্তা গোয়ালে পৌঁছে দিতে পারবে? নাকি ঘাসও কটে দেবে?’
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। বলার মতো কিছু খুঁজে পেলাম না। স্যার হাসলেন। প্রশ্রয়ের হাসি। হাসতে হাসতেই বললেন, ‘যার যেটা কাজ, তাকে সেটা করতে দিতে হয়। আমার গরুর ঘাস আমাকেই কাটতে হবে, আমাকেই গোয়ালে নিতে হবে। ওসব পোশাকি ভদ্রতা করার মানে হয় না। তোমার ইনটেনশন ভালো সেটা বুঝতে পারছি, কিন্তু যার যার লড়াই তার তার লড়ে যাওয়াই উচিত। যাও যাও। সাইকেলে উঠে কেটে পড়ো।’
এই হলো উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক স্যারের সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাতের হুবহু বর্ণনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রথম বছর থেকেই আমি থিয়েটার করতে শুরু করি। তীর্থক নামক থিয়েটার দলের কর্মী হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আমার পদচারণা শুরু। এর আগ বাবার কর্মসূত্রে আমার নিবাস ছিল গাইবান্ধা জেলার এক পাড়াগাঁয়ের মতো জায়গায়, যার নাম মহিমাগঞ্জ। চিনিকলের কলোনিতে থাকতাম, কাছাকাছি বড় শহর বগুড়ায় যেতাম কেনাকাটা করতে। সে সময় বইপত্র যা পড়তাম, তার মধ্যে সেবা প্রকাশনী আর কিছু ক্ল্যাসিক সাহিত্যের বাইরে সমকালীন লেখক হিসেবে হুমায়ূন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল—এই তিন নামই আমাদের কিশোরমহলে বেশ পরিচিত ছিল।
কবিতায় শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা—এঁদের বাইরে কবি-সাহিত্যিক খুব বেশি চেনা ছিল না। তেমনই একটা সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পা রেখেই জানতে পারলাম, বাংলাদেশের তথা বাংলা ভাষারই অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক হাসান আজিজুল হক এই অঙ্গনের একেবারে ঘরের মানুষ। ঠিক মুরব্বি হিসেবে দেখলেও তাঁকে কিছুটা দূরের মনে হতে পারে, কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গন তথা সবকিছুতেই তিনি এত বেশি কাছের মানুষ ছিলেন যে সামান্যতম দূরত্ব বোঝা যায় এমন কোনো বিশেষণই তাঁর জন্য প্রযোজ্য হয় না। আগেও হয়নি কোনো দিন, পরেও কখনো না। ওই যে বললাম, আটপৌরে লুঙ্গি-গেঞ্জি পরে ঘেমে-নেয়ে একাকার হয়ে ঘাস কাটা রাখালের বেশে তাঁকে আমার প্রথম দেখা; বরাবর তিনি ছিলেন এমনই একজন ঘরের মানুষ, যাঁকে দেখে শিক্ষকসুলভ সমীহ তো জাগেই, কিন্তু গুরুজনসুলভ ভীতি জাগে না। যাঁকে দেখে বাবা-চাচা-মামাদের মতো আপনজন মনে হয়, কিন্তু মাস্টারমশাইসুলভ দূরত্ব ধোপে টেকে না। সে জন্যই বুঝি ওই প্রথম বর্ষের ছাত্র থাকাকালীনই যখন আমাদের পরিবার দিনাজপুর জেলা শহরে স্থায়ী হলো, ছুটিছাঁটায় দিনাজপুরে গিয়ে সেখানকার শিল্পসাহিত্যের মানুষদের কাছে আমি রীতিমতো ঈর্ষার পাত্রে পরিণত হতাম। সেটা এই কারণে যে হাসান আজিজুল হকের মতো মহীরুহের সঙ্গে এই ছেলে চাইলে রোজ দেখা করতে পারে, কথা বলতে পারে, কোনো কারণ ছাড়াই তাঁর বাসায় পর্যন্ত চলে যেতে পারে!
ঠিক এই জায়গাতেই আপত্তি করেছিলেন তাঁর গুণমুগ্ধ সহকর্মী অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম স্যার। তিনি আমাদের সুযোগ পেলেই মনে করিয়ে দিতেন, ‘বাতাসের ভেতরে থেকে তো বাতাসের অস্তিত্ব বোঝা যায় না; তাই তোমরা বুঝতে চাও না, তিনি কত বড় মানুষ। কত বড় একজন চিন্তাশীল মানুষ, সৃজনশীল মানুষ। তাঁর জীবনের প্রতিটি সেকেন্ড মূল্যবান। এই যে তোমরা যখন-তখন হুট করে চলে যাও তাঁর কাছে, তিনি তখন হয় কিছু লিখছেন, নয়তো লেখার কথা ভাবছেন। তোমার কারণে সেই লেখার অপমৃত্যু হলো—এটা কি তুমি বোঝো? তাঁর সঙ্গে তোমার এক ঘণ্টা আড্ডায় তুমি সমৃদ্ধ হবে তাতে সন্দেহ নেই, কিন্তু বঞ্চিত হবে বাংলা সাহিত্য। তিনি ভীষণ সঙ্গপ্রিয় মানুষ, তিনি তোমাদের ভালোবাসেন, প্রশ্রয় দেন—এটা তাঁর মহানুভবতা। কিন্তু তাঁকে তাঁর মতো লিখতে দিতে হবে, নিরিবিলি সময় করে দিতে হবে—এটা তোমাদের দায়িত্ব।’
শহীদুল ইসলাম স্যারের এ কথায় কেউ তেমন কান দেয়নি, সবাই স্যারকে ঘিরে থেকেছে সব সময়, কিন্তু আমি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে চেষ্টা করতাম। পারতপক্ষে তাঁর কাছে ঘেঁষতাম না, একা একা তো কিছুতেই না। এমনিতেই প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনোভাবে তাঁকে দেখতে পেতাম, আলাদা করে একান্তে মিলিত হওয়ার দরকারই বা কী? আর আমি এত ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র যে তাঁর সঙ্গে দুদণ্ড কথা বলার যোগ্যতাও আমার নেই! শুধুই শুনে যাব বলে তাঁকে তাঁর সৃষ্টিকর্ম থেকে সরিয়ে রাখার কোনো অধিকার কি আমার আছে?
রাবির ছাত্র হিসেবে অন্য সবার চেয়ে একটু হলেও আলাদা করে স্যারকে দেখার সৌভাগ্য আমাদের হয়েছিল। আমার মনে পড়ছে, সম্ভবত ১৯৯৭ কিংবা ১৯৯৮ সালের কথা। সেবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থকে সংবর্ধনা দেওয়া হলো মুক্তিযুদ্ধের অকুতোভয় এক বীর যোদ্ধা, যিনি বন্দুক হাতে না নিয়েই এক অসম যুদ্ধ করেছিলেন মহাপরাক্রমশালী পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে এবং জয়ী হয়েছিলেন সেই যুদ্ধে—তিনি মজিবর রহমান দেবদাস স্যার। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সেনা ছাউনি করার এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে নির্বিচারে গণহত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন এই অসীম সাহসী শিক্ষক। পাকিস্তান আর্মির কমান্ডার যখন যুক্তি দিয়েছিলেন—এরা বিধর্মী কাফের, তাই এদের মেরে ফেলায় অন্যায় নেই, তখন এর প্রতিবাদে তিনি নিজের মজিবর রহমান নাম পরিবর্তন করে দেবদাস রেখেছিলেন। পাকিস্তানি আর্মি তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে অমানবিক নির্যাতন করে, যার কারণে তিনি একটা সময় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনার চাকরিটি হারান এই অজুহাতে যে চাকরিতে বহাল থাকার মতো তাঁর মানসিক ভারসাম্য নেই। বঞ্চিত করা হয় তাঁর সারা জীবনের চাকরি থকে অর্জিত অর্থনৈতিক সুবিধা থেকে। প্রকৃতপক্ষে এ সবই ছিল স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের যোগসাজশ।
১৯৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতায় ফিরলে স্যারকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান ও চাকরিজীবনের আর্থিক অর্জন ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়, যার প্রথম পদক্ষেপ ছিল সেই সংবর্ধনা। সেই অনুষ্ঠানে অনিচ্ছাকৃতভাবে বারবার স্যারের নামটি ভুল বললেও আবার সংশোধন করে নিচ্ছিলেন বক্তারা, বিশ্ববিদ্যালয়ের নানান উচ্চপদে আসীন ব্যক্তিরা দেবদাস স্যারকে “আর্থিক সহায়তার আশ্বাস” দিচ্ছিলেন। হঠাৎ অনিচ্ছাকৃতভাবে মঞ্চে উঠে হাসান স্যার ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। তীব্র ভাষায় তিনি এসব ধৃষ্টতার প্রতিবাদ করলেন। চিৎকার করে বললেন, ‘কাকে আপনারা সাহায্য-সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছেন? তাঁর নিজের পাওনা টাকা তাঁকে বুঝিয়ে দিন! সেই টাকা আজকের বাজারদরে কত হয় হিসাব করুন। কে তাঁকে করুণা করে? কার এত বড় সাহস? করুণা পরে করবেন, আগে তো তাঁকে সম্মান দিন! তিনি নিজে তাঁর নাম রেখেছেন দেবদাস, যে নামটি প্রথম সুযোগে আপনাদের মুখে আসছে না, সংশোধন করে বলতে হচ্ছে বারবার! আপনারা কি তাঁকে সম্মান দিতে ডেকেছেন, নাকি আবারও অসম্মান করতে?.... আপনাদের প্রতি আমার আসলেই কোনো আশা নেই। আমি আমার ছাত্রছাত্রীদের প্রতি বলছি। বাবা-মায়েরা, তোমরা এই লোকটিকে দেখো। এই যে ছোটখাটো মানুষটি এখানে বসে আছেন, এঁকে দেখো। কারণ হিমালয় দেখতে যাওয়ার সুযোগ তোমাদের অনেকের হবে না, আজ এই সুযোগে তোমরা স্পর্ধার হিমালয় দেখে নাও। দেখে নাও দেশপ্রেমের আটলান্টিক মহাসাগর। দেখে নাও বিদ্রোহের সাহারা মরুভূমি। দেখে নাও স্বাধীনতার ধ্রুবতারাকে। আর আমাকে একটা কথা দাও। আপস করতে হলে সব বিষয়ে আপস কোরো, কিন্তু মা আর মাতৃভূমির সঙ্গে কোরো না। ভেজাল দিতে হলে সবকিছুতে দিয়ো, কিন্তু স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গে ভেজাল দিয়ো না। ভুলতে হলে সবাইকে ভুলে যেয়ো, কিন্তু এই মাটির প্রকৃত বীর এই মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো দিন ভুলে যেয়ো না।’
আজ, মাত্রই কিছুক্ষণ আগে অনুজপ্রতিম বন্ধুর কাছ থকে জানতে পারলাম, হাসান আজিজুল হক স্যার আর নেই। বাংলা সাহিত্য কাকে হারাল, সে বাংলা সাহিত্যের পাঠক আর সাহিত্যিকেরা জানেন। আমি বড়জোর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে, তাঁকে কাছে থেকে দেখতে পাওয়া সৌভাগ্যবানদের একজন হিসেবে এটুকু বলতে পারি—আপস না করা, ভেজাল না দেওয়া, শেকড়কে কিছুতেই না ভোলা এক অদম্য চেতনা আজ দেহ ত্যাগ করে অনন্তে মিলে গেলেন। এক জীবন্ত কিংবদন্তি আজ শাব্দিক অর্থেই কিংবদন্তি হয়ে গেলেন।
গুঞ্জন রহমান

১৯৯৭ সালের কথা। তখন আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে প্রথম বর্ষের ছাত্র। এক বিকেলের কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা, ক্যাম্পাসের পশ্চিম পাড়া দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলাম কোথাও। হঠাৎ দেখি লুঙ্গি ও স্যান্ডো গেঞ্জি পরিহিত বাবার বয়সী এক ভদ্রলোক এক হাতে হাঁসুয়া বা কাস্তে, অন্য হাতে ঘাসভর্তি বড়সড় একটা ছালার বস্তা নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে হেঁটে আসছেন। ঘাস কাটা এবং তা নিয়ে অত জোরে হেঁটে আসার পরিশ্রমে শরীর ঘর্মাক্ত, খানিকটা হাঁপাচ্ছেনও তিনি। আমি ঝট করে সাইকেল থকে নেমে গিয়ে তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি সালামের জবাব দিয়ে আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন। তারপর বললেন, ‘ফাস্ট ইয়ার?’
আমি লাজুক ভঙ্গিতে বললাম, ‘জি স্যার।’
‘বুঝতে পারছি। ফাস্ট ইয়ার এবং গ্রাম থকে এসেছ। এজন্য এই সব নর্ম এখনো ধরে রেখেছ। আজকাল মুরব্বিদের দেখলে কেউ সাইকেল থেকে নামা তো দূররে কথা, সালামই দেয় না!’
আমি কী বলব ভেবে পেলাম না। তিনি নিজে থেকেই বললেন, ‘শিক্ষকতা করে বড়জোর নিজের আর স্ত্রী-পুত্র পরিবারের পেট চলে হে ছোকরা। আর সাহিত্য করে তো গরুর রাখালের মজুরিটুকুও জোটে না। এই জন্য নিজেই ঘাস কাটতে যাই রোজ, বুঝলে?’
আমি জড়সড় হয়ে বললাম, ‘স্যার, বস্তাটা আমাকে দিন, আমি সাইকেলে করে আপনার বাসায় পৌঁছে দিই।’
‘অ! তুমি দেবে? রোজ দেবে? মানে, রোজ এই সময়ে এসে আমার ঘাসের বস্তা গোয়ালে পৌঁছে দিতে পারবে? নাকি ঘাসও কটে দেবে?’
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। বলার মতো কিছু খুঁজে পেলাম না। স্যার হাসলেন। প্রশ্রয়ের হাসি। হাসতে হাসতেই বললেন, ‘যার যেটা কাজ, তাকে সেটা করতে দিতে হয়। আমার গরুর ঘাস আমাকেই কাটতে হবে, আমাকেই গোয়ালে নিতে হবে। ওসব পোশাকি ভদ্রতা করার মানে হয় না। তোমার ইনটেনশন ভালো সেটা বুঝতে পারছি, কিন্তু যার যার লড়াই তার তার লড়ে যাওয়াই উচিত। যাও যাও। সাইকেলে উঠে কেটে পড়ো।’
এই হলো উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক স্যারের সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাতের হুবহু বর্ণনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রথম বছর থেকেই আমি থিয়েটার করতে শুরু করি। তীর্থক নামক থিয়েটার দলের কর্মী হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আমার পদচারণা শুরু। এর আগ বাবার কর্মসূত্রে আমার নিবাস ছিল গাইবান্ধা জেলার এক পাড়াগাঁয়ের মতো জায়গায়, যার নাম মহিমাগঞ্জ। চিনিকলের কলোনিতে থাকতাম, কাছাকাছি বড় শহর বগুড়ায় যেতাম কেনাকাটা করতে। সে সময় বইপত্র যা পড়তাম, তার মধ্যে সেবা প্রকাশনী আর কিছু ক্ল্যাসিক সাহিত্যের বাইরে সমকালীন লেখক হিসেবে হুমায়ূন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল—এই তিন নামই আমাদের কিশোরমহলে বেশ পরিচিত ছিল।
কবিতায় শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা—এঁদের বাইরে কবি-সাহিত্যিক খুব বেশি চেনা ছিল না। তেমনই একটা সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পা রেখেই জানতে পারলাম, বাংলাদেশের তথা বাংলা ভাষারই অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক হাসান আজিজুল হক এই অঙ্গনের একেবারে ঘরের মানুষ। ঠিক মুরব্বি হিসেবে দেখলেও তাঁকে কিছুটা দূরের মনে হতে পারে, কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গন তথা সবকিছুতেই তিনি এত বেশি কাছের মানুষ ছিলেন যে সামান্যতম দূরত্ব বোঝা যায় এমন কোনো বিশেষণই তাঁর জন্য প্রযোজ্য হয় না। আগেও হয়নি কোনো দিন, পরেও কখনো না। ওই যে বললাম, আটপৌরে লুঙ্গি-গেঞ্জি পরে ঘেমে-নেয়ে একাকার হয়ে ঘাস কাটা রাখালের বেশে তাঁকে আমার প্রথম দেখা; বরাবর তিনি ছিলেন এমনই একজন ঘরের মানুষ, যাঁকে দেখে শিক্ষকসুলভ সমীহ তো জাগেই, কিন্তু গুরুজনসুলভ ভীতি জাগে না। যাঁকে দেখে বাবা-চাচা-মামাদের মতো আপনজন মনে হয়, কিন্তু মাস্টারমশাইসুলভ দূরত্ব ধোপে টেকে না। সে জন্যই বুঝি ওই প্রথম বর্ষের ছাত্র থাকাকালীনই যখন আমাদের পরিবার দিনাজপুর জেলা শহরে স্থায়ী হলো, ছুটিছাঁটায় দিনাজপুরে গিয়ে সেখানকার শিল্পসাহিত্যের মানুষদের কাছে আমি রীতিমতো ঈর্ষার পাত্রে পরিণত হতাম। সেটা এই কারণে যে হাসান আজিজুল হকের মতো মহীরুহের সঙ্গে এই ছেলে চাইলে রোজ দেখা করতে পারে, কথা বলতে পারে, কোনো কারণ ছাড়াই তাঁর বাসায় পর্যন্ত চলে যেতে পারে!
ঠিক এই জায়গাতেই আপত্তি করেছিলেন তাঁর গুণমুগ্ধ সহকর্মী অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম স্যার। তিনি আমাদের সুযোগ পেলেই মনে করিয়ে দিতেন, ‘বাতাসের ভেতরে থেকে তো বাতাসের অস্তিত্ব বোঝা যায় না; তাই তোমরা বুঝতে চাও না, তিনি কত বড় মানুষ। কত বড় একজন চিন্তাশীল মানুষ, সৃজনশীল মানুষ। তাঁর জীবনের প্রতিটি সেকেন্ড মূল্যবান। এই যে তোমরা যখন-তখন হুট করে চলে যাও তাঁর কাছে, তিনি তখন হয় কিছু লিখছেন, নয়তো লেখার কথা ভাবছেন। তোমার কারণে সেই লেখার অপমৃত্যু হলো—এটা কি তুমি বোঝো? তাঁর সঙ্গে তোমার এক ঘণ্টা আড্ডায় তুমি সমৃদ্ধ হবে তাতে সন্দেহ নেই, কিন্তু বঞ্চিত হবে বাংলা সাহিত্য। তিনি ভীষণ সঙ্গপ্রিয় মানুষ, তিনি তোমাদের ভালোবাসেন, প্রশ্রয় দেন—এটা তাঁর মহানুভবতা। কিন্তু তাঁকে তাঁর মতো লিখতে দিতে হবে, নিরিবিলি সময় করে দিতে হবে—এটা তোমাদের দায়িত্ব।’
শহীদুল ইসলাম স্যারের এ কথায় কেউ তেমন কান দেয়নি, সবাই স্যারকে ঘিরে থেকেছে সব সময়, কিন্তু আমি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে চেষ্টা করতাম। পারতপক্ষে তাঁর কাছে ঘেঁষতাম না, একা একা তো কিছুতেই না। এমনিতেই প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনোভাবে তাঁকে দেখতে পেতাম, আলাদা করে একান্তে মিলিত হওয়ার দরকারই বা কী? আর আমি এত ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র যে তাঁর সঙ্গে দুদণ্ড কথা বলার যোগ্যতাও আমার নেই! শুধুই শুনে যাব বলে তাঁকে তাঁর সৃষ্টিকর্ম থেকে সরিয়ে রাখার কোনো অধিকার কি আমার আছে?
রাবির ছাত্র হিসেবে অন্য সবার চেয়ে একটু হলেও আলাদা করে স্যারকে দেখার সৌভাগ্য আমাদের হয়েছিল। আমার মনে পড়ছে, সম্ভবত ১৯৯৭ কিংবা ১৯৯৮ সালের কথা। সেবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থকে সংবর্ধনা দেওয়া হলো মুক্তিযুদ্ধের অকুতোভয় এক বীর যোদ্ধা, যিনি বন্দুক হাতে না নিয়েই এক অসম যুদ্ধ করেছিলেন মহাপরাক্রমশালী পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে এবং জয়ী হয়েছিলেন সেই যুদ্ধে—তিনি মজিবর রহমান দেবদাস স্যার। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সেনা ছাউনি করার এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে নির্বিচারে গণহত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন এই অসীম সাহসী শিক্ষক। পাকিস্তান আর্মির কমান্ডার যখন যুক্তি দিয়েছিলেন—এরা বিধর্মী কাফের, তাই এদের মেরে ফেলায় অন্যায় নেই, তখন এর প্রতিবাদে তিনি নিজের মজিবর রহমান নাম পরিবর্তন করে দেবদাস রেখেছিলেন। পাকিস্তানি আর্মি তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে অমানবিক নির্যাতন করে, যার কারণে তিনি একটা সময় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনার চাকরিটি হারান এই অজুহাতে যে চাকরিতে বহাল থাকার মতো তাঁর মানসিক ভারসাম্য নেই। বঞ্চিত করা হয় তাঁর সারা জীবনের চাকরি থকে অর্জিত অর্থনৈতিক সুবিধা থেকে। প্রকৃতপক্ষে এ সবই ছিল স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের যোগসাজশ।
১৯৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতায় ফিরলে স্যারকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান ও চাকরিজীবনের আর্থিক অর্জন ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়, যার প্রথম পদক্ষেপ ছিল সেই সংবর্ধনা। সেই অনুষ্ঠানে অনিচ্ছাকৃতভাবে বারবার স্যারের নামটি ভুল বললেও আবার সংশোধন করে নিচ্ছিলেন বক্তারা, বিশ্ববিদ্যালয়ের নানান উচ্চপদে আসীন ব্যক্তিরা দেবদাস স্যারকে “আর্থিক সহায়তার আশ্বাস” দিচ্ছিলেন। হঠাৎ অনিচ্ছাকৃতভাবে মঞ্চে উঠে হাসান স্যার ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। তীব্র ভাষায় তিনি এসব ধৃষ্টতার প্রতিবাদ করলেন। চিৎকার করে বললেন, ‘কাকে আপনারা সাহায্য-সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছেন? তাঁর নিজের পাওনা টাকা তাঁকে বুঝিয়ে দিন! সেই টাকা আজকের বাজারদরে কত হয় হিসাব করুন। কে তাঁকে করুণা করে? কার এত বড় সাহস? করুণা পরে করবেন, আগে তো তাঁকে সম্মান দিন! তিনি নিজে তাঁর নাম রেখেছেন দেবদাস, যে নামটি প্রথম সুযোগে আপনাদের মুখে আসছে না, সংশোধন করে বলতে হচ্ছে বারবার! আপনারা কি তাঁকে সম্মান দিতে ডেকেছেন, নাকি আবারও অসম্মান করতে?.... আপনাদের প্রতি আমার আসলেই কোনো আশা নেই। আমি আমার ছাত্রছাত্রীদের প্রতি বলছি। বাবা-মায়েরা, তোমরা এই লোকটিকে দেখো। এই যে ছোটখাটো মানুষটি এখানে বসে আছেন, এঁকে দেখো। কারণ হিমালয় দেখতে যাওয়ার সুযোগ তোমাদের অনেকের হবে না, আজ এই সুযোগে তোমরা স্পর্ধার হিমালয় দেখে নাও। দেখে নাও দেশপ্রেমের আটলান্টিক মহাসাগর। দেখে নাও বিদ্রোহের সাহারা মরুভূমি। দেখে নাও স্বাধীনতার ধ্রুবতারাকে। আর আমাকে একটা কথা দাও। আপস করতে হলে সব বিষয়ে আপস কোরো, কিন্তু মা আর মাতৃভূমির সঙ্গে কোরো না। ভেজাল দিতে হলে সবকিছুতে দিয়ো, কিন্তু স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গে ভেজাল দিয়ো না। ভুলতে হলে সবাইকে ভুলে যেয়ো, কিন্তু এই মাটির প্রকৃত বীর এই মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো দিন ভুলে যেয়ো না।’
আজ, মাত্রই কিছুক্ষণ আগে অনুজপ্রতিম বন্ধুর কাছ থকে জানতে পারলাম, হাসান আজিজুল হক স্যার আর নেই। বাংলা সাহিত্য কাকে হারাল, সে বাংলা সাহিত্যের পাঠক আর সাহিত্যিকেরা জানেন। আমি বড়জোর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে, তাঁকে কাছে থেকে দেখতে পাওয়া সৌভাগ্যবানদের একজন হিসেবে এটুকু বলতে পারি—আপস না করা, ভেজাল না দেওয়া, শেকড়কে কিছুতেই না ভোলা এক অদম্য চেতনা আজ দেহ ত্যাগ করে অনন্তে মিলে গেলেন। এক জীবন্ত কিংবদন্তি আজ শাব্দিক অর্থেই কিংবদন্তি হয়ে গেলেন।

১৯৯৭ সালের কথা। তখন আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে প্রথম বর্ষের ছাত্র। এক বিকেলের কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা, ক্যাম্পাসের পশ্চিম পাড়া দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলাম কোথাও। হঠাৎ দেখি লুঙ্গি ও স্যান্ডো গেঞ্জি পরিহিত বাবার বয়সী এক ভদ্রলোক এক হাতে হাঁসুয়া বা কাস্তে, অন্য হাতে ঘাসভর্তি বড়সড় একটা ছালার বস্তা নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে হেঁটে আসছেন। ঘাস কাটা এবং তা নিয়ে অত জোরে হেঁটে আসার পরিশ্রমে শরীর ঘর্মাক্ত, খানিকটা হাঁপাচ্ছেনও তিনি। আমি ঝট করে সাইকেল থকে নেমে গিয়ে তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি সালামের জবাব দিয়ে আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন। তারপর বললেন, ‘ফাস্ট ইয়ার?’
আমি লাজুক ভঙ্গিতে বললাম, ‘জি স্যার।’
‘বুঝতে পারছি। ফাস্ট ইয়ার এবং গ্রাম থকে এসেছ। এজন্য এই সব নর্ম এখনো ধরে রেখেছ। আজকাল মুরব্বিদের দেখলে কেউ সাইকেল থেকে নামা তো দূররে কথা, সালামই দেয় না!’
আমি কী বলব ভেবে পেলাম না। তিনি নিজে থেকেই বললেন, ‘শিক্ষকতা করে বড়জোর নিজের আর স্ত্রী-পুত্র পরিবারের পেট চলে হে ছোকরা। আর সাহিত্য করে তো গরুর রাখালের মজুরিটুকুও জোটে না। এই জন্য নিজেই ঘাস কাটতে যাই রোজ, বুঝলে?’
আমি জড়সড় হয়ে বললাম, ‘স্যার, বস্তাটা আমাকে দিন, আমি সাইকেলে করে আপনার বাসায় পৌঁছে দিই।’
‘অ! তুমি দেবে? রোজ দেবে? মানে, রোজ এই সময়ে এসে আমার ঘাসের বস্তা গোয়ালে পৌঁছে দিতে পারবে? নাকি ঘাসও কটে দেবে?’
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। বলার মতো কিছু খুঁজে পেলাম না। স্যার হাসলেন। প্রশ্রয়ের হাসি। হাসতে হাসতেই বললেন, ‘যার যেটা কাজ, তাকে সেটা করতে দিতে হয়। আমার গরুর ঘাস আমাকেই কাটতে হবে, আমাকেই গোয়ালে নিতে হবে। ওসব পোশাকি ভদ্রতা করার মানে হয় না। তোমার ইনটেনশন ভালো সেটা বুঝতে পারছি, কিন্তু যার যার লড়াই তার তার লড়ে যাওয়াই উচিত। যাও যাও। সাইকেলে উঠে কেটে পড়ো।’
এই হলো উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক স্যারের সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাতের হুবহু বর্ণনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রথম বছর থেকেই আমি থিয়েটার করতে শুরু করি। তীর্থক নামক থিয়েটার দলের কর্মী হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আমার পদচারণা শুরু। এর আগ বাবার কর্মসূত্রে আমার নিবাস ছিল গাইবান্ধা জেলার এক পাড়াগাঁয়ের মতো জায়গায়, যার নাম মহিমাগঞ্জ। চিনিকলের কলোনিতে থাকতাম, কাছাকাছি বড় শহর বগুড়ায় যেতাম কেনাকাটা করতে। সে সময় বইপত্র যা পড়তাম, তার মধ্যে সেবা প্রকাশনী আর কিছু ক্ল্যাসিক সাহিত্যের বাইরে সমকালীন লেখক হিসেবে হুমায়ূন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল—এই তিন নামই আমাদের কিশোরমহলে বেশ পরিচিত ছিল।
কবিতায় শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা—এঁদের বাইরে কবি-সাহিত্যিক খুব বেশি চেনা ছিল না। তেমনই একটা সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পা রেখেই জানতে পারলাম, বাংলাদেশের তথা বাংলা ভাষারই অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক হাসান আজিজুল হক এই অঙ্গনের একেবারে ঘরের মানুষ। ঠিক মুরব্বি হিসেবে দেখলেও তাঁকে কিছুটা দূরের মনে হতে পারে, কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গন তথা সবকিছুতেই তিনি এত বেশি কাছের মানুষ ছিলেন যে সামান্যতম দূরত্ব বোঝা যায় এমন কোনো বিশেষণই তাঁর জন্য প্রযোজ্য হয় না। আগেও হয়নি কোনো দিন, পরেও কখনো না। ওই যে বললাম, আটপৌরে লুঙ্গি-গেঞ্জি পরে ঘেমে-নেয়ে একাকার হয়ে ঘাস কাটা রাখালের বেশে তাঁকে আমার প্রথম দেখা; বরাবর তিনি ছিলেন এমনই একজন ঘরের মানুষ, যাঁকে দেখে শিক্ষকসুলভ সমীহ তো জাগেই, কিন্তু গুরুজনসুলভ ভীতি জাগে না। যাঁকে দেখে বাবা-চাচা-মামাদের মতো আপনজন মনে হয়, কিন্তু মাস্টারমশাইসুলভ দূরত্ব ধোপে টেকে না। সে জন্যই বুঝি ওই প্রথম বর্ষের ছাত্র থাকাকালীনই যখন আমাদের পরিবার দিনাজপুর জেলা শহরে স্থায়ী হলো, ছুটিছাঁটায় দিনাজপুরে গিয়ে সেখানকার শিল্পসাহিত্যের মানুষদের কাছে আমি রীতিমতো ঈর্ষার পাত্রে পরিণত হতাম। সেটা এই কারণে যে হাসান আজিজুল হকের মতো মহীরুহের সঙ্গে এই ছেলে চাইলে রোজ দেখা করতে পারে, কথা বলতে পারে, কোনো কারণ ছাড়াই তাঁর বাসায় পর্যন্ত চলে যেতে পারে!
ঠিক এই জায়গাতেই আপত্তি করেছিলেন তাঁর গুণমুগ্ধ সহকর্মী অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম স্যার। তিনি আমাদের সুযোগ পেলেই মনে করিয়ে দিতেন, ‘বাতাসের ভেতরে থেকে তো বাতাসের অস্তিত্ব বোঝা যায় না; তাই তোমরা বুঝতে চাও না, তিনি কত বড় মানুষ। কত বড় একজন চিন্তাশীল মানুষ, সৃজনশীল মানুষ। তাঁর জীবনের প্রতিটি সেকেন্ড মূল্যবান। এই যে তোমরা যখন-তখন হুট করে চলে যাও তাঁর কাছে, তিনি তখন হয় কিছু লিখছেন, নয়তো লেখার কথা ভাবছেন। তোমার কারণে সেই লেখার অপমৃত্যু হলো—এটা কি তুমি বোঝো? তাঁর সঙ্গে তোমার এক ঘণ্টা আড্ডায় তুমি সমৃদ্ধ হবে তাতে সন্দেহ নেই, কিন্তু বঞ্চিত হবে বাংলা সাহিত্য। তিনি ভীষণ সঙ্গপ্রিয় মানুষ, তিনি তোমাদের ভালোবাসেন, প্রশ্রয় দেন—এটা তাঁর মহানুভবতা। কিন্তু তাঁকে তাঁর মতো লিখতে দিতে হবে, নিরিবিলি সময় করে দিতে হবে—এটা তোমাদের দায়িত্ব।’
শহীদুল ইসলাম স্যারের এ কথায় কেউ তেমন কান দেয়নি, সবাই স্যারকে ঘিরে থেকেছে সব সময়, কিন্তু আমি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে চেষ্টা করতাম। পারতপক্ষে তাঁর কাছে ঘেঁষতাম না, একা একা তো কিছুতেই না। এমনিতেই প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনোভাবে তাঁকে দেখতে পেতাম, আলাদা করে একান্তে মিলিত হওয়ার দরকারই বা কী? আর আমি এত ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র যে তাঁর সঙ্গে দুদণ্ড কথা বলার যোগ্যতাও আমার নেই! শুধুই শুনে যাব বলে তাঁকে তাঁর সৃষ্টিকর্ম থেকে সরিয়ে রাখার কোনো অধিকার কি আমার আছে?
রাবির ছাত্র হিসেবে অন্য সবার চেয়ে একটু হলেও আলাদা করে স্যারকে দেখার সৌভাগ্য আমাদের হয়েছিল। আমার মনে পড়ছে, সম্ভবত ১৯৯৭ কিংবা ১৯৯৮ সালের কথা। সেবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থকে সংবর্ধনা দেওয়া হলো মুক্তিযুদ্ধের অকুতোভয় এক বীর যোদ্ধা, যিনি বন্দুক হাতে না নিয়েই এক অসম যুদ্ধ করেছিলেন মহাপরাক্রমশালী পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে এবং জয়ী হয়েছিলেন সেই যুদ্ধে—তিনি মজিবর রহমান দেবদাস স্যার। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সেনা ছাউনি করার এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে নির্বিচারে গণহত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন এই অসীম সাহসী শিক্ষক। পাকিস্তান আর্মির কমান্ডার যখন যুক্তি দিয়েছিলেন—এরা বিধর্মী কাফের, তাই এদের মেরে ফেলায় অন্যায় নেই, তখন এর প্রতিবাদে তিনি নিজের মজিবর রহমান নাম পরিবর্তন করে দেবদাস রেখেছিলেন। পাকিস্তানি আর্মি তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে অমানবিক নির্যাতন করে, যার কারণে তিনি একটা সময় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনার চাকরিটি হারান এই অজুহাতে যে চাকরিতে বহাল থাকার মতো তাঁর মানসিক ভারসাম্য নেই। বঞ্চিত করা হয় তাঁর সারা জীবনের চাকরি থকে অর্জিত অর্থনৈতিক সুবিধা থেকে। প্রকৃতপক্ষে এ সবই ছিল স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের যোগসাজশ।
১৯৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতায় ফিরলে স্যারকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান ও চাকরিজীবনের আর্থিক অর্জন ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়, যার প্রথম পদক্ষেপ ছিল সেই সংবর্ধনা। সেই অনুষ্ঠানে অনিচ্ছাকৃতভাবে বারবার স্যারের নামটি ভুল বললেও আবার সংশোধন করে নিচ্ছিলেন বক্তারা, বিশ্ববিদ্যালয়ের নানান উচ্চপদে আসীন ব্যক্তিরা দেবদাস স্যারকে “আর্থিক সহায়তার আশ্বাস” দিচ্ছিলেন। হঠাৎ অনিচ্ছাকৃতভাবে মঞ্চে উঠে হাসান স্যার ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। তীব্র ভাষায় তিনি এসব ধৃষ্টতার প্রতিবাদ করলেন। চিৎকার করে বললেন, ‘কাকে আপনারা সাহায্য-সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছেন? তাঁর নিজের পাওনা টাকা তাঁকে বুঝিয়ে দিন! সেই টাকা আজকের বাজারদরে কত হয় হিসাব করুন। কে তাঁকে করুণা করে? কার এত বড় সাহস? করুণা পরে করবেন, আগে তো তাঁকে সম্মান দিন! তিনি নিজে তাঁর নাম রেখেছেন দেবদাস, যে নামটি প্রথম সুযোগে আপনাদের মুখে আসছে না, সংশোধন করে বলতে হচ্ছে বারবার! আপনারা কি তাঁকে সম্মান দিতে ডেকেছেন, নাকি আবারও অসম্মান করতে?.... আপনাদের প্রতি আমার আসলেই কোনো আশা নেই। আমি আমার ছাত্রছাত্রীদের প্রতি বলছি। বাবা-মায়েরা, তোমরা এই লোকটিকে দেখো। এই যে ছোটখাটো মানুষটি এখানে বসে আছেন, এঁকে দেখো। কারণ হিমালয় দেখতে যাওয়ার সুযোগ তোমাদের অনেকের হবে না, আজ এই সুযোগে তোমরা স্পর্ধার হিমালয় দেখে নাও। দেখে নাও দেশপ্রেমের আটলান্টিক মহাসাগর। দেখে নাও বিদ্রোহের সাহারা মরুভূমি। দেখে নাও স্বাধীনতার ধ্রুবতারাকে। আর আমাকে একটা কথা দাও। আপস করতে হলে সব বিষয়ে আপস কোরো, কিন্তু মা আর মাতৃভূমির সঙ্গে কোরো না। ভেজাল দিতে হলে সবকিছুতে দিয়ো, কিন্তু স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গে ভেজাল দিয়ো না। ভুলতে হলে সবাইকে ভুলে যেয়ো, কিন্তু এই মাটির প্রকৃত বীর এই মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো দিন ভুলে যেয়ো না।’
আজ, মাত্রই কিছুক্ষণ আগে অনুজপ্রতিম বন্ধুর কাছ থকে জানতে পারলাম, হাসান আজিজুল হক স্যার আর নেই। বাংলা সাহিত্য কাকে হারাল, সে বাংলা সাহিত্যের পাঠক আর সাহিত্যিকেরা জানেন। আমি বড়জোর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে, তাঁকে কাছে থেকে দেখতে পাওয়া সৌভাগ্যবানদের একজন হিসেবে এটুকু বলতে পারি—আপস না করা, ভেজাল না দেওয়া, শেকড়কে কিছুতেই না ভোলা এক অদম্য চেতনা আজ দেহ ত্যাগ করে অনন্তে মিলে গেলেন। এক জীবন্ত কিংবদন্তি আজ শাব্দিক অর্থেই কিংবদন্তি হয়ে গেলেন।

ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
১ দিন আগে
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
২ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে। শুধু তা-ই নয়, তাঁকে কিন্তু কখনো গহিন অরণ্যের আস্তানায় সশস্ত্র রক্ষীবেষ্টিত হয়ে আত্মগোপনে থাকতে হয়নি। তাঁর মাদক কারবারের আয় গোটা দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখত। আর তাঁকে কখনো জেলে যাওয়ার চিন্তা করতে হয়নি। কারণ, মাদক-সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা যাঁদের ছিল, তাঁরা সবাই ছিলেন তাঁর বেতনভুক্ত কর্মচারী!
তিনি আর কেউ নন, তিনি রানি ভিক্টোরিয়া। তাঁর হাতে ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দণ্ড।
রানি ভিক্টোরিয়া শুধু সাম্রাজ্য পরিচালনাতেই মাদক ব্যবহার করেননি, ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি ছিলেন বিভিন্ন ধরনের ড্রাগের ভক্ত। সিংহাসনে আরোহণের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর।
ভিক্টোরিয়ার অন্যতম প্রিয় মাদক ছিল আফিম। ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটেনে আফিম সেবনের ফ্যাশনেবল উপায় ছিল—অ্যালকোহলের সঙ্গে মিশিয়ে লডেনাম আকারে পান করা। তীব্র ব্যথা বা অস্বস্তি দূর করতে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। এমনকি দাঁত ওঠার সময় শিশুদের জন্যও এটি সুপারিশ করতেন চিকিৎসকেরা। রানি ভিক্টোরিয়াও প্রতিদিন সকালে এক ঢোক লডেনাম পান করে দিন শুরু করতেন।
এ ছাড়া তিনি সেবন করতেন কোকেন। এটি তখন ছিল সম্পূর্ণ নতুন এবং বৈধ। দাঁতের ব্যথা উপশম এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য রানি কোকেন মিশ্রিত চুইংগাম ও ওয়াইন পছন্দ করতেন। প্রসবের সময় অসহনীয় যন্ত্রণা কমাতে তিনি সানন্দে ক্লোরোফর্ম গ্রহণ করেন এবং এই অভিজ্ঞতাটিকে ‘স্বর্গীয়’ বলে বর্ণনা করেছেন।
১৮৩৭ সালে যখন ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে বসেন, উত্তরাধিকারসূত্রে একটি বড় সংকটের বোঝা তাঁর ঘাড়ে চাপে—ব্রিটিশরা চীন থেকে বিপুল পরিমাণ চা আমদানি করত। এর ফলে ব্রিটেনের সব অর্থ চীনে চলে যাচ্ছিল। আর ওই সময় ব্রিটিশদের হাতে চীনে রপ্তানি করার মতো কিছু ছিল না। ব্রিটেন মরিয়া হয়ে এমন একটি পণ্যের সন্ধান করছিল, যা চীনের লোকেরা চাইবে।
এ সমস্যার সমাধান ছিল আফিম। ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত ভারতে প্রচুর আফিম উৎপাদিত হতো। এটি ছিল অত্যন্ত কার্যকর ব্যথানাশক এবং মারাত্মকভাবে আসক্তি সৃষ্টিকারী। ফলে চীনের লোকেরা এর জন্য প্রচুর দাম দিতে প্রস্তুত ছিল। রানি ভিক্টোরিয়ার শাসন শুরু হওয়ার পর, চীনে আফিমের চালান দ্রুত বাড়তে থাকে। আফিমের কল্যাণে রাতারাতি বাণিজ্য ভারসাম্য বদলে যায়। চীনই ব্রিটিশদের কাছে ঋণী হতে শুরু করে। মাদক কারবার থেকে আসা অর্থ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মোট বার্ষিক আয়ের ১৫ থেকে ২০ শতাংশে দাঁড়ায়।
চীন সরকার মরিয়া হয়ে আফিমের প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে। চীনের সম্রাট এই কাজের জন্য প্রশাসক লিন জেক্সুকে নিয়োগ করেন। জেক্সু রানি ভিক্টোরিয়ার কাছে একটি চিঠি লিখে ব্রিটিশদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন—চীন যেখানে চা, রেশম ও মৃৎপাত্রের মতো উপকারী পণ্য পাঠাচ্ছে, সেখানে ব্রিটেন কেন তার বিনিময়ে কোটি কোটি মানুষকে ক্ষতিকর মাদক পাঠাচ্ছে?
রানি সেই চিঠি পড়ারও প্রয়োজন বোধ করেননি। ফলে ১৮৩৯ সালের বসন্তে লিন জেক্সু ব্রিটিশ জাহাজ বহর আটক করেন এবং প্রায় আড়াই মিলিয়ন পাউন্ড আফিম দক্ষিণ চীন সাগরে ফেলে দেন।
মাত্র ২০ বছর বয়সী রানি ভিক্টোরিয়া এই ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। যেকোনো ক্ষমতাধর সাম্রাজ্যবাদী কিশোরীর মতো তাঁর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল প্রত্যাশিতই—তিনি চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এটিই ইতিহাসে প্রথম ‘আফিম যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।
ব্রিটিশ বাহিনী চীনা সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে এবং হাজার হাজার চীনা নাগরিককে হত্যা করে। সম্রাট বাধ্য হয়ে একটি অসম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির ফলে হংকংকে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিতে হয়। চীনে আফিম ঢোকার জন্য আরও বন্দর খুলে দেওয়া হয় এবং চীনে বসবাসকারী ব্রিটিশ নাগরিকেরা আইনি সুরক্ষা পান।
এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে চীন সাম্রাজ্যের অজেয় ভাবমূর্তি ভেঙে দেয়। এভাবেই একজন একগুঁয়ে কিশোরী রানি একটি প্রাচীন, মর্যাদাপূর্ণ সভ্যতাকে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করেন। এই নির্মম, নির্লজ্জ আত্মস্বার্থই রানি ভিক্টোরিয়াকে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল মাদক সম্রাট বানিয়ে তোলে!
তথ্যসূত্র: টাইম

ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে। শুধু তা-ই নয়, তাঁকে কিন্তু কখনো গহিন অরণ্যের আস্তানায় সশস্ত্র রক্ষীবেষ্টিত হয়ে আত্মগোপনে থাকতে হয়নি। তাঁর মাদক কারবারের আয় গোটা দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখত। আর তাঁকে কখনো জেলে যাওয়ার চিন্তা করতে হয়নি। কারণ, মাদক-সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা যাঁদের ছিল, তাঁরা সবাই ছিলেন তাঁর বেতনভুক্ত কর্মচারী!
তিনি আর কেউ নন, তিনি রানি ভিক্টোরিয়া। তাঁর হাতে ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দণ্ড।
রানি ভিক্টোরিয়া শুধু সাম্রাজ্য পরিচালনাতেই মাদক ব্যবহার করেননি, ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি ছিলেন বিভিন্ন ধরনের ড্রাগের ভক্ত। সিংহাসনে আরোহণের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর।
ভিক্টোরিয়ার অন্যতম প্রিয় মাদক ছিল আফিম। ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটেনে আফিম সেবনের ফ্যাশনেবল উপায় ছিল—অ্যালকোহলের সঙ্গে মিশিয়ে লডেনাম আকারে পান করা। তীব্র ব্যথা বা অস্বস্তি দূর করতে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। এমনকি দাঁত ওঠার সময় শিশুদের জন্যও এটি সুপারিশ করতেন চিকিৎসকেরা। রানি ভিক্টোরিয়াও প্রতিদিন সকালে এক ঢোক লডেনাম পান করে দিন শুরু করতেন।
এ ছাড়া তিনি সেবন করতেন কোকেন। এটি তখন ছিল সম্পূর্ণ নতুন এবং বৈধ। দাঁতের ব্যথা উপশম এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য রানি কোকেন মিশ্রিত চুইংগাম ও ওয়াইন পছন্দ করতেন। প্রসবের সময় অসহনীয় যন্ত্রণা কমাতে তিনি সানন্দে ক্লোরোফর্ম গ্রহণ করেন এবং এই অভিজ্ঞতাটিকে ‘স্বর্গীয়’ বলে বর্ণনা করেছেন।
১৮৩৭ সালে যখন ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে বসেন, উত্তরাধিকারসূত্রে একটি বড় সংকটের বোঝা তাঁর ঘাড়ে চাপে—ব্রিটিশরা চীন থেকে বিপুল পরিমাণ চা আমদানি করত। এর ফলে ব্রিটেনের সব অর্থ চীনে চলে যাচ্ছিল। আর ওই সময় ব্রিটিশদের হাতে চীনে রপ্তানি করার মতো কিছু ছিল না। ব্রিটেন মরিয়া হয়ে এমন একটি পণ্যের সন্ধান করছিল, যা চীনের লোকেরা চাইবে।
এ সমস্যার সমাধান ছিল আফিম। ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত ভারতে প্রচুর আফিম উৎপাদিত হতো। এটি ছিল অত্যন্ত কার্যকর ব্যথানাশক এবং মারাত্মকভাবে আসক্তি সৃষ্টিকারী। ফলে চীনের লোকেরা এর জন্য প্রচুর দাম দিতে প্রস্তুত ছিল। রানি ভিক্টোরিয়ার শাসন শুরু হওয়ার পর, চীনে আফিমের চালান দ্রুত বাড়তে থাকে। আফিমের কল্যাণে রাতারাতি বাণিজ্য ভারসাম্য বদলে যায়। চীনই ব্রিটিশদের কাছে ঋণী হতে শুরু করে। মাদক কারবার থেকে আসা অর্থ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মোট বার্ষিক আয়ের ১৫ থেকে ২০ শতাংশে দাঁড়ায়।
চীন সরকার মরিয়া হয়ে আফিমের প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে। চীনের সম্রাট এই কাজের জন্য প্রশাসক লিন জেক্সুকে নিয়োগ করেন। জেক্সু রানি ভিক্টোরিয়ার কাছে একটি চিঠি লিখে ব্রিটিশদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন—চীন যেখানে চা, রেশম ও মৃৎপাত্রের মতো উপকারী পণ্য পাঠাচ্ছে, সেখানে ব্রিটেন কেন তার বিনিময়ে কোটি কোটি মানুষকে ক্ষতিকর মাদক পাঠাচ্ছে?
রানি সেই চিঠি পড়ারও প্রয়োজন বোধ করেননি। ফলে ১৮৩৯ সালের বসন্তে লিন জেক্সু ব্রিটিশ জাহাজ বহর আটক করেন এবং প্রায় আড়াই মিলিয়ন পাউন্ড আফিম দক্ষিণ চীন সাগরে ফেলে দেন।
মাত্র ২০ বছর বয়সী রানি ভিক্টোরিয়া এই ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। যেকোনো ক্ষমতাধর সাম্রাজ্যবাদী কিশোরীর মতো তাঁর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল প্রত্যাশিতই—তিনি চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এটিই ইতিহাসে প্রথম ‘আফিম যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।
ব্রিটিশ বাহিনী চীনা সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে এবং হাজার হাজার চীনা নাগরিককে হত্যা করে। সম্রাট বাধ্য হয়ে একটি অসম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির ফলে হংকংকে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিতে হয়। চীনে আফিম ঢোকার জন্য আরও বন্দর খুলে দেওয়া হয় এবং চীনে বসবাসকারী ব্রিটিশ নাগরিকেরা আইনি সুরক্ষা পান।
এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে চীন সাম্রাজ্যের অজেয় ভাবমূর্তি ভেঙে দেয়। এভাবেই একজন একগুঁয়ে কিশোরী রানি একটি প্রাচীন, মর্যাদাপূর্ণ সভ্যতাকে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করেন। এই নির্মম, নির্লজ্জ আত্মস্বার্থই রানি ভিক্টোরিয়াকে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল মাদক সম্রাট বানিয়ে তোলে!
তথ্যসূত্র: টাইম

১৯৯৭ সালরে কথা। তখন আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র। এক বিকেলের কথা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা, ক্যাম্পাসরে পশ্চিম পাড়া দিয়ে আমি সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলাম কোথাও।
১৬ নভেম্বর ২০২১
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
২ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া হবে।
বুকার পুরস্কারের ইতিহাসে এই প্রথমবার বিচারক প্যানেলে থাকবে শিশুরাও। বর্তমান চিলড্রেনস লরিয়েট শিশুসাহিত্যিক ফ্রাঙ্ক কটরেল-বয়েস বিচারকদের উদ্বোধনী প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁর সঙ্গে আরও দুজন প্রাপ্তবয়স্ক বিচারক থাকবেন, যাঁরা প্রথমে আটটি বইয়ের একটি শর্টলিস্ট তৈরি করবেন। এরপর বিজয়ী নির্ধারণে সহায়তা করার জন্য তিনজন শিশু বিচারক নির্বাচিত হবেন।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, প্রতিবছর চিলড্রেনস বুকার প্রাইজের জন্য শর্টলিস্টেড হওয়া এবং বিজয়ী বইগুলোর ৩০ হাজার কপি শিশুদের উপহার দেওয়া হবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট, দ্য রিডিং এজেন্সি, বুকব্যাংকস এবং চিলড্রেনস বুক প্রজেক্টসহ বিভিন্ন সহযোগী সংস্থাদের মাধ্যমে এ বইগুলো দেওয়া হবে। গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে শিশুদের ‘আনন্দ নিয়ে পড়া’র প্রবণতা। এমন সময় বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন এ উদ্যোগটি নিল।
কটরেল-বয়েস বলেন, এই পুরস্কার শিশুদের উপভোগ করার মতো বই খুঁজে বের করা সহজ করে তুলবে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি শিশুরই বইয়ের জগতে ডুব দেওয়ার যে আনন্দ, তা উপভোগ করার সুযোগ পাওয়া উচিত। বিচারক প্যানেলে তাদের আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে এবং মনোনীত বইগুলো উপহার দেওয়ার মাধ্যমে হাজার হাজার শিশুকে বই পড়ার চমৎকার দুনিয়ায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘এটা বেশ দারুণ আয়োজন হতে যাচ্ছে।’ তিনি মজা করে বলেন, ‘চলুন, হইচই শুরু করা যাক!’
শিশুসাহিত্য জগতের শীর্ষ লেখকদের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে এ ঘোষণা। সাবেক শিশুসাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত মালরি ব্ল্যাকম্যান, জ্যাকলিন উইলসন, মাইকেল মরপুরগো, ক্রেসিডা কাউয়েল, অ্যান ফাইন এবং জোসেফ কোয়েলোরা—সবাই নতুন এই পুরস্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ইংরেজিতে লেখা বা ইংরেজিতে অনূদিত এবং যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত সমসাময়িক শিশুসাহিত্যগুলোতে এ পুরস্কার দেওয়া হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের বুকার এবং আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারের মতোই বিজয়ী লেখক ৫০ হাজার পাউন্ড এবং শর্টলিস্টেড লেখকেরা প্রত্যেকে ২ হাজার ৫০০ পাউন্ড পাবেন।
প্রথম চিলড্রেনস বুকার পুরস্কারের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ২০২৬ সালের বসন্তে। বিচারক হতে শিশুদের আবেদন প্রক্রিয়াও এই সময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই বছরের নভেম্বরে ঘোষণা করা হবে শর্টলিস্ট এবং শিশু বিচারকদের নাম। বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তরুণ পাঠকদের জন্য আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে। ২০২৭ সালের পুরস্কারের জন্য ২০২৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশিত বই হতে হবে।
শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিল্পকলায় সমর্থন এবং জলবায়ু-সংকট মোকাবিলায় কাজ করা দাতব্য সংস্থা একেও ফাউন্ডেশনের (AKO Foundation) সহযোগিতায় এ পুরস্কার পরিচালিত হবে।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী (সিইও) গ্যাবি উড বলেন, ‘২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক বুকার প্রাইজ চালুর পর গত ২০ বছরে আমাদের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোগ চিলড্রেনস বুকার। এর একাধিক লক্ষ্য রয়েছে। একদিকে এটি শিশুদের জন্য লেখা ভবিষ্যৎ ক্লাসিক সাহিত্যকে সম্মান জানাবে, অন্যদিকে এটি এমন একটি সামাজিক উদ্যোগ, যা তরুণদের আরও বেশি করে পড়াশোনায় অনুপ্রাণিত করবে। এর মাধ্যমেই আমরা এমন এক বীজ রোপণ করতে চাই, যেখান থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আজীবন পাঠকেরা বিকশিত হবে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, শিশুদের বিশেষ করে শিশুসাহিত্যের আসল বিচারকদের মতামত শোনার জন্য।
একেও ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ফিলিপ ল-ফোর্ড বলেন, ‘এই অংশীদারত্ব ফাউন্ডেশনের সাক্ষরতা বৃদ্ধি ও সামাজিক গতিশীলতা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। আমরা গর্বিত যে এমন একটি প্রকল্পে অবদান রাখতে পারছি, যা তরুণ পাঠকদের অনুপ্রাণিত ও ক্ষমতায়িত করবে।’
বিনো ব্রেইন নামের একটি যুব গবেষণা সংস্থা ও ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্টের সহযোগিতায় নিয়মিত পরামর্শ সেশনের মাধ্যমে শিশুরা এই পুরস্কারের গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট শিশুদের পড়ার অভ্যাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা মূল্যায়নে সহায়তা করবে।
বুকার ফাউন্ডেশনের মতে, এই নতুন পুরস্কারটি শিশুসাহিত্যকে ‘সংস্কৃতির কেন্দ্রে স্থাপন’ করার একটি প্রচেষ্টা। সিইও গ্যাবি উড বলেন, ‘এই উদ্যোগের লক্ষ্য শুধু শিশুসাহিত্যে উৎকর্ষকে স্বীকৃতি দেওয়া নয়, বরং আরও বেশি তরুণকে এমন গল্প ও চরিত্র আবিষ্কারে সহায়তা করা ‘যারা তাদের সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকবে।’
বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সাহিত্য পুরস্কার বুকার প্রাইজ প্রথম প্রদান করা হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত ইংরেজিতে রচিত অসাধারণ কথাসাহিত্যকে সম্মান জানাতে এই পুরস্কার প্রবর্তিত হয়।

শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া হবে।
বুকার পুরস্কারের ইতিহাসে এই প্রথমবার বিচারক প্যানেলে থাকবে শিশুরাও। বর্তমান চিলড্রেনস লরিয়েট শিশুসাহিত্যিক ফ্রাঙ্ক কটরেল-বয়েস বিচারকদের উদ্বোধনী প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁর সঙ্গে আরও দুজন প্রাপ্তবয়স্ক বিচারক থাকবেন, যাঁরা প্রথমে আটটি বইয়ের একটি শর্টলিস্ট তৈরি করবেন। এরপর বিজয়ী নির্ধারণে সহায়তা করার জন্য তিনজন শিশু বিচারক নির্বাচিত হবেন।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, প্রতিবছর চিলড্রেনস বুকার প্রাইজের জন্য শর্টলিস্টেড হওয়া এবং বিজয়ী বইগুলোর ৩০ হাজার কপি শিশুদের উপহার দেওয়া হবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট, দ্য রিডিং এজেন্সি, বুকব্যাংকস এবং চিলড্রেনস বুক প্রজেক্টসহ বিভিন্ন সহযোগী সংস্থাদের মাধ্যমে এ বইগুলো দেওয়া হবে। গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে শিশুদের ‘আনন্দ নিয়ে পড়া’র প্রবণতা। এমন সময় বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন এ উদ্যোগটি নিল।
কটরেল-বয়েস বলেন, এই পুরস্কার শিশুদের উপভোগ করার মতো বই খুঁজে বের করা সহজ করে তুলবে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি শিশুরই বইয়ের জগতে ডুব দেওয়ার যে আনন্দ, তা উপভোগ করার সুযোগ পাওয়া উচিত। বিচারক প্যানেলে তাদের আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে এবং মনোনীত বইগুলো উপহার দেওয়ার মাধ্যমে হাজার হাজার শিশুকে বই পড়ার চমৎকার দুনিয়ায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘এটা বেশ দারুণ আয়োজন হতে যাচ্ছে।’ তিনি মজা করে বলেন, ‘চলুন, হইচই শুরু করা যাক!’
শিশুসাহিত্য জগতের শীর্ষ লেখকদের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে এ ঘোষণা। সাবেক শিশুসাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত মালরি ব্ল্যাকম্যান, জ্যাকলিন উইলসন, মাইকেল মরপুরগো, ক্রেসিডা কাউয়েল, অ্যান ফাইন এবং জোসেফ কোয়েলোরা—সবাই নতুন এই পুরস্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ইংরেজিতে লেখা বা ইংরেজিতে অনূদিত এবং যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত সমসাময়িক শিশুসাহিত্যগুলোতে এ পুরস্কার দেওয়া হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের বুকার এবং আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারের মতোই বিজয়ী লেখক ৫০ হাজার পাউন্ড এবং শর্টলিস্টেড লেখকেরা প্রত্যেকে ২ হাজার ৫০০ পাউন্ড পাবেন।
প্রথম চিলড্রেনস বুকার পুরস্কারের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ২০২৬ সালের বসন্তে। বিচারক হতে শিশুদের আবেদন প্রক্রিয়াও এই সময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই বছরের নভেম্বরে ঘোষণা করা হবে শর্টলিস্ট এবং শিশু বিচারকদের নাম। বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তরুণ পাঠকদের জন্য আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে। ২০২৭ সালের পুরস্কারের জন্য ২০২৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশিত বই হতে হবে।
শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিল্পকলায় সমর্থন এবং জলবায়ু-সংকট মোকাবিলায় কাজ করা দাতব্য সংস্থা একেও ফাউন্ডেশনের (AKO Foundation) সহযোগিতায় এ পুরস্কার পরিচালিত হবে।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী (সিইও) গ্যাবি উড বলেন, ‘২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক বুকার প্রাইজ চালুর পর গত ২০ বছরে আমাদের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোগ চিলড্রেনস বুকার। এর একাধিক লক্ষ্য রয়েছে। একদিকে এটি শিশুদের জন্য লেখা ভবিষ্যৎ ক্লাসিক সাহিত্যকে সম্মান জানাবে, অন্যদিকে এটি এমন একটি সামাজিক উদ্যোগ, যা তরুণদের আরও বেশি করে পড়াশোনায় অনুপ্রাণিত করবে। এর মাধ্যমেই আমরা এমন এক বীজ রোপণ করতে চাই, যেখান থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আজীবন পাঠকেরা বিকশিত হবে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, শিশুদের বিশেষ করে শিশুসাহিত্যের আসল বিচারকদের মতামত শোনার জন্য।
একেও ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ফিলিপ ল-ফোর্ড বলেন, ‘এই অংশীদারত্ব ফাউন্ডেশনের সাক্ষরতা বৃদ্ধি ও সামাজিক গতিশীলতা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। আমরা গর্বিত যে এমন একটি প্রকল্পে অবদান রাখতে পারছি, যা তরুণ পাঠকদের অনুপ্রাণিত ও ক্ষমতায়িত করবে।’
বিনো ব্রেইন নামের একটি যুব গবেষণা সংস্থা ও ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্টের সহযোগিতায় নিয়মিত পরামর্শ সেশনের মাধ্যমে শিশুরা এই পুরস্কারের গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট শিশুদের পড়ার অভ্যাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা মূল্যায়নে সহায়তা করবে।
বুকার ফাউন্ডেশনের মতে, এই নতুন পুরস্কারটি শিশুসাহিত্যকে ‘সংস্কৃতির কেন্দ্রে স্থাপন’ করার একটি প্রচেষ্টা। সিইও গ্যাবি উড বলেন, ‘এই উদ্যোগের লক্ষ্য শুধু শিশুসাহিত্যে উৎকর্ষকে স্বীকৃতি দেওয়া নয়, বরং আরও বেশি তরুণকে এমন গল্প ও চরিত্র আবিষ্কারে সহায়তা করা ‘যারা তাদের সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকবে।’
বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সাহিত্য পুরস্কার বুকার প্রাইজ প্রথম প্রদান করা হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত ইংরেজিতে রচিত অসাধারণ কথাসাহিত্যকে সম্মান জানাতে এই পুরস্কার প্রবর্তিত হয়।

১৯৯৭ সালরে কথা। তখন আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র। এক বিকেলের কথা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা, ক্যাম্পাসরে পশ্চিম পাড়া দিয়ে আমি সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলাম কোথাও।
১৬ নভেম্বর ২০২১
ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
২ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৪ দিন আগেসম্পাদকীয়

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে পারে অন্য জায়গার এসব খাবার। অন্তত ছায়ানীড়ের নিয়মিত ভক্ত-গ্রাহকেরা এমন দাবি করতেই পারেন। তাতে দোষের কিছু নেই।
তাই হয়তো এখনো রেস্তোরাঁটির সামনে ভিড় লেগে থাকে। ব্যস্ত সড়কের পাশ থেকে যখন মুরগি পোড়ার সুঘ্রাণ পাওয়া যায়, তখন পথে যেতে অনেকেই হয়তো বিরতি নিয়ে কিনে নেন ছায়ানীড়ের শর্মা বা গ্রিল চিকেন। ভেতরে বসে খেতে হলে লম্বা লাইনে যেমন দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, আবার পার্সেল নিতে গেলেও অপেক্ষা করতে হয়। প্রাত্যহিক এ দৃশ্য ছায়ানীড়ের জনপ্রিয়তার প্রমাণ। বিরিয়ানি ও অন্যান্য ফাস্ট ফুড খাবারও পাওয়া যায় এখানে।
ছবি: ওমর ফারুক

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে পারে অন্য জায়গার এসব খাবার। অন্তত ছায়ানীড়ের নিয়মিত ভক্ত-গ্রাহকেরা এমন দাবি করতেই পারেন। তাতে দোষের কিছু নেই।
তাই হয়তো এখনো রেস্তোরাঁটির সামনে ভিড় লেগে থাকে। ব্যস্ত সড়কের পাশ থেকে যখন মুরগি পোড়ার সুঘ্রাণ পাওয়া যায়, তখন পথে যেতে অনেকেই হয়তো বিরতি নিয়ে কিনে নেন ছায়ানীড়ের শর্মা বা গ্রিল চিকেন। ভেতরে বসে খেতে হলে লম্বা লাইনে যেমন দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, আবার পার্সেল নিতে গেলেও অপেক্ষা করতে হয়। প্রাত্যহিক এ দৃশ্য ছায়ানীড়ের জনপ্রিয়তার প্রমাণ। বিরিয়ানি ও অন্যান্য ফাস্ট ফুড খাবারও পাওয়া যায় এখানে।
ছবি: ওমর ফারুক

১৯৯৭ সালরে কথা। তখন আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র। এক বিকেলের কথা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা, ক্যাম্পাসরে পশ্চিম পাড়া দিয়ে আমি সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলাম কোথাও।
১৬ নভেম্বর ২০২১
ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
১ দিন আগে
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
১ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৪ দিন আগেসম্পাদকীয়

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন। বলা হয়, চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনদর্শনে প্রভাবিত হয়েই শচীমোহন রেস্তোরাঁটির নাম দেন ‘দেশবন্ধু সুইটমিট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। এর উল্টো দিকে তখন ছিল ইত্তেফাক পত্রিকার অফিস।
সেখানকার সাংবাদিকেরা দেশবন্ধুর পরোটা-লুচি-ভাজি-হালুয়া খেতে যেতেন নিয়মিত। কবি-সাহিত্যিক-অভিনয়শিল্পীরাও পছন্দ করতেন এই রেস্তোরাঁর খাবার। এমনকি এফডিসিতে ফরমাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো দেশবন্ধুর নাশতা। এখন হয়তো মানিক মিয়া, রাজ্জাক, কবরী কিংবা শাবানাদের মতো বিখ্যাতরা সেখানে যান না কিন্তু তাতে দেশবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখনো ঢাকাবাসীর ভিড় দেখা যায় এই রেস্তোরাঁয়। ভাবা যায়, সারা দিনই এখানকার পরোটা-ভাজি বিক্রি হতে থাকে! দুপুরে অবশ্য খাবারের তালিকায় ভাত-মাছ-মাংসও আছে। ছবি: মেহেদী হাসান

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন। বলা হয়, চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনদর্শনে প্রভাবিত হয়েই শচীমোহন রেস্তোরাঁটির নাম দেন ‘দেশবন্ধু সুইটমিট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। এর উল্টো দিকে তখন ছিল ইত্তেফাক পত্রিকার অফিস।
সেখানকার সাংবাদিকেরা দেশবন্ধুর পরোটা-লুচি-ভাজি-হালুয়া খেতে যেতেন নিয়মিত। কবি-সাহিত্যিক-অভিনয়শিল্পীরাও পছন্দ করতেন এই রেস্তোরাঁর খাবার। এমনকি এফডিসিতে ফরমাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো দেশবন্ধুর নাশতা। এখন হয়তো মানিক মিয়া, রাজ্জাক, কবরী কিংবা শাবানাদের মতো বিখ্যাতরা সেখানে যান না কিন্তু তাতে দেশবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখনো ঢাকাবাসীর ভিড় দেখা যায় এই রেস্তোরাঁয়। ভাবা যায়, সারা দিনই এখানকার পরোটা-ভাজি বিক্রি হতে থাকে! দুপুরে অবশ্য খাবারের তালিকায় ভাত-মাছ-মাংসও আছে। ছবি: মেহেদী হাসান

১৯৯৭ সালরে কথা। তখন আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র। এক বিকেলের কথা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা, ক্যাম্পাসরে পশ্চিম পাড়া দিয়ে আমি সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলাম কোথাও।
১৬ নভেম্বর ২০২১
ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
১ দিন আগে
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
২ দিন আগে