Ajker Patrika

বর থেকে ব্রো!

সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন
Thumbnail image

‘খুব তো মজা নিচ্ছেন চড়-কাণ্ড নিয়ে। একটাবার ভেবে দেখেছেন বেচারা বর থেকে ব্রো হয়ে গেল! হাউ কাম? এটা মানা যায়?’ 

মতিন সাহেব একদম গম্ভীর হয়ে গেছেন। সহকর্মী আজাদ সাহেবের রসিকতা পছন্দ হচ্ছে না। একে তো প্রিয় নায়ক, তার ওপর এক সময়ের হার্টথ্রব ও বিয়ে করা বউ তাঁকে ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করেছেন। বর থেকে বেচারা ‘ব্রো’ হয়ে গেল! অবস্থা বেগতিক দেখে আজাদ সাহেব বললেন, ‘আরে ব্রো, আপনি উত্তেজিত হচ্ছেন কেন? বিয়ের পাঁচ বছর পর জামাই-বউ এমনিতেই ভাই-বোন হয়ে যায়!’ 

কপাল কুঁচকে মতিন সাহেব জানতে চান, ‘তা আপনার ক বছর হয়েছে বিয়ের?’ 

লাজুক হাসি দিয়ে আজাদ সাহেব বললেন, ‘ইয়ে, তিন বছর।’ 
-তার মানে আপনারা এখনো ভাই-বোন হন নাই। হানিমুন পিরিয়ড চলতেছে। আরও দুই বছর প্রেম করে নেন। তারপর বুঝবেন পর্দা কাঁপানো ভাইয়ের কী কষ্ট হইতেছে। 
-চিল ব্রো! মাথা ঠান্ডা রাখেন। 
-চিল আবার কি? আমি তো কাক-পক্ষীও না। আমি জলজ্যান্ত একজন মানুষ! নায়কও মানুষ। তিনি ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ কোর্স না-ই করতে পারেন। তাই বলে আপনারা ফেসবুক ভাসায় দিবেন তাঁকে সমালোচনা করে? জানেন কত চাবুকের আঘাত খাইতে খাইতে নায়িকাকে পাইছেন তিনি? আপনারা কী জানবেন, ব্রো প্রজন্মের লোকজন! ভাইয়ের সিন দেইখা আমরা কত বদন ভাসাইছি নয়নের জলে। আর আপনারা কিসের ফেসবুক ভাসান নির্দয় মার্কা কথা বলে! 
-হা হা হা। শুধু শুধু উত্তেজিত হবেন না মতিন সাহেব। সিনেমার ক্লাইম্যাক্স সিনের মতো আপনিও হার্ট অ্যাটাক করেন, সেটা আমরা চাই না। 
-এই যে কথা ঘোরাচ্ছেন। আমার কথা শেষ হয় নাই। দ্যাখেন, নায়িকা কীভাবে পারল নায়কের বিপক্ষে যেতে? 
-আপনি বলতে চাইছেন নায়ক সত্য বলছেন, আর যা করেছেন তা-ই সঠিক? 
-আলবৎ হ্যাঁ। 
-আগেই সিদ্ধান্তে আসা ঠিক না মতিন সাহেব। অস্কারে উইল স্মিথের চড়-কাণ্ডের পর কী কী হইসিলো মনে আছে তো? 
-আরে ভাই আমরা হলাম বাঙালি। বউয়ের দিকে কেউ তাকালে ট্যাংরি ভেঙে দেওয়ার দুঃসাহস আমাদের আছে। 

এতক্ষণ বাসেদ মিয়া চা বানাতে বানাতে মতিন সাহেব আর আজাদ সাহেবের বাকওয়াজ শুনছিলেন। আর চুপ থাকতে পারলেন না। গলাটা একটু পরিষ্কার করে নিয়ে ফিসফিস করে দুজনের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘কিন্তু স্যার, বউয়ের কথা মাইনা চললে কী আর এত কিছু হইতো? কথা কন ঠিক কি না?’ 

দুজনেই এবার একসঙ্গে বলে উঠলেন, ‘সহমত ভাই।’ 

বাসেদ মিয়ার মুখে একটা ছড়ানো হাসি। চায়ের দাম মিটিয়ে দিতে দিতে আজাদ সাহেবকে মতিন সাহেব বললেন, ‘অনেকক্ষণ হইসে বিরতি। চলেন অফিসে ফিরি। আমি আবার মোবাইলে ডাটা-ফাটা ইউজ করি না। খামাখা পয়সা নষ্ট। অফিসে ফ্রিতে ওয়াইফাই। হে হে হে। জলদি চলেন। নায়ক ভাইয়ের আপডেট আছে কি না জানতে হবে!’ 

কথাগুলো মিইয়ে যায় দূরত্ব বাড়তে বাড়তে। চায়ের টং দোকানটার পাশেই জব্বর আলী তাঁর রিকশাটা থামিয়ে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিলেন। বড় দালানের স্যাররা চলে যেতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দিয়ে বললেন, ‘মাইনষে অভাবে মরে, আগুনে মরে, রাস্তায় মরে, পানিতে মরে। তবু নাটক-সিনেমা দেইখা একটু ভালা থাকন লাগে!’ 

আমি মুচকি হেসে বাসেদ মিয়াকে বললাম, ‘আরেক কাপ চা দিও তো মামা। চিনি ছাড়া, রং চা।’ 

সব ঘটনার মতো এই ঘটনাতেও কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ লাগবে কি-না, এটাই এখন চিন্তার বিষয়। চায়ে চুমুক দিতে দিতে আরও চিন্তা করা যাবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত