প্রমিতি কিবরিয়া ইসলাম
বাংলাদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোতে পুরুষদের নারীর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মানের অভাব একটি গুরুতর সমস্যা। যদিও বাংলাদেশের সংবিধান নারীদের সমান অধিকার দেয় এবং নারীশিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচুর আইন ও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে বাস্তবে সমাজ ও রাষ্ট্রের অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণমূলক ভূমিকায় নারীকে এখনো কম গুরুত্ব দেওয়া হয়। পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব, পারিবারিক কাঠামো, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং অর্থনৈতিক অবস্থা—এসব মিলিয়ে বাংলাদেশের পুরুষেরা নারীকে অনেক সময় একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে, যেখানে নারীর স্বাধীনতা, ক্ষমতায়ন এবং আত্মবিশ্বাসকে উপেক্ষা করা হয়।
পুরুষদের মধ্যে কেন নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন না করার মনোভাব দেখা যায়? এর উত্তরটি সহজ নয়। এটি শুধু ব্যক্তিগত মানসিকতার সমস্যা নয়, বরং এটি বৃহত্তর সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে গড়ে ওঠা একটি জটিল বিষয়। বাংলাদেশে নারীর অবস্থান, তার অধিকার, তার স্বাধীনতা এবং সম্মান—এসব বিষয় পারস্পরিক সম্পর্কিত। নারীকে দমিয়ে রাখা, পুরুষদের অধীনস্থ বা নিচু অবস্থানে রাখার প্রবণতা— এটি শুধু বাংলাদেশেই বিদ্যমান তা নয়, কম বেশি সব দেশেই দেখা যায়।
যেকোনো সম্পর্কের একটি মৌলিক দিক হলো—পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মান। তবে প্রাপ্য সম্মান (শুধু মৌখিক প্রশংসা নয়) পাওয়ার ক্ষেত্রে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন নারীরা। এটি ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে শুরু করে পেশাগত পরিবেশেও হতে পারে।
সচেতনতার অভাব
পুরুষেরা সাধারণত নারীদের প্রতি সম্মান দেখানোর বিষয়টি আলাদা করে ভাবেন না বা গুরুত্ব দেন না। পুরুষেরা ঠিকই একে অপরের সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করতে জানে, যেমন: বন্ধু বা সহকর্মীদের সঙ্গে। কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে কেন ব্যতিক্রম? এর একটি সরল ব্যাখ্যা হতে পারে, হয় তারা বিপরীত লিঙ্গকে সম্মান দিতে জানে না, অথবা সমান যোগ্য বিবেচনায় সেটি ভেবেই দেখে না। এটি এক ধরনের অবহেলা বা উপেক্ষা হতে পারে।
পুরুষেরা জানে কীভাবে একে অপরের সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করতে হয়, তা সে সামাজিক পরিবেশে হোক, কর্মক্ষেত্রে হোক বা প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতিতে হোক। অজুহাত হিসেবে পুরুষেরা যদি দাবি করে যে, তারা কখনো নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন নিয়ে ভাবেনি বা জানে না, তাহলে তারা আসলে নারীদের প্রতি তাদের আচরণ, সম্পর্কে ক্ষেত্রে সমান না ভাবা এবং সাধারণত নারী–পুরুষ সম্পর্কের ভেতরে যে বৈষম্য বিদ্যমান, তা নিয়ে চিন্তা বা আত্মসমালোচনা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না। এই প্রতিক্রিয়া একটি সমাজের অবচেতন নৈতিক চর্চার প্রতিফলন, যেখানে নারীদের প্রতি সম্মান প্রত্যাশিত বা প্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত হয় না।
নারী ও পুরুষের কাজ আলাদা
নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন বা দায়িত্ব এড়ানোর জন্য পুরুষদের আরেকটি সাধারণ কৌশল হলো নারীদের প্রশংসা করা! যেমন: নারীরা এসব কাজে অনেক ভালো। এটি বিশেষ করে গৃহস্থালির কাজ (রান্না, সূচিকর্ম, ঘর গোছানো ইত্যাদি), সন্তান লালন–পালন এবং আবেগ সম্পর্কিত কাজে। সমাজে ছেলেদের আবেগবর্জিত কঠোর বাস্তবতার শিক্ষা দেওয়ার চল রয়েছে। সে ক্ষেত্রে নারীদের আবেগী, কোমল হৃদয়ের বলে ধারণা প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এ ধরনের বাহানা আসলে সূক্ষ্মভাবে ঐতিহ্যগত লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকাকেই শক্তিশালী করে।
পুরুষেরা বলে, নারীরা শিশুদের দেখাশোনায় তাদের চেয়ে ভালো। আপাতদৃষ্টিতে এটিকে নারীর প্রতি অকুণ্ঠ প্রশংসা বলেই মনে হতে পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এখানে যা ঘটছে, তা হলো এক ধরনের চালাকি—প্রশংসার ছদ্মবেশে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া।
কাউকে নিয়ন্ত্রণ বা বশীভূত করে রাখার একটি মোক্ষম কৌশল হিসেবে সাধারণত ক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠী সম্পর্কে কর্তৃত্ববাদীরা নিজস্ব ধারণা প্রচার করে। ওই জনগোষ্ঠীর আচরণ, মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠার ভান করে। ঠিক একই ভাবে পুরুষেরাও হয় নারীদের সম্পর্কে নিজেদের ধারণাকেই প্রতিষ্ঠিত করতে চায় অথবা নারীদের বুঝতে অক্ষমতার দোহাই দেয়।
কখনো কখনো প্রশংসাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে কৌশলে কাউকে নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাবিত করা হয়। প্রকৃত প্রশংসা থেকে এটি আলাদা। কারণ এটি সাধারণত কাউকে প্রভাবিত করার জন্য ব্যবহার করা হয়, যাতে তারা এমনভাবে কাজ করে যা প্রশংসাকারী ব্যক্তি কোনো না কোনোভাবে লাভবান হয়। এটা এমন এক ধরনের প্রশংসা যা খুব সূক্ষ্মভাবে কাজ করে এবং যার ফলে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি নিজেকে বিশেষ, প্রশংসিত বা স্বীকৃত বলে ভাবতে পারে। তার অজান্তেই এর মাধ্যমে প্রশংসাকারী ব্যক্তি গোপন উদ্দেশ্য হাসিল করে।
এই কৌশলটি শুধু নারীদের ওপর দায়িত্বের বোঝা চাপায় না, বরং তাদের সময় ও শক্তি মূল্যহীন করে তোলে। পরিবর্তে, এই কৌশল ব্যবহার করে নির্দিষ্ট কর্মকাণ্ডগুলোতে পুরুষের অংশগ্রহণ না থাকাকে যুক্তিসংগত করে তোলা হয়। পুরুষেরা দায়িত্ব নেওয়ার পরিবর্তে, নারীদের ওপর আরও দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়।
শর্তসাপেক্ষে সম্মান
কিছু পুরুষ শুধু তখনই নারীদের সম্মান করবে যখন তাদের মা বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ (কর্মস্থল ইত্যাদি) বলবে যে, তাদের এটি করা উচিত। এই ধরনের সম্মানের মধ্যে কোনো আন্তরিকতা থাকে না। বরং পরিণতির ভয় থেকে করা হয়।
সমাজে সাধারণত, নারীদের সম্মান করতে শেখানো হয় ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক বা নৈতিক বাধ্যবাধকতা থেকে। অর্থাৎ, পুরুষদের ওপর সামাজিক বা পারিবারিক চাপ থাকে, এর সঙ্গে নারীর মর্যাদা অনুধাবনের কোনো সম্পর্ক নেই। এর ফলে, তাদের মুখের কথা এবং কাজে বড় ধরনের পার্থক্য তৈরি হয়। নারীদের সম্মান করে বলে দাবি করলেও, তাদের আচরণে সব সময় তা প্রকাশ পায় না। তারা মূলত শাস্তি (আইনগত) বা বিচার (পাবলিক জাজমেন্ট) এড়ানোর জন্য সামাজিক চর্চা মেনে চলে মাত্র। তারা সমতা এবং সম্মানের গুরুত্বকে মানসিকভাবে গভীর ও অর্থপূর্ণভাবে মেনে নিতে ব্যর্থ হয়।
ঐতিহাসিক অস্বীকৃতি এবং সমাজের অবজ্ঞা
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হলো, পুরুষদের বর্তমান লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা এবং সামাজিক প্রত্যাশার পরিবর্তনকে অস্বীকার করা। কিছু পুরুষ এখনো বিশ্বাস করে যে, নারীদের সম্মান করার প্রয়োজন নেই বা লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে যে পরিবর্তনগুলো ঘটছে, তা অতিরঞ্জিত বা নারীদের জন্য অপ্রাসঙ্গিক। যখন নারীদের সমান করে দেখার প্রয়োজনীয়তার কথা তোলা হয়, তখন তারা প্রায়ই নারীদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঐতিহাসিক বাস্তবতাকে খাটো করে দেখে অথবা নারীর প্রতি অসম্মানকে সমাজের একটি সমস্যা হিসেবেও অগ্রাহ্য করে।
নারীদের অধিকার অর্জনের সংগ্রামের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে অস্বীকৃতির বিষয়টি বোঝার জন্য, নিম্নলিখিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইনগত মাইলফলকগুলোর সময়রেখা বিবেচনা করা যেতে পারে—
১৮৪৮–সেনেকা ফলস কনভেনশন: প্রথম নারীদের অধিকার সম্মেলন, যেখানে নারীদের ভোটাধিকার এবং সমান অধিকার দাবি করা হয়।
১৯১৯–আমেরিকার সংবিধানের ১৯তম সংশোধনী: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের ভোটাধিকার অর্জন।
১৯৪৫–জাতিসংঘের মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র: নারী ও পুরুষের সমান অধিকার জাতিসংঘের সনদে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
১৯৬৩–যুক্তরাষ্ট্র: নারী-পুরুষের সমান বেতন দেওয়ার আইন পাস হয়।
১৯৭২–যুক্তরাষ্ট্র: শিক্ষা এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য নিষিদ্ধ করা হয়।
১৯৭৫–জাতিসংঘের নারীদের প্রতি বৈষম্য বিলোপ সনদ: নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি গৃহীত হয়।
২০১০–আইসিডব্লিউআর (সিইডিএডব্লিউ): নারী অধিকারের জন্য বৈশ্বিক সংবিধান, যা জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোকে নারীদের বিরুদ্ধে সব ধরনের বৈষম্য দূর করতে বাধ্য করে।
এই মাইলফলকগুলো নারীদের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অধিকার অর্জনে অসংখ্য সংগ্রামের ফলস্বরূপ, যা বর্তমানে সমাজে নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের প্রয়োজনীয়তা প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে, কিছু পুরুষ এখনো এসব পরিবর্তনকে অস্বীকার করে, যা এই সংগ্রামের অগ্রগতি এবং নারীদের অধিকার সম্পর্কে তাদের গভীরভাবে অবহিত না হওয়ারই ইঙ্গিত।
এই আইনগত অগ্রগতির পরেও, অনেক পুরুষ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে স্বীকার করতে চায় না। নিপীড়নের বিরুদ্ধে নারীদের দীর্ঘ সংগ্রামের ফলে সাধিত পরিবর্তনগুলোকে অস্বীকার বা হালকা করে দেখিয়ে, পুরুষেরা তাদের নিজেদের দায় এড়িয়ে যেতে চায়।
এ ধরনের অস্বীকৃতি পুরুষদের যে সুবিধা দেয়—
পিতৃতান্ত্রিকতার ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক ভিত্তি
নারীদের সম্মান করতে পুরুষদের মনে যে বাধা, তার অন্যতম প্রধান কারণ হলো—পিতৃতান্ত্রিকতার ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক ভিত্তি। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, পৃথিবীর বিভিন্ন সমাজে পুরুষদের ক্ষমতার উচ্চস্থানে বসিয়ে, নারীদের অধিকার অস্বীকার করা হয়েছে। প্রাচীন সভ্যতা থেকে শুরু করে আধুনিক প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত আইন, ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় অনুশাসনে পুরুষদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত ছিল।
সামাজিকীকরণ: লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা
ছোটবেলা থেকে ছেলে-মেয়েদের কঠোর লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা অনুসরণ করতে শেখানো হয়, যা ছেলেদের আধিপত্যশীল, প্রতিযোগিতামূলক এবং আবেগহীন হতে উদ্বুদ্ধ করে—যা সাধারণত ‘প্রথাগত পৌরুষ’–এর সঙ্গে সম্পর্কিত। অন্যদিকে, মেয়েদের কোমল এবং সহানুভূতিশীল হতে উৎসাহিত করা হয়। মনোবিজ্ঞানী মাইকেল কিমেল তাঁর বই ম্যানহুড ইন আমেরিকা–তে যুক্তি দেন, এই লিঙ্গভিত্তিক প্রত্যাশাগুলো পুরুষদের ওপর একটি বিশাল চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে তারা এমন পুরুষত্বের মডেল অনুসরণ করে যা নারীদের দুর্বল বা অক্ষম হিসেবে দেখায়।
এই ধরনের লিঙ্গভিত্তিক নিদর্শনগুলো মিডিয়া, বিজ্ঞাপন এবং এমনকি পরিবারের মধ্যে প্রচারিত হয়, যা নারীদের কম সম্মানযোগ্য করে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, ‘আলফা মেল’ নামে এমন এক পুরুষের ধারণা দেওয়া, যে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে, নিয়ন্ত্রণ দাবি করে এবং অন্যদের, বিশেষত নারীদের, স্বাধীনতা সংকুচিত করে। এই সাংস্কৃতিক মডেল অনেক পুরুষের মধ্যে গভীরভাবে প্রোথিত, যা তাদের নারীদের সমান হিসেবে সম্মান করতে বাধা দেয়।
ক্ষমতা এবং বিশেষাধিকার হারানোর ভয়
নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন না করার আরেকটি কারণ হলো, পুরুষদের ক্ষমতা হারানোর ভয়। পিতৃতান্ত্রিক সমাজে পুরুষেরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অধিকাংশ সুবিধা ভোগ করে। লিঙ্গ সমতার আন্দোলনের উত্থান এই ক্ষমতার কাঠামোকে হুমকির মুখে ফেলেছে, যার ফলে কিছু পুরুষ পরিবর্তন প্রতিরোধ করে। এই ভয় বিভিন্ন আচরণে প্রতিফলিত হয়, যেমন ম্যানস্প্লেনিং (পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি), গ্যাসলাইটিং, অথবা সরাসরি আক্রমণ, যা আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে করা হয়।
মনস্তাত্ত্বিক কারণ: নিরাপত্তাহীনতা এবং আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার অভাব
কিছু ক্ষেত্রে পুরুষদের নারীর প্রতি সম্মান দেখাতে না পারার পেছনে গভীর মনস্তাত্ত্বিক কারণ থাকতে পারে। যেমন: নিরাপত্তাহীনতা অথবা আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার (ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স) অভাব। অনেক পুরুষকে আবেগ বা মানবিক দুর্বলতা দমন করতে শেখানো হয়, যার ফলে তারা সম্পর্কের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান এবং সহানুভূতির ভিত্তিতে চলতে অক্ষম। এই আবেগ শূন্যতা নারীদের প্রতি অসম্মানজনক আচরণের মধ্যে প্রকাশ পেতে পারে, কারণ তারা নিজেদের অক্ষমতা বা হুমকির সম্মুখীন হলে নিরাপত্তাহীনতা থেকে নিয়ন্ত্রণ বা আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে পারে।
মিসোজিনি এবং অধিকারবোধ
নারীদের সম্মান করতে পুরুষদের যে সমস্যা, তার মূল কারণ হলো মিসোজিনি বা নারীদের প্রতি ঘৃণা বা সংস্কার। মিসোজিনি শুধু প্রকাশ্য ঘৃণার বিষয় নয়, এটি আরও সূক্ষ্মভাবে প্রকাশ পেতে পারে, যেমন নারীদের অর্জনকে তুচ্ছ করা, তাদের অবজ্ঞা করা।
আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন (এপিএ)–এর গবেষণা দেখিয়েছে, যারা মিসোজিনিস্টিক দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করে, তারা নারীদের কম সক্ষম, কম অধিকারের যোগ্য এবং তাদের ওপর ঘটে যাওয়া নির্যাতনের জন্য নিজেরাই দায়ী বলে মনে করে। কারণ পুরুষদের মনোভাব হলো, নারীর ওপর তাদের কিছু বিশেষাধিকার রয়েছে। কর্মক্ষেত্র, সম্পর্ক বা সামাজিক জীবনে তারা এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে।
বাংলাদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোতে পুরুষদের নারীর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মানের অভাব একটি গুরুতর সমস্যা। যদিও বাংলাদেশের সংবিধান নারীদের সমান অধিকার দেয় এবং নারীশিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচুর আইন ও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে বাস্তবে সমাজ ও রাষ্ট্রের অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণমূলক ভূমিকায় নারীকে এখনো কম গুরুত্ব দেওয়া হয়। পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব, পারিবারিক কাঠামো, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং অর্থনৈতিক অবস্থা—এসব মিলিয়ে বাংলাদেশের পুরুষেরা নারীকে অনেক সময় একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে, যেখানে নারীর স্বাধীনতা, ক্ষমতায়ন এবং আত্মবিশ্বাসকে উপেক্ষা করা হয়।
পুরুষদের মধ্যে কেন নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন না করার মনোভাব দেখা যায়? এর উত্তরটি সহজ নয়। এটি শুধু ব্যক্তিগত মানসিকতার সমস্যা নয়, বরং এটি বৃহত্তর সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে গড়ে ওঠা একটি জটিল বিষয়। বাংলাদেশে নারীর অবস্থান, তার অধিকার, তার স্বাধীনতা এবং সম্মান—এসব বিষয় পারস্পরিক সম্পর্কিত। নারীকে দমিয়ে রাখা, পুরুষদের অধীনস্থ বা নিচু অবস্থানে রাখার প্রবণতা— এটি শুধু বাংলাদেশেই বিদ্যমান তা নয়, কম বেশি সব দেশেই দেখা যায়।
যেকোনো সম্পর্কের একটি মৌলিক দিক হলো—পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মান। তবে প্রাপ্য সম্মান (শুধু মৌখিক প্রশংসা নয়) পাওয়ার ক্ষেত্রে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন নারীরা। এটি ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে শুরু করে পেশাগত পরিবেশেও হতে পারে।
সচেতনতার অভাব
পুরুষেরা সাধারণত নারীদের প্রতি সম্মান দেখানোর বিষয়টি আলাদা করে ভাবেন না বা গুরুত্ব দেন না। পুরুষেরা ঠিকই একে অপরের সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করতে জানে, যেমন: বন্ধু বা সহকর্মীদের সঙ্গে। কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে কেন ব্যতিক্রম? এর একটি সরল ব্যাখ্যা হতে পারে, হয় তারা বিপরীত লিঙ্গকে সম্মান দিতে জানে না, অথবা সমান যোগ্য বিবেচনায় সেটি ভেবেই দেখে না। এটি এক ধরনের অবহেলা বা উপেক্ষা হতে পারে।
পুরুষেরা জানে কীভাবে একে অপরের সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করতে হয়, তা সে সামাজিক পরিবেশে হোক, কর্মক্ষেত্রে হোক বা প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতিতে হোক। অজুহাত হিসেবে পুরুষেরা যদি দাবি করে যে, তারা কখনো নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন নিয়ে ভাবেনি বা জানে না, তাহলে তারা আসলে নারীদের প্রতি তাদের আচরণ, সম্পর্কে ক্ষেত্রে সমান না ভাবা এবং সাধারণত নারী–পুরুষ সম্পর্কের ভেতরে যে বৈষম্য বিদ্যমান, তা নিয়ে চিন্তা বা আত্মসমালোচনা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না। এই প্রতিক্রিয়া একটি সমাজের অবচেতন নৈতিক চর্চার প্রতিফলন, যেখানে নারীদের প্রতি সম্মান প্রত্যাশিত বা প্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত হয় না।
নারী ও পুরুষের কাজ আলাদা
নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন বা দায়িত্ব এড়ানোর জন্য পুরুষদের আরেকটি সাধারণ কৌশল হলো নারীদের প্রশংসা করা! যেমন: নারীরা এসব কাজে অনেক ভালো। এটি বিশেষ করে গৃহস্থালির কাজ (রান্না, সূচিকর্ম, ঘর গোছানো ইত্যাদি), সন্তান লালন–পালন এবং আবেগ সম্পর্কিত কাজে। সমাজে ছেলেদের আবেগবর্জিত কঠোর বাস্তবতার শিক্ষা দেওয়ার চল রয়েছে। সে ক্ষেত্রে নারীদের আবেগী, কোমল হৃদয়ের বলে ধারণা প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এ ধরনের বাহানা আসলে সূক্ষ্মভাবে ঐতিহ্যগত লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকাকেই শক্তিশালী করে।
পুরুষেরা বলে, নারীরা শিশুদের দেখাশোনায় তাদের চেয়ে ভালো। আপাতদৃষ্টিতে এটিকে নারীর প্রতি অকুণ্ঠ প্রশংসা বলেই মনে হতে পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এখানে যা ঘটছে, তা হলো এক ধরনের চালাকি—প্রশংসার ছদ্মবেশে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া।
কাউকে নিয়ন্ত্রণ বা বশীভূত করে রাখার একটি মোক্ষম কৌশল হিসেবে সাধারণত ক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠী সম্পর্কে কর্তৃত্ববাদীরা নিজস্ব ধারণা প্রচার করে। ওই জনগোষ্ঠীর আচরণ, মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠার ভান করে। ঠিক একই ভাবে পুরুষেরাও হয় নারীদের সম্পর্কে নিজেদের ধারণাকেই প্রতিষ্ঠিত করতে চায় অথবা নারীদের বুঝতে অক্ষমতার দোহাই দেয়।
কখনো কখনো প্রশংসাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে কৌশলে কাউকে নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাবিত করা হয়। প্রকৃত প্রশংসা থেকে এটি আলাদা। কারণ এটি সাধারণত কাউকে প্রভাবিত করার জন্য ব্যবহার করা হয়, যাতে তারা এমনভাবে কাজ করে যা প্রশংসাকারী ব্যক্তি কোনো না কোনোভাবে লাভবান হয়। এটা এমন এক ধরনের প্রশংসা যা খুব সূক্ষ্মভাবে কাজ করে এবং যার ফলে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি নিজেকে বিশেষ, প্রশংসিত বা স্বীকৃত বলে ভাবতে পারে। তার অজান্তেই এর মাধ্যমে প্রশংসাকারী ব্যক্তি গোপন উদ্দেশ্য হাসিল করে।
এই কৌশলটি শুধু নারীদের ওপর দায়িত্বের বোঝা চাপায় না, বরং তাদের সময় ও শক্তি মূল্যহীন করে তোলে। পরিবর্তে, এই কৌশল ব্যবহার করে নির্দিষ্ট কর্মকাণ্ডগুলোতে পুরুষের অংশগ্রহণ না থাকাকে যুক্তিসংগত করে তোলা হয়। পুরুষেরা দায়িত্ব নেওয়ার পরিবর্তে, নারীদের ওপর আরও দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়।
শর্তসাপেক্ষে সম্মান
কিছু পুরুষ শুধু তখনই নারীদের সম্মান করবে যখন তাদের মা বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ (কর্মস্থল ইত্যাদি) বলবে যে, তাদের এটি করা উচিত। এই ধরনের সম্মানের মধ্যে কোনো আন্তরিকতা থাকে না। বরং পরিণতির ভয় থেকে করা হয়।
সমাজে সাধারণত, নারীদের সম্মান করতে শেখানো হয় ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক বা নৈতিক বাধ্যবাধকতা থেকে। অর্থাৎ, পুরুষদের ওপর সামাজিক বা পারিবারিক চাপ থাকে, এর সঙ্গে নারীর মর্যাদা অনুধাবনের কোনো সম্পর্ক নেই। এর ফলে, তাদের মুখের কথা এবং কাজে বড় ধরনের পার্থক্য তৈরি হয়। নারীদের সম্মান করে বলে দাবি করলেও, তাদের আচরণে সব সময় তা প্রকাশ পায় না। তারা মূলত শাস্তি (আইনগত) বা বিচার (পাবলিক জাজমেন্ট) এড়ানোর জন্য সামাজিক চর্চা মেনে চলে মাত্র। তারা সমতা এবং সম্মানের গুরুত্বকে মানসিকভাবে গভীর ও অর্থপূর্ণভাবে মেনে নিতে ব্যর্থ হয়।
ঐতিহাসিক অস্বীকৃতি এবং সমাজের অবজ্ঞা
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হলো, পুরুষদের বর্তমান লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা এবং সামাজিক প্রত্যাশার পরিবর্তনকে অস্বীকার করা। কিছু পুরুষ এখনো বিশ্বাস করে যে, নারীদের সম্মান করার প্রয়োজন নেই বা লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে যে পরিবর্তনগুলো ঘটছে, তা অতিরঞ্জিত বা নারীদের জন্য অপ্রাসঙ্গিক। যখন নারীদের সমান করে দেখার প্রয়োজনীয়তার কথা তোলা হয়, তখন তারা প্রায়ই নারীদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঐতিহাসিক বাস্তবতাকে খাটো করে দেখে অথবা নারীর প্রতি অসম্মানকে সমাজের একটি সমস্যা হিসেবেও অগ্রাহ্য করে।
নারীদের অধিকার অর্জনের সংগ্রামের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে অস্বীকৃতির বিষয়টি বোঝার জন্য, নিম্নলিখিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইনগত মাইলফলকগুলোর সময়রেখা বিবেচনা করা যেতে পারে—
১৮৪৮–সেনেকা ফলস কনভেনশন: প্রথম নারীদের অধিকার সম্মেলন, যেখানে নারীদের ভোটাধিকার এবং সমান অধিকার দাবি করা হয়।
১৯১৯–আমেরিকার সংবিধানের ১৯তম সংশোধনী: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের ভোটাধিকার অর্জন।
১৯৪৫–জাতিসংঘের মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র: নারী ও পুরুষের সমান অধিকার জাতিসংঘের সনদে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
১৯৬৩–যুক্তরাষ্ট্র: নারী-পুরুষের সমান বেতন দেওয়ার আইন পাস হয়।
১৯৭২–যুক্তরাষ্ট্র: শিক্ষা এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য নিষিদ্ধ করা হয়।
১৯৭৫–জাতিসংঘের নারীদের প্রতি বৈষম্য বিলোপ সনদ: নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি গৃহীত হয়।
২০১০–আইসিডব্লিউআর (সিইডিএডব্লিউ): নারী অধিকারের জন্য বৈশ্বিক সংবিধান, যা জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোকে নারীদের বিরুদ্ধে সব ধরনের বৈষম্য দূর করতে বাধ্য করে।
এই মাইলফলকগুলো নারীদের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অধিকার অর্জনে অসংখ্য সংগ্রামের ফলস্বরূপ, যা বর্তমানে সমাজে নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের প্রয়োজনীয়তা প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে, কিছু পুরুষ এখনো এসব পরিবর্তনকে অস্বীকার করে, যা এই সংগ্রামের অগ্রগতি এবং নারীদের অধিকার সম্পর্কে তাদের গভীরভাবে অবহিত না হওয়ারই ইঙ্গিত।
এই আইনগত অগ্রগতির পরেও, অনেক পুরুষ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে স্বীকার করতে চায় না। নিপীড়নের বিরুদ্ধে নারীদের দীর্ঘ সংগ্রামের ফলে সাধিত পরিবর্তনগুলোকে অস্বীকার বা হালকা করে দেখিয়ে, পুরুষেরা তাদের নিজেদের দায় এড়িয়ে যেতে চায়।
এ ধরনের অস্বীকৃতি পুরুষদের যে সুবিধা দেয়—
পিতৃতান্ত্রিকতার ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক ভিত্তি
নারীদের সম্মান করতে পুরুষদের মনে যে বাধা, তার অন্যতম প্রধান কারণ হলো—পিতৃতান্ত্রিকতার ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক ভিত্তি। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, পৃথিবীর বিভিন্ন সমাজে পুরুষদের ক্ষমতার উচ্চস্থানে বসিয়ে, নারীদের অধিকার অস্বীকার করা হয়েছে। প্রাচীন সভ্যতা থেকে শুরু করে আধুনিক প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত আইন, ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় অনুশাসনে পুরুষদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত ছিল।
সামাজিকীকরণ: লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা
ছোটবেলা থেকে ছেলে-মেয়েদের কঠোর লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা অনুসরণ করতে শেখানো হয়, যা ছেলেদের আধিপত্যশীল, প্রতিযোগিতামূলক এবং আবেগহীন হতে উদ্বুদ্ধ করে—যা সাধারণত ‘প্রথাগত পৌরুষ’–এর সঙ্গে সম্পর্কিত। অন্যদিকে, মেয়েদের কোমল এবং সহানুভূতিশীল হতে উৎসাহিত করা হয়। মনোবিজ্ঞানী মাইকেল কিমেল তাঁর বই ম্যানহুড ইন আমেরিকা–তে যুক্তি দেন, এই লিঙ্গভিত্তিক প্রত্যাশাগুলো পুরুষদের ওপর একটি বিশাল চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে তারা এমন পুরুষত্বের মডেল অনুসরণ করে যা নারীদের দুর্বল বা অক্ষম হিসেবে দেখায়।
এই ধরনের লিঙ্গভিত্তিক নিদর্শনগুলো মিডিয়া, বিজ্ঞাপন এবং এমনকি পরিবারের মধ্যে প্রচারিত হয়, যা নারীদের কম সম্মানযোগ্য করে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, ‘আলফা মেল’ নামে এমন এক পুরুষের ধারণা দেওয়া, যে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে, নিয়ন্ত্রণ দাবি করে এবং অন্যদের, বিশেষত নারীদের, স্বাধীনতা সংকুচিত করে। এই সাংস্কৃতিক মডেল অনেক পুরুষের মধ্যে গভীরভাবে প্রোথিত, যা তাদের নারীদের সমান হিসেবে সম্মান করতে বাধা দেয়।
ক্ষমতা এবং বিশেষাধিকার হারানোর ভয়
নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন না করার আরেকটি কারণ হলো, পুরুষদের ক্ষমতা হারানোর ভয়। পিতৃতান্ত্রিক সমাজে পুরুষেরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অধিকাংশ সুবিধা ভোগ করে। লিঙ্গ সমতার আন্দোলনের উত্থান এই ক্ষমতার কাঠামোকে হুমকির মুখে ফেলেছে, যার ফলে কিছু পুরুষ পরিবর্তন প্রতিরোধ করে। এই ভয় বিভিন্ন আচরণে প্রতিফলিত হয়, যেমন ম্যানস্প্লেনিং (পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি), গ্যাসলাইটিং, অথবা সরাসরি আক্রমণ, যা আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে করা হয়।
মনস্তাত্ত্বিক কারণ: নিরাপত্তাহীনতা এবং আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার অভাব
কিছু ক্ষেত্রে পুরুষদের নারীর প্রতি সম্মান দেখাতে না পারার পেছনে গভীর মনস্তাত্ত্বিক কারণ থাকতে পারে। যেমন: নিরাপত্তাহীনতা অথবা আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার (ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স) অভাব। অনেক পুরুষকে আবেগ বা মানবিক দুর্বলতা দমন করতে শেখানো হয়, যার ফলে তারা সম্পর্কের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান এবং সহানুভূতির ভিত্তিতে চলতে অক্ষম। এই আবেগ শূন্যতা নারীদের প্রতি অসম্মানজনক আচরণের মধ্যে প্রকাশ পেতে পারে, কারণ তারা নিজেদের অক্ষমতা বা হুমকির সম্মুখীন হলে নিরাপত্তাহীনতা থেকে নিয়ন্ত্রণ বা আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে পারে।
মিসোজিনি এবং অধিকারবোধ
নারীদের সম্মান করতে পুরুষদের যে সমস্যা, তার মূল কারণ হলো মিসোজিনি বা নারীদের প্রতি ঘৃণা বা সংস্কার। মিসোজিনি শুধু প্রকাশ্য ঘৃণার বিষয় নয়, এটি আরও সূক্ষ্মভাবে প্রকাশ পেতে পারে, যেমন নারীদের অর্জনকে তুচ্ছ করা, তাদের অবজ্ঞা করা।
আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন (এপিএ)–এর গবেষণা দেখিয়েছে, যারা মিসোজিনিস্টিক দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করে, তারা নারীদের কম সক্ষম, কম অধিকারের যোগ্য এবং তাদের ওপর ঘটে যাওয়া নির্যাতনের জন্য নিজেরাই দায়ী বলে মনে করে। কারণ পুরুষদের মনোভাব হলো, নারীর ওপর তাদের কিছু বিশেষাধিকার রয়েছে। কর্মক্ষেত্র, সম্পর্ক বা সামাজিক জীবনে তারা এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে।
আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না সেই সময় কেমন ছিল...একজন নারীর জন্য একা একটি হোটেলের লবিতে প্রবেশ করাই ছিল দুঃসাহসিক কাজ। আমি কখনো আমার স্বামী বা বাবাকে ছাড়া কোথাও যাইনি। লবিটা যেন এক মাইল চওড়া মনে হচ্ছিল। প্রতিটি পদক্ষেপে মনে হচ্ছিল আমি অজ্ঞান হয়ে যাব, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। বরং আমি ৮০০ ডলারের একটি
২০ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে কিশোরী মেয়েদের অগ্রগতির গতি ধীর বলে মত দেওয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত ইউনিসেফ, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল ও ইউএন উইমেনের এক প্রতিবেদনে। ‘গার্লস গোলস: হোয়াট হ্যাজ চেঞ্জড ফর গার্লস? অ্যাডোলেসেন্ট গার্লস রাইটস ওভার ৩০ ইয়ার্স’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে কিশোরী মেয়েদের ক্ষমতায়নে
২ দিন আগেপাঁচজন নারী কেবিন ক্রু সদস্যসহ ক্যাপ্টেন আনিতা ও ফার্স্ট অফিসার তাসনুভার নির্দেশনায় ঢাকা-ব্যাংকক-ঢাকা বিশেষ ফ্লাইট বিজি-৩৮৮ পরিচালিত হচ্ছে। নারীদের সমন্বয়ে বিশেষ ফ্লাইটটি আজ সকাল ১১টা ২০ মিনিটে ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করে।
২ দিন আগেশ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ, বেতন, মাতৃত্বকালীন–পিতৃত্বকালীন ছুটি, রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বসহ ১০টি সূচকের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয় এই তালিকা। এর আগে টানা দু’বছর এই সূচকের শীর্ষে ছিল আইসল্যান্ড। তবে, এবার সে স্থান দখলে নিয়েছে সুইডেন। এত দিন এই তালিকার সবচেয়ে পেছনে ছিল দক্ষিণ কোরিয়া।
২ দিন আগে