Ajker Patrika

দেশের সড়কে ইলেকট্রিক গাড়ি অডি ই-ট্রন

আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৩, ২৩: ২৪
Thumbnail image

অডির ইলেকট্রিক গাড়ি ‘ই-ট্রন’ চলছে দেশের রাস্তায়। প্রোগ্রেস মোটরস ইম্পোর্টস লিমিটেড পরিবেশবান্ধব এ গাড়ি বাজারজাত করেছে। এ প্রতিষ্ঠানটি দেশের বাজারে অডির একমাত্র পরিবেশক। এই গাড়িগুলোর দাম ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। বৈদ্যুতিক এই গাড়ি একবার চার্জ দিলে চালানো যায় ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। গাড়ি স্টার্ট নেওয়ার পর খুব কম সময়ে বাড়ানো যায় এর গতি। এই গাড়ি নিয়ে অলকানন্দা রায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশে প্রোগ্রেস মোটরস ইম্পোর্টস লিমিটেডের বিপণন বিভাগের প্রধান সাফায়েত বিন তৈয়ব

ঢাকা শহর ইলেকট্রিক গাড়ির জন্য কতটা উপযোগী?
ঢাকা শহরে ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যবহার করা বেশ সুবিধাজনক। কারণ এতে আমাদের পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের  ঝুঁকি নেই। ইলেকট্রিক গাড়ি সামান্য বিদ্যুৎ শক্তিতে চলে বলে পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে না। ইলেকট্রিক গাড়ি চালানোর জন্য কোনো ফুয়েল বা ডিজেল ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয় না। এগুলো বায়ু দূষণ করে না। ফলে মানুষের ফুসফুস বা হার্টের সমস্যা কমিয়ে আনবে।

এই ইলেকট্রিক গাড়ি কি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) অধীনে নিবন্ধিত?

ইলেকট্রিক গাড়িগুলো বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) অধীনে ইভি ক্যাটাগরিতে নিবন্ধিত প্রথম গাড়ি।

অন্য গাড়ি থেকে ইলেকট্রিক গাড়ি ব্যবহারের সুবিধা কী?
বাংলাদেশের জন্য ইলেকট্রিক গাড়ির বড় সুবিধা হলো, এই গাড়িগুলো অনেক সাশ্রয়ী। একটি ইঞ্জিনের গাড়ির চেয়ে এগুলো ৩০ শতাংশ পর্যন্ত সাশ্রয়ী হতে পারে। এগুলো পরিবেশবান্ধব। কারণ এই গাড়িগুলো কার্বন নিঃসরণ করে না।

এসব গাড়ির ফিচার বিষয়ে কিছু বলুন?
অডি ই-ট্রনে আছে ৩৬০ ডিগ্রি সারাউন্ড ভিউ ক্যামেরা, প্যানারোমিক সানরুফ, অ্যাডাপটিভ এয়ার সাসপেনশন। তা ছাড়া আছে ৩১৩ হর্স পাওয়ার ও ৫৪০ নিউটন-মিটার টর্কের সম্পূর্ণ দুটি ইলেকট্রিক্যাল মোটর, যা গাড়িটিকে ০ থেকে ১০০ কিলো বা ঘণ্টা গতিবেগ ৭ সেকেন্ডে তুলে ফেলতে সাহায্য করে। এ ছাড়া এতে আছে প্রিমিয়াম ভালকোনা লেদার সিট ও ব্যাং এবং ওলুফসেনের প্রিমিয়াম সাউন্ড সিস্টেম ইত্যাদি।

প্রযুক্তিগত সুবিধাগুলো কী কী? নতুনত্ব কী আছে?
অডি ই-ট্রন হলো একটি সর্ব-ইলেকট্রিক এসইউভি, যা ২০১৯ সালে প্রথম চালু করা হয়। এরপর থেকে মডেলটি আপডেট করা হয়েছে। অডি ই-ট্রনে কিছু আধুনিক প্রযুক্তি যোগ করা হয়েছে। যেমন:

ডুয়াল-মোটর সিস্টেম: এই সিস্টেম অল-হুইল ড্রাইভের সুবিধা দেবে এবং ৩১৩ হর্স পাওয়ার ও ৫৪০ নিউটন-মিটার টর্ক সরবরাহ করে।

দ্রুত চার্জিং: ই-ট্রন একটি দ্রুত-চার্জিং সিস্টেম ব্যবহার করে চার্জ করা যায়। এ কারণে মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে ৮০ শতাংশ চার্জ হয়।

অ্যাডভান্সড ড্রাইভার অ্যাসিস্ট্যান্স সিস্টেম (এডিএএস): ই-ট্রনে অ্যাডাপটিভ ক্রুজ কন্ট্রোল, লেন ডিপার্চার ওয়ার্নিং এবং স্বয়ংক্রিয় জরুরি ব্রেকিংসহ এডিএএস বৈশিষ্ট্যগুলোর সংযোগ রয়েছে।

অডি ভার্চুয়াল ককপিট: ই-ট্রনে অডির ভার্চুয়াল ককপিট রয়েছে। একটি ডিজিটাল যন্ত্র ক্লাস্টার, যা একটি উচ্চ-রেজ্যুলেশন স্ক্রিনে গতি, পরিসর এবং নেভিগেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদর্শন করে।

রিজেনারেটিভ ব্রেকিং: এতে আছে রিজেনারেটিভ ব্রেকিং সিস্টেম, যা ব্রেক করার সময় নষ্ট হয়ে যাওয়া শক্তি ক্যাপচার করে এবং ব্যাটারি রিচার্জ করতে ব্যবহার করে।

সামগ্রিকভাবে অডি ই-ট্রন প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত বৈদ্যুতিক এসইউভি।

গ্যারান্টি বা ওয়ারেন্টি-সুবিধা কেমন?
অডি ই-ট্রনে রয়েছে আট বছরের ব্যাটারির ওয়ারেন্টি। এ ছাড়া রয়েছে দুই বছরের ম্যানুফ্যাকচারিং ওয়ারেন্টি। ওয়ারেন্টিটি পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়ানোর সুযোগ আছে।

এই গাড়িগুলোর সার্ভিসিং সেবা কেমন এবং কোথায় দেওয়া হয়?
সব ইলেকট্রিক গাড়ির একটি বড় সুবিধা হলো, এই গাড়িগুলোর মেইনটেন্যান্স খরচ একটি তেলের ইঞ্জিনের গাড়ির তুলনায় কম। অন্য সব গাড়ির মতো অডি ই-ট্রনের জন্য ছয় মাস অন্তর জেনারেল সার্ভিসিং করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। জেনারেল সার্ভিসিংয়ে শুধু ফিল্টার পরিবর্তন এবং ব্রেক ও ব্যাটারি চেকআপ করা হয়। যেহেতু ইঞ্জিন তেল ও ট্রান্সমিশনসংক্রান্ত কোনো পার্টস নেই, তাই জেনারেল সার্ভিসিংয়ে বড় একটা খরচ বেচে যায়। অডি ই-ট্রনের সার্ভিসিং বর্তমান শুধু অডি বাংলাদেশের তেজগাঁওয়ের সার্ভিস সেন্টারে করা যাচ্ছে। সব ইলেকট্রিক গাড়ি সার্ভিসিংয়ের জন্য অডি বাংলাদেশ বিদেশি অভিজ্ঞ মাস্টার এবং টেকনিশিয়ান নিযুক্ত করেছে। এ ছাড়া অডি ই-ট্রনের সব পার্টস বাংলাদেশের অডি অথরাইজড সার্ভিস সেন্টারে কিনতে পাওয়া যাবে। 

চার্জিং-সুবিধা এবং চার্জিং স্টেশন?
অডি ই-ট্রনে রয়েছে ৭১ কিলোওয়াট ঘণ্টার ব্যাটারি। এক চার্জে একজন ব্যবহারকারী বা চালক ৩০০ কিলোমিটার চালাতে পারবেন। অডি ই-ট্রনের সঙ্গে একটি ১১ কিলো ওয়াটের (৩ ফেজ ১৬ অ্যাম্পিয়ার ৪০০ ভোল্ট) ই-ভি চার্জার আছে, যা দিয়ে গাড়িটি শূন্য থেকে সম্পূর্ণ চার্জ করতে ৮ ঘণ্টা লাগবে। অর্থাৎ একজন ব্যবহারকারী এক রাতের পুরো চার্জে ৩০০ কিলোমিটার চালাতে পারবেন। বাসার পার্কিংয়ে একটি ৩ ফেজের বৈদ্যুতিক সংযোগ দিয়ে গাড়িটি চার্জ করতে পারবেন। তা ছাড়া অডি সার্ভিস সেন্টারে ৬০ কিলো ওয়াটের দ্রুতগতির চার্জার রয়েছে, যা দিয়ে একটি অডি ই-ট্রন ৪০ মিনিটে পুরো চার্জ করা যাবে। ঠিক এ রকম এবং এর চেয়ে আরও বড় চার্জার সারা দেশে স্থাপন করা হচ্ছে।

বিক্রি কেমন হচ্ছে?
অডি বাংলাদেশ খুব ভালো সাড়া পেয়েছে তাদের সম্পূর্ণ ইলেকট্রিক গাড়ি অডি ই-ট্রনের জন্য। গত জানুয়ারিতে উদ্বোধনের পর এ পর্যন্ত ২৩টি গাড়ি সারা দেশে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি হয়েছে। আগামী মাসগুলোতে নতুন করে ৩০টির মতো গাড়ি আমদানি করতে যাচ্ছে অডি বাংলাদেশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত