Ajker Patrika

বৃদ্ধের দাবি, ৬০ বছর ধরে ঘুমান না তিনি

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ৩০ জুন ২০২৩, ১২: ৩৪
Thumbnail image

ভিয়েতনামের ৮০ বছর বয়স্ক কৃষক থাই নগকের দাবি, ৬০ বছর ধরে ঘুমান না তিনি। যুবক বয়সে একবার জ্বরে ভোগার পর থেকে আর ঘুমাতে পারেননি তিনি। তবে এই ঘুমহীনতা তাঁর জীবনে বড় ধরনের কোনো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারেনি বলে জানান থাই নগক।

এমনিতে ঘুমহীন একটি দিনই বেশির ভাগ মানুষের জন্য রীতিমতো ভয়ংকর একটি ব্যাপার। অন্তত কয়েকটা ঘণ্টা আমাদের ঘুম চাই-ই চাই। কিন্তু ভিয়েতনামের কৃষক থাই নগকের ব্যাপারটি একেবারেই আলাদা। তাঁর দাবি, গত ৬০ বছর ধরে এক হিসেবে জেগেই আছেন তিনি। অবশ্য কখনো কখনো সামান্য তন্দ্রার মতো হয় না যে তা নয়। কিন্তু এই পর্যন্তই। নগকের এ ঘটনা অবশ্য কয়েক বছর আগ থেকেই তাঁর দেশের সংবাদমাধ্যমে আলোড়ন তোলে। এমনকি তাঁর এই নিদ্রাহীনতা নাকি আর দশটা সাধারণ মানুষের মতো সুখী-কর্মময় জীবন পালনেও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।

তাঁর স্ত্রী, সন্তান, বন্ধুবান্ধব প্রতিবেশীরাও এই কৃষককে ঘুমাতে দেখেননি। নগক জানান, বিষয়টি কখনোই তাঁর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি।

দক্ষিণ ভিয়েতনামের ছোট্ট এক গ্রামে থাকেন এই কৃষক‘আমি জানি না এই নিদ্রাহীনতা আমার স্বাস্থ্যের ওপর কোনো প্রভাব ফেলেছি কি ফেলেনি, তবে আমি এখনো সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এবং খামারে অন্যদের মতোই কাজ করতে পারি।’ ভিয়েতনামের ওয়েবসাইট থান নিন নিউজকে বলেন থাই নগক।

১৯৪২ সালে জন্ম নেওয়া থাই নগক দাবি করেন, ২০ বছর বয়সে প্রবল জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি। একপর্যায়ে সুস্থ হয়ে উঠলেও ঘুম বিষয়টি বিদায় নেয় তাঁর জীবন থেকে। নানা ধরনের ওষুধ, ভেষজ উপকরণসহ নানা কিছুর সাহায্য নিয়েও ঘুমটা ফিরিয়ে আনতে পারেননি বলে জানান এই বৃদ্ধ। একটা সময় পর্যন্ত আশা করছিলেন এই নিদ্রাহীনতাটা সাময়িক হবে, কিন্তু একে সঙ্গী করেই পার করে দিয়েছেন ছয়টা দশক।

৮০ বছর বয়স্ক থাই নগক একজন কৃষকসম্প্রতি ইউটিউবার ড্রিউ বিনস্কির নগকের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারের ভিডিও প্রকাশের পর পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষ তাঁর কথা আরও বেশি করে জানতে পারেন। ব্রনস্কি বলেন, ‘আমি বহু বছর আগে তাঁর কথা শুনেছিলাম। কিন্তু তাঁকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে কি না, বুঝতে পারিনি। কারণ কোথাও তিন থাকেন তা বলা হয়নি।’ শেষ পর্যন্ত অবশ্য আমেরিকার অ্যারোজিনা থেকে দুই দিনের ভ্রমণ শেষে দক্ষিণ ভিয়েতনামের ছোট্ট এক গ্রামে তাঁকে খুঁজে বের করেন বিনস্কি। তাঁর সঙ্গে গোটা একটা রাত কাটান বিনস্কি, সেই সময় ঘুমের কোনো আলামত দেখেননি বৃদ্ধের মধ্যে। নগক বিনস্কিকে জানান, গ্রিন টি আর রাইস ওয়াইন তাঁকে কর্মচঞ্চল থাকতে সহায়তা করে।

বিনস্কির অনুমান, বৃদ্ধের নিদ্রাহীনতার পেছনে ভিয়েতনাম যুদ্ধের ভূমিকা থাকতে পারে। অর্থাৎ যুদ্ধের কারণে পিটিএসডি বা পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারের কারণে নিদ্রাহীনতায় আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন তিনি। ১৯৫৫ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত যুদ্ধটা হয়, এ সময় নগকের একটি হাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ভিয়েতনামের এই কৃষকের দাবি, তাঁর এই নিদ্রাহীনতা আর দশটা সাধারণ মানুষের মতো সুখী–কর্মময় জীবন পালনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনিনগকের এই কাহিনি তাঁর দেশ ভিয়েতনামে প্রচণ্ড আলোড়ন তুলেছে। অনেকেই একে অতি আশ্চর্য এক বিষয় কিংবা এভাবে তাঁর জীবনধারণকে চমকপ্রদ এক ঘটনা ছাড়া আর কিছু মনে করছেন না। তবে কিছু কিছু চিকিৎসক মনে করেন, কখনো কিছুটা হলেও ঘুম হয় তাঁর। এমনকি এটা বুঝতেও পারেন না তিনি। যেমন স্লিপ সার্ভিসেস অস্ট্রেলিয়ার ড. বিকাশ ওয়াদওয়া বলেন, নিদ্রাহীনতায় আক্রান্ত কোনো কোনো ব্যক্তি জেগে থাকা ও ঘুমানোর পার্থক্য বোঝেন না। কাজেই ৮০ বছরের এই বৃদ্ধ দিনে হয়তো অল্প সময়ের জন্য কখনো কখনো ঘুমিয়ে পড়েন, যেটা তিনি টের পান না। আর এই সামান্য কিন্তু শক্তিশালী ঘুম বা তন্দ্রাই তাকে স্বাভাবিক জীবনযাপনে সাহায্য করে।

নগোক কখনো নিদ্রা বিষয়ে কোনো বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হননি। তাই তাঁর নিজের দাবি আর ঘনিষ্ঠদের কথার ওপরই আমাদের আস্থা রাখা ছাড়া উপায় নেই। অবশ্য বহু বছর ধরে ঘুমান না এমন দাবি তোলা একমাত্র ব্যক্তি নন তিনি। এর আগে এক চীনা নারীর কাহিনি সংবাদমাধ্যমে এসেছিল, যিনি ৪০ বছর ধরে ঘুমান না।

সূত্র: অডিটি সেন্ট্রাল, টাইমস নাউ নিউজ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত