Ajker Patrika

ডায়মন্ড চ্যালেঞ্জের চূড়ান্ত পর্বে বাংলাদেশের দুই ভাই

মোস্তাফিজ মিঠু, ঢাকা
শাফি বিন সুলতান ও সাবিক বিন সুলতান
শাফি বিন সুলতান ও সাবিক বিন সুলতান

সুস্থ থাকতে প্রতিদিন প্রয়োজন বিশুদ্ধ পানি। কিন্তু সেই পানি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কারণে দূষিত হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন রোগব্যাধি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। শহর কিংবা গ্রাম—প্রায় সবখানে প্রতিটি স্তরে পানির গুণগত মান নিয়ে চিন্তা থাকে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড় কিংবা দুর্যোগকালে অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়।

এই সংকটের সহজ সমাধান করতে নেমে পড়েছেন শাফি বিন সুলতান ও সাবিক বিন সুলতান নামের দুই ভাই। পানি পরিশোধন প্রযুক্তি ‘ব্লুশিল্ড ফিল্টার’ উদ্ভাবন করেছেন তাঁরা। এই উদ্ভাবন তাঁদের নিয়ে গেছে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ডায়মন্ড চ্যালেঞ্জ ২০২৫-এর চূড়ান্ত পর্বে। এখন তাঁরা সেই প্রতিযোগিতার শীর্ষ পাঁচে অবস্থান করছেন।

বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো দল ডায়মন্ড চ্যালেঞ্জের মতো মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছাতে পারল। প্রতিযোগিতার আন্তর্জাতিক ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয় যুক্তরাষ্ট্রে। এবারের চূড়ান্ত পর্বটি ১ ও ২ মে লিমিটলেস ওয়ার্ল্ড সামিট ২০২৫-এর অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়্যার বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত হবে। শাফি ও সাবিক সেখানেই তাঁদের উদ্ভাবিত ব্লুশিল্ড ফিল্টার প্রযুক্তিটি উপস্থাপন করবেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী, উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের সামনে।

ডায়মন্ড চ্যালেঞ্জ একটি বৈশ্বিক উদ্যোক্তা প্রতিযোগিতা। এটি মূলত হাইস্কুল এবং কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজন করা হয়। প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়্যার বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্ন এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ সেন্টার এই আয়োজন করে।

ব্লুশিল্ড ফিল্টারের বিশেষত্ব ব্লুশিল্ড ফিল্টার নতুন ধরনের এক প্রযুক্তি। এর সঙ্গে ঘরোয়া ব্যবহারের সাধারণ রিভার্স অসমসিস (আরও) ফিল্টারের কোনো মিল নেই। এই প্রযুক্তি গবেষণাভিত্তিক, পরিবেশবান্ধব এবং বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে জলাবদ্ধ, বন্যাপ্রবণ কিংবা পানির সংকটে ভোগা অঞ্চলের জন্য। সাধারণত বাসায় ব্যবহার করা রিভার্স অসমসিস ফিল্টারগুলোতে ১ কিউবিক সেন্টিমিটার পানি বিশুদ্ধ করতে ৩ থেকে ৭ কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ খরচ হয়। কিন্তু ব্লুশিল্ড ফিল্টার প্রযুক্তিতে বিদ্যুৎ খরচ প্রায় নেই বললেই চলে। শুধু ইউভিসি জীবাণুমুক্ত করার জন্য ৫ থেকে ১২ ওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হয় এবং পানিপ্রবাহে সহায়তার জন্য একটি স্বল্প ক্ষমতার ওয়াটার পাম্প ব্যবহৃত হয়।

এতে ব্যবহৃত বিশেষভাবে উন্নত মেমব্রেন নিজস্ব গবেষণার মাধ্যমে তৈরি করেছেন শাফি বিন সুলতান ও সাবিক বিন সুলতান। এই মেমব্রেন স্বাভাবিক গ্রাভিটেশনের মাধ্যমে পানি পরিশোধন করে। তাই বাড়তি বিদ্যুৎ ব্যবহারের দরকার হয় না। শাফি বিন সুলতান বলেন, ‘আমাদের প্রযুক্তি বাসাবাড়িতে ব্যবহারের চেয়ে বেশি পরিমাণে পানি পরিশোধনের জন্য আরও বেশি কার্যকর।’

প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ

ডায়মন্ড চ্যালেঞ্জ ২০২৫-এর বিজনেস ইনোভেশন বিভাগে অংশ নিয়েছেন শাফি বিন সুলতান ও সাবিক বিন সুলতান। এই বিশ্ববিখ্যাত উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতায় ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী স্কুল শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্ভাবনী ধারণা এবং ব্যবসায়িক প্রকল্প উপস্থাপন করে। ২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে এই প্রতিযোগিতায় যাত্রা শুরু হয় শাফি ও সাবিকের। মূলত তিনটি ধাপে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এবারের ডায়মন্ড চ্যালেঞ্জে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭টি অঙ্গরাজ্য এবং ৭৩টি দেশের ৩ হাজার ৩৯৮ জন প্রতিযোগী অংশ নেন। প্রতিযোগীদের নিয়ে গঠিত ১ হাজার ২০০টি দলের মধ্যে ৩৮টি দল ফাইনালে পৌঁছায়। দলগুলোর মধ্যে শাফি-সাবিকের দল ব্যবসায়িক উদ্ভাবন বিভাগে শীর্ষ পাঁচে জায়গা করে নেয়।

উদ্ভাবনী পরিকল্পনা

আমাদের দেশে জলাবদ্ধতা বা বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেই বিশুদ্ধ পানির জন্য মানুষের হাহাকার দেখা যায়। এই বাস্তব অভিজ্ঞতা ভাবিয়ে তোলে শাফি ও সাবিককে। তাঁদের ভাবনায় থাকে, কীভাবে সহজে এবং কম খরচে পানি বিশুদ্ধ করা যায়। ছোটবেলা থেকে এই দুই ভাইয়ের প্রযুক্তি

ও বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহ প্রবল। সেই আগ্রহ, বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং সমাজের জন্য ভালো কিছু করার ইচ্ছা থেকেই ব্লুশিল্ড ফিল্টার প্রকল্পের সূচনা। তাঁদের বাবা সুলতান মোহিউদ্দিন ভূঁইয়া একজন অভিজ্ঞ ফিন্যান্স প্রফেশনাল। তিনি দুই সন্তানকে দিকনির্দেশনা দিয়ে এই পথে সাহায্য করেছেন। শাফি ও সাবিক জানান, গবেষণা ও পেটেন্টের জটিলতায় প্রযুক্তির পূর্ণ বিবরণ তাঁরা এখনই প্রকাশ করতে চান না।

দেশের বাজারে ব্লুশিল্ড ফিল্টার

শাফি ও সাবিকের লক্ষ্য, এই প্রযুক্তিকে কেবল প্রতিযোগিতার পরিসরে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা। বাংলাদেশের যেসব অঞ্চল নিয়মিত জলাবদ্ধতা, জোয়ারের পানি প্রবেশ এবং বন্যার কারণে বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভোগে, সেই এলাকাগুলোর জন্য ব্লুশিল্ড ফিল্টার হতে পারে দারুণ সমাধান। শাফি ও সাবিক জানান, তাঁরা এই প্রযুক্তিকে ব্যবসায়িক রূপ দিয়ে ব্যাপক পরিসরে নিয়ে যেতে চান; যাতে দুর্যোগপীড়িত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য স্বল্প খরচে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা যায়। নিজেদের এই উদ্ভাবনকে তাঁরা শুধু দেশের বাজারেই নয়, আন্তর্জাতিক পরিসরে নিয়ে যেতে চান। আফ্রিকার যেসব অঞ্চল নিয়মিত বন্যা বা জলাবদ্ধতায় বিশুদ্ধ পানির স্বল্পতায় বিপর্যস্ত, সেসব জায়গায়ও এই প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন শাফি বিন সুলতান ও সাবিক বিন সুলতান।

এরই মধ্যে ব্লুশিল্ড ফিল্টার প্রযুক্তির জন্য আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা প্রস্তাব দিয়েছেন সাফি ও সাবিককে। তবে তাঁদের চোখ এখন ডায়মন্ড চ্যালেঞ্জ চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফিতে। দুই ভাইয়ের স্বপ্ন, এই জয় যেন বাংলাদেশের তরুণদের জন্য নতুন পথের সূচনা করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জাতিসংঘে চিঠি লিখলেন মোগল সম্রাটের বংশধর, সুরক্ষা চাইলেন আওরঙ্গজেবের সমাধির

সেভেন সিস্টার্সে বিনিয়োগ টানতে বিশেষ সম্মেলন আয়োজন করছে ভারত

কবি রফিক আজাদের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি ভেঙে ফেলা হচ্ছে

বাংলাদেশিদের জীবন ধ্বংসকারী সমস্যা মোকাবিলায় গণতন্ত্র-নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ: যুক্তরাষ্ট্র

আফ্রিকা থেকে পিঁপড়া যাচ্ছে ইউরোপে, কেনিয়ার বিমানবন্দরে জব্দ কয়েক লাখ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত