Ajker Patrika

যে ফোনের ক্যামেরা–র‍্যাম পরিবর্তন করা যায়

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image

মড্যুলার ফোন বলতে এমন এক ধরনের স্মার্টফোন বোঝানো হয় যেটির অধিকাংশ হার্ডওয়্যার পরিবর্তন করা যায়। এ ধরনের ফোনে কোনো ফিচার হালনাগাদ বা উন্নত করতে চাইলে ব্যবহারকারী মন মতো তা পরিবর্তন করে নিতে পারেন। ফলে শুধু দু–একটি ফিচারের জন্য নতুন ফোন না কিনে যেমন খরচ কমানো যায়, তেমনি কমানো যায় ইলেকট্রনিক বর্জ্যও।

মড্যুলার ফোনকে তুলনা করা যেতে পারে অনেকটা ল্যাপটপ কম্পিউটারের সঙ্গে। ল্যাপটপের যেমন র‍্যাম, হার্ড ডিস্ক, ক্যামেরা, ব্যাটারি ইত্যাদি পরিবর্তন করা যায়; মড্যুলার ফোনও তেমনভাবে তৈরি।

বাজারের সব সংস্থার স্মার্টফোন প্রায় একই ধরনের। বেশ কয়েক বছর ধরে এ ক্ষেত্রে কোনো নতুনত্ব আসছে না। অ্যাপলের আইফোন, স্যামসাং, গুগলের পিক্সেল বা অন্য কোনো ব্র‍্যান্ডের অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন—এর সবগুলোর গঠন ও ডিজাইন প্রায় একই ধরনের। ঠিক এ জায়গাতেই পরিবর্তন আনতে চায় মড্যুলার ফোনের উদ্যোক্তারা। ব্যবহারকারীকে তাঁর ফোনের ফিচার বা হার্ডওয়্যার প্রয়োজন ও চাহিদামতো পরিবর্তন করে নেওয়ার সুযোগ দেওয়াই এই উদ্যোক্তাদের লক্ষ্য।

মড্যুলার ফোনে বিকল হয়ে যাওয়া অংশগুলো আলাদাভাবে পরিবর্তন করার সুযোগ থাকায় ফোনের মতো নিত্যব্যবহার্য ইলেকট্রনিক্স কেনার পেছনে খরচ কমে যায়। এর ফলে ইলেকট্রনিক বর্জ্যও কমে।

যেভাবে কাজ করে মড্যুলার ফোন
মড্যুলার ফোনের প্রধান অংশ হচ্ছে এর মূল কাঠামো। এতে বিভিন্ন স্লটে আলাদা যন্ত্রাংশ যুক্ত থাকে। এসব যন্ত্রাংশ আলাদাভাবে বিভিন্ন দামে বাজারে পাওয়া যায়। এই পরিবর্তনযোগ্য যন্ত্রাংশগুলোর মধ্যে আছে— ডিজিটাল ক্যামেরা, জিপিএস, স্টোরেজ, ব্যাটারি ইত্যাদি। এমনকি কেউ স্থায়িত্বের জন্য ক্যামেরার জায়গায় বাড়তি ব্যাটারি যোগ করতে পারেন। এই ভিন্ন মডিউলগুলো যুক্ত করার মাধ্যমে ব্যবহারকারী সম্পূর্ণ নিজের মনমতো কাস্টমাইজড স্মার্টফোন তৈরি করতে পারেন। 

এ ধরনের মড্য়ুলার ডিজাইনের কেন্দ্রে আছে এর অপারেটিং সিস্টেম। এসব ফোনের জন্য অপারেটিং সিস্টেমটিও বিশেষভাবে কাস্টমাইজ করা হয়। নতুন কোনো মডিউল ফোনে যুক্ত করলে অপারেটিং সিস্টেম সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করতে পারে। যেমন, ব্লুটুথ মডিউল যুক্ত করা হলে ড্রাইভার সফটওয়্যারটি সক্রিয় হয় এবং ফোনের স্ক্রিনে ব্লুটুথ অপশন দেখায়। 

মড্যুলার ফোনের সুবিধা কী? 
সাধারণ স্মার্টফোনের মতো কাজ করলেও মড্যুলার ফোনে বেশ কিছু বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। যেমন: 

আপডেট থাকা
প্রযুক্তির এ সময়ে কিছুদিন পরপর হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারে নতুনত্ব আসছে। নতুন ফিচার যুক্ত হচ্ছে। ফোনে নতুন আপডেটের সঙ্গে থাকে নতুন সব সুবিধা। এসব সুবিধা পেতে হলে নতুন ফোন বাজারে আসা বা সফটওয়্যার আপডেট আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।

কিন্তু মড্যুলার ফোনে অতো নির্ভরশীল থাকতে হয় না। মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান কোনো মডিউলের (হার্ডওয়্যার) হালনাগাদ সংস্করণ বাজারে আনতে পারে। ব্যবহারকারী সেটি কিনে নিজেই ফোনে সেটি প্রতিস্থাপন করতে পারেন। যেমন, আগের চেয়ে ভালো ডিজিটাল ক্যামেরা পেতে হলে নতুন ফোন না কিনে শুধু পুরোনো ক্যামেরার বদলে আপডেট ভার্সনের ক্যামেরা মডিউল প্রতিস্থাপন করলেই চলবে। 

তুলনামূলক কম মেরামত খরচ
ফোনের ব্যাটারি যদি নষ্ট হয়ে যায় তবে তা মেরামত করতে হলে আজকাল মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হয়। এর সঙ্গে আবার যুক্ত হয় পারিশ্রমিক। কিন্তু মড্যুলার ফোনের ক্ষেত্রে কম খরচে শুধু নষ্ট মডিউলটি পরিবর্তন করলেই চলে। এতে সময় ও অর্থ দুটোই বাঁচে। আবার নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত ব্যাটারির ক্ষমতা বাড়ানোর সুযোগও থাকে।
 
কম ইলেকট্রনিক বর্জ্য
মোবাইল ফোনে বেশ কয়েক ধরনের ক্ষতিকর উপাদান থাকে যা পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক। আর বছর বছর নতুন মোবাইল ফোন কেনা মানেই হলো ভাগাড়ে মোবাইল ফোনের স্তূপ জমা। মোবাইল ফোনটিকে এমন আলাদাভাবে হালনাগাদ করা গেলে আর সম্পূর্ণ ফোন ফেলে দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। ফলে আশা করা যায়, মানুষ একটি ফোন দীর্ঘদিন ব্যবহার করবে। এর ফলে স্মার্টফোন বর্জ্য কমবে। পুরোনো ফোনগুলোর পুনর্ব্যবহারও হবে।

শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই বছরে ১৫ কোটি মোবাইল ফোন ফেলে দেওয়া হয়। এদিকে একটি স্মার্টফোন তৈরিতে ৭ কেজি উচ্চমানের স্বর্ণের আকরিক, ১ কেজি সাধারণ তামার আকরিক, ৭৫০ গ্রাম টাংস্টেন আকরিক ও ২০০ গ্রাম সাধারণ নিকেলের আকরিক প্রয়োজন হয়। 

যুক্তরাজ্যে শুধু ১২ শতাংশ মোবাইল ফোন পুনর্ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ বিপুলসংখ্যক মোবাইল ফোন ভাগাড়ে যায়। বিশ্বে ইলেকট্রনিক বর্জ্য হয়ে উঠছে সবচেয়ে দ্রুত ঘনায়মান সংকট। যেখানে বছরে বৈশ্বিকভাবে প্রায় ৫ কোটি টন ইলেকট্রনিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়। 

নিজের মতো করে কাস্টমাইজ করা
মড্যুলার ফোনে নিজের পছন্দমতো চেহারা, আকার ও ফিচার দেওয়া যায়। এমনকি এর বাটনগুলোর (পাওয়ার, ভলিউম) অবস্থানও পরিবর্তন করা যায়। প্রয়োজন হলে পোর্টেবল প্রিন্টারও এ ফোনের সঙ্গে যুক্ত করা যায়। 

ধারণাটি নিঃসন্দেহে চমৎকার। তবে এখনো এর বাস্তবায়ন বেশ কঠিন বলেই প্রমাণিত হয়েছে। কারণ বেশ কয়েকটি সংস্থা মড্যুলার ফোনে বাজারে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। কয়েকটি সংস্থা এখনো মড্যুলার ফোনকে মেইন স্ট্রিম ফিচার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ যাবত যেকটি কোম্পানি মড্যুলার ফোন বাজারে এনেছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো:

গুগলের আরা প্রকল্প
মড্যুলার ফোনের সম্ভবত সবচেয়ে প্রকল্পটি হাতে নিয়েছিল গুগল। ২০১২ সালের দিকে হাতে নেওয়া এ উদ্যোগের নাম দেওয়া হয় আরা। গুগল বলেছিল, ২০১৭ সালের মধ্যে সাধারণ ব্যবহারকারীদের হাতে তারা মড্যুলার ফোন তুলে দিতে পারবে। তবে ২০১৬ সেপ্টেম্বর গুগল জানায় প্রকল্পটি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে। এ প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল— ব্যাটারি, ক্যামেরা এমনকি সিপিইউ পর্যন্ত মডিউল আকারে রাখা, যাতে ব্যবহারকারী নিজের মতো পরিবর্তন করতে পারেন। এর দাম রাখারা কথা ছিল মাত্র ১৫ মার্কিন ডলার!

 রেড হাইড্রোজেন
মড্যুলার ফোনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত রেড হাইড্রোজেনের দাম ১ হাজার ১৯৫ ডলার থেকে ১ হাজার ৫৯৫ ডলার। এ ফোনের বিশেষত্ব হলো— এতে ৪–ভিউ হলোগ্রাফিক ডিসপ্লে আছে, যাতে স্ক্রিনের থ্রিডি ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডও দেখা যায়। এ ছাড়া এতে আলাদা ব্যাটারি ও ক্যামেরার মতো মডিউল যোগ করার সুযোগ আছে। 

 এসেনশিয়াল ফোন
গুগলের সাবেক কর্মকর্তা অ্য়ান্ডি রুবিনকে বলা হয় অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের জনক। গুগলের চাকরি ছেড়ে নিজের ফোন কোম্পানি স্থাপন করেন। ২০১৭ সালের আগস্টে বাজারে আসা এ কোম্পানির একটি ফোন বেশ আলোচিত হয়। চিকন গড়ন ও বিলাসবহুল ডিজাইনের এ ফোনের পেছনটা চুম্বকীয়। ফলে পেছনের অংশে ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরার মতো এক্সেসরিজ যুক্ত করা যায়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ফোনটির ক্যামেরা তেমন ভালো নয়, ব্যাটারিও সন্তোষজনক নয় এবং এতে হেডফোন যুক্ত করার ব্যবস্থাও নেই। 

 ফেয়ারফোন ২ 
অন্যান্য মোবাইল ফোনের মতো তেমন আলোচিত না হলেও মেরামত যোগ্যতার জন্য বেশ সুনাম কুড়োচ্ছে ফেয়ারফোন। ২০১৩ সালে বাজারে আসা ফেয়ারফোন সামাজিক সচেতনতা ও নৈতিকভাবে মোবাইল ফোন উৎপাদনের ওপর জোর দেয়। এ ফোনের প্রত্যেকটি অংশ সহজে মেরামত করা যায় ও হালনাগাদ করা যায়। ছোট এ সংস্থাটি ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে তাদের ক্যামেরা মডিউলের প্রথম সংস্করণ বাজারে আনে। 

এ ছাড়া, এলজি জি ৫, মটোরোলা মোটো জি২ ফোর্স এবং মোটো জি২ প্লে বাজারে এলেও শেষ পর্যন্ত এই দুই কোম্পানি আর মড্যুলার ফোন বানায়নি। 

মড্যুলার ফোন কি ব্যর্থ
মড্যুলার ফোন এখন পর্যন্ত জনপ্রিয় না হওয়ার বেশি কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে একটি বড় কারণ হলো— এর দাম। এখনো বাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে কোনো কোম্পানিই মড্যুলার ফোন বানাতে পারেনি। তাছাড়া সাধারণ ব্যবহারকারীরা ডিভাইস কাস্টমাইজ করতে চান না, তাঁরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত একটি ডিভাইস চান। আর এখন পর্যন্ত বাজারে আসা মড্যুলার ফোনগুলোর ক্যামেরা, ব্যাটারির মতো  হাতে গোনা কয়েকটি মডিউল পরিবর্তন করা যায়। তার মানে, র‍্যাম, সিপিইউ বা মাদারবোর্ড পরিবর্তন করা যায় না। অর্থাৎ এই হার্ডওয়্যারের কোনোটি নষ্ট হলে নতুন ফোনই কিনতে হবে।

তথ্যসূত্র: সাগা ম্যাগাজিন ও সি–নেট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত