Ajker Patrika

শিবনাথ শাস্ত্রী

সম্পাদকীয়
শিবনাথ শাস্ত্রী

শিবনাথ শাস্ত্রী ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ, সমাজসংস্কারক, অনুবাদক ও ইতিহাসবিদ। তাঁর জন্ম ১৮৪৭ সালের ৩১ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার চাংড়িপোঁতা গ্রামের মাতুলালয়ে। পৈতৃক নিবাস ছিল একই জেলার মজিলপুরে। 

তিনি কলকাতার সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স, সংস্কৃত কলেজ থেকে এফএ, বিএ ও এমএ পাস করেন। এমএ পরীক্ষায় ভালো ফল করায় তিনি ‘শাস্ত্রী’ উপাধি লাভ করেন। অতঃপর পারিবারিক পদবি ভট্টাচার্যের পরিবর্তে শিবনাথ শাস্ত্রী নামেই পরিচিতি পান। 

ছাত্রাবস্থায় শিবনাথ শাস্ত্রী কেশবচন্দ্র সেনের ব্রাহ্মসমাজে যোগ দেন। এ জন্য কট্টর ধর্মীয় অনুশাসন মানা পিতার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটে। ইন্ডিয়ান রিফর্মস অ্যাসোসিয়েশনে যোগ দিয়ে তিনি মদ্যপান নিবারণ ও নারীমুক্তি আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি সোমপ্রকাশ ও ধর্মবিষয়ক সমদর্শী পত্রিকা এবং আরও পরে তত্ত্বকৌমুদী, ইন্ডিয়ান মেসেজ এবং শিশু-কিশোরদের মুকুল পত্রিকা সম্পাদনা করেন। 

তিনি ভারত আশ্রমের বয়স্কা মহিলা বিদ্যালয়, ভবানীপুর সাউথ সাবআরবান স্কুল ও হেয়ার স্কুলে শিক্ষকতা করেন। একপর্যায়ে তিনি সরকারি চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। নারীমুক্তি আন্দোলনে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে এবং বিধবাবিবাহের পক্ষে তিনি কেশবচন্দ্রের সহযোগী ছিলেন। তাঁদের বলিষ্ঠ প্রচেষ্টায় ১৮৭২ সালে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়সসীমা ১৪ বছর নির্ধারিত হয়। 

১৮৭৭ সালে শিবনাথ ব্রাহ্ম যুবকদের ‘ঘননিবিষ্ট’ নামে একটি বৈপ্লবিক সমিতিতে সংগঠিত করে পৌত্তলিকতা ও জাতিভেদের বিরুদ্ধে, নারী-পুরুষের সমান অধিকার ও সর্বজনীন শিক্ষার পক্ষে সংস্কার আন্দোলনের সূচনা করেন। 

তিনি কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ, জীবনী ইত্যাদি বিষয়ে অনেক গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর কয়েকটি অনুবাদ ও সম্পাদিত গ্রন্থও আছে। ‘রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ’, ‘আত্মচরিত’, ‘হিস্টরি অব ব্রাহ্ম সমাজ’ ইত্যাদি তাঁর গবেষণামূলক গ্রন্থ। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাগুলো হলো: ‘নির্বাসিতের বিলাপ’, ‘পুষ্পমালা’, ‘মেজ বৌ’, ‘হিমাদ্রি-কুসুম’, ‘পুষ্পাঞ্জলি’, ‘যুগান্তর’, ‘নয়নতারা’, ‘রামমোহন রায়’, ‘ধর্মজীবন (৩ খণ্ড)’, ‘বিধবার ছেলে’ ইত্যাদি। 

১৯১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন শিবনাথ শাস্ত্রী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত