ইজাজুল হক

গজলের ধারাকে নতুন গাম্ভীর্য দেওয়ার যে যাত্রা ফারুক নাজকি শুরু করেন, সেটির পরবর্তী গন্তব্য তাঁর সতেজ-তরতাজা আধুনিক উর্দু কবিতার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়। আধুনিক কবিতা এ যুগে অনেক পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছে। কবিতার বৈশ্বিক অলংকারই একালের উর্দু কবিতার প্রধান নিয়ামক। ফারুক নাজকির কাব্যগ্রন্থ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তাঁর প্রথম দিকের কবিতার তুলনায় শেষের দিকের কবিতাগুলো অনেক বেশি পরিপক্ব, বলিষ্ঠ ও কালোত্তীর্ণ। কবিতার সুর, ধাঁচ ও ভাবের বৈচিত্র্যও এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
নাজকির সর্বশেষ উর্দু কাব্যগ্রন্থ ‘লফ্জ লফ্জ নোহা’-এর কবিতাগুলো তিনি ১৯৯০ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে লিখেছেন। সময়টি কাশ্মীরের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি বেদনার ছিল। তিনি কাশ্মীরে বসেই সবকিছু প্রত্যক্ষ করতে থাকেন। চারদিকে দ্রোহের আগুন। ঝিলমে বইছিল রক্তের স্রোত। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ ও করুণ অস্ত্রবাজির মুখে কাশ্মীর জাহান্নামে পরিণত তখন। খুব কাছ থেকে দেখা এসব দৃশ্য নাজকির কবিতাকে প্রভাবিত করে সত্য; তবে কালের ভাষায় নিজের কবিতাকে হারিয়ে যেতে না দেওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা তাঁকে বাস্তববাদী করে তোলে। ফলে কবিতার শরীরে পরিস্থিতির দাগ থাকলেও পুরো কাঠামো বিনির্মাণে তিনি আধুনিক নির্মোহ কাব্যধারা ভালোই রপ্ত করেন।
 কাশ্মীরের উত্তাল পরিস্থিতিকে কবিতার ইট-সুরকিতে মিশিয়ে, আধুনিক নিরাসক্ত কবিতার ছাঁচে রেখে, সময়ের সীমারেখা পেরিয়ে, অসীমের আকাশে নাজকি নির্মাণ করেন কবিতার প্রাসাদ। ফলে ফারুকের হাত ধরে কাশ্মীরের বিরাজমান বাস্তবতা কালজয়ী কাব্যভাষায় চিরায়ত সাহিত্যের পাতায় স্থান করে নেয়। ইতিহাস ও সমাজবাস্তবতার তাপ-উত্তাপ থেকে বের হয়ে তা সর্বজনীন সৃষ্টিসুখের উল্লাসে পরিণত হয়। উদাহরণ হিসেবে নাজকির ‘সোনালি দরজার বাইরে’ কবিতাটি দেখা যাক—
কাশ্মীরের উত্তাল পরিস্থিতিকে কবিতার ইট-সুরকিতে মিশিয়ে, আধুনিক নিরাসক্ত কবিতার ছাঁচে রেখে, সময়ের সীমারেখা পেরিয়ে, অসীমের আকাশে নাজকি নির্মাণ করেন কবিতার প্রাসাদ। ফলে ফারুকের হাত ধরে কাশ্মীরের বিরাজমান বাস্তবতা কালজয়ী কাব্যভাষায় চিরায়ত সাহিত্যের পাতায় স্থান করে নেয়। ইতিহাস ও সমাজবাস্তবতার তাপ-উত্তাপ থেকে বের হয়ে তা সর্বজনীন সৃষ্টিসুখের উল্লাসে পরিণত হয়। উদাহরণ হিসেবে নাজকির ‘সোনালি দরজার বাইরে’ কবিতাটি দেখা যাক—
‘কম্পিত দেহ
ঘন কুয়াশায় লেপ্টে থাকা রং
আধমরা আলোর কাফন জড়িয়ে
মৃত্যু জনপদের আগুনে নিজেকে সঁপে দেওয়ার আগে
দীর্ঘ সময়জুড়ে
নিজের অনুভবের আঁচ সয়ে যায়।
সন্ধ্যা
আধো আঁধার সড়কে মাথা ঘষতে থাকে
থরথর কাঁপা রাত দুঃখের ছাঁচে-ঢালাই হওয়ার আগে
দীর্ঘ সময়জুড়ে
আলোহীন ঝাড়বাতির পাশে দাঁড়িয়ে রয়।
চাঁদ
আকাশের গভীর নীল সমুদ্রে তারাদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক থেকে
দীর্ঘ সময়জুড়ে
মৃত্যুর জনপদে আগুনের ফুল-লুকানো-খেলা খেলছিল
কবর থেকে কবরে ছায়া নেই, দেহ নেই
পা থেকে পায়ের দূরত্বে ঘরে ফেরার চিহ্নরাও গুম
ঘরের দহলিজ মানবশূন্য
মনিবের পথ চেয়ে-চেয়ে দরজা-কপাট
দীর্ঘ সময়জুড়ে অপেক্ষায় ছিল তবে
কোনো টোকা নেই কিংবা পায়ের আওয়াজ। 
এদিকে 
নির্বাক শহরের আঁধারে 
কম্পিত দেহ
‘কীভাবে ও কত’-এর বদলাতে থাকা প্রান্তে প্রান্তে
বিভ্রান্ত উত্তাল বিক্ষিপ্ত কুঞ্চিত হতে থাকে
এবং ঘন কুয়াশায় লেপ্টে থেকে
ডালে-ডালে আলোর পথ মাড়িয়ে
ক্রুশের ছায়ায় নিশ্বাস নিচ্ছে। 
 কবিতার কাফনে জড়ানো কম্পিত দেহ, অন্ধকার সড়কে মাথা ঘষতে থাকা সন্ধ্যা, নির্জন-নৈঃশব্দ্যের ভয়কাতর চাঁদ, বিভ্রান্ত উত্তাল নির্বাক শহর কিংবা বৃক্ষে ঝোলানো ক্রুশের ছায়ার সুনির্দিষ্ট একটি সময় আছে। নতুন শহর এবং সমাজের চিত্র শব্দের আঁচড়ে মূর্ত হয়ে উঠেছে সময়ের এই দাগে। যেখানে ভয় আছে, দৃশ্যের বিবরণ আছে, জীবন আছে, অপমানের ধারাবাহিকতা আছে এবং ক্রুশের সেই ছায়া আছে, যা ঘটে যাওয়া বিষয়ের নিদর্শন হয়ে কাঁপতে কাঁপতে জীবনের অস্তিত্ব-প্রয়াণের পয়গাম দিচ্ছে। তবে কবিতার ধাঁচ, ভাব ও কাঠামো সময়কে অতিক্রম করে অসীমে মিলিয়ে গেছে। জগতের যেকোনো প্রান্তের সমাজ বাস্তবতার সঙ্গে অতি সহজিয়া ঢঙে তা মিশে যেতে সক্ষম।
কবিতার কাফনে জড়ানো কম্পিত দেহ, অন্ধকার সড়কে মাথা ঘষতে থাকা সন্ধ্যা, নির্জন-নৈঃশব্দ্যের ভয়কাতর চাঁদ, বিভ্রান্ত উত্তাল নির্বাক শহর কিংবা বৃক্ষে ঝোলানো ক্রুশের ছায়ার সুনির্দিষ্ট একটি সময় আছে। নতুন শহর এবং সমাজের চিত্র শব্দের আঁচড়ে মূর্ত হয়ে উঠেছে সময়ের এই দাগে। যেখানে ভয় আছে, দৃশ্যের বিবরণ আছে, জীবন আছে, অপমানের ধারাবাহিকতা আছে এবং ক্রুশের সেই ছায়া আছে, যা ঘটে যাওয়া বিষয়ের নিদর্শন হয়ে কাঁপতে কাঁপতে জীবনের অস্তিত্ব-প্রয়াণের পয়গাম দিচ্ছে। তবে কবিতার ধাঁচ, ভাব ও কাঠামো সময়কে অতিক্রম করে অসীমে মিলিয়ে গেছে। জগতের যেকোনো প্রান্তের সমাজ বাস্তবতার সঙ্গে অতি সহজিয়া ঢঙে তা মিশে যেতে সক্ষম।
দুই.
নাজকির ‘আমাদের কথা’ কবিতায় পূর্ণ এক যুদ্ধগাথা রচনা করেন। গদ্য ধাঁচের কবিতা হলেও গদ্যের ভাষা তাতে নেই; বরং তা একটি ডাইনামিক কাব্য ধাঁচের প্রতিনিধিত্ব করে। কবিতাটি আপনাকে একালের কাশ্মীরের সঙ্গে, সেখানকার সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যিক কাঠামোর সঙ্গে পরিচিত করাবে। পড়তে-পড়তে আপনার মনে হবে, আধুনিক কবিতায় সৌন্দর্যনীতি থেকে সরে গেছেন নাজকি; বিশদ বিবরণ ও বিশ্লেষণধর্মী গদ্য ধাঁচের রাজনীতি থেকে আঁচল গুটিয়েছেন। কোনো স্বতন্ত্র চরিত্র নির্মাণ না করে ‘আমরা’ ও ‘আমাদের কথা’ বলে ব্যক্তিগত কবিতাকাঠামো নির্মাণ করেছেন। উত্তরাধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকেই কেবল এসব কল্পনা করা যায়। কবিতায় কাশ্মীরকে নির্মোহ দৃষ্টিকোণ থেকে আঁকার প্রয়াস লক্ষণীয়। এ যেন কাশ্মীরের অতীত-বর্তমানের ইতিহাস ও ভূবৈচিত্র্যের নিখুঁত রেখাচিত্র। উপত্যকার সাংস্কৃতিক অবদান প্রকাশ্যে আনার জন্য এটুকুই যথেষ্ট। উত্তর ভারত কাশ্মীরকে কখনো বুঝতে চায়নি। এখানকার স্বতন্ত্র ভূবৈচিত্র্যের প্রতি মোটেও নজর দেয়নি—এমন অভিযোগও তোলেন কবি। দীর্ঘ কবিতাটির এ অংশটি পড়ুন—
‘জুবাইর রেজভির আলি বিন মুত্তাকির কথা মানুষ শোনে 
তবে সবজ্ আলি সুকুতির সুর শোনে না
অথচ সেই কুণ্ডলিত সুর আজও পিরপানসালের পর্বতশৃঙ্গে ধাক্কা খেয়ে 
শিলাবহরের শিরায়-শিরায় দৌড়ায়; 
এর পর বরফ গলা শুরু করলে প্রপাতে-প্রপাতে তার গুঞ্জরণ শোনা যায় 
সবজ আলি সুকুতির সুরও দারুণ বৈচিত্র্যময়।’
 আধুনিক উর্দু কবি জুবাইর রেজভির কবিতার কাশ্মীরি চরিত্র আলি বিন মুত্তাকির মোটেও এই উপত্যকার প্রতিনিধিত্ব করে না বলে অভিযোগ করেন কবি। অথচ পুরো ভারত তাঁকে নিয়েই মেতে থাকে। অথচ কাশ্মীরের কিংবদন্তি গায়ক সবজ আলি সুকুতির সুরবৈচিত্র্যই উপত্যকার ভূবৈচিত্র্যের সেরা উপমা হতে পারে। কাশ্মীরের সকল সৌন্দর্যের সুর যেন তাঁর গলা দিয়ে বেরিয়ে গভীর নীল আকাশে মেঘ হয়ে ভাসতে থাকে। এক সময় তা কাশ্মীরের পিরপানচালের সুউচ্চ পর্বতশ্রেণিকে একত্ববাদের গান শোনাতে যায়। সেখানে মিলিত হয় উপত্যকার সকল আধ্যাত্মিকতার ধারা। তবে উপত্যকার এমন স্বতন্ত্র রূপ কখনোই উত্তর ভারতের সানগ্লাস পরা চোখে ধরা পড়ে না। ফলে এই উপত্যকাকে উত্তর ভারত কিংবা কাশ্মীরের বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে মেলানোর ব্যর্থ চেষ্টা দেখা যায়।
আধুনিক উর্দু কবি জুবাইর রেজভির কবিতার কাশ্মীরি চরিত্র আলি বিন মুত্তাকির মোটেও এই উপত্যকার প্রতিনিধিত্ব করে না বলে অভিযোগ করেন কবি। অথচ পুরো ভারত তাঁকে নিয়েই মেতে থাকে। অথচ কাশ্মীরের কিংবদন্তি গায়ক সবজ আলি সুকুতির সুরবৈচিত্র্যই উপত্যকার ভূবৈচিত্র্যের সেরা উপমা হতে পারে। কাশ্মীরের সকল সৌন্দর্যের সুর যেন তাঁর গলা দিয়ে বেরিয়ে গভীর নীল আকাশে মেঘ হয়ে ভাসতে থাকে। এক সময় তা কাশ্মীরের পিরপানচালের সুউচ্চ পর্বতশ্রেণিকে একত্ববাদের গান শোনাতে যায়। সেখানে মিলিত হয় উপত্যকার সকল আধ্যাত্মিকতার ধারা। তবে উপত্যকার এমন স্বতন্ত্র রূপ কখনোই উত্তর ভারতের সানগ্লাস পরা চোখে ধরা পড়ে না। ফলে এই উপত্যকাকে উত্তর ভারত কিংবা কাশ্মীরের বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে মেলানোর ব্যর্থ চেষ্টা দেখা যায়।
কবিতার শেষাংশে এসে পাঠককে অবাক করে দিয়ে কবি বলেন—
‘বসন্ত এসে গেছে
তবে গাছে না ধরেছে আপেল, না নাশপাতি
বরং তাতে ধরেছে মানুষের খুলি
আমরা খুব খুশি হলাম
এবং নিমন্ত্রণ করলাম শাহজাদাদের; 
এবং অভিবাদন জানালাম তাদের ককটেল ফাটিয়ে।’
এই জায়গায় টিএস এলিয়টের সঙ্গে এক আশ্চর্য মিল রয়েছে নাজকির। এলিয়ট এক কবিতায় বলেন—
‘গত বছর নিজেদের বাগানে তোমরা
যে লাশগুলো বপন করেছিলে—
এত দিনে তা হয়তো ফল-ফুলে পরিণত হয়েছে 
এবং থোকায় থোকায় বেরিয়ে পড়েছে।’
এলিয়ট নিজের যুগের অস্থিরতা এবং মানুষের অনুভূতিহীনতা প্রকাশের জন্য জমিতে রোপণ করা লাশের রূপক ব্যবহার করেন। নাজকিও একই অবস্থার বয়ান দিতে গাছে-গাছে মানুষের খুলি ফলার উপমা খুঁজে নেন। ‘আমাদের কথা’য় কাশ্মীরি মানুষের সঙ্গে রাজনীতিবিদদের গাদ্দারির বিরুদ্ধে খোলাখুলি বিদ্রূপ প্রতিভাত হয়।

তিন. 
নাজকির আরেকটি উল্লেখযোগ্য কবিতা ‘খুশবুর খোলসে অ্যাসিড’। কবিতাটির শরীর দুঃখের ক্ষত বয়ে বেড়ায়; আত্মপরিচয়ের সন্ধান করেও ব্যর্থ হন কবি। চির নিষ্পাপকালের কোলে শুরু করা কবির জীবনটি আধুনিককালে এসে বিধ্বংসী অ্যাসিডে পরিণত হয়, যা তাঁর নিষ্পাপ চেহারায় দাগের জন্ম দেয় এবং সম্মানের রূপ শোভাকে কলঙ্কিত করে। সময়ের দুটি প্রান্তে ভ্রমণ করে এই কবিতা। একদিকে নির্মল গ্রাম, সৃজনানন্দ ও মুক্ত ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে হাজির হন কবির সহজ-সরল মা, যিনি আপেলের মতো লাল এবং গোলাপের মতো কোমল। অন্যদিকে সময়ের শেষ প্রান্তকে তিনি ‘আমি’-এর ভেতর দিয়ে ধরার চেষ্টা করেন। মাঝখানের সময়টিকে তিনি তাঁর বাবার রূপে দেখতে পান। তবে একটি উপসংহারে পৌঁছেও যেন শেষ পর্যন্ত তিনি জীবনের অর্থ স্পর্শ করতে ব্যর্থ হন। ফলে শেষ লাইনে এসে নিজেকেই প্রশ্ন ছুড়ে দেন—‘আমি কে?’ কবিতাটি পড়া যাক—
‘নিবু পাহাড়ের আঁচলতলে
একটি গ্রাম—
মাদরাবন
জন্মেছিলাম আমি
(আমার নাম মুহাম্মদ ফারুক) 
আমার মা ছিলেন আপেলের মতো লাল ও মিষ্টি
গোলাপের মতো কোমল ও সুরভিত
ছিলেন সুঘ্রাণের আকর; 
জড়ানো লেপটানো ছলচাতুরী কপটতা মিথ্যা—
এসব শব্দ তিনি শুনেছিলেন সত্য
তবে কখনো পরখ করেননি
মুখে-মুখে আওড়াননি একবারও। 
রেডিওতে প্রচারিত হয় নিজার কাব্বানির ভৌতিক কবিতা 
অথবা কোনো গায়ক শোনায় কালিদাসের ঋতু সমাচার—
ডুকরে-ডুকরে কাঁদেন তিনি; 
আমি কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করি
তিনি বলেন—
দেবতাদের এসব ভাষা
বড়ই জাদুকরী
সত্যের দিশা 
এবং সরল পথের পাথেয় রয়েছে এতে; 
আমি তাঁর সরলতায় কয়েকবার কেঁদে দিই। 
বাবা আমার ডিনামাইট চিবোতেন
আঙুলের মাঝে ফলাতেন অ্যাসিডের বন
এবং মরা পাতলা হলদে কাগজের কপোলে
সাজাতেন রক্তের ফুল 
নিজ থেকে পৃথক হয়ে নিজের সঙ্গে মিশে গিয়ে
মায়ায় পড়তে থাকেন নিজেরই সম্পদের; 
গোটা আটটি জাহাজের মালিক তিনি—
ভাসিয়েছেন সময়ের সমুদ্রজলে 
এবং কন্ট্রোল রুমে বসে নিজেই
নির্ধারণ করতে থাকেন তাদের চলার পথ। 
আমিও একটি জাহাজ
পাথর চিবোনো, চোখের পাতার ঝোপে বরই গাছ লাগানো
খুব ভোরে মসজিদের দরোজা দিয়ে আল্লাহর কাছ থেকে 
চোখ লুকিয়ে চলে যাওয়া
এবং আল্লাহপ্রেমিকের ভক্ত হয়ে
আল্লাহরই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হওয়া
যার স্বভাবে পরিণত হয়েছে; 
লাল মাটির আপেল ও অ্যাসিডের সেই
মিলনের ফসল আমি—
আমি কে?’
 কবিতাটি উত্তরাধুনিক কাব্যচিন্তার যথার্থ উদাহরণ। রোনাল্ড বার্থার এই ধরনের সৃজন-অভিজ্ঞতার জন্য শুধু একটি পরিভাষাই প্রণয়ন করেন—‘সিজোফ্রেনিক মুড অব স্পেস অ্যান্ড টাইম’। নাজকির এই কবিতার জন্য যা যথাযথ এবং রূপকগুলোকে স্পষ্ট করে দেওয়ার মতো। স্থান-কালের এই পাগলামি-ধাঁচ নাজকির অন্যান্য কবিতায়ও দেখা যায়। তবে যেসব কবিতায় পরিস্থিতির প্রভাব বেশি থাকে, সেখানে পাগলামির চেয়ে কবিতার মূলভাব স্পষ্ট করার প্রতি বেশি মনোযোগী দেখতে পাই তাঁকে। যেমন—‘শিরোনামগুলো’, ‘একটি শোকগাথা, ‘এ কেমন আবহাওয়া’, ‘রক্তনদী উন্মাতাল’ ‘পরামর্শ’, ‘বনের নামে পদ্য’ এবং ‘১৯৯০-এর এক সকাল’ ইত্যাদি কবিতাগুলো প্রণিধানযোগ্য। এর মধ্যে ‘শিরোনামগুলো’ কবিতাটিতে বর্ণিত ঘটনাপরম্পরা ও বাস্তবতার শ্লেষাত্মক উপস্থাপন পাঠকের অনুভবের জগৎ নাড়িয়ে দেওয়ার মতো। বিশেষ করে এই পঙ্ক্তিগুলো—
কবিতাটি উত্তরাধুনিক কাব্যচিন্তার যথার্থ উদাহরণ। রোনাল্ড বার্থার এই ধরনের সৃজন-অভিজ্ঞতার জন্য শুধু একটি পরিভাষাই প্রণয়ন করেন—‘সিজোফ্রেনিক মুড অব স্পেস অ্যান্ড টাইম’। নাজকির এই কবিতার জন্য যা যথাযথ এবং রূপকগুলোকে স্পষ্ট করে দেওয়ার মতো। স্থান-কালের এই পাগলামি-ধাঁচ নাজকির অন্যান্য কবিতায়ও দেখা যায়। তবে যেসব কবিতায় পরিস্থিতির প্রভাব বেশি থাকে, সেখানে পাগলামির চেয়ে কবিতার মূলভাব স্পষ্ট করার প্রতি বেশি মনোযোগী দেখতে পাই তাঁকে। যেমন—‘শিরোনামগুলো’, ‘একটি শোকগাথা, ‘এ কেমন আবহাওয়া’, ‘রক্তনদী উন্মাতাল’ ‘পরামর্শ’, ‘বনের নামে পদ্য’ এবং ‘১৯৯০-এর এক সকাল’ ইত্যাদি কবিতাগুলো প্রণিধানযোগ্য। এর মধ্যে ‘শিরোনামগুলো’ কবিতাটিতে বর্ণিত ঘটনাপরম্পরা ও বাস্তবতার শ্লেষাত্মক উপস্থাপন পাঠকের অনুভবের জগৎ নাড়িয়ে দেওয়ার মতো। বিশেষ করে এই পঙ্ক্তিগুলো—
‘মাসুমুল ইসলামের মহাপ্রয়াণ—
মুজাহিদ নেতা বাবা-মাকে উপহার দিয়েছেন 
পবিত্র কোরআনের একটি কপি 
মাসুমুল ইসলামের নিরক্ষর মা মখমলের গেলাফে 
মুড়িয়ে সেটি তাকের ওপর রেখে দিয়েছেন; 
জানালা দিয়ে উঁকি দেওয়া বাতাস বলল—
‘পড়ো’।’
 নাজকির কবিতামানস কিংবদন্তি উর্দু কবি মীরাজির সঙ্গেই বেশি ঘনিষ্ঠ। তাঁর কিছু কবিতায় মীরাজির কঠোরতা, ব্যথার তীব্রতা, অনিন্দ্য ভূ-বর্ণনার মতো উত্তুঙ্গ রূপ দেখা যায়। যেমন ‘মান্টোর সুলতানা বললেন’ কবিতার এ অংশটি দেখুন—
নাজকির কবিতামানস কিংবদন্তি উর্দু কবি মীরাজির সঙ্গেই বেশি ঘনিষ্ঠ। তাঁর কিছু কবিতায় মীরাজির কঠোরতা, ব্যথার তীব্রতা, অনিন্দ্য ভূ-বর্ণনার মতো উত্তুঙ্গ রূপ দেখা যায়। যেমন ‘মান্টোর সুলতানা বললেন’ কবিতার এ অংশটি দেখুন—
‘দুনিয়া কী করে জানবে—হৃদয়ের গহিনে কত নদী বহমান
আমাদের দেহ তো মহাসড়ক—মানুষের চলাচল থামেই না
চুপচাপ থাকে, নীরবে দুঃখ সয়ে যায় এবং সতত বলে বেড়ায়—
হৃদয়ের রহস্য জানা সেই যোগী কবে আসবে?’
নাজকির কবিতার বিশ্লেষণ নিষ্প্রয়োজন। কবিতার মাধ্যমে জীবনের নতুন সংস্করণের কাজ করেন তিনি। এই কবিতাগুলো আধুনিকতম উর্দু কবিতার নতুন তাঁবু। যেখানে জীবনের উত্তাল তরঙ্গের সঙ্গে আধুনিক দর্শনের হিরে-মুক্তো-জহরত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। নাজকির কবিতা পৃথিবীকে আলোকিত করা এক আলোর ফোয়ারা।
আরও পড়ুন:

গজলের ধারাকে নতুন গাম্ভীর্য দেওয়ার যে যাত্রা ফারুক নাজকি শুরু করেন, সেটির পরবর্তী গন্তব্য তাঁর সতেজ-তরতাজা আধুনিক উর্দু কবিতার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়। আধুনিক কবিতা এ যুগে অনেক পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছে। কবিতার বৈশ্বিক অলংকারই একালের উর্দু কবিতার প্রধান নিয়ামক। ফারুক নাজকির কাব্যগ্রন্থ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তাঁর প্রথম দিকের কবিতার তুলনায় শেষের দিকের কবিতাগুলো অনেক বেশি পরিপক্ব, বলিষ্ঠ ও কালোত্তীর্ণ। কবিতার সুর, ধাঁচ ও ভাবের বৈচিত্র্যও এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
নাজকির সর্বশেষ উর্দু কাব্যগ্রন্থ ‘লফ্জ লফ্জ নোহা’-এর কবিতাগুলো তিনি ১৯৯০ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে লিখেছেন। সময়টি কাশ্মীরের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি বেদনার ছিল। তিনি কাশ্মীরে বসেই সবকিছু প্রত্যক্ষ করতে থাকেন। চারদিকে দ্রোহের আগুন। ঝিলমে বইছিল রক্তের স্রোত। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ ও করুণ অস্ত্রবাজির মুখে কাশ্মীর জাহান্নামে পরিণত তখন। খুব কাছ থেকে দেখা এসব দৃশ্য নাজকির কবিতাকে প্রভাবিত করে সত্য; তবে কালের ভাষায় নিজের কবিতাকে হারিয়ে যেতে না দেওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা তাঁকে বাস্তববাদী করে তোলে। ফলে কবিতার শরীরে পরিস্থিতির দাগ থাকলেও পুরো কাঠামো বিনির্মাণে তিনি আধুনিক নির্মোহ কাব্যধারা ভালোই রপ্ত করেন।
 কাশ্মীরের উত্তাল পরিস্থিতিকে কবিতার ইট-সুরকিতে মিশিয়ে, আধুনিক নিরাসক্ত কবিতার ছাঁচে রেখে, সময়ের সীমারেখা পেরিয়ে, অসীমের আকাশে নাজকি নির্মাণ করেন কবিতার প্রাসাদ। ফলে ফারুকের হাত ধরে কাশ্মীরের বিরাজমান বাস্তবতা কালজয়ী কাব্যভাষায় চিরায়ত সাহিত্যের পাতায় স্থান করে নেয়। ইতিহাস ও সমাজবাস্তবতার তাপ-উত্তাপ থেকে বের হয়ে তা সর্বজনীন সৃষ্টিসুখের উল্লাসে পরিণত হয়। উদাহরণ হিসেবে নাজকির ‘সোনালি দরজার বাইরে’ কবিতাটি দেখা যাক—
কাশ্মীরের উত্তাল পরিস্থিতিকে কবিতার ইট-সুরকিতে মিশিয়ে, আধুনিক নিরাসক্ত কবিতার ছাঁচে রেখে, সময়ের সীমারেখা পেরিয়ে, অসীমের আকাশে নাজকি নির্মাণ করেন কবিতার প্রাসাদ। ফলে ফারুকের হাত ধরে কাশ্মীরের বিরাজমান বাস্তবতা কালজয়ী কাব্যভাষায় চিরায়ত সাহিত্যের পাতায় স্থান করে নেয়। ইতিহাস ও সমাজবাস্তবতার তাপ-উত্তাপ থেকে বের হয়ে তা সর্বজনীন সৃষ্টিসুখের উল্লাসে পরিণত হয়। উদাহরণ হিসেবে নাজকির ‘সোনালি দরজার বাইরে’ কবিতাটি দেখা যাক—
‘কম্পিত দেহ
ঘন কুয়াশায় লেপ্টে থাকা রং
আধমরা আলোর কাফন জড়িয়ে
মৃত্যু জনপদের আগুনে নিজেকে সঁপে দেওয়ার আগে
দীর্ঘ সময়জুড়ে
নিজের অনুভবের আঁচ সয়ে যায়।
সন্ধ্যা
আধো আঁধার সড়কে মাথা ঘষতে থাকে
থরথর কাঁপা রাত দুঃখের ছাঁচে-ঢালাই হওয়ার আগে
দীর্ঘ সময়জুড়ে
আলোহীন ঝাড়বাতির পাশে দাঁড়িয়ে রয়।
চাঁদ
আকাশের গভীর নীল সমুদ্রে তারাদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক থেকে
দীর্ঘ সময়জুড়ে
মৃত্যুর জনপদে আগুনের ফুল-লুকানো-খেলা খেলছিল
কবর থেকে কবরে ছায়া নেই, দেহ নেই
পা থেকে পায়ের দূরত্বে ঘরে ফেরার চিহ্নরাও গুম
ঘরের দহলিজ মানবশূন্য
মনিবের পথ চেয়ে-চেয়ে দরজা-কপাট
দীর্ঘ সময়জুড়ে অপেক্ষায় ছিল তবে
কোনো টোকা নেই কিংবা পায়ের আওয়াজ। 
এদিকে 
নির্বাক শহরের আঁধারে 
কম্পিত দেহ
‘কীভাবে ও কত’-এর বদলাতে থাকা প্রান্তে প্রান্তে
বিভ্রান্ত উত্তাল বিক্ষিপ্ত কুঞ্চিত হতে থাকে
এবং ঘন কুয়াশায় লেপ্টে থেকে
ডালে-ডালে আলোর পথ মাড়িয়ে
ক্রুশের ছায়ায় নিশ্বাস নিচ্ছে। 
 কবিতার কাফনে জড়ানো কম্পিত দেহ, অন্ধকার সড়কে মাথা ঘষতে থাকা সন্ধ্যা, নির্জন-নৈঃশব্দ্যের ভয়কাতর চাঁদ, বিভ্রান্ত উত্তাল নির্বাক শহর কিংবা বৃক্ষে ঝোলানো ক্রুশের ছায়ার সুনির্দিষ্ট একটি সময় আছে। নতুন শহর এবং সমাজের চিত্র শব্দের আঁচড়ে মূর্ত হয়ে উঠেছে সময়ের এই দাগে। যেখানে ভয় আছে, দৃশ্যের বিবরণ আছে, জীবন আছে, অপমানের ধারাবাহিকতা আছে এবং ক্রুশের সেই ছায়া আছে, যা ঘটে যাওয়া বিষয়ের নিদর্শন হয়ে কাঁপতে কাঁপতে জীবনের অস্তিত্ব-প্রয়াণের পয়গাম দিচ্ছে। তবে কবিতার ধাঁচ, ভাব ও কাঠামো সময়কে অতিক্রম করে অসীমে মিলিয়ে গেছে। জগতের যেকোনো প্রান্তের সমাজ বাস্তবতার সঙ্গে অতি সহজিয়া ঢঙে তা মিশে যেতে সক্ষম।
কবিতার কাফনে জড়ানো কম্পিত দেহ, অন্ধকার সড়কে মাথা ঘষতে থাকা সন্ধ্যা, নির্জন-নৈঃশব্দ্যের ভয়কাতর চাঁদ, বিভ্রান্ত উত্তাল নির্বাক শহর কিংবা বৃক্ষে ঝোলানো ক্রুশের ছায়ার সুনির্দিষ্ট একটি সময় আছে। নতুন শহর এবং সমাজের চিত্র শব্দের আঁচড়ে মূর্ত হয়ে উঠেছে সময়ের এই দাগে। যেখানে ভয় আছে, দৃশ্যের বিবরণ আছে, জীবন আছে, অপমানের ধারাবাহিকতা আছে এবং ক্রুশের সেই ছায়া আছে, যা ঘটে যাওয়া বিষয়ের নিদর্শন হয়ে কাঁপতে কাঁপতে জীবনের অস্তিত্ব-প্রয়াণের পয়গাম দিচ্ছে। তবে কবিতার ধাঁচ, ভাব ও কাঠামো সময়কে অতিক্রম করে অসীমে মিলিয়ে গেছে। জগতের যেকোনো প্রান্তের সমাজ বাস্তবতার সঙ্গে অতি সহজিয়া ঢঙে তা মিশে যেতে সক্ষম।
দুই.
নাজকির ‘আমাদের কথা’ কবিতায় পূর্ণ এক যুদ্ধগাথা রচনা করেন। গদ্য ধাঁচের কবিতা হলেও গদ্যের ভাষা তাতে নেই; বরং তা একটি ডাইনামিক কাব্য ধাঁচের প্রতিনিধিত্ব করে। কবিতাটি আপনাকে একালের কাশ্মীরের সঙ্গে, সেখানকার সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যিক কাঠামোর সঙ্গে পরিচিত করাবে। পড়তে-পড়তে আপনার মনে হবে, আধুনিক কবিতায় সৌন্দর্যনীতি থেকে সরে গেছেন নাজকি; বিশদ বিবরণ ও বিশ্লেষণধর্মী গদ্য ধাঁচের রাজনীতি থেকে আঁচল গুটিয়েছেন। কোনো স্বতন্ত্র চরিত্র নির্মাণ না করে ‘আমরা’ ও ‘আমাদের কথা’ বলে ব্যক্তিগত কবিতাকাঠামো নির্মাণ করেছেন। উত্তরাধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকেই কেবল এসব কল্পনা করা যায়। কবিতায় কাশ্মীরকে নির্মোহ দৃষ্টিকোণ থেকে আঁকার প্রয়াস লক্ষণীয়। এ যেন কাশ্মীরের অতীত-বর্তমানের ইতিহাস ও ভূবৈচিত্র্যের নিখুঁত রেখাচিত্র। উপত্যকার সাংস্কৃতিক অবদান প্রকাশ্যে আনার জন্য এটুকুই যথেষ্ট। উত্তর ভারত কাশ্মীরকে কখনো বুঝতে চায়নি। এখানকার স্বতন্ত্র ভূবৈচিত্র্যের প্রতি মোটেও নজর দেয়নি—এমন অভিযোগও তোলেন কবি। দীর্ঘ কবিতাটির এ অংশটি পড়ুন—
‘জুবাইর রেজভির আলি বিন মুত্তাকির কথা মানুষ শোনে 
তবে সবজ্ আলি সুকুতির সুর শোনে না
অথচ সেই কুণ্ডলিত সুর আজও পিরপানসালের পর্বতশৃঙ্গে ধাক্কা খেয়ে 
শিলাবহরের শিরায়-শিরায় দৌড়ায়; 
এর পর বরফ গলা শুরু করলে প্রপাতে-প্রপাতে তার গুঞ্জরণ শোনা যায় 
সবজ আলি সুকুতির সুরও দারুণ বৈচিত্র্যময়।’
 আধুনিক উর্দু কবি জুবাইর রেজভির কবিতার কাশ্মীরি চরিত্র আলি বিন মুত্তাকির মোটেও এই উপত্যকার প্রতিনিধিত্ব করে না বলে অভিযোগ করেন কবি। অথচ পুরো ভারত তাঁকে নিয়েই মেতে থাকে। অথচ কাশ্মীরের কিংবদন্তি গায়ক সবজ আলি সুকুতির সুরবৈচিত্র্যই উপত্যকার ভূবৈচিত্র্যের সেরা উপমা হতে পারে। কাশ্মীরের সকল সৌন্দর্যের সুর যেন তাঁর গলা দিয়ে বেরিয়ে গভীর নীল আকাশে মেঘ হয়ে ভাসতে থাকে। এক সময় তা কাশ্মীরের পিরপানচালের সুউচ্চ পর্বতশ্রেণিকে একত্ববাদের গান শোনাতে যায়। সেখানে মিলিত হয় উপত্যকার সকল আধ্যাত্মিকতার ধারা। তবে উপত্যকার এমন স্বতন্ত্র রূপ কখনোই উত্তর ভারতের সানগ্লাস পরা চোখে ধরা পড়ে না। ফলে এই উপত্যকাকে উত্তর ভারত কিংবা কাশ্মীরের বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে মেলানোর ব্যর্থ চেষ্টা দেখা যায়।
আধুনিক উর্দু কবি জুবাইর রেজভির কবিতার কাশ্মীরি চরিত্র আলি বিন মুত্তাকির মোটেও এই উপত্যকার প্রতিনিধিত্ব করে না বলে অভিযোগ করেন কবি। অথচ পুরো ভারত তাঁকে নিয়েই মেতে থাকে। অথচ কাশ্মীরের কিংবদন্তি গায়ক সবজ আলি সুকুতির সুরবৈচিত্র্যই উপত্যকার ভূবৈচিত্র্যের সেরা উপমা হতে পারে। কাশ্মীরের সকল সৌন্দর্যের সুর যেন তাঁর গলা দিয়ে বেরিয়ে গভীর নীল আকাশে মেঘ হয়ে ভাসতে থাকে। এক সময় তা কাশ্মীরের পিরপানচালের সুউচ্চ পর্বতশ্রেণিকে একত্ববাদের গান শোনাতে যায়। সেখানে মিলিত হয় উপত্যকার সকল আধ্যাত্মিকতার ধারা। তবে উপত্যকার এমন স্বতন্ত্র রূপ কখনোই উত্তর ভারতের সানগ্লাস পরা চোখে ধরা পড়ে না। ফলে এই উপত্যকাকে উত্তর ভারত কিংবা কাশ্মীরের বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে মেলানোর ব্যর্থ চেষ্টা দেখা যায়।
কবিতার শেষাংশে এসে পাঠককে অবাক করে দিয়ে কবি বলেন—
‘বসন্ত এসে গেছে
তবে গাছে না ধরেছে আপেল, না নাশপাতি
বরং তাতে ধরেছে মানুষের খুলি
আমরা খুব খুশি হলাম
এবং নিমন্ত্রণ করলাম শাহজাদাদের; 
এবং অভিবাদন জানালাম তাদের ককটেল ফাটিয়ে।’
এই জায়গায় টিএস এলিয়টের সঙ্গে এক আশ্চর্য মিল রয়েছে নাজকির। এলিয়ট এক কবিতায় বলেন—
‘গত বছর নিজেদের বাগানে তোমরা
যে লাশগুলো বপন করেছিলে—
এত দিনে তা হয়তো ফল-ফুলে পরিণত হয়েছে 
এবং থোকায় থোকায় বেরিয়ে পড়েছে।’
এলিয়ট নিজের যুগের অস্থিরতা এবং মানুষের অনুভূতিহীনতা প্রকাশের জন্য জমিতে রোপণ করা লাশের রূপক ব্যবহার করেন। নাজকিও একই অবস্থার বয়ান দিতে গাছে-গাছে মানুষের খুলি ফলার উপমা খুঁজে নেন। ‘আমাদের কথা’য় কাশ্মীরি মানুষের সঙ্গে রাজনীতিবিদদের গাদ্দারির বিরুদ্ধে খোলাখুলি বিদ্রূপ প্রতিভাত হয়।

তিন. 
নাজকির আরেকটি উল্লেখযোগ্য কবিতা ‘খুশবুর খোলসে অ্যাসিড’। কবিতাটির শরীর দুঃখের ক্ষত বয়ে বেড়ায়; আত্মপরিচয়ের সন্ধান করেও ব্যর্থ হন কবি। চির নিষ্পাপকালের কোলে শুরু করা কবির জীবনটি আধুনিককালে এসে বিধ্বংসী অ্যাসিডে পরিণত হয়, যা তাঁর নিষ্পাপ চেহারায় দাগের জন্ম দেয় এবং সম্মানের রূপ শোভাকে কলঙ্কিত করে। সময়ের দুটি প্রান্তে ভ্রমণ করে এই কবিতা। একদিকে নির্মল গ্রাম, সৃজনানন্দ ও মুক্ত ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে হাজির হন কবির সহজ-সরল মা, যিনি আপেলের মতো লাল এবং গোলাপের মতো কোমল। অন্যদিকে সময়ের শেষ প্রান্তকে তিনি ‘আমি’-এর ভেতর দিয়ে ধরার চেষ্টা করেন। মাঝখানের সময়টিকে তিনি তাঁর বাবার রূপে দেখতে পান। তবে একটি উপসংহারে পৌঁছেও যেন শেষ পর্যন্ত তিনি জীবনের অর্থ স্পর্শ করতে ব্যর্থ হন। ফলে শেষ লাইনে এসে নিজেকেই প্রশ্ন ছুড়ে দেন—‘আমি কে?’ কবিতাটি পড়া যাক—
‘নিবু পাহাড়ের আঁচলতলে
একটি গ্রাম—
মাদরাবন
জন্মেছিলাম আমি
(আমার নাম মুহাম্মদ ফারুক) 
আমার মা ছিলেন আপেলের মতো লাল ও মিষ্টি
গোলাপের মতো কোমল ও সুরভিত
ছিলেন সুঘ্রাণের আকর; 
জড়ানো লেপটানো ছলচাতুরী কপটতা মিথ্যা—
এসব শব্দ তিনি শুনেছিলেন সত্য
তবে কখনো পরখ করেননি
মুখে-মুখে আওড়াননি একবারও। 
রেডিওতে প্রচারিত হয় নিজার কাব্বানির ভৌতিক কবিতা 
অথবা কোনো গায়ক শোনায় কালিদাসের ঋতু সমাচার—
ডুকরে-ডুকরে কাঁদেন তিনি; 
আমি কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করি
তিনি বলেন—
দেবতাদের এসব ভাষা
বড়ই জাদুকরী
সত্যের দিশা 
এবং সরল পথের পাথেয় রয়েছে এতে; 
আমি তাঁর সরলতায় কয়েকবার কেঁদে দিই। 
বাবা আমার ডিনামাইট চিবোতেন
আঙুলের মাঝে ফলাতেন অ্যাসিডের বন
এবং মরা পাতলা হলদে কাগজের কপোলে
সাজাতেন রক্তের ফুল 
নিজ থেকে পৃথক হয়ে নিজের সঙ্গে মিশে গিয়ে
মায়ায় পড়তে থাকেন নিজেরই সম্পদের; 
গোটা আটটি জাহাজের মালিক তিনি—
ভাসিয়েছেন সময়ের সমুদ্রজলে 
এবং কন্ট্রোল রুমে বসে নিজেই
নির্ধারণ করতে থাকেন তাদের চলার পথ। 
আমিও একটি জাহাজ
পাথর চিবোনো, চোখের পাতার ঝোপে বরই গাছ লাগানো
খুব ভোরে মসজিদের দরোজা দিয়ে আল্লাহর কাছ থেকে 
চোখ লুকিয়ে চলে যাওয়া
এবং আল্লাহপ্রেমিকের ভক্ত হয়ে
আল্লাহরই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হওয়া
যার স্বভাবে পরিণত হয়েছে; 
লাল মাটির আপেল ও অ্যাসিডের সেই
মিলনের ফসল আমি—
আমি কে?’
 কবিতাটি উত্তরাধুনিক কাব্যচিন্তার যথার্থ উদাহরণ। রোনাল্ড বার্থার এই ধরনের সৃজন-অভিজ্ঞতার জন্য শুধু একটি পরিভাষাই প্রণয়ন করেন—‘সিজোফ্রেনিক মুড অব স্পেস অ্যান্ড টাইম’। নাজকির এই কবিতার জন্য যা যথাযথ এবং রূপকগুলোকে স্পষ্ট করে দেওয়ার মতো। স্থান-কালের এই পাগলামি-ধাঁচ নাজকির অন্যান্য কবিতায়ও দেখা যায়। তবে যেসব কবিতায় পরিস্থিতির প্রভাব বেশি থাকে, সেখানে পাগলামির চেয়ে কবিতার মূলভাব স্পষ্ট করার প্রতি বেশি মনোযোগী দেখতে পাই তাঁকে। যেমন—‘শিরোনামগুলো’, ‘একটি শোকগাথা, ‘এ কেমন আবহাওয়া’, ‘রক্তনদী উন্মাতাল’ ‘পরামর্শ’, ‘বনের নামে পদ্য’ এবং ‘১৯৯০-এর এক সকাল’ ইত্যাদি কবিতাগুলো প্রণিধানযোগ্য। এর মধ্যে ‘শিরোনামগুলো’ কবিতাটিতে বর্ণিত ঘটনাপরম্পরা ও বাস্তবতার শ্লেষাত্মক উপস্থাপন পাঠকের অনুভবের জগৎ নাড়িয়ে দেওয়ার মতো। বিশেষ করে এই পঙ্ক্তিগুলো—
কবিতাটি উত্তরাধুনিক কাব্যচিন্তার যথার্থ উদাহরণ। রোনাল্ড বার্থার এই ধরনের সৃজন-অভিজ্ঞতার জন্য শুধু একটি পরিভাষাই প্রণয়ন করেন—‘সিজোফ্রেনিক মুড অব স্পেস অ্যান্ড টাইম’। নাজকির এই কবিতার জন্য যা যথাযথ এবং রূপকগুলোকে স্পষ্ট করে দেওয়ার মতো। স্থান-কালের এই পাগলামি-ধাঁচ নাজকির অন্যান্য কবিতায়ও দেখা যায়। তবে যেসব কবিতায় পরিস্থিতির প্রভাব বেশি থাকে, সেখানে পাগলামির চেয়ে কবিতার মূলভাব স্পষ্ট করার প্রতি বেশি মনোযোগী দেখতে পাই তাঁকে। যেমন—‘শিরোনামগুলো’, ‘একটি শোকগাথা, ‘এ কেমন আবহাওয়া’, ‘রক্তনদী উন্মাতাল’ ‘পরামর্শ’, ‘বনের নামে পদ্য’ এবং ‘১৯৯০-এর এক সকাল’ ইত্যাদি কবিতাগুলো প্রণিধানযোগ্য। এর মধ্যে ‘শিরোনামগুলো’ কবিতাটিতে বর্ণিত ঘটনাপরম্পরা ও বাস্তবতার শ্লেষাত্মক উপস্থাপন পাঠকের অনুভবের জগৎ নাড়িয়ে দেওয়ার মতো। বিশেষ করে এই পঙ্ক্তিগুলো—
‘মাসুমুল ইসলামের মহাপ্রয়াণ—
মুজাহিদ নেতা বাবা-মাকে উপহার দিয়েছেন 
পবিত্র কোরআনের একটি কপি 
মাসুমুল ইসলামের নিরক্ষর মা মখমলের গেলাফে 
মুড়িয়ে সেটি তাকের ওপর রেখে দিয়েছেন; 
জানালা দিয়ে উঁকি দেওয়া বাতাস বলল—
‘পড়ো’।’
 নাজকির কবিতামানস কিংবদন্তি উর্দু কবি মীরাজির সঙ্গেই বেশি ঘনিষ্ঠ। তাঁর কিছু কবিতায় মীরাজির কঠোরতা, ব্যথার তীব্রতা, অনিন্দ্য ভূ-বর্ণনার মতো উত্তুঙ্গ রূপ দেখা যায়। যেমন ‘মান্টোর সুলতানা বললেন’ কবিতার এ অংশটি দেখুন—
নাজকির কবিতামানস কিংবদন্তি উর্দু কবি মীরাজির সঙ্গেই বেশি ঘনিষ্ঠ। তাঁর কিছু কবিতায় মীরাজির কঠোরতা, ব্যথার তীব্রতা, অনিন্দ্য ভূ-বর্ণনার মতো উত্তুঙ্গ রূপ দেখা যায়। যেমন ‘মান্টোর সুলতানা বললেন’ কবিতার এ অংশটি দেখুন—
‘দুনিয়া কী করে জানবে—হৃদয়ের গহিনে কত নদী বহমান
আমাদের দেহ তো মহাসড়ক—মানুষের চলাচল থামেই না
চুপচাপ থাকে, নীরবে দুঃখ সয়ে যায় এবং সতত বলে বেড়ায়—
হৃদয়ের রহস্য জানা সেই যোগী কবে আসবে?’
নাজকির কবিতার বিশ্লেষণ নিষ্প্রয়োজন। কবিতার মাধ্যমে জীবনের নতুন সংস্করণের কাজ করেন তিনি। এই কবিতাগুলো আধুনিকতম উর্দু কবিতার নতুন তাঁবু। যেখানে জীবনের উত্তাল তরঙ্গের সঙ্গে আধুনিক দর্শনের হিরে-মুক্তো-জহরত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। নাজকির কবিতা পৃথিবীকে আলোকিত করা এক আলোর ফোয়ারা।
আরও পড়ুন:

ইজাজুল হক

গজলের ধারাকে নতুন গাম্ভীর্য দেওয়ার যে যাত্রা ফারুক নাজকি শুরু করেন, সেটির পরবর্তী গন্তব্য তাঁর সতেজ-তরতাজা আধুনিক উর্দু কবিতার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়। আধুনিক কবিতা এ যুগে অনেক পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছে। কবিতার বৈশ্বিক অলংকারই একালের উর্দু কবিতার প্রধান নিয়ামক। ফারুক নাজকির কাব্যগ্রন্থ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তাঁর প্রথম দিকের কবিতার তুলনায় শেষের দিকের কবিতাগুলো অনেক বেশি পরিপক্ব, বলিষ্ঠ ও কালোত্তীর্ণ। কবিতার সুর, ধাঁচ ও ভাবের বৈচিত্র্যও এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
নাজকির সর্বশেষ উর্দু কাব্যগ্রন্থ ‘লফ্জ লফ্জ নোহা’-এর কবিতাগুলো তিনি ১৯৯০ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে লিখেছেন। সময়টি কাশ্মীরের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি বেদনার ছিল। তিনি কাশ্মীরে বসেই সবকিছু প্রত্যক্ষ করতে থাকেন। চারদিকে দ্রোহের আগুন। ঝিলমে বইছিল রক্তের স্রোত। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ ও করুণ অস্ত্রবাজির মুখে কাশ্মীর জাহান্নামে পরিণত তখন। খুব কাছ থেকে দেখা এসব দৃশ্য নাজকির কবিতাকে প্রভাবিত করে সত্য; তবে কালের ভাষায় নিজের কবিতাকে হারিয়ে যেতে না দেওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা তাঁকে বাস্তববাদী করে তোলে। ফলে কবিতার শরীরে পরিস্থিতির দাগ থাকলেও পুরো কাঠামো বিনির্মাণে তিনি আধুনিক নির্মোহ কাব্যধারা ভালোই রপ্ত করেন।
 কাশ্মীরের উত্তাল পরিস্থিতিকে কবিতার ইট-সুরকিতে মিশিয়ে, আধুনিক নিরাসক্ত কবিতার ছাঁচে রেখে, সময়ের সীমারেখা পেরিয়ে, অসীমের আকাশে নাজকি নির্মাণ করেন কবিতার প্রাসাদ। ফলে ফারুকের হাত ধরে কাশ্মীরের বিরাজমান বাস্তবতা কালজয়ী কাব্যভাষায় চিরায়ত সাহিত্যের পাতায় স্থান করে নেয়। ইতিহাস ও সমাজবাস্তবতার তাপ-উত্তাপ থেকে বের হয়ে তা সর্বজনীন সৃষ্টিসুখের উল্লাসে পরিণত হয়। উদাহরণ হিসেবে নাজকির ‘সোনালি দরজার বাইরে’ কবিতাটি দেখা যাক—
কাশ্মীরের উত্তাল পরিস্থিতিকে কবিতার ইট-সুরকিতে মিশিয়ে, আধুনিক নিরাসক্ত কবিতার ছাঁচে রেখে, সময়ের সীমারেখা পেরিয়ে, অসীমের আকাশে নাজকি নির্মাণ করেন কবিতার প্রাসাদ। ফলে ফারুকের হাত ধরে কাশ্মীরের বিরাজমান বাস্তবতা কালজয়ী কাব্যভাষায় চিরায়ত সাহিত্যের পাতায় স্থান করে নেয়। ইতিহাস ও সমাজবাস্তবতার তাপ-উত্তাপ থেকে বের হয়ে তা সর্বজনীন সৃষ্টিসুখের উল্লাসে পরিণত হয়। উদাহরণ হিসেবে নাজকির ‘সোনালি দরজার বাইরে’ কবিতাটি দেখা যাক—
‘কম্পিত দেহ
ঘন কুয়াশায় লেপ্টে থাকা রং
আধমরা আলোর কাফন জড়িয়ে
মৃত্যু জনপদের আগুনে নিজেকে সঁপে দেওয়ার আগে
দীর্ঘ সময়জুড়ে
নিজের অনুভবের আঁচ সয়ে যায়।
সন্ধ্যা
আধো আঁধার সড়কে মাথা ঘষতে থাকে
থরথর কাঁপা রাত দুঃখের ছাঁচে-ঢালাই হওয়ার আগে
দীর্ঘ সময়জুড়ে
আলোহীন ঝাড়বাতির পাশে দাঁড়িয়ে রয়।
চাঁদ
আকাশের গভীর নীল সমুদ্রে তারাদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক থেকে
দীর্ঘ সময়জুড়ে
মৃত্যুর জনপদে আগুনের ফুল-লুকানো-খেলা খেলছিল
কবর থেকে কবরে ছায়া নেই, দেহ নেই
পা থেকে পায়ের দূরত্বে ঘরে ফেরার চিহ্নরাও গুম
ঘরের দহলিজ মানবশূন্য
মনিবের পথ চেয়ে-চেয়ে দরজা-কপাট
দীর্ঘ সময়জুড়ে অপেক্ষায় ছিল তবে
কোনো টোকা নেই কিংবা পায়ের আওয়াজ। 
এদিকে 
নির্বাক শহরের আঁধারে 
কম্পিত দেহ
‘কীভাবে ও কত’-এর বদলাতে থাকা প্রান্তে প্রান্তে
বিভ্রান্ত উত্তাল বিক্ষিপ্ত কুঞ্চিত হতে থাকে
এবং ঘন কুয়াশায় লেপ্টে থেকে
ডালে-ডালে আলোর পথ মাড়িয়ে
ক্রুশের ছায়ায় নিশ্বাস নিচ্ছে। 
 কবিতার কাফনে জড়ানো কম্পিত দেহ, অন্ধকার সড়কে মাথা ঘষতে থাকা সন্ধ্যা, নির্জন-নৈঃশব্দ্যের ভয়কাতর চাঁদ, বিভ্রান্ত উত্তাল নির্বাক শহর কিংবা বৃক্ষে ঝোলানো ক্রুশের ছায়ার সুনির্দিষ্ট একটি সময় আছে। নতুন শহর এবং সমাজের চিত্র শব্দের আঁচড়ে মূর্ত হয়ে উঠেছে সময়ের এই দাগে। যেখানে ভয় আছে, দৃশ্যের বিবরণ আছে, জীবন আছে, অপমানের ধারাবাহিকতা আছে এবং ক্রুশের সেই ছায়া আছে, যা ঘটে যাওয়া বিষয়ের নিদর্শন হয়ে কাঁপতে কাঁপতে জীবনের অস্তিত্ব-প্রয়াণের পয়গাম দিচ্ছে। তবে কবিতার ধাঁচ, ভাব ও কাঠামো সময়কে অতিক্রম করে অসীমে মিলিয়ে গেছে। জগতের যেকোনো প্রান্তের সমাজ বাস্তবতার সঙ্গে অতি সহজিয়া ঢঙে তা মিশে যেতে সক্ষম।
কবিতার কাফনে জড়ানো কম্পিত দেহ, অন্ধকার সড়কে মাথা ঘষতে থাকা সন্ধ্যা, নির্জন-নৈঃশব্দ্যের ভয়কাতর চাঁদ, বিভ্রান্ত উত্তাল নির্বাক শহর কিংবা বৃক্ষে ঝোলানো ক্রুশের ছায়ার সুনির্দিষ্ট একটি সময় আছে। নতুন শহর এবং সমাজের চিত্র শব্দের আঁচড়ে মূর্ত হয়ে উঠেছে সময়ের এই দাগে। যেখানে ভয় আছে, দৃশ্যের বিবরণ আছে, জীবন আছে, অপমানের ধারাবাহিকতা আছে এবং ক্রুশের সেই ছায়া আছে, যা ঘটে যাওয়া বিষয়ের নিদর্শন হয়ে কাঁপতে কাঁপতে জীবনের অস্তিত্ব-প্রয়াণের পয়গাম দিচ্ছে। তবে কবিতার ধাঁচ, ভাব ও কাঠামো সময়কে অতিক্রম করে অসীমে মিলিয়ে গেছে। জগতের যেকোনো প্রান্তের সমাজ বাস্তবতার সঙ্গে অতি সহজিয়া ঢঙে তা মিশে যেতে সক্ষম।
দুই.
নাজকির ‘আমাদের কথা’ কবিতায় পূর্ণ এক যুদ্ধগাথা রচনা করেন। গদ্য ধাঁচের কবিতা হলেও গদ্যের ভাষা তাতে নেই; বরং তা একটি ডাইনামিক কাব্য ধাঁচের প্রতিনিধিত্ব করে। কবিতাটি আপনাকে একালের কাশ্মীরের সঙ্গে, সেখানকার সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যিক কাঠামোর সঙ্গে পরিচিত করাবে। পড়তে-পড়তে আপনার মনে হবে, আধুনিক কবিতায় সৌন্দর্যনীতি থেকে সরে গেছেন নাজকি; বিশদ বিবরণ ও বিশ্লেষণধর্মী গদ্য ধাঁচের রাজনীতি থেকে আঁচল গুটিয়েছেন। কোনো স্বতন্ত্র চরিত্র নির্মাণ না করে ‘আমরা’ ও ‘আমাদের কথা’ বলে ব্যক্তিগত কবিতাকাঠামো নির্মাণ করেছেন। উত্তরাধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকেই কেবল এসব কল্পনা করা যায়। কবিতায় কাশ্মীরকে নির্মোহ দৃষ্টিকোণ থেকে আঁকার প্রয়াস লক্ষণীয়। এ যেন কাশ্মীরের অতীত-বর্তমানের ইতিহাস ও ভূবৈচিত্র্যের নিখুঁত রেখাচিত্র। উপত্যকার সাংস্কৃতিক অবদান প্রকাশ্যে আনার জন্য এটুকুই যথেষ্ট। উত্তর ভারত কাশ্মীরকে কখনো বুঝতে চায়নি। এখানকার স্বতন্ত্র ভূবৈচিত্র্যের প্রতি মোটেও নজর দেয়নি—এমন অভিযোগও তোলেন কবি। দীর্ঘ কবিতাটির এ অংশটি পড়ুন—
‘জুবাইর রেজভির আলি বিন মুত্তাকির কথা মানুষ শোনে 
তবে সবজ্ আলি সুকুতির সুর শোনে না
অথচ সেই কুণ্ডলিত সুর আজও পিরপানসালের পর্বতশৃঙ্গে ধাক্কা খেয়ে 
শিলাবহরের শিরায়-শিরায় দৌড়ায়; 
এর পর বরফ গলা শুরু করলে প্রপাতে-প্রপাতে তার গুঞ্জরণ শোনা যায় 
সবজ আলি সুকুতির সুরও দারুণ বৈচিত্র্যময়।’
 আধুনিক উর্দু কবি জুবাইর রেজভির কবিতার কাশ্মীরি চরিত্র আলি বিন মুত্তাকির মোটেও এই উপত্যকার প্রতিনিধিত্ব করে না বলে অভিযোগ করেন কবি। অথচ পুরো ভারত তাঁকে নিয়েই মেতে থাকে। অথচ কাশ্মীরের কিংবদন্তি গায়ক সবজ আলি সুকুতির সুরবৈচিত্র্যই উপত্যকার ভূবৈচিত্র্যের সেরা উপমা হতে পারে। কাশ্মীরের সকল সৌন্দর্যের সুর যেন তাঁর গলা দিয়ে বেরিয়ে গভীর নীল আকাশে মেঘ হয়ে ভাসতে থাকে। এক সময় তা কাশ্মীরের পিরপানচালের সুউচ্চ পর্বতশ্রেণিকে একত্ববাদের গান শোনাতে যায়। সেখানে মিলিত হয় উপত্যকার সকল আধ্যাত্মিকতার ধারা। তবে উপত্যকার এমন স্বতন্ত্র রূপ কখনোই উত্তর ভারতের সানগ্লাস পরা চোখে ধরা পড়ে না। ফলে এই উপত্যকাকে উত্তর ভারত কিংবা কাশ্মীরের বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে মেলানোর ব্যর্থ চেষ্টা দেখা যায়।
আধুনিক উর্দু কবি জুবাইর রেজভির কবিতার কাশ্মীরি চরিত্র আলি বিন মুত্তাকির মোটেও এই উপত্যকার প্রতিনিধিত্ব করে না বলে অভিযোগ করেন কবি। অথচ পুরো ভারত তাঁকে নিয়েই মেতে থাকে। অথচ কাশ্মীরের কিংবদন্তি গায়ক সবজ আলি সুকুতির সুরবৈচিত্র্যই উপত্যকার ভূবৈচিত্র্যের সেরা উপমা হতে পারে। কাশ্মীরের সকল সৌন্দর্যের সুর যেন তাঁর গলা দিয়ে বেরিয়ে গভীর নীল আকাশে মেঘ হয়ে ভাসতে থাকে। এক সময় তা কাশ্মীরের পিরপানচালের সুউচ্চ পর্বতশ্রেণিকে একত্ববাদের গান শোনাতে যায়। সেখানে মিলিত হয় উপত্যকার সকল আধ্যাত্মিকতার ধারা। তবে উপত্যকার এমন স্বতন্ত্র রূপ কখনোই উত্তর ভারতের সানগ্লাস পরা চোখে ধরা পড়ে না। ফলে এই উপত্যকাকে উত্তর ভারত কিংবা কাশ্মীরের বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে মেলানোর ব্যর্থ চেষ্টা দেখা যায়।
কবিতার শেষাংশে এসে পাঠককে অবাক করে দিয়ে কবি বলেন—
‘বসন্ত এসে গেছে
তবে গাছে না ধরেছে আপেল, না নাশপাতি
বরং তাতে ধরেছে মানুষের খুলি
আমরা খুব খুশি হলাম
এবং নিমন্ত্রণ করলাম শাহজাদাদের; 
এবং অভিবাদন জানালাম তাদের ককটেল ফাটিয়ে।’
এই জায়গায় টিএস এলিয়টের সঙ্গে এক আশ্চর্য মিল রয়েছে নাজকির। এলিয়ট এক কবিতায় বলেন—
‘গত বছর নিজেদের বাগানে তোমরা
যে লাশগুলো বপন করেছিলে—
এত দিনে তা হয়তো ফল-ফুলে পরিণত হয়েছে 
এবং থোকায় থোকায় বেরিয়ে পড়েছে।’
এলিয়ট নিজের যুগের অস্থিরতা এবং মানুষের অনুভূতিহীনতা প্রকাশের জন্য জমিতে রোপণ করা লাশের রূপক ব্যবহার করেন। নাজকিও একই অবস্থার বয়ান দিতে গাছে-গাছে মানুষের খুলি ফলার উপমা খুঁজে নেন। ‘আমাদের কথা’য় কাশ্মীরি মানুষের সঙ্গে রাজনীতিবিদদের গাদ্দারির বিরুদ্ধে খোলাখুলি বিদ্রূপ প্রতিভাত হয়।

তিন. 
নাজকির আরেকটি উল্লেখযোগ্য কবিতা ‘খুশবুর খোলসে অ্যাসিড’। কবিতাটির শরীর দুঃখের ক্ষত বয়ে বেড়ায়; আত্মপরিচয়ের সন্ধান করেও ব্যর্থ হন কবি। চির নিষ্পাপকালের কোলে শুরু করা কবির জীবনটি আধুনিককালে এসে বিধ্বংসী অ্যাসিডে পরিণত হয়, যা তাঁর নিষ্পাপ চেহারায় দাগের জন্ম দেয় এবং সম্মানের রূপ শোভাকে কলঙ্কিত করে। সময়ের দুটি প্রান্তে ভ্রমণ করে এই কবিতা। একদিকে নির্মল গ্রাম, সৃজনানন্দ ও মুক্ত ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে হাজির হন কবির সহজ-সরল মা, যিনি আপেলের মতো লাল এবং গোলাপের মতো কোমল। অন্যদিকে সময়ের শেষ প্রান্তকে তিনি ‘আমি’-এর ভেতর দিয়ে ধরার চেষ্টা করেন। মাঝখানের সময়টিকে তিনি তাঁর বাবার রূপে দেখতে পান। তবে একটি উপসংহারে পৌঁছেও যেন শেষ পর্যন্ত তিনি জীবনের অর্থ স্পর্শ করতে ব্যর্থ হন। ফলে শেষ লাইনে এসে নিজেকেই প্রশ্ন ছুড়ে দেন—‘আমি কে?’ কবিতাটি পড়া যাক—
‘নিবু পাহাড়ের আঁচলতলে
একটি গ্রাম—
মাদরাবন
জন্মেছিলাম আমি
(আমার নাম মুহাম্মদ ফারুক) 
আমার মা ছিলেন আপেলের মতো লাল ও মিষ্টি
গোলাপের মতো কোমল ও সুরভিত
ছিলেন সুঘ্রাণের আকর; 
জড়ানো লেপটানো ছলচাতুরী কপটতা মিথ্যা—
এসব শব্দ তিনি শুনেছিলেন সত্য
তবে কখনো পরখ করেননি
মুখে-মুখে আওড়াননি একবারও। 
রেডিওতে প্রচারিত হয় নিজার কাব্বানির ভৌতিক কবিতা 
অথবা কোনো গায়ক শোনায় কালিদাসের ঋতু সমাচার—
ডুকরে-ডুকরে কাঁদেন তিনি; 
আমি কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করি
তিনি বলেন—
দেবতাদের এসব ভাষা
বড়ই জাদুকরী
সত্যের দিশা 
এবং সরল পথের পাথেয় রয়েছে এতে; 
আমি তাঁর সরলতায় কয়েকবার কেঁদে দিই। 
বাবা আমার ডিনামাইট চিবোতেন
আঙুলের মাঝে ফলাতেন অ্যাসিডের বন
এবং মরা পাতলা হলদে কাগজের কপোলে
সাজাতেন রক্তের ফুল 
নিজ থেকে পৃথক হয়ে নিজের সঙ্গে মিশে গিয়ে
মায়ায় পড়তে থাকেন নিজেরই সম্পদের; 
গোটা আটটি জাহাজের মালিক তিনি—
ভাসিয়েছেন সময়ের সমুদ্রজলে 
এবং কন্ট্রোল রুমে বসে নিজেই
নির্ধারণ করতে থাকেন তাদের চলার পথ। 
আমিও একটি জাহাজ
পাথর চিবোনো, চোখের পাতার ঝোপে বরই গাছ লাগানো
খুব ভোরে মসজিদের দরোজা দিয়ে আল্লাহর কাছ থেকে 
চোখ লুকিয়ে চলে যাওয়া
এবং আল্লাহপ্রেমিকের ভক্ত হয়ে
আল্লাহরই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হওয়া
যার স্বভাবে পরিণত হয়েছে; 
লাল মাটির আপেল ও অ্যাসিডের সেই
মিলনের ফসল আমি—
আমি কে?’
 কবিতাটি উত্তরাধুনিক কাব্যচিন্তার যথার্থ উদাহরণ। রোনাল্ড বার্থার এই ধরনের সৃজন-অভিজ্ঞতার জন্য শুধু একটি পরিভাষাই প্রণয়ন করেন—‘সিজোফ্রেনিক মুড অব স্পেস অ্যান্ড টাইম’। নাজকির এই কবিতার জন্য যা যথাযথ এবং রূপকগুলোকে স্পষ্ট করে দেওয়ার মতো। স্থান-কালের এই পাগলামি-ধাঁচ নাজকির অন্যান্য কবিতায়ও দেখা যায়। তবে যেসব কবিতায় পরিস্থিতির প্রভাব বেশি থাকে, সেখানে পাগলামির চেয়ে কবিতার মূলভাব স্পষ্ট করার প্রতি বেশি মনোযোগী দেখতে পাই তাঁকে। যেমন—‘শিরোনামগুলো’, ‘একটি শোকগাথা, ‘এ কেমন আবহাওয়া’, ‘রক্তনদী উন্মাতাল’ ‘পরামর্শ’, ‘বনের নামে পদ্য’ এবং ‘১৯৯০-এর এক সকাল’ ইত্যাদি কবিতাগুলো প্রণিধানযোগ্য। এর মধ্যে ‘শিরোনামগুলো’ কবিতাটিতে বর্ণিত ঘটনাপরম্পরা ও বাস্তবতার শ্লেষাত্মক উপস্থাপন পাঠকের অনুভবের জগৎ নাড়িয়ে দেওয়ার মতো। বিশেষ করে এই পঙ্ক্তিগুলো—
কবিতাটি উত্তরাধুনিক কাব্যচিন্তার যথার্থ উদাহরণ। রোনাল্ড বার্থার এই ধরনের সৃজন-অভিজ্ঞতার জন্য শুধু একটি পরিভাষাই প্রণয়ন করেন—‘সিজোফ্রেনিক মুড অব স্পেস অ্যান্ড টাইম’। নাজকির এই কবিতার জন্য যা যথাযথ এবং রূপকগুলোকে স্পষ্ট করে দেওয়ার মতো। স্থান-কালের এই পাগলামি-ধাঁচ নাজকির অন্যান্য কবিতায়ও দেখা যায়। তবে যেসব কবিতায় পরিস্থিতির প্রভাব বেশি থাকে, সেখানে পাগলামির চেয়ে কবিতার মূলভাব স্পষ্ট করার প্রতি বেশি মনোযোগী দেখতে পাই তাঁকে। যেমন—‘শিরোনামগুলো’, ‘একটি শোকগাথা, ‘এ কেমন আবহাওয়া’, ‘রক্তনদী উন্মাতাল’ ‘পরামর্শ’, ‘বনের নামে পদ্য’ এবং ‘১৯৯০-এর এক সকাল’ ইত্যাদি কবিতাগুলো প্রণিধানযোগ্য। এর মধ্যে ‘শিরোনামগুলো’ কবিতাটিতে বর্ণিত ঘটনাপরম্পরা ও বাস্তবতার শ্লেষাত্মক উপস্থাপন পাঠকের অনুভবের জগৎ নাড়িয়ে দেওয়ার মতো। বিশেষ করে এই পঙ্ক্তিগুলো—
‘মাসুমুল ইসলামের মহাপ্রয়াণ—
মুজাহিদ নেতা বাবা-মাকে উপহার দিয়েছেন 
পবিত্র কোরআনের একটি কপি 
মাসুমুল ইসলামের নিরক্ষর মা মখমলের গেলাফে 
মুড়িয়ে সেটি তাকের ওপর রেখে দিয়েছেন; 
জানালা দিয়ে উঁকি দেওয়া বাতাস বলল—
‘পড়ো’।’
 নাজকির কবিতামানস কিংবদন্তি উর্দু কবি মীরাজির সঙ্গেই বেশি ঘনিষ্ঠ। তাঁর কিছু কবিতায় মীরাজির কঠোরতা, ব্যথার তীব্রতা, অনিন্দ্য ভূ-বর্ণনার মতো উত্তুঙ্গ রূপ দেখা যায়। যেমন ‘মান্টোর সুলতানা বললেন’ কবিতার এ অংশটি দেখুন—
নাজকির কবিতামানস কিংবদন্তি উর্দু কবি মীরাজির সঙ্গেই বেশি ঘনিষ্ঠ। তাঁর কিছু কবিতায় মীরাজির কঠোরতা, ব্যথার তীব্রতা, অনিন্দ্য ভূ-বর্ণনার মতো উত্তুঙ্গ রূপ দেখা যায়। যেমন ‘মান্টোর সুলতানা বললেন’ কবিতার এ অংশটি দেখুন—
‘দুনিয়া কী করে জানবে—হৃদয়ের গহিনে কত নদী বহমান
আমাদের দেহ তো মহাসড়ক—মানুষের চলাচল থামেই না
চুপচাপ থাকে, নীরবে দুঃখ সয়ে যায় এবং সতত বলে বেড়ায়—
হৃদয়ের রহস্য জানা সেই যোগী কবে আসবে?’
নাজকির কবিতার বিশ্লেষণ নিষ্প্রয়োজন। কবিতার মাধ্যমে জীবনের নতুন সংস্করণের কাজ করেন তিনি। এই কবিতাগুলো আধুনিকতম উর্দু কবিতার নতুন তাঁবু। যেখানে জীবনের উত্তাল তরঙ্গের সঙ্গে আধুনিক দর্শনের হিরে-মুক্তো-জহরত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। নাজকির কবিতা পৃথিবীকে আলোকিত করা এক আলোর ফোয়ারা।
আরও পড়ুন:

গজলের ধারাকে নতুন গাম্ভীর্য দেওয়ার যে যাত্রা ফারুক নাজকি শুরু করেন, সেটির পরবর্তী গন্তব্য তাঁর সতেজ-তরতাজা আধুনিক উর্দু কবিতার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়। আধুনিক কবিতা এ যুগে অনেক পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছে। কবিতার বৈশ্বিক অলংকারই একালের উর্দু কবিতার প্রধান নিয়ামক। ফারুক নাজকির কাব্যগ্রন্থ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তাঁর প্রথম দিকের কবিতার তুলনায় শেষের দিকের কবিতাগুলো অনেক বেশি পরিপক্ব, বলিষ্ঠ ও কালোত্তীর্ণ। কবিতার সুর, ধাঁচ ও ভাবের বৈচিত্র্যও এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
নাজকির সর্বশেষ উর্দু কাব্যগ্রন্থ ‘লফ্জ লফ্জ নোহা’-এর কবিতাগুলো তিনি ১৯৯০ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে লিখেছেন। সময়টি কাশ্মীরের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি বেদনার ছিল। তিনি কাশ্মীরে বসেই সবকিছু প্রত্যক্ষ করতে থাকেন। চারদিকে দ্রোহের আগুন। ঝিলমে বইছিল রক্তের স্রোত। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ ও করুণ অস্ত্রবাজির মুখে কাশ্মীর জাহান্নামে পরিণত তখন। খুব কাছ থেকে দেখা এসব দৃশ্য নাজকির কবিতাকে প্রভাবিত করে সত্য; তবে কালের ভাষায় নিজের কবিতাকে হারিয়ে যেতে না দেওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা তাঁকে বাস্তববাদী করে তোলে। ফলে কবিতার শরীরে পরিস্থিতির দাগ থাকলেও পুরো কাঠামো বিনির্মাণে তিনি আধুনিক নির্মোহ কাব্যধারা ভালোই রপ্ত করেন।
 কাশ্মীরের উত্তাল পরিস্থিতিকে কবিতার ইট-সুরকিতে মিশিয়ে, আধুনিক নিরাসক্ত কবিতার ছাঁচে রেখে, সময়ের সীমারেখা পেরিয়ে, অসীমের আকাশে নাজকি নির্মাণ করেন কবিতার প্রাসাদ। ফলে ফারুকের হাত ধরে কাশ্মীরের বিরাজমান বাস্তবতা কালজয়ী কাব্যভাষায় চিরায়ত সাহিত্যের পাতায় স্থান করে নেয়। ইতিহাস ও সমাজবাস্তবতার তাপ-উত্তাপ থেকে বের হয়ে তা সর্বজনীন সৃষ্টিসুখের উল্লাসে পরিণত হয়। উদাহরণ হিসেবে নাজকির ‘সোনালি দরজার বাইরে’ কবিতাটি দেখা যাক—
কাশ্মীরের উত্তাল পরিস্থিতিকে কবিতার ইট-সুরকিতে মিশিয়ে, আধুনিক নিরাসক্ত কবিতার ছাঁচে রেখে, সময়ের সীমারেখা পেরিয়ে, অসীমের আকাশে নাজকি নির্মাণ করেন কবিতার প্রাসাদ। ফলে ফারুকের হাত ধরে কাশ্মীরের বিরাজমান বাস্তবতা কালজয়ী কাব্যভাষায় চিরায়ত সাহিত্যের পাতায় স্থান করে নেয়। ইতিহাস ও সমাজবাস্তবতার তাপ-উত্তাপ থেকে বের হয়ে তা সর্বজনীন সৃষ্টিসুখের উল্লাসে পরিণত হয়। উদাহরণ হিসেবে নাজকির ‘সোনালি দরজার বাইরে’ কবিতাটি দেখা যাক—
‘কম্পিত দেহ
ঘন কুয়াশায় লেপ্টে থাকা রং
আধমরা আলোর কাফন জড়িয়ে
মৃত্যু জনপদের আগুনে নিজেকে সঁপে দেওয়ার আগে
দীর্ঘ সময়জুড়ে
নিজের অনুভবের আঁচ সয়ে যায়।
সন্ধ্যা
আধো আঁধার সড়কে মাথা ঘষতে থাকে
থরথর কাঁপা রাত দুঃখের ছাঁচে-ঢালাই হওয়ার আগে
দীর্ঘ সময়জুড়ে
আলোহীন ঝাড়বাতির পাশে দাঁড়িয়ে রয়।
চাঁদ
আকাশের গভীর নীল সমুদ্রে তারাদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক থেকে
দীর্ঘ সময়জুড়ে
মৃত্যুর জনপদে আগুনের ফুল-লুকানো-খেলা খেলছিল
কবর থেকে কবরে ছায়া নেই, দেহ নেই
পা থেকে পায়ের দূরত্বে ঘরে ফেরার চিহ্নরাও গুম
ঘরের দহলিজ মানবশূন্য
মনিবের পথ চেয়ে-চেয়ে দরজা-কপাট
দীর্ঘ সময়জুড়ে অপেক্ষায় ছিল তবে
কোনো টোকা নেই কিংবা পায়ের আওয়াজ। 
এদিকে 
নির্বাক শহরের আঁধারে 
কম্পিত দেহ
‘কীভাবে ও কত’-এর বদলাতে থাকা প্রান্তে প্রান্তে
বিভ্রান্ত উত্তাল বিক্ষিপ্ত কুঞ্চিত হতে থাকে
এবং ঘন কুয়াশায় লেপ্টে থেকে
ডালে-ডালে আলোর পথ মাড়িয়ে
ক্রুশের ছায়ায় নিশ্বাস নিচ্ছে। 
 কবিতার কাফনে জড়ানো কম্পিত দেহ, অন্ধকার সড়কে মাথা ঘষতে থাকা সন্ধ্যা, নির্জন-নৈঃশব্দ্যের ভয়কাতর চাঁদ, বিভ্রান্ত উত্তাল নির্বাক শহর কিংবা বৃক্ষে ঝোলানো ক্রুশের ছায়ার সুনির্দিষ্ট একটি সময় আছে। নতুন শহর এবং সমাজের চিত্র শব্দের আঁচড়ে মূর্ত হয়ে উঠেছে সময়ের এই দাগে। যেখানে ভয় আছে, দৃশ্যের বিবরণ আছে, জীবন আছে, অপমানের ধারাবাহিকতা আছে এবং ক্রুশের সেই ছায়া আছে, যা ঘটে যাওয়া বিষয়ের নিদর্শন হয়ে কাঁপতে কাঁপতে জীবনের অস্তিত্ব-প্রয়াণের পয়গাম দিচ্ছে। তবে কবিতার ধাঁচ, ভাব ও কাঠামো সময়কে অতিক্রম করে অসীমে মিলিয়ে গেছে। জগতের যেকোনো প্রান্তের সমাজ বাস্তবতার সঙ্গে অতি সহজিয়া ঢঙে তা মিশে যেতে সক্ষম।
কবিতার কাফনে জড়ানো কম্পিত দেহ, অন্ধকার সড়কে মাথা ঘষতে থাকা সন্ধ্যা, নির্জন-নৈঃশব্দ্যের ভয়কাতর চাঁদ, বিভ্রান্ত উত্তাল নির্বাক শহর কিংবা বৃক্ষে ঝোলানো ক্রুশের ছায়ার সুনির্দিষ্ট একটি সময় আছে। নতুন শহর এবং সমাজের চিত্র শব্দের আঁচড়ে মূর্ত হয়ে উঠেছে সময়ের এই দাগে। যেখানে ভয় আছে, দৃশ্যের বিবরণ আছে, জীবন আছে, অপমানের ধারাবাহিকতা আছে এবং ক্রুশের সেই ছায়া আছে, যা ঘটে যাওয়া বিষয়ের নিদর্শন হয়ে কাঁপতে কাঁপতে জীবনের অস্তিত্ব-প্রয়াণের পয়গাম দিচ্ছে। তবে কবিতার ধাঁচ, ভাব ও কাঠামো সময়কে অতিক্রম করে অসীমে মিলিয়ে গেছে। জগতের যেকোনো প্রান্তের সমাজ বাস্তবতার সঙ্গে অতি সহজিয়া ঢঙে তা মিশে যেতে সক্ষম।
দুই.
নাজকির ‘আমাদের কথা’ কবিতায় পূর্ণ এক যুদ্ধগাথা রচনা করেন। গদ্য ধাঁচের কবিতা হলেও গদ্যের ভাষা তাতে নেই; বরং তা একটি ডাইনামিক কাব্য ধাঁচের প্রতিনিধিত্ব করে। কবিতাটি আপনাকে একালের কাশ্মীরের সঙ্গে, সেখানকার সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যিক কাঠামোর সঙ্গে পরিচিত করাবে। পড়তে-পড়তে আপনার মনে হবে, আধুনিক কবিতায় সৌন্দর্যনীতি থেকে সরে গেছেন নাজকি; বিশদ বিবরণ ও বিশ্লেষণধর্মী গদ্য ধাঁচের রাজনীতি থেকে আঁচল গুটিয়েছেন। কোনো স্বতন্ত্র চরিত্র নির্মাণ না করে ‘আমরা’ ও ‘আমাদের কথা’ বলে ব্যক্তিগত কবিতাকাঠামো নির্মাণ করেছেন। উত্তরাধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকেই কেবল এসব কল্পনা করা যায়। কবিতায় কাশ্মীরকে নির্মোহ দৃষ্টিকোণ থেকে আঁকার প্রয়াস লক্ষণীয়। এ যেন কাশ্মীরের অতীত-বর্তমানের ইতিহাস ও ভূবৈচিত্র্যের নিখুঁত রেখাচিত্র। উপত্যকার সাংস্কৃতিক অবদান প্রকাশ্যে আনার জন্য এটুকুই যথেষ্ট। উত্তর ভারত কাশ্মীরকে কখনো বুঝতে চায়নি। এখানকার স্বতন্ত্র ভূবৈচিত্র্যের প্রতি মোটেও নজর দেয়নি—এমন অভিযোগও তোলেন কবি। দীর্ঘ কবিতাটির এ অংশটি পড়ুন—
‘জুবাইর রেজভির আলি বিন মুত্তাকির কথা মানুষ শোনে 
তবে সবজ্ আলি সুকুতির সুর শোনে না
অথচ সেই কুণ্ডলিত সুর আজও পিরপানসালের পর্বতশৃঙ্গে ধাক্কা খেয়ে 
শিলাবহরের শিরায়-শিরায় দৌড়ায়; 
এর পর বরফ গলা শুরু করলে প্রপাতে-প্রপাতে তার গুঞ্জরণ শোনা যায় 
সবজ আলি সুকুতির সুরও দারুণ বৈচিত্র্যময়।’
 আধুনিক উর্দু কবি জুবাইর রেজভির কবিতার কাশ্মীরি চরিত্র আলি বিন মুত্তাকির মোটেও এই উপত্যকার প্রতিনিধিত্ব করে না বলে অভিযোগ করেন কবি। অথচ পুরো ভারত তাঁকে নিয়েই মেতে থাকে। অথচ কাশ্মীরের কিংবদন্তি গায়ক সবজ আলি সুকুতির সুরবৈচিত্র্যই উপত্যকার ভূবৈচিত্র্যের সেরা উপমা হতে পারে। কাশ্মীরের সকল সৌন্দর্যের সুর যেন তাঁর গলা দিয়ে বেরিয়ে গভীর নীল আকাশে মেঘ হয়ে ভাসতে থাকে। এক সময় তা কাশ্মীরের পিরপানচালের সুউচ্চ পর্বতশ্রেণিকে একত্ববাদের গান শোনাতে যায়। সেখানে মিলিত হয় উপত্যকার সকল আধ্যাত্মিকতার ধারা। তবে উপত্যকার এমন স্বতন্ত্র রূপ কখনোই উত্তর ভারতের সানগ্লাস পরা চোখে ধরা পড়ে না। ফলে এই উপত্যকাকে উত্তর ভারত কিংবা কাশ্মীরের বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে মেলানোর ব্যর্থ চেষ্টা দেখা যায়।
আধুনিক উর্দু কবি জুবাইর রেজভির কবিতার কাশ্মীরি চরিত্র আলি বিন মুত্তাকির মোটেও এই উপত্যকার প্রতিনিধিত্ব করে না বলে অভিযোগ করেন কবি। অথচ পুরো ভারত তাঁকে নিয়েই মেতে থাকে। অথচ কাশ্মীরের কিংবদন্তি গায়ক সবজ আলি সুকুতির সুরবৈচিত্র্যই উপত্যকার ভূবৈচিত্র্যের সেরা উপমা হতে পারে। কাশ্মীরের সকল সৌন্দর্যের সুর যেন তাঁর গলা দিয়ে বেরিয়ে গভীর নীল আকাশে মেঘ হয়ে ভাসতে থাকে। এক সময় তা কাশ্মীরের পিরপানচালের সুউচ্চ পর্বতশ্রেণিকে একত্ববাদের গান শোনাতে যায়। সেখানে মিলিত হয় উপত্যকার সকল আধ্যাত্মিকতার ধারা। তবে উপত্যকার এমন স্বতন্ত্র রূপ কখনোই উত্তর ভারতের সানগ্লাস পরা চোখে ধরা পড়ে না। ফলে এই উপত্যকাকে উত্তর ভারত কিংবা কাশ্মীরের বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে মেলানোর ব্যর্থ চেষ্টা দেখা যায়।
কবিতার শেষাংশে এসে পাঠককে অবাক করে দিয়ে কবি বলেন—
‘বসন্ত এসে গেছে
তবে গাছে না ধরেছে আপেল, না নাশপাতি
বরং তাতে ধরেছে মানুষের খুলি
আমরা খুব খুশি হলাম
এবং নিমন্ত্রণ করলাম শাহজাদাদের; 
এবং অভিবাদন জানালাম তাদের ককটেল ফাটিয়ে।’
এই জায়গায় টিএস এলিয়টের সঙ্গে এক আশ্চর্য মিল রয়েছে নাজকির। এলিয়ট এক কবিতায় বলেন—
‘গত বছর নিজেদের বাগানে তোমরা
যে লাশগুলো বপন করেছিলে—
এত দিনে তা হয়তো ফল-ফুলে পরিণত হয়েছে 
এবং থোকায় থোকায় বেরিয়ে পড়েছে।’
এলিয়ট নিজের যুগের অস্থিরতা এবং মানুষের অনুভূতিহীনতা প্রকাশের জন্য জমিতে রোপণ করা লাশের রূপক ব্যবহার করেন। নাজকিও একই অবস্থার বয়ান দিতে গাছে-গাছে মানুষের খুলি ফলার উপমা খুঁজে নেন। ‘আমাদের কথা’য় কাশ্মীরি মানুষের সঙ্গে রাজনীতিবিদদের গাদ্দারির বিরুদ্ধে খোলাখুলি বিদ্রূপ প্রতিভাত হয়।

তিন. 
নাজকির আরেকটি উল্লেখযোগ্য কবিতা ‘খুশবুর খোলসে অ্যাসিড’। কবিতাটির শরীর দুঃখের ক্ষত বয়ে বেড়ায়; আত্মপরিচয়ের সন্ধান করেও ব্যর্থ হন কবি। চির নিষ্পাপকালের কোলে শুরু করা কবির জীবনটি আধুনিককালে এসে বিধ্বংসী অ্যাসিডে পরিণত হয়, যা তাঁর নিষ্পাপ চেহারায় দাগের জন্ম দেয় এবং সম্মানের রূপ শোভাকে কলঙ্কিত করে। সময়ের দুটি প্রান্তে ভ্রমণ করে এই কবিতা। একদিকে নির্মল গ্রাম, সৃজনানন্দ ও মুক্ত ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে হাজির হন কবির সহজ-সরল মা, যিনি আপেলের মতো লাল এবং গোলাপের মতো কোমল। অন্যদিকে সময়ের শেষ প্রান্তকে তিনি ‘আমি’-এর ভেতর দিয়ে ধরার চেষ্টা করেন। মাঝখানের সময়টিকে তিনি তাঁর বাবার রূপে দেখতে পান। তবে একটি উপসংহারে পৌঁছেও যেন শেষ পর্যন্ত তিনি জীবনের অর্থ স্পর্শ করতে ব্যর্থ হন। ফলে শেষ লাইনে এসে নিজেকেই প্রশ্ন ছুড়ে দেন—‘আমি কে?’ কবিতাটি পড়া যাক—
‘নিবু পাহাড়ের আঁচলতলে
একটি গ্রাম—
মাদরাবন
জন্মেছিলাম আমি
(আমার নাম মুহাম্মদ ফারুক) 
আমার মা ছিলেন আপেলের মতো লাল ও মিষ্টি
গোলাপের মতো কোমল ও সুরভিত
ছিলেন সুঘ্রাণের আকর; 
জড়ানো লেপটানো ছলচাতুরী কপটতা মিথ্যা—
এসব শব্দ তিনি শুনেছিলেন সত্য
তবে কখনো পরখ করেননি
মুখে-মুখে আওড়াননি একবারও। 
রেডিওতে প্রচারিত হয় নিজার কাব্বানির ভৌতিক কবিতা 
অথবা কোনো গায়ক শোনায় কালিদাসের ঋতু সমাচার—
ডুকরে-ডুকরে কাঁদেন তিনি; 
আমি কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করি
তিনি বলেন—
দেবতাদের এসব ভাষা
বড়ই জাদুকরী
সত্যের দিশা 
এবং সরল পথের পাথেয় রয়েছে এতে; 
আমি তাঁর সরলতায় কয়েকবার কেঁদে দিই। 
বাবা আমার ডিনামাইট চিবোতেন
আঙুলের মাঝে ফলাতেন অ্যাসিডের বন
এবং মরা পাতলা হলদে কাগজের কপোলে
সাজাতেন রক্তের ফুল 
নিজ থেকে পৃথক হয়ে নিজের সঙ্গে মিশে গিয়ে
মায়ায় পড়তে থাকেন নিজেরই সম্পদের; 
গোটা আটটি জাহাজের মালিক তিনি—
ভাসিয়েছেন সময়ের সমুদ্রজলে 
এবং কন্ট্রোল রুমে বসে নিজেই
নির্ধারণ করতে থাকেন তাদের চলার পথ। 
আমিও একটি জাহাজ
পাথর চিবোনো, চোখের পাতার ঝোপে বরই গাছ লাগানো
খুব ভোরে মসজিদের দরোজা দিয়ে আল্লাহর কাছ থেকে 
চোখ লুকিয়ে চলে যাওয়া
এবং আল্লাহপ্রেমিকের ভক্ত হয়ে
আল্লাহরই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হওয়া
যার স্বভাবে পরিণত হয়েছে; 
লাল মাটির আপেল ও অ্যাসিডের সেই
মিলনের ফসল আমি—
আমি কে?’
 কবিতাটি উত্তরাধুনিক কাব্যচিন্তার যথার্থ উদাহরণ। রোনাল্ড বার্থার এই ধরনের সৃজন-অভিজ্ঞতার জন্য শুধু একটি পরিভাষাই প্রণয়ন করেন—‘সিজোফ্রেনিক মুড অব স্পেস অ্যান্ড টাইম’। নাজকির এই কবিতার জন্য যা যথাযথ এবং রূপকগুলোকে স্পষ্ট করে দেওয়ার মতো। স্থান-কালের এই পাগলামি-ধাঁচ নাজকির অন্যান্য কবিতায়ও দেখা যায়। তবে যেসব কবিতায় পরিস্থিতির প্রভাব বেশি থাকে, সেখানে পাগলামির চেয়ে কবিতার মূলভাব স্পষ্ট করার প্রতি বেশি মনোযোগী দেখতে পাই তাঁকে। যেমন—‘শিরোনামগুলো’, ‘একটি শোকগাথা, ‘এ কেমন আবহাওয়া’, ‘রক্তনদী উন্মাতাল’ ‘পরামর্শ’, ‘বনের নামে পদ্য’ এবং ‘১৯৯০-এর এক সকাল’ ইত্যাদি কবিতাগুলো প্রণিধানযোগ্য। এর মধ্যে ‘শিরোনামগুলো’ কবিতাটিতে বর্ণিত ঘটনাপরম্পরা ও বাস্তবতার শ্লেষাত্মক উপস্থাপন পাঠকের অনুভবের জগৎ নাড়িয়ে দেওয়ার মতো। বিশেষ করে এই পঙ্ক্তিগুলো—
কবিতাটি উত্তরাধুনিক কাব্যচিন্তার যথার্থ উদাহরণ। রোনাল্ড বার্থার এই ধরনের সৃজন-অভিজ্ঞতার জন্য শুধু একটি পরিভাষাই প্রণয়ন করেন—‘সিজোফ্রেনিক মুড অব স্পেস অ্যান্ড টাইম’। নাজকির এই কবিতার জন্য যা যথাযথ এবং রূপকগুলোকে স্পষ্ট করে দেওয়ার মতো। স্থান-কালের এই পাগলামি-ধাঁচ নাজকির অন্যান্য কবিতায়ও দেখা যায়। তবে যেসব কবিতায় পরিস্থিতির প্রভাব বেশি থাকে, সেখানে পাগলামির চেয়ে কবিতার মূলভাব স্পষ্ট করার প্রতি বেশি মনোযোগী দেখতে পাই তাঁকে। যেমন—‘শিরোনামগুলো’, ‘একটি শোকগাথা, ‘এ কেমন আবহাওয়া’, ‘রক্তনদী উন্মাতাল’ ‘পরামর্শ’, ‘বনের নামে পদ্য’ এবং ‘১৯৯০-এর এক সকাল’ ইত্যাদি কবিতাগুলো প্রণিধানযোগ্য। এর মধ্যে ‘শিরোনামগুলো’ কবিতাটিতে বর্ণিত ঘটনাপরম্পরা ও বাস্তবতার শ্লেষাত্মক উপস্থাপন পাঠকের অনুভবের জগৎ নাড়িয়ে দেওয়ার মতো। বিশেষ করে এই পঙ্ক্তিগুলো—
‘মাসুমুল ইসলামের মহাপ্রয়াণ—
মুজাহিদ নেতা বাবা-মাকে উপহার দিয়েছেন 
পবিত্র কোরআনের একটি কপি 
মাসুমুল ইসলামের নিরক্ষর মা মখমলের গেলাফে 
মুড়িয়ে সেটি তাকের ওপর রেখে দিয়েছেন; 
জানালা দিয়ে উঁকি দেওয়া বাতাস বলল—
‘পড়ো’।’
 নাজকির কবিতামানস কিংবদন্তি উর্দু কবি মীরাজির সঙ্গেই বেশি ঘনিষ্ঠ। তাঁর কিছু কবিতায় মীরাজির কঠোরতা, ব্যথার তীব্রতা, অনিন্দ্য ভূ-বর্ণনার মতো উত্তুঙ্গ রূপ দেখা যায়। যেমন ‘মান্টোর সুলতানা বললেন’ কবিতার এ অংশটি দেখুন—
নাজকির কবিতামানস কিংবদন্তি উর্দু কবি মীরাজির সঙ্গেই বেশি ঘনিষ্ঠ। তাঁর কিছু কবিতায় মীরাজির কঠোরতা, ব্যথার তীব্রতা, অনিন্দ্য ভূ-বর্ণনার মতো উত্তুঙ্গ রূপ দেখা যায়। যেমন ‘মান্টোর সুলতানা বললেন’ কবিতার এ অংশটি দেখুন—
‘দুনিয়া কী করে জানবে—হৃদয়ের গহিনে কত নদী বহমান
আমাদের দেহ তো মহাসড়ক—মানুষের চলাচল থামেই না
চুপচাপ থাকে, নীরবে দুঃখ সয়ে যায় এবং সতত বলে বেড়ায়—
হৃদয়ের রহস্য জানা সেই যোগী কবে আসবে?’
নাজকির কবিতার বিশ্লেষণ নিষ্প্রয়োজন। কবিতার মাধ্যমে জীবনের নতুন সংস্করণের কাজ করেন তিনি। এই কবিতাগুলো আধুনিকতম উর্দু কবিতার নতুন তাঁবু। যেখানে জীবনের উত্তাল তরঙ্গের সঙ্গে আধুনিক দর্শনের হিরে-মুক্তো-জহরত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। নাজকির কবিতা পৃথিবীকে আলোকিত করা এক আলোর ফোয়ারা।
আরও পড়ুন:


ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
১ দিন আগে
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
২ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে। শুধু তা-ই নয়, তাঁকে কিন্তু কখনো গহিন অরণ্যের আস্তানায় সশস্ত্র রক্ষীবেষ্টিত হয়ে আত্মগোপনে থাকতে হয়নি। তাঁর মাদক কারবারের আয় গোটা দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখত। আর তাঁকে কখনো জেলে যাওয়ার চিন্তা করতে হয়নি। কারণ, মাদক-সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা যাঁদের ছিল, তাঁরা সবাই ছিলেন তাঁর বেতনভুক্ত কর্মচারী!
তিনি আর কেউ নন, তিনি রানি ভিক্টোরিয়া। তাঁর হাতে ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দণ্ড।
রানি ভিক্টোরিয়া শুধু সাম্রাজ্য পরিচালনাতেই মাদক ব্যবহার করেননি, ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি ছিলেন বিভিন্ন ধরনের ড্রাগের ভক্ত। সিংহাসনে আরোহণের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর।
ভিক্টোরিয়ার অন্যতম প্রিয় মাদক ছিল আফিম। ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটেনে আফিম সেবনের ফ্যাশনেবল উপায় ছিল—অ্যালকোহলের সঙ্গে মিশিয়ে লডেনাম আকারে পান করা। তীব্র ব্যথা বা অস্বস্তি দূর করতে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। এমনকি দাঁত ওঠার সময় শিশুদের জন্যও এটি সুপারিশ করতেন চিকিৎসকেরা। রানি ভিক্টোরিয়াও প্রতিদিন সকালে এক ঢোক লডেনাম পান করে দিন শুরু করতেন।
এ ছাড়া তিনি সেবন করতেন কোকেন। এটি তখন ছিল সম্পূর্ণ নতুন এবং বৈধ। দাঁতের ব্যথা উপশম এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য রানি কোকেন মিশ্রিত চুইংগাম ও ওয়াইন পছন্দ করতেন। প্রসবের সময় অসহনীয় যন্ত্রণা কমাতে তিনি সানন্দে ক্লোরোফর্ম গ্রহণ করেন এবং এই অভিজ্ঞতাটিকে ‘স্বর্গীয়’ বলে বর্ণনা করেছেন।
১৮৩৭ সালে যখন ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে বসেন, উত্তরাধিকারসূত্রে একটি বড় সংকটের বোঝা তাঁর ঘাড়ে চাপে—ব্রিটিশরা চীন থেকে বিপুল পরিমাণ চা আমদানি করত। এর ফলে ব্রিটেনের সব অর্থ চীনে চলে যাচ্ছিল। আর ওই সময় ব্রিটিশদের হাতে চীনে রপ্তানি করার মতো কিছু ছিল না। ব্রিটেন মরিয়া হয়ে এমন একটি পণ্যের সন্ধান করছিল, যা চীনের লোকেরা চাইবে।
এ সমস্যার সমাধান ছিল আফিম। ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত ভারতে প্রচুর আফিম উৎপাদিত হতো। এটি ছিল অত্যন্ত কার্যকর ব্যথানাশক এবং মারাত্মকভাবে আসক্তি সৃষ্টিকারী। ফলে চীনের লোকেরা এর জন্য প্রচুর দাম দিতে প্রস্তুত ছিল। রানি ভিক্টোরিয়ার শাসন শুরু হওয়ার পর, চীনে আফিমের চালান দ্রুত বাড়তে থাকে। আফিমের কল্যাণে রাতারাতি বাণিজ্য ভারসাম্য বদলে যায়। চীনই ব্রিটিশদের কাছে ঋণী হতে শুরু করে। মাদক কারবার থেকে আসা অর্থ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মোট বার্ষিক আয়ের ১৫ থেকে ২০ শতাংশে দাঁড়ায়।
চীন সরকার মরিয়া হয়ে আফিমের প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে। চীনের সম্রাট এই কাজের জন্য প্রশাসক লিন জেক্সুকে নিয়োগ করেন। জেক্সু রানি ভিক্টোরিয়ার কাছে একটি চিঠি লিখে ব্রিটিশদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন—চীন যেখানে চা, রেশম ও মৃৎপাত্রের মতো উপকারী পণ্য পাঠাচ্ছে, সেখানে ব্রিটেন কেন তার বিনিময়ে কোটি কোটি মানুষকে ক্ষতিকর মাদক পাঠাচ্ছে?
রানি সেই চিঠি পড়ারও প্রয়োজন বোধ করেননি। ফলে ১৮৩৯ সালের বসন্তে লিন জেক্সু ব্রিটিশ জাহাজ বহর আটক করেন এবং প্রায় আড়াই মিলিয়ন পাউন্ড আফিম দক্ষিণ চীন সাগরে ফেলে দেন।
মাত্র ২০ বছর বয়সী রানি ভিক্টোরিয়া এই ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। যেকোনো ক্ষমতাধর সাম্রাজ্যবাদী কিশোরীর মতো তাঁর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল প্রত্যাশিতই—তিনি চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এটিই ইতিহাসে প্রথম ‘আফিম যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।
ব্রিটিশ বাহিনী চীনা সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে এবং হাজার হাজার চীনা নাগরিককে হত্যা করে। সম্রাট বাধ্য হয়ে একটি অসম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির ফলে হংকংকে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিতে হয়। চীনে আফিম ঢোকার জন্য আরও বন্দর খুলে দেওয়া হয় এবং চীনে বসবাসকারী ব্রিটিশ নাগরিকেরা আইনি সুরক্ষা পান।
এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে চীন সাম্রাজ্যের অজেয় ভাবমূর্তি ভেঙে দেয়। এভাবেই একজন একগুঁয়ে কিশোরী রানি একটি প্রাচীন, মর্যাদাপূর্ণ সভ্যতাকে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করেন। এই নির্মম, নির্লজ্জ আত্মস্বার্থই রানি ভিক্টোরিয়াকে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল মাদক সম্রাট বানিয়ে তোলে!
তথ্যসূত্র: টাইম

ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে। শুধু তা-ই নয়, তাঁকে কিন্তু কখনো গহিন অরণ্যের আস্তানায় সশস্ত্র রক্ষীবেষ্টিত হয়ে আত্মগোপনে থাকতে হয়নি। তাঁর মাদক কারবারের আয় গোটা দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখত। আর তাঁকে কখনো জেলে যাওয়ার চিন্তা করতে হয়নি। কারণ, মাদক-সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা যাঁদের ছিল, তাঁরা সবাই ছিলেন তাঁর বেতনভুক্ত কর্মচারী!
তিনি আর কেউ নন, তিনি রানি ভিক্টোরিয়া। তাঁর হাতে ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দণ্ড।
রানি ভিক্টোরিয়া শুধু সাম্রাজ্য পরিচালনাতেই মাদক ব্যবহার করেননি, ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি ছিলেন বিভিন্ন ধরনের ড্রাগের ভক্ত। সিংহাসনে আরোহণের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর।
ভিক্টোরিয়ার অন্যতম প্রিয় মাদক ছিল আফিম। ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটেনে আফিম সেবনের ফ্যাশনেবল উপায় ছিল—অ্যালকোহলের সঙ্গে মিশিয়ে লডেনাম আকারে পান করা। তীব্র ব্যথা বা অস্বস্তি দূর করতে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। এমনকি দাঁত ওঠার সময় শিশুদের জন্যও এটি সুপারিশ করতেন চিকিৎসকেরা। রানি ভিক্টোরিয়াও প্রতিদিন সকালে এক ঢোক লডেনাম পান করে দিন শুরু করতেন।
এ ছাড়া তিনি সেবন করতেন কোকেন। এটি তখন ছিল সম্পূর্ণ নতুন এবং বৈধ। দাঁতের ব্যথা উপশম এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য রানি কোকেন মিশ্রিত চুইংগাম ও ওয়াইন পছন্দ করতেন। প্রসবের সময় অসহনীয় যন্ত্রণা কমাতে তিনি সানন্দে ক্লোরোফর্ম গ্রহণ করেন এবং এই অভিজ্ঞতাটিকে ‘স্বর্গীয়’ বলে বর্ণনা করেছেন।
১৮৩৭ সালে যখন ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে বসেন, উত্তরাধিকারসূত্রে একটি বড় সংকটের বোঝা তাঁর ঘাড়ে চাপে—ব্রিটিশরা চীন থেকে বিপুল পরিমাণ চা আমদানি করত। এর ফলে ব্রিটেনের সব অর্থ চীনে চলে যাচ্ছিল। আর ওই সময় ব্রিটিশদের হাতে চীনে রপ্তানি করার মতো কিছু ছিল না। ব্রিটেন মরিয়া হয়ে এমন একটি পণ্যের সন্ধান করছিল, যা চীনের লোকেরা চাইবে।
এ সমস্যার সমাধান ছিল আফিম। ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত ভারতে প্রচুর আফিম উৎপাদিত হতো। এটি ছিল অত্যন্ত কার্যকর ব্যথানাশক এবং মারাত্মকভাবে আসক্তি সৃষ্টিকারী। ফলে চীনের লোকেরা এর জন্য প্রচুর দাম দিতে প্রস্তুত ছিল। রানি ভিক্টোরিয়ার শাসন শুরু হওয়ার পর, চীনে আফিমের চালান দ্রুত বাড়তে থাকে। আফিমের কল্যাণে রাতারাতি বাণিজ্য ভারসাম্য বদলে যায়। চীনই ব্রিটিশদের কাছে ঋণী হতে শুরু করে। মাদক কারবার থেকে আসা অর্থ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মোট বার্ষিক আয়ের ১৫ থেকে ২০ শতাংশে দাঁড়ায়।
চীন সরকার মরিয়া হয়ে আফিমের প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে। চীনের সম্রাট এই কাজের জন্য প্রশাসক লিন জেক্সুকে নিয়োগ করেন। জেক্সু রানি ভিক্টোরিয়ার কাছে একটি চিঠি লিখে ব্রিটিশদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন—চীন যেখানে চা, রেশম ও মৃৎপাত্রের মতো উপকারী পণ্য পাঠাচ্ছে, সেখানে ব্রিটেন কেন তার বিনিময়ে কোটি কোটি মানুষকে ক্ষতিকর মাদক পাঠাচ্ছে?
রানি সেই চিঠি পড়ারও প্রয়োজন বোধ করেননি। ফলে ১৮৩৯ সালের বসন্তে লিন জেক্সু ব্রিটিশ জাহাজ বহর আটক করেন এবং প্রায় আড়াই মিলিয়ন পাউন্ড আফিম দক্ষিণ চীন সাগরে ফেলে দেন।
মাত্র ২০ বছর বয়সী রানি ভিক্টোরিয়া এই ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। যেকোনো ক্ষমতাধর সাম্রাজ্যবাদী কিশোরীর মতো তাঁর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল প্রত্যাশিতই—তিনি চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এটিই ইতিহাসে প্রথম ‘আফিম যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।
ব্রিটিশ বাহিনী চীনা সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে এবং হাজার হাজার চীনা নাগরিককে হত্যা করে। সম্রাট বাধ্য হয়ে একটি অসম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির ফলে হংকংকে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিতে হয়। চীনে আফিম ঢোকার জন্য আরও বন্দর খুলে দেওয়া হয় এবং চীনে বসবাসকারী ব্রিটিশ নাগরিকেরা আইনি সুরক্ষা পান।
এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে চীন সাম্রাজ্যের অজেয় ভাবমূর্তি ভেঙে দেয়। এভাবেই একজন একগুঁয়ে কিশোরী রানি একটি প্রাচীন, মর্যাদাপূর্ণ সভ্যতাকে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করেন। এই নির্মম, নির্লজ্জ আত্মস্বার্থই রানি ভিক্টোরিয়াকে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল মাদক সম্রাট বানিয়ে তোলে!
তথ্যসূত্র: টাইম


কবিতার কাফনে জড়ানো কম্পিত দেহ, অন্ধকার সড়কে মাথা ঘষতে থাকা সন্ধ্যা, নির্জন-নৈঃশব্দ্যের ভয়কাতর চাঁদ, বিভ্রান্ত উত্তাল নির্বাক শহর কিংবা বৃক্ষে ঝোলানো ক্রুশের ছায়ার সুনির্দিষ্ট একটি সময় আছে। নতুন শহর এবং সমাজের চিত্র শব্দের আঁচড়ে মূর্ত হয়ে উঠেছে সময়ের এই দাগে। যেখানে ভয় আছে, দৃশ্যের বিবরণ আছে, জীবন আছ
০১ জুলাই ২০২২
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
২ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া হবে।
বুকার পুরস্কারের ইতিহাসে এই প্রথমবার বিচারক প্যানেলে থাকবে শিশুরাও। বর্তমান চিলড্রেনস লরিয়েট শিশুসাহিত্যিক ফ্রাঙ্ক কটরেল-বয়েস বিচারকদের উদ্বোধনী প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁর সঙ্গে আরও দুজন প্রাপ্তবয়স্ক বিচারক থাকবেন, যাঁরা প্রথমে আটটি বইয়ের একটি শর্টলিস্ট তৈরি করবেন। এরপর বিজয়ী নির্ধারণে সহায়তা করার জন্য তিনজন শিশু বিচারক নির্বাচিত হবেন।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, প্রতিবছর চিলড্রেনস বুকার প্রাইজের জন্য শর্টলিস্টেড হওয়া এবং বিজয়ী বইগুলোর ৩০ হাজার কপি শিশুদের উপহার দেওয়া হবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট, দ্য রিডিং এজেন্সি, বুকব্যাংকস এবং চিলড্রেনস বুক প্রজেক্টসহ বিভিন্ন সহযোগী সংস্থাদের মাধ্যমে এ বইগুলো দেওয়া হবে। গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে শিশুদের ‘আনন্দ নিয়ে পড়া’র প্রবণতা। এমন সময় বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন এ উদ্যোগটি নিল।
কটরেল-বয়েস বলেন, এই পুরস্কার শিশুদের উপভোগ করার মতো বই খুঁজে বের করা সহজ করে তুলবে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি শিশুরই বইয়ের জগতে ডুব দেওয়ার যে আনন্দ, তা উপভোগ করার সুযোগ পাওয়া উচিত। বিচারক প্যানেলে তাদের আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে এবং মনোনীত বইগুলো উপহার দেওয়ার মাধ্যমে হাজার হাজার শিশুকে বই পড়ার চমৎকার দুনিয়ায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘এটা বেশ দারুণ আয়োজন হতে যাচ্ছে।’ তিনি মজা করে বলেন, ‘চলুন, হইচই শুরু করা যাক!’
শিশুসাহিত্য জগতের শীর্ষ লেখকদের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে এ ঘোষণা। সাবেক শিশুসাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত মালরি ব্ল্যাকম্যান, জ্যাকলিন উইলসন, মাইকেল মরপুরগো, ক্রেসিডা কাউয়েল, অ্যান ফাইন এবং জোসেফ কোয়েলোরা—সবাই নতুন এই পুরস্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ইংরেজিতে লেখা বা ইংরেজিতে অনূদিত এবং যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত সমসাময়িক শিশুসাহিত্যগুলোতে এ পুরস্কার দেওয়া হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের বুকার এবং আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারের মতোই বিজয়ী লেখক ৫০ হাজার পাউন্ড এবং শর্টলিস্টেড লেখকেরা প্রত্যেকে ২ হাজার ৫০০ পাউন্ড পাবেন।
প্রথম চিলড্রেনস বুকার পুরস্কারের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ২০২৬ সালের বসন্তে। বিচারক হতে শিশুদের আবেদন প্রক্রিয়াও এই সময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই বছরের নভেম্বরে ঘোষণা করা হবে শর্টলিস্ট এবং শিশু বিচারকদের নাম। বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তরুণ পাঠকদের জন্য আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে। ২০২৭ সালের পুরস্কারের জন্য ২০২৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশিত বই হতে হবে।
শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিল্পকলায় সমর্থন এবং জলবায়ু-সংকট মোকাবিলায় কাজ করা দাতব্য সংস্থা একেও ফাউন্ডেশনের (AKO Foundation) সহযোগিতায় এ পুরস্কার পরিচালিত হবে।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী (সিইও) গ্যাবি উড বলেন, ‘২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক বুকার প্রাইজ চালুর পর গত ২০ বছরে আমাদের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোগ চিলড্রেনস বুকার। এর একাধিক লক্ষ্য রয়েছে। একদিকে এটি শিশুদের জন্য লেখা ভবিষ্যৎ ক্লাসিক সাহিত্যকে সম্মান জানাবে, অন্যদিকে এটি এমন একটি সামাজিক উদ্যোগ, যা তরুণদের আরও বেশি করে পড়াশোনায় অনুপ্রাণিত করবে। এর মাধ্যমেই আমরা এমন এক বীজ রোপণ করতে চাই, যেখান থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আজীবন পাঠকেরা বিকশিত হবে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, শিশুদের বিশেষ করে শিশুসাহিত্যের আসল বিচারকদের মতামত শোনার জন্য।
একেও ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ফিলিপ ল-ফোর্ড বলেন, ‘এই অংশীদারত্ব ফাউন্ডেশনের সাক্ষরতা বৃদ্ধি ও সামাজিক গতিশীলতা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। আমরা গর্বিত যে এমন একটি প্রকল্পে অবদান রাখতে পারছি, যা তরুণ পাঠকদের অনুপ্রাণিত ও ক্ষমতায়িত করবে।’
বিনো ব্রেইন নামের একটি যুব গবেষণা সংস্থা ও ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্টের সহযোগিতায় নিয়মিত পরামর্শ সেশনের মাধ্যমে শিশুরা এই পুরস্কারের গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট শিশুদের পড়ার অভ্যাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা মূল্যায়নে সহায়তা করবে।
বুকার ফাউন্ডেশনের মতে, এই নতুন পুরস্কারটি শিশুসাহিত্যকে ‘সংস্কৃতির কেন্দ্রে স্থাপন’ করার একটি প্রচেষ্টা। সিইও গ্যাবি উড বলেন, ‘এই উদ্যোগের লক্ষ্য শুধু শিশুসাহিত্যে উৎকর্ষকে স্বীকৃতি দেওয়া নয়, বরং আরও বেশি তরুণকে এমন গল্প ও চরিত্র আবিষ্কারে সহায়তা করা ‘যারা তাদের সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকবে।’
বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সাহিত্য পুরস্কার বুকার প্রাইজ প্রথম প্রদান করা হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত ইংরেজিতে রচিত অসাধারণ কথাসাহিত্যকে সম্মান জানাতে এই পুরস্কার প্রবর্তিত হয়।

শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া হবে।
বুকার পুরস্কারের ইতিহাসে এই প্রথমবার বিচারক প্যানেলে থাকবে শিশুরাও। বর্তমান চিলড্রেনস লরিয়েট শিশুসাহিত্যিক ফ্রাঙ্ক কটরেল-বয়েস বিচারকদের উদ্বোধনী প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁর সঙ্গে আরও দুজন প্রাপ্তবয়স্ক বিচারক থাকবেন, যাঁরা প্রথমে আটটি বইয়ের একটি শর্টলিস্ট তৈরি করবেন। এরপর বিজয়ী নির্ধারণে সহায়তা করার জন্য তিনজন শিশু বিচারক নির্বাচিত হবেন।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, প্রতিবছর চিলড্রেনস বুকার প্রাইজের জন্য শর্টলিস্টেড হওয়া এবং বিজয়ী বইগুলোর ৩০ হাজার কপি শিশুদের উপহার দেওয়া হবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট, দ্য রিডিং এজেন্সি, বুকব্যাংকস এবং চিলড্রেনস বুক প্রজেক্টসহ বিভিন্ন সহযোগী সংস্থাদের মাধ্যমে এ বইগুলো দেওয়া হবে। গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে শিশুদের ‘আনন্দ নিয়ে পড়া’র প্রবণতা। এমন সময় বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন এ উদ্যোগটি নিল।
কটরেল-বয়েস বলেন, এই পুরস্কার শিশুদের উপভোগ করার মতো বই খুঁজে বের করা সহজ করে তুলবে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি শিশুরই বইয়ের জগতে ডুব দেওয়ার যে আনন্দ, তা উপভোগ করার সুযোগ পাওয়া উচিত। বিচারক প্যানেলে তাদের আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে এবং মনোনীত বইগুলো উপহার দেওয়ার মাধ্যমে হাজার হাজার শিশুকে বই পড়ার চমৎকার দুনিয়ায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘এটা বেশ দারুণ আয়োজন হতে যাচ্ছে।’ তিনি মজা করে বলেন, ‘চলুন, হইচই শুরু করা যাক!’
শিশুসাহিত্য জগতের শীর্ষ লেখকদের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে এ ঘোষণা। সাবেক শিশুসাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত মালরি ব্ল্যাকম্যান, জ্যাকলিন উইলসন, মাইকেল মরপুরগো, ক্রেসিডা কাউয়েল, অ্যান ফাইন এবং জোসেফ কোয়েলোরা—সবাই নতুন এই পুরস্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ইংরেজিতে লেখা বা ইংরেজিতে অনূদিত এবং যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত সমসাময়িক শিশুসাহিত্যগুলোতে এ পুরস্কার দেওয়া হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের বুকার এবং আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারের মতোই বিজয়ী লেখক ৫০ হাজার পাউন্ড এবং শর্টলিস্টেড লেখকেরা প্রত্যেকে ২ হাজার ৫০০ পাউন্ড পাবেন।
প্রথম চিলড্রেনস বুকার পুরস্কারের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ২০২৬ সালের বসন্তে। বিচারক হতে শিশুদের আবেদন প্রক্রিয়াও এই সময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই বছরের নভেম্বরে ঘোষণা করা হবে শর্টলিস্ট এবং শিশু বিচারকদের নাম। বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তরুণ পাঠকদের জন্য আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে। ২০২৭ সালের পুরস্কারের জন্য ২০২৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশিত বই হতে হবে।
শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিল্পকলায় সমর্থন এবং জলবায়ু-সংকট মোকাবিলায় কাজ করা দাতব্য সংস্থা একেও ফাউন্ডেশনের (AKO Foundation) সহযোগিতায় এ পুরস্কার পরিচালিত হবে।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী (সিইও) গ্যাবি উড বলেন, ‘২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক বুকার প্রাইজ চালুর পর গত ২০ বছরে আমাদের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোগ চিলড্রেনস বুকার। এর একাধিক লক্ষ্য রয়েছে। একদিকে এটি শিশুদের জন্য লেখা ভবিষ্যৎ ক্লাসিক সাহিত্যকে সম্মান জানাবে, অন্যদিকে এটি এমন একটি সামাজিক উদ্যোগ, যা তরুণদের আরও বেশি করে পড়াশোনায় অনুপ্রাণিত করবে। এর মাধ্যমেই আমরা এমন এক বীজ রোপণ করতে চাই, যেখান থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আজীবন পাঠকেরা বিকশিত হবে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, শিশুদের বিশেষ করে শিশুসাহিত্যের আসল বিচারকদের মতামত শোনার জন্য।
একেও ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ফিলিপ ল-ফোর্ড বলেন, ‘এই অংশীদারত্ব ফাউন্ডেশনের সাক্ষরতা বৃদ্ধি ও সামাজিক গতিশীলতা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। আমরা গর্বিত যে এমন একটি প্রকল্পে অবদান রাখতে পারছি, যা তরুণ পাঠকদের অনুপ্রাণিত ও ক্ষমতায়িত করবে।’
বিনো ব্রেইন নামের একটি যুব গবেষণা সংস্থা ও ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্টের সহযোগিতায় নিয়মিত পরামর্শ সেশনের মাধ্যমে শিশুরা এই পুরস্কারের গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট শিশুদের পড়ার অভ্যাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা মূল্যায়নে সহায়তা করবে।
বুকার ফাউন্ডেশনের মতে, এই নতুন পুরস্কারটি শিশুসাহিত্যকে ‘সংস্কৃতির কেন্দ্রে স্থাপন’ করার একটি প্রচেষ্টা। সিইও গ্যাবি উড বলেন, ‘এই উদ্যোগের লক্ষ্য শুধু শিশুসাহিত্যে উৎকর্ষকে স্বীকৃতি দেওয়া নয়, বরং আরও বেশি তরুণকে এমন গল্প ও চরিত্র আবিষ্কারে সহায়তা করা ‘যারা তাদের সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকবে।’
বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সাহিত্য পুরস্কার বুকার প্রাইজ প্রথম প্রদান করা হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত ইংরেজিতে রচিত অসাধারণ কথাসাহিত্যকে সম্মান জানাতে এই পুরস্কার প্রবর্তিত হয়।


কবিতার কাফনে জড়ানো কম্পিত দেহ, অন্ধকার সড়কে মাথা ঘষতে থাকা সন্ধ্যা, নির্জন-নৈঃশব্দ্যের ভয়কাতর চাঁদ, বিভ্রান্ত উত্তাল নির্বাক শহর কিংবা বৃক্ষে ঝোলানো ক্রুশের ছায়ার সুনির্দিষ্ট একটি সময় আছে। নতুন শহর এবং সমাজের চিত্র শব্দের আঁচড়ে মূর্ত হয়ে উঠেছে সময়ের এই দাগে। যেখানে ভয় আছে, দৃশ্যের বিবরণ আছে, জীবন আছ
০১ জুলাই ২০২২
ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
২ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৪ দিন আগেসম্পাদকীয়

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে পারে অন্য জায়গার এসব খাবার। অন্তত ছায়ানীড়ের নিয়মিত ভক্ত-গ্রাহকেরা এমন দাবি করতেই পারেন। তাতে দোষের কিছু নেই।
তাই হয়তো এখনো রেস্তোরাঁটির সামনে ভিড় লেগে থাকে। ব্যস্ত সড়কের পাশ থেকে যখন মুরগি পোড়ার সুঘ্রাণ পাওয়া যায়, তখন পথে যেতে অনেকেই হয়তো বিরতি নিয়ে কিনে নেন ছায়ানীড়ের শর্মা বা গ্রিল চিকেন। ভেতরে বসে খেতে হলে লম্বা লাইনে যেমন দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, আবার পার্সেল নিতে গেলেও অপেক্ষা করতে হয়। প্রাত্যহিক এ দৃশ্য ছায়ানীড়ের জনপ্রিয়তার প্রমাণ। বিরিয়ানি ও অন্যান্য ফাস্ট ফুড খাবারও পাওয়া যায় এখানে।
ছবি: ওমর ফারুক

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে পারে অন্য জায়গার এসব খাবার। অন্তত ছায়ানীড়ের নিয়মিত ভক্ত-গ্রাহকেরা এমন দাবি করতেই পারেন। তাতে দোষের কিছু নেই।
তাই হয়তো এখনো রেস্তোরাঁটির সামনে ভিড় লেগে থাকে। ব্যস্ত সড়কের পাশ থেকে যখন মুরগি পোড়ার সুঘ্রাণ পাওয়া যায়, তখন পথে যেতে অনেকেই হয়তো বিরতি নিয়ে কিনে নেন ছায়ানীড়ের শর্মা বা গ্রিল চিকেন। ভেতরে বসে খেতে হলে লম্বা লাইনে যেমন দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, আবার পার্সেল নিতে গেলেও অপেক্ষা করতে হয়। প্রাত্যহিক এ দৃশ্য ছায়ানীড়ের জনপ্রিয়তার প্রমাণ। বিরিয়ানি ও অন্যান্য ফাস্ট ফুড খাবারও পাওয়া যায় এখানে।
ছবি: ওমর ফারুক


কবিতার কাফনে জড়ানো কম্পিত দেহ, অন্ধকার সড়কে মাথা ঘষতে থাকা সন্ধ্যা, নির্জন-নৈঃশব্দ্যের ভয়কাতর চাঁদ, বিভ্রান্ত উত্তাল নির্বাক শহর কিংবা বৃক্ষে ঝোলানো ক্রুশের ছায়ার সুনির্দিষ্ট একটি সময় আছে। নতুন শহর এবং সমাজের চিত্র শব্দের আঁচড়ে মূর্ত হয়ে উঠেছে সময়ের এই দাগে। যেখানে ভয় আছে, দৃশ্যের বিবরণ আছে, জীবন আছ
০১ জুলাই ২০২২
ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
১ দিন আগে
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
১ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৪ দিন আগেসম্পাদকীয়

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন। বলা হয়, চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনদর্শনে প্রভাবিত হয়েই শচীমোহন রেস্তোরাঁটির নাম দেন ‘দেশবন্ধু সুইটমিট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। এর উল্টো দিকে তখন ছিল ইত্তেফাক পত্রিকার অফিস।
সেখানকার সাংবাদিকেরা দেশবন্ধুর পরোটা-লুচি-ভাজি-হালুয়া খেতে যেতেন নিয়মিত। কবি-সাহিত্যিক-অভিনয়শিল্পীরাও পছন্দ করতেন এই রেস্তোরাঁর খাবার। এমনকি এফডিসিতে ফরমাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো দেশবন্ধুর নাশতা। এখন হয়তো মানিক মিয়া, রাজ্জাক, কবরী কিংবা শাবানাদের মতো বিখ্যাতরা সেখানে যান না কিন্তু তাতে দেশবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখনো ঢাকাবাসীর ভিড় দেখা যায় এই রেস্তোরাঁয়। ভাবা যায়, সারা দিনই এখানকার পরোটা-ভাজি বিক্রি হতে থাকে! দুপুরে অবশ্য খাবারের তালিকায় ভাত-মাছ-মাংসও আছে। ছবি: মেহেদী হাসান

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন। বলা হয়, চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনদর্শনে প্রভাবিত হয়েই শচীমোহন রেস্তোরাঁটির নাম দেন ‘দেশবন্ধু সুইটমিট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। এর উল্টো দিকে তখন ছিল ইত্তেফাক পত্রিকার অফিস।
সেখানকার সাংবাদিকেরা দেশবন্ধুর পরোটা-লুচি-ভাজি-হালুয়া খেতে যেতেন নিয়মিত। কবি-সাহিত্যিক-অভিনয়শিল্পীরাও পছন্দ করতেন এই রেস্তোরাঁর খাবার। এমনকি এফডিসিতে ফরমাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো দেশবন্ধুর নাশতা। এখন হয়তো মানিক মিয়া, রাজ্জাক, কবরী কিংবা শাবানাদের মতো বিখ্যাতরা সেখানে যান না কিন্তু তাতে দেশবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখনো ঢাকাবাসীর ভিড় দেখা যায় এই রেস্তোরাঁয়। ভাবা যায়, সারা দিনই এখানকার পরোটা-ভাজি বিক্রি হতে থাকে! দুপুরে অবশ্য খাবারের তালিকায় ভাত-মাছ-মাংসও আছে। ছবি: মেহেদী হাসান


কবিতার কাফনে জড়ানো কম্পিত দেহ, অন্ধকার সড়কে মাথা ঘষতে থাকা সন্ধ্যা, নির্জন-নৈঃশব্দ্যের ভয়কাতর চাঁদ, বিভ্রান্ত উত্তাল নির্বাক শহর কিংবা বৃক্ষে ঝোলানো ক্রুশের ছায়ার সুনির্দিষ্ট একটি সময় আছে। নতুন শহর এবং সমাজের চিত্র শব্দের আঁচড়ে মূর্ত হয়ে উঠেছে সময়ের এই দাগে। যেখানে ভয় আছে, দৃশ্যের বিবরণ আছে, জীবন আছ
০১ জুলাই ২০২২
ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
১ দিন আগে
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
২ দিন আগে