ইজাজুল হক

‘নার হেয়ুতুন কাজালভানাস’ (কাজালভানাসে আগুন) ফারুক নাজকির সেরা কীর্তি। কাশ্মীরী ভাষার এই কাব্যগ্রন্থ তাঁকে ১৯৯৫ সালে ভারতের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার ‘সাহিত্য অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড’ এনে দেয়। কাশ্মীরি সাহিত্যে মৌলিক কবিতা রচনার পাশাপাশি উর্দু-হিন্দি সাহিত্যের বেশ কিছু ধ্রুপদি কবিতার অনুবাদও তিনি করেছেন, যেখানে তিনি নিজস্বতা ধরে রাখার প্রয়াস চালান। কাশ্মীরি সাহিত্যে ইতিবাচকতা, আধুনিকতা ও রোমান্টিকতার নতুন মাইলফলক হয়ে থাকবে নাজকির এসব কবিতা।
‘নার হেয়ুতুন কাজালভানাস’ নামটি চয়ন করেন বিখ্যাত কাশ্মীরি সাহিত্যিক মাস্টার জিন্দা কৌলের ‘নার হা!’ (সাবধান! আগুন!) কবিতা থেকে। বইয়ের সূচনাপাতায় মাস্টারজির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতাও নিবেদন করেন। এই কাব্য দশকের পর দশক জ্বলতে থাকা নাজকির জন্মভূমি কাশ্মীরের দুঃখ, বেদনা, অস্থিরতা, ভয়, ক্ষোভ, অসহিষ্ণুতা, আশা ও হতাশার কথা বলে। বইয়ের নাম থেকে সেই তীব্র আগুনের আঁচ আমরা অনুভব করতে পারি। নাজকি লিখছেন—
‘কাজালভানাস জ্বলছে!
এবং এখানে রয়েছে বসন্তের আগমনী হাহাকারও।
জ্বলছে আগুন এ হৃদয়েও—
‘আগুন’-এর সঙ্গে; কান্না সর্বাঙ্গে।’
কাশ্মীরে বিরাজমান এই আগুন-আগুন খেলার সামনে নিদারুণ অসহায় নাজকি। দরজার ফাঁক গলে বাতাসের ডানায় ভর করে বসতঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ছে সংঘাত-অস্থিরতা। ইট দিয়ে সেই দরজা এঁটে দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। বরং অনেক মানুষের মতো কবি নাজকিও দরজা-বাতাসের ইঁদুর-বিড়াল খেলার এই উপদ্রব থেকে বাঁচতে ভিন্ন পথে ঘরে প্রবেশ করছেন। মানুষজন আজকাল জানালা দিয়ে চলাচল শুরু করেছে। এমন অভিনব উপমায় কবি সময়ের সংকটকে আমাদের সামনে স্পষ্ট করে তোলেন। পড়ুন—
‘আবার বাতাস আসে, দরজা ঠেলে করে আধখোলা
ওঠো, রেখে এসো দরজার পেছনে ইটটি আরেকবার
আজকাল জানালা দিয়েই ঢুকে পড়ছে লোকজন
দরজাগুলো এক সময় কত শ্রদ্ধাই না ভোগ করত।’
১৯৯০ সাল থেকে চলে আসা কাশ্মীরের ত্রাসের জগৎকে খুল্লম খোলা বয়ান করেন নাজকি। এ ক্ষেত্রে কোনো রাখঢাক করার প্রয়োজন মনে করেন না। আতঙ্কের মুহূর্ত বয়ানে কবি অত্যন্ত স্পষ্টবাদী, দ্ব্যর্থহীন। তবে কবির সব দুঃখের আশ্রয় কাশ্মীরের প্রকৃতি, ফুল ও তুষার এবং অরণ্য। পড়ুন—
‘দরজা-জানালায় ঝুলে থাকে আতঙ্ক
উঠোনে অপেক্ষা করে মুখোশপরা শয়তান
চিনার গাছের খোঁড়ল থেকে মিউমিউ ডাকে বিড়াল
শব্দের জন্য তোতলাই আমরা—কী করে কাঁদব
যৌবনোচ্ছল আইরিশ লুটিয়ে পড়ে ধুলোয়,
মাটির তৈরি ছাদে বন্য হয়ে ওঠে টিউলিপেরা
এবং মারমুখী বাতাস ওড়ে—যেভাবে ক্ষুধার্ত সিংহ
মধ্য জানুয়ারিতে নেমে আসে লোকালয়ে
অরণ্য ছেড়ে, শীতের তুষারপাতের পর
এবং হিংস্র হয়ে ওঠে আরও, প্রতিটি শিকারের পর।’
দুই.
সাধারণ মানুষের জীবনে অকথ্য ভোগান্তি নিয়ে আসা ধ্বংসের নতুন আড়তদারদের অপকর্ম অত্যন্ত নির্মোহ ভঙ্গিতে তুলে আনেন। বিদ্রূপ, কটাক্ষ কিংবা শ্লেষ মেশাতেও যেন কবির আত্মমর্যাদায় লাগে। কতটা নির্লজ্জ হলে খুনের পর খুন করেও ঘাতকেরা নিজেদের কাশ্মীরি পরিচয় দিতে পারে—নাজকি অবাক হন। তিনি লিখেন—
‘এখানে, নদীতীরে
(সদ্যবিবাহিত) ছেলেদের রক্তমাখা কাপড় ধুতে আসেন মায়েরা
আগুনে ভস্ম হয় নববধুদের দামি পোশাকও
এবং দেখো—স্তন্যদায়ী মায়েরা মরছে অনাহারে
অথচ ঝিলম বয়ে চলে আপন মনে
সরাইখানায় তালা লাগিয়ে দেয় তারা
নজরদারির আওতায় আনে মাজার ও সৌন্দর্য
গুন্ডারা তছনছ করে পুরো শহর
ঝকঝকে দিন বাঁক নেয় বিমর্ষ সন্ধ্যায়
জাফরানের খেতে
লজ্জা দিতে খুনিরা রাখে ফুল—হিমলের দেহের মতো
এবং দেখো—কী করে ঘাতকেরা উচ্চস্বরে গাইছে লালভাখ
এবং আবৃত্তি করছে রেশিনামা থেকেও…।’
সশস্ত্র তৎপরতার মাতাল হাওয়া কাশ্মীরে হিংসা-অসহিষ্ণুতার উন্মত্ত ঢেউ তোলে। একজন খাঁটি কাশ্মীরি হিসেবে কবির আত্মা বেদনায় পুড়ে ছারখার হয়; ভেঙে খানখান হয় নির্মল কাচের হৃদয়। উপত্যকা থেকে হিন্দু অভিজাত শ্রেণির পণ্ডিতদের নির্বাসন, খুন ও তাদের ওপর চলা ধ্বংসযজ্ঞ তাঁকে অত্যন্ত ব্যথিত করে। তিনি উপলব্ধি করেন, হিংসার বিষাক্ত বায়ু কাশ্মীরের বহুদিনের পুরোনো বহুরৈখিক সাংস্কৃতিক চাদরকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল কাশ্মীরিকেই এই মাতাল হাওয়া বিভাজন, দুঃখ ও হতাশার রাজ্যে হারিয়ে দিচ্ছে। কাশ্মীরের মানুষের শরণার্থীশিবিরে দেখার দুঃখ ভুলতে পারেন না তিনি। তিনি লিখেন—
‘চোখের আড়ালে স্বপ্ন লুকিয়ে
তাঁবুর ছায়ায় দিন কাটায় তারা
দিনের সূর্যে দেহ মুড়িয়ে এবং
রাতের বালিশে গোলাপ রেখে
আশা করেছিল এক সাধারণ ঘুমের।
অথচ সাপগুলো ক্রমেই তাঁবুর কাছে আসে
পৃথিবী পরিণত হয় জ্বলন্ত হাপরে
আকাশ থেকে ঝরে পড়ে আগুনের গোলা
আমরা কোনো গান শুনি না—
নাম ধরে কেউই ডাকে না তাদের
ফুলের পাপড়ি হাতে দেবী পুজো করে না কেউ
অংশ নেয় না কেউ চারার-ই-শরিফের ওরসে
আমাকে রুখো না—
অনুভূতিগুলো ঢেলে দিতে হবে আমার।’
সংঘাত-সহিংসতায় ধীরে-ধীরে ম্লান হতে থাকে কাশ্মীরের ধর্মপ্রাণ মানুষের আরাধনার স্বর্গীয় সুর। রক্তের নেশায় মাতাল ঘাতকেরা মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাপক বাধাগ্রস্ত করে। ঘর থেকে বেরোনোর জো নেই মানুষের। উপত্যকা যেন অমাবস্যার রাতের সুনসান ভুতুড়ে কবরস্থান! নাজকির ভাষায়—
‘ছাদের ওপর জ্বলজ্বল করছে টকটকে লাল পপি
তবে আফসোস! বাতাসে বলছে ভীতিকর তরঙ্গ
শীতের রাতে, ক্ষুধায় মাতাল এক সিংহ
শিকারের খোঁজে হামলে পড়ে লোকালয়ে
ভারী করে তোলে নিশ্বাস অসুস্থ আকাঙ্ক্ষারা
এবং ধেয়ে আসে দরজা-জানালা অভিমুখে
সেঁটে রাখা মেহেদির কৌটাটি খেয়াল করে না কেউ
জিন-তাড়ানো ভেষজের ধোঁয়াও কেউ শুঁকে না
রক্ত ও কাদা মিলেমিশে একাকার ভেজা পিণ্ডে…
শুকনো নদী বানের অপেক্ষায়, শিরায় ফুটছে কালো রক্ত
এবং সিঁদুর মাখা সাদা পাথর…
শহরের উপকণ্ঠে ওঠে দূষিত বর্জ্য
এবং বাতাসেরা হাহাকার করে সুনসান কবরস্থানে।’
তিন.
১৯৯০-২০০০ সময়ের অশান্তিঘেরা কালো দশকে, যখন কাশ্মীর মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়, তখনো নাজকি শান্তির আশায় বুক বাঁধেন। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে রচনা করতে থাকেন কবিতা। দুঃখ, হতাশার নর্দমা মাড়িয়ে কবি উঠে আসেন গভীর নীল ও নির্মল আকাশে। সেখান থেকে প্রভাতের নতুন আলো, হলুদ পাতাঝরা বসন্ত এবং মানবকল্যাণের গান গেয়ে যান। তিনি মনে করেন, এসব দাঙ্গা, হাঙ্গামা, খুনোখুনির রাজনীতি কাশ্মীরের ঐতিহ্য নয়। বরং রক্তের এই জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে ভেসে গেছে এই স্বর্গীয় উপত্যকার ৫ হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহিষ্ণু ঐতিহ্যের সৌধ। নাজকি বলেন—
‘আমাকে রুখো না—হৃদয়টা বের করে আনতে হবে আমার
এই বিজন মরুর বুকে ফুটবে গোলাপ
কাল ফুল ফুটবে এ পরিত্যক্ত বাগানেও
সেই ফুলের সঙ্গে আমাকে কথা বলতে হবে নির্জনে
চোখজোড়া আমার উলার হ্রদের পানির মতো উতলা
তাদের জানাতে হবে আমাদের সরল আর্তনাদ
জানাতে হবে—বসন্তের বুলবুলি গাইছে এখনো সুরেলা গান
নৌকাকে নিরাপদ কূলে নিয়ে যাবে এই মাতাল ঝড়
তাদের জানাতে হবে
এই দেহের গভীরে
স্ফুরণ ঘটতে চলেছে একটি আগ্নেয়গিরির
আমাকে রুখো না—
ভেতরের সবকিছু আমাকে ঢেলে দিতে হবে।’
নাজকি বুঝতে পারেন না, কেন হলুদ পাতাঝরা বসন্ত তাঁর পণ্ডিত বন্ধুদের উপত্যকায় ফিরিয়ে আনতে পারে না। কাশ্মীরের মানুষ কেন এই স্বর্গ ছেড়ে সমতলের অসমতল জীবনযাপন করবে? তাদের অনুপস্থিতি কবিকে পোড়ায়। কাশ্মীরের তুষারাবৃত শীত কিংবা সোনালি পাতামোড়ানো বসন্তও কবির এই দুঃখ ভোলাতে পারে না। তাঁর ভাষায়—
‘আবার আমাদের ফিরে তাকাতে হবে দূর অতীতে?
বসন্ত আমাদের আসবে আগের মতো
আগের মতোই উল্লাস করবে ফুরফুরে হাওয়া
ফুলের প্রস্ফুটিত কলি বুকে নিয়ে
এবং শরৎ আস্থার বসন্তকে বিদ্রূপ করে বলবে—
‘পৃথিবী পোশাক পরে না—তুলো উৎপাদন করে কী হবে!’
ঘ্রাণ-সৌরভে অবগাহন করে
আবারও এই পথে আসবে বসন্ত
কয়েকটি সুখবর নিয়ে
আহা! ঘর থেকে বেরোনো মানুষগুলো
আর কখনো ফিরে আসেনি
অথবা এই বসন্ত পায়নি তাদের কোনো খোঁজ।’
চার.
ভূস্বর্গ কাশ্মীরকে এই দুর্দশা থেকে মুক্ত করার জন্য এক মহামানবের পথ চেয়ে দিন গোনেন নাজকি। কাশ্মীরের আকাশ, মেঘ, পাহাড় ও প্রকৃতির মাঝে তাঁকে খুঁজে ফেরেন। রাতের ঘুমোনোর সময় খোলা রাখেন দরজা-জানালা—পাছে তিনি এসে পড়েন! কবিতার ভাষায় পড়ুন—
‘খুঁজে ফিরি তাঁকে প্রখর সূর্যের নিচে
তুষারবাহী বাতাসে; তাঁকে খুঁজতে ছুঁই আকাশ
খোলা রাখি ঘরের দরজা-জানালা
আমাকে বলো—কখন তিনি এসেছিলেন এবং কোন গন্তব্যে করেছেন যাত্রা।’
কিন্তু মহামানব আসে না; শেষ হয় না অপেক্ষার প্রহর। অসহায় নাজকি আপসের পথে হাঁটেন। অসহায়-নিঃস্ব কাশ্মীরি মানুষের মুখ নাজকি ক্ষমতার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হতে চান না। ক্ষমতা ক্ষমতাবানদের হাতেই থাকুক—তবে আমাদের, সাধারণ কাশ্মীরিদের শান্তিতে থাকে দাও। তিনি লেখেন—
‘তোমার সঙ্গে কী করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি—সেই যোগ্যতা কি আমার আছে?
ঘোড়ার পিঠে তুমিই নাহয় চড়ো
আমাকে তোমার ওড়ানো ধুলো মেখেই সুখী থাকতে দাও।’
কবি দুই পক্ষকে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করেন। অতীতের দুঃখ ভুলে সবার সঙ্গে মিলেমিশে সুখে দিন কাটাতে চান। উদার বক্ষ খুলে ঘোষণা দেন ক্ষমার। তিনি বলেন—
‘চলো ফের নতুন করে দিল খুলে হাসার ওয়াদা করি
তোমরাও মনে রাখবে না বিভীষিকার দিনগুলো
আমিও গোপন জখম বলে বেড়াব না যুগ-যুগান্তরে।’
তবে কে শোনে কার কথা! নাজকি রাগে-ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং হতাশার চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যান। অসহিষ্ণুতার আড়তদারদের গলা ফাটিয়ে বলেন—
‘আমাকে শূলে চড়াও
ভস্ম করো আমাকে
উদীয়মান সূর্যের পুজো আমি করেছি
ছিটকে পড়া থেকে উদ্ধার করেছি অস্তগামী চাঁদকেও।’
আরও পড়ুন:

‘নার হেয়ুতুন কাজালভানাস’ (কাজালভানাসে আগুন) ফারুক নাজকির সেরা কীর্তি। কাশ্মীরী ভাষার এই কাব্যগ্রন্থ তাঁকে ১৯৯৫ সালে ভারতের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার ‘সাহিত্য অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড’ এনে দেয়। কাশ্মীরি সাহিত্যে মৌলিক কবিতা রচনার পাশাপাশি উর্দু-হিন্দি সাহিত্যের বেশ কিছু ধ্রুপদি কবিতার অনুবাদও তিনি করেছেন, যেখানে তিনি নিজস্বতা ধরে রাখার প্রয়াস চালান। কাশ্মীরি সাহিত্যে ইতিবাচকতা, আধুনিকতা ও রোমান্টিকতার নতুন মাইলফলক হয়ে থাকবে নাজকির এসব কবিতা।
‘নার হেয়ুতুন কাজালভানাস’ নামটি চয়ন করেন বিখ্যাত কাশ্মীরি সাহিত্যিক মাস্টার জিন্দা কৌলের ‘নার হা!’ (সাবধান! আগুন!) কবিতা থেকে। বইয়ের সূচনাপাতায় মাস্টারজির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতাও নিবেদন করেন। এই কাব্য দশকের পর দশক জ্বলতে থাকা নাজকির জন্মভূমি কাশ্মীরের দুঃখ, বেদনা, অস্থিরতা, ভয়, ক্ষোভ, অসহিষ্ণুতা, আশা ও হতাশার কথা বলে। বইয়ের নাম থেকে সেই তীব্র আগুনের আঁচ আমরা অনুভব করতে পারি। নাজকি লিখছেন—
‘কাজালভানাস জ্বলছে!
এবং এখানে রয়েছে বসন্তের আগমনী হাহাকারও।
জ্বলছে আগুন এ হৃদয়েও—
‘আগুন’-এর সঙ্গে; কান্না সর্বাঙ্গে।’
কাশ্মীরে বিরাজমান এই আগুন-আগুন খেলার সামনে নিদারুণ অসহায় নাজকি। দরজার ফাঁক গলে বাতাসের ডানায় ভর করে বসতঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ছে সংঘাত-অস্থিরতা। ইট দিয়ে সেই দরজা এঁটে দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। বরং অনেক মানুষের মতো কবি নাজকিও দরজা-বাতাসের ইঁদুর-বিড়াল খেলার এই উপদ্রব থেকে বাঁচতে ভিন্ন পথে ঘরে প্রবেশ করছেন। মানুষজন আজকাল জানালা দিয়ে চলাচল শুরু করেছে। এমন অভিনব উপমায় কবি সময়ের সংকটকে আমাদের সামনে স্পষ্ট করে তোলেন। পড়ুন—
‘আবার বাতাস আসে, দরজা ঠেলে করে আধখোলা
ওঠো, রেখে এসো দরজার পেছনে ইটটি আরেকবার
আজকাল জানালা দিয়েই ঢুকে পড়ছে লোকজন
দরজাগুলো এক সময় কত শ্রদ্ধাই না ভোগ করত।’
১৯৯০ সাল থেকে চলে আসা কাশ্মীরের ত্রাসের জগৎকে খুল্লম খোলা বয়ান করেন নাজকি। এ ক্ষেত্রে কোনো রাখঢাক করার প্রয়োজন মনে করেন না। আতঙ্কের মুহূর্ত বয়ানে কবি অত্যন্ত স্পষ্টবাদী, দ্ব্যর্থহীন। তবে কবির সব দুঃখের আশ্রয় কাশ্মীরের প্রকৃতি, ফুল ও তুষার এবং অরণ্য। পড়ুন—
‘দরজা-জানালায় ঝুলে থাকে আতঙ্ক
উঠোনে অপেক্ষা করে মুখোশপরা শয়তান
চিনার গাছের খোঁড়ল থেকে মিউমিউ ডাকে বিড়াল
শব্দের জন্য তোতলাই আমরা—কী করে কাঁদব
যৌবনোচ্ছল আইরিশ লুটিয়ে পড়ে ধুলোয়,
মাটির তৈরি ছাদে বন্য হয়ে ওঠে টিউলিপেরা
এবং মারমুখী বাতাস ওড়ে—যেভাবে ক্ষুধার্ত সিংহ
মধ্য জানুয়ারিতে নেমে আসে লোকালয়ে
অরণ্য ছেড়ে, শীতের তুষারপাতের পর
এবং হিংস্র হয়ে ওঠে আরও, প্রতিটি শিকারের পর।’
দুই.
সাধারণ মানুষের জীবনে অকথ্য ভোগান্তি নিয়ে আসা ধ্বংসের নতুন আড়তদারদের অপকর্ম অত্যন্ত নির্মোহ ভঙ্গিতে তুলে আনেন। বিদ্রূপ, কটাক্ষ কিংবা শ্লেষ মেশাতেও যেন কবির আত্মমর্যাদায় লাগে। কতটা নির্লজ্জ হলে খুনের পর খুন করেও ঘাতকেরা নিজেদের কাশ্মীরি পরিচয় দিতে পারে—নাজকি অবাক হন। তিনি লিখেন—
‘এখানে, নদীতীরে
(সদ্যবিবাহিত) ছেলেদের রক্তমাখা কাপড় ধুতে আসেন মায়েরা
আগুনে ভস্ম হয় নববধুদের দামি পোশাকও
এবং দেখো—স্তন্যদায়ী মায়েরা মরছে অনাহারে
অথচ ঝিলম বয়ে চলে আপন মনে
সরাইখানায় তালা লাগিয়ে দেয় তারা
নজরদারির আওতায় আনে মাজার ও সৌন্দর্য
গুন্ডারা তছনছ করে পুরো শহর
ঝকঝকে দিন বাঁক নেয় বিমর্ষ সন্ধ্যায়
জাফরানের খেতে
লজ্জা দিতে খুনিরা রাখে ফুল—হিমলের দেহের মতো
এবং দেখো—কী করে ঘাতকেরা উচ্চস্বরে গাইছে লালভাখ
এবং আবৃত্তি করছে রেশিনামা থেকেও…।’
সশস্ত্র তৎপরতার মাতাল হাওয়া কাশ্মীরে হিংসা-অসহিষ্ণুতার উন্মত্ত ঢেউ তোলে। একজন খাঁটি কাশ্মীরি হিসেবে কবির আত্মা বেদনায় পুড়ে ছারখার হয়; ভেঙে খানখান হয় নির্মল কাচের হৃদয়। উপত্যকা থেকে হিন্দু অভিজাত শ্রেণির পণ্ডিতদের নির্বাসন, খুন ও তাদের ওপর চলা ধ্বংসযজ্ঞ তাঁকে অত্যন্ত ব্যথিত করে। তিনি উপলব্ধি করেন, হিংসার বিষাক্ত বায়ু কাশ্মীরের বহুদিনের পুরোনো বহুরৈখিক সাংস্কৃতিক চাদরকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল কাশ্মীরিকেই এই মাতাল হাওয়া বিভাজন, দুঃখ ও হতাশার রাজ্যে হারিয়ে দিচ্ছে। কাশ্মীরের মানুষের শরণার্থীশিবিরে দেখার দুঃখ ভুলতে পারেন না তিনি। তিনি লিখেন—
‘চোখের আড়ালে স্বপ্ন লুকিয়ে
তাঁবুর ছায়ায় দিন কাটায় তারা
দিনের সূর্যে দেহ মুড়িয়ে এবং
রাতের বালিশে গোলাপ রেখে
আশা করেছিল এক সাধারণ ঘুমের।
অথচ সাপগুলো ক্রমেই তাঁবুর কাছে আসে
পৃথিবী পরিণত হয় জ্বলন্ত হাপরে
আকাশ থেকে ঝরে পড়ে আগুনের গোলা
আমরা কোনো গান শুনি না—
নাম ধরে কেউই ডাকে না তাদের
ফুলের পাপড়ি হাতে দেবী পুজো করে না কেউ
অংশ নেয় না কেউ চারার-ই-শরিফের ওরসে
আমাকে রুখো না—
অনুভূতিগুলো ঢেলে দিতে হবে আমার।’
সংঘাত-সহিংসতায় ধীরে-ধীরে ম্লান হতে থাকে কাশ্মীরের ধর্মপ্রাণ মানুষের আরাধনার স্বর্গীয় সুর। রক্তের নেশায় মাতাল ঘাতকেরা মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাপক বাধাগ্রস্ত করে। ঘর থেকে বেরোনোর জো নেই মানুষের। উপত্যকা যেন অমাবস্যার রাতের সুনসান ভুতুড়ে কবরস্থান! নাজকির ভাষায়—
‘ছাদের ওপর জ্বলজ্বল করছে টকটকে লাল পপি
তবে আফসোস! বাতাসে বলছে ভীতিকর তরঙ্গ
শীতের রাতে, ক্ষুধায় মাতাল এক সিংহ
শিকারের খোঁজে হামলে পড়ে লোকালয়ে
ভারী করে তোলে নিশ্বাস অসুস্থ আকাঙ্ক্ষারা
এবং ধেয়ে আসে দরজা-জানালা অভিমুখে
সেঁটে রাখা মেহেদির কৌটাটি খেয়াল করে না কেউ
জিন-তাড়ানো ভেষজের ধোঁয়াও কেউ শুঁকে না
রক্ত ও কাদা মিলেমিশে একাকার ভেজা পিণ্ডে…
শুকনো নদী বানের অপেক্ষায়, শিরায় ফুটছে কালো রক্ত
এবং সিঁদুর মাখা সাদা পাথর…
শহরের উপকণ্ঠে ওঠে দূষিত বর্জ্য
এবং বাতাসেরা হাহাকার করে সুনসান কবরস্থানে।’
তিন.
১৯৯০-২০০০ সময়ের অশান্তিঘেরা কালো দশকে, যখন কাশ্মীর মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়, তখনো নাজকি শান্তির আশায় বুক বাঁধেন। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে রচনা করতে থাকেন কবিতা। দুঃখ, হতাশার নর্দমা মাড়িয়ে কবি উঠে আসেন গভীর নীল ও নির্মল আকাশে। সেখান থেকে প্রভাতের নতুন আলো, হলুদ পাতাঝরা বসন্ত এবং মানবকল্যাণের গান গেয়ে যান। তিনি মনে করেন, এসব দাঙ্গা, হাঙ্গামা, খুনোখুনির রাজনীতি কাশ্মীরের ঐতিহ্য নয়। বরং রক্তের এই জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে ভেসে গেছে এই স্বর্গীয় উপত্যকার ৫ হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহিষ্ণু ঐতিহ্যের সৌধ। নাজকি বলেন—
‘আমাকে রুখো না—হৃদয়টা বের করে আনতে হবে আমার
এই বিজন মরুর বুকে ফুটবে গোলাপ
কাল ফুল ফুটবে এ পরিত্যক্ত বাগানেও
সেই ফুলের সঙ্গে আমাকে কথা বলতে হবে নির্জনে
চোখজোড়া আমার উলার হ্রদের পানির মতো উতলা
তাদের জানাতে হবে আমাদের সরল আর্তনাদ
জানাতে হবে—বসন্তের বুলবুলি গাইছে এখনো সুরেলা গান
নৌকাকে নিরাপদ কূলে নিয়ে যাবে এই মাতাল ঝড়
তাদের জানাতে হবে
এই দেহের গভীরে
স্ফুরণ ঘটতে চলেছে একটি আগ্নেয়গিরির
আমাকে রুখো না—
ভেতরের সবকিছু আমাকে ঢেলে দিতে হবে।’
নাজকি বুঝতে পারেন না, কেন হলুদ পাতাঝরা বসন্ত তাঁর পণ্ডিত বন্ধুদের উপত্যকায় ফিরিয়ে আনতে পারে না। কাশ্মীরের মানুষ কেন এই স্বর্গ ছেড়ে সমতলের অসমতল জীবনযাপন করবে? তাদের অনুপস্থিতি কবিকে পোড়ায়। কাশ্মীরের তুষারাবৃত শীত কিংবা সোনালি পাতামোড়ানো বসন্তও কবির এই দুঃখ ভোলাতে পারে না। তাঁর ভাষায়—
‘আবার আমাদের ফিরে তাকাতে হবে দূর অতীতে?
বসন্ত আমাদের আসবে আগের মতো
আগের মতোই উল্লাস করবে ফুরফুরে হাওয়া
ফুলের প্রস্ফুটিত কলি বুকে নিয়ে
এবং শরৎ আস্থার বসন্তকে বিদ্রূপ করে বলবে—
‘পৃথিবী পোশাক পরে না—তুলো উৎপাদন করে কী হবে!’
ঘ্রাণ-সৌরভে অবগাহন করে
আবারও এই পথে আসবে বসন্ত
কয়েকটি সুখবর নিয়ে
আহা! ঘর থেকে বেরোনো মানুষগুলো
আর কখনো ফিরে আসেনি
অথবা এই বসন্ত পায়নি তাদের কোনো খোঁজ।’
চার.
ভূস্বর্গ কাশ্মীরকে এই দুর্দশা থেকে মুক্ত করার জন্য এক মহামানবের পথ চেয়ে দিন গোনেন নাজকি। কাশ্মীরের আকাশ, মেঘ, পাহাড় ও প্রকৃতির মাঝে তাঁকে খুঁজে ফেরেন। রাতের ঘুমোনোর সময় খোলা রাখেন দরজা-জানালা—পাছে তিনি এসে পড়েন! কবিতার ভাষায় পড়ুন—
‘খুঁজে ফিরি তাঁকে প্রখর সূর্যের নিচে
তুষারবাহী বাতাসে; তাঁকে খুঁজতে ছুঁই আকাশ
খোলা রাখি ঘরের দরজা-জানালা
আমাকে বলো—কখন তিনি এসেছিলেন এবং কোন গন্তব্যে করেছেন যাত্রা।’
কিন্তু মহামানব আসে না; শেষ হয় না অপেক্ষার প্রহর। অসহায় নাজকি আপসের পথে হাঁটেন। অসহায়-নিঃস্ব কাশ্মীরি মানুষের মুখ নাজকি ক্ষমতার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হতে চান না। ক্ষমতা ক্ষমতাবানদের হাতেই থাকুক—তবে আমাদের, সাধারণ কাশ্মীরিদের শান্তিতে থাকে দাও। তিনি লেখেন—
‘তোমার সঙ্গে কী করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি—সেই যোগ্যতা কি আমার আছে?
ঘোড়ার পিঠে তুমিই নাহয় চড়ো
আমাকে তোমার ওড়ানো ধুলো মেখেই সুখী থাকতে দাও।’
কবি দুই পক্ষকে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করেন। অতীতের দুঃখ ভুলে সবার সঙ্গে মিলেমিশে সুখে দিন কাটাতে চান। উদার বক্ষ খুলে ঘোষণা দেন ক্ষমার। তিনি বলেন—
‘চলো ফের নতুন করে দিল খুলে হাসার ওয়াদা করি
তোমরাও মনে রাখবে না বিভীষিকার দিনগুলো
আমিও গোপন জখম বলে বেড়াব না যুগ-যুগান্তরে।’
তবে কে শোনে কার কথা! নাজকি রাগে-ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং হতাশার চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যান। অসহিষ্ণুতার আড়তদারদের গলা ফাটিয়ে বলেন—
‘আমাকে শূলে চড়াও
ভস্ম করো আমাকে
উদীয়মান সূর্যের পুজো আমি করেছি
ছিটকে পড়া থেকে উদ্ধার করেছি অস্তগামী চাঁদকেও।’
আরও পড়ুন:
ইজাজুল হক

‘নার হেয়ুতুন কাজালভানাস’ (কাজালভানাসে আগুন) ফারুক নাজকির সেরা কীর্তি। কাশ্মীরী ভাষার এই কাব্যগ্রন্থ তাঁকে ১৯৯৫ সালে ভারতের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার ‘সাহিত্য অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড’ এনে দেয়। কাশ্মীরি সাহিত্যে মৌলিক কবিতা রচনার পাশাপাশি উর্দু-হিন্দি সাহিত্যের বেশ কিছু ধ্রুপদি কবিতার অনুবাদও তিনি করেছেন, যেখানে তিনি নিজস্বতা ধরে রাখার প্রয়াস চালান। কাশ্মীরি সাহিত্যে ইতিবাচকতা, আধুনিকতা ও রোমান্টিকতার নতুন মাইলফলক হয়ে থাকবে নাজকির এসব কবিতা।
‘নার হেয়ুতুন কাজালভানাস’ নামটি চয়ন করেন বিখ্যাত কাশ্মীরি সাহিত্যিক মাস্টার জিন্দা কৌলের ‘নার হা!’ (সাবধান! আগুন!) কবিতা থেকে। বইয়ের সূচনাপাতায় মাস্টারজির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতাও নিবেদন করেন। এই কাব্য দশকের পর দশক জ্বলতে থাকা নাজকির জন্মভূমি কাশ্মীরের দুঃখ, বেদনা, অস্থিরতা, ভয়, ক্ষোভ, অসহিষ্ণুতা, আশা ও হতাশার কথা বলে। বইয়ের নাম থেকে সেই তীব্র আগুনের আঁচ আমরা অনুভব করতে পারি। নাজকি লিখছেন—
‘কাজালভানাস জ্বলছে!
এবং এখানে রয়েছে বসন্তের আগমনী হাহাকারও।
জ্বলছে আগুন এ হৃদয়েও—
‘আগুন’-এর সঙ্গে; কান্না সর্বাঙ্গে।’
কাশ্মীরে বিরাজমান এই আগুন-আগুন খেলার সামনে নিদারুণ অসহায় নাজকি। দরজার ফাঁক গলে বাতাসের ডানায় ভর করে বসতঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ছে সংঘাত-অস্থিরতা। ইট দিয়ে সেই দরজা এঁটে দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। বরং অনেক মানুষের মতো কবি নাজকিও দরজা-বাতাসের ইঁদুর-বিড়াল খেলার এই উপদ্রব থেকে বাঁচতে ভিন্ন পথে ঘরে প্রবেশ করছেন। মানুষজন আজকাল জানালা দিয়ে চলাচল শুরু করেছে। এমন অভিনব উপমায় কবি সময়ের সংকটকে আমাদের সামনে স্পষ্ট করে তোলেন। পড়ুন—
‘আবার বাতাস আসে, দরজা ঠেলে করে আধখোলা
ওঠো, রেখে এসো দরজার পেছনে ইটটি আরেকবার
আজকাল জানালা দিয়েই ঢুকে পড়ছে লোকজন
দরজাগুলো এক সময় কত শ্রদ্ধাই না ভোগ করত।’
১৯৯০ সাল থেকে চলে আসা কাশ্মীরের ত্রাসের জগৎকে খুল্লম খোলা বয়ান করেন নাজকি। এ ক্ষেত্রে কোনো রাখঢাক করার প্রয়োজন মনে করেন না। আতঙ্কের মুহূর্ত বয়ানে কবি অত্যন্ত স্পষ্টবাদী, দ্ব্যর্থহীন। তবে কবির সব দুঃখের আশ্রয় কাশ্মীরের প্রকৃতি, ফুল ও তুষার এবং অরণ্য। পড়ুন—
‘দরজা-জানালায় ঝুলে থাকে আতঙ্ক
উঠোনে অপেক্ষা করে মুখোশপরা শয়তান
চিনার গাছের খোঁড়ল থেকে মিউমিউ ডাকে বিড়াল
শব্দের জন্য তোতলাই আমরা—কী করে কাঁদব
যৌবনোচ্ছল আইরিশ লুটিয়ে পড়ে ধুলোয়,
মাটির তৈরি ছাদে বন্য হয়ে ওঠে টিউলিপেরা
এবং মারমুখী বাতাস ওড়ে—যেভাবে ক্ষুধার্ত সিংহ
মধ্য জানুয়ারিতে নেমে আসে লোকালয়ে
অরণ্য ছেড়ে, শীতের তুষারপাতের পর
এবং হিংস্র হয়ে ওঠে আরও, প্রতিটি শিকারের পর।’
দুই.
সাধারণ মানুষের জীবনে অকথ্য ভোগান্তি নিয়ে আসা ধ্বংসের নতুন আড়তদারদের অপকর্ম অত্যন্ত নির্মোহ ভঙ্গিতে তুলে আনেন। বিদ্রূপ, কটাক্ষ কিংবা শ্লেষ মেশাতেও যেন কবির আত্মমর্যাদায় লাগে। কতটা নির্লজ্জ হলে খুনের পর খুন করেও ঘাতকেরা নিজেদের কাশ্মীরি পরিচয় দিতে পারে—নাজকি অবাক হন। তিনি লিখেন—
‘এখানে, নদীতীরে
(সদ্যবিবাহিত) ছেলেদের রক্তমাখা কাপড় ধুতে আসেন মায়েরা
আগুনে ভস্ম হয় নববধুদের দামি পোশাকও
এবং দেখো—স্তন্যদায়ী মায়েরা মরছে অনাহারে
অথচ ঝিলম বয়ে চলে আপন মনে
সরাইখানায় তালা লাগিয়ে দেয় তারা
নজরদারির আওতায় আনে মাজার ও সৌন্দর্য
গুন্ডারা তছনছ করে পুরো শহর
ঝকঝকে দিন বাঁক নেয় বিমর্ষ সন্ধ্যায়
জাফরানের খেতে
লজ্জা দিতে খুনিরা রাখে ফুল—হিমলের দেহের মতো
এবং দেখো—কী করে ঘাতকেরা উচ্চস্বরে গাইছে লালভাখ
এবং আবৃত্তি করছে রেশিনামা থেকেও…।’
সশস্ত্র তৎপরতার মাতাল হাওয়া কাশ্মীরে হিংসা-অসহিষ্ণুতার উন্মত্ত ঢেউ তোলে। একজন খাঁটি কাশ্মীরি হিসেবে কবির আত্মা বেদনায় পুড়ে ছারখার হয়; ভেঙে খানখান হয় নির্মল কাচের হৃদয়। উপত্যকা থেকে হিন্দু অভিজাত শ্রেণির পণ্ডিতদের নির্বাসন, খুন ও তাদের ওপর চলা ধ্বংসযজ্ঞ তাঁকে অত্যন্ত ব্যথিত করে। তিনি উপলব্ধি করেন, হিংসার বিষাক্ত বায়ু কাশ্মীরের বহুদিনের পুরোনো বহুরৈখিক সাংস্কৃতিক চাদরকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল কাশ্মীরিকেই এই মাতাল হাওয়া বিভাজন, দুঃখ ও হতাশার রাজ্যে হারিয়ে দিচ্ছে। কাশ্মীরের মানুষের শরণার্থীশিবিরে দেখার দুঃখ ভুলতে পারেন না তিনি। তিনি লিখেন—
‘চোখের আড়ালে স্বপ্ন লুকিয়ে
তাঁবুর ছায়ায় দিন কাটায় তারা
দিনের সূর্যে দেহ মুড়িয়ে এবং
রাতের বালিশে গোলাপ রেখে
আশা করেছিল এক সাধারণ ঘুমের।
অথচ সাপগুলো ক্রমেই তাঁবুর কাছে আসে
পৃথিবী পরিণত হয় জ্বলন্ত হাপরে
আকাশ থেকে ঝরে পড়ে আগুনের গোলা
আমরা কোনো গান শুনি না—
নাম ধরে কেউই ডাকে না তাদের
ফুলের পাপড়ি হাতে দেবী পুজো করে না কেউ
অংশ নেয় না কেউ চারার-ই-শরিফের ওরসে
আমাকে রুখো না—
অনুভূতিগুলো ঢেলে দিতে হবে আমার।’
সংঘাত-সহিংসতায় ধীরে-ধীরে ম্লান হতে থাকে কাশ্মীরের ধর্মপ্রাণ মানুষের আরাধনার স্বর্গীয় সুর। রক্তের নেশায় মাতাল ঘাতকেরা মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাপক বাধাগ্রস্ত করে। ঘর থেকে বেরোনোর জো নেই মানুষের। উপত্যকা যেন অমাবস্যার রাতের সুনসান ভুতুড়ে কবরস্থান! নাজকির ভাষায়—
‘ছাদের ওপর জ্বলজ্বল করছে টকটকে লাল পপি
তবে আফসোস! বাতাসে বলছে ভীতিকর তরঙ্গ
শীতের রাতে, ক্ষুধায় মাতাল এক সিংহ
শিকারের খোঁজে হামলে পড়ে লোকালয়ে
ভারী করে তোলে নিশ্বাস অসুস্থ আকাঙ্ক্ষারা
এবং ধেয়ে আসে দরজা-জানালা অভিমুখে
সেঁটে রাখা মেহেদির কৌটাটি খেয়াল করে না কেউ
জিন-তাড়ানো ভেষজের ধোঁয়াও কেউ শুঁকে না
রক্ত ও কাদা মিলেমিশে একাকার ভেজা পিণ্ডে…
শুকনো নদী বানের অপেক্ষায়, শিরায় ফুটছে কালো রক্ত
এবং সিঁদুর মাখা সাদা পাথর…
শহরের উপকণ্ঠে ওঠে দূষিত বর্জ্য
এবং বাতাসেরা হাহাকার করে সুনসান কবরস্থানে।’
তিন.
১৯৯০-২০০০ সময়ের অশান্তিঘেরা কালো দশকে, যখন কাশ্মীর মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়, তখনো নাজকি শান্তির আশায় বুক বাঁধেন। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে রচনা করতে থাকেন কবিতা। দুঃখ, হতাশার নর্দমা মাড়িয়ে কবি উঠে আসেন গভীর নীল ও নির্মল আকাশে। সেখান থেকে প্রভাতের নতুন আলো, হলুদ পাতাঝরা বসন্ত এবং মানবকল্যাণের গান গেয়ে যান। তিনি মনে করেন, এসব দাঙ্গা, হাঙ্গামা, খুনোখুনির রাজনীতি কাশ্মীরের ঐতিহ্য নয়। বরং রক্তের এই জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে ভেসে গেছে এই স্বর্গীয় উপত্যকার ৫ হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহিষ্ণু ঐতিহ্যের সৌধ। নাজকি বলেন—
‘আমাকে রুখো না—হৃদয়টা বের করে আনতে হবে আমার
এই বিজন মরুর বুকে ফুটবে গোলাপ
কাল ফুল ফুটবে এ পরিত্যক্ত বাগানেও
সেই ফুলের সঙ্গে আমাকে কথা বলতে হবে নির্জনে
চোখজোড়া আমার উলার হ্রদের পানির মতো উতলা
তাদের জানাতে হবে আমাদের সরল আর্তনাদ
জানাতে হবে—বসন্তের বুলবুলি গাইছে এখনো সুরেলা গান
নৌকাকে নিরাপদ কূলে নিয়ে যাবে এই মাতাল ঝড়
তাদের জানাতে হবে
এই দেহের গভীরে
স্ফুরণ ঘটতে চলেছে একটি আগ্নেয়গিরির
আমাকে রুখো না—
ভেতরের সবকিছু আমাকে ঢেলে দিতে হবে।’
নাজকি বুঝতে পারেন না, কেন হলুদ পাতাঝরা বসন্ত তাঁর পণ্ডিত বন্ধুদের উপত্যকায় ফিরিয়ে আনতে পারে না। কাশ্মীরের মানুষ কেন এই স্বর্গ ছেড়ে সমতলের অসমতল জীবনযাপন করবে? তাদের অনুপস্থিতি কবিকে পোড়ায়। কাশ্মীরের তুষারাবৃত শীত কিংবা সোনালি পাতামোড়ানো বসন্তও কবির এই দুঃখ ভোলাতে পারে না। তাঁর ভাষায়—
‘আবার আমাদের ফিরে তাকাতে হবে দূর অতীতে?
বসন্ত আমাদের আসবে আগের মতো
আগের মতোই উল্লাস করবে ফুরফুরে হাওয়া
ফুলের প্রস্ফুটিত কলি বুকে নিয়ে
এবং শরৎ আস্থার বসন্তকে বিদ্রূপ করে বলবে—
‘পৃথিবী পোশাক পরে না—তুলো উৎপাদন করে কী হবে!’
ঘ্রাণ-সৌরভে অবগাহন করে
আবারও এই পথে আসবে বসন্ত
কয়েকটি সুখবর নিয়ে
আহা! ঘর থেকে বেরোনো মানুষগুলো
আর কখনো ফিরে আসেনি
অথবা এই বসন্ত পায়নি তাদের কোনো খোঁজ।’
চার.
ভূস্বর্গ কাশ্মীরকে এই দুর্দশা থেকে মুক্ত করার জন্য এক মহামানবের পথ চেয়ে দিন গোনেন নাজকি। কাশ্মীরের আকাশ, মেঘ, পাহাড় ও প্রকৃতির মাঝে তাঁকে খুঁজে ফেরেন। রাতের ঘুমোনোর সময় খোলা রাখেন দরজা-জানালা—পাছে তিনি এসে পড়েন! কবিতার ভাষায় পড়ুন—
‘খুঁজে ফিরি তাঁকে প্রখর সূর্যের নিচে
তুষারবাহী বাতাসে; তাঁকে খুঁজতে ছুঁই আকাশ
খোলা রাখি ঘরের দরজা-জানালা
আমাকে বলো—কখন তিনি এসেছিলেন এবং কোন গন্তব্যে করেছেন যাত্রা।’
কিন্তু মহামানব আসে না; শেষ হয় না অপেক্ষার প্রহর। অসহায় নাজকি আপসের পথে হাঁটেন। অসহায়-নিঃস্ব কাশ্মীরি মানুষের মুখ নাজকি ক্ষমতার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হতে চান না। ক্ষমতা ক্ষমতাবানদের হাতেই থাকুক—তবে আমাদের, সাধারণ কাশ্মীরিদের শান্তিতে থাকে দাও। তিনি লেখেন—
‘তোমার সঙ্গে কী করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি—সেই যোগ্যতা কি আমার আছে?
ঘোড়ার পিঠে তুমিই নাহয় চড়ো
আমাকে তোমার ওড়ানো ধুলো মেখেই সুখী থাকতে দাও।’
কবি দুই পক্ষকে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করেন। অতীতের দুঃখ ভুলে সবার সঙ্গে মিলেমিশে সুখে দিন কাটাতে চান। উদার বক্ষ খুলে ঘোষণা দেন ক্ষমার। তিনি বলেন—
‘চলো ফের নতুন করে দিল খুলে হাসার ওয়াদা করি
তোমরাও মনে রাখবে না বিভীষিকার দিনগুলো
আমিও গোপন জখম বলে বেড়াব না যুগ-যুগান্তরে।’
তবে কে শোনে কার কথা! নাজকি রাগে-ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং হতাশার চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যান। অসহিষ্ণুতার আড়তদারদের গলা ফাটিয়ে বলেন—
‘আমাকে শূলে চড়াও
ভস্ম করো আমাকে
উদীয়মান সূর্যের পুজো আমি করেছি
ছিটকে পড়া থেকে উদ্ধার করেছি অস্তগামী চাঁদকেও।’
আরও পড়ুন:

‘নার হেয়ুতুন কাজালভানাস’ (কাজালভানাসে আগুন) ফারুক নাজকির সেরা কীর্তি। কাশ্মীরী ভাষার এই কাব্যগ্রন্থ তাঁকে ১৯৯৫ সালে ভারতের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার ‘সাহিত্য অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড’ এনে দেয়। কাশ্মীরি সাহিত্যে মৌলিক কবিতা রচনার পাশাপাশি উর্দু-হিন্দি সাহিত্যের বেশ কিছু ধ্রুপদি কবিতার অনুবাদও তিনি করেছেন, যেখানে তিনি নিজস্বতা ধরে রাখার প্রয়াস চালান। কাশ্মীরি সাহিত্যে ইতিবাচকতা, আধুনিকতা ও রোমান্টিকতার নতুন মাইলফলক হয়ে থাকবে নাজকির এসব কবিতা।
‘নার হেয়ুতুন কাজালভানাস’ নামটি চয়ন করেন বিখ্যাত কাশ্মীরি সাহিত্যিক মাস্টার জিন্দা কৌলের ‘নার হা!’ (সাবধান! আগুন!) কবিতা থেকে। বইয়ের সূচনাপাতায় মাস্টারজির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতাও নিবেদন করেন। এই কাব্য দশকের পর দশক জ্বলতে থাকা নাজকির জন্মভূমি কাশ্মীরের দুঃখ, বেদনা, অস্থিরতা, ভয়, ক্ষোভ, অসহিষ্ণুতা, আশা ও হতাশার কথা বলে। বইয়ের নাম থেকে সেই তীব্র আগুনের আঁচ আমরা অনুভব করতে পারি। নাজকি লিখছেন—
‘কাজালভানাস জ্বলছে!
এবং এখানে রয়েছে বসন্তের আগমনী হাহাকারও।
জ্বলছে আগুন এ হৃদয়েও—
‘আগুন’-এর সঙ্গে; কান্না সর্বাঙ্গে।’
কাশ্মীরে বিরাজমান এই আগুন-আগুন খেলার সামনে নিদারুণ অসহায় নাজকি। দরজার ফাঁক গলে বাতাসের ডানায় ভর করে বসতঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ছে সংঘাত-অস্থিরতা। ইট দিয়ে সেই দরজা এঁটে দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। বরং অনেক মানুষের মতো কবি নাজকিও দরজা-বাতাসের ইঁদুর-বিড়াল খেলার এই উপদ্রব থেকে বাঁচতে ভিন্ন পথে ঘরে প্রবেশ করছেন। মানুষজন আজকাল জানালা দিয়ে চলাচল শুরু করেছে। এমন অভিনব উপমায় কবি সময়ের সংকটকে আমাদের সামনে স্পষ্ট করে তোলেন। পড়ুন—
‘আবার বাতাস আসে, দরজা ঠেলে করে আধখোলা
ওঠো, রেখে এসো দরজার পেছনে ইটটি আরেকবার
আজকাল জানালা দিয়েই ঢুকে পড়ছে লোকজন
দরজাগুলো এক সময় কত শ্রদ্ধাই না ভোগ করত।’
১৯৯০ সাল থেকে চলে আসা কাশ্মীরের ত্রাসের জগৎকে খুল্লম খোলা বয়ান করেন নাজকি। এ ক্ষেত্রে কোনো রাখঢাক করার প্রয়োজন মনে করেন না। আতঙ্কের মুহূর্ত বয়ানে কবি অত্যন্ত স্পষ্টবাদী, দ্ব্যর্থহীন। তবে কবির সব দুঃখের আশ্রয় কাশ্মীরের প্রকৃতি, ফুল ও তুষার এবং অরণ্য। পড়ুন—
‘দরজা-জানালায় ঝুলে থাকে আতঙ্ক
উঠোনে অপেক্ষা করে মুখোশপরা শয়তান
চিনার গাছের খোঁড়ল থেকে মিউমিউ ডাকে বিড়াল
শব্দের জন্য তোতলাই আমরা—কী করে কাঁদব
যৌবনোচ্ছল আইরিশ লুটিয়ে পড়ে ধুলোয়,
মাটির তৈরি ছাদে বন্য হয়ে ওঠে টিউলিপেরা
এবং মারমুখী বাতাস ওড়ে—যেভাবে ক্ষুধার্ত সিংহ
মধ্য জানুয়ারিতে নেমে আসে লোকালয়ে
অরণ্য ছেড়ে, শীতের তুষারপাতের পর
এবং হিংস্র হয়ে ওঠে আরও, প্রতিটি শিকারের পর।’
দুই.
সাধারণ মানুষের জীবনে অকথ্য ভোগান্তি নিয়ে আসা ধ্বংসের নতুন আড়তদারদের অপকর্ম অত্যন্ত নির্মোহ ভঙ্গিতে তুলে আনেন। বিদ্রূপ, কটাক্ষ কিংবা শ্লেষ মেশাতেও যেন কবির আত্মমর্যাদায় লাগে। কতটা নির্লজ্জ হলে খুনের পর খুন করেও ঘাতকেরা নিজেদের কাশ্মীরি পরিচয় দিতে পারে—নাজকি অবাক হন। তিনি লিখেন—
‘এখানে, নদীতীরে
(সদ্যবিবাহিত) ছেলেদের রক্তমাখা কাপড় ধুতে আসেন মায়েরা
আগুনে ভস্ম হয় নববধুদের দামি পোশাকও
এবং দেখো—স্তন্যদায়ী মায়েরা মরছে অনাহারে
অথচ ঝিলম বয়ে চলে আপন মনে
সরাইখানায় তালা লাগিয়ে দেয় তারা
নজরদারির আওতায় আনে মাজার ও সৌন্দর্য
গুন্ডারা তছনছ করে পুরো শহর
ঝকঝকে দিন বাঁক নেয় বিমর্ষ সন্ধ্যায়
জাফরানের খেতে
লজ্জা দিতে খুনিরা রাখে ফুল—হিমলের দেহের মতো
এবং দেখো—কী করে ঘাতকেরা উচ্চস্বরে গাইছে লালভাখ
এবং আবৃত্তি করছে রেশিনামা থেকেও…।’
সশস্ত্র তৎপরতার মাতাল হাওয়া কাশ্মীরে হিংসা-অসহিষ্ণুতার উন্মত্ত ঢেউ তোলে। একজন খাঁটি কাশ্মীরি হিসেবে কবির আত্মা বেদনায় পুড়ে ছারখার হয়; ভেঙে খানখান হয় নির্মল কাচের হৃদয়। উপত্যকা থেকে হিন্দু অভিজাত শ্রেণির পণ্ডিতদের নির্বাসন, খুন ও তাদের ওপর চলা ধ্বংসযজ্ঞ তাঁকে অত্যন্ত ব্যথিত করে। তিনি উপলব্ধি করেন, হিংসার বিষাক্ত বায়ু কাশ্মীরের বহুদিনের পুরোনো বহুরৈখিক সাংস্কৃতিক চাদরকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল কাশ্মীরিকেই এই মাতাল হাওয়া বিভাজন, দুঃখ ও হতাশার রাজ্যে হারিয়ে দিচ্ছে। কাশ্মীরের মানুষের শরণার্থীশিবিরে দেখার দুঃখ ভুলতে পারেন না তিনি। তিনি লিখেন—
‘চোখের আড়ালে স্বপ্ন লুকিয়ে
তাঁবুর ছায়ায় দিন কাটায় তারা
দিনের সূর্যে দেহ মুড়িয়ে এবং
রাতের বালিশে গোলাপ রেখে
আশা করেছিল এক সাধারণ ঘুমের।
অথচ সাপগুলো ক্রমেই তাঁবুর কাছে আসে
পৃথিবী পরিণত হয় জ্বলন্ত হাপরে
আকাশ থেকে ঝরে পড়ে আগুনের গোলা
আমরা কোনো গান শুনি না—
নাম ধরে কেউই ডাকে না তাদের
ফুলের পাপড়ি হাতে দেবী পুজো করে না কেউ
অংশ নেয় না কেউ চারার-ই-শরিফের ওরসে
আমাকে রুখো না—
অনুভূতিগুলো ঢেলে দিতে হবে আমার।’
সংঘাত-সহিংসতায় ধীরে-ধীরে ম্লান হতে থাকে কাশ্মীরের ধর্মপ্রাণ মানুষের আরাধনার স্বর্গীয় সুর। রক্তের নেশায় মাতাল ঘাতকেরা মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাপক বাধাগ্রস্ত করে। ঘর থেকে বেরোনোর জো নেই মানুষের। উপত্যকা যেন অমাবস্যার রাতের সুনসান ভুতুড়ে কবরস্থান! নাজকির ভাষায়—
‘ছাদের ওপর জ্বলজ্বল করছে টকটকে লাল পপি
তবে আফসোস! বাতাসে বলছে ভীতিকর তরঙ্গ
শীতের রাতে, ক্ষুধায় মাতাল এক সিংহ
শিকারের খোঁজে হামলে পড়ে লোকালয়ে
ভারী করে তোলে নিশ্বাস অসুস্থ আকাঙ্ক্ষারা
এবং ধেয়ে আসে দরজা-জানালা অভিমুখে
সেঁটে রাখা মেহেদির কৌটাটি খেয়াল করে না কেউ
জিন-তাড়ানো ভেষজের ধোঁয়াও কেউ শুঁকে না
রক্ত ও কাদা মিলেমিশে একাকার ভেজা পিণ্ডে…
শুকনো নদী বানের অপেক্ষায়, শিরায় ফুটছে কালো রক্ত
এবং সিঁদুর মাখা সাদা পাথর…
শহরের উপকণ্ঠে ওঠে দূষিত বর্জ্য
এবং বাতাসেরা হাহাকার করে সুনসান কবরস্থানে।’
তিন.
১৯৯০-২০০০ সময়ের অশান্তিঘেরা কালো দশকে, যখন কাশ্মীর মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়, তখনো নাজকি শান্তির আশায় বুক বাঁধেন। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে রচনা করতে থাকেন কবিতা। দুঃখ, হতাশার নর্দমা মাড়িয়ে কবি উঠে আসেন গভীর নীল ও নির্মল আকাশে। সেখান থেকে প্রভাতের নতুন আলো, হলুদ পাতাঝরা বসন্ত এবং মানবকল্যাণের গান গেয়ে যান। তিনি মনে করেন, এসব দাঙ্গা, হাঙ্গামা, খুনোখুনির রাজনীতি কাশ্মীরের ঐতিহ্য নয়। বরং রক্তের এই জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে ভেসে গেছে এই স্বর্গীয় উপত্যকার ৫ হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহিষ্ণু ঐতিহ্যের সৌধ। নাজকি বলেন—
‘আমাকে রুখো না—হৃদয়টা বের করে আনতে হবে আমার
এই বিজন মরুর বুকে ফুটবে গোলাপ
কাল ফুল ফুটবে এ পরিত্যক্ত বাগানেও
সেই ফুলের সঙ্গে আমাকে কথা বলতে হবে নির্জনে
চোখজোড়া আমার উলার হ্রদের পানির মতো উতলা
তাদের জানাতে হবে আমাদের সরল আর্তনাদ
জানাতে হবে—বসন্তের বুলবুলি গাইছে এখনো সুরেলা গান
নৌকাকে নিরাপদ কূলে নিয়ে যাবে এই মাতাল ঝড়
তাদের জানাতে হবে
এই দেহের গভীরে
স্ফুরণ ঘটতে চলেছে একটি আগ্নেয়গিরির
আমাকে রুখো না—
ভেতরের সবকিছু আমাকে ঢেলে দিতে হবে।’
নাজকি বুঝতে পারেন না, কেন হলুদ পাতাঝরা বসন্ত তাঁর পণ্ডিত বন্ধুদের উপত্যকায় ফিরিয়ে আনতে পারে না। কাশ্মীরের মানুষ কেন এই স্বর্গ ছেড়ে সমতলের অসমতল জীবনযাপন করবে? তাদের অনুপস্থিতি কবিকে পোড়ায়। কাশ্মীরের তুষারাবৃত শীত কিংবা সোনালি পাতামোড়ানো বসন্তও কবির এই দুঃখ ভোলাতে পারে না। তাঁর ভাষায়—
‘আবার আমাদের ফিরে তাকাতে হবে দূর অতীতে?
বসন্ত আমাদের আসবে আগের মতো
আগের মতোই উল্লাস করবে ফুরফুরে হাওয়া
ফুলের প্রস্ফুটিত কলি বুকে নিয়ে
এবং শরৎ আস্থার বসন্তকে বিদ্রূপ করে বলবে—
‘পৃথিবী পোশাক পরে না—তুলো উৎপাদন করে কী হবে!’
ঘ্রাণ-সৌরভে অবগাহন করে
আবারও এই পথে আসবে বসন্ত
কয়েকটি সুখবর নিয়ে
আহা! ঘর থেকে বেরোনো মানুষগুলো
আর কখনো ফিরে আসেনি
অথবা এই বসন্ত পায়নি তাদের কোনো খোঁজ।’
চার.
ভূস্বর্গ কাশ্মীরকে এই দুর্দশা থেকে মুক্ত করার জন্য এক মহামানবের পথ চেয়ে দিন গোনেন নাজকি। কাশ্মীরের আকাশ, মেঘ, পাহাড় ও প্রকৃতির মাঝে তাঁকে খুঁজে ফেরেন। রাতের ঘুমোনোর সময় খোলা রাখেন দরজা-জানালা—পাছে তিনি এসে পড়েন! কবিতার ভাষায় পড়ুন—
‘খুঁজে ফিরি তাঁকে প্রখর সূর্যের নিচে
তুষারবাহী বাতাসে; তাঁকে খুঁজতে ছুঁই আকাশ
খোলা রাখি ঘরের দরজা-জানালা
আমাকে বলো—কখন তিনি এসেছিলেন এবং কোন গন্তব্যে করেছেন যাত্রা।’
কিন্তু মহামানব আসে না; শেষ হয় না অপেক্ষার প্রহর। অসহায় নাজকি আপসের পথে হাঁটেন। অসহায়-নিঃস্ব কাশ্মীরি মানুষের মুখ নাজকি ক্ষমতার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হতে চান না। ক্ষমতা ক্ষমতাবানদের হাতেই থাকুক—তবে আমাদের, সাধারণ কাশ্মীরিদের শান্তিতে থাকে দাও। তিনি লেখেন—
‘তোমার সঙ্গে কী করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি—সেই যোগ্যতা কি আমার আছে?
ঘোড়ার পিঠে তুমিই নাহয় চড়ো
আমাকে তোমার ওড়ানো ধুলো মেখেই সুখী থাকতে দাও।’
কবি দুই পক্ষকে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করেন। অতীতের দুঃখ ভুলে সবার সঙ্গে মিলেমিশে সুখে দিন কাটাতে চান। উদার বক্ষ খুলে ঘোষণা দেন ক্ষমার। তিনি বলেন—
‘চলো ফের নতুন করে দিল খুলে হাসার ওয়াদা করি
তোমরাও মনে রাখবে না বিভীষিকার দিনগুলো
আমিও গোপন জখম বলে বেড়াব না যুগ-যুগান্তরে।’
তবে কে শোনে কার কথা! নাজকি রাগে-ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং হতাশার চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যান। অসহিষ্ণুতার আড়তদারদের গলা ফাটিয়ে বলেন—
‘আমাকে শূলে চড়াও
ভস্ম করো আমাকে
উদীয়মান সূর্যের পুজো আমি করেছি
ছিটকে পড়া থেকে উদ্ধার করেছি অস্তগামী চাঁদকেও।’
আরও পড়ুন:

ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
১ দিন আগে
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
২ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে। শুধু তা-ই নয়, তাঁকে কিন্তু কখনো গহিন অরণ্যের আস্তানায় সশস্ত্র রক্ষীবেষ্টিত হয়ে আত্মগোপনে থাকতে হয়নি। তাঁর মাদক কারবারের আয় গোটা দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখত। আর তাঁকে কখনো জেলে যাওয়ার চিন্তা করতে হয়নি। কারণ, মাদক-সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা যাঁদের ছিল, তাঁরা সবাই ছিলেন তাঁর বেতনভুক্ত কর্মচারী!
তিনি আর কেউ নন, তিনি রানি ভিক্টোরিয়া। তাঁর হাতে ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দণ্ড।
রানি ভিক্টোরিয়া শুধু সাম্রাজ্য পরিচালনাতেই মাদক ব্যবহার করেননি, ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি ছিলেন বিভিন্ন ধরনের ড্রাগের ভক্ত। সিংহাসনে আরোহণের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর।
ভিক্টোরিয়ার অন্যতম প্রিয় মাদক ছিল আফিম। ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটেনে আফিম সেবনের ফ্যাশনেবল উপায় ছিল—অ্যালকোহলের সঙ্গে মিশিয়ে লডেনাম আকারে পান করা। তীব্র ব্যথা বা অস্বস্তি দূর করতে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। এমনকি দাঁত ওঠার সময় শিশুদের জন্যও এটি সুপারিশ করতেন চিকিৎসকেরা। রানি ভিক্টোরিয়াও প্রতিদিন সকালে এক ঢোক লডেনাম পান করে দিন শুরু করতেন।
এ ছাড়া তিনি সেবন করতেন কোকেন। এটি তখন ছিল সম্পূর্ণ নতুন এবং বৈধ। দাঁতের ব্যথা উপশম এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য রানি কোকেন মিশ্রিত চুইংগাম ও ওয়াইন পছন্দ করতেন। প্রসবের সময় অসহনীয় যন্ত্রণা কমাতে তিনি সানন্দে ক্লোরোফর্ম গ্রহণ করেন এবং এই অভিজ্ঞতাটিকে ‘স্বর্গীয়’ বলে বর্ণনা করেছেন।
১৮৩৭ সালে যখন ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে বসেন, উত্তরাধিকারসূত্রে একটি বড় সংকটের বোঝা তাঁর ঘাড়ে চাপে—ব্রিটিশরা চীন থেকে বিপুল পরিমাণ চা আমদানি করত। এর ফলে ব্রিটেনের সব অর্থ চীনে চলে যাচ্ছিল। আর ওই সময় ব্রিটিশদের হাতে চীনে রপ্তানি করার মতো কিছু ছিল না। ব্রিটেন মরিয়া হয়ে এমন একটি পণ্যের সন্ধান করছিল, যা চীনের লোকেরা চাইবে।
এ সমস্যার সমাধান ছিল আফিম। ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত ভারতে প্রচুর আফিম উৎপাদিত হতো। এটি ছিল অত্যন্ত কার্যকর ব্যথানাশক এবং মারাত্মকভাবে আসক্তি সৃষ্টিকারী। ফলে চীনের লোকেরা এর জন্য প্রচুর দাম দিতে প্রস্তুত ছিল। রানি ভিক্টোরিয়ার শাসন শুরু হওয়ার পর, চীনে আফিমের চালান দ্রুত বাড়তে থাকে। আফিমের কল্যাণে রাতারাতি বাণিজ্য ভারসাম্য বদলে যায়। চীনই ব্রিটিশদের কাছে ঋণী হতে শুরু করে। মাদক কারবার থেকে আসা অর্থ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মোট বার্ষিক আয়ের ১৫ থেকে ২০ শতাংশে দাঁড়ায়।
চীন সরকার মরিয়া হয়ে আফিমের প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে। চীনের সম্রাট এই কাজের জন্য প্রশাসক লিন জেক্সুকে নিয়োগ করেন। জেক্সু রানি ভিক্টোরিয়ার কাছে একটি চিঠি লিখে ব্রিটিশদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন—চীন যেখানে চা, রেশম ও মৃৎপাত্রের মতো উপকারী পণ্য পাঠাচ্ছে, সেখানে ব্রিটেন কেন তার বিনিময়ে কোটি কোটি মানুষকে ক্ষতিকর মাদক পাঠাচ্ছে?
রানি সেই চিঠি পড়ারও প্রয়োজন বোধ করেননি। ফলে ১৮৩৯ সালের বসন্তে লিন জেক্সু ব্রিটিশ জাহাজ বহর আটক করেন এবং প্রায় আড়াই মিলিয়ন পাউন্ড আফিম দক্ষিণ চীন সাগরে ফেলে দেন।
মাত্র ২০ বছর বয়সী রানি ভিক্টোরিয়া এই ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। যেকোনো ক্ষমতাধর সাম্রাজ্যবাদী কিশোরীর মতো তাঁর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল প্রত্যাশিতই—তিনি চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এটিই ইতিহাসে প্রথম ‘আফিম যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।
ব্রিটিশ বাহিনী চীনা সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে এবং হাজার হাজার চীনা নাগরিককে হত্যা করে। সম্রাট বাধ্য হয়ে একটি অসম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির ফলে হংকংকে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিতে হয়। চীনে আফিম ঢোকার জন্য আরও বন্দর খুলে দেওয়া হয় এবং চীনে বসবাসকারী ব্রিটিশ নাগরিকেরা আইনি সুরক্ষা পান।
এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে চীন সাম্রাজ্যের অজেয় ভাবমূর্তি ভেঙে দেয়। এভাবেই একজন একগুঁয়ে কিশোরী রানি একটি প্রাচীন, মর্যাদাপূর্ণ সভ্যতাকে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করেন। এই নির্মম, নির্লজ্জ আত্মস্বার্থই রানি ভিক্টোরিয়াকে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল মাদক সম্রাট বানিয়ে তোলে!
তথ্যসূত্র: টাইম

ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে। শুধু তা-ই নয়, তাঁকে কিন্তু কখনো গহিন অরণ্যের আস্তানায় সশস্ত্র রক্ষীবেষ্টিত হয়ে আত্মগোপনে থাকতে হয়নি। তাঁর মাদক কারবারের আয় গোটা দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখত। আর তাঁকে কখনো জেলে যাওয়ার চিন্তা করতে হয়নি। কারণ, মাদক-সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা যাঁদের ছিল, তাঁরা সবাই ছিলেন তাঁর বেতনভুক্ত কর্মচারী!
তিনি আর কেউ নন, তিনি রানি ভিক্টোরিয়া। তাঁর হাতে ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দণ্ড।
রানি ভিক্টোরিয়া শুধু সাম্রাজ্য পরিচালনাতেই মাদক ব্যবহার করেননি, ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি ছিলেন বিভিন্ন ধরনের ড্রাগের ভক্ত। সিংহাসনে আরোহণের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর।
ভিক্টোরিয়ার অন্যতম প্রিয় মাদক ছিল আফিম। ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটেনে আফিম সেবনের ফ্যাশনেবল উপায় ছিল—অ্যালকোহলের সঙ্গে মিশিয়ে লডেনাম আকারে পান করা। তীব্র ব্যথা বা অস্বস্তি দূর করতে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। এমনকি দাঁত ওঠার সময় শিশুদের জন্যও এটি সুপারিশ করতেন চিকিৎসকেরা। রানি ভিক্টোরিয়াও প্রতিদিন সকালে এক ঢোক লডেনাম পান করে দিন শুরু করতেন।
এ ছাড়া তিনি সেবন করতেন কোকেন। এটি তখন ছিল সম্পূর্ণ নতুন এবং বৈধ। দাঁতের ব্যথা উপশম এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য রানি কোকেন মিশ্রিত চুইংগাম ও ওয়াইন পছন্দ করতেন। প্রসবের সময় অসহনীয় যন্ত্রণা কমাতে তিনি সানন্দে ক্লোরোফর্ম গ্রহণ করেন এবং এই অভিজ্ঞতাটিকে ‘স্বর্গীয়’ বলে বর্ণনা করেছেন।
১৮৩৭ সালে যখন ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে বসেন, উত্তরাধিকারসূত্রে একটি বড় সংকটের বোঝা তাঁর ঘাড়ে চাপে—ব্রিটিশরা চীন থেকে বিপুল পরিমাণ চা আমদানি করত। এর ফলে ব্রিটেনের সব অর্থ চীনে চলে যাচ্ছিল। আর ওই সময় ব্রিটিশদের হাতে চীনে রপ্তানি করার মতো কিছু ছিল না। ব্রিটেন মরিয়া হয়ে এমন একটি পণ্যের সন্ধান করছিল, যা চীনের লোকেরা চাইবে।
এ সমস্যার সমাধান ছিল আফিম। ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত ভারতে প্রচুর আফিম উৎপাদিত হতো। এটি ছিল অত্যন্ত কার্যকর ব্যথানাশক এবং মারাত্মকভাবে আসক্তি সৃষ্টিকারী। ফলে চীনের লোকেরা এর জন্য প্রচুর দাম দিতে প্রস্তুত ছিল। রানি ভিক্টোরিয়ার শাসন শুরু হওয়ার পর, চীনে আফিমের চালান দ্রুত বাড়তে থাকে। আফিমের কল্যাণে রাতারাতি বাণিজ্য ভারসাম্য বদলে যায়। চীনই ব্রিটিশদের কাছে ঋণী হতে শুরু করে। মাদক কারবার থেকে আসা অর্থ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মোট বার্ষিক আয়ের ১৫ থেকে ২০ শতাংশে দাঁড়ায়।
চীন সরকার মরিয়া হয়ে আফিমের প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে। চীনের সম্রাট এই কাজের জন্য প্রশাসক লিন জেক্সুকে নিয়োগ করেন। জেক্সু রানি ভিক্টোরিয়ার কাছে একটি চিঠি লিখে ব্রিটিশদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন—চীন যেখানে চা, রেশম ও মৃৎপাত্রের মতো উপকারী পণ্য পাঠাচ্ছে, সেখানে ব্রিটেন কেন তার বিনিময়ে কোটি কোটি মানুষকে ক্ষতিকর মাদক পাঠাচ্ছে?
রানি সেই চিঠি পড়ারও প্রয়োজন বোধ করেননি। ফলে ১৮৩৯ সালের বসন্তে লিন জেক্সু ব্রিটিশ জাহাজ বহর আটক করেন এবং প্রায় আড়াই মিলিয়ন পাউন্ড আফিম দক্ষিণ চীন সাগরে ফেলে দেন।
মাত্র ২০ বছর বয়সী রানি ভিক্টোরিয়া এই ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। যেকোনো ক্ষমতাধর সাম্রাজ্যবাদী কিশোরীর মতো তাঁর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল প্রত্যাশিতই—তিনি চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এটিই ইতিহাসে প্রথম ‘আফিম যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।
ব্রিটিশ বাহিনী চীনা সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে এবং হাজার হাজার চীনা নাগরিককে হত্যা করে। সম্রাট বাধ্য হয়ে একটি অসম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির ফলে হংকংকে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিতে হয়। চীনে আফিম ঢোকার জন্য আরও বন্দর খুলে দেওয়া হয় এবং চীনে বসবাসকারী ব্রিটিশ নাগরিকেরা আইনি সুরক্ষা পান।
এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে চীন সাম্রাজ্যের অজেয় ভাবমূর্তি ভেঙে দেয়। এভাবেই একজন একগুঁয়ে কিশোরী রানি একটি প্রাচীন, মর্যাদাপূর্ণ সভ্যতাকে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করেন। এই নির্মম, নির্লজ্জ আত্মস্বার্থই রানি ভিক্টোরিয়াকে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল মাদক সম্রাট বানিয়ে তোলে!
তথ্যসূত্র: টাইম

কাশ্মীরে বিরাজমান এই আগুন-আগুন খেলার সামনে নিদারুণ অসহায় নাজকি। দরজার ফাঁক গলে বাতাসের ডানায় ভর করে বসতঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ছে সংঘাত-অস্থিরতা। ইট দিয়ে সেই দরজা এঁটে দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। বরং অনেক মানুষের মতো কবি নাজকিও দরজা-বাতাসের ইঁদুর-বিড়াল খেলার এই উপদ্রব থেকে বাঁচতে ভিন্ন পথে ঘরে প্রবেশ করছেন।
০২ জুলাই ২০২২
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
২ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া হবে।
বুকার পুরস্কারের ইতিহাসে এই প্রথমবার বিচারক প্যানেলে থাকবে শিশুরাও। বর্তমান চিলড্রেনস লরিয়েট শিশুসাহিত্যিক ফ্রাঙ্ক কটরেল-বয়েস বিচারকদের উদ্বোধনী প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁর সঙ্গে আরও দুজন প্রাপ্তবয়স্ক বিচারক থাকবেন, যাঁরা প্রথমে আটটি বইয়ের একটি শর্টলিস্ট তৈরি করবেন। এরপর বিজয়ী নির্ধারণে সহায়তা করার জন্য তিনজন শিশু বিচারক নির্বাচিত হবেন।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, প্রতিবছর চিলড্রেনস বুকার প্রাইজের জন্য শর্টলিস্টেড হওয়া এবং বিজয়ী বইগুলোর ৩০ হাজার কপি শিশুদের উপহার দেওয়া হবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট, দ্য রিডিং এজেন্সি, বুকব্যাংকস এবং চিলড্রেনস বুক প্রজেক্টসহ বিভিন্ন সহযোগী সংস্থাদের মাধ্যমে এ বইগুলো দেওয়া হবে। গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে শিশুদের ‘আনন্দ নিয়ে পড়া’র প্রবণতা। এমন সময় বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন এ উদ্যোগটি নিল।
কটরেল-বয়েস বলেন, এই পুরস্কার শিশুদের উপভোগ করার মতো বই খুঁজে বের করা সহজ করে তুলবে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি শিশুরই বইয়ের জগতে ডুব দেওয়ার যে আনন্দ, তা উপভোগ করার সুযোগ পাওয়া উচিত। বিচারক প্যানেলে তাদের আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে এবং মনোনীত বইগুলো উপহার দেওয়ার মাধ্যমে হাজার হাজার শিশুকে বই পড়ার চমৎকার দুনিয়ায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘এটা বেশ দারুণ আয়োজন হতে যাচ্ছে।’ তিনি মজা করে বলেন, ‘চলুন, হইচই শুরু করা যাক!’
শিশুসাহিত্য জগতের শীর্ষ লেখকদের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে এ ঘোষণা। সাবেক শিশুসাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত মালরি ব্ল্যাকম্যান, জ্যাকলিন উইলসন, মাইকেল মরপুরগো, ক্রেসিডা কাউয়েল, অ্যান ফাইন এবং জোসেফ কোয়েলোরা—সবাই নতুন এই পুরস্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ইংরেজিতে লেখা বা ইংরেজিতে অনূদিত এবং যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত সমসাময়িক শিশুসাহিত্যগুলোতে এ পুরস্কার দেওয়া হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের বুকার এবং আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারের মতোই বিজয়ী লেখক ৫০ হাজার পাউন্ড এবং শর্টলিস্টেড লেখকেরা প্রত্যেকে ২ হাজার ৫০০ পাউন্ড পাবেন।
প্রথম চিলড্রেনস বুকার পুরস্কারের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ২০২৬ সালের বসন্তে। বিচারক হতে শিশুদের আবেদন প্রক্রিয়াও এই সময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই বছরের নভেম্বরে ঘোষণা করা হবে শর্টলিস্ট এবং শিশু বিচারকদের নাম। বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তরুণ পাঠকদের জন্য আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে। ২০২৭ সালের পুরস্কারের জন্য ২০২৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশিত বই হতে হবে।
শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিল্পকলায় সমর্থন এবং জলবায়ু-সংকট মোকাবিলায় কাজ করা দাতব্য সংস্থা একেও ফাউন্ডেশনের (AKO Foundation) সহযোগিতায় এ পুরস্কার পরিচালিত হবে।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী (সিইও) গ্যাবি উড বলেন, ‘২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক বুকার প্রাইজ চালুর পর গত ২০ বছরে আমাদের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোগ চিলড্রেনস বুকার। এর একাধিক লক্ষ্য রয়েছে। একদিকে এটি শিশুদের জন্য লেখা ভবিষ্যৎ ক্লাসিক সাহিত্যকে সম্মান জানাবে, অন্যদিকে এটি এমন একটি সামাজিক উদ্যোগ, যা তরুণদের আরও বেশি করে পড়াশোনায় অনুপ্রাণিত করবে। এর মাধ্যমেই আমরা এমন এক বীজ রোপণ করতে চাই, যেখান থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আজীবন পাঠকেরা বিকশিত হবে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, শিশুদের বিশেষ করে শিশুসাহিত্যের আসল বিচারকদের মতামত শোনার জন্য।
একেও ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ফিলিপ ল-ফোর্ড বলেন, ‘এই অংশীদারত্ব ফাউন্ডেশনের সাক্ষরতা বৃদ্ধি ও সামাজিক গতিশীলতা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। আমরা গর্বিত যে এমন একটি প্রকল্পে অবদান রাখতে পারছি, যা তরুণ পাঠকদের অনুপ্রাণিত ও ক্ষমতায়িত করবে।’
বিনো ব্রেইন নামের একটি যুব গবেষণা সংস্থা ও ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্টের সহযোগিতায় নিয়মিত পরামর্শ সেশনের মাধ্যমে শিশুরা এই পুরস্কারের গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট শিশুদের পড়ার অভ্যাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা মূল্যায়নে সহায়তা করবে।
বুকার ফাউন্ডেশনের মতে, এই নতুন পুরস্কারটি শিশুসাহিত্যকে ‘সংস্কৃতির কেন্দ্রে স্থাপন’ করার একটি প্রচেষ্টা। সিইও গ্যাবি উড বলেন, ‘এই উদ্যোগের লক্ষ্য শুধু শিশুসাহিত্যে উৎকর্ষকে স্বীকৃতি দেওয়া নয়, বরং আরও বেশি তরুণকে এমন গল্প ও চরিত্র আবিষ্কারে সহায়তা করা ‘যারা তাদের সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকবে।’
বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সাহিত্য পুরস্কার বুকার প্রাইজ প্রথম প্রদান করা হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত ইংরেজিতে রচিত অসাধারণ কথাসাহিত্যকে সম্মান জানাতে এই পুরস্কার প্রবর্তিত হয়।

শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া হবে।
বুকার পুরস্কারের ইতিহাসে এই প্রথমবার বিচারক প্যানেলে থাকবে শিশুরাও। বর্তমান চিলড্রেনস লরিয়েট শিশুসাহিত্যিক ফ্রাঙ্ক কটরেল-বয়েস বিচারকদের উদ্বোধনী প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁর সঙ্গে আরও দুজন প্রাপ্তবয়স্ক বিচারক থাকবেন, যাঁরা প্রথমে আটটি বইয়ের একটি শর্টলিস্ট তৈরি করবেন। এরপর বিজয়ী নির্ধারণে সহায়তা করার জন্য তিনজন শিশু বিচারক নির্বাচিত হবেন।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, প্রতিবছর চিলড্রেনস বুকার প্রাইজের জন্য শর্টলিস্টেড হওয়া এবং বিজয়ী বইগুলোর ৩০ হাজার কপি শিশুদের উপহার দেওয়া হবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট, দ্য রিডিং এজেন্সি, বুকব্যাংকস এবং চিলড্রেনস বুক প্রজেক্টসহ বিভিন্ন সহযোগী সংস্থাদের মাধ্যমে এ বইগুলো দেওয়া হবে। গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে শিশুদের ‘আনন্দ নিয়ে পড়া’র প্রবণতা। এমন সময় বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন এ উদ্যোগটি নিল।
কটরেল-বয়েস বলেন, এই পুরস্কার শিশুদের উপভোগ করার মতো বই খুঁজে বের করা সহজ করে তুলবে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি শিশুরই বইয়ের জগতে ডুব দেওয়ার যে আনন্দ, তা উপভোগ করার সুযোগ পাওয়া উচিত। বিচারক প্যানেলে তাদের আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে এবং মনোনীত বইগুলো উপহার দেওয়ার মাধ্যমে হাজার হাজার শিশুকে বই পড়ার চমৎকার দুনিয়ায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘এটা বেশ দারুণ আয়োজন হতে যাচ্ছে।’ তিনি মজা করে বলেন, ‘চলুন, হইচই শুরু করা যাক!’
শিশুসাহিত্য জগতের শীর্ষ লেখকদের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে এ ঘোষণা। সাবেক শিশুসাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত মালরি ব্ল্যাকম্যান, জ্যাকলিন উইলসন, মাইকেল মরপুরগো, ক্রেসিডা কাউয়েল, অ্যান ফাইন এবং জোসেফ কোয়েলোরা—সবাই নতুন এই পুরস্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ইংরেজিতে লেখা বা ইংরেজিতে অনূদিত এবং যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত সমসাময়িক শিশুসাহিত্যগুলোতে এ পুরস্কার দেওয়া হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের বুকার এবং আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারের মতোই বিজয়ী লেখক ৫০ হাজার পাউন্ড এবং শর্টলিস্টেড লেখকেরা প্রত্যেকে ২ হাজার ৫০০ পাউন্ড পাবেন।
প্রথম চিলড্রেনস বুকার পুরস্কারের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ২০২৬ সালের বসন্তে। বিচারক হতে শিশুদের আবেদন প্রক্রিয়াও এই সময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই বছরের নভেম্বরে ঘোষণা করা হবে শর্টলিস্ট এবং শিশু বিচারকদের নাম। বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তরুণ পাঠকদের জন্য আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে। ২০২৭ সালের পুরস্কারের জন্য ২০২৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশিত বই হতে হবে।
শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিল্পকলায় সমর্থন এবং জলবায়ু-সংকট মোকাবিলায় কাজ করা দাতব্য সংস্থা একেও ফাউন্ডেশনের (AKO Foundation) সহযোগিতায় এ পুরস্কার পরিচালিত হবে।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী (সিইও) গ্যাবি উড বলেন, ‘২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক বুকার প্রাইজ চালুর পর গত ২০ বছরে আমাদের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোগ চিলড্রেনস বুকার। এর একাধিক লক্ষ্য রয়েছে। একদিকে এটি শিশুদের জন্য লেখা ভবিষ্যৎ ক্লাসিক সাহিত্যকে সম্মান জানাবে, অন্যদিকে এটি এমন একটি সামাজিক উদ্যোগ, যা তরুণদের আরও বেশি করে পড়াশোনায় অনুপ্রাণিত করবে। এর মাধ্যমেই আমরা এমন এক বীজ রোপণ করতে চাই, যেখান থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আজীবন পাঠকেরা বিকশিত হবে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, শিশুদের বিশেষ করে শিশুসাহিত্যের আসল বিচারকদের মতামত শোনার জন্য।
একেও ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ফিলিপ ল-ফোর্ড বলেন, ‘এই অংশীদারত্ব ফাউন্ডেশনের সাক্ষরতা বৃদ্ধি ও সামাজিক গতিশীলতা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। আমরা গর্বিত যে এমন একটি প্রকল্পে অবদান রাখতে পারছি, যা তরুণ পাঠকদের অনুপ্রাণিত ও ক্ষমতায়িত করবে।’
বিনো ব্রেইন নামের একটি যুব গবেষণা সংস্থা ও ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্টের সহযোগিতায় নিয়মিত পরামর্শ সেশনের মাধ্যমে শিশুরা এই পুরস্কারের গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট শিশুদের পড়ার অভ্যাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা মূল্যায়নে সহায়তা করবে।
বুকার ফাউন্ডেশনের মতে, এই নতুন পুরস্কারটি শিশুসাহিত্যকে ‘সংস্কৃতির কেন্দ্রে স্থাপন’ করার একটি প্রচেষ্টা। সিইও গ্যাবি উড বলেন, ‘এই উদ্যোগের লক্ষ্য শুধু শিশুসাহিত্যে উৎকর্ষকে স্বীকৃতি দেওয়া নয়, বরং আরও বেশি তরুণকে এমন গল্প ও চরিত্র আবিষ্কারে সহায়তা করা ‘যারা তাদের সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকবে।’
বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সাহিত্য পুরস্কার বুকার প্রাইজ প্রথম প্রদান করা হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত ইংরেজিতে রচিত অসাধারণ কথাসাহিত্যকে সম্মান জানাতে এই পুরস্কার প্রবর্তিত হয়।

কাশ্মীরে বিরাজমান এই আগুন-আগুন খেলার সামনে নিদারুণ অসহায় নাজকি। দরজার ফাঁক গলে বাতাসের ডানায় ভর করে বসতঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ছে সংঘাত-অস্থিরতা। ইট দিয়ে সেই দরজা এঁটে দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। বরং অনেক মানুষের মতো কবি নাজকিও দরজা-বাতাসের ইঁদুর-বিড়াল খেলার এই উপদ্রব থেকে বাঁচতে ভিন্ন পথে ঘরে প্রবেশ করছেন।
০২ জুলাই ২০২২
ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
২ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৪ দিন আগেসম্পাদকীয়

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে পারে অন্য জায়গার এসব খাবার। অন্তত ছায়ানীড়ের নিয়মিত ভক্ত-গ্রাহকেরা এমন দাবি করতেই পারেন। তাতে দোষের কিছু নেই।
তাই হয়তো এখনো রেস্তোরাঁটির সামনে ভিড় লেগে থাকে। ব্যস্ত সড়কের পাশ থেকে যখন মুরগি পোড়ার সুঘ্রাণ পাওয়া যায়, তখন পথে যেতে অনেকেই হয়তো বিরতি নিয়ে কিনে নেন ছায়ানীড়ের শর্মা বা গ্রিল চিকেন। ভেতরে বসে খেতে হলে লম্বা লাইনে যেমন দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, আবার পার্সেল নিতে গেলেও অপেক্ষা করতে হয়। প্রাত্যহিক এ দৃশ্য ছায়ানীড়ের জনপ্রিয়তার প্রমাণ। বিরিয়ানি ও অন্যান্য ফাস্ট ফুড খাবারও পাওয়া যায় এখানে।
ছবি: ওমর ফারুক

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে পারে অন্য জায়গার এসব খাবার। অন্তত ছায়ানীড়ের নিয়মিত ভক্ত-গ্রাহকেরা এমন দাবি করতেই পারেন। তাতে দোষের কিছু নেই।
তাই হয়তো এখনো রেস্তোরাঁটির সামনে ভিড় লেগে থাকে। ব্যস্ত সড়কের পাশ থেকে যখন মুরগি পোড়ার সুঘ্রাণ পাওয়া যায়, তখন পথে যেতে অনেকেই হয়তো বিরতি নিয়ে কিনে নেন ছায়ানীড়ের শর্মা বা গ্রিল চিকেন। ভেতরে বসে খেতে হলে লম্বা লাইনে যেমন দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, আবার পার্সেল নিতে গেলেও অপেক্ষা করতে হয়। প্রাত্যহিক এ দৃশ্য ছায়ানীড়ের জনপ্রিয়তার প্রমাণ। বিরিয়ানি ও অন্যান্য ফাস্ট ফুড খাবারও পাওয়া যায় এখানে।
ছবি: ওমর ফারুক

কাশ্মীরে বিরাজমান এই আগুন-আগুন খেলার সামনে নিদারুণ অসহায় নাজকি। দরজার ফাঁক গলে বাতাসের ডানায় ভর করে বসতঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ছে সংঘাত-অস্থিরতা। ইট দিয়ে সেই দরজা এঁটে দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। বরং অনেক মানুষের মতো কবি নাজকিও দরজা-বাতাসের ইঁদুর-বিড়াল খেলার এই উপদ্রব থেকে বাঁচতে ভিন্ন পথে ঘরে প্রবেশ করছেন।
০২ জুলাই ২০২২
ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
১ দিন আগে
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
১ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৪ দিন আগেসম্পাদকীয়

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন। বলা হয়, চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনদর্শনে প্রভাবিত হয়েই শচীমোহন রেস্তোরাঁটির নাম দেন ‘দেশবন্ধু সুইটমিট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। এর উল্টো দিকে তখন ছিল ইত্তেফাক পত্রিকার অফিস।
সেখানকার সাংবাদিকেরা দেশবন্ধুর পরোটা-লুচি-ভাজি-হালুয়া খেতে যেতেন নিয়মিত। কবি-সাহিত্যিক-অভিনয়শিল্পীরাও পছন্দ করতেন এই রেস্তোরাঁর খাবার। এমনকি এফডিসিতে ফরমাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো দেশবন্ধুর নাশতা। এখন হয়তো মানিক মিয়া, রাজ্জাক, কবরী কিংবা শাবানাদের মতো বিখ্যাতরা সেখানে যান না কিন্তু তাতে দেশবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখনো ঢাকাবাসীর ভিড় দেখা যায় এই রেস্তোরাঁয়। ভাবা যায়, সারা দিনই এখানকার পরোটা-ভাজি বিক্রি হতে থাকে! দুপুরে অবশ্য খাবারের তালিকায় ভাত-মাছ-মাংসও আছে। ছবি: মেহেদী হাসান

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন। বলা হয়, চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনদর্শনে প্রভাবিত হয়েই শচীমোহন রেস্তোরাঁটির নাম দেন ‘দেশবন্ধু সুইটমিট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। এর উল্টো দিকে তখন ছিল ইত্তেফাক পত্রিকার অফিস।
সেখানকার সাংবাদিকেরা দেশবন্ধুর পরোটা-লুচি-ভাজি-হালুয়া খেতে যেতেন নিয়মিত। কবি-সাহিত্যিক-অভিনয়শিল্পীরাও পছন্দ করতেন এই রেস্তোরাঁর খাবার। এমনকি এফডিসিতে ফরমাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো দেশবন্ধুর নাশতা। এখন হয়তো মানিক মিয়া, রাজ্জাক, কবরী কিংবা শাবানাদের মতো বিখ্যাতরা সেখানে যান না কিন্তু তাতে দেশবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখনো ঢাকাবাসীর ভিড় দেখা যায় এই রেস্তোরাঁয়। ভাবা যায়, সারা দিনই এখানকার পরোটা-ভাজি বিক্রি হতে থাকে! দুপুরে অবশ্য খাবারের তালিকায় ভাত-মাছ-মাংসও আছে। ছবি: মেহেদী হাসান

কাশ্মীরে বিরাজমান এই আগুন-আগুন খেলার সামনে নিদারুণ অসহায় নাজকি। দরজার ফাঁক গলে বাতাসের ডানায় ভর করে বসতঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ছে সংঘাত-অস্থিরতা। ইট দিয়ে সেই দরজা এঁটে দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। বরং অনেক মানুষের মতো কবি নাজকিও দরজা-বাতাসের ইঁদুর-বিড়াল খেলার এই উপদ্রব থেকে বাঁচতে ভিন্ন পথে ঘরে প্রবেশ করছেন।
০২ জুলাই ২০২২
ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
১ দিন আগে
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
২ দিন আগে