প্রমিতি কিবরিয়া ইসলাম

বাংলাদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোতে পুরুষদের নারীর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মানের অভাব একটি গুরুতর সমস্যা। যদিও বাংলাদেশের সংবিধান নারীদের সমান অধিকার দেয় এবং নারীশিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচুর আইন ও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে বাস্তবে সমাজ ও রাষ্ট্রের অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণমূলক ভূমিকায় নারীকে এখনো কম গুরুত্ব দেওয়া হয়। পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব, পারিবারিক কাঠামো, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং অর্থনৈতিক অবস্থা—এসব মিলিয়ে বাংলাদেশের পুরুষেরা নারীকে অনেক সময় একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে, যেখানে নারীর স্বাধীনতা, ক্ষমতায়ন এবং আত্মবিশ্বাসকে উপেক্ষা করা হয়।
পুরুষদের মধ্যে কেন নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন না করার মনোভাব দেখা যায়? এর উত্তরটি সহজ নয়। এটি শুধু ব্যক্তিগত মানসিকতার সমস্যা নয়, বরং এটি বৃহত্তর সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে গড়ে ওঠা একটি জটিল বিষয়। বাংলাদেশে নারীর অবস্থান, তার অধিকার, তার স্বাধীনতা এবং সম্মান—এসব বিষয় পারস্পরিক সম্পর্কিত। নারীকে দমিয়ে রাখা, পুরুষদের অধীনস্থ বা নিচু অবস্থানে রাখার প্রবণতা— এটি শুধু বাংলাদেশেই বিদ্যমান তা নয়, কম বেশি সব দেশেই দেখা যায়।
যেকোনো সম্পর্কের একটি মৌলিক দিক হলো—পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মান। তবে প্রাপ্য সম্মান (শুধু মৌখিক প্রশংসা নয়) পাওয়ার ক্ষেত্রে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন নারীরা। এটি ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে শুরু করে পেশাগত পরিবেশেও হতে পারে।
সচেতনতার অভাব
পুরুষেরা সাধারণত নারীদের প্রতি সম্মান দেখানোর বিষয়টি আলাদা করে ভাবেন না বা গুরুত্ব দেন না। পুরুষেরা ঠিকই একে অপরের সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করতে জানে, যেমন: বন্ধু বা সহকর্মীদের সঙ্গে। কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে কেন ব্যতিক্রম? এর একটি সরল ব্যাখ্যা হতে পারে, হয় তারা বিপরীত লিঙ্গকে সম্মান দিতে জানে না, অথবা সমান যোগ্য বিবেচনায় সেটি ভেবেই দেখে না। এটি এক ধরনের অবহেলা বা উপেক্ষা হতে পারে।
পুরুষেরা জানে কীভাবে একে অপরের সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করতে হয়, তা সে সামাজিক পরিবেশে হোক, কর্মক্ষেত্রে হোক বা প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতিতে হোক। অজুহাত হিসেবে পুরুষেরা যদি দাবি করে যে, তারা কখনো নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন নিয়ে ভাবেনি বা জানে না, তাহলে তারা আসলে নারীদের প্রতি তাদের আচরণ, সম্পর্কে ক্ষেত্রে সমান না ভাবা এবং সাধারণত নারী–পুরুষ সম্পর্কের ভেতরে যে বৈষম্য বিদ্যমান, তা নিয়ে চিন্তা বা আত্মসমালোচনা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না। এই প্রতিক্রিয়া একটি সমাজের অবচেতন নৈতিক চর্চার প্রতিফলন, যেখানে নারীদের প্রতি সম্মান প্রত্যাশিত বা প্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত হয় না।
নারী ও পুরুষের কাজ আলাদা
নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন বা দায়িত্ব এড়ানোর জন্য পুরুষদের আরেকটি সাধারণ কৌশল হলো নারীদের প্রশংসা করা! যেমন: নারীরা এসব কাজে অনেক ভালো। এটি বিশেষ করে গৃহস্থালির কাজ (রান্না, সূচিকর্ম, ঘর গোছানো ইত্যাদি), সন্তান লালন–পালন এবং আবেগ সম্পর্কিত কাজে। সমাজে ছেলেদের আবেগবর্জিত কঠোর বাস্তবতার শিক্ষা দেওয়ার চল রয়েছে। সে ক্ষেত্রে নারীদের আবেগী, কোমল হৃদয়ের বলে ধারণা প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এ ধরনের বাহানা আসলে সূক্ষ্মভাবে ঐতিহ্যগত লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকাকেই শক্তিশালী করে।
পুরুষেরা বলে, নারীরা শিশুদের দেখাশোনায় তাদের চেয়ে ভালো। আপাতদৃষ্টিতে এটিকে নারীর প্রতি অকুণ্ঠ প্রশংসা বলেই মনে হতে পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এখানে যা ঘটছে, তা হলো এক ধরনের চালাকি—প্রশংসার ছদ্মবেশে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া।
কাউকে নিয়ন্ত্রণ বা বশীভূত করে রাখার একটি মোক্ষম কৌশল হিসেবে সাধারণত ক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠী সম্পর্কে কর্তৃত্ববাদীরা নিজস্ব ধারণা প্রচার করে। ওই জনগোষ্ঠীর আচরণ, মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠার ভান করে। ঠিক একই ভাবে পুরুষেরাও হয় নারীদের সম্পর্কে নিজেদের ধারণাকেই প্রতিষ্ঠিত করতে চায় অথবা নারীদের বুঝতে অক্ষমতার দোহাই দেয়।
কখনো কখনো প্রশংসাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে কৌশলে কাউকে নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাবিত করা হয়। প্রকৃত প্রশংসা থেকে এটি আলাদা। কারণ এটি সাধারণত কাউকে প্রভাবিত করার জন্য ব্যবহার করা হয়, যাতে তারা এমনভাবে কাজ করে যা প্রশংসাকারী ব্যক্তি কোনো না কোনোভাবে লাভবান হয়। এটা এমন এক ধরনের প্রশংসা যা খুব সূক্ষ্মভাবে কাজ করে এবং যার ফলে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি নিজেকে বিশেষ, প্রশংসিত বা স্বীকৃত বলে ভাবতে পারে। তার অজান্তেই এর মাধ্যমে প্রশংসাকারী ব্যক্তি গোপন উদ্দেশ্য হাসিল করে।
এই কৌশলটি শুধু নারীদের ওপর দায়িত্বের বোঝা চাপায় না, বরং তাদের সময় ও শক্তি মূল্যহীন করে তোলে। পরিবর্তে, এই কৌশল ব্যবহার করে নির্দিষ্ট কর্মকাণ্ডগুলোতে পুরুষের অংশগ্রহণ না থাকাকে যুক্তিসংগত করে তোলা হয়। পুরুষেরা দায়িত্ব নেওয়ার পরিবর্তে, নারীদের ওপর আরও দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়।
শর্তসাপেক্ষে সম্মান
কিছু পুরুষ শুধু তখনই নারীদের সম্মান করবে যখন তাদের মা বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ (কর্মস্থল ইত্যাদি) বলবে যে, তাদের এটি করা উচিত। এই ধরনের সম্মানের মধ্যে কোনো আন্তরিকতা থাকে না। বরং পরিণতির ভয় থেকে করা হয়।
সমাজে সাধারণত, নারীদের সম্মান করতে শেখানো হয় ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক বা নৈতিক বাধ্যবাধকতা থেকে। অর্থাৎ, পুরুষদের ওপর সামাজিক বা পারিবারিক চাপ থাকে, এর সঙ্গে নারীর মর্যাদা অনুধাবনের কোনো সম্পর্ক নেই। এর ফলে, তাদের মুখের কথা এবং কাজে বড় ধরনের পার্থক্য তৈরি হয়। নারীদের সম্মান করে বলে দাবি করলেও, তাদের আচরণে সব সময় তা প্রকাশ পায় না। তারা মূলত শাস্তি (আইনগত) বা বিচার (পাবলিক জাজমেন্ট) এড়ানোর জন্য সামাজিক চর্চা মেনে চলে মাত্র। তারা সমতা এবং সম্মানের গুরুত্বকে মানসিকভাবে গভীর ও অর্থপূর্ণভাবে মেনে নিতে ব্যর্থ হয়।
ঐতিহাসিক অস্বীকৃতি এবং সমাজের অবজ্ঞা
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হলো, পুরুষদের বর্তমান লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা এবং সামাজিক প্রত্যাশার পরিবর্তনকে অস্বীকার করা। কিছু পুরুষ এখনো বিশ্বাস করে যে, নারীদের সম্মান করার প্রয়োজন নেই বা লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে যে পরিবর্তনগুলো ঘটছে, তা অতিরঞ্জিত বা নারীদের জন্য অপ্রাসঙ্গিক। যখন নারীদের সমান করে দেখার প্রয়োজনীয়তার কথা তোলা হয়, তখন তারা প্রায়ই নারীদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঐতিহাসিক বাস্তবতাকে খাটো করে দেখে অথবা নারীর প্রতি অসম্মানকে সমাজের একটি সমস্যা হিসেবেও অগ্রাহ্য করে।
নারীদের অধিকার অর্জনের সংগ্রামের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে অস্বীকৃতির বিষয়টি বোঝার জন্য, নিম্নলিখিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইনগত মাইলফলকগুলোর সময়রেখা বিবেচনা করা যেতে পারে—
১৮৪৮–সেনেকা ফলস কনভেনশন: প্রথম নারীদের অধিকার সম্মেলন, যেখানে নারীদের ভোটাধিকার এবং সমান অধিকার দাবি করা হয়।
১৯১৯–আমেরিকার সংবিধানের ১৯তম সংশোধনী: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের ভোটাধিকার অর্জন।
১৯৪৫–জাতিসংঘের মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র: নারী ও পুরুষের সমান অধিকার জাতিসংঘের সনদে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
১৯৬৩–যুক্তরাষ্ট্র: নারী-পুরুষের সমান বেতন দেওয়ার আইন পাস হয়।
১৯৭২–যুক্তরাষ্ট্র: শিক্ষা এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য নিষিদ্ধ করা হয়।
১৯৭৫–জাতিসংঘের নারীদের প্রতি বৈষম্য বিলোপ সনদ: নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি গৃহীত হয়।
২০১০–আইসিডব্লিউআর (সিইডিএডব্লিউ): নারী অধিকারের জন্য বৈশ্বিক সংবিধান, যা জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোকে নারীদের বিরুদ্ধে সব ধরনের বৈষম্য দূর করতে বাধ্য করে।
এই মাইলফলকগুলো নারীদের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অধিকার অর্জনে অসংখ্য সংগ্রামের ফলস্বরূপ, যা বর্তমানে সমাজে নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের প্রয়োজনীয়তা প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে, কিছু পুরুষ এখনো এসব পরিবর্তনকে অস্বীকার করে, যা এই সংগ্রামের অগ্রগতি এবং নারীদের অধিকার সম্পর্কে তাদের গভীরভাবে অবহিত না হওয়ারই ইঙ্গিত।
এই আইনগত অগ্রগতির পরেও, অনেক পুরুষ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে স্বীকার করতে চায় না। নিপীড়নের বিরুদ্ধে নারীদের দীর্ঘ সংগ্রামের ফলে সাধিত পরিবর্তনগুলোকে অস্বীকার বা হালকা করে দেখিয়ে, পুরুষেরা তাদের নিজেদের দায় এড়িয়ে যেতে চায়।
এ ধরনের অস্বীকৃতি পুরুষদের যে সুবিধা দেয়—
পিতৃতান্ত্রিকতার ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক ভিত্তি
নারীদের সম্মান করতে পুরুষদের মনে যে বাধা, তার অন্যতম প্রধান কারণ হলো—পিতৃতান্ত্রিকতার ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক ভিত্তি। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, পৃথিবীর বিভিন্ন সমাজে পুরুষদের ক্ষমতার উচ্চস্থানে বসিয়ে, নারীদের অধিকার অস্বীকার করা হয়েছে। প্রাচীন সভ্যতা থেকে শুরু করে আধুনিক প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত আইন, ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় অনুশাসনে পুরুষদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত ছিল।
সামাজিকীকরণ: লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা
ছোটবেলা থেকে ছেলে-মেয়েদের কঠোর লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা অনুসরণ করতে শেখানো হয়, যা ছেলেদের আধিপত্যশীল, প্রতিযোগিতামূলক এবং আবেগহীন হতে উদ্বুদ্ধ করে—যা সাধারণত ‘প্রথাগত পৌরুষ’–এর সঙ্গে সম্পর্কিত। অন্যদিকে, মেয়েদের কোমল এবং সহানুভূতিশীল হতে উৎসাহিত করা হয়। মনোবিজ্ঞানী মাইকেল কিমেল তাঁর বই ম্যানহুড ইন আমেরিকা–তে যুক্তি দেন, এই লিঙ্গভিত্তিক প্রত্যাশাগুলো পুরুষদের ওপর একটি বিশাল চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে তারা এমন পুরুষত্বের মডেল অনুসরণ করে যা নারীদের দুর্বল বা অক্ষম হিসেবে দেখায়।
এই ধরনের লিঙ্গভিত্তিক নিদর্শনগুলো মিডিয়া, বিজ্ঞাপন এবং এমনকি পরিবারের মধ্যে প্রচারিত হয়, যা নারীদের কম সম্মানযোগ্য করে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, ‘আলফা মেল’ নামে এমন এক পুরুষের ধারণা দেওয়া, যে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে, নিয়ন্ত্রণ দাবি করে এবং অন্যদের, বিশেষত নারীদের, স্বাধীনতা সংকুচিত করে। এই সাংস্কৃতিক মডেল অনেক পুরুষের মধ্যে গভীরভাবে প্রোথিত, যা তাদের নারীদের সমান হিসেবে সম্মান করতে বাধা দেয়।
ক্ষমতা এবং বিশেষাধিকার হারানোর ভয়
নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন না করার আরেকটি কারণ হলো, পুরুষদের ক্ষমতা হারানোর ভয়। পিতৃতান্ত্রিক সমাজে পুরুষেরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অধিকাংশ সুবিধা ভোগ করে। লিঙ্গ সমতার আন্দোলনের উত্থান এই ক্ষমতার কাঠামোকে হুমকির মুখে ফেলেছে, যার ফলে কিছু পুরুষ পরিবর্তন প্রতিরোধ করে। এই ভয় বিভিন্ন আচরণে প্রতিফলিত হয়, যেমন ম্যানস্প্লেনিং (পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি), গ্যাসলাইটিং, অথবা সরাসরি আক্রমণ, যা আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে করা হয়।
মনস্তাত্ত্বিক কারণ: নিরাপত্তাহীনতা এবং আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার অভাব
কিছু ক্ষেত্রে পুরুষদের নারীর প্রতি সম্মান দেখাতে না পারার পেছনে গভীর মনস্তাত্ত্বিক কারণ থাকতে পারে। যেমন: নিরাপত্তাহীনতা অথবা আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার (ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স) অভাব। অনেক পুরুষকে আবেগ বা মানবিক দুর্বলতা দমন করতে শেখানো হয়, যার ফলে তারা সম্পর্কের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান এবং সহানুভূতির ভিত্তিতে চলতে অক্ষম। এই আবেগ শূন্যতা নারীদের প্রতি অসম্মানজনক আচরণের মধ্যে প্রকাশ পেতে পারে, কারণ তারা নিজেদের অক্ষমতা বা হুমকির সম্মুখীন হলে নিরাপত্তাহীনতা থেকে নিয়ন্ত্রণ বা আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে পারে।
মিসোজিনি এবং অধিকারবোধ
নারীদের সম্মান করতে পুরুষদের যে সমস্যা, তার মূল কারণ হলো মিসোজিনি বা নারীদের প্রতি ঘৃণা বা সংস্কার। মিসোজিনি শুধু প্রকাশ্য ঘৃণার বিষয় নয়, এটি আরও সূক্ষ্মভাবে প্রকাশ পেতে পারে, যেমন নারীদের অর্জনকে তুচ্ছ করা, তাদের অবজ্ঞা করা।
আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন (এপিএ)–এর গবেষণা দেখিয়েছে, যারা মিসোজিনিস্টিক দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করে, তারা নারীদের কম সক্ষম, কম অধিকারের যোগ্য এবং তাদের ওপর ঘটে যাওয়া নির্যাতনের জন্য নিজেরাই দায়ী বলে মনে করে। কারণ পুরুষদের মনোভাব হলো, নারীর ওপর তাদের কিছু বিশেষাধিকার রয়েছে। কর্মক্ষেত্র, সম্পর্ক বা সামাজিক জীবনে তারা এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে।

বাংলাদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোতে পুরুষদের নারীর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মানের অভাব একটি গুরুতর সমস্যা। যদিও বাংলাদেশের সংবিধান নারীদের সমান অধিকার দেয় এবং নারীশিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচুর আইন ও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে বাস্তবে সমাজ ও রাষ্ট্রের অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণমূলক ভূমিকায় নারীকে এখনো কম গুরুত্ব দেওয়া হয়। পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব, পারিবারিক কাঠামো, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং অর্থনৈতিক অবস্থা—এসব মিলিয়ে বাংলাদেশের পুরুষেরা নারীকে অনেক সময় একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে, যেখানে নারীর স্বাধীনতা, ক্ষমতায়ন এবং আত্মবিশ্বাসকে উপেক্ষা করা হয়।
পুরুষদের মধ্যে কেন নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন না করার মনোভাব দেখা যায়? এর উত্তরটি সহজ নয়। এটি শুধু ব্যক্তিগত মানসিকতার সমস্যা নয়, বরং এটি বৃহত্তর সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে গড়ে ওঠা একটি জটিল বিষয়। বাংলাদেশে নারীর অবস্থান, তার অধিকার, তার স্বাধীনতা এবং সম্মান—এসব বিষয় পারস্পরিক সম্পর্কিত। নারীকে দমিয়ে রাখা, পুরুষদের অধীনস্থ বা নিচু অবস্থানে রাখার প্রবণতা— এটি শুধু বাংলাদেশেই বিদ্যমান তা নয়, কম বেশি সব দেশেই দেখা যায়।
যেকোনো সম্পর্কের একটি মৌলিক দিক হলো—পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মান। তবে প্রাপ্য সম্মান (শুধু মৌখিক প্রশংসা নয়) পাওয়ার ক্ষেত্রে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন নারীরা। এটি ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে শুরু করে পেশাগত পরিবেশেও হতে পারে।
সচেতনতার অভাব
পুরুষেরা সাধারণত নারীদের প্রতি সম্মান দেখানোর বিষয়টি আলাদা করে ভাবেন না বা গুরুত্ব দেন না। পুরুষেরা ঠিকই একে অপরের সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করতে জানে, যেমন: বন্ধু বা সহকর্মীদের সঙ্গে। কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে কেন ব্যতিক্রম? এর একটি সরল ব্যাখ্যা হতে পারে, হয় তারা বিপরীত লিঙ্গকে সম্মান দিতে জানে না, অথবা সমান যোগ্য বিবেচনায় সেটি ভেবেই দেখে না। এটি এক ধরনের অবহেলা বা উপেক্ষা হতে পারে।
পুরুষেরা জানে কীভাবে একে অপরের সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করতে হয়, তা সে সামাজিক পরিবেশে হোক, কর্মক্ষেত্রে হোক বা প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতিতে হোক। অজুহাত হিসেবে পুরুষেরা যদি দাবি করে যে, তারা কখনো নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন নিয়ে ভাবেনি বা জানে না, তাহলে তারা আসলে নারীদের প্রতি তাদের আচরণ, সম্পর্কে ক্ষেত্রে সমান না ভাবা এবং সাধারণত নারী–পুরুষ সম্পর্কের ভেতরে যে বৈষম্য বিদ্যমান, তা নিয়ে চিন্তা বা আত্মসমালোচনা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না। এই প্রতিক্রিয়া একটি সমাজের অবচেতন নৈতিক চর্চার প্রতিফলন, যেখানে নারীদের প্রতি সম্মান প্রত্যাশিত বা প্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত হয় না।
নারী ও পুরুষের কাজ আলাদা
নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন বা দায়িত্ব এড়ানোর জন্য পুরুষদের আরেকটি সাধারণ কৌশল হলো নারীদের প্রশংসা করা! যেমন: নারীরা এসব কাজে অনেক ভালো। এটি বিশেষ করে গৃহস্থালির কাজ (রান্না, সূচিকর্ম, ঘর গোছানো ইত্যাদি), সন্তান লালন–পালন এবং আবেগ সম্পর্কিত কাজে। সমাজে ছেলেদের আবেগবর্জিত কঠোর বাস্তবতার শিক্ষা দেওয়ার চল রয়েছে। সে ক্ষেত্রে নারীদের আবেগী, কোমল হৃদয়ের বলে ধারণা প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এ ধরনের বাহানা আসলে সূক্ষ্মভাবে ঐতিহ্যগত লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকাকেই শক্তিশালী করে।
পুরুষেরা বলে, নারীরা শিশুদের দেখাশোনায় তাদের চেয়ে ভালো। আপাতদৃষ্টিতে এটিকে নারীর প্রতি অকুণ্ঠ প্রশংসা বলেই মনে হতে পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এখানে যা ঘটছে, তা হলো এক ধরনের চালাকি—প্রশংসার ছদ্মবেশে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া।
কাউকে নিয়ন্ত্রণ বা বশীভূত করে রাখার একটি মোক্ষম কৌশল হিসেবে সাধারণত ক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠী সম্পর্কে কর্তৃত্ববাদীরা নিজস্ব ধারণা প্রচার করে। ওই জনগোষ্ঠীর আচরণ, মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠার ভান করে। ঠিক একই ভাবে পুরুষেরাও হয় নারীদের সম্পর্কে নিজেদের ধারণাকেই প্রতিষ্ঠিত করতে চায় অথবা নারীদের বুঝতে অক্ষমতার দোহাই দেয়।
কখনো কখনো প্রশংসাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে কৌশলে কাউকে নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাবিত করা হয়। প্রকৃত প্রশংসা থেকে এটি আলাদা। কারণ এটি সাধারণত কাউকে প্রভাবিত করার জন্য ব্যবহার করা হয়, যাতে তারা এমনভাবে কাজ করে যা প্রশংসাকারী ব্যক্তি কোনো না কোনোভাবে লাভবান হয়। এটা এমন এক ধরনের প্রশংসা যা খুব সূক্ষ্মভাবে কাজ করে এবং যার ফলে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি নিজেকে বিশেষ, প্রশংসিত বা স্বীকৃত বলে ভাবতে পারে। তার অজান্তেই এর মাধ্যমে প্রশংসাকারী ব্যক্তি গোপন উদ্দেশ্য হাসিল করে।
এই কৌশলটি শুধু নারীদের ওপর দায়িত্বের বোঝা চাপায় না, বরং তাদের সময় ও শক্তি মূল্যহীন করে তোলে। পরিবর্তে, এই কৌশল ব্যবহার করে নির্দিষ্ট কর্মকাণ্ডগুলোতে পুরুষের অংশগ্রহণ না থাকাকে যুক্তিসংগত করে তোলা হয়। পুরুষেরা দায়িত্ব নেওয়ার পরিবর্তে, নারীদের ওপর আরও দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়।
শর্তসাপেক্ষে সম্মান
কিছু পুরুষ শুধু তখনই নারীদের সম্মান করবে যখন তাদের মা বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ (কর্মস্থল ইত্যাদি) বলবে যে, তাদের এটি করা উচিত। এই ধরনের সম্মানের মধ্যে কোনো আন্তরিকতা থাকে না। বরং পরিণতির ভয় থেকে করা হয়।
সমাজে সাধারণত, নারীদের সম্মান করতে শেখানো হয় ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক বা নৈতিক বাধ্যবাধকতা থেকে। অর্থাৎ, পুরুষদের ওপর সামাজিক বা পারিবারিক চাপ থাকে, এর সঙ্গে নারীর মর্যাদা অনুধাবনের কোনো সম্পর্ক নেই। এর ফলে, তাদের মুখের কথা এবং কাজে বড় ধরনের পার্থক্য তৈরি হয়। নারীদের সম্মান করে বলে দাবি করলেও, তাদের আচরণে সব সময় তা প্রকাশ পায় না। তারা মূলত শাস্তি (আইনগত) বা বিচার (পাবলিক জাজমেন্ট) এড়ানোর জন্য সামাজিক চর্চা মেনে চলে মাত্র। তারা সমতা এবং সম্মানের গুরুত্বকে মানসিকভাবে গভীর ও অর্থপূর্ণভাবে মেনে নিতে ব্যর্থ হয়।
ঐতিহাসিক অস্বীকৃতি এবং সমাজের অবজ্ঞা
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হলো, পুরুষদের বর্তমান লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা এবং সামাজিক প্রত্যাশার পরিবর্তনকে অস্বীকার করা। কিছু পুরুষ এখনো বিশ্বাস করে যে, নারীদের সম্মান করার প্রয়োজন নেই বা লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে যে পরিবর্তনগুলো ঘটছে, তা অতিরঞ্জিত বা নারীদের জন্য অপ্রাসঙ্গিক। যখন নারীদের সমান করে দেখার প্রয়োজনীয়তার কথা তোলা হয়, তখন তারা প্রায়ই নারীদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঐতিহাসিক বাস্তবতাকে খাটো করে দেখে অথবা নারীর প্রতি অসম্মানকে সমাজের একটি সমস্যা হিসেবেও অগ্রাহ্য করে।
নারীদের অধিকার অর্জনের সংগ্রামের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে অস্বীকৃতির বিষয়টি বোঝার জন্য, নিম্নলিখিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইনগত মাইলফলকগুলোর সময়রেখা বিবেচনা করা যেতে পারে—
১৮৪৮–সেনেকা ফলস কনভেনশন: প্রথম নারীদের অধিকার সম্মেলন, যেখানে নারীদের ভোটাধিকার এবং সমান অধিকার দাবি করা হয়।
১৯১৯–আমেরিকার সংবিধানের ১৯তম সংশোধনী: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের ভোটাধিকার অর্জন।
১৯৪৫–জাতিসংঘের মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র: নারী ও পুরুষের সমান অধিকার জাতিসংঘের সনদে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
১৯৬৩–যুক্তরাষ্ট্র: নারী-পুরুষের সমান বেতন দেওয়ার আইন পাস হয়।
১৯৭২–যুক্তরাষ্ট্র: শিক্ষা এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য নিষিদ্ধ করা হয়।
১৯৭৫–জাতিসংঘের নারীদের প্রতি বৈষম্য বিলোপ সনদ: নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি গৃহীত হয়।
২০১০–আইসিডব্লিউআর (সিইডিএডব্লিউ): নারী অধিকারের জন্য বৈশ্বিক সংবিধান, যা জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোকে নারীদের বিরুদ্ধে সব ধরনের বৈষম্য দূর করতে বাধ্য করে।
এই মাইলফলকগুলো নারীদের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অধিকার অর্জনে অসংখ্য সংগ্রামের ফলস্বরূপ, যা বর্তমানে সমাজে নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের প্রয়োজনীয়তা প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে, কিছু পুরুষ এখনো এসব পরিবর্তনকে অস্বীকার করে, যা এই সংগ্রামের অগ্রগতি এবং নারীদের অধিকার সম্পর্কে তাদের গভীরভাবে অবহিত না হওয়ারই ইঙ্গিত।
এই আইনগত অগ্রগতির পরেও, অনেক পুরুষ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে স্বীকার করতে চায় না। নিপীড়নের বিরুদ্ধে নারীদের দীর্ঘ সংগ্রামের ফলে সাধিত পরিবর্তনগুলোকে অস্বীকার বা হালকা করে দেখিয়ে, পুরুষেরা তাদের নিজেদের দায় এড়িয়ে যেতে চায়।
এ ধরনের অস্বীকৃতি পুরুষদের যে সুবিধা দেয়—
পিতৃতান্ত্রিকতার ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক ভিত্তি
নারীদের সম্মান করতে পুরুষদের মনে যে বাধা, তার অন্যতম প্রধান কারণ হলো—পিতৃতান্ত্রিকতার ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক ভিত্তি। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, পৃথিবীর বিভিন্ন সমাজে পুরুষদের ক্ষমতার উচ্চস্থানে বসিয়ে, নারীদের অধিকার অস্বীকার করা হয়েছে। প্রাচীন সভ্যতা থেকে শুরু করে আধুনিক প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত আইন, ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় অনুশাসনে পুরুষদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত ছিল।
সামাজিকীকরণ: লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা
ছোটবেলা থেকে ছেলে-মেয়েদের কঠোর লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা অনুসরণ করতে শেখানো হয়, যা ছেলেদের আধিপত্যশীল, প্রতিযোগিতামূলক এবং আবেগহীন হতে উদ্বুদ্ধ করে—যা সাধারণত ‘প্রথাগত পৌরুষ’–এর সঙ্গে সম্পর্কিত। অন্যদিকে, মেয়েদের কোমল এবং সহানুভূতিশীল হতে উৎসাহিত করা হয়। মনোবিজ্ঞানী মাইকেল কিমেল তাঁর বই ম্যানহুড ইন আমেরিকা–তে যুক্তি দেন, এই লিঙ্গভিত্তিক প্রত্যাশাগুলো পুরুষদের ওপর একটি বিশাল চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে তারা এমন পুরুষত্বের মডেল অনুসরণ করে যা নারীদের দুর্বল বা অক্ষম হিসেবে দেখায়।
এই ধরনের লিঙ্গভিত্তিক নিদর্শনগুলো মিডিয়া, বিজ্ঞাপন এবং এমনকি পরিবারের মধ্যে প্রচারিত হয়, যা নারীদের কম সম্মানযোগ্য করে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, ‘আলফা মেল’ নামে এমন এক পুরুষের ধারণা দেওয়া, যে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে, নিয়ন্ত্রণ দাবি করে এবং অন্যদের, বিশেষত নারীদের, স্বাধীনতা সংকুচিত করে। এই সাংস্কৃতিক মডেল অনেক পুরুষের মধ্যে গভীরভাবে প্রোথিত, যা তাদের নারীদের সমান হিসেবে সম্মান করতে বাধা দেয়।
ক্ষমতা এবং বিশেষাধিকার হারানোর ভয়
নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন না করার আরেকটি কারণ হলো, পুরুষদের ক্ষমতা হারানোর ভয়। পিতৃতান্ত্রিক সমাজে পুরুষেরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অধিকাংশ সুবিধা ভোগ করে। লিঙ্গ সমতার আন্দোলনের উত্থান এই ক্ষমতার কাঠামোকে হুমকির মুখে ফেলেছে, যার ফলে কিছু পুরুষ পরিবর্তন প্রতিরোধ করে। এই ভয় বিভিন্ন আচরণে প্রতিফলিত হয়, যেমন ম্যানস্প্লেনিং (পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি), গ্যাসলাইটিং, অথবা সরাসরি আক্রমণ, যা আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে করা হয়।
মনস্তাত্ত্বিক কারণ: নিরাপত্তাহীনতা এবং আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার অভাব
কিছু ক্ষেত্রে পুরুষদের নারীর প্রতি সম্মান দেখাতে না পারার পেছনে গভীর মনস্তাত্ত্বিক কারণ থাকতে পারে। যেমন: নিরাপত্তাহীনতা অথবা আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার (ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স) অভাব। অনেক পুরুষকে আবেগ বা মানবিক দুর্বলতা দমন করতে শেখানো হয়, যার ফলে তারা সম্পর্কের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান এবং সহানুভূতির ভিত্তিতে চলতে অক্ষম। এই আবেগ শূন্যতা নারীদের প্রতি অসম্মানজনক আচরণের মধ্যে প্রকাশ পেতে পারে, কারণ তারা নিজেদের অক্ষমতা বা হুমকির সম্মুখীন হলে নিরাপত্তাহীনতা থেকে নিয়ন্ত্রণ বা আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে পারে।
মিসোজিনি এবং অধিকারবোধ
নারীদের সম্মান করতে পুরুষদের যে সমস্যা, তার মূল কারণ হলো মিসোজিনি বা নারীদের প্রতি ঘৃণা বা সংস্কার। মিসোজিনি শুধু প্রকাশ্য ঘৃণার বিষয় নয়, এটি আরও সূক্ষ্মভাবে প্রকাশ পেতে পারে, যেমন নারীদের অর্জনকে তুচ্ছ করা, তাদের অবজ্ঞা করা।
আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন (এপিএ)–এর গবেষণা দেখিয়েছে, যারা মিসোজিনিস্টিক দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করে, তারা নারীদের কম সক্ষম, কম অধিকারের যোগ্য এবং তাদের ওপর ঘটে যাওয়া নির্যাতনের জন্য নিজেরাই দায়ী বলে মনে করে। কারণ পুরুষদের মনোভাব হলো, নারীর ওপর তাদের কিছু বিশেষাধিকার রয়েছে। কর্মক্ষেত্র, সম্পর্ক বা সামাজিক জীবনে তারা এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে।

প্রমিতি কিবরিয়া ইসলাম

বাংলাদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোতে পুরুষদের নারীর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মানের অভাব একটি গুরুতর সমস্যা। যদিও বাংলাদেশের সংবিধান নারীদের সমান অধিকার দেয় এবং নারীশিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচুর আইন ও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে বাস্তবে সমাজ ও রাষ্ট্রের অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণমূলক ভূমিকায় নারীকে এখনো কম গুরুত্ব দেওয়া হয়। পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব, পারিবারিক কাঠামো, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং অর্থনৈতিক অবস্থা—এসব মিলিয়ে বাংলাদেশের পুরুষেরা নারীকে অনেক সময় একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে, যেখানে নারীর স্বাধীনতা, ক্ষমতায়ন এবং আত্মবিশ্বাসকে উপেক্ষা করা হয়।
পুরুষদের মধ্যে কেন নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন না করার মনোভাব দেখা যায়? এর উত্তরটি সহজ নয়। এটি শুধু ব্যক্তিগত মানসিকতার সমস্যা নয়, বরং এটি বৃহত্তর সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে গড়ে ওঠা একটি জটিল বিষয়। বাংলাদেশে নারীর অবস্থান, তার অধিকার, তার স্বাধীনতা এবং সম্মান—এসব বিষয় পারস্পরিক সম্পর্কিত। নারীকে দমিয়ে রাখা, পুরুষদের অধীনস্থ বা নিচু অবস্থানে রাখার প্রবণতা— এটি শুধু বাংলাদেশেই বিদ্যমান তা নয়, কম বেশি সব দেশেই দেখা যায়।
যেকোনো সম্পর্কের একটি মৌলিক দিক হলো—পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মান। তবে প্রাপ্য সম্মান (শুধু মৌখিক প্রশংসা নয়) পাওয়ার ক্ষেত্রে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন নারীরা। এটি ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে শুরু করে পেশাগত পরিবেশেও হতে পারে।
সচেতনতার অভাব
পুরুষেরা সাধারণত নারীদের প্রতি সম্মান দেখানোর বিষয়টি আলাদা করে ভাবেন না বা গুরুত্ব দেন না। পুরুষেরা ঠিকই একে অপরের সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করতে জানে, যেমন: বন্ধু বা সহকর্মীদের সঙ্গে। কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে কেন ব্যতিক্রম? এর একটি সরল ব্যাখ্যা হতে পারে, হয় তারা বিপরীত লিঙ্গকে সম্মান দিতে জানে না, অথবা সমান যোগ্য বিবেচনায় সেটি ভেবেই দেখে না। এটি এক ধরনের অবহেলা বা উপেক্ষা হতে পারে।
পুরুষেরা জানে কীভাবে একে অপরের সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করতে হয়, তা সে সামাজিক পরিবেশে হোক, কর্মক্ষেত্রে হোক বা প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতিতে হোক। অজুহাত হিসেবে পুরুষেরা যদি দাবি করে যে, তারা কখনো নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন নিয়ে ভাবেনি বা জানে না, তাহলে তারা আসলে নারীদের প্রতি তাদের আচরণ, সম্পর্কে ক্ষেত্রে সমান না ভাবা এবং সাধারণত নারী–পুরুষ সম্পর্কের ভেতরে যে বৈষম্য বিদ্যমান, তা নিয়ে চিন্তা বা আত্মসমালোচনা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না। এই প্রতিক্রিয়া একটি সমাজের অবচেতন নৈতিক চর্চার প্রতিফলন, যেখানে নারীদের প্রতি সম্মান প্রত্যাশিত বা প্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত হয় না।
নারী ও পুরুষের কাজ আলাদা
নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন বা দায়িত্ব এড়ানোর জন্য পুরুষদের আরেকটি সাধারণ কৌশল হলো নারীদের প্রশংসা করা! যেমন: নারীরা এসব কাজে অনেক ভালো। এটি বিশেষ করে গৃহস্থালির কাজ (রান্না, সূচিকর্ম, ঘর গোছানো ইত্যাদি), সন্তান লালন–পালন এবং আবেগ সম্পর্কিত কাজে। সমাজে ছেলেদের আবেগবর্জিত কঠোর বাস্তবতার শিক্ষা দেওয়ার চল রয়েছে। সে ক্ষেত্রে নারীদের আবেগী, কোমল হৃদয়ের বলে ধারণা প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এ ধরনের বাহানা আসলে সূক্ষ্মভাবে ঐতিহ্যগত লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকাকেই শক্তিশালী করে।
পুরুষেরা বলে, নারীরা শিশুদের দেখাশোনায় তাদের চেয়ে ভালো। আপাতদৃষ্টিতে এটিকে নারীর প্রতি অকুণ্ঠ প্রশংসা বলেই মনে হতে পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এখানে যা ঘটছে, তা হলো এক ধরনের চালাকি—প্রশংসার ছদ্মবেশে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া।
কাউকে নিয়ন্ত্রণ বা বশীভূত করে রাখার একটি মোক্ষম কৌশল হিসেবে সাধারণত ক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠী সম্পর্কে কর্তৃত্ববাদীরা নিজস্ব ধারণা প্রচার করে। ওই জনগোষ্ঠীর আচরণ, মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠার ভান করে। ঠিক একই ভাবে পুরুষেরাও হয় নারীদের সম্পর্কে নিজেদের ধারণাকেই প্রতিষ্ঠিত করতে চায় অথবা নারীদের বুঝতে অক্ষমতার দোহাই দেয়।
কখনো কখনো প্রশংসাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে কৌশলে কাউকে নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাবিত করা হয়। প্রকৃত প্রশংসা থেকে এটি আলাদা। কারণ এটি সাধারণত কাউকে প্রভাবিত করার জন্য ব্যবহার করা হয়, যাতে তারা এমনভাবে কাজ করে যা প্রশংসাকারী ব্যক্তি কোনো না কোনোভাবে লাভবান হয়। এটা এমন এক ধরনের প্রশংসা যা খুব সূক্ষ্মভাবে কাজ করে এবং যার ফলে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি নিজেকে বিশেষ, প্রশংসিত বা স্বীকৃত বলে ভাবতে পারে। তার অজান্তেই এর মাধ্যমে প্রশংসাকারী ব্যক্তি গোপন উদ্দেশ্য হাসিল করে।
এই কৌশলটি শুধু নারীদের ওপর দায়িত্বের বোঝা চাপায় না, বরং তাদের সময় ও শক্তি মূল্যহীন করে তোলে। পরিবর্তে, এই কৌশল ব্যবহার করে নির্দিষ্ট কর্মকাণ্ডগুলোতে পুরুষের অংশগ্রহণ না থাকাকে যুক্তিসংগত করে তোলা হয়। পুরুষেরা দায়িত্ব নেওয়ার পরিবর্তে, নারীদের ওপর আরও দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়।
শর্তসাপেক্ষে সম্মান
কিছু পুরুষ শুধু তখনই নারীদের সম্মান করবে যখন তাদের মা বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ (কর্মস্থল ইত্যাদি) বলবে যে, তাদের এটি করা উচিত। এই ধরনের সম্মানের মধ্যে কোনো আন্তরিকতা থাকে না। বরং পরিণতির ভয় থেকে করা হয়।
সমাজে সাধারণত, নারীদের সম্মান করতে শেখানো হয় ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক বা নৈতিক বাধ্যবাধকতা থেকে। অর্থাৎ, পুরুষদের ওপর সামাজিক বা পারিবারিক চাপ থাকে, এর সঙ্গে নারীর মর্যাদা অনুধাবনের কোনো সম্পর্ক নেই। এর ফলে, তাদের মুখের কথা এবং কাজে বড় ধরনের পার্থক্য তৈরি হয়। নারীদের সম্মান করে বলে দাবি করলেও, তাদের আচরণে সব সময় তা প্রকাশ পায় না। তারা মূলত শাস্তি (আইনগত) বা বিচার (পাবলিক জাজমেন্ট) এড়ানোর জন্য সামাজিক চর্চা মেনে চলে মাত্র। তারা সমতা এবং সম্মানের গুরুত্বকে মানসিকভাবে গভীর ও অর্থপূর্ণভাবে মেনে নিতে ব্যর্থ হয়।
ঐতিহাসিক অস্বীকৃতি এবং সমাজের অবজ্ঞা
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হলো, পুরুষদের বর্তমান লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা এবং সামাজিক প্রত্যাশার পরিবর্তনকে অস্বীকার করা। কিছু পুরুষ এখনো বিশ্বাস করে যে, নারীদের সম্মান করার প্রয়োজন নেই বা লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে যে পরিবর্তনগুলো ঘটছে, তা অতিরঞ্জিত বা নারীদের জন্য অপ্রাসঙ্গিক। যখন নারীদের সমান করে দেখার প্রয়োজনীয়তার কথা তোলা হয়, তখন তারা প্রায়ই নারীদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঐতিহাসিক বাস্তবতাকে খাটো করে দেখে অথবা নারীর প্রতি অসম্মানকে সমাজের একটি সমস্যা হিসেবেও অগ্রাহ্য করে।
নারীদের অধিকার অর্জনের সংগ্রামের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে অস্বীকৃতির বিষয়টি বোঝার জন্য, নিম্নলিখিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইনগত মাইলফলকগুলোর সময়রেখা বিবেচনা করা যেতে পারে—
১৮৪৮–সেনেকা ফলস কনভেনশন: প্রথম নারীদের অধিকার সম্মেলন, যেখানে নারীদের ভোটাধিকার এবং সমান অধিকার দাবি করা হয়।
১৯১৯–আমেরিকার সংবিধানের ১৯তম সংশোধনী: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের ভোটাধিকার অর্জন।
১৯৪৫–জাতিসংঘের মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র: নারী ও পুরুষের সমান অধিকার জাতিসংঘের সনদে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
১৯৬৩–যুক্তরাষ্ট্র: নারী-পুরুষের সমান বেতন দেওয়ার আইন পাস হয়।
১৯৭২–যুক্তরাষ্ট্র: শিক্ষা এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য নিষিদ্ধ করা হয়।
১৯৭৫–জাতিসংঘের নারীদের প্রতি বৈষম্য বিলোপ সনদ: নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি গৃহীত হয়।
২০১০–আইসিডব্লিউআর (সিইডিএডব্লিউ): নারী অধিকারের জন্য বৈশ্বিক সংবিধান, যা জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোকে নারীদের বিরুদ্ধে সব ধরনের বৈষম্য দূর করতে বাধ্য করে।
এই মাইলফলকগুলো নারীদের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অধিকার অর্জনে অসংখ্য সংগ্রামের ফলস্বরূপ, যা বর্তমানে সমাজে নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের প্রয়োজনীয়তা প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে, কিছু পুরুষ এখনো এসব পরিবর্তনকে অস্বীকার করে, যা এই সংগ্রামের অগ্রগতি এবং নারীদের অধিকার সম্পর্কে তাদের গভীরভাবে অবহিত না হওয়ারই ইঙ্গিত।
এই আইনগত অগ্রগতির পরেও, অনেক পুরুষ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে স্বীকার করতে চায় না। নিপীড়নের বিরুদ্ধে নারীদের দীর্ঘ সংগ্রামের ফলে সাধিত পরিবর্তনগুলোকে অস্বীকার বা হালকা করে দেখিয়ে, পুরুষেরা তাদের নিজেদের দায় এড়িয়ে যেতে চায়।
এ ধরনের অস্বীকৃতি পুরুষদের যে সুবিধা দেয়—
পিতৃতান্ত্রিকতার ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক ভিত্তি
নারীদের সম্মান করতে পুরুষদের মনে যে বাধা, তার অন্যতম প্রধান কারণ হলো—পিতৃতান্ত্রিকতার ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক ভিত্তি। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, পৃথিবীর বিভিন্ন সমাজে পুরুষদের ক্ষমতার উচ্চস্থানে বসিয়ে, নারীদের অধিকার অস্বীকার করা হয়েছে। প্রাচীন সভ্যতা থেকে শুরু করে আধুনিক প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত আইন, ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় অনুশাসনে পুরুষদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত ছিল।
সামাজিকীকরণ: লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা
ছোটবেলা থেকে ছেলে-মেয়েদের কঠোর লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা অনুসরণ করতে শেখানো হয়, যা ছেলেদের আধিপত্যশীল, প্রতিযোগিতামূলক এবং আবেগহীন হতে উদ্বুদ্ধ করে—যা সাধারণত ‘প্রথাগত পৌরুষ’–এর সঙ্গে সম্পর্কিত। অন্যদিকে, মেয়েদের কোমল এবং সহানুভূতিশীল হতে উৎসাহিত করা হয়। মনোবিজ্ঞানী মাইকেল কিমেল তাঁর বই ম্যানহুড ইন আমেরিকা–তে যুক্তি দেন, এই লিঙ্গভিত্তিক প্রত্যাশাগুলো পুরুষদের ওপর একটি বিশাল চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে তারা এমন পুরুষত্বের মডেল অনুসরণ করে যা নারীদের দুর্বল বা অক্ষম হিসেবে দেখায়।
এই ধরনের লিঙ্গভিত্তিক নিদর্শনগুলো মিডিয়া, বিজ্ঞাপন এবং এমনকি পরিবারের মধ্যে প্রচারিত হয়, যা নারীদের কম সম্মানযোগ্য করে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, ‘আলফা মেল’ নামে এমন এক পুরুষের ধারণা দেওয়া, যে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে, নিয়ন্ত্রণ দাবি করে এবং অন্যদের, বিশেষত নারীদের, স্বাধীনতা সংকুচিত করে। এই সাংস্কৃতিক মডেল অনেক পুরুষের মধ্যে গভীরভাবে প্রোথিত, যা তাদের নারীদের সমান হিসেবে সম্মান করতে বাধা দেয়।
ক্ষমতা এবং বিশেষাধিকার হারানোর ভয়
নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন না করার আরেকটি কারণ হলো, পুরুষদের ক্ষমতা হারানোর ভয়। পিতৃতান্ত্রিক সমাজে পুরুষেরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অধিকাংশ সুবিধা ভোগ করে। লিঙ্গ সমতার আন্দোলনের উত্থান এই ক্ষমতার কাঠামোকে হুমকির মুখে ফেলেছে, যার ফলে কিছু পুরুষ পরিবর্তন প্রতিরোধ করে। এই ভয় বিভিন্ন আচরণে প্রতিফলিত হয়, যেমন ম্যানস্প্লেনিং (পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি), গ্যাসলাইটিং, অথবা সরাসরি আক্রমণ, যা আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে করা হয়।
মনস্তাত্ত্বিক কারণ: নিরাপত্তাহীনতা এবং আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার অভাব
কিছু ক্ষেত্রে পুরুষদের নারীর প্রতি সম্মান দেখাতে না পারার পেছনে গভীর মনস্তাত্ত্বিক কারণ থাকতে পারে। যেমন: নিরাপত্তাহীনতা অথবা আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার (ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স) অভাব। অনেক পুরুষকে আবেগ বা মানবিক দুর্বলতা দমন করতে শেখানো হয়, যার ফলে তারা সম্পর্কের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান এবং সহানুভূতির ভিত্তিতে চলতে অক্ষম। এই আবেগ শূন্যতা নারীদের প্রতি অসম্মানজনক আচরণের মধ্যে প্রকাশ পেতে পারে, কারণ তারা নিজেদের অক্ষমতা বা হুমকির সম্মুখীন হলে নিরাপত্তাহীনতা থেকে নিয়ন্ত্রণ বা আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে পারে।
মিসোজিনি এবং অধিকারবোধ
নারীদের সম্মান করতে পুরুষদের যে সমস্যা, তার মূল কারণ হলো মিসোজিনি বা নারীদের প্রতি ঘৃণা বা সংস্কার। মিসোজিনি শুধু প্রকাশ্য ঘৃণার বিষয় নয়, এটি আরও সূক্ষ্মভাবে প্রকাশ পেতে পারে, যেমন নারীদের অর্জনকে তুচ্ছ করা, তাদের অবজ্ঞা করা।
আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন (এপিএ)–এর গবেষণা দেখিয়েছে, যারা মিসোজিনিস্টিক দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করে, তারা নারীদের কম সক্ষম, কম অধিকারের যোগ্য এবং তাদের ওপর ঘটে যাওয়া নির্যাতনের জন্য নিজেরাই দায়ী বলে মনে করে। কারণ পুরুষদের মনোভাব হলো, নারীর ওপর তাদের কিছু বিশেষাধিকার রয়েছে। কর্মক্ষেত্র, সম্পর্ক বা সামাজিক জীবনে তারা এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে।

বাংলাদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোতে পুরুষদের নারীর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মানের অভাব একটি গুরুতর সমস্যা। যদিও বাংলাদেশের সংবিধান নারীদের সমান অধিকার দেয় এবং নারীশিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচুর আইন ও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে বাস্তবে সমাজ ও রাষ্ট্রের অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণমূলক ভূমিকায় নারীকে এখনো কম গুরুত্ব দেওয়া হয়। পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব, পারিবারিক কাঠামো, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং অর্থনৈতিক অবস্থা—এসব মিলিয়ে বাংলাদেশের পুরুষেরা নারীকে অনেক সময় একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে, যেখানে নারীর স্বাধীনতা, ক্ষমতায়ন এবং আত্মবিশ্বাসকে উপেক্ষা করা হয়।
পুরুষদের মধ্যে কেন নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন না করার মনোভাব দেখা যায়? এর উত্তরটি সহজ নয়। এটি শুধু ব্যক্তিগত মানসিকতার সমস্যা নয়, বরং এটি বৃহত্তর সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে গড়ে ওঠা একটি জটিল বিষয়। বাংলাদেশে নারীর অবস্থান, তার অধিকার, তার স্বাধীনতা এবং সম্মান—এসব বিষয় পারস্পরিক সম্পর্কিত। নারীকে দমিয়ে রাখা, পুরুষদের অধীনস্থ বা নিচু অবস্থানে রাখার প্রবণতা— এটি শুধু বাংলাদেশেই বিদ্যমান তা নয়, কম বেশি সব দেশেই দেখা যায়।
যেকোনো সম্পর্কের একটি মৌলিক দিক হলো—পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মান। তবে প্রাপ্য সম্মান (শুধু মৌখিক প্রশংসা নয়) পাওয়ার ক্ষেত্রে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন নারীরা। এটি ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে শুরু করে পেশাগত পরিবেশেও হতে পারে।
সচেতনতার অভাব
পুরুষেরা সাধারণত নারীদের প্রতি সম্মান দেখানোর বিষয়টি আলাদা করে ভাবেন না বা গুরুত্ব দেন না। পুরুষেরা ঠিকই একে অপরের সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করতে জানে, যেমন: বন্ধু বা সহকর্মীদের সঙ্গে। কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে কেন ব্যতিক্রম? এর একটি সরল ব্যাখ্যা হতে পারে, হয় তারা বিপরীত লিঙ্গকে সম্মান দিতে জানে না, অথবা সমান যোগ্য বিবেচনায় সেটি ভেবেই দেখে না। এটি এক ধরনের অবহেলা বা উপেক্ষা হতে পারে।
পুরুষেরা জানে কীভাবে একে অপরের সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করতে হয়, তা সে সামাজিক পরিবেশে হোক, কর্মক্ষেত্রে হোক বা প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতিতে হোক। অজুহাত হিসেবে পুরুষেরা যদি দাবি করে যে, তারা কখনো নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন নিয়ে ভাবেনি বা জানে না, তাহলে তারা আসলে নারীদের প্রতি তাদের আচরণ, সম্পর্কে ক্ষেত্রে সমান না ভাবা এবং সাধারণত নারী–পুরুষ সম্পর্কের ভেতরে যে বৈষম্য বিদ্যমান, তা নিয়ে চিন্তা বা আত্মসমালোচনা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না। এই প্রতিক্রিয়া একটি সমাজের অবচেতন নৈতিক চর্চার প্রতিফলন, যেখানে নারীদের প্রতি সম্মান প্রত্যাশিত বা প্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত হয় না।
নারী ও পুরুষের কাজ আলাদা
নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন বা দায়িত্ব এড়ানোর জন্য পুরুষদের আরেকটি সাধারণ কৌশল হলো নারীদের প্রশংসা করা! যেমন: নারীরা এসব কাজে অনেক ভালো। এটি বিশেষ করে গৃহস্থালির কাজ (রান্না, সূচিকর্ম, ঘর গোছানো ইত্যাদি), সন্তান লালন–পালন এবং আবেগ সম্পর্কিত কাজে। সমাজে ছেলেদের আবেগবর্জিত কঠোর বাস্তবতার শিক্ষা দেওয়ার চল রয়েছে। সে ক্ষেত্রে নারীদের আবেগী, কোমল হৃদয়ের বলে ধারণা প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এ ধরনের বাহানা আসলে সূক্ষ্মভাবে ঐতিহ্যগত লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকাকেই শক্তিশালী করে।
পুরুষেরা বলে, নারীরা শিশুদের দেখাশোনায় তাদের চেয়ে ভালো। আপাতদৃষ্টিতে এটিকে নারীর প্রতি অকুণ্ঠ প্রশংসা বলেই মনে হতে পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এখানে যা ঘটছে, তা হলো এক ধরনের চালাকি—প্রশংসার ছদ্মবেশে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া।
কাউকে নিয়ন্ত্রণ বা বশীভূত করে রাখার একটি মোক্ষম কৌশল হিসেবে সাধারণত ক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠী সম্পর্কে কর্তৃত্ববাদীরা নিজস্ব ধারণা প্রচার করে। ওই জনগোষ্ঠীর আচরণ, মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠার ভান করে। ঠিক একই ভাবে পুরুষেরাও হয় নারীদের সম্পর্কে নিজেদের ধারণাকেই প্রতিষ্ঠিত করতে চায় অথবা নারীদের বুঝতে অক্ষমতার দোহাই দেয়।
কখনো কখনো প্রশংসাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে কৌশলে কাউকে নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাবিত করা হয়। প্রকৃত প্রশংসা থেকে এটি আলাদা। কারণ এটি সাধারণত কাউকে প্রভাবিত করার জন্য ব্যবহার করা হয়, যাতে তারা এমনভাবে কাজ করে যা প্রশংসাকারী ব্যক্তি কোনো না কোনোভাবে লাভবান হয়। এটা এমন এক ধরনের প্রশংসা যা খুব সূক্ষ্মভাবে কাজ করে এবং যার ফলে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি নিজেকে বিশেষ, প্রশংসিত বা স্বীকৃত বলে ভাবতে পারে। তার অজান্তেই এর মাধ্যমে প্রশংসাকারী ব্যক্তি গোপন উদ্দেশ্য হাসিল করে।
এই কৌশলটি শুধু নারীদের ওপর দায়িত্বের বোঝা চাপায় না, বরং তাদের সময় ও শক্তি মূল্যহীন করে তোলে। পরিবর্তে, এই কৌশল ব্যবহার করে নির্দিষ্ট কর্মকাণ্ডগুলোতে পুরুষের অংশগ্রহণ না থাকাকে যুক্তিসংগত করে তোলা হয়। পুরুষেরা দায়িত্ব নেওয়ার পরিবর্তে, নারীদের ওপর আরও দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়।
শর্তসাপেক্ষে সম্মান
কিছু পুরুষ শুধু তখনই নারীদের সম্মান করবে যখন তাদের মা বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ (কর্মস্থল ইত্যাদি) বলবে যে, তাদের এটি করা উচিত। এই ধরনের সম্মানের মধ্যে কোনো আন্তরিকতা থাকে না। বরং পরিণতির ভয় থেকে করা হয়।
সমাজে সাধারণত, নারীদের সম্মান করতে শেখানো হয় ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক বা নৈতিক বাধ্যবাধকতা থেকে। অর্থাৎ, পুরুষদের ওপর সামাজিক বা পারিবারিক চাপ থাকে, এর সঙ্গে নারীর মর্যাদা অনুধাবনের কোনো সম্পর্ক নেই। এর ফলে, তাদের মুখের কথা এবং কাজে বড় ধরনের পার্থক্য তৈরি হয়। নারীদের সম্মান করে বলে দাবি করলেও, তাদের আচরণে সব সময় তা প্রকাশ পায় না। তারা মূলত শাস্তি (আইনগত) বা বিচার (পাবলিক জাজমেন্ট) এড়ানোর জন্য সামাজিক চর্চা মেনে চলে মাত্র। তারা সমতা এবং সম্মানের গুরুত্বকে মানসিকভাবে গভীর ও অর্থপূর্ণভাবে মেনে নিতে ব্যর্থ হয়।
ঐতিহাসিক অস্বীকৃতি এবং সমাজের অবজ্ঞা
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হলো, পুরুষদের বর্তমান লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা এবং সামাজিক প্রত্যাশার পরিবর্তনকে অস্বীকার করা। কিছু পুরুষ এখনো বিশ্বাস করে যে, নারীদের সম্মান করার প্রয়োজন নেই বা লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে যে পরিবর্তনগুলো ঘটছে, তা অতিরঞ্জিত বা নারীদের জন্য অপ্রাসঙ্গিক। যখন নারীদের সমান করে দেখার প্রয়োজনীয়তার কথা তোলা হয়, তখন তারা প্রায়ই নারীদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঐতিহাসিক বাস্তবতাকে খাটো করে দেখে অথবা নারীর প্রতি অসম্মানকে সমাজের একটি সমস্যা হিসেবেও অগ্রাহ্য করে।
নারীদের অধিকার অর্জনের সংগ্রামের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে অস্বীকৃতির বিষয়টি বোঝার জন্য, নিম্নলিখিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইনগত মাইলফলকগুলোর সময়রেখা বিবেচনা করা যেতে পারে—
১৮৪৮–সেনেকা ফলস কনভেনশন: প্রথম নারীদের অধিকার সম্মেলন, যেখানে নারীদের ভোটাধিকার এবং সমান অধিকার দাবি করা হয়।
১৯১৯–আমেরিকার সংবিধানের ১৯তম সংশোধনী: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের ভোটাধিকার অর্জন।
১৯৪৫–জাতিসংঘের মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র: নারী ও পুরুষের সমান অধিকার জাতিসংঘের সনদে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
১৯৬৩–যুক্তরাষ্ট্র: নারী-পুরুষের সমান বেতন দেওয়ার আইন পাস হয়।
১৯৭২–যুক্তরাষ্ট্র: শিক্ষা এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য নিষিদ্ধ করা হয়।
১৯৭৫–জাতিসংঘের নারীদের প্রতি বৈষম্য বিলোপ সনদ: নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি গৃহীত হয়।
২০১০–আইসিডব্লিউআর (সিইডিএডব্লিউ): নারী অধিকারের জন্য বৈশ্বিক সংবিধান, যা জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোকে নারীদের বিরুদ্ধে সব ধরনের বৈষম্য দূর করতে বাধ্য করে।
এই মাইলফলকগুলো নারীদের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অধিকার অর্জনে অসংখ্য সংগ্রামের ফলস্বরূপ, যা বর্তমানে সমাজে নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের প্রয়োজনীয়তা প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে, কিছু পুরুষ এখনো এসব পরিবর্তনকে অস্বীকার করে, যা এই সংগ্রামের অগ্রগতি এবং নারীদের অধিকার সম্পর্কে তাদের গভীরভাবে অবহিত না হওয়ারই ইঙ্গিত।
এই আইনগত অগ্রগতির পরেও, অনেক পুরুষ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে স্বীকার করতে চায় না। নিপীড়নের বিরুদ্ধে নারীদের দীর্ঘ সংগ্রামের ফলে সাধিত পরিবর্তনগুলোকে অস্বীকার বা হালকা করে দেখিয়ে, পুরুষেরা তাদের নিজেদের দায় এড়িয়ে যেতে চায়।
এ ধরনের অস্বীকৃতি পুরুষদের যে সুবিধা দেয়—
পিতৃতান্ত্রিকতার ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক ভিত্তি
নারীদের সম্মান করতে পুরুষদের মনে যে বাধা, তার অন্যতম প্রধান কারণ হলো—পিতৃতান্ত্রিকতার ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক ভিত্তি। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, পৃথিবীর বিভিন্ন সমাজে পুরুষদের ক্ষমতার উচ্চস্থানে বসিয়ে, নারীদের অধিকার অস্বীকার করা হয়েছে। প্রাচীন সভ্যতা থেকে শুরু করে আধুনিক প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত আইন, ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় অনুশাসনে পুরুষদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত ছিল।
সামাজিকীকরণ: লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা
ছোটবেলা থেকে ছেলে-মেয়েদের কঠোর লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা অনুসরণ করতে শেখানো হয়, যা ছেলেদের আধিপত্যশীল, প্রতিযোগিতামূলক এবং আবেগহীন হতে উদ্বুদ্ধ করে—যা সাধারণত ‘প্রথাগত পৌরুষ’–এর সঙ্গে সম্পর্কিত। অন্যদিকে, মেয়েদের কোমল এবং সহানুভূতিশীল হতে উৎসাহিত করা হয়। মনোবিজ্ঞানী মাইকেল কিমেল তাঁর বই ম্যানহুড ইন আমেরিকা–তে যুক্তি দেন, এই লিঙ্গভিত্তিক প্রত্যাশাগুলো পুরুষদের ওপর একটি বিশাল চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে তারা এমন পুরুষত্বের মডেল অনুসরণ করে যা নারীদের দুর্বল বা অক্ষম হিসেবে দেখায়।
এই ধরনের লিঙ্গভিত্তিক নিদর্শনগুলো মিডিয়া, বিজ্ঞাপন এবং এমনকি পরিবারের মধ্যে প্রচারিত হয়, যা নারীদের কম সম্মানযোগ্য করে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, ‘আলফা মেল’ নামে এমন এক পুরুষের ধারণা দেওয়া, যে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে, নিয়ন্ত্রণ দাবি করে এবং অন্যদের, বিশেষত নারীদের, স্বাধীনতা সংকুচিত করে। এই সাংস্কৃতিক মডেল অনেক পুরুষের মধ্যে গভীরভাবে প্রোথিত, যা তাদের নারীদের সমান হিসেবে সম্মান করতে বাধা দেয়।
ক্ষমতা এবং বিশেষাধিকার হারানোর ভয়
নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন না করার আরেকটি কারণ হলো, পুরুষদের ক্ষমতা হারানোর ভয়। পিতৃতান্ত্রিক সমাজে পুরুষেরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অধিকাংশ সুবিধা ভোগ করে। লিঙ্গ সমতার আন্দোলনের উত্থান এই ক্ষমতার কাঠামোকে হুমকির মুখে ফেলেছে, যার ফলে কিছু পুরুষ পরিবর্তন প্রতিরোধ করে। এই ভয় বিভিন্ন আচরণে প্রতিফলিত হয়, যেমন ম্যানস্প্লেনিং (পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি), গ্যাসলাইটিং, অথবা সরাসরি আক্রমণ, যা আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে করা হয়।
মনস্তাত্ত্বিক কারণ: নিরাপত্তাহীনতা এবং আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার অভাব
কিছু ক্ষেত্রে পুরুষদের নারীর প্রতি সম্মান দেখাতে না পারার পেছনে গভীর মনস্তাত্ত্বিক কারণ থাকতে পারে। যেমন: নিরাপত্তাহীনতা অথবা আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার (ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স) অভাব। অনেক পুরুষকে আবেগ বা মানবিক দুর্বলতা দমন করতে শেখানো হয়, যার ফলে তারা সম্পর্কের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান এবং সহানুভূতির ভিত্তিতে চলতে অক্ষম। এই আবেগ শূন্যতা নারীদের প্রতি অসম্মানজনক আচরণের মধ্যে প্রকাশ পেতে পারে, কারণ তারা নিজেদের অক্ষমতা বা হুমকির সম্মুখীন হলে নিরাপত্তাহীনতা থেকে নিয়ন্ত্রণ বা আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে পারে।
মিসোজিনি এবং অধিকারবোধ
নারীদের সম্মান করতে পুরুষদের যে সমস্যা, তার মূল কারণ হলো মিসোজিনি বা নারীদের প্রতি ঘৃণা বা সংস্কার। মিসোজিনি শুধু প্রকাশ্য ঘৃণার বিষয় নয়, এটি আরও সূক্ষ্মভাবে প্রকাশ পেতে পারে, যেমন নারীদের অর্জনকে তুচ্ছ করা, তাদের অবজ্ঞা করা।
আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন (এপিএ)–এর গবেষণা দেখিয়েছে, যারা মিসোজিনিস্টিক দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করে, তারা নারীদের কম সক্ষম, কম অধিকারের যোগ্য এবং তাদের ওপর ঘটে যাওয়া নির্যাতনের জন্য নিজেরাই দায়ী বলে মনে করে। কারণ পুরুষদের মনোভাব হলো, নারীর ওপর তাদের কিছু বিশেষাধিকার রয়েছে। কর্মক্ষেত্র, সম্পর্ক বা সামাজিক জীবনে তারা এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে।


ডিজিটাল যুগ যোগাযোগের পরিধি বিস্তৃত করেছে, কিন্তু একই সঙ্গে খুলে দিয়েছে ‘অনলাইন সহিংসতা’র এক নতুন ক্ষেত্র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা ভার্চুয়াল স্পেস এখন শুধু মতপ্রকাশের জায়গা নয়, বরং অনেক সময় ঘৃণাবার্তা, হয়রানি, হুমকি, অপমান ও মানহানির আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে।
২ দিন আগে
নিরাপদ এবং নিশ্চিত কর্মপরিবেশ পাওয়া যেকোনো কর্মজীবী মানুষের একটি মৌলিক চাহিদা। কর্মপরিবেশ ও কর্মস্থল নিরাপদ যদি না হয়, সেখানে নারী কিংবা পুরুষ—কেউ নিরাপদ নন। আর এ বিষয়টি শুধু চাকরিজীবনে নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। হেঁটে গেলে অন্য সহকর্মীরা আপনার দিকে কীভাবে তাকাচ্ছেন, কিংবা দুজন সহকর
৪ দিন আগে
রেডিও চ্যানেল এনপিআরকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক শ্রৌক আল আইলা। তিনি বলতে শুরু করেন, ‘আমি একধরনের হ্যাংওভারের মধ্যে আছি। আজ সকালে খুব অদ্ভুত লাগছিল। কারণ, আমি বিমান হামলা ও বিস্ফোরণ ছাড়া গভীরভাবে ঘুমানোর সুযোগ পেয়েছিলাম। এটা সত্যিই অদ্ভুত লাগছে।’
৪ দিন আগে
আমেরিকার ইতিহাসে দীর্ঘকাল ধরে চলা টেলিভিশন সিরিজ মিট দ্য প্রেস। অনুষ্ঠানটি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্যানেল আলোচনার একটি মানদণ্ড তৈরি করেছিল। এই অনুষ্ঠানের কো-ক্রিয়েটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন মার্থা জেন রাউন্ট্রি।
৪ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ডিজিটাল যুগ যোগাযোগের পরিধি বিস্তৃত করেছে, কিন্তু একই সঙ্গে খুলে দিয়েছে ‘অনলাইন সহিংসতা’র এক নতুন ক্ষেত্র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা ভার্চুয়াল স্পেস এখন শুধু মতপ্রকাশের জায়গা নয়, বরং অনেক সময় ঘৃণাবার্তা, হয়রানি, হুমকি, অপমান ও মানহানির আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে নারী, তরুণী এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ এর সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী। এই বাস্তবতায় তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তারাই সবচেয়ে বেশি সময় কাটায় অনলাইনে এবং তাদেরই কণ্ঠস্বর সবচেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই অনলাইন সহিংসতার বিরুদ্ধে তরুণদের শুধু ভুক্তভোগী নয়, বরং প্রতিরোধের অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। অনলাইন সহিংসতা মোকাবিলায় তরুণ প্রজন্মকে সোচ্চার হতে হবে।’
আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. আব্দুল্লাহ ফারুক কনফারেন্স হলে ‘বাংলাদেশে তরুণী ও নারী সাইবার নির্যাতন: আরোগ্য, ক্ষমতায়ন ও সচেতনতা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। এই সেমিনার আয়োজন করে সামাজিক উন্নয়নমূলক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রেজোনেয়ার।
সেমিনারে ডিসেম্বরের মধ্যে ৪০ জনকে ডিজিটাল লিটারেসি প্রশিক্ষণ ও সাতটি ক্যাম্পাস ক্যাম্পেইনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অনলাইন নিরাপত্তা, সাইবারবুলিং প্রতিরোধ ও ডিজিটাল অধিকার বিষয়ে সচেতন করা হবে।
বাংলাদেশ রেজোনেয়ারের সভাপতি জান্নাতুল নওরীন ঊর্মি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য এমন একটি ডিজিটাল প্রজন্ম তৈরি করা, যারা প্রযুক্তিকে দায়িত্বশীলভাবে ব্যবহার করবে এবং অনলাইন সহিংসতা বা হয়রানির বিরুদ্ধে সচেতন ও দৃঢ় ভূমিকা পালন করবে।’
আয়োজকেরা জানান, সেমিনারের মূল লক্ষ্য হলো অনলাইন হয়রানির ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, মানসিক পুনরুদ্ধার ও ক্ষমতায়নের পথ দেখানো এবং তরুণ সমাজের রাজনৈতিক অংশগ্রহণে অনুপ্রেরণা জোগানো।
তাঁরা জানান, বাংলাদেশ রেজোনেয়ার সাইবার বুলিংয়ের শিকার ব্যক্তিদের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করবে। সাইবার বুলিংয়ের শিকার ব্যক্তিরা তিনজন খ্যাতনামা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে সরাসরি কাউন্সেলিং ও মনোসামাজিক সহায়তা পাবেন। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ভুক্তভোগীরা মানসিক পুনর্বাসন, আত্মবিশ্বাস, পুনর্গঠন ও সামাজিক সংহতি পুনঃস্থাপনের সুযোগ পাবেন।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. রাহেনুল ইসলাম, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আশরাফ জালাল খান ভারতের পলিটি অ্যাকশন ল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা নিবেদিতা বিশ্বাস প্রমুখ।

ডিজিটাল যুগ যোগাযোগের পরিধি বিস্তৃত করেছে, কিন্তু একই সঙ্গে খুলে দিয়েছে ‘অনলাইন সহিংসতা’র এক নতুন ক্ষেত্র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা ভার্চুয়াল স্পেস এখন শুধু মতপ্রকাশের জায়গা নয়, বরং অনেক সময় ঘৃণাবার্তা, হয়রানি, হুমকি, অপমান ও মানহানির আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে নারী, তরুণী এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ এর সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী। এই বাস্তবতায় তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তারাই সবচেয়ে বেশি সময় কাটায় অনলাইনে এবং তাদেরই কণ্ঠস্বর সবচেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই অনলাইন সহিংসতার বিরুদ্ধে তরুণদের শুধু ভুক্তভোগী নয়, বরং প্রতিরোধের অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। অনলাইন সহিংসতা মোকাবিলায় তরুণ প্রজন্মকে সোচ্চার হতে হবে।’
আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. আব্দুল্লাহ ফারুক কনফারেন্স হলে ‘বাংলাদেশে তরুণী ও নারী সাইবার নির্যাতন: আরোগ্য, ক্ষমতায়ন ও সচেতনতা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। এই সেমিনার আয়োজন করে সামাজিক উন্নয়নমূলক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রেজোনেয়ার।
সেমিনারে ডিসেম্বরের মধ্যে ৪০ জনকে ডিজিটাল লিটারেসি প্রশিক্ষণ ও সাতটি ক্যাম্পাস ক্যাম্পেইনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অনলাইন নিরাপত্তা, সাইবারবুলিং প্রতিরোধ ও ডিজিটাল অধিকার বিষয়ে সচেতন করা হবে।
বাংলাদেশ রেজোনেয়ারের সভাপতি জান্নাতুল নওরীন ঊর্মি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য এমন একটি ডিজিটাল প্রজন্ম তৈরি করা, যারা প্রযুক্তিকে দায়িত্বশীলভাবে ব্যবহার করবে এবং অনলাইন সহিংসতা বা হয়রানির বিরুদ্ধে সচেতন ও দৃঢ় ভূমিকা পালন করবে।’
আয়োজকেরা জানান, সেমিনারের মূল লক্ষ্য হলো অনলাইন হয়রানির ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, মানসিক পুনরুদ্ধার ও ক্ষমতায়নের পথ দেখানো এবং তরুণ সমাজের রাজনৈতিক অংশগ্রহণে অনুপ্রেরণা জোগানো।
তাঁরা জানান, বাংলাদেশ রেজোনেয়ার সাইবার বুলিংয়ের শিকার ব্যক্তিদের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করবে। সাইবার বুলিংয়ের শিকার ব্যক্তিরা তিনজন খ্যাতনামা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে সরাসরি কাউন্সেলিং ও মনোসামাজিক সহায়তা পাবেন। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ভুক্তভোগীরা মানসিক পুনর্বাসন, আত্মবিশ্বাস, পুনর্গঠন ও সামাজিক সংহতি পুনঃস্থাপনের সুযোগ পাবেন।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. রাহেনুল ইসলাম, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আশরাফ জালাল খান ভারতের পলিটি অ্যাকশন ল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা নিবেদিতা বিশ্বাস প্রমুখ।


যেকোনো সম্পর্কের একটি মৌলিক দিক হলো—পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মান। তবে প্রাপ্য সম্মান (শুধু মৌখিক প্রশংসা নয়) পাওয়ার ক্ষেত্রে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন নারীরা। এটি ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে শুরু করে পেশাগত পরিবেশেও হতে পারে।
০৯ মার্চ ২০২৫
নিরাপদ এবং নিশ্চিত কর্মপরিবেশ পাওয়া যেকোনো কর্মজীবী মানুষের একটি মৌলিক চাহিদা। কর্মপরিবেশ ও কর্মস্থল নিরাপদ যদি না হয়, সেখানে নারী কিংবা পুরুষ—কেউ নিরাপদ নন। আর এ বিষয়টি শুধু চাকরিজীবনে নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। হেঁটে গেলে অন্য সহকর্মীরা আপনার দিকে কীভাবে তাকাচ্ছেন, কিংবা দুজন সহকর
৪ দিন আগে
রেডিও চ্যানেল এনপিআরকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক শ্রৌক আল আইলা। তিনি বলতে শুরু করেন, ‘আমি একধরনের হ্যাংওভারের মধ্যে আছি। আজ সকালে খুব অদ্ভুত লাগছিল। কারণ, আমি বিমান হামলা ও বিস্ফোরণ ছাড়া গভীরভাবে ঘুমানোর সুযোগ পেয়েছিলাম। এটা সত্যিই অদ্ভুত লাগছে।’
৪ দিন আগে
আমেরিকার ইতিহাসে দীর্ঘকাল ধরে চলা টেলিভিশন সিরিজ মিট দ্য প্রেস। অনুষ্ঠানটি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্যানেল আলোচনার একটি মানদণ্ড তৈরি করেছিল। এই অনুষ্ঠানের কো-ক্রিয়েটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন মার্থা জেন রাউন্ট্রি।
৪ দিন আগেব্যারিস্টার ইফফাত আরা গিয়াস

নিরাপদ এবং নিশ্চিত কর্মপরিবেশ পাওয়া যেকোনো কর্মজীবী মানুষের একটি মৌলিক চাহিদা। কর্মপরিবেশ ও কর্মস্থল নিরাপদ যদি না হয়, সেখানে নারী কিংবা পুরুষ—কেউ নিরাপদ নন। আর এ বিষয়টি শুধু চাকরিজীবনে নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। হেঁটে গেলে অন্য সহকর্মীরা আপনার দিকে কীভাবে তাকাচ্ছেন, কিংবা দুজন সহকর্মী দাঁড়িয়ে আপনাকে নিয়ে কী ধরনের মন্তব্য করছেন, এটা ভেবেই যদি সময় চলে যায়, তাহলে কাজ করবেন কখন? আর এই ভাবনাটা তখনই আসে, যখন কারও সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে আচরণ করা হবে। যিনি এসব আচরণ করছেন, তিনি হতে পারেন বস কিংবা অফিসের যেকোনো শ্রেণির কর্মচারী। এই নিরাপত্তা যখন ব্যাহত হয়, তখন সেখানে কাজ করা মুশকিল হয়ে পড়ে।
কর্মস্থলে নারী-পুরুষনির্বিশেষে প্রত্যেক কর্মচারীর নিরাপত্তা এবং মর্যাদা রক্ষা করা রাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মৌলিক দায়িত্ব। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায়, কর্মক্ষেত্রে সহকর্মী বা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কেউ কেউ মৌখিক অর্থাৎ ভারবাল কিংবা শারীরিক অর্থাৎ ফিজিক্যাল হয়রানির শিকার হন। এ ধরনের আচরণ কেবল মানসিক কষ্টের কারণ নয়; বরং বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ।
নিজের সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের প্রথম প্রতিবাদ নিজেকেই করতে হবে। অন্য কেউ এসে প্রতিবাদ করার আগে নিজের সচেতনতা এবং যুক্তিযুক্ত কথা বলা অনেক বেশি জরুরি। তাই চাকরিজীবনে যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে সে বিষয়ে রাষ্ট্রীয় আইন জানা থাকা দরকার।
আইনের চোখে হয়রানি
বাংলাদেশে কর্মস্থলে হয়রানিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। এ ধরনের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং অপরাধীকে শাস্তি দিতে দুটি প্রধান আইন ও নির্দেশনা কার্যকর রয়েছে:
১. বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮): এই আইন শ্রমিক-কর্মচারীদের কর্মপরিবেশ-সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ন্ত্রণ করে।
২. যৌন হয়রানি প্রতিরোধ নীতিমালা, ২০০৯: এটি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার ভিত্তিতে প্রণীত, যা কর্মস্থলে যেকোনো ধরনের যৌন হয়রানিকে কঠোরভাবে দমন করার নির্দেশ দেয়।
হয়রানির প্রকারভেদ
প্রথমেই বুঝে নেওয়া জরুরি যে হয়রানির ধরন কেমন। তবে কর্মক্ষেত্রে হয়রানি দুই ধরনের হতে পারে—
১. মৌখিক বা ভারবাল হয়রানি: এর মধ্যে রয়েছে অপমানজনক মন্তব্য, অশালীন ইঙ্গিত, যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ কথা, হেয়প্রতিপন্ন করা কিংবা ভয় দেখানো।
২. শারীরিক বা ফিজিক্যাল হয়রানি: অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ, জোর করে ধরাধরি, আলিঙ্গন অথবা শারীরিকভাবে অপমানজনক আচরণ।
কর্মস্থলে এ ধরনের আচরণ বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮) এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী যৌন হয়রানি প্রতিরোধ নীতিমালা, ২০০৯ অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
ন্যায়বিচার পাওয়ার ধাপ
কর্মস্থলে হয়রানির শিকার হলে ভুক্তভোগীর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কিছু ধাপে সচেতনভাবে অগ্রসর হতে হবে।
প্রথম পদক্ষেপ: প্রমাণ সংগ্রহ এবং নথিভুক্তকরণ
অভিযোগের ভিত্তি মজবুত করার জন্য প্রমাণ সংগ্রহ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ভুক্তভোগীর প্রথম কাজ হলো ঘটনার বিস্তারিত তথ্য স্পষ্টভাবে লিখিত আকারে নথিভুক্ত করা।
» বিবরণ: ঘটনার তারিখ, সময়, স্থান এবং জড়িত ব্যক্তি কিংবা উপস্থিত থাকা সাক্ষীর নাম লিখে রাখা।
» সংরক্ষণ: সম্ভব হলে ই-মেইল, মেসেজ, ভয়েস রেকর্ড, চ্যাটের স্ক্রিনশট অথবা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংরক্ষণ করা। এসব তথ্য পরবর্তী সময়ে অভিযোগের সপক্ষে শক্তিশালী প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।
দ্বিতীয় পদক্ষেপ: অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটিতে অভিযোগ দাখিল
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতিটি অফিস কিংবা প্রতিষ্ঠানে একটি ‘অভিযোগ কমিটি’ থাকা বাধ্যতামূলক। এই কমিটিতে একজন নারী সদস্যের অন্তর্ভুক্তিও নিশ্চিত করতে হবে।
ভুক্তভোগী প্রথমে লিখিতভাবে এই কমিটির কাছে অভিযোগ দাখিল করতে পারেন। এরপর কমিটি সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত পরিচালনা করতে এবং প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য। এটি অভ্যন্তরীণভাবে দ্রুত ন্যায়বিচার পাওয়ার প্রথম ও কার্যকর মাধ্যম।
তৃতীয় পদক্ষেপ: প্রশাসনিক ও আইনি সহায়তা নেওয়া
যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ কমিটি না থাকে অথবা কমিটি যদি অভিযোগের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়, তবে ভুক্তভোগী সরাসরি আইনি পথে যেতে পারেন।
» পুলিশি পদক্ষেপ: ভুক্তভোগী সরাসরি স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে পারেন।
» মামলা: প্রয়োজনে তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল বা শ্রম আদালতে মামলা করতে পারেন।
» শাস্তি: নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) অনুযায়ী শারীরিক বা যৌন হয়রানির অভিযোগে দোষী প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।
চতুর্থ পদক্ষেপ: মানবাধিকার সংগঠন ও আইনি সহায়তা সংস্থার সহযোগিতা নেওয়া
আইনিপ্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা না থাকলে অথবা আর্থিক সংকট থাকলে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠনের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশে আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি, ব্র্যাক লিগ্যাল এইড সার্ভিসেসের মতো অনেক সংগঠন বিনা মূল্যে আইনি পরামর্শ ও সহায়তা দেয়। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পেশাদার সহায়তা পাওয়া সম্ভব।
যেসব বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে
» চুপ না থাকা: কোনো পরিস্থিতিতে ভয় কিংবা সামাজিক চাপের কারণে চুপ থাকা উচিত নয়। হয়রানির বিষয়ে দ্রুত আওয়াজ তোলা খুব প্রয়োজন।
» নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ: অভিযোগ দাখিল করার আগে ও পরে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
» সঠিক তথ্য উপস্থাপন: মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
» নথি সংরক্ষণ: সব ধরনের যোগাযোগ এবং প্রমাণের নথি যথাযথভাবে আপনাকে সংরক্ষণ করতে হবে।
কর্মস্থলকে ভয় বা বঞ্চনার জায়গা না বানিয়ে একটি নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবেশের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা জরুরি। হয়রানির শিকার হলে চুপ না থেকে আইনের আশ্রয় নেওয়া প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার। একজন সচেতন কর্মী হিসেবে সাহসিকতার সঙ্গে সঠিক পদক্ষেপ নিলে কেবল নিজের নয়, প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক পরিবেশ এবং অন্যান্য সহকর্মীর নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা সম্ভব।

নিরাপদ এবং নিশ্চিত কর্মপরিবেশ পাওয়া যেকোনো কর্মজীবী মানুষের একটি মৌলিক চাহিদা। কর্মপরিবেশ ও কর্মস্থল নিরাপদ যদি না হয়, সেখানে নারী কিংবা পুরুষ—কেউ নিরাপদ নন। আর এ বিষয়টি শুধু চাকরিজীবনে নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। হেঁটে গেলে অন্য সহকর্মীরা আপনার দিকে কীভাবে তাকাচ্ছেন, কিংবা দুজন সহকর্মী দাঁড়িয়ে আপনাকে নিয়ে কী ধরনের মন্তব্য করছেন, এটা ভেবেই যদি সময় চলে যায়, তাহলে কাজ করবেন কখন? আর এই ভাবনাটা তখনই আসে, যখন কারও সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে আচরণ করা হবে। যিনি এসব আচরণ করছেন, তিনি হতে পারেন বস কিংবা অফিসের যেকোনো শ্রেণির কর্মচারী। এই নিরাপত্তা যখন ব্যাহত হয়, তখন সেখানে কাজ করা মুশকিল হয়ে পড়ে।
কর্মস্থলে নারী-পুরুষনির্বিশেষে প্রত্যেক কর্মচারীর নিরাপত্তা এবং মর্যাদা রক্ষা করা রাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মৌলিক দায়িত্ব। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায়, কর্মক্ষেত্রে সহকর্মী বা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কেউ কেউ মৌখিক অর্থাৎ ভারবাল কিংবা শারীরিক অর্থাৎ ফিজিক্যাল হয়রানির শিকার হন। এ ধরনের আচরণ কেবল মানসিক কষ্টের কারণ নয়; বরং বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ।
নিজের সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের প্রথম প্রতিবাদ নিজেকেই করতে হবে। অন্য কেউ এসে প্রতিবাদ করার আগে নিজের সচেতনতা এবং যুক্তিযুক্ত কথা বলা অনেক বেশি জরুরি। তাই চাকরিজীবনে যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে সে বিষয়ে রাষ্ট্রীয় আইন জানা থাকা দরকার।
আইনের চোখে হয়রানি
বাংলাদেশে কর্মস্থলে হয়রানিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। এ ধরনের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং অপরাধীকে শাস্তি দিতে দুটি প্রধান আইন ও নির্দেশনা কার্যকর রয়েছে:
১. বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮): এই আইন শ্রমিক-কর্মচারীদের কর্মপরিবেশ-সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ন্ত্রণ করে।
২. যৌন হয়রানি প্রতিরোধ নীতিমালা, ২০০৯: এটি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার ভিত্তিতে প্রণীত, যা কর্মস্থলে যেকোনো ধরনের যৌন হয়রানিকে কঠোরভাবে দমন করার নির্দেশ দেয়।
হয়রানির প্রকারভেদ
প্রথমেই বুঝে নেওয়া জরুরি যে হয়রানির ধরন কেমন। তবে কর্মক্ষেত্রে হয়রানি দুই ধরনের হতে পারে—
১. মৌখিক বা ভারবাল হয়রানি: এর মধ্যে রয়েছে অপমানজনক মন্তব্য, অশালীন ইঙ্গিত, যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ কথা, হেয়প্রতিপন্ন করা কিংবা ভয় দেখানো।
২. শারীরিক বা ফিজিক্যাল হয়রানি: অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ, জোর করে ধরাধরি, আলিঙ্গন অথবা শারীরিকভাবে অপমানজনক আচরণ।
কর্মস্থলে এ ধরনের আচরণ বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮) এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী যৌন হয়রানি প্রতিরোধ নীতিমালা, ২০০৯ অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
ন্যায়বিচার পাওয়ার ধাপ
কর্মস্থলে হয়রানির শিকার হলে ভুক্তভোগীর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কিছু ধাপে সচেতনভাবে অগ্রসর হতে হবে।
প্রথম পদক্ষেপ: প্রমাণ সংগ্রহ এবং নথিভুক্তকরণ
অভিযোগের ভিত্তি মজবুত করার জন্য প্রমাণ সংগ্রহ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ভুক্তভোগীর প্রথম কাজ হলো ঘটনার বিস্তারিত তথ্য স্পষ্টভাবে লিখিত আকারে নথিভুক্ত করা।
» বিবরণ: ঘটনার তারিখ, সময়, স্থান এবং জড়িত ব্যক্তি কিংবা উপস্থিত থাকা সাক্ষীর নাম লিখে রাখা।
» সংরক্ষণ: সম্ভব হলে ই-মেইল, মেসেজ, ভয়েস রেকর্ড, চ্যাটের স্ক্রিনশট অথবা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংরক্ষণ করা। এসব তথ্য পরবর্তী সময়ে অভিযোগের সপক্ষে শক্তিশালী প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।
দ্বিতীয় পদক্ষেপ: অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটিতে অভিযোগ দাখিল
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতিটি অফিস কিংবা প্রতিষ্ঠানে একটি ‘অভিযোগ কমিটি’ থাকা বাধ্যতামূলক। এই কমিটিতে একজন নারী সদস্যের অন্তর্ভুক্তিও নিশ্চিত করতে হবে।
ভুক্তভোগী প্রথমে লিখিতভাবে এই কমিটির কাছে অভিযোগ দাখিল করতে পারেন। এরপর কমিটি সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত পরিচালনা করতে এবং প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য। এটি অভ্যন্তরীণভাবে দ্রুত ন্যায়বিচার পাওয়ার প্রথম ও কার্যকর মাধ্যম।
তৃতীয় পদক্ষেপ: প্রশাসনিক ও আইনি সহায়তা নেওয়া
যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ কমিটি না থাকে অথবা কমিটি যদি অভিযোগের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়, তবে ভুক্তভোগী সরাসরি আইনি পথে যেতে পারেন।
» পুলিশি পদক্ষেপ: ভুক্তভোগী সরাসরি স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে পারেন।
» মামলা: প্রয়োজনে তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল বা শ্রম আদালতে মামলা করতে পারেন।
» শাস্তি: নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) অনুযায়ী শারীরিক বা যৌন হয়রানির অভিযোগে দোষী প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।
চতুর্থ পদক্ষেপ: মানবাধিকার সংগঠন ও আইনি সহায়তা সংস্থার সহযোগিতা নেওয়া
আইনিপ্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা না থাকলে অথবা আর্থিক সংকট থাকলে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠনের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশে আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি, ব্র্যাক লিগ্যাল এইড সার্ভিসেসের মতো অনেক সংগঠন বিনা মূল্যে আইনি পরামর্শ ও সহায়তা দেয়। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পেশাদার সহায়তা পাওয়া সম্ভব।
যেসব বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে
» চুপ না থাকা: কোনো পরিস্থিতিতে ভয় কিংবা সামাজিক চাপের কারণে চুপ থাকা উচিত নয়। হয়রানির বিষয়ে দ্রুত আওয়াজ তোলা খুব প্রয়োজন।
» নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ: অভিযোগ দাখিল করার আগে ও পরে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
» সঠিক তথ্য উপস্থাপন: মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
» নথি সংরক্ষণ: সব ধরনের যোগাযোগ এবং প্রমাণের নথি যথাযথভাবে আপনাকে সংরক্ষণ করতে হবে।
কর্মস্থলকে ভয় বা বঞ্চনার জায়গা না বানিয়ে একটি নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবেশের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা জরুরি। হয়রানির শিকার হলে চুপ না থেকে আইনের আশ্রয় নেওয়া প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার। একজন সচেতন কর্মী হিসেবে সাহসিকতার সঙ্গে সঠিক পদক্ষেপ নিলে কেবল নিজের নয়, প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক পরিবেশ এবং অন্যান্য সহকর্মীর নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা সম্ভব।


যেকোনো সম্পর্কের একটি মৌলিক দিক হলো—পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মান। তবে প্রাপ্য সম্মান (শুধু মৌখিক প্রশংসা নয়) পাওয়ার ক্ষেত্রে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন নারীরা। এটি ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে শুরু করে পেশাগত পরিবেশেও হতে পারে।
০৯ মার্চ ২০২৫
ডিজিটাল যুগ যোগাযোগের পরিধি বিস্তৃত করেছে, কিন্তু একই সঙ্গে খুলে দিয়েছে ‘অনলাইন সহিংসতা’র এক নতুন ক্ষেত্র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা ভার্চুয়াল স্পেস এখন শুধু মতপ্রকাশের জায়গা নয়, বরং অনেক সময় ঘৃণাবার্তা, হয়রানি, হুমকি, অপমান ও মানহানির আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে।
২ দিন আগে
রেডিও চ্যানেল এনপিআরকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক শ্রৌক আল আইলা। তিনি বলতে শুরু করেন, ‘আমি একধরনের হ্যাংওভারের মধ্যে আছি। আজ সকালে খুব অদ্ভুত লাগছিল। কারণ, আমি বিমান হামলা ও বিস্ফোরণ ছাড়া গভীরভাবে ঘুমানোর সুযোগ পেয়েছিলাম। এটা সত্যিই অদ্ভুত লাগছে।’
৪ দিন আগে
আমেরিকার ইতিহাসে দীর্ঘকাল ধরে চলা টেলিভিশন সিরিজ মিট দ্য প্রেস। অনুষ্ঠানটি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্যানেল আলোচনার একটি মানদণ্ড তৈরি করেছিল। এই অনুষ্ঠানের কো-ক্রিয়েটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন মার্থা জেন রাউন্ট্রি।
৪ দিন আগেফিচার ডেস্ক

রেডিও চ্যানেল এনপিআরকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক শ্রৌক আল আইলা। তিনি বলতে শুরু করেন, ‘আমি একধরনের হ্যাংওভারের মধ্যে আছি। আজ সকালে খুব অদ্ভুত লাগছিল। কারণ, আমি বিমান হামলা ও বিস্ফোরণ ছাড়া গভীরভাবে ঘুমানোর সুযোগ পেয়েছিলাম। এটা সত্যিই অদ্ভুত লাগছে।’
৭০০ দিনের বেশি সহিংসতার পর ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে। তবু শান্ত হয়নি গাজার আকাশ। কিন্তু গাজাবাসী, বিশেষত নারী ও কিশোরীদের মধ্যে ভঙ্গুর হলেও দেখা দিয়েছে আশা—বেঁচে থাকার আর এগিয়ে যাওয়ার আশা। যুদ্ধের পুরো সময়ে গাজার অধিকাংশ নারী কমপক্ষে চারবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ইউএন উইমেনের তথ্য অনুযায়ী, ১০ লাখের বেশি নারী ও কিশোরীর খাদ্যসহায়তার প্রয়োজন এবং প্রায় আড়াই লাখের প্রয়োজন জরুরি পুষ্টি সহায়তা।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার ১৬ দিনের মাথায় বাড়িতে বোমা হামলায় নিহত হন আইলার স্বামী। এর পর থেকে নিজের কন্যাশিশুর সঙ্গে জীবন যাপন করছেন তিনি। আইলা জানান, তাঁর কন্যাটি তার বয়সের অর্ধেকের বেশি সময় খাওয়ার পানি, চিকিৎসাসামগ্রী, দুধ আর ডায়াপার ছাড়া কাটিয়েছে। দুর্ভিক্ষের কারণে সে ক্যানড ফুডের ওপর বড় হয়েছে। ফলে শিশুটি আপেল, কলা ও অন্য সব ধরনের ফল চিনতে পারে না। গাজায় প্রতি সাতটি পরিবারের মধ্যে একটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন একজন নারী। তাঁদের এখন সরাসরি সহায়তা দরকার, যাতে তাঁরা সন্তানদের খাওয়াতে পারেন, স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারেন, জীবিকা পুনর্গঠন করতে পারেন এবং সবকিছু হারানোর পর কিছুটা স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করতে পারেন।
এনপিআরকে সাক্ষাৎকার দেন শাইমা আহমেদ নামে আরও একজন কলেজশিক্ষার্থী। একটি বড় পরিবারে জন্ম নেওয়া শাইমা এই যুদ্ধে তাঁর পরিবারের ৭০ জন সদস্যকে হারিয়েছেন! তাঁদের মধ্যে কেউ মারা গেছেন, কয়েকজন নিখোঁজ আবার এখনো অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে—যাঁদের বেঁচে থাকার আশা নেই। বোমাবর্ষণে পরিবারের মানুষের কবরগুলোও হয়ে গেছে অচেনা, খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শাইমা বলেন, ‘শোকের জায়গাও আর নেই।’ তিনি জানান, তিনি ও তাঁর পরিবার দুই বছরে ১১ বার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। শাইমা স্নাতক শেষ করতে চলেছেন। আর এই পড়ার ইচ্ছাই এত দিন বাঁচিয়ে রেখেছে তাঁকে। যেমন সব হারিয়ে মেয়েকে নিয়ে বেঁচে থাকার ইচ্ছা বাঁচিয়ে রেখেছে আইলাকে।
শাইমা বলেন, ‘আমাদের জীবন কেবল সেই নিছক বেঁচে থাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর সত্যিকারের অর্থ ও উদ্দেশ্য থাকে। এটাই আমাদের এগিয়ে নিয়ে গেছে। আমাদের কাছে এই মাটির এত অর্থ আছে এবং গাজায় আপনি যা দেখেন, তা সত্যিই ধূসর এবং সর্বত্র ধ্বংসস্তূপ ও ধুলোয় ভরা। তবু আমরা একটি ভবিষ্যৎ দেখতে পাই।’
গাজায় নিহত, আহত, ধ্বংসের সংখ্যা কেবলই ডেটা নয়। যুদ্ধবিরতি স্থিতিশীল হওয়ার পাশাপাশি গাজার নারীবিষয়ক সংস্থাগুলো এরই মধ্যে পরবর্তী কাজের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশটির পুনরুদ্ধার সেখানকার নারীদের ঘুরে দাঁড়ানো ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সংস্থাগুলোতে কর্মরত নারীরা বারবার উচ্ছেদ, ভয় আর যন্ত্রণার শিকার হয়েছেন। উইমেনস অ্যাফেয়ার্স সেন্টারে কর্মরত আমাল বলেন, ‘আমরা এখানে মৃত্যুকে আর বুঝতে পারি না। এটি স্বাভাবিক মৃত্যু নয়—মৃত্যু আমাদের বস্তুতে, সংখ্যায় পরিণত করে। যেন আমরা কখনো ছিলামই না। আমাদের কাছে মানুষের দেহাবশেষ ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।’
তবু বেঁচে থাকার স্বপ্ন তাঁদের ঘুমাতে দেয় না। গাজা পুনর্গঠন ও পুনর্নির্মাণের প্রতিটি প্রচেষ্টায় নারীদের উপস্থিতি চান তাঁরা। আমাল বলেন, ‘গাজা পুনর্গঠন ও পুনর্নির্মাণের আগে আমাদের নারী হিসেবে, ফিলিস্তিনি হিসেবে নিজেদের পুনর্নির্মাণ করতে হবে।’
সূত্র: এনপিআর, ইউএন উইমেন

রেডিও চ্যানেল এনপিআরকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক শ্রৌক আল আইলা। তিনি বলতে শুরু করেন, ‘আমি একধরনের হ্যাংওভারের মধ্যে আছি। আজ সকালে খুব অদ্ভুত লাগছিল। কারণ, আমি বিমান হামলা ও বিস্ফোরণ ছাড়া গভীরভাবে ঘুমানোর সুযোগ পেয়েছিলাম। এটা সত্যিই অদ্ভুত লাগছে।’
৭০০ দিনের বেশি সহিংসতার পর ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে। তবু শান্ত হয়নি গাজার আকাশ। কিন্তু গাজাবাসী, বিশেষত নারী ও কিশোরীদের মধ্যে ভঙ্গুর হলেও দেখা দিয়েছে আশা—বেঁচে থাকার আর এগিয়ে যাওয়ার আশা। যুদ্ধের পুরো সময়ে গাজার অধিকাংশ নারী কমপক্ষে চারবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ইউএন উইমেনের তথ্য অনুযায়ী, ১০ লাখের বেশি নারী ও কিশোরীর খাদ্যসহায়তার প্রয়োজন এবং প্রায় আড়াই লাখের প্রয়োজন জরুরি পুষ্টি সহায়তা।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার ১৬ দিনের মাথায় বাড়িতে বোমা হামলায় নিহত হন আইলার স্বামী। এর পর থেকে নিজের কন্যাশিশুর সঙ্গে জীবন যাপন করছেন তিনি। আইলা জানান, তাঁর কন্যাটি তার বয়সের অর্ধেকের বেশি সময় খাওয়ার পানি, চিকিৎসাসামগ্রী, দুধ আর ডায়াপার ছাড়া কাটিয়েছে। দুর্ভিক্ষের কারণে সে ক্যানড ফুডের ওপর বড় হয়েছে। ফলে শিশুটি আপেল, কলা ও অন্য সব ধরনের ফল চিনতে পারে না। গাজায় প্রতি সাতটি পরিবারের মধ্যে একটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন একজন নারী। তাঁদের এখন সরাসরি সহায়তা দরকার, যাতে তাঁরা সন্তানদের খাওয়াতে পারেন, স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারেন, জীবিকা পুনর্গঠন করতে পারেন এবং সবকিছু হারানোর পর কিছুটা স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করতে পারেন।
এনপিআরকে সাক্ষাৎকার দেন শাইমা আহমেদ নামে আরও একজন কলেজশিক্ষার্থী। একটি বড় পরিবারে জন্ম নেওয়া শাইমা এই যুদ্ধে তাঁর পরিবারের ৭০ জন সদস্যকে হারিয়েছেন! তাঁদের মধ্যে কেউ মারা গেছেন, কয়েকজন নিখোঁজ আবার এখনো অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে—যাঁদের বেঁচে থাকার আশা নেই। বোমাবর্ষণে পরিবারের মানুষের কবরগুলোও হয়ে গেছে অচেনা, খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শাইমা বলেন, ‘শোকের জায়গাও আর নেই।’ তিনি জানান, তিনি ও তাঁর পরিবার দুই বছরে ১১ বার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। শাইমা স্নাতক শেষ করতে চলেছেন। আর এই পড়ার ইচ্ছাই এত দিন বাঁচিয়ে রেখেছে তাঁকে। যেমন সব হারিয়ে মেয়েকে নিয়ে বেঁচে থাকার ইচ্ছা বাঁচিয়ে রেখেছে আইলাকে।
শাইমা বলেন, ‘আমাদের জীবন কেবল সেই নিছক বেঁচে থাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর সত্যিকারের অর্থ ও উদ্দেশ্য থাকে। এটাই আমাদের এগিয়ে নিয়ে গেছে। আমাদের কাছে এই মাটির এত অর্থ আছে এবং গাজায় আপনি যা দেখেন, তা সত্যিই ধূসর এবং সর্বত্র ধ্বংসস্তূপ ও ধুলোয় ভরা। তবু আমরা একটি ভবিষ্যৎ দেখতে পাই।’
গাজায় নিহত, আহত, ধ্বংসের সংখ্যা কেবলই ডেটা নয়। যুদ্ধবিরতি স্থিতিশীল হওয়ার পাশাপাশি গাজার নারীবিষয়ক সংস্থাগুলো এরই মধ্যে পরবর্তী কাজের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশটির পুনরুদ্ধার সেখানকার নারীদের ঘুরে দাঁড়ানো ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সংস্থাগুলোতে কর্মরত নারীরা বারবার উচ্ছেদ, ভয় আর যন্ত্রণার শিকার হয়েছেন। উইমেনস অ্যাফেয়ার্স সেন্টারে কর্মরত আমাল বলেন, ‘আমরা এখানে মৃত্যুকে আর বুঝতে পারি না। এটি স্বাভাবিক মৃত্যু নয়—মৃত্যু আমাদের বস্তুতে, সংখ্যায় পরিণত করে। যেন আমরা কখনো ছিলামই না। আমাদের কাছে মানুষের দেহাবশেষ ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।’
তবু বেঁচে থাকার স্বপ্ন তাঁদের ঘুমাতে দেয় না। গাজা পুনর্গঠন ও পুনর্নির্মাণের প্রতিটি প্রচেষ্টায় নারীদের উপস্থিতি চান তাঁরা। আমাল বলেন, ‘গাজা পুনর্গঠন ও পুনর্নির্মাণের আগে আমাদের নারী হিসেবে, ফিলিস্তিনি হিসেবে নিজেদের পুনর্নির্মাণ করতে হবে।’
সূত্র: এনপিআর, ইউএন উইমেন


যেকোনো সম্পর্কের একটি মৌলিক দিক হলো—পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মান। তবে প্রাপ্য সম্মান (শুধু মৌখিক প্রশংসা নয়) পাওয়ার ক্ষেত্রে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন নারীরা। এটি ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে শুরু করে পেশাগত পরিবেশেও হতে পারে।
০৯ মার্চ ২০২৫
ডিজিটাল যুগ যোগাযোগের পরিধি বিস্তৃত করেছে, কিন্তু একই সঙ্গে খুলে দিয়েছে ‘অনলাইন সহিংসতা’র এক নতুন ক্ষেত্র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা ভার্চুয়াল স্পেস এখন শুধু মতপ্রকাশের জায়গা নয়, বরং অনেক সময় ঘৃণাবার্তা, হয়রানি, হুমকি, অপমান ও মানহানির আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে।
২ দিন আগে
নিরাপদ এবং নিশ্চিত কর্মপরিবেশ পাওয়া যেকোনো কর্মজীবী মানুষের একটি মৌলিক চাহিদা। কর্মপরিবেশ ও কর্মস্থল নিরাপদ যদি না হয়, সেখানে নারী কিংবা পুরুষ—কেউ নিরাপদ নন। আর এ বিষয়টি শুধু চাকরিজীবনে নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। হেঁটে গেলে অন্য সহকর্মীরা আপনার দিকে কীভাবে তাকাচ্ছেন, কিংবা দুজন সহকর
৪ দিন আগে
আমেরিকার ইতিহাসে দীর্ঘকাল ধরে চলা টেলিভিশন সিরিজ মিট দ্য প্রেস। অনুষ্ঠানটি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্যানেল আলোচনার একটি মানদণ্ড তৈরি করেছিল। এই অনুষ্ঠানের কো-ক্রিয়েটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন মার্থা জেন রাউন্ট্রি।
৪ দিন আগেফিচার ডেস্ক

আমেরিকার ইতিহাসে দীর্ঘকাল ধরে চলা টেলিভিশন সিরিজ মিট দ্য প্রেস। অনুষ্ঠানটি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্যানেল আলোচনার একটি মানদণ্ড তৈরি করেছিল। এই অনুষ্ঠানের কো-ক্রিয়েটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন মার্থা জেন রাউন্ট্রি।
একজন নারী হিসেবে মার্থা এমন এক সময়ে টেলিভিশন অনুষ্ঠান প্রযোজনার জগতে এসে সাফল্য লাভ করেন, যখন এই শিল্পে পুরুষেরাই প্রধান ভূমিকা পালন করতেন। মিট দ্য প্রেসের ইতিহাসে তিনি একমাত্র নারী, যিনি অনুষ্ঠানটির প্রথম মডারেটর বা উপস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৪৫ সালে মার্থা লিভ ইট টু দ্য গার্লস নামে রেডিওর প্রথম প্যানেল শো তৈরি করতেন, যেখানে নারীরাই ছিলেন মূল আলোচক। এর মাধ্যমে তিনি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিষয়ে নারীদের মতামত প্রকাশ করার জন্য একটি জনপ্রিয় মঞ্চ তৈরি করেছিলেন। তাঁর সহকর্মীরা তাঁকে ‘আ ডিজেল ইঞ্জিন আন্ডার আ লেইস রুমাল’ বলে আখ্যায়িত করেন। বাইরে থেকে মার্থা শান্ত ও মার্জিত হলেও মানসিকভাবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত দৃঢ়চেতা মানুষ। ছিলেন কর্মশক্তিতে ভরপুর এবং তাঁর কাজের গতি ছিল প্রখর।
মার্থা ১৯৫১ সালে ন্যাশনাল ফ্র্যাটারনিটি ফর উইমেন ইন জার্নালিজম কর্তৃক টেলিভিশন অনুষ্ঠানের ‘অসামান্য নারী’ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। মার্থা জেন রাউন্ট্রির জন্ম ১৯১১ সালের ২৩ অক্টোবর, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায়। ১৯৯৯ সালের ২৩ আগস্ট ওয়াশিংটন ডিসিতে তিনি মারা যান।

আমেরিকার ইতিহাসে দীর্ঘকাল ধরে চলা টেলিভিশন সিরিজ মিট দ্য প্রেস। অনুষ্ঠানটি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্যানেল আলোচনার একটি মানদণ্ড তৈরি করেছিল। এই অনুষ্ঠানের কো-ক্রিয়েটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন মার্থা জেন রাউন্ট্রি।
একজন নারী হিসেবে মার্থা এমন এক সময়ে টেলিভিশন অনুষ্ঠান প্রযোজনার জগতে এসে সাফল্য লাভ করেন, যখন এই শিল্পে পুরুষেরাই প্রধান ভূমিকা পালন করতেন। মিট দ্য প্রেসের ইতিহাসে তিনি একমাত্র নারী, যিনি অনুষ্ঠানটির প্রথম মডারেটর বা উপস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৪৫ সালে মার্থা লিভ ইট টু দ্য গার্লস নামে রেডিওর প্রথম প্যানেল শো তৈরি করতেন, যেখানে নারীরাই ছিলেন মূল আলোচক। এর মাধ্যমে তিনি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিষয়ে নারীদের মতামত প্রকাশ করার জন্য একটি জনপ্রিয় মঞ্চ তৈরি করেছিলেন। তাঁর সহকর্মীরা তাঁকে ‘আ ডিজেল ইঞ্জিন আন্ডার আ লেইস রুমাল’ বলে আখ্যায়িত করেন। বাইরে থেকে মার্থা শান্ত ও মার্জিত হলেও মানসিকভাবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত দৃঢ়চেতা মানুষ। ছিলেন কর্মশক্তিতে ভরপুর এবং তাঁর কাজের গতি ছিল প্রখর।
মার্থা ১৯৫১ সালে ন্যাশনাল ফ্র্যাটারনিটি ফর উইমেন ইন জার্নালিজম কর্তৃক টেলিভিশন অনুষ্ঠানের ‘অসামান্য নারী’ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। মার্থা জেন রাউন্ট্রির জন্ম ১৯১১ সালের ২৩ অক্টোবর, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায়। ১৯৯৯ সালের ২৩ আগস্ট ওয়াশিংটন ডিসিতে তিনি মারা যান।


যেকোনো সম্পর্কের একটি মৌলিক দিক হলো—পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মান। তবে প্রাপ্য সম্মান (শুধু মৌখিক প্রশংসা নয়) পাওয়ার ক্ষেত্রে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন নারীরা। এটি ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে শুরু করে পেশাগত পরিবেশেও হতে পারে।
০৯ মার্চ ২০২৫
ডিজিটাল যুগ যোগাযোগের পরিধি বিস্তৃত করেছে, কিন্তু একই সঙ্গে খুলে দিয়েছে ‘অনলাইন সহিংসতা’র এক নতুন ক্ষেত্র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা ভার্চুয়াল স্পেস এখন শুধু মতপ্রকাশের জায়গা নয়, বরং অনেক সময় ঘৃণাবার্তা, হয়রানি, হুমকি, অপমান ও মানহানির আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে।
২ দিন আগে
নিরাপদ এবং নিশ্চিত কর্মপরিবেশ পাওয়া যেকোনো কর্মজীবী মানুষের একটি মৌলিক চাহিদা। কর্মপরিবেশ ও কর্মস্থল নিরাপদ যদি না হয়, সেখানে নারী কিংবা পুরুষ—কেউ নিরাপদ নন। আর এ বিষয়টি শুধু চাকরিজীবনে নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। হেঁটে গেলে অন্য সহকর্মীরা আপনার দিকে কীভাবে তাকাচ্ছেন, কিংবা দুজন সহকর
৪ দিন আগে
রেডিও চ্যানেল এনপিআরকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক শ্রৌক আল আইলা। তিনি বলতে শুরু করেন, ‘আমি একধরনের হ্যাংওভারের মধ্যে আছি। আজ সকালে খুব অদ্ভুত লাগছিল। কারণ, আমি বিমান হামলা ও বিস্ফোরণ ছাড়া গভীরভাবে ঘুমানোর সুযোগ পেয়েছিলাম। এটা সত্যিই অদ্ভুত লাগছে।’
৪ দিন আগে