Ajker Patrika

প্রথম দক্ষিণ মেরু বিজয়ী অ্যামুন্ডসেনের জন্ম

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২৪, ১২: ০৮
Thumbnail image

রোয়াল্ড অ্যামুন্ডসেন প্রথম মানুষ হিসেবে দক্ষিণ মেরু জয় করেন। প্রথম ব্যক্তি হিসেবে উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু দুটি জয় করার রেকর্ডও তাঁর ঝুলিতে। দুঃসাহসী এই অভিযাত্রীর জন্ম ১৮৭২ সালের এই দিনে, অর্থাৎ ১৬ জুলাই। আজ তাই থাকছে দক্ষিণ মেরু বিজয়সহ অ্যামুন্ডসেনের নানা অর্জনের গল্প।

অ্যামুন্ডসেনের নেতৃত্বে মেরু অভিযাত্রীদের ছোট্ট দলটি দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছায় ১৯১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর। তবে সেই অভিযান কাহিনি বর্ণনার আগে বরং তাঁর সম্পর্কে আরও দু-চারটি তথ্য জেনে নিই।

নরওয়ের অসলোর কাছে ১৮৭২ সালের ১৬ জুলাই জন্ম অ্যামুন্ডসেনের। কিশোর বয়সে অভিযাত্রী জন ফ্রাঙ্কলিনের বিভিন্ন রোমাঞ্চকর অভিযান সম্পর্কে জেনে তাঁর মনে বাসা বাঁধে অভিযাত্রী হওয়ার স্বপ্ন। বাবা মারা গিয়েছিলেন অ্যামুন্ডসেনের বয়স যখন ১৪ তখন। তাই মা ছিলেন তাঁর সব। আর মা চেয়েছিলেন ছেলে চিকিৎসক হোক। 

অ্যামুন্ডসেনের বয়স যখন ২১, তখন মা মারা যান। তারপর আর কোনো পিছুটান ছিল না তাঁর। ডাক্তারি পড়া বাদ দিয়ে আর্কটিক অভিযানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন।

শুরু দিকের অভিযানগুলোতে সাধারণ একজন নাবিকই ছিলেন অ্যামুন্ডসেন। ১৮৯৯ সালে বেলজিয়ানদের একটি আর্কটিক অভিযানে বেলজিকা জাহাজের ফার্স্ট মেট হন তিনি। এটি ছিল শীতে আর্কটিকে প্রথম অভিযান। তবে এটি সফল হয়নি। জাহাজ বরফে আটকে গেলে তা গলা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় তাঁদের। তারপর ১৯০৩-০৬ সালের মধ্যে নিজের জাহাজ ‘ইওয়া’ নিয়ে নর্থ-ওয়েস্ট প্যাসেজ পাড়ি দেন রোয়াল্ড অ্যামুন্ডসেন।

এই অভিযানের পর উত্তর মেরুর দিকে যাত্রা করার পরিকল্পনা করেন এই অভিযাত্রী। তবে তখনই শোনেন দুই মার্কিন রবার্ট পিয়েরি ও ফ্রেডরিক কুক এটি জয়ের দাবি করেছেন। অতএব দক্ষিণ মেরুর দিকে মনোযোগ দিলেন অ্যামুন্ডসেন।

১৯১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর প্রথম মানুষ হিসেবে দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছান নরওয়ের অভিযাত্রী রোয়াল্ড অ্যামুন্ডসেন ও তাঁর দল। 

১৯১১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দক্ষিণ মেরুতে নরওয়ের পতাকার সামনে অভিযাত্রী রোয়াল্ড অ্যামুন্ডসেন এবং তাঁর সঙ্গীরাক্যাপ্টেন রবার্ট ফ্যালকন স্কটের নেতৃত্বাধীন ব্রিটিশ অভিযাত্রী দলও ওই সময় দক্ষিণ মেরু জয়ের অভিযানে নামে। তবে তাদের এক মাসের বেশি সময় আগেই দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছে ইতিহাসের পাতায় নিজেদের নাম লিখিয়ে নেন অ্যামুন্ডসেন ও তাঁর দল। 

অ্যামুন্ডসেনের সঙ্গে ছিলেন অসকার উইস্তিং, স্লেভের হসসিল ও হেলমার হেলসেন। ৫২টি কুকুর ও চারটি স্লেজের সহায়তায় দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছান তাঁরা। 

তবে অ্যামুন্ডসেনের এই সাফল্যের খবর ইউরোপে পৌঁছাতে কয়েক মাস লেগে যায়। অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়ার হোবার্টের বন্দরে যখন ১৯১২ সালের মার্চের গোড়ার দিকে অ্যামুন্ডসেনদের জাহাজ দ্য ফার্ম পৌঁছায়, তখনই ঐতিহাসিক এ ঘটনা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।

১০ মার্চ ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ান নরওয়েজিয়ানকে অভিনন্দন জানালেও তাদের লেখায় এই অভিযান নিয়ে অস্বস্তিই প্রকাশ পায়, ‘আমরা অ্যামুন্ডসেনের এই বিশাল সাফল্যে সন্দেহ প্রকাশ করব না। প্রচণ্ড সাহসিকতা এবং চারিত্রিক দৃঢ়তা ছাড়া কারও পক্ষে এমন একটি অর্জন সম্ভব নয়। তবে আমরা গভীর প্রত্যাশার সঙ্গে তাঁর সাফল্য নিয়ে যে প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হয়েছে, এর সমাধান আশা করছি।’ 

পরের দিন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম অবজারভার মেরুযাত্রার বিষয়ে অ্যামুন্ডসেনের নিজস্ব সরল বিবরণ পুনরায় মুদ্রণ করে। ১৯১২ সালের নভেম্বরে অ্যামুন্ডসেন ব্রিটেনে পৌঁছান অভিযান নিয়ে তাঁর বই দ্য সাউথ পোলের প্রচার চালাতে। দ্য গার্ডিয়ান ও দ্য অবজারভার অভিযাত্রীর সাফল্যকে স্বীকার করে তাঁর এই অর্জন নিয়ে বেশ কয়েকটি কলাম ছাপে। 

১৯২৩ সালে অ্যামুল্ডসেনএদিকে ক্যাপ্টেন স্কট দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছান ১৯১২ সালের ১৭ জানুয়ারি। সেখান থেকে ফেরার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। ধারণা করা হয়, তারিখটি ২৯ মার্চ। পরের বছর ১১ ফেব্রুয়ারি তাঁর মৃত্যুর সংবাদ জানতে পারে বিশ্ববাসী। 

এদিকে ১৯১৮ সাল থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত উত্তর মেরু জয়ের জন্য আর্কটিক সাগরের স্রোতকে ব্যবহারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন অ্যামুন্ডসেন। তবে এটা করতে গিয়ে নর্থইস্ট পেসেজের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করে এর এক পাশ থেকে আরেক পাশে পৌঁছান তিনি। আর্কটিকের মধ্যকার এই জলপথ আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরকে যুক্ত করেছে। এই নর্দিনশনের পর ইতিহাসের দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে এই প্যাসেজ অতিক্রম করেন তিনি।

আমুন্ডসেন তখন উত্তর মেরুতে উড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ধনী অভিযাত্রী লিংকন এলসওয়ার্থের অর্থায়নে বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় রূপ নেয়। শেষ পর্যন্ত ১৯২৬ সালের মেতে রিচার্ড এভেলিন বির্দ উড়োজাহাজে চেপে উত্তর মেরুতে পৌঁছান। তারপর নরওয়ের স্পিতসবার্গেনে ফিরে আসেন। এখানে অ্যামুন্ডসেন ও বির্দের দেখা হয়। দুই দিন বাদে ১৯২৬ সালের ১১ মে ডিরিজিবল শিপ নামে পরিচিত বাতাসের চেয়ে হালকা একধরনের বেলুনে চেপে উত্তর মেরুর উদ্দেশে রওনা দেন অ্যামুন্ডসেন। উড়ুক্কু যানটির নকশাকার ও চালক ছিলেন ইতালীয় অভিযাত্রী ও প্রকৌশলী উমবের্তো নবিল।

অ্যামুন্ডসেন ও নবিল উত্তর মেরুতে পৌঁছান সেদিন, অর্থাৎ ১১ মেতেই। আবহাওয়ার প্রতিকূলতার পাশাপাশি তাঁদের যান কারিগরি কিছু ত্রুটিতে পড়লেও শেষ পর্যন্ত মের ১৪ তারিখ আলাস্কার পয়েন্ট ব্যরোতে পৌঁছান দুজন।

১৯২৮ সালের গ্রীষ্মে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে মারা যান অ্যামুন্ডসেন। আর্কটিকে ডিরিজিবল বিধ্বস্ত হয়ে নিখোঁজ বন্ধু নবিলের উদ্ধারের চেষ্টা করছিলেন তিনি। অন্য একটি উদ্ধারকারী দল অবশ্য নবিলকে খুঁজে পায়। এদিকে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে ফরাসি ক্রুসহ অ্যামুন্ডসেন নিখোঁজ হন ১৮ জুন। তাঁর মৃতদেহ আর পাওয়া যায়নি। ওই সময় অ্যামুন্ডসেনের বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর।

সূত্র: গার্ডিয়ান, এনবিসি নিউজ, উইকিপিডিয়া, এনসেন্টেড লার্নিং, রয়েল মিউজিয়ামস গ্রিনউইচ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত