নূরুননবী শান্ত

পৃথিবীতে উৎপাদন ঐতিহ্য যে নারীর হাতে গড়ে উঠেছে, সেই তথ্য আজ সর্বজনবিদিত। সভ্যতার সূচনায় নারীই প্রকৃতি চষে পরিবারের খাদ্যসংস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করেছিলেন। উপমহাদেশীয় পুরাণে প্রকৃতি, বনদেবী, অসুর-সংহারী ইত্যাদি রূপে সম্মানিত করা হয় নারীকে। আজ যখন বৈশ্বিক উন্নয়ন লক্ষ্যের সাপেক্ষে বাংলাদেশ প্রকৃতিবিরুদ্ধ প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক বৈষম্যপূর্ণ উন্নয়ন ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের নগদ আকর্ষণের দিকে ঝুঁকেছে, তখনো নারীই রক্ষা করে চলেছেন স্থানীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্ক।
ঐতিহ্য প্রবাহিত হয় পরম্পরায়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের শিক্ষা, বৈষম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক রূপান্তর ধারা, ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি—সবই পরম্পরার সুতা ছিন্ন করে কায়েম করতে ব্যস্ত শিকড়-বিচ্ছিন্ন পুঁজির প্রতিযোগিতাময় ব্যক্তিসর্বস্ব সমাজ। সেই ব্যক্তি এতটাই স্বতন্ত্র যে ঐতিহ্য তার কাছে নিতান্ত পশ্চাৎপদ ধারণা ও পরিত্যাজ্য। এই প্রবণতা আত্মঘাতী, আত্মপরিচয়বিনাশী। কেননা ঐতিহ্যই চিহ্নিত করে জাতি, গোষ্ঠী, গোত্র, সম্প্রদায় তথা সমষ্টির আত্মপরিচয়। গভীরভাবে লক্ষ করলে বোঝা যায়, বাঙালির এবং বাংলাদেশে বসবাসরত অবাঙালি জাতিসত্তাগুলোর আত্মপরিচয়ের বাহক ঐতিহ্য চর্চার প্রধান ও দৃশ্যমান কুশীলব নারীরাই। প্রাচীনকাল, নিকট অতীত এবং বিপর্যস্ত বর্তমানে নারীই ঐতিহ্যের বাহক, চর্চাকারী এবং সঞ্চারক।
আবহমান বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পণ্য নকশিকাঁথা অথবা শীতলপাটি বুননশৈলী, বাংলাদেশের অঞ্চলভেদে প্রচলিত খাদ্যসংস্কৃতির রূপ ও স্বাদ বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্য, গৃহস্থালি বাসনপত্র থেকে শুরু করে বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পোশাক এবং অলংকারসহ বিবিধ সাংসারিক উপকরণ সংরক্ষণ, বিয়ের বিশিষ্ট আচারসহ বিয়ের গীত, জন্ম ও মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত পালনীয় আচার ইত্যাদির স্রষ্টা, চর্চাকারী, সংরক্ষণকারী এবং সঞ্চারক মূলত নারী। প্রতি গ্রামে, প্রতি গৃহে নিজস্ব ঐতিহ্য-প্রেম, সৃষ্টিশীলতা ও উৎপাদনশীলতার স্বপ্রণোদিত প্রয়োগে তাঁরাই টিকিয়ে রেখেছেন বাঙালির আত্মপরিচয় প্রকাশক ঐতিহ্য-চক্র। এই ঐতিহ্য-চক্রের নিরিখেই নির্ণয় করা যায় যেকোনো রাষ্ট্রসীমায় থাকা ভাষা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ঐক্যে জারিত বাসিন্দাদের জাতিগত, নৃগোষ্ঠীগত ও সামাজিক পরিচয়-স্বাতন্ত্র্য।
২০২২ সালের ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস’-এ জাতিসংঘ মহাসচিব ঐতিহ্যগত জ্ঞান সংরক্ষণ ও বিকাশে ‘আদিবাসী’ নারীদের অবদানের গুরুত্ব বিশেষভাবে তুলে ধরেছিলেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ৫০টির বেশি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ক্ষেত্রেও দেখা যায়, নারীরাই পরম্পরাগতভাবে তাঁদের খাদ্য, প্রাকৃতিক ওষুধপত্র, ভাষা, সংস্কৃতিসহ প্রায় সব ঐতিহ্যগত জ্ঞান ও চর্চার সংরক্ষক। যেমন গারো সম্প্রদায়ের নারীরা আজও সংরক্ষণ করে চলেছেন তেল-মসলাবিহীন মাছ-মাংস (গপ্পা) রান্নার নিজস্ব পদ্ধতি। সাঁওতালসহ বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারীদের হাতেই টিকে আছে তাঁদের গৃহ-আলপনার ঐতিহ্য। বস্তুগত, বিমূর্ত ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নারীরাই অগ্রবর্তী ভূমিকা পালন করে চলেছেন।
অথচ পরিচয়-স্বাতন্ত্র্যের প্রকৃত নির্মাতা নারীরা আজ বিভিন্নভাবে ঐতিহ্য-বিচ্ছিন্ন প্রগতির শিকার। সমাজ যেমন নারীর সংগীত-ঐতিহ্য, গীতপ্রবণতাসহ রুদ্ধ করতে চায় ঐতিহ্যিক সৃষ্টিশীলতা, তেমনি শিকড়-বিচ্ছিন্ন বিভ্রান্ত প্রগতিবাদীও ঐতিহ্য লালন ও চর্চাকে প্রগতি-প্রতিবন্ধক মনে করে। দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশের যেকোনো আসন্ন জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে, গ্রামে কিংবা নগরে, পরিবারের সব বয়সী সদস্যদের খাদ্য-বস্ত্র-জ্বালানি-জল সংরক্ষণে সব সময় সচেষ্ট থাকেন নারী। এটাই ঐতিহ্যগতভাবে হয়ে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে চিড়া, মুড়ি, গুড়, আচার ইত্যাদি জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার উপযুক্ত খাদ্য প্রস্তুত ও সংরক্ষণের ঐতিহ্য নারীর কাছ থেকে ছিনতাই করেছে করপোরেটের কালো হাত। ব্যবসা বিকাশের নামে এ ধরনের ঐতিহ্য ছিনতাই নারীর স্বাভাবিক ঐতিহ্য চর্চা ও সংরক্ষণ সক্ষমতা হত্যার শামিল।
নারীর শস্যবীজ সংরক্ষণ ঐতিহ্যেও থাবা বসিয়েছে পুঁজিবাদী করপোরেটের লম্বা হাত। অথচ বৈচিত্র্যময় দেশি ধানবীজ ও পাটবীজ থেকে শুরু করে লাউ, মিষ্টিকুমড়া, করলা, ঝিঙে, সরিষা, মসুর, পুঁইশাক, লালশাক, ডাঁটা, ঢ্যাঁড়সসহ সব রকমের স্থানীয় সবজি, শস্য ও ফল বীজ ঐতিহ্যগতভাবে নারীরাই সংরক্ষণ করে এসেছেন। বীজ বাছাই ও শোধন থেকে শুরু করে চারা তোলা, হাঁস-মুরগি পালন, দুধ দোহন, বসতবাড়িতে ফুল চাষ, নকশি পাখা তৈরি, মাটির পুতুল, কাপড়ের পুতুল, পাটের শিকাসহ ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্পভুক্ত শত দরকারি ও শৌখিন পণ্য সৃষ্টির ঐতিহ্য পরম্পরাগতভাবে নারীরাই বহন করেছেন এবং করে চলেছেন। বাংলাদেশের বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বাউলগান, পালাগান, কবিগান, কীর্তন, বিষহরার গান, পটগান ইত্যাদিতে নারীর অংশগ্রহণ পরম্পরাগতভাবে দৃশ্যমান। উত্তরবঙ্গের বিয়ের গীত কিংবা হাওরের ধামাইল গানের স্রষ্টা ও চর্চাকারী কেবল নারীরাই। নদীমাতৃক বাংলাদেশের বেদে সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য সাপ খেলা থেকে শুরু করে অন্যান্য জীবিকায়ন কার্যক্রমের প্রধান ভূমিকায় নারীকেই অবতীর্ণ হতে দেখা যায়।
এরপরও এটাই বাস্তবতা যে বাংলাদেশের মূলধারার জনগোষ্ঠীই হোক বা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠী—সব প্রেক্ষাপটেই নারীর ওপর যুগ যুগ ধরে চলছে পারিবারিক, সামাজিক, সাম্প্রদায়িক, এমনকি রাষ্ট্রীয় বৈষম্য, বঞ্চনা ও নিপীড়ন। প্রযুক্তির ঝাঁ-চকচকে অগ্রগতি ও নারী-প্রগতির বাকসর্বস্ব উন্নতি সত্ত্বেও সর্বজনীন পিতৃতন্ত্রের দানব নারীকে প্রান্তিক বিবেচনা করতে চায়। নারীর প্রতি চলমান প্রতিকারহীন আধিপত্যবাদী, দমনমূলক আচরণ ও সহিংসতার মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব আমাদের জাতিগত পরিচয় স্বাতন্ত্র্যের নির্ণয়ক ঐতিহ্যকে ফেলে দিচ্ছে বিলুপ্তি ঝুঁকির মুখে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ঐতিহ্যহীন হওয়ার প্রবণতা পুরো জাতিকে পরিচয়হীন করে দেবে।
সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের মানুষের পরিচয়-স্বাতন্ত্র্য-সূচক ঐতিহ্য সংরক্ষণে নারীর চিরায়ত ভূমিকাকে প্রণোদিত করার উপযুক্ত সামাজিক-অর্থনৈতিক সংহতি নির্মাণে মনোযোগী হওয়াই হবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্তব্য। বাংলাদেশের বাঙালি ও সব বৈচিত্র্যময় জাতিসত্তার আত্মপরিচয়বাহী ঐতিহ্যের স্বরূপ সমুন্নত রাখতে, বিশেষ করে ঐতিহ্য সুরক্ষায় নারীর ভূমিকার কাঠামোগত স্বীকৃতি হতে পারে এক কার্যকর পদক্ষেপ।
লেখক: গল্পকার, ফোকলোর তাত্ত্বিক ও অনুবাদক

পৃথিবীতে উৎপাদন ঐতিহ্য যে নারীর হাতে গড়ে উঠেছে, সেই তথ্য আজ সর্বজনবিদিত। সভ্যতার সূচনায় নারীই প্রকৃতি চষে পরিবারের খাদ্যসংস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করেছিলেন। উপমহাদেশীয় পুরাণে প্রকৃতি, বনদেবী, অসুর-সংহারী ইত্যাদি রূপে সম্মানিত করা হয় নারীকে। আজ যখন বৈশ্বিক উন্নয়ন লক্ষ্যের সাপেক্ষে বাংলাদেশ প্রকৃতিবিরুদ্ধ প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক বৈষম্যপূর্ণ উন্নয়ন ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের নগদ আকর্ষণের দিকে ঝুঁকেছে, তখনো নারীই রক্ষা করে চলেছেন স্থানীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্ক।
ঐতিহ্য প্রবাহিত হয় পরম্পরায়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের শিক্ষা, বৈষম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক রূপান্তর ধারা, ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি—সবই পরম্পরার সুতা ছিন্ন করে কায়েম করতে ব্যস্ত শিকড়-বিচ্ছিন্ন পুঁজির প্রতিযোগিতাময় ব্যক্তিসর্বস্ব সমাজ। সেই ব্যক্তি এতটাই স্বতন্ত্র যে ঐতিহ্য তার কাছে নিতান্ত পশ্চাৎপদ ধারণা ও পরিত্যাজ্য। এই প্রবণতা আত্মঘাতী, আত্মপরিচয়বিনাশী। কেননা ঐতিহ্যই চিহ্নিত করে জাতি, গোষ্ঠী, গোত্র, সম্প্রদায় তথা সমষ্টির আত্মপরিচয়। গভীরভাবে লক্ষ করলে বোঝা যায়, বাঙালির এবং বাংলাদেশে বসবাসরত অবাঙালি জাতিসত্তাগুলোর আত্মপরিচয়ের বাহক ঐতিহ্য চর্চার প্রধান ও দৃশ্যমান কুশীলব নারীরাই। প্রাচীনকাল, নিকট অতীত এবং বিপর্যস্ত বর্তমানে নারীই ঐতিহ্যের বাহক, চর্চাকারী এবং সঞ্চারক।
আবহমান বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পণ্য নকশিকাঁথা অথবা শীতলপাটি বুননশৈলী, বাংলাদেশের অঞ্চলভেদে প্রচলিত খাদ্যসংস্কৃতির রূপ ও স্বাদ বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্য, গৃহস্থালি বাসনপত্র থেকে শুরু করে বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পোশাক এবং অলংকারসহ বিবিধ সাংসারিক উপকরণ সংরক্ষণ, বিয়ের বিশিষ্ট আচারসহ বিয়ের গীত, জন্ম ও মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত পালনীয় আচার ইত্যাদির স্রষ্টা, চর্চাকারী, সংরক্ষণকারী এবং সঞ্চারক মূলত নারী। প্রতি গ্রামে, প্রতি গৃহে নিজস্ব ঐতিহ্য-প্রেম, সৃষ্টিশীলতা ও উৎপাদনশীলতার স্বপ্রণোদিত প্রয়োগে তাঁরাই টিকিয়ে রেখেছেন বাঙালির আত্মপরিচয় প্রকাশক ঐতিহ্য-চক্র। এই ঐতিহ্য-চক্রের নিরিখেই নির্ণয় করা যায় যেকোনো রাষ্ট্রসীমায় থাকা ভাষা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ঐক্যে জারিত বাসিন্দাদের জাতিগত, নৃগোষ্ঠীগত ও সামাজিক পরিচয়-স্বাতন্ত্র্য।
২০২২ সালের ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস’-এ জাতিসংঘ মহাসচিব ঐতিহ্যগত জ্ঞান সংরক্ষণ ও বিকাশে ‘আদিবাসী’ নারীদের অবদানের গুরুত্ব বিশেষভাবে তুলে ধরেছিলেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ৫০টির বেশি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ক্ষেত্রেও দেখা যায়, নারীরাই পরম্পরাগতভাবে তাঁদের খাদ্য, প্রাকৃতিক ওষুধপত্র, ভাষা, সংস্কৃতিসহ প্রায় সব ঐতিহ্যগত জ্ঞান ও চর্চার সংরক্ষক। যেমন গারো সম্প্রদায়ের নারীরা আজও সংরক্ষণ করে চলেছেন তেল-মসলাবিহীন মাছ-মাংস (গপ্পা) রান্নার নিজস্ব পদ্ধতি। সাঁওতালসহ বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারীদের হাতেই টিকে আছে তাঁদের গৃহ-আলপনার ঐতিহ্য। বস্তুগত, বিমূর্ত ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নারীরাই অগ্রবর্তী ভূমিকা পালন করে চলেছেন।
অথচ পরিচয়-স্বাতন্ত্র্যের প্রকৃত নির্মাতা নারীরা আজ বিভিন্নভাবে ঐতিহ্য-বিচ্ছিন্ন প্রগতির শিকার। সমাজ যেমন নারীর সংগীত-ঐতিহ্য, গীতপ্রবণতাসহ রুদ্ধ করতে চায় ঐতিহ্যিক সৃষ্টিশীলতা, তেমনি শিকড়-বিচ্ছিন্ন বিভ্রান্ত প্রগতিবাদীও ঐতিহ্য লালন ও চর্চাকে প্রগতি-প্রতিবন্ধক মনে করে। দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশের যেকোনো আসন্ন জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে, গ্রামে কিংবা নগরে, পরিবারের সব বয়সী সদস্যদের খাদ্য-বস্ত্র-জ্বালানি-জল সংরক্ষণে সব সময় সচেষ্ট থাকেন নারী। এটাই ঐতিহ্যগতভাবে হয়ে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে চিড়া, মুড়ি, গুড়, আচার ইত্যাদি জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার উপযুক্ত খাদ্য প্রস্তুত ও সংরক্ষণের ঐতিহ্য নারীর কাছ থেকে ছিনতাই করেছে করপোরেটের কালো হাত। ব্যবসা বিকাশের নামে এ ধরনের ঐতিহ্য ছিনতাই নারীর স্বাভাবিক ঐতিহ্য চর্চা ও সংরক্ষণ সক্ষমতা হত্যার শামিল।
নারীর শস্যবীজ সংরক্ষণ ঐতিহ্যেও থাবা বসিয়েছে পুঁজিবাদী করপোরেটের লম্বা হাত। অথচ বৈচিত্র্যময় দেশি ধানবীজ ও পাটবীজ থেকে শুরু করে লাউ, মিষ্টিকুমড়া, করলা, ঝিঙে, সরিষা, মসুর, পুঁইশাক, লালশাক, ডাঁটা, ঢ্যাঁড়সসহ সব রকমের স্থানীয় সবজি, শস্য ও ফল বীজ ঐতিহ্যগতভাবে নারীরাই সংরক্ষণ করে এসেছেন। বীজ বাছাই ও শোধন থেকে শুরু করে চারা তোলা, হাঁস-মুরগি পালন, দুধ দোহন, বসতবাড়িতে ফুল চাষ, নকশি পাখা তৈরি, মাটির পুতুল, কাপড়ের পুতুল, পাটের শিকাসহ ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্পভুক্ত শত দরকারি ও শৌখিন পণ্য সৃষ্টির ঐতিহ্য পরম্পরাগতভাবে নারীরাই বহন করেছেন এবং করে চলেছেন। বাংলাদেশের বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বাউলগান, পালাগান, কবিগান, কীর্তন, বিষহরার গান, পটগান ইত্যাদিতে নারীর অংশগ্রহণ পরম্পরাগতভাবে দৃশ্যমান। উত্তরবঙ্গের বিয়ের গীত কিংবা হাওরের ধামাইল গানের স্রষ্টা ও চর্চাকারী কেবল নারীরাই। নদীমাতৃক বাংলাদেশের বেদে সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য সাপ খেলা থেকে শুরু করে অন্যান্য জীবিকায়ন কার্যক্রমের প্রধান ভূমিকায় নারীকেই অবতীর্ণ হতে দেখা যায়।
এরপরও এটাই বাস্তবতা যে বাংলাদেশের মূলধারার জনগোষ্ঠীই হোক বা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠী—সব প্রেক্ষাপটেই নারীর ওপর যুগ যুগ ধরে চলছে পারিবারিক, সামাজিক, সাম্প্রদায়িক, এমনকি রাষ্ট্রীয় বৈষম্য, বঞ্চনা ও নিপীড়ন। প্রযুক্তির ঝাঁ-চকচকে অগ্রগতি ও নারী-প্রগতির বাকসর্বস্ব উন্নতি সত্ত্বেও সর্বজনীন পিতৃতন্ত্রের দানব নারীকে প্রান্তিক বিবেচনা করতে চায়। নারীর প্রতি চলমান প্রতিকারহীন আধিপত্যবাদী, দমনমূলক আচরণ ও সহিংসতার মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব আমাদের জাতিগত পরিচয় স্বাতন্ত্র্যের নির্ণয়ক ঐতিহ্যকে ফেলে দিচ্ছে বিলুপ্তি ঝুঁকির মুখে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ঐতিহ্যহীন হওয়ার প্রবণতা পুরো জাতিকে পরিচয়হীন করে দেবে।
সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের মানুষের পরিচয়-স্বাতন্ত্র্য-সূচক ঐতিহ্য সংরক্ষণে নারীর চিরায়ত ভূমিকাকে প্রণোদিত করার উপযুক্ত সামাজিক-অর্থনৈতিক সংহতি নির্মাণে মনোযোগী হওয়াই হবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্তব্য। বাংলাদেশের বাঙালি ও সব বৈচিত্র্যময় জাতিসত্তার আত্মপরিচয়বাহী ঐতিহ্যের স্বরূপ সমুন্নত রাখতে, বিশেষ করে ঐতিহ্য সুরক্ষায় নারীর ভূমিকার কাঠামোগত স্বীকৃতি হতে পারে এক কার্যকর পদক্ষেপ।
লেখক: গল্পকার, ফোকলোর তাত্ত্বিক ও অনুবাদক
নূরুননবী শান্ত

পৃথিবীতে উৎপাদন ঐতিহ্য যে নারীর হাতে গড়ে উঠেছে, সেই তথ্য আজ সর্বজনবিদিত। সভ্যতার সূচনায় নারীই প্রকৃতি চষে পরিবারের খাদ্যসংস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করেছিলেন। উপমহাদেশীয় পুরাণে প্রকৃতি, বনদেবী, অসুর-সংহারী ইত্যাদি রূপে সম্মানিত করা হয় নারীকে। আজ যখন বৈশ্বিক উন্নয়ন লক্ষ্যের সাপেক্ষে বাংলাদেশ প্রকৃতিবিরুদ্ধ প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক বৈষম্যপূর্ণ উন্নয়ন ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের নগদ আকর্ষণের দিকে ঝুঁকেছে, তখনো নারীই রক্ষা করে চলেছেন স্থানীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্ক।
ঐতিহ্য প্রবাহিত হয় পরম্পরায়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের শিক্ষা, বৈষম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক রূপান্তর ধারা, ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি—সবই পরম্পরার সুতা ছিন্ন করে কায়েম করতে ব্যস্ত শিকড়-বিচ্ছিন্ন পুঁজির প্রতিযোগিতাময় ব্যক্তিসর্বস্ব সমাজ। সেই ব্যক্তি এতটাই স্বতন্ত্র যে ঐতিহ্য তার কাছে নিতান্ত পশ্চাৎপদ ধারণা ও পরিত্যাজ্য। এই প্রবণতা আত্মঘাতী, আত্মপরিচয়বিনাশী। কেননা ঐতিহ্যই চিহ্নিত করে জাতি, গোষ্ঠী, গোত্র, সম্প্রদায় তথা সমষ্টির আত্মপরিচয়। গভীরভাবে লক্ষ করলে বোঝা যায়, বাঙালির এবং বাংলাদেশে বসবাসরত অবাঙালি জাতিসত্তাগুলোর আত্মপরিচয়ের বাহক ঐতিহ্য চর্চার প্রধান ও দৃশ্যমান কুশীলব নারীরাই। প্রাচীনকাল, নিকট অতীত এবং বিপর্যস্ত বর্তমানে নারীই ঐতিহ্যের বাহক, চর্চাকারী এবং সঞ্চারক।
আবহমান বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পণ্য নকশিকাঁথা অথবা শীতলপাটি বুননশৈলী, বাংলাদেশের অঞ্চলভেদে প্রচলিত খাদ্যসংস্কৃতির রূপ ও স্বাদ বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্য, গৃহস্থালি বাসনপত্র থেকে শুরু করে বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পোশাক এবং অলংকারসহ বিবিধ সাংসারিক উপকরণ সংরক্ষণ, বিয়ের বিশিষ্ট আচারসহ বিয়ের গীত, জন্ম ও মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত পালনীয় আচার ইত্যাদির স্রষ্টা, চর্চাকারী, সংরক্ষণকারী এবং সঞ্চারক মূলত নারী। প্রতি গ্রামে, প্রতি গৃহে নিজস্ব ঐতিহ্য-প্রেম, সৃষ্টিশীলতা ও উৎপাদনশীলতার স্বপ্রণোদিত প্রয়োগে তাঁরাই টিকিয়ে রেখেছেন বাঙালির আত্মপরিচয় প্রকাশক ঐতিহ্য-চক্র। এই ঐতিহ্য-চক্রের নিরিখেই নির্ণয় করা যায় যেকোনো রাষ্ট্রসীমায় থাকা ভাষা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ঐক্যে জারিত বাসিন্দাদের জাতিগত, নৃগোষ্ঠীগত ও সামাজিক পরিচয়-স্বাতন্ত্র্য।
২০২২ সালের ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস’-এ জাতিসংঘ মহাসচিব ঐতিহ্যগত জ্ঞান সংরক্ষণ ও বিকাশে ‘আদিবাসী’ নারীদের অবদানের গুরুত্ব বিশেষভাবে তুলে ধরেছিলেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ৫০টির বেশি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ক্ষেত্রেও দেখা যায়, নারীরাই পরম্পরাগতভাবে তাঁদের খাদ্য, প্রাকৃতিক ওষুধপত্র, ভাষা, সংস্কৃতিসহ প্রায় সব ঐতিহ্যগত জ্ঞান ও চর্চার সংরক্ষক। যেমন গারো সম্প্রদায়ের নারীরা আজও সংরক্ষণ করে চলেছেন তেল-মসলাবিহীন মাছ-মাংস (গপ্পা) রান্নার নিজস্ব পদ্ধতি। সাঁওতালসহ বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারীদের হাতেই টিকে আছে তাঁদের গৃহ-আলপনার ঐতিহ্য। বস্তুগত, বিমূর্ত ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নারীরাই অগ্রবর্তী ভূমিকা পালন করে চলেছেন।
অথচ পরিচয়-স্বাতন্ত্র্যের প্রকৃত নির্মাতা নারীরা আজ বিভিন্নভাবে ঐতিহ্য-বিচ্ছিন্ন প্রগতির শিকার। সমাজ যেমন নারীর সংগীত-ঐতিহ্য, গীতপ্রবণতাসহ রুদ্ধ করতে চায় ঐতিহ্যিক সৃষ্টিশীলতা, তেমনি শিকড়-বিচ্ছিন্ন বিভ্রান্ত প্রগতিবাদীও ঐতিহ্য লালন ও চর্চাকে প্রগতি-প্রতিবন্ধক মনে করে। দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশের যেকোনো আসন্ন জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে, গ্রামে কিংবা নগরে, পরিবারের সব বয়সী সদস্যদের খাদ্য-বস্ত্র-জ্বালানি-জল সংরক্ষণে সব সময় সচেষ্ট থাকেন নারী। এটাই ঐতিহ্যগতভাবে হয়ে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে চিড়া, মুড়ি, গুড়, আচার ইত্যাদি জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার উপযুক্ত খাদ্য প্রস্তুত ও সংরক্ষণের ঐতিহ্য নারীর কাছ থেকে ছিনতাই করেছে করপোরেটের কালো হাত। ব্যবসা বিকাশের নামে এ ধরনের ঐতিহ্য ছিনতাই নারীর স্বাভাবিক ঐতিহ্য চর্চা ও সংরক্ষণ সক্ষমতা হত্যার শামিল।
নারীর শস্যবীজ সংরক্ষণ ঐতিহ্যেও থাবা বসিয়েছে পুঁজিবাদী করপোরেটের লম্বা হাত। অথচ বৈচিত্র্যময় দেশি ধানবীজ ও পাটবীজ থেকে শুরু করে লাউ, মিষ্টিকুমড়া, করলা, ঝিঙে, সরিষা, মসুর, পুঁইশাক, লালশাক, ডাঁটা, ঢ্যাঁড়সসহ সব রকমের স্থানীয় সবজি, শস্য ও ফল বীজ ঐতিহ্যগতভাবে নারীরাই সংরক্ষণ করে এসেছেন। বীজ বাছাই ও শোধন থেকে শুরু করে চারা তোলা, হাঁস-মুরগি পালন, দুধ দোহন, বসতবাড়িতে ফুল চাষ, নকশি পাখা তৈরি, মাটির পুতুল, কাপড়ের পুতুল, পাটের শিকাসহ ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্পভুক্ত শত দরকারি ও শৌখিন পণ্য সৃষ্টির ঐতিহ্য পরম্পরাগতভাবে নারীরাই বহন করেছেন এবং করে চলেছেন। বাংলাদেশের বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বাউলগান, পালাগান, কবিগান, কীর্তন, বিষহরার গান, পটগান ইত্যাদিতে নারীর অংশগ্রহণ পরম্পরাগতভাবে দৃশ্যমান। উত্তরবঙ্গের বিয়ের গীত কিংবা হাওরের ধামাইল গানের স্রষ্টা ও চর্চাকারী কেবল নারীরাই। নদীমাতৃক বাংলাদেশের বেদে সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য সাপ খেলা থেকে শুরু করে অন্যান্য জীবিকায়ন কার্যক্রমের প্রধান ভূমিকায় নারীকেই অবতীর্ণ হতে দেখা যায়।
এরপরও এটাই বাস্তবতা যে বাংলাদেশের মূলধারার জনগোষ্ঠীই হোক বা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠী—সব প্রেক্ষাপটেই নারীর ওপর যুগ যুগ ধরে চলছে পারিবারিক, সামাজিক, সাম্প্রদায়িক, এমনকি রাষ্ট্রীয় বৈষম্য, বঞ্চনা ও নিপীড়ন। প্রযুক্তির ঝাঁ-চকচকে অগ্রগতি ও নারী-প্রগতির বাকসর্বস্ব উন্নতি সত্ত্বেও সর্বজনীন পিতৃতন্ত্রের দানব নারীকে প্রান্তিক বিবেচনা করতে চায়। নারীর প্রতি চলমান প্রতিকারহীন আধিপত্যবাদী, দমনমূলক আচরণ ও সহিংসতার মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব আমাদের জাতিগত পরিচয় স্বাতন্ত্র্যের নির্ণয়ক ঐতিহ্যকে ফেলে দিচ্ছে বিলুপ্তি ঝুঁকির মুখে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ঐতিহ্যহীন হওয়ার প্রবণতা পুরো জাতিকে পরিচয়হীন করে দেবে।
সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের মানুষের পরিচয়-স্বাতন্ত্র্য-সূচক ঐতিহ্য সংরক্ষণে নারীর চিরায়ত ভূমিকাকে প্রণোদিত করার উপযুক্ত সামাজিক-অর্থনৈতিক সংহতি নির্মাণে মনোযোগী হওয়াই হবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্তব্য। বাংলাদেশের বাঙালি ও সব বৈচিত্র্যময় জাতিসত্তার আত্মপরিচয়বাহী ঐতিহ্যের স্বরূপ সমুন্নত রাখতে, বিশেষ করে ঐতিহ্য সুরক্ষায় নারীর ভূমিকার কাঠামোগত স্বীকৃতি হতে পারে এক কার্যকর পদক্ষেপ।
লেখক: গল্পকার, ফোকলোর তাত্ত্বিক ও অনুবাদক

পৃথিবীতে উৎপাদন ঐতিহ্য যে নারীর হাতে গড়ে উঠেছে, সেই তথ্য আজ সর্বজনবিদিত। সভ্যতার সূচনায় নারীই প্রকৃতি চষে পরিবারের খাদ্যসংস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করেছিলেন। উপমহাদেশীয় পুরাণে প্রকৃতি, বনদেবী, অসুর-সংহারী ইত্যাদি রূপে সম্মানিত করা হয় নারীকে। আজ যখন বৈশ্বিক উন্নয়ন লক্ষ্যের সাপেক্ষে বাংলাদেশ প্রকৃতিবিরুদ্ধ প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক বৈষম্যপূর্ণ উন্নয়ন ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের নগদ আকর্ষণের দিকে ঝুঁকেছে, তখনো নারীই রক্ষা করে চলেছেন স্থানীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্ক।
ঐতিহ্য প্রবাহিত হয় পরম্পরায়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের শিক্ষা, বৈষম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক রূপান্তর ধারা, ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি—সবই পরম্পরার সুতা ছিন্ন করে কায়েম করতে ব্যস্ত শিকড়-বিচ্ছিন্ন পুঁজির প্রতিযোগিতাময় ব্যক্তিসর্বস্ব সমাজ। সেই ব্যক্তি এতটাই স্বতন্ত্র যে ঐতিহ্য তার কাছে নিতান্ত পশ্চাৎপদ ধারণা ও পরিত্যাজ্য। এই প্রবণতা আত্মঘাতী, আত্মপরিচয়বিনাশী। কেননা ঐতিহ্যই চিহ্নিত করে জাতি, গোষ্ঠী, গোত্র, সম্প্রদায় তথা সমষ্টির আত্মপরিচয়। গভীরভাবে লক্ষ করলে বোঝা যায়, বাঙালির এবং বাংলাদেশে বসবাসরত অবাঙালি জাতিসত্তাগুলোর আত্মপরিচয়ের বাহক ঐতিহ্য চর্চার প্রধান ও দৃশ্যমান কুশীলব নারীরাই। প্রাচীনকাল, নিকট অতীত এবং বিপর্যস্ত বর্তমানে নারীই ঐতিহ্যের বাহক, চর্চাকারী এবং সঞ্চারক।
আবহমান বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পণ্য নকশিকাঁথা অথবা শীতলপাটি বুননশৈলী, বাংলাদেশের অঞ্চলভেদে প্রচলিত খাদ্যসংস্কৃতির রূপ ও স্বাদ বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্য, গৃহস্থালি বাসনপত্র থেকে শুরু করে বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পোশাক এবং অলংকারসহ বিবিধ সাংসারিক উপকরণ সংরক্ষণ, বিয়ের বিশিষ্ট আচারসহ বিয়ের গীত, জন্ম ও মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত পালনীয় আচার ইত্যাদির স্রষ্টা, চর্চাকারী, সংরক্ষণকারী এবং সঞ্চারক মূলত নারী। প্রতি গ্রামে, প্রতি গৃহে নিজস্ব ঐতিহ্য-প্রেম, সৃষ্টিশীলতা ও উৎপাদনশীলতার স্বপ্রণোদিত প্রয়োগে তাঁরাই টিকিয়ে রেখেছেন বাঙালির আত্মপরিচয় প্রকাশক ঐতিহ্য-চক্র। এই ঐতিহ্য-চক্রের নিরিখেই নির্ণয় করা যায় যেকোনো রাষ্ট্রসীমায় থাকা ভাষা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ঐক্যে জারিত বাসিন্দাদের জাতিগত, নৃগোষ্ঠীগত ও সামাজিক পরিচয়-স্বাতন্ত্র্য।
২০২২ সালের ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস’-এ জাতিসংঘ মহাসচিব ঐতিহ্যগত জ্ঞান সংরক্ষণ ও বিকাশে ‘আদিবাসী’ নারীদের অবদানের গুরুত্ব বিশেষভাবে তুলে ধরেছিলেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ৫০টির বেশি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ক্ষেত্রেও দেখা যায়, নারীরাই পরম্পরাগতভাবে তাঁদের খাদ্য, প্রাকৃতিক ওষুধপত্র, ভাষা, সংস্কৃতিসহ প্রায় সব ঐতিহ্যগত জ্ঞান ও চর্চার সংরক্ষক। যেমন গারো সম্প্রদায়ের নারীরা আজও সংরক্ষণ করে চলেছেন তেল-মসলাবিহীন মাছ-মাংস (গপ্পা) রান্নার নিজস্ব পদ্ধতি। সাঁওতালসহ বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারীদের হাতেই টিকে আছে তাঁদের গৃহ-আলপনার ঐতিহ্য। বস্তুগত, বিমূর্ত ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নারীরাই অগ্রবর্তী ভূমিকা পালন করে চলেছেন।
অথচ পরিচয়-স্বাতন্ত্র্যের প্রকৃত নির্মাতা নারীরা আজ বিভিন্নভাবে ঐতিহ্য-বিচ্ছিন্ন প্রগতির শিকার। সমাজ যেমন নারীর সংগীত-ঐতিহ্য, গীতপ্রবণতাসহ রুদ্ধ করতে চায় ঐতিহ্যিক সৃষ্টিশীলতা, তেমনি শিকড়-বিচ্ছিন্ন বিভ্রান্ত প্রগতিবাদীও ঐতিহ্য লালন ও চর্চাকে প্রগতি-প্রতিবন্ধক মনে করে। দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশের যেকোনো আসন্ন জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে, গ্রামে কিংবা নগরে, পরিবারের সব বয়সী সদস্যদের খাদ্য-বস্ত্র-জ্বালানি-জল সংরক্ষণে সব সময় সচেষ্ট থাকেন নারী। এটাই ঐতিহ্যগতভাবে হয়ে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে চিড়া, মুড়ি, গুড়, আচার ইত্যাদি জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার উপযুক্ত খাদ্য প্রস্তুত ও সংরক্ষণের ঐতিহ্য নারীর কাছ থেকে ছিনতাই করেছে করপোরেটের কালো হাত। ব্যবসা বিকাশের নামে এ ধরনের ঐতিহ্য ছিনতাই নারীর স্বাভাবিক ঐতিহ্য চর্চা ও সংরক্ষণ সক্ষমতা হত্যার শামিল।
নারীর শস্যবীজ সংরক্ষণ ঐতিহ্যেও থাবা বসিয়েছে পুঁজিবাদী করপোরেটের লম্বা হাত। অথচ বৈচিত্র্যময় দেশি ধানবীজ ও পাটবীজ থেকে শুরু করে লাউ, মিষ্টিকুমড়া, করলা, ঝিঙে, সরিষা, মসুর, পুঁইশাক, লালশাক, ডাঁটা, ঢ্যাঁড়সসহ সব রকমের স্থানীয় সবজি, শস্য ও ফল বীজ ঐতিহ্যগতভাবে নারীরাই সংরক্ষণ করে এসেছেন। বীজ বাছাই ও শোধন থেকে শুরু করে চারা তোলা, হাঁস-মুরগি পালন, দুধ দোহন, বসতবাড়িতে ফুল চাষ, নকশি পাখা তৈরি, মাটির পুতুল, কাপড়ের পুতুল, পাটের শিকাসহ ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্পভুক্ত শত দরকারি ও শৌখিন পণ্য সৃষ্টির ঐতিহ্য পরম্পরাগতভাবে নারীরাই বহন করেছেন এবং করে চলেছেন। বাংলাদেশের বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বাউলগান, পালাগান, কবিগান, কীর্তন, বিষহরার গান, পটগান ইত্যাদিতে নারীর অংশগ্রহণ পরম্পরাগতভাবে দৃশ্যমান। উত্তরবঙ্গের বিয়ের গীত কিংবা হাওরের ধামাইল গানের স্রষ্টা ও চর্চাকারী কেবল নারীরাই। নদীমাতৃক বাংলাদেশের বেদে সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য সাপ খেলা থেকে শুরু করে অন্যান্য জীবিকায়ন কার্যক্রমের প্রধান ভূমিকায় নারীকেই অবতীর্ণ হতে দেখা যায়।
এরপরও এটাই বাস্তবতা যে বাংলাদেশের মূলধারার জনগোষ্ঠীই হোক বা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠী—সব প্রেক্ষাপটেই নারীর ওপর যুগ যুগ ধরে চলছে পারিবারিক, সামাজিক, সাম্প্রদায়িক, এমনকি রাষ্ট্রীয় বৈষম্য, বঞ্চনা ও নিপীড়ন। প্রযুক্তির ঝাঁ-চকচকে অগ্রগতি ও নারী-প্রগতির বাকসর্বস্ব উন্নতি সত্ত্বেও সর্বজনীন পিতৃতন্ত্রের দানব নারীকে প্রান্তিক বিবেচনা করতে চায়। নারীর প্রতি চলমান প্রতিকারহীন আধিপত্যবাদী, দমনমূলক আচরণ ও সহিংসতার মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব আমাদের জাতিগত পরিচয় স্বাতন্ত্র্যের নির্ণয়ক ঐতিহ্যকে ফেলে দিচ্ছে বিলুপ্তি ঝুঁকির মুখে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ঐতিহ্যহীন হওয়ার প্রবণতা পুরো জাতিকে পরিচয়হীন করে দেবে।
সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের মানুষের পরিচয়-স্বাতন্ত্র্য-সূচক ঐতিহ্য সংরক্ষণে নারীর চিরায়ত ভূমিকাকে প্রণোদিত করার উপযুক্ত সামাজিক-অর্থনৈতিক সংহতি নির্মাণে মনোযোগী হওয়াই হবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্তব্য। বাংলাদেশের বাঙালি ও সব বৈচিত্র্যময় জাতিসত্তার আত্মপরিচয়বাহী ঐতিহ্যের স্বরূপ সমুন্নত রাখতে, বিশেষ করে ঐতিহ্য সুরক্ষায় নারীর ভূমিকার কাঠামোগত স্বীকৃতি হতে পারে এক কার্যকর পদক্ষেপ।
লেখক: গল্পকার, ফোকলোর তাত্ত্বিক ও অনুবাদক

বিশ্বজুড়ে অনেক দেশে নারী ও পুরুষের কাজের সময়ের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পার্থক্য দেখা যায়। তবে এই পার্থক্য সরাসরি আইনি বাধ্যবাধকতার ফল নয়; বরং এটি মূলত গভীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণের প্রতিফলন।
৩ দিন আগে
‘বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র/ নানান ভাবের নতুন জিনিস, শিখছি দিবারাত্র।’ কবি সুনির্মল বসুর এই কবিতা সবাই পড়েছি ছোটবেলায়। তবে শিখতে পারার এই আনন্দ সবাই উপলব্ধি করতে পারেন না। কিন্তু যাঁরা পারেন, তাঁরা নিজেকে একটা উচ্চতায় নিয়ে যেতে সফল হন যেকোনোভাবেই। তেমনই একজন মানুষ আফরোজা খানম মুক্তা।
৪ দিন আগে
আমি একজন কর্মজীবী নারী। একজনের সঙ্গে আমার ৮ বছরের সম্পর্ক ছিল। তিন মাস আগে সেই প্রেমিকের ইচ্ছায় আমাদের বিচ্ছেদ হয়। বিচ্ছেদের মানসিক ধকল আমি এখনো পুরোপুরি সামলে উঠতে পারিনি। অথচ আমি এই সম্পর্কে যেতে চাইনি।
৪ দিন আগে
থাইল্যান্ডের লাম্পাং প্রদেশে একদল নারী স্থানীয় বন রক্ষা এবং পুনরুদ্ধারে অনন্য ভূমিকা রাখছেন। এই উদ্যোগের নেতৃত্বে আছেন রাচাপ্রাপা কামফুদ। তিনি বান পং কমিউনিটি ফরেস্ট অ্যান্ড ফায়ার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের প্রধান। গ্রুপটি মূলত বন পুনর্গঠন ও আগুন প্রতিরোধে কাজ করছে।
৪ দিন আগেফিচার ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে অনেক দেশে নারী ও পুরুষের কাজের সময়ের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পার্থক্য দেখা যায়। তবে এই পার্থক্য সরাসরি আইনি বাধ্যবাধকতার ফল নয়; বরং এটি মূলত গভীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণের প্রতিফলন। অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো উন্নত দেশগুলোতে, নারীরা পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি হারে খণ্ডকালীন কাজ করেন। এর ফলে, গড়ে তাঁদের প্রতি সপ্তাহে বেতনভুক্ত কাজের সময় পুরুষের তুলনায় কম হয়। তবে এটি কোনো আইনের কারণে হয়নি। আইন দিয়ে যা করা হয়েছে, তা আফগানিস্তানে। সেটি অবশ্য নারীদের জন্য নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা নয়, বরং নারীদের ঘরের বাইরে কাজ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে প্রায় ২৮ শতাংশ কর্মজীবী নারী খণ্ডকালীন কাজ করেন। যেখানে পুরুষের ক্ষেত্রে এই হার মাত্র ৮ শতাংশ। সেই পরিসংখ্যান থেকে হিসাব করলে বলা যায়, নারীদের কর্মঘণ্টা কম। তবে তা লৈঙ্গিক হিসাবের কারণে নয়। এই পার্থক্যের প্রধান কারণ হলো সামাজিক রীতিনীতি ও ঐতিহ্যগত লৈঙ্গিক ভূমিকা। সমাজ ও পরিবারে যত্নের দায়িত্ব নারীদের ওপর বর্তানোর কারণে কর্মক্ষেত্রে নারীরা নমনীয়তা বা কম সময়ের কাজের পথ বেছে নিতে বাধ্য হন। এ ছাড়া করকাঠামো এবং শ্রমবাজারের নীতিগুলোও নারী ও পুরুষের কাজের সিদ্ধান্তকে ভিন্নভাবে প্রভাবিত করতে পারে। যে মহাদেশ বা অঞ্চলে শক্তিশালী সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থা ও পারিবারিক দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়ার ঐতিহ্য রয়েছে, সেখানে সামগ্রিকভাবে উভয় লিঙ্গের জন্যই কম বেতনভুক্ত কাজের সময় দেখা যায়।
এশিয়ার কিছু দেশ; যেমন ঐতিহাসিকভাবে দক্ষিণ কোরিয়া বা বড় অনানুষ্ঠানিক খাত রয়েছে এমন দেশগুলোতে, পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য খুব উচ্চ বার্ষিক বেতনভুক্ত কাজের হার দেখা যায়। ফ্রান্স, ডেনমার্ক বা নরওয়ের মতো কিছু ইউরোপীয় দেশে সাধারণত পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য প্রতি সপ্তাহে ৩৫ থেকে ৩৯ কর্মঘণ্টা প্রচলিত। তবে নেদারল্যান্ডস ও সুইজারল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে নারী কর্মীদের একটি বড় অংশ প্রতি সপ্তাহে ৩০ ঘণ্টার কম কাজ করেন। উত্তর আমেরিকায়; যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, পূর্ণকালীন কর্মরত নারীরা পুরুষদের তুলনায় গড়ে দৈনিক সামান্য কম ঘণ্টা কাজ করেন। যেমন নারীদের জন্য প্রতিদিন ৭ দশমিক ৯ ঘণ্টা এবং পুরুষদের জন্য ৮ দশমিক ৪ ঘণ্টা প্রচলিত আছে।
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বিশ্বজুড়ে নারীরা পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি সময় অবৈতনিক কাজে; যেমন গৃহস্থালি, সন্তান ও আত্মীয়দের যত্নের পেছনে ব্যয় করেন। ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের ২০২৪ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ২০২৩ সালের তথ্যের ভিত্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী ৭৪৮ মিলিয়ন মানুষ পরিচর্যার দায়িত্বের কারণে শ্রমবাজারের বাইরে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৭০৮ মিলিয়ন নারী। এতে অঞ্চলভিত্তিক; যেমন উত্তর আফ্রিকা, আরব রাষ্ট্র, ইউরোপের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে আরও বলা হয়েছে, গড়ে পুরুষদের তুলনায় প্রতিদিন প্রায় আড়াই গুণ বেশি সময় ঘরোয়া ও পরিচর্যার কাজে সময় ব্যয় করেন নারীরা। যখন এই অবৈতনিক সময়কে বেতনভুক্ত কাজের সময়ের সঙ্গে যোগ করা হয়, তখন দেখা যায়, নারীরা পুরুষের চেয়ে সামগ্রিকভাবে বেশি ঘণ্টা কাজ করেন। তবে সেই কর্মঘণ্টার কোনো অর্থমূল্য হয় না। হোক তা ইউরোপ, আফ্রিকা, আমেরিকা কিংবা এশিয়া।
কাজের সময়ের এই লৈঙ্গিকভিত্তিক পার্থক্য মূলত নারীর ওপর অবৈতনিক যত্নের কাজের অস্বাভাবিক বোঝা এবং সামাজিক প্রত্যাশার ফল, যা তাঁদের বেতনভুক্ত কাজের ধরনকে প্রভাবিত করে।

বিশ্বজুড়ে অনেক দেশে নারী ও পুরুষের কাজের সময়ের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পার্থক্য দেখা যায়। তবে এই পার্থক্য সরাসরি আইনি বাধ্যবাধকতার ফল নয়; বরং এটি মূলত গভীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণের প্রতিফলন। অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো উন্নত দেশগুলোতে, নারীরা পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি হারে খণ্ডকালীন কাজ করেন। এর ফলে, গড়ে তাঁদের প্রতি সপ্তাহে বেতনভুক্ত কাজের সময় পুরুষের তুলনায় কম হয়। তবে এটি কোনো আইনের কারণে হয়নি। আইন দিয়ে যা করা হয়েছে, তা আফগানিস্তানে। সেটি অবশ্য নারীদের জন্য নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা নয়, বরং নারীদের ঘরের বাইরে কাজ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে প্রায় ২৮ শতাংশ কর্মজীবী নারী খণ্ডকালীন কাজ করেন। যেখানে পুরুষের ক্ষেত্রে এই হার মাত্র ৮ শতাংশ। সেই পরিসংখ্যান থেকে হিসাব করলে বলা যায়, নারীদের কর্মঘণ্টা কম। তবে তা লৈঙ্গিক হিসাবের কারণে নয়। এই পার্থক্যের প্রধান কারণ হলো সামাজিক রীতিনীতি ও ঐতিহ্যগত লৈঙ্গিক ভূমিকা। সমাজ ও পরিবারে যত্নের দায়িত্ব নারীদের ওপর বর্তানোর কারণে কর্মক্ষেত্রে নারীরা নমনীয়তা বা কম সময়ের কাজের পথ বেছে নিতে বাধ্য হন। এ ছাড়া করকাঠামো এবং শ্রমবাজারের নীতিগুলোও নারী ও পুরুষের কাজের সিদ্ধান্তকে ভিন্নভাবে প্রভাবিত করতে পারে। যে মহাদেশ বা অঞ্চলে শক্তিশালী সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থা ও পারিবারিক দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়ার ঐতিহ্য রয়েছে, সেখানে সামগ্রিকভাবে উভয় লিঙ্গের জন্যই কম বেতনভুক্ত কাজের সময় দেখা যায়।
এশিয়ার কিছু দেশ; যেমন ঐতিহাসিকভাবে দক্ষিণ কোরিয়া বা বড় অনানুষ্ঠানিক খাত রয়েছে এমন দেশগুলোতে, পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য খুব উচ্চ বার্ষিক বেতনভুক্ত কাজের হার দেখা যায়। ফ্রান্স, ডেনমার্ক বা নরওয়ের মতো কিছু ইউরোপীয় দেশে সাধারণত পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য প্রতি সপ্তাহে ৩৫ থেকে ৩৯ কর্মঘণ্টা প্রচলিত। তবে নেদারল্যান্ডস ও সুইজারল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে নারী কর্মীদের একটি বড় অংশ প্রতি সপ্তাহে ৩০ ঘণ্টার কম কাজ করেন। উত্তর আমেরিকায়; যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, পূর্ণকালীন কর্মরত নারীরা পুরুষদের তুলনায় গড়ে দৈনিক সামান্য কম ঘণ্টা কাজ করেন। যেমন নারীদের জন্য প্রতিদিন ৭ দশমিক ৯ ঘণ্টা এবং পুরুষদের জন্য ৮ দশমিক ৪ ঘণ্টা প্রচলিত আছে।
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বিশ্বজুড়ে নারীরা পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি সময় অবৈতনিক কাজে; যেমন গৃহস্থালি, সন্তান ও আত্মীয়দের যত্নের পেছনে ব্যয় করেন। ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের ২০২৪ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ২০২৩ সালের তথ্যের ভিত্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী ৭৪৮ মিলিয়ন মানুষ পরিচর্যার দায়িত্বের কারণে শ্রমবাজারের বাইরে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৭০৮ মিলিয়ন নারী। এতে অঞ্চলভিত্তিক; যেমন উত্তর আফ্রিকা, আরব রাষ্ট্র, ইউরোপের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে আরও বলা হয়েছে, গড়ে পুরুষদের তুলনায় প্রতিদিন প্রায় আড়াই গুণ বেশি সময় ঘরোয়া ও পরিচর্যার কাজে সময় ব্যয় করেন নারীরা। যখন এই অবৈতনিক সময়কে বেতনভুক্ত কাজের সময়ের সঙ্গে যোগ করা হয়, তখন দেখা যায়, নারীরা পুরুষের চেয়ে সামগ্রিকভাবে বেশি ঘণ্টা কাজ করেন। তবে সেই কর্মঘণ্টার কোনো অর্থমূল্য হয় না। হোক তা ইউরোপ, আফ্রিকা, আমেরিকা কিংবা এশিয়া।
কাজের সময়ের এই লৈঙ্গিকভিত্তিক পার্থক্য মূলত নারীর ওপর অবৈতনিক যত্নের কাজের অস্বাভাবিক বোঝা এবং সামাজিক প্রত্যাশার ফল, যা তাঁদের বেতনভুক্ত কাজের ধরনকে প্রভাবিত করে।

পৃথিবীতে উৎপাদন ঐতিহ্য যে নারীর হাতে গড়ে উঠেছে, সেই তথ্য আজ সর্বজনবিদিত। সভ্যতার সূচনায় নারীই প্রকৃতি চষে পরিবারের খাদ্যসংস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করেছিলেন। উপমহাদেশীয় পুরাণে প্রকৃতি, বনদেবী, অসুর-সংহারী ইত্যাদি রূপে সম্মানিত করা হয় নারীকে। আজ যখন বৈশ্বিক উন্নয়ন লক্ষ্যের সাপেক্ষে বাংলাদেশ প্রকৃতিবিরুদ
১৭ এপ্রিল ২০২৪
‘বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র/ নানান ভাবের নতুন জিনিস, শিখছি দিবারাত্র।’ কবি সুনির্মল বসুর এই কবিতা সবাই পড়েছি ছোটবেলায়। তবে শিখতে পারার এই আনন্দ সবাই উপলব্ধি করতে পারেন না। কিন্তু যাঁরা পারেন, তাঁরা নিজেকে একটা উচ্চতায় নিয়ে যেতে সফল হন যেকোনোভাবেই। তেমনই একজন মানুষ আফরোজা খানম মুক্তা।
৪ দিন আগে
আমি একজন কর্মজীবী নারী। একজনের সঙ্গে আমার ৮ বছরের সম্পর্ক ছিল। তিন মাস আগে সেই প্রেমিকের ইচ্ছায় আমাদের বিচ্ছেদ হয়। বিচ্ছেদের মানসিক ধকল আমি এখনো পুরোপুরি সামলে উঠতে পারিনি। অথচ আমি এই সম্পর্কে যেতে চাইনি।
৪ দিন আগে
থাইল্যান্ডের লাম্পাং প্রদেশে একদল নারী স্থানীয় বন রক্ষা এবং পুনরুদ্ধারে অনন্য ভূমিকা রাখছেন। এই উদ্যোগের নেতৃত্বে আছেন রাচাপ্রাপা কামফুদ। তিনি বান পং কমিউনিটি ফরেস্ট অ্যান্ড ফায়ার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের প্রধান। গ্রুপটি মূলত বন পুনর্গঠন ও আগুন প্রতিরোধে কাজ করছে।
৪ দিন আগেকাশফিয়া আলম ঝিলিক, ঢাকা

‘বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র/ নানান ভাবের নতুন জিনিস, শিখছি দিবারাত্র।’ কবি সুনির্মল বসুর এই কবিতা সবাই পড়েছি ছোটবেলায়। তবে শিখতে পারার এই আনন্দ সবাই উপলব্ধি করতে পারেন না। কিন্তু যাঁরা পারেন, তাঁরা নিজেকে একটা উচ্চতায় নিয়ে যেতে সফল হন যেকোনোভাবেই। তেমনই একজন মানুষ আফরোজা খানম মুক্তা।
ছোটবেলা থেকে হস্তশিল্প শেখার আগ্রহ তাঁর মায়ের কাজ দেখে। এখনো নতুন নতুন জিনিস তৈরি করা শিখে চলেছেন তিনি। কখনো কাপড়ের ফুল, কখনো চকলেট কিংবা সাবান। ৩০ বছর ধরে নিজের বাড়ির নিচতলায় শৌখিন কারুশিল্প নামের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা করছেন তিনি। দু-তিন শিফটে এক শ থেকে দেড় শ শিক্ষার্থী তাঁর কাছে মোম, ব্লক, বাটিক, সাবান তৈরি এবং পুঁতির বিভিন্ন কাজ শেখেন।
হাতেখড়ি ছোটবেলায়
মুক্তা যখন ক্লাস সেভেনে পড়েন, তখন সাটিনের কাপড় দিয়ে ফুল বানানো শিখেছিলেন। তাঁর বড় বোনের বান্ধবীরা সেই সময় তাঁর কাছে এই ফুল বানানো শিখতে আসেন। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লেখাপড়ার পাশাপাশি নতুন নতুন কাজ শেখা শুরু করেন বিসিক থেকে। ১৯৯১ সালের দিকে মোটামুটি দক্ষ হয়ে ওঠেন মুক্তা। তাঁর বাবা সুইডেন দূতাবাসে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে একবার রাষ্ট্রদূত আসেন তাঁদের বাসায়। তিনি মুক্তার কাজ দেখে প্রশংসা করেন। বিষয়টি তাঁকে আরও উৎসাহিত করে তোলে।

ধীরে ধীরে বিসিক এবং যুব উন্নয়নে বিভিন্ন সরকারি কোর্স করতে থাকেন মুক্তা। একবার বোনের চিকিৎসার জন্য বেঙ্গালুরু গিয়েছিলেন। সেখান থেকে চায়না পুঁতি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ফল-ফুল তৈরির কাজ শিখে আসেন! নিজে অনুশীলন করে বারো রকমের ফল বানানো শিখে ফেলেন মুক্তা।
শেখার জন্য দেশ থেকে বিদেশে
মুক্তা বলছিলেন জাপানি টাইডাই শেখার কথা। যে সময় তিনি এই কাজ শেখেন, তখন দেশে জাপানি টাইডাইয়ের কাজ হতো না বললেই চলে। তাদের কাজ করার কৌশল শিখে ফেলেন মুক্তা। ডাক আসে, টেলিভিশনে শেখাতে হবে। ২২ দিনের একটা অনুষ্ঠানে তিনি জাপানি টাইডাই শেখান টেলিভিশনের পর্দায়। মুক্তা বলেন, ‘আমি যখনই কোনো কিছু শিখেছি, সেখানে একটা নিজস্বতা রাখার চেষ্টা করেছি। সর্বোচ্চটা শেখার চেষ্টা করেছি, যেন কাজটা নিখুঁত হয়। এই ধৈর্য আমি সব সময় রাখি।’

ভারতে গিয়ে লীনা বসাকের কাছে ডিসকভারি মোমের কাজ শেখেন। সেই কাজ দেখেও মুগ্ধ হয়েছেন অনেকে। অরগানিক সাবান তৈরি শেখার জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে মুক্তাকে।
এ ধরনের সাবান তৈরি শিখতে তিনি গিয়েছিলেন ভারতে। সেখানে থাকাকালীন দুর্ঘটনায় আহত হন। ফিরে আসার আগে পাঁচ দিনের ক্লাসে ১২ ধরনের সাবান তৈরি শিখে তবেই ফিরেছিলেন দেশে। বর্তমানে তিনি ২২ ধরনের সাবান তৈরি করছেন।
বসে থাকা নয়, কাজ করতে ভালোবাসেন
নিজের পরিচয় তৈরি করার একটা তাগিদ সব সময় তাড়া করে ফেরে আফরোজা খানম মুক্তাকে। তিনি কাজ করেন, কাজ শেখান আসলে নিজের জন্যই। ‘একজনকে শেখাতে হবে’—এ কারণেই তিনি প্রতিনিয়ত নতুন নতুন জিনিস শেখার চেষ্টা করেন। মুক্তা নিজে যেমন কোর্স করে শিখেছেন, তেমনই রান্না ও হস্তশিল্পের বিভিন্ন কোর্সে ক্লাসও নিয়েছেন। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন কোর্স করানোর সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি।
‘রান্নার একাল সেকাল’ নামের একটি ফেসবুক পেজে নিজের বিভিন্ন ধরনের রেসিপি প্রকাশ করেন মুক্তা। শিক্ষার্থীদের আগ্রহ এবং কাজের প্রতি ভালোবাসা দেখে নতুন করে একটি কাজ শেখার আগ্রহ তৈরি হয় মুক্তার ভেতর। তিনি জানান, এমন অনেক মেয়ে আছে, যারা অর্থের কারণে কোর্স করতে পারে না। তাদের জন্য তিনি সরকারি কোর্সের কথা বলেন। তাতে টাকার দরকার নেই।

নিজের মতো তৈরি করা
প্রতিটি কাজে নিজস্বতার ছাপ রাখতে চান মুক্তা। তাই মন দিয়ে কাজের পাশাপাশি নিজের সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটান তিনি। এতে তিনি আরও এক ধাপ এগিয়ে যান বলে বিশ্বাস করেন। ১০ থেকে ১২ বছর আগে ভারতে গিয়ে শিখেছিলেন চকলেট তৈরি করা। এরপর দেশে ফিরে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন মোল্ড কিনেছেন। এর ফলে তাঁর তৈরি চকলেটে এসেছে ভিন্নতা। তা দেখে অনেকে চমকে গিয়েছিল। একটি ডাল প্রতিযোগিতায় তিনি খেসারির ডালের পরোটা বানিয়ে মুগ্ধ করেছিলেন বিচারকদের। সেই রেসিপি
ও পরোটার পুষ্টিগুণ সম্পর্কেও জানিয়েছিলেন তাঁদের। সে জন্য পরামর্শ নিয়েছিলেন পুষ্টিবিদের।
মুক্তার এমন চিন্তা তাঁর শিল্পকে আরও নিখুঁত করে দেয়। সম্প্রতি চা-বাগানে গিয়ে চা ভর্তার সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন তিনি। সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করেছেন চা-পাতার পরোটা! মুক্তা বলেন, ‘যদি আবারও কোনো দিন সেই চা-শ্রমিকদের সঙ্গে দেখা হয়, তাহলে তাঁদের বলব, এভাবে বানিয়েও তাঁরা খেতে পারেন।’
শুধু শিখে নয়, শিখিয়েও আনন্দ
‘কাজ করতে গিয়ে অনেক কিছু দেখেছি, শিখেছি।’
এ যেন মুক্তার জীবনের বিশাল গল্পের সারমর্ম। শুধু ব্লক-বাটিক নয়; একজন মানুষের শিখতে চাওয়া, সুযোগের অভাবে পিছিয়ে যাওয়ার অনেক গল্প কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। ফলে তিনি অন্য নারীদের শেখার পথ সহজ করতে চান। তাই সুযোগ পেলেই মুক্তা এমন প্রশিক্ষণে অংশ নেন, যেন অন্যদের নতুন কিছু শেখাতে পারেন। মুক্তা বলেন, ‘যারা আমার মতো শিখতে আগ্রহী, তাদের জন্য আমি নিজেকে উন্মুক্ত রেখেছি।’
এ যেন এক নিরন্তর শিখে চলার গল্প, শেখানোর গল্প। অন্যকে সামনের দিকে নেওয়ার গল্প।

‘বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র/ নানান ভাবের নতুন জিনিস, শিখছি দিবারাত্র।’ কবি সুনির্মল বসুর এই কবিতা সবাই পড়েছি ছোটবেলায়। তবে শিখতে পারার এই আনন্দ সবাই উপলব্ধি করতে পারেন না। কিন্তু যাঁরা পারেন, তাঁরা নিজেকে একটা উচ্চতায় নিয়ে যেতে সফল হন যেকোনোভাবেই। তেমনই একজন মানুষ আফরোজা খানম মুক্তা।
ছোটবেলা থেকে হস্তশিল্প শেখার আগ্রহ তাঁর মায়ের কাজ দেখে। এখনো নতুন নতুন জিনিস তৈরি করা শিখে চলেছেন তিনি। কখনো কাপড়ের ফুল, কখনো চকলেট কিংবা সাবান। ৩০ বছর ধরে নিজের বাড়ির নিচতলায় শৌখিন কারুশিল্প নামের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা করছেন তিনি। দু-তিন শিফটে এক শ থেকে দেড় শ শিক্ষার্থী তাঁর কাছে মোম, ব্লক, বাটিক, সাবান তৈরি এবং পুঁতির বিভিন্ন কাজ শেখেন।
হাতেখড়ি ছোটবেলায়
মুক্তা যখন ক্লাস সেভেনে পড়েন, তখন সাটিনের কাপড় দিয়ে ফুল বানানো শিখেছিলেন। তাঁর বড় বোনের বান্ধবীরা সেই সময় তাঁর কাছে এই ফুল বানানো শিখতে আসেন। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লেখাপড়ার পাশাপাশি নতুন নতুন কাজ শেখা শুরু করেন বিসিক থেকে। ১৯৯১ সালের দিকে মোটামুটি দক্ষ হয়ে ওঠেন মুক্তা। তাঁর বাবা সুইডেন দূতাবাসে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে একবার রাষ্ট্রদূত আসেন তাঁদের বাসায়। তিনি মুক্তার কাজ দেখে প্রশংসা করেন। বিষয়টি তাঁকে আরও উৎসাহিত করে তোলে।

ধীরে ধীরে বিসিক এবং যুব উন্নয়নে বিভিন্ন সরকারি কোর্স করতে থাকেন মুক্তা। একবার বোনের চিকিৎসার জন্য বেঙ্গালুরু গিয়েছিলেন। সেখান থেকে চায়না পুঁতি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ফল-ফুল তৈরির কাজ শিখে আসেন! নিজে অনুশীলন করে বারো রকমের ফল বানানো শিখে ফেলেন মুক্তা।
শেখার জন্য দেশ থেকে বিদেশে
মুক্তা বলছিলেন জাপানি টাইডাই শেখার কথা। যে সময় তিনি এই কাজ শেখেন, তখন দেশে জাপানি টাইডাইয়ের কাজ হতো না বললেই চলে। তাদের কাজ করার কৌশল শিখে ফেলেন মুক্তা। ডাক আসে, টেলিভিশনে শেখাতে হবে। ২২ দিনের একটা অনুষ্ঠানে তিনি জাপানি টাইডাই শেখান টেলিভিশনের পর্দায়। মুক্তা বলেন, ‘আমি যখনই কোনো কিছু শিখেছি, সেখানে একটা নিজস্বতা রাখার চেষ্টা করেছি। সর্বোচ্চটা শেখার চেষ্টা করেছি, যেন কাজটা নিখুঁত হয়। এই ধৈর্য আমি সব সময় রাখি।’

ভারতে গিয়ে লীনা বসাকের কাছে ডিসকভারি মোমের কাজ শেখেন। সেই কাজ দেখেও মুগ্ধ হয়েছেন অনেকে। অরগানিক সাবান তৈরি শেখার জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে মুক্তাকে।
এ ধরনের সাবান তৈরি শিখতে তিনি গিয়েছিলেন ভারতে। সেখানে থাকাকালীন দুর্ঘটনায় আহত হন। ফিরে আসার আগে পাঁচ দিনের ক্লাসে ১২ ধরনের সাবান তৈরি শিখে তবেই ফিরেছিলেন দেশে। বর্তমানে তিনি ২২ ধরনের সাবান তৈরি করছেন।
বসে থাকা নয়, কাজ করতে ভালোবাসেন
নিজের পরিচয় তৈরি করার একটা তাগিদ সব সময় তাড়া করে ফেরে আফরোজা খানম মুক্তাকে। তিনি কাজ করেন, কাজ শেখান আসলে নিজের জন্যই। ‘একজনকে শেখাতে হবে’—এ কারণেই তিনি প্রতিনিয়ত নতুন নতুন জিনিস শেখার চেষ্টা করেন। মুক্তা নিজে যেমন কোর্স করে শিখেছেন, তেমনই রান্না ও হস্তশিল্পের বিভিন্ন কোর্সে ক্লাসও নিয়েছেন। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন কোর্স করানোর সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি।
‘রান্নার একাল সেকাল’ নামের একটি ফেসবুক পেজে নিজের বিভিন্ন ধরনের রেসিপি প্রকাশ করেন মুক্তা। শিক্ষার্থীদের আগ্রহ এবং কাজের প্রতি ভালোবাসা দেখে নতুন করে একটি কাজ শেখার আগ্রহ তৈরি হয় মুক্তার ভেতর। তিনি জানান, এমন অনেক মেয়ে আছে, যারা অর্থের কারণে কোর্স করতে পারে না। তাদের জন্য তিনি সরকারি কোর্সের কথা বলেন। তাতে টাকার দরকার নেই।

নিজের মতো তৈরি করা
প্রতিটি কাজে নিজস্বতার ছাপ রাখতে চান মুক্তা। তাই মন দিয়ে কাজের পাশাপাশি নিজের সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটান তিনি। এতে তিনি আরও এক ধাপ এগিয়ে যান বলে বিশ্বাস করেন। ১০ থেকে ১২ বছর আগে ভারতে গিয়ে শিখেছিলেন চকলেট তৈরি করা। এরপর দেশে ফিরে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন মোল্ড কিনেছেন। এর ফলে তাঁর তৈরি চকলেটে এসেছে ভিন্নতা। তা দেখে অনেকে চমকে গিয়েছিল। একটি ডাল প্রতিযোগিতায় তিনি খেসারির ডালের পরোটা বানিয়ে মুগ্ধ করেছিলেন বিচারকদের। সেই রেসিপি
ও পরোটার পুষ্টিগুণ সম্পর্কেও জানিয়েছিলেন তাঁদের। সে জন্য পরামর্শ নিয়েছিলেন পুষ্টিবিদের।
মুক্তার এমন চিন্তা তাঁর শিল্পকে আরও নিখুঁত করে দেয়। সম্প্রতি চা-বাগানে গিয়ে চা ভর্তার সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন তিনি। সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করেছেন চা-পাতার পরোটা! মুক্তা বলেন, ‘যদি আবারও কোনো দিন সেই চা-শ্রমিকদের সঙ্গে দেখা হয়, তাহলে তাঁদের বলব, এভাবে বানিয়েও তাঁরা খেতে পারেন।’
শুধু শিখে নয়, শিখিয়েও আনন্দ
‘কাজ করতে গিয়ে অনেক কিছু দেখেছি, শিখেছি।’
এ যেন মুক্তার জীবনের বিশাল গল্পের সারমর্ম। শুধু ব্লক-বাটিক নয়; একজন মানুষের শিখতে চাওয়া, সুযোগের অভাবে পিছিয়ে যাওয়ার অনেক গল্প কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। ফলে তিনি অন্য নারীদের শেখার পথ সহজ করতে চান। তাই সুযোগ পেলেই মুক্তা এমন প্রশিক্ষণে অংশ নেন, যেন অন্যদের নতুন কিছু শেখাতে পারেন। মুক্তা বলেন, ‘যারা আমার মতো শিখতে আগ্রহী, তাদের জন্য আমি নিজেকে উন্মুক্ত রেখেছি।’
এ যেন এক নিরন্তর শিখে চলার গল্প, শেখানোর গল্প। অন্যকে সামনের দিকে নেওয়ার গল্প।

পৃথিবীতে উৎপাদন ঐতিহ্য যে নারীর হাতে গড়ে উঠেছে, সেই তথ্য আজ সর্বজনবিদিত। সভ্যতার সূচনায় নারীই প্রকৃতি চষে পরিবারের খাদ্যসংস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করেছিলেন। উপমহাদেশীয় পুরাণে প্রকৃতি, বনদেবী, অসুর-সংহারী ইত্যাদি রূপে সম্মানিত করা হয় নারীকে। আজ যখন বৈশ্বিক উন্নয়ন লক্ষ্যের সাপেক্ষে বাংলাদেশ প্রকৃতিবিরুদ
১৭ এপ্রিল ২০২৪
বিশ্বজুড়ে অনেক দেশে নারী ও পুরুষের কাজের সময়ের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পার্থক্য দেখা যায়। তবে এই পার্থক্য সরাসরি আইনি বাধ্যবাধকতার ফল নয়; বরং এটি মূলত গভীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণের প্রতিফলন।
৩ দিন আগে
আমি একজন কর্মজীবী নারী। একজনের সঙ্গে আমার ৮ বছরের সম্পর্ক ছিল। তিন মাস আগে সেই প্রেমিকের ইচ্ছায় আমাদের বিচ্ছেদ হয়। বিচ্ছেদের মানসিক ধকল আমি এখনো পুরোপুরি সামলে উঠতে পারিনি। অথচ আমি এই সম্পর্কে যেতে চাইনি।
৪ দিন আগে
থাইল্যান্ডের লাম্পাং প্রদেশে একদল নারী স্থানীয় বন রক্ষা এবং পুনরুদ্ধারে অনন্য ভূমিকা রাখছেন। এই উদ্যোগের নেতৃত্বে আছেন রাচাপ্রাপা কামফুদ। তিনি বান পং কমিউনিটি ফরেস্ট অ্যান্ড ফায়ার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের প্রধান। গ্রুপটি মূলত বন পুনর্গঠন ও আগুন প্রতিরোধে কাজ করছে।
৪ দিন আগেডা. ফারজানা রহমান

প্রশ্ন: আমি একজন কর্মজীবী নারী। একজনের সঙ্গে আমার ৮ বছরের সম্পর্ক ছিল। তিন মাস আগে সেই প্রেমিকের ইচ্ছায় আমাদের বিচ্ছেদ হয়। বিচ্ছেদের মানসিক ধকল আমি এখনো পুরোপুরি সামলে উঠতে পারিনি। অথচ আমি এই সম্পর্কে যেতে চাইনি। আমাকে সে ইমোশনাল কথাবার্তা বলে সম্পর্ক তৈরি করেছিল। আমাকে ছাড়া বাঁচবে না; এমন কথা বলেছিল। অথচ সেই মানুষটি আমাকে ছেড়ে চলে গেল। আমাদের বিচ্ছেদ হওয়ার তিন-চার মাস আগে সে আরেকজনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।
বিচ্ছেদের পর কীভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা যায়? যাদের এ রকম দীর্ঘদিনের সম্পর্কের বিচ্ছেদ হয়, তারা কি পরবর্তী জীবনে সুখী আছেন?
ইরা, কুষ্টিয়া।
উত্তর: আমি মনে করি, আপনি সৌভাগ্যবান। সেটি দুটি কারণে—আপনি কর্মজীবী আর সম্পর্কটা বিয়ের পর্যায়ে যাওয়ার আগেই শেষ হয়েছে। আমি আপনার মধ্যে ব্যক্তিত্ব ও পরিমিত রুচিবোধের পরিচয় পাচ্ছি। আপনি কিন্তু আপনার প্রাক্তনের আবেগকে প্রাধান্য দিতেই সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। তিনি সম্ভবত কোনো বিষয়ে তেমন সিরিয়াস নন। এ রকম কিছু মানুষ থাকে, এদের সঙ্গে সম্পর্ক এমনিতেও দীর্ঘস্থায়ী হয় না। বিচ্ছেদের পর স্বাভাবিক জীবনে আসতে হলে, মন থেকে এই ভালোবাসার অধ্যায়ের ইতি এখানেই টানুন। নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করুন। নিজের যা অর্জন, সেগুলোর মূল্যায়ন করুন।
যে মানুষটি আট বছরের সম্পর্ককে গুরুত্ব না দিয়ে মাত্র তিন মাসের ভালোবাসাকে গুরুত্ব দেয়, তাঁর কথা চিন্তা করে আপনি আর একমুহূর্তও নষ্ট করবেন না। তবে প্রাক্তনকে ভুলতে গিয়ে এখনই বিয়ে কিংবা নতুন কোনো সম্পর্কে জড়ানো ঠিক হবে না। শুধু নিজেকে সময় দিন; সময় নিন।
এমন অনেককে খুব কাছ থেকে আমি দেখেছি, যাঁরা বিচ্ছেদের পর খুব ভালো আছেন। এ ক্ষেত্রে আপনার কোনো ভুল নেই, দোষও নেই।
যে মানুষটি আট বছরের সম্পর্ককে গুরুত্ব না দিয়ে মাত্র তিন মাসের ভালোবাসাকে গুরুত্ব দেয়, তাঁর কথা চিন্তা করে আপনি আর একমুহূর্তও নষ্ট করবেন না। তবে প্রাক্তনকে ভুলতে গিয়ে এখনই বিয়ে কিংবা নতুন কোনো সম্পর্কে জড়ানো ঠিক হবে না। নিজেকে সময় দিন; সময় নিন। পেশাগত জীবনের পাশাপাশি আপনার পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারেন। আমি নিশ্চিত, একজনের কথা এবং আবেগসর্বস্ব মানুষের ভালোবাসার অভিনয় থেকে মুক্তি পেয়ে আপনি স্বস্তি ও শান্তি ফিরে পাবেন। একটু বুঝেশুনে, সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে আপনি অবশ্যই পরবর্তী জীবনে সুখী হবেন।
পরামর্শ দিয়েছেন
ডা. ফারজানা রহমান
সহযোগী অধ্যাপক
মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট

প্রশ্ন: আমি একজন কর্মজীবী নারী। একজনের সঙ্গে আমার ৮ বছরের সম্পর্ক ছিল। তিন মাস আগে সেই প্রেমিকের ইচ্ছায় আমাদের বিচ্ছেদ হয়। বিচ্ছেদের মানসিক ধকল আমি এখনো পুরোপুরি সামলে উঠতে পারিনি। অথচ আমি এই সম্পর্কে যেতে চাইনি। আমাকে সে ইমোশনাল কথাবার্তা বলে সম্পর্ক তৈরি করেছিল। আমাকে ছাড়া বাঁচবে না; এমন কথা বলেছিল। অথচ সেই মানুষটি আমাকে ছেড়ে চলে গেল। আমাদের বিচ্ছেদ হওয়ার তিন-চার মাস আগে সে আরেকজনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।
বিচ্ছেদের পর কীভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা যায়? যাদের এ রকম দীর্ঘদিনের সম্পর্কের বিচ্ছেদ হয়, তারা কি পরবর্তী জীবনে সুখী আছেন?
ইরা, কুষ্টিয়া।
উত্তর: আমি মনে করি, আপনি সৌভাগ্যবান। সেটি দুটি কারণে—আপনি কর্মজীবী আর সম্পর্কটা বিয়ের পর্যায়ে যাওয়ার আগেই শেষ হয়েছে। আমি আপনার মধ্যে ব্যক্তিত্ব ও পরিমিত রুচিবোধের পরিচয় পাচ্ছি। আপনি কিন্তু আপনার প্রাক্তনের আবেগকে প্রাধান্য দিতেই সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। তিনি সম্ভবত কোনো বিষয়ে তেমন সিরিয়াস নন। এ রকম কিছু মানুষ থাকে, এদের সঙ্গে সম্পর্ক এমনিতেও দীর্ঘস্থায়ী হয় না। বিচ্ছেদের পর স্বাভাবিক জীবনে আসতে হলে, মন থেকে এই ভালোবাসার অধ্যায়ের ইতি এখানেই টানুন। নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করুন। নিজের যা অর্জন, সেগুলোর মূল্যায়ন করুন।
যে মানুষটি আট বছরের সম্পর্ককে গুরুত্ব না দিয়ে মাত্র তিন মাসের ভালোবাসাকে গুরুত্ব দেয়, তাঁর কথা চিন্তা করে আপনি আর একমুহূর্তও নষ্ট করবেন না। তবে প্রাক্তনকে ভুলতে গিয়ে এখনই বিয়ে কিংবা নতুন কোনো সম্পর্কে জড়ানো ঠিক হবে না। শুধু নিজেকে সময় দিন; সময় নিন।
এমন অনেককে খুব কাছ থেকে আমি দেখেছি, যাঁরা বিচ্ছেদের পর খুব ভালো আছেন। এ ক্ষেত্রে আপনার কোনো ভুল নেই, দোষও নেই।
যে মানুষটি আট বছরের সম্পর্ককে গুরুত্ব না দিয়ে মাত্র তিন মাসের ভালোবাসাকে গুরুত্ব দেয়, তাঁর কথা চিন্তা করে আপনি আর একমুহূর্তও নষ্ট করবেন না। তবে প্রাক্তনকে ভুলতে গিয়ে এখনই বিয়ে কিংবা নতুন কোনো সম্পর্কে জড়ানো ঠিক হবে না। নিজেকে সময় দিন; সময় নিন। পেশাগত জীবনের পাশাপাশি আপনার পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারেন। আমি নিশ্চিত, একজনের কথা এবং আবেগসর্বস্ব মানুষের ভালোবাসার অভিনয় থেকে মুক্তি পেয়ে আপনি স্বস্তি ও শান্তি ফিরে পাবেন। একটু বুঝেশুনে, সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে আপনি অবশ্যই পরবর্তী জীবনে সুখী হবেন।
পরামর্শ দিয়েছেন
ডা. ফারজানা রহমান
সহযোগী অধ্যাপক
মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট

পৃথিবীতে উৎপাদন ঐতিহ্য যে নারীর হাতে গড়ে উঠেছে, সেই তথ্য আজ সর্বজনবিদিত। সভ্যতার সূচনায় নারীই প্রকৃতি চষে পরিবারের খাদ্যসংস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করেছিলেন। উপমহাদেশীয় পুরাণে প্রকৃতি, বনদেবী, অসুর-সংহারী ইত্যাদি রূপে সম্মানিত করা হয় নারীকে। আজ যখন বৈশ্বিক উন্নয়ন লক্ষ্যের সাপেক্ষে বাংলাদেশ প্রকৃতিবিরুদ
১৭ এপ্রিল ২০২৪
বিশ্বজুড়ে অনেক দেশে নারী ও পুরুষের কাজের সময়ের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পার্থক্য দেখা যায়। তবে এই পার্থক্য সরাসরি আইনি বাধ্যবাধকতার ফল নয়; বরং এটি মূলত গভীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণের প্রতিফলন।
৩ দিন আগে
‘বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র/ নানান ভাবের নতুন জিনিস, শিখছি দিবারাত্র।’ কবি সুনির্মল বসুর এই কবিতা সবাই পড়েছি ছোটবেলায়। তবে শিখতে পারার এই আনন্দ সবাই উপলব্ধি করতে পারেন না। কিন্তু যাঁরা পারেন, তাঁরা নিজেকে একটা উচ্চতায় নিয়ে যেতে সফল হন যেকোনোভাবেই। তেমনই একজন মানুষ আফরোজা খানম মুক্তা।
৪ দিন আগে
থাইল্যান্ডের লাম্পাং প্রদেশে একদল নারী স্থানীয় বন রক্ষা এবং পুনরুদ্ধারে অনন্য ভূমিকা রাখছেন। এই উদ্যোগের নেতৃত্বে আছেন রাচাপ্রাপা কামফুদ। তিনি বান পং কমিউনিটি ফরেস্ট অ্যান্ড ফায়ার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের প্রধান। গ্রুপটি মূলত বন পুনর্গঠন ও আগুন প্রতিরোধে কাজ করছে।
৪ দিন আগেফিচার ডেস্ক

থাইল্যান্ডের লাম্পাং প্রদেশে একদল নারী স্থানীয় বন রক্ষা এবং পুনরুদ্ধারে অনন্য ভূমিকা রাখছেন। এই উদ্যোগের নেতৃত্বে আছেন রাচাপ্রাপা কামফুদ। তিনি বান পং কমিউনিটি ফরেস্ট অ্যান্ড ফায়ার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের প্রধান। গ্রুপটি মূলত বন পুনর্গঠন ও আগুন প্রতিরোধে কাজ করছে।
বনের সম্পদ ও স্থানীয় জীবিকা
বান পংয়ের বন থেকে গ্রামবাসী পাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের খাবারের উপযোগী বনজ সম্পদ। সেখানে পাওয়া যায় টার্মাইট মাশরুম, বাঁশের কচি অংশ, নানা ধরনের পাতাযুক্ত সবজি, এমনকি লাল পিঁপড়ার ডিম। রাচাপ্রাপা জানান, এসব পণ্য স্থানীয় বাজারে ভালো দামে বিক্রি হয়। এটা গ্রামের মানুষের জন্য বাড়তি আয়ের উৎস।
গ্রুপটি বনকে আগুনমুক্ত রাখার পাশাপাশি মাশরুম চাষ করছে আগুন ছাড়াই। আগে অনেক এলাকায় মানুষ শুকনো পাতা পুড়িয়ে মাশরুম জন্মানোর চেষ্টা করত। তাতে প্রায়ই বনে আগুন লেগে যাওয়ার ঘটনা ঘটত। কিন্তু বান পংয়ে চেক ড্যাম ব্যবহার করে বনভূমির মাটি আর্দ্র রাখা হয়। এতে পাতাগুলো প্রাকৃতিক সার হিসেবে কাজ করে এবং গাছ দ্রুত ও স্বাস্থ্যবান হয়ে বেড়ে ওঠে।
চেক ড্যামের ভূমিকা
রাচাপ্রাপা ও তাঁর দল ২০০৭ সালে ৪০ হাজার ১০০ একর এলাকার বন পুনরুদ্ধার শুরু করে। এর আগে এই জমি ছিল চিনাবাদামের খেত। তাঁরা স্থানীয় প্রজাতির গাছ রোপণ করেছেন এবং তিন শর বেশি চেক ড্যাম তৈরি করেছেন। এগুলো পাথর, কংক্রিট ও মাটির সংমিশ্রণে তৈরি ছোট বাঁধের মতো কাঠামো। এই চেক ড্যামগুলো ছোট নদী ও পানির স্রোত ধরে রাখে, মাটিতে আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনে। এতে প্রাকৃতিকভাবে বন পুনরুজ্জীবিত হয়।
নারী নেতৃত্বে বন রক্ষাকারী দল
রাচাপ্রাপার গ্রুপে ১০ জন সদস্যের ৮ জনই নারী। তাঁরা নিয়মিত বনে টহল দেন। এ ছাড়া আগুন প্রতিরোধে ফায়ারব্রেক তৈরি করে এবং ওয়াকিটকি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে আগুনের খবর দ্রুত ছড়িয়ে দেন। রাচাপ্রাপা বলেন, ‘স্থানীয় মানুষ প্রথম নারীদের বনে আগুন নেভাতে দেখে অবাক হতেন। কিন্তু দক্ষতা দেখার পর আমাদের প্রতি তাঁদের সম্মান বেড়ে গেছে।’
বনের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক
রাচাপ্রাপা বলেন, ‘আমরা যখন বন রক্ষা করি, বনও তখন আমাদের রক্ষা করে।’ চেক ড্যামের কারণে বনভূমিতে আর্দ্রতা ফিরে এসেছে। গ্রামে থাকা হ্রদগুলো এখন সারা বছর পানি ধরে রাখে। এতে মাছ চাষ এবং কৃষিকাজের সুযোগ বেড়েছে। হ্রদে মাছ চাষের মাধ্যমে এখন ৬০ জনের বেশি মানুষ আয়ের সঙ্গে যুক্ত।
প্রাকৃতিক জীবন এবং বন্য প্রাণী
বন পুনরুদ্ধারের ফলে বন্য প্রাণীর বিচরণও বেড়েছে। গ্রুপের সদস্যরা জানান, এখানে নিয়মিত দেখা যায় বন্য শূকর, হরিণ, কাঠবিড়ালি, টিকটিকি, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। বন পুনর্গঠন শুধু অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়নি, এর সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে এনেছে।

নারীর নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণ
বান পংয়ের উদাহরণ প্রমাণ করছে, নারীর নেতৃত্বে বন রক্ষা এবং পরিবেশ সংরক্ষণ কতটা কার্যকর হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নারীরা বন ব্যবস্থাপনায় যুক্ত হলে এর ফল অনেক বেশি ইতিবাচক হয়, বন সুস্থ থাকে, প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষিত হয়। এর সঙ্গে স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা ও জীবিকা উন্নত হয়। নারীরা বন সংরক্ষণে সক্রিয় ভূমিকা নিলে দীর্ঘ মেয়াদে পুরো সম্প্রদায় উপকৃত হয়।
প্রশংসা এবং সম্প্রদায়ের সঙ্গে সহযোগিতা
বান পং এখন থাইল্যান্ডের অন্যান্য গ্রাম এবং বিদেশি সংস্থাগুলোর কাছে এক অনন্য উদাহরণ। তাদের সফল উদ্যোগ এবং নারী নেতৃত্বে পরিচালিত বন ও অগ্নিনিরোধ কর্মসূচি অন্য সম্প্রদায়কে অনুপ্রাণিত করছে। বান পংয়ের সদস্যরা স্থানীয় মানুষের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, বন পুনরুদ্ধার এবং আগুন প্রতিরোধের কৌশল শেখাচ্ছেন এবং হাতেকলমে কাজের মাধ্যমে তাঁদের অভিজ্ঞতা ভাগ করছেন। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বান পং কমিউনিটি ফরেস্ট অ্যান্ড ফায়ার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ শুধু নিজেদের বন রক্ষা করছে না, এর সঙ্গে আশপাশের গ্রামগুলোর বন রক্ষা এবং টেকসই জীবিকা নিশ্চিতে সাহায্য করছে।
সূত্র: মঙ্গাবে

থাইল্যান্ডের লাম্পাং প্রদেশে একদল নারী স্থানীয় বন রক্ষা এবং পুনরুদ্ধারে অনন্য ভূমিকা রাখছেন। এই উদ্যোগের নেতৃত্বে আছেন রাচাপ্রাপা কামফুদ। তিনি বান পং কমিউনিটি ফরেস্ট অ্যান্ড ফায়ার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের প্রধান। গ্রুপটি মূলত বন পুনর্গঠন ও আগুন প্রতিরোধে কাজ করছে।
বনের সম্পদ ও স্থানীয় জীবিকা
বান পংয়ের বন থেকে গ্রামবাসী পাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের খাবারের উপযোগী বনজ সম্পদ। সেখানে পাওয়া যায় টার্মাইট মাশরুম, বাঁশের কচি অংশ, নানা ধরনের পাতাযুক্ত সবজি, এমনকি লাল পিঁপড়ার ডিম। রাচাপ্রাপা জানান, এসব পণ্য স্থানীয় বাজারে ভালো দামে বিক্রি হয়। এটা গ্রামের মানুষের জন্য বাড়তি আয়ের উৎস।
গ্রুপটি বনকে আগুনমুক্ত রাখার পাশাপাশি মাশরুম চাষ করছে আগুন ছাড়াই। আগে অনেক এলাকায় মানুষ শুকনো পাতা পুড়িয়ে মাশরুম জন্মানোর চেষ্টা করত। তাতে প্রায়ই বনে আগুন লেগে যাওয়ার ঘটনা ঘটত। কিন্তু বান পংয়ে চেক ড্যাম ব্যবহার করে বনভূমির মাটি আর্দ্র রাখা হয়। এতে পাতাগুলো প্রাকৃতিক সার হিসেবে কাজ করে এবং গাছ দ্রুত ও স্বাস্থ্যবান হয়ে বেড়ে ওঠে।
চেক ড্যামের ভূমিকা
রাচাপ্রাপা ও তাঁর দল ২০০৭ সালে ৪০ হাজার ১০০ একর এলাকার বন পুনরুদ্ধার শুরু করে। এর আগে এই জমি ছিল চিনাবাদামের খেত। তাঁরা স্থানীয় প্রজাতির গাছ রোপণ করেছেন এবং তিন শর বেশি চেক ড্যাম তৈরি করেছেন। এগুলো পাথর, কংক্রিট ও মাটির সংমিশ্রণে তৈরি ছোট বাঁধের মতো কাঠামো। এই চেক ড্যামগুলো ছোট নদী ও পানির স্রোত ধরে রাখে, মাটিতে আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনে। এতে প্রাকৃতিকভাবে বন পুনরুজ্জীবিত হয়।
নারী নেতৃত্বে বন রক্ষাকারী দল
রাচাপ্রাপার গ্রুপে ১০ জন সদস্যের ৮ জনই নারী। তাঁরা নিয়মিত বনে টহল দেন। এ ছাড়া আগুন প্রতিরোধে ফায়ারব্রেক তৈরি করে এবং ওয়াকিটকি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে আগুনের খবর দ্রুত ছড়িয়ে দেন। রাচাপ্রাপা বলেন, ‘স্থানীয় মানুষ প্রথম নারীদের বনে আগুন নেভাতে দেখে অবাক হতেন। কিন্তু দক্ষতা দেখার পর আমাদের প্রতি তাঁদের সম্মান বেড়ে গেছে।’
বনের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক
রাচাপ্রাপা বলেন, ‘আমরা যখন বন রক্ষা করি, বনও তখন আমাদের রক্ষা করে।’ চেক ড্যামের কারণে বনভূমিতে আর্দ্রতা ফিরে এসেছে। গ্রামে থাকা হ্রদগুলো এখন সারা বছর পানি ধরে রাখে। এতে মাছ চাষ এবং কৃষিকাজের সুযোগ বেড়েছে। হ্রদে মাছ চাষের মাধ্যমে এখন ৬০ জনের বেশি মানুষ আয়ের সঙ্গে যুক্ত।
প্রাকৃতিক জীবন এবং বন্য প্রাণী
বন পুনরুদ্ধারের ফলে বন্য প্রাণীর বিচরণও বেড়েছে। গ্রুপের সদস্যরা জানান, এখানে নিয়মিত দেখা যায় বন্য শূকর, হরিণ, কাঠবিড়ালি, টিকটিকি, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। বন পুনর্গঠন শুধু অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়নি, এর সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে এনেছে।

নারীর নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণ
বান পংয়ের উদাহরণ প্রমাণ করছে, নারীর নেতৃত্বে বন রক্ষা এবং পরিবেশ সংরক্ষণ কতটা কার্যকর হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নারীরা বন ব্যবস্থাপনায় যুক্ত হলে এর ফল অনেক বেশি ইতিবাচক হয়, বন সুস্থ থাকে, প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষিত হয়। এর সঙ্গে স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা ও জীবিকা উন্নত হয়। নারীরা বন সংরক্ষণে সক্রিয় ভূমিকা নিলে দীর্ঘ মেয়াদে পুরো সম্প্রদায় উপকৃত হয়।
প্রশংসা এবং সম্প্রদায়ের সঙ্গে সহযোগিতা
বান পং এখন থাইল্যান্ডের অন্যান্য গ্রাম এবং বিদেশি সংস্থাগুলোর কাছে এক অনন্য উদাহরণ। তাদের সফল উদ্যোগ এবং নারী নেতৃত্বে পরিচালিত বন ও অগ্নিনিরোধ কর্মসূচি অন্য সম্প্রদায়কে অনুপ্রাণিত করছে। বান পংয়ের সদস্যরা স্থানীয় মানুষের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, বন পুনরুদ্ধার এবং আগুন প্রতিরোধের কৌশল শেখাচ্ছেন এবং হাতেকলমে কাজের মাধ্যমে তাঁদের অভিজ্ঞতা ভাগ করছেন। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বান পং কমিউনিটি ফরেস্ট অ্যান্ড ফায়ার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ শুধু নিজেদের বন রক্ষা করছে না, এর সঙ্গে আশপাশের গ্রামগুলোর বন রক্ষা এবং টেকসই জীবিকা নিশ্চিতে সাহায্য করছে।
সূত্র: মঙ্গাবে

পৃথিবীতে উৎপাদন ঐতিহ্য যে নারীর হাতে গড়ে উঠেছে, সেই তথ্য আজ সর্বজনবিদিত। সভ্যতার সূচনায় নারীই প্রকৃতি চষে পরিবারের খাদ্যসংস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করেছিলেন। উপমহাদেশীয় পুরাণে প্রকৃতি, বনদেবী, অসুর-সংহারী ইত্যাদি রূপে সম্মানিত করা হয় নারীকে। আজ যখন বৈশ্বিক উন্নয়ন লক্ষ্যের সাপেক্ষে বাংলাদেশ প্রকৃতিবিরুদ
১৭ এপ্রিল ২০২৪
বিশ্বজুড়ে অনেক দেশে নারী ও পুরুষের কাজের সময়ের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পার্থক্য দেখা যায়। তবে এই পার্থক্য সরাসরি আইনি বাধ্যবাধকতার ফল নয়; বরং এটি মূলত গভীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণের প্রতিফলন।
৩ দিন আগে
‘বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র/ নানান ভাবের নতুন জিনিস, শিখছি দিবারাত্র।’ কবি সুনির্মল বসুর এই কবিতা সবাই পড়েছি ছোটবেলায়। তবে শিখতে পারার এই আনন্দ সবাই উপলব্ধি করতে পারেন না। কিন্তু যাঁরা পারেন, তাঁরা নিজেকে একটা উচ্চতায় নিয়ে যেতে সফল হন যেকোনোভাবেই। তেমনই একজন মানুষ আফরোজা খানম মুক্তা।
৪ দিন আগে
আমি একজন কর্মজীবী নারী। একজনের সঙ্গে আমার ৮ বছরের সম্পর্ক ছিল। তিন মাস আগে সেই প্রেমিকের ইচ্ছায় আমাদের বিচ্ছেদ হয়। বিচ্ছেদের মানসিক ধকল আমি এখনো পুরোপুরি সামলে উঠতে পারিনি। অথচ আমি এই সম্পর্কে যেতে চাইনি।
৪ দিন আগে