Ajker Patrika

মন্ত্রীর আত্মীয়দের যেভাবে সম্মান দেখাবেন

অর্ণব সান্যাল
মন্ত্রীর আত্মীয়দের যেভাবে সম্মান দেখাবেন

মন্ত্রীর আত্মীয়ের আঁতে ঘা লাগায় তুলকালাম হয়ে যাওয়ার ঘটনা আমরা গত কয়েক দিন ধরেই শুনছি। সেই শোনাশুনির মধ্যেই চলুন কিছু ‘শিক্ষা’ নিয়ে নেওয়া যাক। এ দেশে জীবন কাটাতে গিয়ে চলার পথে নির্ঝঞ্ঝাটে পা ফেলতে এসব আমাদের শিখে রাখা অতীব জরুরি। কে জানে, কখন কাজে লেগে যায়!

বর্তমানে যেসব ইস্যু আমাদের সামনে আছে, সেসবের মধ্যে মন্ত্রীর আত্মীয়ের সঙ্গে ‘বেয়াদবি’ করার বিষয়টি প্রণিধানযোগ্য। তাই এ বিষয়েই আমরা এবার একটু জানাবোঝার চেষ্টা করব। বুঝে বের করার চেষ্টা করব যে কী করিলে মন্ত্রীর আত্মীয়ের সঙ্গে বেয়াদবি হবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে লোকবাংলার সেই প্রবচনের কথা—‘মন ভাঙা আর...’। আর মন্ত্রীর আত্মীয়ের ক্ষেত্রে সেটি প্রকট সত্য। বিশ্বাস না হলে একবার ভেঙেই দেখুন না! হাতে হারিকেন ধরিয়ে দিলে বুঝবেন ঠেলা! 

আজকের এই লেখায় আমরা মূলত মূল থেকে শুরু করব। বেয়াদবি কী—তা বোঝার চেষ্টা থাকবে। সেটা কার সঙ্গে কীভাবে করতে হবে, কেন বা কার সঙ্গে করতে হবে না, কী করিলে কী হয় ইত্যাদির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করা হবে। সেই সঙ্গে আমরা আদবকায়দা প্রদর্শনের সঠিক পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া সম্পর্কেও জানার চেষ্টা করব। 
এরই মধ্যে আমরা দেখেছি যে মন্ত্রীর আত্মীয়দের আদবকেতা না দেখানোর অভিযোগে একজনের বারোটা বেজেছে। যদিও সেই ঘায়ে মলম লাগানোর ব্যবস্থাও বিরাজমান। মন্ত্রীমশাই মলম নিজেও লাগানোর চেষ্টা করে চলেছেন। তিনি বলেছেন যে এখানে একটা ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে। সেটি অন্দরমহলেও হয়েছে, হয়েছে বাহির মহলেও। অবস্থা এমন যে মনে হচ্ছে সবাই সেই বিখ্যাত ‘বোঝে না সে বোঝে না’ গান শুনে তাল হারিয়ে ফেলেছে! 

তবে এ দেশে মন্ত্রীমশাইরা না-ই বুঝতে পারেন। এটি তাঁদের এক প্রকার জন্মগত অধিকার। আপনারা দাবি করতেই পারেন যে জন্মের পরপরই তো কেউ মন্ত্রী হয় না! হ্যাঁ, বায়োলজিক্যালি আপনাদের দাবি সঠিক, কিন্তু পলিটিক্যালি ইনকারেক্ট। এমন দাবি করা বাস্তবানুগও নয়। সুতরাং এসব ‘অহেতুক’ দাবি থেকে সরে এসে আমাদের উচিত অভিযোজন প্রক্রিয়ার সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নেওয়া। আর এ জন্যই জানা প্রয়োজন যে মন্ত্রীর আত্মীয়দের কীভাবে সম্মান দেখাতে হবে! 

এক কথায়, আদবকায়দার অভাবটাই আসলে বেয়াদবি। এখন ব্যক্তিবিশেষে এই কায়দাটি নানা ধরনের হতে পারে। কেমন হবে সেটি নির্ভর করে আপনার সামনে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের পরিচয়ের ওপর। বয়সে মুরব্বিদের বা মুরব্বি আত্মীয়দের ক্ষেত্রে পরিবার প্রদত্ত শিক্ষার আলোকে আপনারা আদবকায়দা দেখাতে পারেন। ওতেই কাজ চলে যাবে। তবে সামনে মন্ত্রীর আত্মীয় থাকলে বিষয়টি হবে অন্যরকম। সে ক্ষেত্রে মনে যতটা শ্রদ্ধাই থাকুক, সেটিকে বলকানো দুধের মতো সফেদ ও ফেনানো করে ফেলতে হবে নিমেষে। মনে রাখবেন, এ ক্ষেত্রে বাড়াবাড়িটা কোনোভাবেই খারাপ কিছু নয়। 

মনে রাখবেন, এই শ্রদ্ধাটা হতে হবে ভয়মিশ্রিত। ভয়টা মনের গহিনে থাকবে, শ্রদ্ধাটা ‘শো’ হবে। ‘শো’ মানে ‘শো’, যতটা শক্তিতে কুলোয়। এর জন্য নিজেকে প্রয়োজনে রক্ত-মাংসের মানুষ থেকে তরল পদার্থে পরিণত করুন। এরপর প্রয়োজনমাফিক পাত্রে নিজেকে ঢেলে দিয়ে, সেই পাত্রের আকার ধারণ করুন। অর্থাৎ যে কথা বললে যেভাবে মন্ত্রীর আত্মীয় তুষ্ট হবেন, সেই পথেই এগিয়ে যেতে হবে দ্ব্যর্থহীন চিত্তে। ওই সময়টায় ভেতরে-ভেতরে নিজেকে বোঝাতে হবে যে পুরো বিষয়টা ভয় থেকেই হচ্ছে। সুতরাং কোনো কমতি রাখা যাবে না। মনে রাখবেন, কমতি হলেই হয় পেটে, না হয় অন্য কোথাও লাথি পড়তে পারে। আশা করি, এ বিষয়টি মাথায় রাখলেই কাজ সহজ হয়ে যাবে! 

অতি অবশ্যই কোনো নিয়মকানুনের প্রসঙ্গ মন্ত্রীর আত্মীয়দের সামনে তোলা যাবে না। আহা, নিয়মকানুন তো প্রজাদের জন্য, রাজাদের জন্য নয়! সেটি হিসাবে রেখে আদবকায়দা ঠিক করতে হবে। আর হ্যাঁ, কখনোই তাদের এসি থেকে নন-এসিতে নামিয়ে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে সাধারণদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে হবে। কিন্তু কোনোভাবেই মন্ত্রীর আত্মীয়দের পদাবনতি কাম্য নয়। ওটি করলে নিজের দুর্ভাগ্য নিজেকেই গাঁদা ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নিতে হবে। 

অতএব, কেউ যদি নিজেকে মন্ত্রীর আত্মীয় দাবি করেই বসেন, তবে নির্দ্বিধায় তা মেনে নিতে হবে এবং সেই অনুযায়ী নিজেকে বিনয়ের অবতারে বদলে ফেলতে হবে। ওই সময় ঘটনার আগে ও পরে কোনো ধরনের তর্ক করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কিংবদন্তি সুকুমার রায়ের একটি ছড়া সে সময় অবশ্যই বারবার জপতে হবে। সেটি হলো—
 ‘চুপ করে থাক্, তর্ক করার বদভ্যাসটি ভাল না, 
এক্কেবারেই হয় না ওতে বুদ্ধিশক্তির চালনা।…’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত