শাকেরা তাসনীম ইরা

আফগানিস্তান নিয়ে কথা হোক কিংবা তালেবান শাসন নিয়ে, সবার আগে যে প্রসঙ্গটি উঠে আসে সেটি হলো ‘নারী’। কেমন আছে আফগানের নারীরা অথবা কেমন ছিল তারা? কতটা অমিল একাল কিংবা সেকালে, সেসব নিয়ে আলোচনার অন্ত নেই অন্তর্জালে। প্রগতিশীল জীবনযাপন থেকে আপাদমস্তক কালো কাপড়ে ঢেকে যাওয়ার সময় পর্যন্ত কী কী ঘটেছে আফগান নারীদের জীবনে, তার গল্প যেন আরব্য রজনীর ইতিহাসের চেয়েও চমকপ্রদ।
আফগানিস্তানে তালেবান শাসন যে একেবারেই নতুন, তা কিন্তু নয়। ১৬ আগস্ট, ২০২১ সালে কাবুল দখল নেওয়ার পর আফগানিস্তানে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতার দখল নিয়েছে তালেবানরা। যদিও পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনীর সঙ্গে তালেবানের দুই দশকের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এমনতর পলায়ন এবং এত অস্বাভাবিক দ্রুততার সঙ্গে, প্রায় বিনা প্রতিরোধে তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে, তা অনেকের কাছেই অপ্রত্যাশিত ছিল।
আফগানিস্তানের জাতিগত আলোচনা প্রসঙ্গে বরাবরই বেশ জোরেশোরে আওয়াজ ওঠানো হয়েছে আফগান নারীদের অধস্তনতা এবং নারী অধিকার আদায়ের ব্যাপারে। কিন্তু আফগানিস্তান দখল-পুনর্দখলের রাজনৈতিক খেলায় নারীর অবস্থান সব সময়ই ছিল গৌণ। আরও খোলাসা করে বললে, আফগান ক্ষমতা দখলের খেলায় নারীদের নিয়ে আলোচনায় মিডিয়া যতটা সরব ছিল, ততটাই নিশ্চুপ ছিল প্রকৃত অর্থে নারী মুক্তির আলোচনায়।
আফগান নারীদের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ঐতিহ্যগতভাবে নিজেদের এই গৃহবন্দী অবস্থান আফগান নারীরা মেনে নিয়েছিল। মূলত বয়ঃসন্ধিকালেই নারীরা ঘরের ভেতর অদৃশ্য হয়ে যেত, এরপর ‘দাদি’ হয়ে তারা কখনো কখনো বের হয়ে আসত। তুলনামূলকভাবে উদার কাবুলের বিপরীতে আফগানের অন্যান্য অঞ্চলে তালেবানের শাসন ছাড়াও ঐতিহ্যগতভাবে নারীরা অনাত্মীয় পুরুষদের সঙ্গে কথা বলত না। ব্যক্তিগত এবং জনজীবন এখানে ছিল তীব্রভাবে বিভক্ত। কোনো নারী যখন ঘর থেকে বের হতো, তখন সে বোরকার নির্জনতায় নিজেকে আবদ্ধ করে রাখত। তালেবানদের উত্থানের শত শত বছর আগে থেকে সেখানে এই ব্যবস্থা চলে আসছে। ১৯৭৯ সালে কমিউনিস্টরা যখন কাবুলে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে তখন ধর্মীয় এবং সংস্কৃতিগত দিক থেকে আফগানের নারীদের সুরক্ষিত রাখার এই ঐতিহ্যবাহী জীবনধারা রাতারাতি ভেঙে পড়ে। প্রবীণ ও পুরুষেরা কমিউনিস্টদের এই অনধিকার চর্চা মেনে নেয়নি কোনো দিনও। যদিও আফগান নারীরা আসলে কী চেয়েছিল সেটাও পরিষ্কার করে বলা সম্ভব নয়। কেননা জন্ম থেকেই সমাজের নির্ধারণ করে দেওয়া গৃহবন্দী থাকার চিন্তা ও মনন তাদের নিজেদের অধিকার আদায়ের কিংবা মুক্ত করার স্বাভাবিক চিন্তার সুযোগই হয়তো দেয়নি।

কমিউনিস্ট শাসনামলে আফগানের হেলমন্দ প্রদেশে একটি নারী সাক্ষরতা কর্মসূচি চালু করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু গোত্রীয় প্রবীণ নেতা ও জমিদারেরা তাদের এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। কারণ আফগান সংস্কৃতি মেয়েদের ঘরের বাইরে স্কুলে পাঠানোর অনুমতি দেয় না। দাদা–বাবার পরম্পরায় এই সংস্কৃতিই চলে আসছে। এর ফলাফল হিসেবে কর্তৃপক্ষ যখন মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে মেয়েদের স্কুলে নিয়ে যায় তখন বিদ্রোহের সূচনা হয়। বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয় নিজেদের মুজাহিদীন বলে পরিচয় দেওয়া একদল সশস্ত্র লোক। তাদের প্রথম অপারেশনে তারা উপত্যকার সকল স্কুলশিক্ষককে অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং জবাই করে হত্যা করে।
গ্রামাঞ্চলে যুবকেরা মেয়েদের স্কুল এবং ভূমি সংস্কারসহ নতুন পদ্ধতির জীবনযাত্রা আরোপ করার বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে মৃত্যুকে বরণ করতেও দ্বিধা করেনি, যদিও এই পুরো বিদ্রোহে নারীর কোনো অংশগ্রহণ কখনোই ছিল কি না তা তর্ক সাপেক্ষ। অন্যদিকে শহরে মেয়েরা রেকর্ড সংখ্যায় স্কুলে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় এবং আশির দশকের শুরুর দিকে নারীরা সংসদীয় আসনে, এমনকি উপ-রাষ্ট্রপতি পদেও নিজের জায়গা দখল করে নেয়। এভাবেই আফগানিস্তানের নারীরা একই মুদ্রার সম্পূর্ণ বিপরীত দুই পিঠের মতো তাদের জীবন যাপন করতে থাকে।
আবার ১৯৮৯ সালে সোভিয়েতরা যখন পরাজিত হয়ে ফিরে যায় তখন আফগানে প্রতিদ্বন্দ্বী মুজাহিদীন গ্রুপগুলো নিজেদের মধ্যে দেশ ভাগাভাগি করে নেওয়ার চেষ্টা করে। সেই সঙ্গে তারা তাদের গ্রামাঞ্চলের রীতিনীতি রাজধানীতে নিয়ে আসে। তারা ফরমান জারি করে যে, ‘নারীরা একেবারেই প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে পারবে না। অতি জরুরি প্রয়োজনে যখন বের হবে, তখনো নিজেদের সম্পূর্ণরূপে ঢেকে রাখতে হবে।’ একইভাবে নারীদের ‘সুন্দরভাবে বা গর্বের সঙ্গে হাঁটা’ও নিষিদ্ধ করা হয়। ধর্মীয় পুলিশ শহরের রাস্তায় টহল দিতে শুরু করে। তারা নারীদের গ্রেপ্তার করে এবং অডিও-ভিডিও ক্যাসেট আগুনে পুড়িয়ে দেয়। তবে গৃহযুদ্ধকালীন সময়ে আমির দাদোর এবং নাইনটি থার্ড ডিভিশন নামে আরও দুটি গ্রুপের উত্থান ঘটে।
এরপর ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে তালেবানরা হামলা করলে প্রত্যুত্তরে মার্কিনরাও আফগানিস্তান আক্রমণ করে এবং তালেবান সরকারকে উৎখাত করে। ২০০৩ সালের দিকে পূর্বে মুজাহিদীন গ্রুপের সঙ্গে পরাজিত হয়ে পালিয়ে যাওয়া আমির দাদো পুনরায় সুসংগঠিত হয়ে মার্কিনদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে এবং কাবুলে হামিদ কারজাইয়ের সরকার গঠন করে। ২০০৬ সালে যুক্তরাজ্যও এতে যুক্ত হয়। মূলত আফগান নারী রক্ষার মহান সাইনবোর্ড গলায় ঝুলিয়ে পশ্চিমা পৃথিবী বরাবরের মতোই সাম্রাজ্য দখলের খেলায় মত্ত হয়ে ওঠে। আফগানিস্তানের ‘নারী রক্ষা’র নামে সৃষ্টি হওয়া যুদ্ধাবস্থায় সবচেয়ে অনিরাপদ অবস্থানে জীবনযাপন করতে থাকে আফগান নারীরাই।
প্রায় ২০ বছরের যুদ্ধাবস্থা শেষে আফগান নারীদের অনিরাপদ বা পুরুষতন্ত্রের হাতে বন্দী রেখেই যুক্তরাষ্ট্র ‘মহান ব্রতে’র সাইনবোর্ড পেছনে ফেলে যত দিনে পিছু হটে এসেছে, তত দিনে আফগানিস্তানের নারীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এদের এক ভাগ রাজধানী কাবুলে বসবাসরত গত ২০-৩০ বছরে জন্ম নেওয়া প্রগতিশীল শিক্ষিত নারী, অন্য ভাগ চিরাচরিত আফগান সংস্কৃতির অন্যতম ধারক হিসেবে জীবনযাপন করা গ্রামাঞ্চলের নারী। তবে বর্তমানে বেশি অনিরাপদ এবং অনিশ্চিত জীবন যাপন করছে আফগানের প্রগতিশীল ও শিক্ষিত নারীরা। কারণ তালেবানরা ক্ষমতা দখলের পর বন্ধ হয়ে গেছে নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া, এমনকি সেকেন্ডারি স্কুলও। সরকারি চাকরিতে কর্মরত নারীদের দেওয়া হয়েছে অব্যাহতি। ঘরের বাইরে বের হওয়াতেও দেওয়া হয়েছে নানান সীমারেখা। নারীদের জন্য পোশাক থেকে শুরু করে আচরণ পর্যন্ত ঠিক করে দেওয়া হয়েছে তালেবান শাসকদের পক্ষ থেকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২ দশমিক ২৬ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হওয়া সন্ত্রাসী নির্মূল, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারী অধিকার রক্ষার ব্যর্থ মিশনের ফলাফল স্বরূপ আফগান নারীরা আরও ভয়াবহভাবে ফিরে গেছে অন্ধকার জগতেই। দুই দশকের আগ্রাসনের পর তালেবানদের সঙ্গে শান্তি চুক্তির নামে দর-কষাকষি শেষে যুক্তরাষ্ট্রের ফিরে যাওয়াকে আফগান নারীদের জীবনে ঘটা সবচেয়ে বড় প্রতারণা বললেও বোধ হয় কম বলা হয়।
মূলত সাম্রাজ্য দখলের সাহেব-বিবি-গোলামের খেলায় প্রয়োজনের সময় অতিরিক্ত তাসের মতো নারী ব্যবহৃত হয়েছে মার্কিন বনাম তালেবানের খেলায়।
নৃবিজ্ঞানী লীলা আবু লুঘোদ দেখিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই মুসলমান নারীদের রক্ষাকারী ইমেজ উপনিবেশবাদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত, যেখানে মনে করা হয় মুসলমান নারীমাত্রই অসহায়, অক্ষম এবং মুসলমান পুরুষের হাতের পুতুল মাত্র। পশ্চিমা সমাজের শেকড় থেকে তৈরি হওয়া কাঠামোগত লিঙ্গবৈষম্যের প্রতি নির্বিকার থেকে মুসলমান নারীদের প্রতি করুণা এবং তাদের রক্ষা করার এই আগ্রহ মূলত পশ্চিমা শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের একটা উপায় মাত্র, যার কাঁধে ভর করে সাম্রাজ্য বিস্তার করা সম্ভব।
আফগানিস্তানে গত ষাট বছরে ক্ষমতার রদবদল হয়েছে অসংখ্যবার। প্রতিবারের রদবদলে প্রথম হোক কিংবা শেষ, সবচেয়ে বড় আঘাত এসেছে নারীর ওপরই। কখনো বন্দী করে রাখা কিংবা কখনো মুক্ত করার প্রলোভন দেখিয়ে আরও অন্ধকারে ঠেলে দেওয়ার এই বাড়াবাড়ি আফগান নারীদের আরও বিপজ্জনক অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে। তবে যেহেতু মানুষ জন্মগতভাবে আশাবাদী এবং যেকারণেই হোক কিছুটা শিক্ষার আলো আফগান নারীদের একটা অংশ ধারণ করতে পেরেছে, তাই তাদের অনেকেই তালেবান সরকারের কঠোর নিয়মের মধ্যে নিজেদের জীবনকে মানিয়ে নিতে গিয়ে ধীরে হলেও ফুঁসে উঠছে। শহুরে শিক্ষিত নারীরা খাঁচায় বন্দী হয়ে থাকতে চায় না। তাই অনেকেই পালিয়ে গেছে। অনেকে এখনো আশায় বুক বেঁধে আছে। ছোট ছোট দলে হলেও অনেকেই সাহসের সঙ্গে প্রতিবাদ করছে। দেশটির প্রত্যন্ত অঞ্চলের অশিক্ষিত নারীরাও এখন বন্দী জীবন নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করছে।
নারীদের মুক্তি অন্যের হাতে নয় বরং আসা উচিত নিজেদের হাত ধরেই। কারও করুণা করে দেওয়া স্বাধীনতা নয় বরং আফগান নারীদের প্রয়োজন নিজের অধিকার নিজেই বুঝে নেওয়া। সেই সম্ভাবনাই যেন বর্তমানে দূরের তারার আলোর মতো উঁকি দিচ্ছে আফগান শহরগুলোতে। আর এ কারণেই হয়তো আফগান নারীদের মুক্তির ক্ষীণ আশা নতুন করে দেখা দিচ্ছে পৃথিবীর সকল নারীদের মধ্যে।

আফগানিস্তান নিয়ে কথা হোক কিংবা তালেবান শাসন নিয়ে, সবার আগে যে প্রসঙ্গটি উঠে আসে সেটি হলো ‘নারী’। কেমন আছে আফগানের নারীরা অথবা কেমন ছিল তারা? কতটা অমিল একাল কিংবা সেকালে, সেসব নিয়ে আলোচনার অন্ত নেই অন্তর্জালে। প্রগতিশীল জীবনযাপন থেকে আপাদমস্তক কালো কাপড়ে ঢেকে যাওয়ার সময় পর্যন্ত কী কী ঘটেছে আফগান নারীদের জীবনে, তার গল্প যেন আরব্য রজনীর ইতিহাসের চেয়েও চমকপ্রদ।
আফগানিস্তানে তালেবান শাসন যে একেবারেই নতুন, তা কিন্তু নয়। ১৬ আগস্ট, ২০২১ সালে কাবুল দখল নেওয়ার পর আফগানিস্তানে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতার দখল নিয়েছে তালেবানরা। যদিও পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনীর সঙ্গে তালেবানের দুই দশকের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এমনতর পলায়ন এবং এত অস্বাভাবিক দ্রুততার সঙ্গে, প্রায় বিনা প্রতিরোধে তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে, তা অনেকের কাছেই অপ্রত্যাশিত ছিল।
আফগানিস্তানের জাতিগত আলোচনা প্রসঙ্গে বরাবরই বেশ জোরেশোরে আওয়াজ ওঠানো হয়েছে আফগান নারীদের অধস্তনতা এবং নারী অধিকার আদায়ের ব্যাপারে। কিন্তু আফগানিস্তান দখল-পুনর্দখলের রাজনৈতিক খেলায় নারীর অবস্থান সব সময়ই ছিল গৌণ। আরও খোলাসা করে বললে, আফগান ক্ষমতা দখলের খেলায় নারীদের নিয়ে আলোচনায় মিডিয়া যতটা সরব ছিল, ততটাই নিশ্চুপ ছিল প্রকৃত অর্থে নারী মুক্তির আলোচনায়।
আফগান নারীদের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ঐতিহ্যগতভাবে নিজেদের এই গৃহবন্দী অবস্থান আফগান নারীরা মেনে নিয়েছিল। মূলত বয়ঃসন্ধিকালেই নারীরা ঘরের ভেতর অদৃশ্য হয়ে যেত, এরপর ‘দাদি’ হয়ে তারা কখনো কখনো বের হয়ে আসত। তুলনামূলকভাবে উদার কাবুলের বিপরীতে আফগানের অন্যান্য অঞ্চলে তালেবানের শাসন ছাড়াও ঐতিহ্যগতভাবে নারীরা অনাত্মীয় পুরুষদের সঙ্গে কথা বলত না। ব্যক্তিগত এবং জনজীবন এখানে ছিল তীব্রভাবে বিভক্ত। কোনো নারী যখন ঘর থেকে বের হতো, তখন সে বোরকার নির্জনতায় নিজেকে আবদ্ধ করে রাখত। তালেবানদের উত্থানের শত শত বছর আগে থেকে সেখানে এই ব্যবস্থা চলে আসছে। ১৯৭৯ সালে কমিউনিস্টরা যখন কাবুলে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে তখন ধর্মীয় এবং সংস্কৃতিগত দিক থেকে আফগানের নারীদের সুরক্ষিত রাখার এই ঐতিহ্যবাহী জীবনধারা রাতারাতি ভেঙে পড়ে। প্রবীণ ও পুরুষেরা কমিউনিস্টদের এই অনধিকার চর্চা মেনে নেয়নি কোনো দিনও। যদিও আফগান নারীরা আসলে কী চেয়েছিল সেটাও পরিষ্কার করে বলা সম্ভব নয়। কেননা জন্ম থেকেই সমাজের নির্ধারণ করে দেওয়া গৃহবন্দী থাকার চিন্তা ও মনন তাদের নিজেদের অধিকার আদায়ের কিংবা মুক্ত করার স্বাভাবিক চিন্তার সুযোগই হয়তো দেয়নি।

কমিউনিস্ট শাসনামলে আফগানের হেলমন্দ প্রদেশে একটি নারী সাক্ষরতা কর্মসূচি চালু করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু গোত্রীয় প্রবীণ নেতা ও জমিদারেরা তাদের এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। কারণ আফগান সংস্কৃতি মেয়েদের ঘরের বাইরে স্কুলে পাঠানোর অনুমতি দেয় না। দাদা–বাবার পরম্পরায় এই সংস্কৃতিই চলে আসছে। এর ফলাফল হিসেবে কর্তৃপক্ষ যখন মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে মেয়েদের স্কুলে নিয়ে যায় তখন বিদ্রোহের সূচনা হয়। বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয় নিজেদের মুজাহিদীন বলে পরিচয় দেওয়া একদল সশস্ত্র লোক। তাদের প্রথম অপারেশনে তারা উপত্যকার সকল স্কুলশিক্ষককে অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং জবাই করে হত্যা করে।
গ্রামাঞ্চলে যুবকেরা মেয়েদের স্কুল এবং ভূমি সংস্কারসহ নতুন পদ্ধতির জীবনযাত্রা আরোপ করার বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে মৃত্যুকে বরণ করতেও দ্বিধা করেনি, যদিও এই পুরো বিদ্রোহে নারীর কোনো অংশগ্রহণ কখনোই ছিল কি না তা তর্ক সাপেক্ষ। অন্যদিকে শহরে মেয়েরা রেকর্ড সংখ্যায় স্কুলে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় এবং আশির দশকের শুরুর দিকে নারীরা সংসদীয় আসনে, এমনকি উপ-রাষ্ট্রপতি পদেও নিজের জায়গা দখল করে নেয়। এভাবেই আফগানিস্তানের নারীরা একই মুদ্রার সম্পূর্ণ বিপরীত দুই পিঠের মতো তাদের জীবন যাপন করতে থাকে।
আবার ১৯৮৯ সালে সোভিয়েতরা যখন পরাজিত হয়ে ফিরে যায় তখন আফগানে প্রতিদ্বন্দ্বী মুজাহিদীন গ্রুপগুলো নিজেদের মধ্যে দেশ ভাগাভাগি করে নেওয়ার চেষ্টা করে। সেই সঙ্গে তারা তাদের গ্রামাঞ্চলের রীতিনীতি রাজধানীতে নিয়ে আসে। তারা ফরমান জারি করে যে, ‘নারীরা একেবারেই প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে পারবে না। অতি জরুরি প্রয়োজনে যখন বের হবে, তখনো নিজেদের সম্পূর্ণরূপে ঢেকে রাখতে হবে।’ একইভাবে নারীদের ‘সুন্দরভাবে বা গর্বের সঙ্গে হাঁটা’ও নিষিদ্ধ করা হয়। ধর্মীয় পুলিশ শহরের রাস্তায় টহল দিতে শুরু করে। তারা নারীদের গ্রেপ্তার করে এবং অডিও-ভিডিও ক্যাসেট আগুনে পুড়িয়ে দেয়। তবে গৃহযুদ্ধকালীন সময়ে আমির দাদোর এবং নাইনটি থার্ড ডিভিশন নামে আরও দুটি গ্রুপের উত্থান ঘটে।
এরপর ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে তালেবানরা হামলা করলে প্রত্যুত্তরে মার্কিনরাও আফগানিস্তান আক্রমণ করে এবং তালেবান সরকারকে উৎখাত করে। ২০০৩ সালের দিকে পূর্বে মুজাহিদীন গ্রুপের সঙ্গে পরাজিত হয়ে পালিয়ে যাওয়া আমির দাদো পুনরায় সুসংগঠিত হয়ে মার্কিনদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে এবং কাবুলে হামিদ কারজাইয়ের সরকার গঠন করে। ২০০৬ সালে যুক্তরাজ্যও এতে যুক্ত হয়। মূলত আফগান নারী রক্ষার মহান সাইনবোর্ড গলায় ঝুলিয়ে পশ্চিমা পৃথিবী বরাবরের মতোই সাম্রাজ্য দখলের খেলায় মত্ত হয়ে ওঠে। আফগানিস্তানের ‘নারী রক্ষা’র নামে সৃষ্টি হওয়া যুদ্ধাবস্থায় সবচেয়ে অনিরাপদ অবস্থানে জীবনযাপন করতে থাকে আফগান নারীরাই।
প্রায় ২০ বছরের যুদ্ধাবস্থা শেষে আফগান নারীদের অনিরাপদ বা পুরুষতন্ত্রের হাতে বন্দী রেখেই যুক্তরাষ্ট্র ‘মহান ব্রতে’র সাইনবোর্ড পেছনে ফেলে যত দিনে পিছু হটে এসেছে, তত দিনে আফগানিস্তানের নারীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এদের এক ভাগ রাজধানী কাবুলে বসবাসরত গত ২০-৩০ বছরে জন্ম নেওয়া প্রগতিশীল শিক্ষিত নারী, অন্য ভাগ চিরাচরিত আফগান সংস্কৃতির অন্যতম ধারক হিসেবে জীবনযাপন করা গ্রামাঞ্চলের নারী। তবে বর্তমানে বেশি অনিরাপদ এবং অনিশ্চিত জীবন যাপন করছে আফগানের প্রগতিশীল ও শিক্ষিত নারীরা। কারণ তালেবানরা ক্ষমতা দখলের পর বন্ধ হয়ে গেছে নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া, এমনকি সেকেন্ডারি স্কুলও। সরকারি চাকরিতে কর্মরত নারীদের দেওয়া হয়েছে অব্যাহতি। ঘরের বাইরে বের হওয়াতেও দেওয়া হয়েছে নানান সীমারেখা। নারীদের জন্য পোশাক থেকে শুরু করে আচরণ পর্যন্ত ঠিক করে দেওয়া হয়েছে তালেবান শাসকদের পক্ষ থেকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২ দশমিক ২৬ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হওয়া সন্ত্রাসী নির্মূল, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারী অধিকার রক্ষার ব্যর্থ মিশনের ফলাফল স্বরূপ আফগান নারীরা আরও ভয়াবহভাবে ফিরে গেছে অন্ধকার জগতেই। দুই দশকের আগ্রাসনের পর তালেবানদের সঙ্গে শান্তি চুক্তির নামে দর-কষাকষি শেষে যুক্তরাষ্ট্রের ফিরে যাওয়াকে আফগান নারীদের জীবনে ঘটা সবচেয়ে বড় প্রতারণা বললেও বোধ হয় কম বলা হয়।
মূলত সাম্রাজ্য দখলের সাহেব-বিবি-গোলামের খেলায় প্রয়োজনের সময় অতিরিক্ত তাসের মতো নারী ব্যবহৃত হয়েছে মার্কিন বনাম তালেবানের খেলায়।
নৃবিজ্ঞানী লীলা আবু লুঘোদ দেখিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই মুসলমান নারীদের রক্ষাকারী ইমেজ উপনিবেশবাদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত, যেখানে মনে করা হয় মুসলমান নারীমাত্রই অসহায়, অক্ষম এবং মুসলমান পুরুষের হাতের পুতুল মাত্র। পশ্চিমা সমাজের শেকড় থেকে তৈরি হওয়া কাঠামোগত লিঙ্গবৈষম্যের প্রতি নির্বিকার থেকে মুসলমান নারীদের প্রতি করুণা এবং তাদের রক্ষা করার এই আগ্রহ মূলত পশ্চিমা শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের একটা উপায় মাত্র, যার কাঁধে ভর করে সাম্রাজ্য বিস্তার করা সম্ভব।
আফগানিস্তানে গত ষাট বছরে ক্ষমতার রদবদল হয়েছে অসংখ্যবার। প্রতিবারের রদবদলে প্রথম হোক কিংবা শেষ, সবচেয়ে বড় আঘাত এসেছে নারীর ওপরই। কখনো বন্দী করে রাখা কিংবা কখনো মুক্ত করার প্রলোভন দেখিয়ে আরও অন্ধকারে ঠেলে দেওয়ার এই বাড়াবাড়ি আফগান নারীদের আরও বিপজ্জনক অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে। তবে যেহেতু মানুষ জন্মগতভাবে আশাবাদী এবং যেকারণেই হোক কিছুটা শিক্ষার আলো আফগান নারীদের একটা অংশ ধারণ করতে পেরেছে, তাই তাদের অনেকেই তালেবান সরকারের কঠোর নিয়মের মধ্যে নিজেদের জীবনকে মানিয়ে নিতে গিয়ে ধীরে হলেও ফুঁসে উঠছে। শহুরে শিক্ষিত নারীরা খাঁচায় বন্দী হয়ে থাকতে চায় না। তাই অনেকেই পালিয়ে গেছে। অনেকে এখনো আশায় বুক বেঁধে আছে। ছোট ছোট দলে হলেও অনেকেই সাহসের সঙ্গে প্রতিবাদ করছে। দেশটির প্রত্যন্ত অঞ্চলের অশিক্ষিত নারীরাও এখন বন্দী জীবন নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করছে।
নারীদের মুক্তি অন্যের হাতে নয় বরং আসা উচিত নিজেদের হাত ধরেই। কারও করুণা করে দেওয়া স্বাধীনতা নয় বরং আফগান নারীদের প্রয়োজন নিজের অধিকার নিজেই বুঝে নেওয়া। সেই সম্ভাবনাই যেন বর্তমানে দূরের তারার আলোর মতো উঁকি দিচ্ছে আফগান শহরগুলোতে। আর এ কারণেই হয়তো আফগান নারীদের মুক্তির ক্ষীণ আশা নতুন করে দেখা দিচ্ছে পৃথিবীর সকল নারীদের মধ্যে।
শাকেরা তাসনীম ইরা

আফগানিস্তান নিয়ে কথা হোক কিংবা তালেবান শাসন নিয়ে, সবার আগে যে প্রসঙ্গটি উঠে আসে সেটি হলো ‘নারী’। কেমন আছে আফগানের নারীরা অথবা কেমন ছিল তারা? কতটা অমিল একাল কিংবা সেকালে, সেসব নিয়ে আলোচনার অন্ত নেই অন্তর্জালে। প্রগতিশীল জীবনযাপন থেকে আপাদমস্তক কালো কাপড়ে ঢেকে যাওয়ার সময় পর্যন্ত কী কী ঘটেছে আফগান নারীদের জীবনে, তার গল্প যেন আরব্য রজনীর ইতিহাসের চেয়েও চমকপ্রদ।
আফগানিস্তানে তালেবান শাসন যে একেবারেই নতুন, তা কিন্তু নয়। ১৬ আগস্ট, ২০২১ সালে কাবুল দখল নেওয়ার পর আফগানিস্তানে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতার দখল নিয়েছে তালেবানরা। যদিও পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনীর সঙ্গে তালেবানের দুই দশকের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এমনতর পলায়ন এবং এত অস্বাভাবিক দ্রুততার সঙ্গে, প্রায় বিনা প্রতিরোধে তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে, তা অনেকের কাছেই অপ্রত্যাশিত ছিল।
আফগানিস্তানের জাতিগত আলোচনা প্রসঙ্গে বরাবরই বেশ জোরেশোরে আওয়াজ ওঠানো হয়েছে আফগান নারীদের অধস্তনতা এবং নারী অধিকার আদায়ের ব্যাপারে। কিন্তু আফগানিস্তান দখল-পুনর্দখলের রাজনৈতিক খেলায় নারীর অবস্থান সব সময়ই ছিল গৌণ। আরও খোলাসা করে বললে, আফগান ক্ষমতা দখলের খেলায় নারীদের নিয়ে আলোচনায় মিডিয়া যতটা সরব ছিল, ততটাই নিশ্চুপ ছিল প্রকৃত অর্থে নারী মুক্তির আলোচনায়।
আফগান নারীদের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ঐতিহ্যগতভাবে নিজেদের এই গৃহবন্দী অবস্থান আফগান নারীরা মেনে নিয়েছিল। মূলত বয়ঃসন্ধিকালেই নারীরা ঘরের ভেতর অদৃশ্য হয়ে যেত, এরপর ‘দাদি’ হয়ে তারা কখনো কখনো বের হয়ে আসত। তুলনামূলকভাবে উদার কাবুলের বিপরীতে আফগানের অন্যান্য অঞ্চলে তালেবানের শাসন ছাড়াও ঐতিহ্যগতভাবে নারীরা অনাত্মীয় পুরুষদের সঙ্গে কথা বলত না। ব্যক্তিগত এবং জনজীবন এখানে ছিল তীব্রভাবে বিভক্ত। কোনো নারী যখন ঘর থেকে বের হতো, তখন সে বোরকার নির্জনতায় নিজেকে আবদ্ধ করে রাখত। তালেবানদের উত্থানের শত শত বছর আগে থেকে সেখানে এই ব্যবস্থা চলে আসছে। ১৯৭৯ সালে কমিউনিস্টরা যখন কাবুলে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে তখন ধর্মীয় এবং সংস্কৃতিগত দিক থেকে আফগানের নারীদের সুরক্ষিত রাখার এই ঐতিহ্যবাহী জীবনধারা রাতারাতি ভেঙে পড়ে। প্রবীণ ও পুরুষেরা কমিউনিস্টদের এই অনধিকার চর্চা মেনে নেয়নি কোনো দিনও। যদিও আফগান নারীরা আসলে কী চেয়েছিল সেটাও পরিষ্কার করে বলা সম্ভব নয়। কেননা জন্ম থেকেই সমাজের নির্ধারণ করে দেওয়া গৃহবন্দী থাকার চিন্তা ও মনন তাদের নিজেদের অধিকার আদায়ের কিংবা মুক্ত করার স্বাভাবিক চিন্তার সুযোগই হয়তো দেয়নি।

কমিউনিস্ট শাসনামলে আফগানের হেলমন্দ প্রদেশে একটি নারী সাক্ষরতা কর্মসূচি চালু করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু গোত্রীয় প্রবীণ নেতা ও জমিদারেরা তাদের এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। কারণ আফগান সংস্কৃতি মেয়েদের ঘরের বাইরে স্কুলে পাঠানোর অনুমতি দেয় না। দাদা–বাবার পরম্পরায় এই সংস্কৃতিই চলে আসছে। এর ফলাফল হিসেবে কর্তৃপক্ষ যখন মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে মেয়েদের স্কুলে নিয়ে যায় তখন বিদ্রোহের সূচনা হয়। বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয় নিজেদের মুজাহিদীন বলে পরিচয় দেওয়া একদল সশস্ত্র লোক। তাদের প্রথম অপারেশনে তারা উপত্যকার সকল স্কুলশিক্ষককে অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং জবাই করে হত্যা করে।
গ্রামাঞ্চলে যুবকেরা মেয়েদের স্কুল এবং ভূমি সংস্কারসহ নতুন পদ্ধতির জীবনযাত্রা আরোপ করার বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে মৃত্যুকে বরণ করতেও দ্বিধা করেনি, যদিও এই পুরো বিদ্রোহে নারীর কোনো অংশগ্রহণ কখনোই ছিল কি না তা তর্ক সাপেক্ষ। অন্যদিকে শহরে মেয়েরা রেকর্ড সংখ্যায় স্কুলে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় এবং আশির দশকের শুরুর দিকে নারীরা সংসদীয় আসনে, এমনকি উপ-রাষ্ট্রপতি পদেও নিজের জায়গা দখল করে নেয়। এভাবেই আফগানিস্তানের নারীরা একই মুদ্রার সম্পূর্ণ বিপরীত দুই পিঠের মতো তাদের জীবন যাপন করতে থাকে।
আবার ১৯৮৯ সালে সোভিয়েতরা যখন পরাজিত হয়ে ফিরে যায় তখন আফগানে প্রতিদ্বন্দ্বী মুজাহিদীন গ্রুপগুলো নিজেদের মধ্যে দেশ ভাগাভাগি করে নেওয়ার চেষ্টা করে। সেই সঙ্গে তারা তাদের গ্রামাঞ্চলের রীতিনীতি রাজধানীতে নিয়ে আসে। তারা ফরমান জারি করে যে, ‘নারীরা একেবারেই প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে পারবে না। অতি জরুরি প্রয়োজনে যখন বের হবে, তখনো নিজেদের সম্পূর্ণরূপে ঢেকে রাখতে হবে।’ একইভাবে নারীদের ‘সুন্দরভাবে বা গর্বের সঙ্গে হাঁটা’ও নিষিদ্ধ করা হয়। ধর্মীয় পুলিশ শহরের রাস্তায় টহল দিতে শুরু করে। তারা নারীদের গ্রেপ্তার করে এবং অডিও-ভিডিও ক্যাসেট আগুনে পুড়িয়ে দেয়। তবে গৃহযুদ্ধকালীন সময়ে আমির দাদোর এবং নাইনটি থার্ড ডিভিশন নামে আরও দুটি গ্রুপের উত্থান ঘটে।
এরপর ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে তালেবানরা হামলা করলে প্রত্যুত্তরে মার্কিনরাও আফগানিস্তান আক্রমণ করে এবং তালেবান সরকারকে উৎখাত করে। ২০০৩ সালের দিকে পূর্বে মুজাহিদীন গ্রুপের সঙ্গে পরাজিত হয়ে পালিয়ে যাওয়া আমির দাদো পুনরায় সুসংগঠিত হয়ে মার্কিনদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে এবং কাবুলে হামিদ কারজাইয়ের সরকার গঠন করে। ২০০৬ সালে যুক্তরাজ্যও এতে যুক্ত হয়। মূলত আফগান নারী রক্ষার মহান সাইনবোর্ড গলায় ঝুলিয়ে পশ্চিমা পৃথিবী বরাবরের মতোই সাম্রাজ্য দখলের খেলায় মত্ত হয়ে ওঠে। আফগানিস্তানের ‘নারী রক্ষা’র নামে সৃষ্টি হওয়া যুদ্ধাবস্থায় সবচেয়ে অনিরাপদ অবস্থানে জীবনযাপন করতে থাকে আফগান নারীরাই।
প্রায় ২০ বছরের যুদ্ধাবস্থা শেষে আফগান নারীদের অনিরাপদ বা পুরুষতন্ত্রের হাতে বন্দী রেখেই যুক্তরাষ্ট্র ‘মহান ব্রতে’র সাইনবোর্ড পেছনে ফেলে যত দিনে পিছু হটে এসেছে, তত দিনে আফগানিস্তানের নারীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এদের এক ভাগ রাজধানী কাবুলে বসবাসরত গত ২০-৩০ বছরে জন্ম নেওয়া প্রগতিশীল শিক্ষিত নারী, অন্য ভাগ চিরাচরিত আফগান সংস্কৃতির অন্যতম ধারক হিসেবে জীবনযাপন করা গ্রামাঞ্চলের নারী। তবে বর্তমানে বেশি অনিরাপদ এবং অনিশ্চিত জীবন যাপন করছে আফগানের প্রগতিশীল ও শিক্ষিত নারীরা। কারণ তালেবানরা ক্ষমতা দখলের পর বন্ধ হয়ে গেছে নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া, এমনকি সেকেন্ডারি স্কুলও। সরকারি চাকরিতে কর্মরত নারীদের দেওয়া হয়েছে অব্যাহতি। ঘরের বাইরে বের হওয়াতেও দেওয়া হয়েছে নানান সীমারেখা। নারীদের জন্য পোশাক থেকে শুরু করে আচরণ পর্যন্ত ঠিক করে দেওয়া হয়েছে তালেবান শাসকদের পক্ষ থেকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২ দশমিক ২৬ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হওয়া সন্ত্রাসী নির্মূল, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারী অধিকার রক্ষার ব্যর্থ মিশনের ফলাফল স্বরূপ আফগান নারীরা আরও ভয়াবহভাবে ফিরে গেছে অন্ধকার জগতেই। দুই দশকের আগ্রাসনের পর তালেবানদের সঙ্গে শান্তি চুক্তির নামে দর-কষাকষি শেষে যুক্তরাষ্ট্রের ফিরে যাওয়াকে আফগান নারীদের জীবনে ঘটা সবচেয়ে বড় প্রতারণা বললেও বোধ হয় কম বলা হয়।
মূলত সাম্রাজ্য দখলের সাহেব-বিবি-গোলামের খেলায় প্রয়োজনের সময় অতিরিক্ত তাসের মতো নারী ব্যবহৃত হয়েছে মার্কিন বনাম তালেবানের খেলায়।
নৃবিজ্ঞানী লীলা আবু লুঘোদ দেখিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই মুসলমান নারীদের রক্ষাকারী ইমেজ উপনিবেশবাদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত, যেখানে মনে করা হয় মুসলমান নারীমাত্রই অসহায়, অক্ষম এবং মুসলমান পুরুষের হাতের পুতুল মাত্র। পশ্চিমা সমাজের শেকড় থেকে তৈরি হওয়া কাঠামোগত লিঙ্গবৈষম্যের প্রতি নির্বিকার থেকে মুসলমান নারীদের প্রতি করুণা এবং তাদের রক্ষা করার এই আগ্রহ মূলত পশ্চিমা শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের একটা উপায় মাত্র, যার কাঁধে ভর করে সাম্রাজ্য বিস্তার করা সম্ভব।
আফগানিস্তানে গত ষাট বছরে ক্ষমতার রদবদল হয়েছে অসংখ্যবার। প্রতিবারের রদবদলে প্রথম হোক কিংবা শেষ, সবচেয়ে বড় আঘাত এসেছে নারীর ওপরই। কখনো বন্দী করে রাখা কিংবা কখনো মুক্ত করার প্রলোভন দেখিয়ে আরও অন্ধকারে ঠেলে দেওয়ার এই বাড়াবাড়ি আফগান নারীদের আরও বিপজ্জনক অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে। তবে যেহেতু মানুষ জন্মগতভাবে আশাবাদী এবং যেকারণেই হোক কিছুটা শিক্ষার আলো আফগান নারীদের একটা অংশ ধারণ করতে পেরেছে, তাই তাদের অনেকেই তালেবান সরকারের কঠোর নিয়মের মধ্যে নিজেদের জীবনকে মানিয়ে নিতে গিয়ে ধীরে হলেও ফুঁসে উঠছে। শহুরে শিক্ষিত নারীরা খাঁচায় বন্দী হয়ে থাকতে চায় না। তাই অনেকেই পালিয়ে গেছে। অনেকে এখনো আশায় বুক বেঁধে আছে। ছোট ছোট দলে হলেও অনেকেই সাহসের সঙ্গে প্রতিবাদ করছে। দেশটির প্রত্যন্ত অঞ্চলের অশিক্ষিত নারীরাও এখন বন্দী জীবন নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করছে।
নারীদের মুক্তি অন্যের হাতে নয় বরং আসা উচিত নিজেদের হাত ধরেই। কারও করুণা করে দেওয়া স্বাধীনতা নয় বরং আফগান নারীদের প্রয়োজন নিজের অধিকার নিজেই বুঝে নেওয়া। সেই সম্ভাবনাই যেন বর্তমানে দূরের তারার আলোর মতো উঁকি দিচ্ছে আফগান শহরগুলোতে। আর এ কারণেই হয়তো আফগান নারীদের মুক্তির ক্ষীণ আশা নতুন করে দেখা দিচ্ছে পৃথিবীর সকল নারীদের মধ্যে।

আফগানিস্তান নিয়ে কথা হোক কিংবা তালেবান শাসন নিয়ে, সবার আগে যে প্রসঙ্গটি উঠে আসে সেটি হলো ‘নারী’। কেমন আছে আফগানের নারীরা অথবা কেমন ছিল তারা? কতটা অমিল একাল কিংবা সেকালে, সেসব নিয়ে আলোচনার অন্ত নেই অন্তর্জালে। প্রগতিশীল জীবনযাপন থেকে আপাদমস্তক কালো কাপড়ে ঢেকে যাওয়ার সময় পর্যন্ত কী কী ঘটেছে আফগান নারীদের জীবনে, তার গল্প যেন আরব্য রজনীর ইতিহাসের চেয়েও চমকপ্রদ।
আফগানিস্তানে তালেবান শাসন যে একেবারেই নতুন, তা কিন্তু নয়। ১৬ আগস্ট, ২০২১ সালে কাবুল দখল নেওয়ার পর আফগানিস্তানে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতার দখল নিয়েছে তালেবানরা। যদিও পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনীর সঙ্গে তালেবানের দুই দশকের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এমনতর পলায়ন এবং এত অস্বাভাবিক দ্রুততার সঙ্গে, প্রায় বিনা প্রতিরোধে তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে, তা অনেকের কাছেই অপ্রত্যাশিত ছিল।
আফগানিস্তানের জাতিগত আলোচনা প্রসঙ্গে বরাবরই বেশ জোরেশোরে আওয়াজ ওঠানো হয়েছে আফগান নারীদের অধস্তনতা এবং নারী অধিকার আদায়ের ব্যাপারে। কিন্তু আফগানিস্তান দখল-পুনর্দখলের রাজনৈতিক খেলায় নারীর অবস্থান সব সময়ই ছিল গৌণ। আরও খোলাসা করে বললে, আফগান ক্ষমতা দখলের খেলায় নারীদের নিয়ে আলোচনায় মিডিয়া যতটা সরব ছিল, ততটাই নিশ্চুপ ছিল প্রকৃত অর্থে নারী মুক্তির আলোচনায়।
আফগান নারীদের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ঐতিহ্যগতভাবে নিজেদের এই গৃহবন্দী অবস্থান আফগান নারীরা মেনে নিয়েছিল। মূলত বয়ঃসন্ধিকালেই নারীরা ঘরের ভেতর অদৃশ্য হয়ে যেত, এরপর ‘দাদি’ হয়ে তারা কখনো কখনো বের হয়ে আসত। তুলনামূলকভাবে উদার কাবুলের বিপরীতে আফগানের অন্যান্য অঞ্চলে তালেবানের শাসন ছাড়াও ঐতিহ্যগতভাবে নারীরা অনাত্মীয় পুরুষদের সঙ্গে কথা বলত না। ব্যক্তিগত এবং জনজীবন এখানে ছিল তীব্রভাবে বিভক্ত। কোনো নারী যখন ঘর থেকে বের হতো, তখন সে বোরকার নির্জনতায় নিজেকে আবদ্ধ করে রাখত। তালেবানদের উত্থানের শত শত বছর আগে থেকে সেখানে এই ব্যবস্থা চলে আসছে। ১৯৭৯ সালে কমিউনিস্টরা যখন কাবুলে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে তখন ধর্মীয় এবং সংস্কৃতিগত দিক থেকে আফগানের নারীদের সুরক্ষিত রাখার এই ঐতিহ্যবাহী জীবনধারা রাতারাতি ভেঙে পড়ে। প্রবীণ ও পুরুষেরা কমিউনিস্টদের এই অনধিকার চর্চা মেনে নেয়নি কোনো দিনও। যদিও আফগান নারীরা আসলে কী চেয়েছিল সেটাও পরিষ্কার করে বলা সম্ভব নয়। কেননা জন্ম থেকেই সমাজের নির্ধারণ করে দেওয়া গৃহবন্দী থাকার চিন্তা ও মনন তাদের নিজেদের অধিকার আদায়ের কিংবা মুক্ত করার স্বাভাবিক চিন্তার সুযোগই হয়তো দেয়নি।

কমিউনিস্ট শাসনামলে আফগানের হেলমন্দ প্রদেশে একটি নারী সাক্ষরতা কর্মসূচি চালু করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু গোত্রীয় প্রবীণ নেতা ও জমিদারেরা তাদের এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। কারণ আফগান সংস্কৃতি মেয়েদের ঘরের বাইরে স্কুলে পাঠানোর অনুমতি দেয় না। দাদা–বাবার পরম্পরায় এই সংস্কৃতিই চলে আসছে। এর ফলাফল হিসেবে কর্তৃপক্ষ যখন মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে মেয়েদের স্কুলে নিয়ে যায় তখন বিদ্রোহের সূচনা হয়। বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয় নিজেদের মুজাহিদীন বলে পরিচয় দেওয়া একদল সশস্ত্র লোক। তাদের প্রথম অপারেশনে তারা উপত্যকার সকল স্কুলশিক্ষককে অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং জবাই করে হত্যা করে।
গ্রামাঞ্চলে যুবকেরা মেয়েদের স্কুল এবং ভূমি সংস্কারসহ নতুন পদ্ধতির জীবনযাত্রা আরোপ করার বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে মৃত্যুকে বরণ করতেও দ্বিধা করেনি, যদিও এই পুরো বিদ্রোহে নারীর কোনো অংশগ্রহণ কখনোই ছিল কি না তা তর্ক সাপেক্ষ। অন্যদিকে শহরে মেয়েরা রেকর্ড সংখ্যায় স্কুলে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় এবং আশির দশকের শুরুর দিকে নারীরা সংসদীয় আসনে, এমনকি উপ-রাষ্ট্রপতি পদেও নিজের জায়গা দখল করে নেয়। এভাবেই আফগানিস্তানের নারীরা একই মুদ্রার সম্পূর্ণ বিপরীত দুই পিঠের মতো তাদের জীবন যাপন করতে থাকে।
আবার ১৯৮৯ সালে সোভিয়েতরা যখন পরাজিত হয়ে ফিরে যায় তখন আফগানে প্রতিদ্বন্দ্বী মুজাহিদীন গ্রুপগুলো নিজেদের মধ্যে দেশ ভাগাভাগি করে নেওয়ার চেষ্টা করে। সেই সঙ্গে তারা তাদের গ্রামাঞ্চলের রীতিনীতি রাজধানীতে নিয়ে আসে। তারা ফরমান জারি করে যে, ‘নারীরা একেবারেই প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে পারবে না। অতি জরুরি প্রয়োজনে যখন বের হবে, তখনো নিজেদের সম্পূর্ণরূপে ঢেকে রাখতে হবে।’ একইভাবে নারীদের ‘সুন্দরভাবে বা গর্বের সঙ্গে হাঁটা’ও নিষিদ্ধ করা হয়। ধর্মীয় পুলিশ শহরের রাস্তায় টহল দিতে শুরু করে। তারা নারীদের গ্রেপ্তার করে এবং অডিও-ভিডিও ক্যাসেট আগুনে পুড়িয়ে দেয়। তবে গৃহযুদ্ধকালীন সময়ে আমির দাদোর এবং নাইনটি থার্ড ডিভিশন নামে আরও দুটি গ্রুপের উত্থান ঘটে।
এরপর ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে তালেবানরা হামলা করলে প্রত্যুত্তরে মার্কিনরাও আফগানিস্তান আক্রমণ করে এবং তালেবান সরকারকে উৎখাত করে। ২০০৩ সালের দিকে পূর্বে মুজাহিদীন গ্রুপের সঙ্গে পরাজিত হয়ে পালিয়ে যাওয়া আমির দাদো পুনরায় সুসংগঠিত হয়ে মার্কিনদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে এবং কাবুলে হামিদ কারজাইয়ের সরকার গঠন করে। ২০০৬ সালে যুক্তরাজ্যও এতে যুক্ত হয়। মূলত আফগান নারী রক্ষার মহান সাইনবোর্ড গলায় ঝুলিয়ে পশ্চিমা পৃথিবী বরাবরের মতোই সাম্রাজ্য দখলের খেলায় মত্ত হয়ে ওঠে। আফগানিস্তানের ‘নারী রক্ষা’র নামে সৃষ্টি হওয়া যুদ্ধাবস্থায় সবচেয়ে অনিরাপদ অবস্থানে জীবনযাপন করতে থাকে আফগান নারীরাই।
প্রায় ২০ বছরের যুদ্ধাবস্থা শেষে আফগান নারীদের অনিরাপদ বা পুরুষতন্ত্রের হাতে বন্দী রেখেই যুক্তরাষ্ট্র ‘মহান ব্রতে’র সাইনবোর্ড পেছনে ফেলে যত দিনে পিছু হটে এসেছে, তত দিনে আফগানিস্তানের নারীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এদের এক ভাগ রাজধানী কাবুলে বসবাসরত গত ২০-৩০ বছরে জন্ম নেওয়া প্রগতিশীল শিক্ষিত নারী, অন্য ভাগ চিরাচরিত আফগান সংস্কৃতির অন্যতম ধারক হিসেবে জীবনযাপন করা গ্রামাঞ্চলের নারী। তবে বর্তমানে বেশি অনিরাপদ এবং অনিশ্চিত জীবন যাপন করছে আফগানের প্রগতিশীল ও শিক্ষিত নারীরা। কারণ তালেবানরা ক্ষমতা দখলের পর বন্ধ হয়ে গেছে নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া, এমনকি সেকেন্ডারি স্কুলও। সরকারি চাকরিতে কর্মরত নারীদের দেওয়া হয়েছে অব্যাহতি। ঘরের বাইরে বের হওয়াতেও দেওয়া হয়েছে নানান সীমারেখা। নারীদের জন্য পোশাক থেকে শুরু করে আচরণ পর্যন্ত ঠিক করে দেওয়া হয়েছে তালেবান শাসকদের পক্ষ থেকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২ দশমিক ২৬ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হওয়া সন্ত্রাসী নির্মূল, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারী অধিকার রক্ষার ব্যর্থ মিশনের ফলাফল স্বরূপ আফগান নারীরা আরও ভয়াবহভাবে ফিরে গেছে অন্ধকার জগতেই। দুই দশকের আগ্রাসনের পর তালেবানদের সঙ্গে শান্তি চুক্তির নামে দর-কষাকষি শেষে যুক্তরাষ্ট্রের ফিরে যাওয়াকে আফগান নারীদের জীবনে ঘটা সবচেয়ে বড় প্রতারণা বললেও বোধ হয় কম বলা হয়।
মূলত সাম্রাজ্য দখলের সাহেব-বিবি-গোলামের খেলায় প্রয়োজনের সময় অতিরিক্ত তাসের মতো নারী ব্যবহৃত হয়েছে মার্কিন বনাম তালেবানের খেলায়।
নৃবিজ্ঞানী লীলা আবু লুঘোদ দেখিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই মুসলমান নারীদের রক্ষাকারী ইমেজ উপনিবেশবাদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত, যেখানে মনে করা হয় মুসলমান নারীমাত্রই অসহায়, অক্ষম এবং মুসলমান পুরুষের হাতের পুতুল মাত্র। পশ্চিমা সমাজের শেকড় থেকে তৈরি হওয়া কাঠামোগত লিঙ্গবৈষম্যের প্রতি নির্বিকার থেকে মুসলমান নারীদের প্রতি করুণা এবং তাদের রক্ষা করার এই আগ্রহ মূলত পশ্চিমা শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের একটা উপায় মাত্র, যার কাঁধে ভর করে সাম্রাজ্য বিস্তার করা সম্ভব।
আফগানিস্তানে গত ষাট বছরে ক্ষমতার রদবদল হয়েছে অসংখ্যবার। প্রতিবারের রদবদলে প্রথম হোক কিংবা শেষ, সবচেয়ে বড় আঘাত এসেছে নারীর ওপরই। কখনো বন্দী করে রাখা কিংবা কখনো মুক্ত করার প্রলোভন দেখিয়ে আরও অন্ধকারে ঠেলে দেওয়ার এই বাড়াবাড়ি আফগান নারীদের আরও বিপজ্জনক অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে। তবে যেহেতু মানুষ জন্মগতভাবে আশাবাদী এবং যেকারণেই হোক কিছুটা শিক্ষার আলো আফগান নারীদের একটা অংশ ধারণ করতে পেরেছে, তাই তাদের অনেকেই তালেবান সরকারের কঠোর নিয়মের মধ্যে নিজেদের জীবনকে মানিয়ে নিতে গিয়ে ধীরে হলেও ফুঁসে উঠছে। শহুরে শিক্ষিত নারীরা খাঁচায় বন্দী হয়ে থাকতে চায় না। তাই অনেকেই পালিয়ে গেছে। অনেকে এখনো আশায় বুক বেঁধে আছে। ছোট ছোট দলে হলেও অনেকেই সাহসের সঙ্গে প্রতিবাদ করছে। দেশটির প্রত্যন্ত অঞ্চলের অশিক্ষিত নারীরাও এখন বন্দী জীবন নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করছে।
নারীদের মুক্তি অন্যের হাতে নয় বরং আসা উচিত নিজেদের হাত ধরেই। কারও করুণা করে দেওয়া স্বাধীনতা নয় বরং আফগান নারীদের প্রয়োজন নিজের অধিকার নিজেই বুঝে নেওয়া। সেই সম্ভাবনাই যেন বর্তমানে দূরের তারার আলোর মতো উঁকি দিচ্ছে আফগান শহরগুলোতে। আর এ কারণেই হয়তো আফগান নারীদের মুক্তির ক্ষীণ আশা নতুন করে দেখা দিচ্ছে পৃথিবীর সকল নারীদের মধ্যে।

ডিজিটাল যুগ যোগাযোগের পরিধি বিস্তৃত করেছে, কিন্তু একই সঙ্গে খুলে দিয়েছে ‘অনলাইন সহিংসতা’র এক নতুন ক্ষেত্র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা ভার্চুয়াল স্পেস এখন শুধু মতপ্রকাশের জায়গা নয়, বরং অনেক সময় ঘৃণাবার্তা, হয়রানি, হুমকি, অপমান ও মানহানির আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে।
৩ দিন আগে
নিরাপদ এবং নিশ্চিত কর্মপরিবেশ পাওয়া যেকোনো কর্মজীবী মানুষের একটি মৌলিক চাহিদা। কর্মপরিবেশ ও কর্মস্থল নিরাপদ যদি না হয়, সেখানে নারী কিংবা পুরুষ—কেউ নিরাপদ নন। আর এ বিষয়টি শুধু চাকরিজীবনে নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। হেঁটে গেলে অন্য সহকর্মীরা আপনার দিকে কীভাবে তাকাচ্ছেন, কিংবা দুজন সহকর
৫ দিন আগে
রেডিও চ্যানেল এনপিআরকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক শ্রৌক আল আইলা। তিনি বলতে শুরু করেন, ‘আমি একধরনের হ্যাংওভারের মধ্যে আছি। আজ সকালে খুব অদ্ভুত লাগছিল। কারণ, আমি বিমান হামলা ও বিস্ফোরণ ছাড়া গভীরভাবে ঘুমানোর সুযোগ পেয়েছিলাম। এটা সত্যিই অদ্ভুত লাগছে।’
৫ দিন আগে
আমেরিকার ইতিহাসে দীর্ঘকাল ধরে চলা টেলিভিশন সিরিজ মিট দ্য প্রেস। অনুষ্ঠানটি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্যানেল আলোচনার একটি মানদণ্ড তৈরি করেছিল। এই অনুষ্ঠানের কো-ক্রিয়েটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন মার্থা জেন রাউন্ট্রি।
৫ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ডিজিটাল যুগ যোগাযোগের পরিধি বিস্তৃত করেছে, কিন্তু একই সঙ্গে খুলে দিয়েছে ‘অনলাইন সহিংসতা’র এক নতুন ক্ষেত্র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা ভার্চুয়াল স্পেস এখন শুধু মতপ্রকাশের জায়গা নয়, বরং অনেক সময় ঘৃণাবার্তা, হয়রানি, হুমকি, অপমান ও মানহানির আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে নারী, তরুণী এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ এর সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী। এই বাস্তবতায় তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তারাই সবচেয়ে বেশি সময় কাটায় অনলাইনে এবং তাদেরই কণ্ঠস্বর সবচেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই অনলাইন সহিংসতার বিরুদ্ধে তরুণদের শুধু ভুক্তভোগী নয়, বরং প্রতিরোধের অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। অনলাইন সহিংসতা মোকাবিলায় তরুণ প্রজন্মকে সোচ্চার হতে হবে।’
আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. আব্দুল্লাহ ফারুক কনফারেন্স হলে ‘বাংলাদেশে তরুণী ও নারী সাইবার নির্যাতন: আরোগ্য, ক্ষমতায়ন ও সচেতনতা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। এই সেমিনার আয়োজন করে সামাজিক উন্নয়নমূলক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রেজোনেয়ার।
সেমিনারে ডিসেম্বরের মধ্যে ৪০ জনকে ডিজিটাল লিটারেসি প্রশিক্ষণ ও সাতটি ক্যাম্পাস ক্যাম্পেইনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অনলাইন নিরাপত্তা, সাইবারবুলিং প্রতিরোধ ও ডিজিটাল অধিকার বিষয়ে সচেতন করা হবে।
বাংলাদেশ রেজোনেয়ারের সভাপতি জান্নাতুল নওরীন ঊর্মি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য এমন একটি ডিজিটাল প্রজন্ম তৈরি করা, যারা প্রযুক্তিকে দায়িত্বশীলভাবে ব্যবহার করবে এবং অনলাইন সহিংসতা বা হয়রানির বিরুদ্ধে সচেতন ও দৃঢ় ভূমিকা পালন করবে।’
আয়োজকেরা জানান, সেমিনারের মূল লক্ষ্য হলো অনলাইন হয়রানির ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, মানসিক পুনরুদ্ধার ও ক্ষমতায়নের পথ দেখানো এবং তরুণ সমাজের রাজনৈতিক অংশগ্রহণে অনুপ্রেরণা জোগানো।
তাঁরা জানান, বাংলাদেশ রেজোনেয়ার সাইবার বুলিংয়ের শিকার ব্যক্তিদের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করবে। সাইবার বুলিংয়ের শিকার ব্যক্তিরা তিনজন খ্যাতনামা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে সরাসরি কাউন্সেলিং ও মনোসামাজিক সহায়তা পাবেন। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ভুক্তভোগীরা মানসিক পুনর্বাসন, আত্মবিশ্বাস, পুনর্গঠন ও সামাজিক সংহতি পুনঃস্থাপনের সুযোগ পাবেন।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. রাহেনুল ইসলাম, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আশরাফ জালাল খান ভারতের পলিটি অ্যাকশন ল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা নিবেদিতা বিশ্বাস প্রমুখ।

ডিজিটাল যুগ যোগাযোগের পরিধি বিস্তৃত করেছে, কিন্তু একই সঙ্গে খুলে দিয়েছে ‘অনলাইন সহিংসতা’র এক নতুন ক্ষেত্র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা ভার্চুয়াল স্পেস এখন শুধু মতপ্রকাশের জায়গা নয়, বরং অনেক সময় ঘৃণাবার্তা, হয়রানি, হুমকি, অপমান ও মানহানির আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে নারী, তরুণী এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ এর সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী। এই বাস্তবতায় তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তারাই সবচেয়ে বেশি সময় কাটায় অনলাইনে এবং তাদেরই কণ্ঠস্বর সবচেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই অনলাইন সহিংসতার বিরুদ্ধে তরুণদের শুধু ভুক্তভোগী নয়, বরং প্রতিরোধের অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। অনলাইন সহিংসতা মোকাবিলায় তরুণ প্রজন্মকে সোচ্চার হতে হবে।’
আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. আব্দুল্লাহ ফারুক কনফারেন্স হলে ‘বাংলাদেশে তরুণী ও নারী সাইবার নির্যাতন: আরোগ্য, ক্ষমতায়ন ও সচেতনতা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। এই সেমিনার আয়োজন করে সামাজিক উন্নয়নমূলক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রেজোনেয়ার।
সেমিনারে ডিসেম্বরের মধ্যে ৪০ জনকে ডিজিটাল লিটারেসি প্রশিক্ষণ ও সাতটি ক্যাম্পাস ক্যাম্পেইনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অনলাইন নিরাপত্তা, সাইবারবুলিং প্রতিরোধ ও ডিজিটাল অধিকার বিষয়ে সচেতন করা হবে।
বাংলাদেশ রেজোনেয়ারের সভাপতি জান্নাতুল নওরীন ঊর্মি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য এমন একটি ডিজিটাল প্রজন্ম তৈরি করা, যারা প্রযুক্তিকে দায়িত্বশীলভাবে ব্যবহার করবে এবং অনলাইন সহিংসতা বা হয়রানির বিরুদ্ধে সচেতন ও দৃঢ় ভূমিকা পালন করবে।’
আয়োজকেরা জানান, সেমিনারের মূল লক্ষ্য হলো অনলাইন হয়রানির ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, মানসিক পুনরুদ্ধার ও ক্ষমতায়নের পথ দেখানো এবং তরুণ সমাজের রাজনৈতিক অংশগ্রহণে অনুপ্রেরণা জোগানো।
তাঁরা জানান, বাংলাদেশ রেজোনেয়ার সাইবার বুলিংয়ের শিকার ব্যক্তিদের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করবে। সাইবার বুলিংয়ের শিকার ব্যক্তিরা তিনজন খ্যাতনামা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে সরাসরি কাউন্সেলিং ও মনোসামাজিক সহায়তা পাবেন। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ভুক্তভোগীরা মানসিক পুনর্বাসন, আত্মবিশ্বাস, পুনর্গঠন ও সামাজিক সংহতি পুনঃস্থাপনের সুযোগ পাবেন।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. রাহেনুল ইসলাম, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আশরাফ জালাল খান ভারতের পলিটি অ্যাকশন ল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা নিবেদিতা বিশ্বাস প্রমুখ।

আফগানিস্তান নিয়ে কথা হোক কিংবা তালেবান শাসন নিয়ে, সবার আগে যে প্রসঙ্গটি উঠে আসে সেটি হলো ‘নারী’।
১৭ আগস্ট ২০২৩
নিরাপদ এবং নিশ্চিত কর্মপরিবেশ পাওয়া যেকোনো কর্মজীবী মানুষের একটি মৌলিক চাহিদা। কর্মপরিবেশ ও কর্মস্থল নিরাপদ যদি না হয়, সেখানে নারী কিংবা পুরুষ—কেউ নিরাপদ নন। আর এ বিষয়টি শুধু চাকরিজীবনে নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। হেঁটে গেলে অন্য সহকর্মীরা আপনার দিকে কীভাবে তাকাচ্ছেন, কিংবা দুজন সহকর
৫ দিন আগে
রেডিও চ্যানেল এনপিআরকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক শ্রৌক আল আইলা। তিনি বলতে শুরু করেন, ‘আমি একধরনের হ্যাংওভারের মধ্যে আছি। আজ সকালে খুব অদ্ভুত লাগছিল। কারণ, আমি বিমান হামলা ও বিস্ফোরণ ছাড়া গভীরভাবে ঘুমানোর সুযোগ পেয়েছিলাম। এটা সত্যিই অদ্ভুত লাগছে।’
৫ দিন আগে
আমেরিকার ইতিহাসে দীর্ঘকাল ধরে চলা টেলিভিশন সিরিজ মিট দ্য প্রেস। অনুষ্ঠানটি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্যানেল আলোচনার একটি মানদণ্ড তৈরি করেছিল। এই অনুষ্ঠানের কো-ক্রিয়েটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন মার্থা জেন রাউন্ট্রি।
৫ দিন আগেব্যারিস্টার ইফফাত আরা গিয়াস

নিরাপদ এবং নিশ্চিত কর্মপরিবেশ পাওয়া যেকোনো কর্মজীবী মানুষের একটি মৌলিক চাহিদা। কর্মপরিবেশ ও কর্মস্থল নিরাপদ যদি না হয়, সেখানে নারী কিংবা পুরুষ—কেউ নিরাপদ নন। আর এ বিষয়টি শুধু চাকরিজীবনে নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। হেঁটে গেলে অন্য সহকর্মীরা আপনার দিকে কীভাবে তাকাচ্ছেন, কিংবা দুজন সহকর্মী দাঁড়িয়ে আপনাকে নিয়ে কী ধরনের মন্তব্য করছেন, এটা ভেবেই যদি সময় চলে যায়, তাহলে কাজ করবেন কখন? আর এই ভাবনাটা তখনই আসে, যখন কারও সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে আচরণ করা হবে। যিনি এসব আচরণ করছেন, তিনি হতে পারেন বস কিংবা অফিসের যেকোনো শ্রেণির কর্মচারী। এই নিরাপত্তা যখন ব্যাহত হয়, তখন সেখানে কাজ করা মুশকিল হয়ে পড়ে।
কর্মস্থলে নারী-পুরুষনির্বিশেষে প্রত্যেক কর্মচারীর নিরাপত্তা এবং মর্যাদা রক্ষা করা রাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মৌলিক দায়িত্ব। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায়, কর্মক্ষেত্রে সহকর্মী বা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কেউ কেউ মৌখিক অর্থাৎ ভারবাল কিংবা শারীরিক অর্থাৎ ফিজিক্যাল হয়রানির শিকার হন। এ ধরনের আচরণ কেবল মানসিক কষ্টের কারণ নয়; বরং বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ।
নিজের সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের প্রথম প্রতিবাদ নিজেকেই করতে হবে। অন্য কেউ এসে প্রতিবাদ করার আগে নিজের সচেতনতা এবং যুক্তিযুক্ত কথা বলা অনেক বেশি জরুরি। তাই চাকরিজীবনে যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে সে বিষয়ে রাষ্ট্রীয় আইন জানা থাকা দরকার।
আইনের চোখে হয়রানি
বাংলাদেশে কর্মস্থলে হয়রানিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। এ ধরনের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং অপরাধীকে শাস্তি দিতে দুটি প্রধান আইন ও নির্দেশনা কার্যকর রয়েছে:
১. বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮): এই আইন শ্রমিক-কর্মচারীদের কর্মপরিবেশ-সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ন্ত্রণ করে।
২. যৌন হয়রানি প্রতিরোধ নীতিমালা, ২০০৯: এটি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার ভিত্তিতে প্রণীত, যা কর্মস্থলে যেকোনো ধরনের যৌন হয়রানিকে কঠোরভাবে দমন করার নির্দেশ দেয়।
হয়রানির প্রকারভেদ
প্রথমেই বুঝে নেওয়া জরুরি যে হয়রানির ধরন কেমন। তবে কর্মক্ষেত্রে হয়রানি দুই ধরনের হতে পারে—
১. মৌখিক বা ভারবাল হয়রানি: এর মধ্যে রয়েছে অপমানজনক মন্তব্য, অশালীন ইঙ্গিত, যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ কথা, হেয়প্রতিপন্ন করা কিংবা ভয় দেখানো।
২. শারীরিক বা ফিজিক্যাল হয়রানি: অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ, জোর করে ধরাধরি, আলিঙ্গন অথবা শারীরিকভাবে অপমানজনক আচরণ।
কর্মস্থলে এ ধরনের আচরণ বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮) এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী যৌন হয়রানি প্রতিরোধ নীতিমালা, ২০০৯ অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
ন্যায়বিচার পাওয়ার ধাপ
কর্মস্থলে হয়রানির শিকার হলে ভুক্তভোগীর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কিছু ধাপে সচেতনভাবে অগ্রসর হতে হবে।
প্রথম পদক্ষেপ: প্রমাণ সংগ্রহ এবং নথিভুক্তকরণ
অভিযোগের ভিত্তি মজবুত করার জন্য প্রমাণ সংগ্রহ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ভুক্তভোগীর প্রথম কাজ হলো ঘটনার বিস্তারিত তথ্য স্পষ্টভাবে লিখিত আকারে নথিভুক্ত করা।
» বিবরণ: ঘটনার তারিখ, সময়, স্থান এবং জড়িত ব্যক্তি কিংবা উপস্থিত থাকা সাক্ষীর নাম লিখে রাখা।
» সংরক্ষণ: সম্ভব হলে ই-মেইল, মেসেজ, ভয়েস রেকর্ড, চ্যাটের স্ক্রিনশট অথবা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংরক্ষণ করা। এসব তথ্য পরবর্তী সময়ে অভিযোগের সপক্ষে শক্তিশালী প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।
দ্বিতীয় পদক্ষেপ: অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটিতে অভিযোগ দাখিল
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতিটি অফিস কিংবা প্রতিষ্ঠানে একটি ‘অভিযোগ কমিটি’ থাকা বাধ্যতামূলক। এই কমিটিতে একজন নারী সদস্যের অন্তর্ভুক্তিও নিশ্চিত করতে হবে।
ভুক্তভোগী প্রথমে লিখিতভাবে এই কমিটির কাছে অভিযোগ দাখিল করতে পারেন। এরপর কমিটি সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত পরিচালনা করতে এবং প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য। এটি অভ্যন্তরীণভাবে দ্রুত ন্যায়বিচার পাওয়ার প্রথম ও কার্যকর মাধ্যম।
তৃতীয় পদক্ষেপ: প্রশাসনিক ও আইনি সহায়তা নেওয়া
যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ কমিটি না থাকে অথবা কমিটি যদি অভিযোগের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়, তবে ভুক্তভোগী সরাসরি আইনি পথে যেতে পারেন।
» পুলিশি পদক্ষেপ: ভুক্তভোগী সরাসরি স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে পারেন।
» মামলা: প্রয়োজনে তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল বা শ্রম আদালতে মামলা করতে পারেন।
» শাস্তি: নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) অনুযায়ী শারীরিক বা যৌন হয়রানির অভিযোগে দোষী প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।
চতুর্থ পদক্ষেপ: মানবাধিকার সংগঠন ও আইনি সহায়তা সংস্থার সহযোগিতা নেওয়া
আইনিপ্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা না থাকলে অথবা আর্থিক সংকট থাকলে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠনের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশে আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি, ব্র্যাক লিগ্যাল এইড সার্ভিসেসের মতো অনেক সংগঠন বিনা মূল্যে আইনি পরামর্শ ও সহায়তা দেয়। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পেশাদার সহায়তা পাওয়া সম্ভব।
যেসব বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে
» চুপ না থাকা: কোনো পরিস্থিতিতে ভয় কিংবা সামাজিক চাপের কারণে চুপ থাকা উচিত নয়। হয়রানির বিষয়ে দ্রুত আওয়াজ তোলা খুব প্রয়োজন।
» নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ: অভিযোগ দাখিল করার আগে ও পরে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
» সঠিক তথ্য উপস্থাপন: মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
» নথি সংরক্ষণ: সব ধরনের যোগাযোগ এবং প্রমাণের নথি যথাযথভাবে আপনাকে সংরক্ষণ করতে হবে।
কর্মস্থলকে ভয় বা বঞ্চনার জায়গা না বানিয়ে একটি নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবেশের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা জরুরি। হয়রানির শিকার হলে চুপ না থেকে আইনের আশ্রয় নেওয়া প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার। একজন সচেতন কর্মী হিসেবে সাহসিকতার সঙ্গে সঠিক পদক্ষেপ নিলে কেবল নিজের নয়, প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক পরিবেশ এবং অন্যান্য সহকর্মীর নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা সম্ভব।

নিরাপদ এবং নিশ্চিত কর্মপরিবেশ পাওয়া যেকোনো কর্মজীবী মানুষের একটি মৌলিক চাহিদা। কর্মপরিবেশ ও কর্মস্থল নিরাপদ যদি না হয়, সেখানে নারী কিংবা পুরুষ—কেউ নিরাপদ নন। আর এ বিষয়টি শুধু চাকরিজীবনে নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। হেঁটে গেলে অন্য সহকর্মীরা আপনার দিকে কীভাবে তাকাচ্ছেন, কিংবা দুজন সহকর্মী দাঁড়িয়ে আপনাকে নিয়ে কী ধরনের মন্তব্য করছেন, এটা ভেবেই যদি সময় চলে যায়, তাহলে কাজ করবেন কখন? আর এই ভাবনাটা তখনই আসে, যখন কারও সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে আচরণ করা হবে। যিনি এসব আচরণ করছেন, তিনি হতে পারেন বস কিংবা অফিসের যেকোনো শ্রেণির কর্মচারী। এই নিরাপত্তা যখন ব্যাহত হয়, তখন সেখানে কাজ করা মুশকিল হয়ে পড়ে।
কর্মস্থলে নারী-পুরুষনির্বিশেষে প্রত্যেক কর্মচারীর নিরাপত্তা এবং মর্যাদা রক্ষা করা রাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মৌলিক দায়িত্ব। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায়, কর্মক্ষেত্রে সহকর্মী বা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কেউ কেউ মৌখিক অর্থাৎ ভারবাল কিংবা শারীরিক অর্থাৎ ফিজিক্যাল হয়রানির শিকার হন। এ ধরনের আচরণ কেবল মানসিক কষ্টের কারণ নয়; বরং বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ।
নিজের সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের প্রথম প্রতিবাদ নিজেকেই করতে হবে। অন্য কেউ এসে প্রতিবাদ করার আগে নিজের সচেতনতা এবং যুক্তিযুক্ত কথা বলা অনেক বেশি জরুরি। তাই চাকরিজীবনে যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে সে বিষয়ে রাষ্ট্রীয় আইন জানা থাকা দরকার।
আইনের চোখে হয়রানি
বাংলাদেশে কর্মস্থলে হয়রানিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। এ ধরনের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং অপরাধীকে শাস্তি দিতে দুটি প্রধান আইন ও নির্দেশনা কার্যকর রয়েছে:
১. বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮): এই আইন শ্রমিক-কর্মচারীদের কর্মপরিবেশ-সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ন্ত্রণ করে।
২. যৌন হয়রানি প্রতিরোধ নীতিমালা, ২০০৯: এটি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার ভিত্তিতে প্রণীত, যা কর্মস্থলে যেকোনো ধরনের যৌন হয়রানিকে কঠোরভাবে দমন করার নির্দেশ দেয়।
হয়রানির প্রকারভেদ
প্রথমেই বুঝে নেওয়া জরুরি যে হয়রানির ধরন কেমন। তবে কর্মক্ষেত্রে হয়রানি দুই ধরনের হতে পারে—
১. মৌখিক বা ভারবাল হয়রানি: এর মধ্যে রয়েছে অপমানজনক মন্তব্য, অশালীন ইঙ্গিত, যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ কথা, হেয়প্রতিপন্ন করা কিংবা ভয় দেখানো।
২. শারীরিক বা ফিজিক্যাল হয়রানি: অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ, জোর করে ধরাধরি, আলিঙ্গন অথবা শারীরিকভাবে অপমানজনক আচরণ।
কর্মস্থলে এ ধরনের আচরণ বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮) এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী যৌন হয়রানি প্রতিরোধ নীতিমালা, ২০০৯ অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
ন্যায়বিচার পাওয়ার ধাপ
কর্মস্থলে হয়রানির শিকার হলে ভুক্তভোগীর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কিছু ধাপে সচেতনভাবে অগ্রসর হতে হবে।
প্রথম পদক্ষেপ: প্রমাণ সংগ্রহ এবং নথিভুক্তকরণ
অভিযোগের ভিত্তি মজবুত করার জন্য প্রমাণ সংগ্রহ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ভুক্তভোগীর প্রথম কাজ হলো ঘটনার বিস্তারিত তথ্য স্পষ্টভাবে লিখিত আকারে নথিভুক্ত করা।
» বিবরণ: ঘটনার তারিখ, সময়, স্থান এবং জড়িত ব্যক্তি কিংবা উপস্থিত থাকা সাক্ষীর নাম লিখে রাখা।
» সংরক্ষণ: সম্ভব হলে ই-মেইল, মেসেজ, ভয়েস রেকর্ড, চ্যাটের স্ক্রিনশট অথবা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংরক্ষণ করা। এসব তথ্য পরবর্তী সময়ে অভিযোগের সপক্ষে শক্তিশালী প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।
দ্বিতীয় পদক্ষেপ: অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটিতে অভিযোগ দাখিল
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতিটি অফিস কিংবা প্রতিষ্ঠানে একটি ‘অভিযোগ কমিটি’ থাকা বাধ্যতামূলক। এই কমিটিতে একজন নারী সদস্যের অন্তর্ভুক্তিও নিশ্চিত করতে হবে।
ভুক্তভোগী প্রথমে লিখিতভাবে এই কমিটির কাছে অভিযোগ দাখিল করতে পারেন। এরপর কমিটি সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত পরিচালনা করতে এবং প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য। এটি অভ্যন্তরীণভাবে দ্রুত ন্যায়বিচার পাওয়ার প্রথম ও কার্যকর মাধ্যম।
তৃতীয় পদক্ষেপ: প্রশাসনিক ও আইনি সহায়তা নেওয়া
যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ কমিটি না থাকে অথবা কমিটি যদি অভিযোগের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়, তবে ভুক্তভোগী সরাসরি আইনি পথে যেতে পারেন।
» পুলিশি পদক্ষেপ: ভুক্তভোগী সরাসরি স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে পারেন।
» মামলা: প্রয়োজনে তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল বা শ্রম আদালতে মামলা করতে পারেন।
» শাস্তি: নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) অনুযায়ী শারীরিক বা যৌন হয়রানির অভিযোগে দোষী প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।
চতুর্থ পদক্ষেপ: মানবাধিকার সংগঠন ও আইনি সহায়তা সংস্থার সহযোগিতা নেওয়া
আইনিপ্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা না থাকলে অথবা আর্থিক সংকট থাকলে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠনের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশে আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি, ব্র্যাক লিগ্যাল এইড সার্ভিসেসের মতো অনেক সংগঠন বিনা মূল্যে আইনি পরামর্শ ও সহায়তা দেয়। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পেশাদার সহায়তা পাওয়া সম্ভব।
যেসব বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে
» চুপ না থাকা: কোনো পরিস্থিতিতে ভয় কিংবা সামাজিক চাপের কারণে চুপ থাকা উচিত নয়। হয়রানির বিষয়ে দ্রুত আওয়াজ তোলা খুব প্রয়োজন।
» নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ: অভিযোগ দাখিল করার আগে ও পরে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
» সঠিক তথ্য উপস্থাপন: মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
» নথি সংরক্ষণ: সব ধরনের যোগাযোগ এবং প্রমাণের নথি যথাযথভাবে আপনাকে সংরক্ষণ করতে হবে।
কর্মস্থলকে ভয় বা বঞ্চনার জায়গা না বানিয়ে একটি নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবেশের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা জরুরি। হয়রানির শিকার হলে চুপ না থেকে আইনের আশ্রয় নেওয়া প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার। একজন সচেতন কর্মী হিসেবে সাহসিকতার সঙ্গে সঠিক পদক্ষেপ নিলে কেবল নিজের নয়, প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক পরিবেশ এবং অন্যান্য সহকর্মীর নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা সম্ভব।

আফগানিস্তান নিয়ে কথা হোক কিংবা তালেবান শাসন নিয়ে, সবার আগে যে প্রসঙ্গটি উঠে আসে সেটি হলো ‘নারী’।
১৭ আগস্ট ২০২৩
ডিজিটাল যুগ যোগাযোগের পরিধি বিস্তৃত করেছে, কিন্তু একই সঙ্গে খুলে দিয়েছে ‘অনলাইন সহিংসতা’র এক নতুন ক্ষেত্র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা ভার্চুয়াল স্পেস এখন শুধু মতপ্রকাশের জায়গা নয়, বরং অনেক সময় ঘৃণাবার্তা, হয়রানি, হুমকি, অপমান ও মানহানির আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে।
৩ দিন আগে
রেডিও চ্যানেল এনপিআরকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক শ্রৌক আল আইলা। তিনি বলতে শুরু করেন, ‘আমি একধরনের হ্যাংওভারের মধ্যে আছি। আজ সকালে খুব অদ্ভুত লাগছিল। কারণ, আমি বিমান হামলা ও বিস্ফোরণ ছাড়া গভীরভাবে ঘুমানোর সুযোগ পেয়েছিলাম। এটা সত্যিই অদ্ভুত লাগছে।’
৫ দিন আগে
আমেরিকার ইতিহাসে দীর্ঘকাল ধরে চলা টেলিভিশন সিরিজ মিট দ্য প্রেস। অনুষ্ঠানটি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্যানেল আলোচনার একটি মানদণ্ড তৈরি করেছিল। এই অনুষ্ঠানের কো-ক্রিয়েটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন মার্থা জেন রাউন্ট্রি।
৫ দিন আগেফিচার ডেস্ক

রেডিও চ্যানেল এনপিআরকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক শ্রৌক আল আইলা। তিনি বলতে শুরু করেন, ‘আমি একধরনের হ্যাংওভারের মধ্যে আছি। আজ সকালে খুব অদ্ভুত লাগছিল। কারণ, আমি বিমান হামলা ও বিস্ফোরণ ছাড়া গভীরভাবে ঘুমানোর সুযোগ পেয়েছিলাম। এটা সত্যিই অদ্ভুত লাগছে।’
৭০০ দিনের বেশি সহিংসতার পর ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে। তবু শান্ত হয়নি গাজার আকাশ। কিন্তু গাজাবাসী, বিশেষত নারী ও কিশোরীদের মধ্যে ভঙ্গুর হলেও দেখা দিয়েছে আশা—বেঁচে থাকার আর এগিয়ে যাওয়ার আশা। যুদ্ধের পুরো সময়ে গাজার অধিকাংশ নারী কমপক্ষে চারবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ইউএন উইমেনের তথ্য অনুযায়ী, ১০ লাখের বেশি নারী ও কিশোরীর খাদ্যসহায়তার প্রয়োজন এবং প্রায় আড়াই লাখের প্রয়োজন জরুরি পুষ্টি সহায়তা।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার ১৬ দিনের মাথায় বাড়িতে বোমা হামলায় নিহত হন আইলার স্বামী। এর পর থেকে নিজের কন্যাশিশুর সঙ্গে জীবন যাপন করছেন তিনি। আইলা জানান, তাঁর কন্যাটি তার বয়সের অর্ধেকের বেশি সময় খাওয়ার পানি, চিকিৎসাসামগ্রী, দুধ আর ডায়াপার ছাড়া কাটিয়েছে। দুর্ভিক্ষের কারণে সে ক্যানড ফুডের ওপর বড় হয়েছে। ফলে শিশুটি আপেল, কলা ও অন্য সব ধরনের ফল চিনতে পারে না। গাজায় প্রতি সাতটি পরিবারের মধ্যে একটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন একজন নারী। তাঁদের এখন সরাসরি সহায়তা দরকার, যাতে তাঁরা সন্তানদের খাওয়াতে পারেন, স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারেন, জীবিকা পুনর্গঠন করতে পারেন এবং সবকিছু হারানোর পর কিছুটা স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করতে পারেন।
এনপিআরকে সাক্ষাৎকার দেন শাইমা আহমেদ নামে আরও একজন কলেজশিক্ষার্থী। একটি বড় পরিবারে জন্ম নেওয়া শাইমা এই যুদ্ধে তাঁর পরিবারের ৭০ জন সদস্যকে হারিয়েছেন! তাঁদের মধ্যে কেউ মারা গেছেন, কয়েকজন নিখোঁজ আবার এখনো অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে—যাঁদের বেঁচে থাকার আশা নেই। বোমাবর্ষণে পরিবারের মানুষের কবরগুলোও হয়ে গেছে অচেনা, খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শাইমা বলেন, ‘শোকের জায়গাও আর নেই।’ তিনি জানান, তিনি ও তাঁর পরিবার দুই বছরে ১১ বার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। শাইমা স্নাতক শেষ করতে চলেছেন। আর এই পড়ার ইচ্ছাই এত দিন বাঁচিয়ে রেখেছে তাঁকে। যেমন সব হারিয়ে মেয়েকে নিয়ে বেঁচে থাকার ইচ্ছা বাঁচিয়ে রেখেছে আইলাকে।
শাইমা বলেন, ‘আমাদের জীবন কেবল সেই নিছক বেঁচে থাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর সত্যিকারের অর্থ ও উদ্দেশ্য থাকে। এটাই আমাদের এগিয়ে নিয়ে গেছে। আমাদের কাছে এই মাটির এত অর্থ আছে এবং গাজায় আপনি যা দেখেন, তা সত্যিই ধূসর এবং সর্বত্র ধ্বংসস্তূপ ও ধুলোয় ভরা। তবু আমরা একটি ভবিষ্যৎ দেখতে পাই।’
গাজায় নিহত, আহত, ধ্বংসের সংখ্যা কেবলই ডেটা নয়। যুদ্ধবিরতি স্থিতিশীল হওয়ার পাশাপাশি গাজার নারীবিষয়ক সংস্থাগুলো এরই মধ্যে পরবর্তী কাজের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশটির পুনরুদ্ধার সেখানকার নারীদের ঘুরে দাঁড়ানো ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সংস্থাগুলোতে কর্মরত নারীরা বারবার উচ্ছেদ, ভয় আর যন্ত্রণার শিকার হয়েছেন। উইমেনস অ্যাফেয়ার্স সেন্টারে কর্মরত আমাল বলেন, ‘আমরা এখানে মৃত্যুকে আর বুঝতে পারি না। এটি স্বাভাবিক মৃত্যু নয়—মৃত্যু আমাদের বস্তুতে, সংখ্যায় পরিণত করে। যেন আমরা কখনো ছিলামই না। আমাদের কাছে মানুষের দেহাবশেষ ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।’
তবু বেঁচে থাকার স্বপ্ন তাঁদের ঘুমাতে দেয় না। গাজা পুনর্গঠন ও পুনর্নির্মাণের প্রতিটি প্রচেষ্টায় নারীদের উপস্থিতি চান তাঁরা। আমাল বলেন, ‘গাজা পুনর্গঠন ও পুনর্নির্মাণের আগে আমাদের নারী হিসেবে, ফিলিস্তিনি হিসেবে নিজেদের পুনর্নির্মাণ করতে হবে।’
সূত্র: এনপিআর, ইউএন উইমেন

রেডিও চ্যানেল এনপিআরকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক শ্রৌক আল আইলা। তিনি বলতে শুরু করেন, ‘আমি একধরনের হ্যাংওভারের মধ্যে আছি। আজ সকালে খুব অদ্ভুত লাগছিল। কারণ, আমি বিমান হামলা ও বিস্ফোরণ ছাড়া গভীরভাবে ঘুমানোর সুযোগ পেয়েছিলাম। এটা সত্যিই অদ্ভুত লাগছে।’
৭০০ দিনের বেশি সহিংসতার পর ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে। তবু শান্ত হয়নি গাজার আকাশ। কিন্তু গাজাবাসী, বিশেষত নারী ও কিশোরীদের মধ্যে ভঙ্গুর হলেও দেখা দিয়েছে আশা—বেঁচে থাকার আর এগিয়ে যাওয়ার আশা। যুদ্ধের পুরো সময়ে গাজার অধিকাংশ নারী কমপক্ষে চারবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ইউএন উইমেনের তথ্য অনুযায়ী, ১০ লাখের বেশি নারী ও কিশোরীর খাদ্যসহায়তার প্রয়োজন এবং প্রায় আড়াই লাখের প্রয়োজন জরুরি পুষ্টি সহায়তা।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার ১৬ দিনের মাথায় বাড়িতে বোমা হামলায় নিহত হন আইলার স্বামী। এর পর থেকে নিজের কন্যাশিশুর সঙ্গে জীবন যাপন করছেন তিনি। আইলা জানান, তাঁর কন্যাটি তার বয়সের অর্ধেকের বেশি সময় খাওয়ার পানি, চিকিৎসাসামগ্রী, দুধ আর ডায়াপার ছাড়া কাটিয়েছে। দুর্ভিক্ষের কারণে সে ক্যানড ফুডের ওপর বড় হয়েছে। ফলে শিশুটি আপেল, কলা ও অন্য সব ধরনের ফল চিনতে পারে না। গাজায় প্রতি সাতটি পরিবারের মধ্যে একটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন একজন নারী। তাঁদের এখন সরাসরি সহায়তা দরকার, যাতে তাঁরা সন্তানদের খাওয়াতে পারেন, স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারেন, জীবিকা পুনর্গঠন করতে পারেন এবং সবকিছু হারানোর পর কিছুটা স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করতে পারেন।
এনপিআরকে সাক্ষাৎকার দেন শাইমা আহমেদ নামে আরও একজন কলেজশিক্ষার্থী। একটি বড় পরিবারে জন্ম নেওয়া শাইমা এই যুদ্ধে তাঁর পরিবারের ৭০ জন সদস্যকে হারিয়েছেন! তাঁদের মধ্যে কেউ মারা গেছেন, কয়েকজন নিখোঁজ আবার এখনো অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে—যাঁদের বেঁচে থাকার আশা নেই। বোমাবর্ষণে পরিবারের মানুষের কবরগুলোও হয়ে গেছে অচেনা, খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শাইমা বলেন, ‘শোকের জায়গাও আর নেই।’ তিনি জানান, তিনি ও তাঁর পরিবার দুই বছরে ১১ বার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। শাইমা স্নাতক শেষ করতে চলেছেন। আর এই পড়ার ইচ্ছাই এত দিন বাঁচিয়ে রেখেছে তাঁকে। যেমন সব হারিয়ে মেয়েকে নিয়ে বেঁচে থাকার ইচ্ছা বাঁচিয়ে রেখেছে আইলাকে।
শাইমা বলেন, ‘আমাদের জীবন কেবল সেই নিছক বেঁচে থাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর সত্যিকারের অর্থ ও উদ্দেশ্য থাকে। এটাই আমাদের এগিয়ে নিয়ে গেছে। আমাদের কাছে এই মাটির এত অর্থ আছে এবং গাজায় আপনি যা দেখেন, তা সত্যিই ধূসর এবং সর্বত্র ধ্বংসস্তূপ ও ধুলোয় ভরা। তবু আমরা একটি ভবিষ্যৎ দেখতে পাই।’
গাজায় নিহত, আহত, ধ্বংসের সংখ্যা কেবলই ডেটা নয়। যুদ্ধবিরতি স্থিতিশীল হওয়ার পাশাপাশি গাজার নারীবিষয়ক সংস্থাগুলো এরই মধ্যে পরবর্তী কাজের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশটির পুনরুদ্ধার সেখানকার নারীদের ঘুরে দাঁড়ানো ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সংস্থাগুলোতে কর্মরত নারীরা বারবার উচ্ছেদ, ভয় আর যন্ত্রণার শিকার হয়েছেন। উইমেনস অ্যাফেয়ার্স সেন্টারে কর্মরত আমাল বলেন, ‘আমরা এখানে মৃত্যুকে আর বুঝতে পারি না। এটি স্বাভাবিক মৃত্যু নয়—মৃত্যু আমাদের বস্তুতে, সংখ্যায় পরিণত করে। যেন আমরা কখনো ছিলামই না। আমাদের কাছে মানুষের দেহাবশেষ ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।’
তবু বেঁচে থাকার স্বপ্ন তাঁদের ঘুমাতে দেয় না। গাজা পুনর্গঠন ও পুনর্নির্মাণের প্রতিটি প্রচেষ্টায় নারীদের উপস্থিতি চান তাঁরা। আমাল বলেন, ‘গাজা পুনর্গঠন ও পুনর্নির্মাণের আগে আমাদের নারী হিসেবে, ফিলিস্তিনি হিসেবে নিজেদের পুনর্নির্মাণ করতে হবে।’
সূত্র: এনপিআর, ইউএন উইমেন

আফগানিস্তান নিয়ে কথা হোক কিংবা তালেবান শাসন নিয়ে, সবার আগে যে প্রসঙ্গটি উঠে আসে সেটি হলো ‘নারী’।
১৭ আগস্ট ২০২৩
ডিজিটাল যুগ যোগাযোগের পরিধি বিস্তৃত করেছে, কিন্তু একই সঙ্গে খুলে দিয়েছে ‘অনলাইন সহিংসতা’র এক নতুন ক্ষেত্র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা ভার্চুয়াল স্পেস এখন শুধু মতপ্রকাশের জায়গা নয়, বরং অনেক সময় ঘৃণাবার্তা, হয়রানি, হুমকি, অপমান ও মানহানির আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে।
৩ দিন আগে
নিরাপদ এবং নিশ্চিত কর্মপরিবেশ পাওয়া যেকোনো কর্মজীবী মানুষের একটি মৌলিক চাহিদা। কর্মপরিবেশ ও কর্মস্থল নিরাপদ যদি না হয়, সেখানে নারী কিংবা পুরুষ—কেউ নিরাপদ নন। আর এ বিষয়টি শুধু চাকরিজীবনে নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। হেঁটে গেলে অন্য সহকর্মীরা আপনার দিকে কীভাবে তাকাচ্ছেন, কিংবা দুজন সহকর
৫ দিন আগে
আমেরিকার ইতিহাসে দীর্ঘকাল ধরে চলা টেলিভিশন সিরিজ মিট দ্য প্রেস। অনুষ্ঠানটি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্যানেল আলোচনার একটি মানদণ্ড তৈরি করেছিল। এই অনুষ্ঠানের কো-ক্রিয়েটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন মার্থা জেন রাউন্ট্রি।
৫ দিন আগেফিচার ডেস্ক

আমেরিকার ইতিহাসে দীর্ঘকাল ধরে চলা টেলিভিশন সিরিজ মিট দ্য প্রেস। অনুষ্ঠানটি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্যানেল আলোচনার একটি মানদণ্ড তৈরি করেছিল। এই অনুষ্ঠানের কো-ক্রিয়েটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন মার্থা জেন রাউন্ট্রি।
একজন নারী হিসেবে মার্থা এমন এক সময়ে টেলিভিশন অনুষ্ঠান প্রযোজনার জগতে এসে সাফল্য লাভ করেন, যখন এই শিল্পে পুরুষেরাই প্রধান ভূমিকা পালন করতেন। মিট দ্য প্রেসের ইতিহাসে তিনি একমাত্র নারী, যিনি অনুষ্ঠানটির প্রথম মডারেটর বা উপস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৪৫ সালে মার্থা লিভ ইট টু দ্য গার্লস নামে রেডিওর প্রথম প্যানেল শো তৈরি করতেন, যেখানে নারীরাই ছিলেন মূল আলোচক। এর মাধ্যমে তিনি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিষয়ে নারীদের মতামত প্রকাশ করার জন্য একটি জনপ্রিয় মঞ্চ তৈরি করেছিলেন। তাঁর সহকর্মীরা তাঁকে ‘আ ডিজেল ইঞ্জিন আন্ডার আ লেইস রুমাল’ বলে আখ্যায়িত করেন। বাইরে থেকে মার্থা শান্ত ও মার্জিত হলেও মানসিকভাবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত দৃঢ়চেতা মানুষ। ছিলেন কর্মশক্তিতে ভরপুর এবং তাঁর কাজের গতি ছিল প্রখর।
মার্থা ১৯৫১ সালে ন্যাশনাল ফ্র্যাটারনিটি ফর উইমেন ইন জার্নালিজম কর্তৃক টেলিভিশন অনুষ্ঠানের ‘অসামান্য নারী’ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। মার্থা জেন রাউন্ট্রির জন্ম ১৯১১ সালের ২৩ অক্টোবর, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায়। ১৯৯৯ সালের ২৩ আগস্ট ওয়াশিংটন ডিসিতে তিনি মারা যান।

আমেরিকার ইতিহাসে দীর্ঘকাল ধরে চলা টেলিভিশন সিরিজ মিট দ্য প্রেস। অনুষ্ঠানটি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্যানেল আলোচনার একটি মানদণ্ড তৈরি করেছিল। এই অনুষ্ঠানের কো-ক্রিয়েটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন মার্থা জেন রাউন্ট্রি।
একজন নারী হিসেবে মার্থা এমন এক সময়ে টেলিভিশন অনুষ্ঠান প্রযোজনার জগতে এসে সাফল্য লাভ করেন, যখন এই শিল্পে পুরুষেরাই প্রধান ভূমিকা পালন করতেন। মিট দ্য প্রেসের ইতিহাসে তিনি একমাত্র নারী, যিনি অনুষ্ঠানটির প্রথম মডারেটর বা উপস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৪৫ সালে মার্থা লিভ ইট টু দ্য গার্লস নামে রেডিওর প্রথম প্যানেল শো তৈরি করতেন, যেখানে নারীরাই ছিলেন মূল আলোচক। এর মাধ্যমে তিনি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিষয়ে নারীদের মতামত প্রকাশ করার জন্য একটি জনপ্রিয় মঞ্চ তৈরি করেছিলেন। তাঁর সহকর্মীরা তাঁকে ‘আ ডিজেল ইঞ্জিন আন্ডার আ লেইস রুমাল’ বলে আখ্যায়িত করেন। বাইরে থেকে মার্থা শান্ত ও মার্জিত হলেও মানসিকভাবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত দৃঢ়চেতা মানুষ। ছিলেন কর্মশক্তিতে ভরপুর এবং তাঁর কাজের গতি ছিল প্রখর।
মার্থা ১৯৫১ সালে ন্যাশনাল ফ্র্যাটারনিটি ফর উইমেন ইন জার্নালিজম কর্তৃক টেলিভিশন অনুষ্ঠানের ‘অসামান্য নারী’ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। মার্থা জেন রাউন্ট্রির জন্ম ১৯১১ সালের ২৩ অক্টোবর, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায়। ১৯৯৯ সালের ২৩ আগস্ট ওয়াশিংটন ডিসিতে তিনি মারা যান।

আফগানিস্তান নিয়ে কথা হোক কিংবা তালেবান শাসন নিয়ে, সবার আগে যে প্রসঙ্গটি উঠে আসে সেটি হলো ‘নারী’।
১৭ আগস্ট ২০২৩
ডিজিটাল যুগ যোগাযোগের পরিধি বিস্তৃত করেছে, কিন্তু একই সঙ্গে খুলে দিয়েছে ‘অনলাইন সহিংসতা’র এক নতুন ক্ষেত্র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা ভার্চুয়াল স্পেস এখন শুধু মতপ্রকাশের জায়গা নয়, বরং অনেক সময় ঘৃণাবার্তা, হয়রানি, হুমকি, অপমান ও মানহানির আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে।
৩ দিন আগে
নিরাপদ এবং নিশ্চিত কর্মপরিবেশ পাওয়া যেকোনো কর্মজীবী মানুষের একটি মৌলিক চাহিদা। কর্মপরিবেশ ও কর্মস্থল নিরাপদ যদি না হয়, সেখানে নারী কিংবা পুরুষ—কেউ নিরাপদ নন। আর এ বিষয়টি শুধু চাকরিজীবনে নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। হেঁটে গেলে অন্য সহকর্মীরা আপনার দিকে কীভাবে তাকাচ্ছেন, কিংবা দুজন সহকর
৫ দিন আগে
রেডিও চ্যানেল এনপিআরকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক শ্রৌক আল আইলা। তিনি বলতে শুরু করেন, ‘আমি একধরনের হ্যাংওভারের মধ্যে আছি। আজ সকালে খুব অদ্ভুত লাগছিল। কারণ, আমি বিমান হামলা ও বিস্ফোরণ ছাড়া গভীরভাবে ঘুমানোর সুযোগ পেয়েছিলাম। এটা সত্যিই অদ্ভুত লাগছে।’
৫ দিন আগে