সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন
রাইফেলের বাঁটের আঘাতে লুটিয়ে পড়লে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তোলা হয় তাঁকে। পথে যেতে যেতে গুলি করে নিশ্চিত করা হয় মৃত্যু। লাশ ছুড়ে ফেলা হয় বার্লিন শহরের ল্যান্ডবোয়্যার খালে। এটিই ছিল ‘রোজা লুক্সেমবার্গ’ সিনেমার শেষ দৃশ্য।
সিনেমার দৃশ্য হলেও ঘটনাটি কল্পিত নয়। রোজা লুক্সেমবার্গের জীবনের শেষ মুহূর্তের সত্যি গল্প। ১৮৭০ সালের ৫ মার্চ এই বিপ্লবী রাজনীতিবিদ ও তাত্ত্বিক নারীর জন্ম হয় রাশিয়া-অধ্যুষিত পোল্যান্ডের জামোশচ শহরের এক ইহুদি পরিবারে। বাবা-মা নাম রেখেছিলেন রোজালিয়া, ডাকতেন রোজা বলে।
রোজার এক পা অন্যটি থেকে খানিকটা ছোট হওয়ায় হাঁটতেন কিছুটা খুঁড়িয়ে। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাঁকে কখনো থামিয়ে রাখতে পারেনি। তিনি আমৃত্যু কাজ করে গেছেন মানুষের জন্য। পোলিশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং স্পার্টাকাস লিগ বা কমিউনিস্ট পার্টি অব জার্মানি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। মার্ক্সবাদে বিশ্বাসী এই নারী সমাজ পরিবর্তনের জন্য গণতন্ত্র ও বিপ্লবের মিশেলে সমাজতন্ত্রের ধারণা দিয়েছিলেন।
রোজার জন্মের দুই বছর পর জামোশচে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হলে তাঁর পরিবার চলে যায় ওয়ারশ শহরে। পড়ুয়া মায়ের মেয়েকে রোজার বাবাই ছোটবেলায় উদার চিন্তাভাবনা করতে শিখিয়েছেন। তখন থেকেই নানান রাজনৈতিক ও সামাজিক সংঘর্ষ দেখে তাঁর মধ্যে বিপ্লবী চেতনা তৈরি হওয়া শুরু করে। খুব অল্প বয়সে স্কুলের বিপ্লবী ক্যাম্পে যোগ দিয়েছিলেন রোজালিয়া।
১৮৮৬ সালে পোলিশ বামপন্থী প্রলেতারিয়েত পার্টিতে যোগ দিয়ে একটি সাধারণ ধর্মঘট আয়োজনে অংশ নিয়েছিলেন রোজা। সেই ধর্মঘটের ফলে পার্টির চারজন নেতাকে খুন করা হলে পার্টি ভেঙে যায়। এ ঘটনার পরেও রোজা ও পার্টির অন্য কর্মীরা গোপন যোগাযোগ রেখেছিলেন।
১৮৮৯ সালে রোজা সুইজারল্যান্ডে পাড়ি জমান। চেয়েছিলেন পড়াশোনা শেষ করতে, একই সঙ্গে রাশিয়ার পুলিশের কাছ থেকে পালিয়ে বাঁচতে। ইউনিভার্সিটি অব জুরিখে পড়াকালে তাঁর পরিচয় ও প্রেম হয় লিও ইয়োগিশেসের সঙ্গে। লিও নিজেও ছিলেন রোজার মতো বিপ্লবী। সেই সময়ের পোলিশ সোশ্যালিস্ট পার্টি ও অন্যান্য জাতীয় নীতিমালার সমালোচনা করতে বন্ধু জুলিয়ান মার্শলিউস্কিকে সঙ্গে নিয়ে তাঁরা একটি পত্রিকা প্রকাশ করতেন। লিও ও রোজা মিলে তাঁদের প্রতিষ্ঠিত সোশ্যাল ডেমোক্রেসি অব দ্য কিংডম অব পোল্যান্ড অ্যান্ড লিথুয়ানিয়া পার্টির নেতৃত্ব দিতেন।
ডক্টরেট ডিগ্রি লাভের পর রোজাকে জার্মানির শ্রমিকশ্রেণির আন্দোলন ভাবিয়ে তোলে এবং ১৮৯৬ সালে বার্লিনে স্থায়ী হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যাপারটি সহজ ছিল না বলে এক প্রকারবাধ্য হয়ে এক জার্মান নাগরিককে বিয়ে করেছিলেন রোজা। আবার পাঁচ বছর আদালতে দৌড়ঝাঁপ করে বিচ্ছেদও করে ফেলেছিলেন। তখনো লিও তাঁর পাশে ছিলেন। নারী আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী ক্লারা জেটকিনের সঙ্গে বেশ সখ্য ছিল রোজার। আমৃত্যু বন্ধু ছিলেন তাঁরা। মার্ক্সবাদী বিপ্লবে রোজার পাশে সব সময় থেকেছেন ক্লারা।
আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক ব্যুরোর সদস্য হয়ে ১৯০৪ সালে ‘কংগ্রেস অব দ্য সেকেন্ড ইন্টারন্যাশনাল’-এ যোগ দেন রোজা। কংগ্রেসে দেওয়া তাঁর ভাষণে সম্রাট উইলহেম-২-কে অপমান করার দায়ে তাঁকে তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কারাভোগের সময় থেকে রোজা লেখালেখি শুরু করেন। তিনি সোনিয়া লিবনেখট নামে জার্মান সোশ্যালিস্ট ও নারীবাদী এক তরুণীকে চিঠি লিখতেন। সেই সব চিঠি পৌঁছে যেত তরুণ বিপ্লবীদের উৎসাহ দিতে।
১৯০৫ সালে রাশিয়ার গণজাগরণের সময় লুক্সেমবার্গ ওয়ারশ শহরে ফিরে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে যোগ দেন এবং কারাবরণ করেন। এরপর বার্লিনে ফিরে এলে তাঁর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে লিওর। পরে ক্লারার ছেলে কোস্টা জেটকিনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।
শত্রুদের কাছে ‘ব্লাডি রোজা’ বা ‘রেড রোজা’ নামে পরিচিত লুক্সেমবার্গ বিরোধিতা করেছিলেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধেরও। শেষে ১৯১৯ সালে তাঁকে হত্যা করা হয়।
মৃত্যুর আগে রোজা শেষবারের মতো লিখেছিলেন, ‘আগামীকাল বিপ্লব তার শিখরে পৌঁছাবে এবং তোমার বুকে ভয়ের কাঁপুনি ধরিয়ে তা ঘোষণা করবে বিজয়ের বাণী—আমি ছিলাম, আছি, থাকব।’
সত্যিই এই নারী এখনো বিপ্লবীদের মাঝে বেঁচে আছেন।
সূত্র: ব্রিটানিকা, মার্ক্সিস্ট ডট ওআরজি, রোজালাক্স ডট ডি, জিউয়িস উইমেন’স আর্কাইভ
রাইফেলের বাঁটের আঘাতে লুটিয়ে পড়লে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তোলা হয় তাঁকে। পথে যেতে যেতে গুলি করে নিশ্চিত করা হয় মৃত্যু। লাশ ছুড়ে ফেলা হয় বার্লিন শহরের ল্যান্ডবোয়্যার খালে। এটিই ছিল ‘রোজা লুক্সেমবার্গ’ সিনেমার শেষ দৃশ্য।
সিনেমার দৃশ্য হলেও ঘটনাটি কল্পিত নয়। রোজা লুক্সেমবার্গের জীবনের শেষ মুহূর্তের সত্যি গল্প। ১৮৭০ সালের ৫ মার্চ এই বিপ্লবী রাজনীতিবিদ ও তাত্ত্বিক নারীর জন্ম হয় রাশিয়া-অধ্যুষিত পোল্যান্ডের জামোশচ শহরের এক ইহুদি পরিবারে। বাবা-মা নাম রেখেছিলেন রোজালিয়া, ডাকতেন রোজা বলে।
রোজার এক পা অন্যটি থেকে খানিকটা ছোট হওয়ায় হাঁটতেন কিছুটা খুঁড়িয়ে। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাঁকে কখনো থামিয়ে রাখতে পারেনি। তিনি আমৃত্যু কাজ করে গেছেন মানুষের জন্য। পোলিশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং স্পার্টাকাস লিগ বা কমিউনিস্ট পার্টি অব জার্মানি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। মার্ক্সবাদে বিশ্বাসী এই নারী সমাজ পরিবর্তনের জন্য গণতন্ত্র ও বিপ্লবের মিশেলে সমাজতন্ত্রের ধারণা দিয়েছিলেন।
রোজার জন্মের দুই বছর পর জামোশচে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হলে তাঁর পরিবার চলে যায় ওয়ারশ শহরে। পড়ুয়া মায়ের মেয়েকে রোজার বাবাই ছোটবেলায় উদার চিন্তাভাবনা করতে শিখিয়েছেন। তখন থেকেই নানান রাজনৈতিক ও সামাজিক সংঘর্ষ দেখে তাঁর মধ্যে বিপ্লবী চেতনা তৈরি হওয়া শুরু করে। খুব অল্প বয়সে স্কুলের বিপ্লবী ক্যাম্পে যোগ দিয়েছিলেন রোজালিয়া।
১৮৮৬ সালে পোলিশ বামপন্থী প্রলেতারিয়েত পার্টিতে যোগ দিয়ে একটি সাধারণ ধর্মঘট আয়োজনে অংশ নিয়েছিলেন রোজা। সেই ধর্মঘটের ফলে পার্টির চারজন নেতাকে খুন করা হলে পার্টি ভেঙে যায়। এ ঘটনার পরেও রোজা ও পার্টির অন্য কর্মীরা গোপন যোগাযোগ রেখেছিলেন।
১৮৮৯ সালে রোজা সুইজারল্যান্ডে পাড়ি জমান। চেয়েছিলেন পড়াশোনা শেষ করতে, একই সঙ্গে রাশিয়ার পুলিশের কাছ থেকে পালিয়ে বাঁচতে। ইউনিভার্সিটি অব জুরিখে পড়াকালে তাঁর পরিচয় ও প্রেম হয় লিও ইয়োগিশেসের সঙ্গে। লিও নিজেও ছিলেন রোজার মতো বিপ্লবী। সেই সময়ের পোলিশ সোশ্যালিস্ট পার্টি ও অন্যান্য জাতীয় নীতিমালার সমালোচনা করতে বন্ধু জুলিয়ান মার্শলিউস্কিকে সঙ্গে নিয়ে তাঁরা একটি পত্রিকা প্রকাশ করতেন। লিও ও রোজা মিলে তাঁদের প্রতিষ্ঠিত সোশ্যাল ডেমোক্রেসি অব দ্য কিংডম অব পোল্যান্ড অ্যান্ড লিথুয়ানিয়া পার্টির নেতৃত্ব দিতেন।
ডক্টরেট ডিগ্রি লাভের পর রোজাকে জার্মানির শ্রমিকশ্রেণির আন্দোলন ভাবিয়ে তোলে এবং ১৮৯৬ সালে বার্লিনে স্থায়ী হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যাপারটি সহজ ছিল না বলে এক প্রকারবাধ্য হয়ে এক জার্মান নাগরিককে বিয়ে করেছিলেন রোজা। আবার পাঁচ বছর আদালতে দৌড়ঝাঁপ করে বিচ্ছেদও করে ফেলেছিলেন। তখনো লিও তাঁর পাশে ছিলেন। নারী আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী ক্লারা জেটকিনের সঙ্গে বেশ সখ্য ছিল রোজার। আমৃত্যু বন্ধু ছিলেন তাঁরা। মার্ক্সবাদী বিপ্লবে রোজার পাশে সব সময় থেকেছেন ক্লারা।
আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক ব্যুরোর সদস্য হয়ে ১৯০৪ সালে ‘কংগ্রেস অব দ্য সেকেন্ড ইন্টারন্যাশনাল’-এ যোগ দেন রোজা। কংগ্রেসে দেওয়া তাঁর ভাষণে সম্রাট উইলহেম-২-কে অপমান করার দায়ে তাঁকে তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কারাভোগের সময় থেকে রোজা লেখালেখি শুরু করেন। তিনি সোনিয়া লিবনেখট নামে জার্মান সোশ্যালিস্ট ও নারীবাদী এক তরুণীকে চিঠি লিখতেন। সেই সব চিঠি পৌঁছে যেত তরুণ বিপ্লবীদের উৎসাহ দিতে।
১৯০৫ সালে রাশিয়ার গণজাগরণের সময় লুক্সেমবার্গ ওয়ারশ শহরে ফিরে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে যোগ দেন এবং কারাবরণ করেন। এরপর বার্লিনে ফিরে এলে তাঁর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে লিওর। পরে ক্লারার ছেলে কোস্টা জেটকিনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।
শত্রুদের কাছে ‘ব্লাডি রোজা’ বা ‘রেড রোজা’ নামে পরিচিত লুক্সেমবার্গ বিরোধিতা করেছিলেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধেরও। শেষে ১৯১৯ সালে তাঁকে হত্যা করা হয়।
মৃত্যুর আগে রোজা শেষবারের মতো লিখেছিলেন, ‘আগামীকাল বিপ্লব তার শিখরে পৌঁছাবে এবং তোমার বুকে ভয়ের কাঁপুনি ধরিয়ে তা ঘোষণা করবে বিজয়ের বাণী—আমি ছিলাম, আছি, থাকব।’
সত্যিই এই নারী এখনো বিপ্লবীদের মাঝে বেঁচে আছেন।
সূত্র: ব্রিটানিকা, মার্ক্সিস্ট ডট ওআরজি, রোজালাক্স ডট ডি, জিউয়িস উইমেন’স আর্কাইভ
মৃত্যুদণ্ড দিয়ে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করা যায়, এমন প্রমাণাদি নেই বলে মন্তব্য করেছেন ব্লাস্টের (বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট) নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে লিঙ্গভিত্তিক...
২ দিন আগেশিশুদের সাইকোলজি আগে বুঝতে হবে—যতটা সরলীকরণ করা যায়। পরের পাতায় কী আছে, এ রকম একটা কৌতূহল রাখি। রংটা খুব উজ্জ্বল থাকে। সামাজিক সচেতনতা বাড়ায়, চিন্তার বিকাশ ঘটায়—এমন কাজ করি। চরিত্রদের এক্সপ্রেশনে ব্যাপক ফান থাকতে হবে।
৩ দিন আগে‘বাংলাদেশের মেয়েরা সুযোগ পেলে সকলেই হিমালয় জয় করতে পারে।’ নিজেদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে এমন কথাই জানিয়েছেন পাঁচ নারী পর্বতারোহী। ‘সুলতানার স্বপ্ন অবারিত: তরুণীর অগ্রযাত্রা’ বিষয়ে এক আলাপচারিতায় এ কথা বলেন তাঁরা। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি অভিজ্ঞতা বিনিময় অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তাঁরা
৩ দিন আগেআমার লেখার ক্ষেত্রে কোনো বিষয়ের প্রতি আগ্রহ কিংবা স্বতঃস্ফূর্ততাকে প্রাধান্য দিই। শব্দ আমার কাছে স্রোতস্বিনী নদীর মতো। আমি অনেকের লেখা পড়ি। তবে বাংলাদেশের জনপ্রিয় থ্রিলার লেখক মোহাম্মদ নাজিমুদ্দিন ভাইয়ের থ্রিলার ভাবনার আড্ডাগুলো থ্রিলার লেখার ক্ষেত্রে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আমি তাঁর লেখার ভক্ত।
১০ দিন আগে