Ajker Patrika

১৫৩ বছর আগে হয়েছিল প্রথম বিড়াল প্রদর্শনী

আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২৪, ১২: ৪০
১৫৩ বছর আগে হয়েছিল প্রথম বিড়াল প্রদর্শনী

বিড়াল এখন মানুষের সবচেয়ে পছন্দের পোষা প্রাণীগুলোর একটি। তবে সব সময়ই কিন্তু বিড়ালকে এতটা আদর-যত্ন করত না মানুষ। বিশেষ করে পাশ্চাত্যে বিড়ালকে পোষা প্রাণী হিসেবে জনপ্রিয় করে তুলতে দারুণ ভূমিকা রাখে একটি বিড়াল প্রদর্শনী। ১৮৭১ সালের এই দিনে, অর্থাৎ ১৩ জুলাই যুক্তরাজ্যের লন্ডনে হয় প্রদর্শনীটি।

ভিক্টোরিয়ান যুগের ব্রিটিশদের কাছে বিড়ালের প্রয়োজনীয়তা ছিল মূলত ইঁদুরের মতো ক্ষতিকর প্রাণী দমনের জন্য। তবে ১৮৭১ সালের ১৩ জুলাই ক্রিস্টাল প্যালেসের সেই বিড়াল প্রদর্শনীর পর শুধু ইঁদুর শিকারি নয়, বিড়ালও যে আদর-যত্ন করে পোষার মতো একটি প্রাণী হতে পারে, অভিজাতদের মধ্যে এমন একটি ধারণা দিতে সাহায্য করে।

১৮৭১ সালের এই বিড়াল প্রদর্শনী আয়োজনের পরিকল্পনা লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের সুপারিনটেনডেন্ট ফ্রেড উইলসনের। ওই প্রদর্শনীতে ৬৫টির মতো বিড়ালকে উপস্থিত করা হয়। এই বিড়াল প্রদর্শনীকে এ ধরনের প্রথম কাজ হিসেবে ধরা হলেও বিড়ালকে পোষা প্রাণী হিসেবে জনপ্রিয় করে তুলতে যে মানুষটি সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখেন, তিনি হ্যারিসন উইলিয়াম উয়্যার।

১৮৭১ সালের ওই প্রদর্শনীর পর উনিশ শতকে আরও বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হয় যুক্তরাজ্যে। ছবি: সংগৃহীতএদিকে ১৮৭১ সালের সেই প্রদর্শনীও যে বড় একটি নাড়া দেয় যুক্তরাজ্যে, তাতে সন্দেহ নেই। উদাহরণ হিসেবে ফ্রান্সিস সিম্পসনের কথা বলা যেতে পারে। ১৪ বছর বয়সী সিম্পসন ১৮৭১ সালের জুলাই মাসে ক্রিস্টাল প্যালেসে প্রথম বিড়াল শোতে অংশ নিয়েছিলেন। তারপর থেকে আজীবন বিড়ালপ্রেমীই রয়ে গিয়েছিলেন।

সুশৃঙ্খল বিড়াল প্রদর্শনীর বিষয়টি প্রথম শুরু করেন উয়্যার। গবাদি পশু, ঘোড়া, খাঁচার পাখি এবং ওই সময় সদ্য শুরু হওয়ার কুকুরের প্রদর্শনীর মতো লাইন ধরে হাঁটা বা দৌড়ানোসহ নানা নিয়মকানুনের প্রথম প্রচলন ঘটান উয়্যারই। শুধু তাই নয়, পরবর্তীসময়ে বিড়ালকে জনপ্রিয় করে তুলতে মূল ভূমিকা ছিল তাঁরই। এখনো তাই তাঁকে বিবেচনা করা হয় ‘বিড়ালপ্রেমের জনক’ হিসেবে।

পাশ্চাত্যে বিড়ালকে পোষা প্রাণী হিসেবে জনপ্রিয় করে তুলতে যে মানুষটি সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখেন তিনি হ্যারিসন উইলিয়াম উয়্যার। ছবি: সংগৃহীতপরে তাঁর আয়োজিত বিভিন্ন বিড়াল প্রদর্শনীতে অভিজাত শ্রেণির মানুষদের আমন্ত্রণ জানাতে থাকেন। এটিও ব্রিটিশদের মনে বিড়ালের একটি পাকাপোক্ত অবস্থান তৈরি করতে সাহায্য করে।

১৮৮৭ সালে ওয়ের প্রতিষ্ঠা করেন ন্যাশনাল কেট ক্লাব। তাঁর এই ন্যাশনাল কেট ক্লাবের প্রথম প্রদর্শনীতে উপস্থিতি ছিল ৩২০টি বিড়ালের।

১৮৯৫ সালে জন্ম নেওয়া ফুলমার জাইদা ১৫০টি বিড়াল প্রদর্শনীতে প্রথম হয়। ছবি: সংগৃহীতওয়্যার প্রদর্শনীতে প্রাপ্তবয়স্ক শাবক এবং আকার দ্বারা বিভক্ত ও বিচার করার বিষয়টি প্রচলন করেন। নিজের প্রথম ক্যাট শোর জন্য বিচারক ছিলেন নিজেই। তার বিচার প্রক্রিয়া অভিজাত জনতাকে মুগ্ধ করেছিল। বলা চলে, তাঁর প্রতিষ্ঠা করা ন্যাশনাল কেট ক্লাবের দেখানো পথ ধরেই বিড়ালেরা এখন যে আদর-আপ্যায়ন পায়, যুক্তরাজ্যে তা নির্ধারিত হয়।

একপর্যায়ে বিড়াল প্রদর্শনী জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠে যায়। ১৮৯৫ সালে জন্ম নেওয়া ফুলমার জাইদা এমন ১৫০টি বিড়াল প্রদর্শনীতে প্রথম হয়। এদিকে ১৮৯৫ সালে নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে প্রথম ন্যাশনাল ক্যাট শো অনুষ্ঠিত হয়।

১৯০০ সালে লন্ডনের রয়্যাল বোটানিক গার্ডেনে অনুষ্ঠিত একটি বিড়াল প্রদর্শনীতে অভিজাত নারীদের বিড়ালদের গলায় বাধা দড়ি ধরে থাকতে দেখা যায়। ছবি: সংগৃহীত১৯০০ সালে লন্ডনের রয়্যাল বোটানিক গার্ডেনে অনুষ্ঠিত একটি বিড়াল প্রদর্শনীও বেশ সারা ফেলে। এতে অভিজাত নারীদের বিড়ালদের গলায় বাধা দড়ি ধরে থাকতে দেখা যায়।

আর এভাবেই শুধু ইঁদুর শিকারি প্রাণী নয়, আদুরে পোষা প্রাণী হিসেবেও নিজের আসন পাকাপোক্ত করে নিল বিড়ালেরা।

সূত্র: ডেইলি মেইল, কেট ও পিডিয়া, গ্রেট কেট, হ্যারিসন ওয়্যার ডট কম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত