Ajker Patrika

অ্যাপলের লোগোতে কামড়ের চিহ্নের সঙ্গে আদম-হাওয়ার গল্পের সম্পর্ক আছে কি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অ্যাপলের লোগো হলো—একটি কামড় দেওয়া আপেল। ছবি: সংগৃহীত
অ্যাপলের লোগো হলো—একটি কামড় দেওয়া আপেল। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান সময়ে প্রযুক্তি জগতে অ্যাপল সম্ভবত সবচেয়ে বেশি পরিচিত এবং প্রভাবশালী একটি প্রতিষ্ঠান। উদ্ভাবনী শক্তি, সাধারণ ডিজাইন এবং উচ্চমানের পণ্যের জন্য অ্যাপলের আলাদা একটি খ্যাতি রয়েছে। আজকের দিনে অ্যাপল শুধু একটি হার্ডওয়্যার নির্মাতা নয়, বরং এটি একটি সাংস্কৃতিক প্রতীক। প্রতিটি নতুন আইফোন বা ম্যাকবুকের উন্মোচন এখন একটি বড় আয়োজন হয়ে দাঁড়ায়।

অ্যাপলের লোগো হলো—একটি কামড় দেওয়া আপেল। এটি বিশ্বের অন্যতম সেরা পরিচিত লোগো। তবে এই লোগোর পেছনের অর্থ অনেকেই জানেন না। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা মজার তথ্য, জনশ্রুতি ও তত্ত্ব। কেউ বলেন এটি কম্পিউটার বিজ্ঞানের জনক এলান টিউরিংকে স্মরণ করে বানানো, কেউ বলেন এটি নিউটনের গল্প থেকে অনুপ্রাণিত, আবার কেউ বলেন এটি আদম-হাওয়ার নিষিদ্ধ ফলের প্রতীক। তবে এই লোগো তৈরির পেছনের গল্পটি অনেকটাই সাধারণ।

নিউটন, আপেল আর নামের উৎপত্তি

বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনের গল্পটি প্রায় সবাইরই জানা। বলা হয়ে থাকে—গাছ থেকে আপেল পড়তে দেখে নিউটনের মনে মাধ্যাকর্ষণ নিয়ে ভাবনা জাগে।

১৯৭৬ সালের অ্যাপলের প্রথম লোগোতে সেই বিষয়টিই তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে আইজ্যাক নিউটনকে একটি আপেল গাছের নিচে বসে থাকতে দেখা যায়।

এই লোগোর মাধ্যমে নিউটনের সেই বিখ্যাত কাহিনির প্রতি সম্মান জানানো হয়। তবে অনেকের বিশ্বাস, অ্যাপলের নামটিও নিউটনের নামের সূত্র ধরে রাখা হয়েছে। তবে অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস তাঁর জীবনী লেখক ওয়াল্টার আইজ্যাকসনকে জানান, তিনি তখন ফলভিত্তিক ডায়েটে ছিলেন এবং একটি আপেল বাগানে ঘুরতে গিয়ে ‘অ্যাপল’ নামটি তাঁর মাথায় আসে। তাঁর মতে, নামটি ছিল তখন সবচেয়ে প্রাণবন্ত এবং অনুপ্রাণিত একটি শব্দ। পরে তাঁর সঙ্গী স্টিভ ওজনিয়াক নিউটনের গল্পটির সঙ্গে নামটিকে যুক্ত করেন এবং সেই অনুযায়ী লোগো তৈরি করেন।

এই লোগোর মাধ্যমে নিউটনের সেই বিখ্যাত কাহিনির প্রতি সম্মান জানানো হয়। ছবি: অ্যাপল
এই লোগোর মাধ্যমে নিউটনের সেই বিখ্যাত কাহিনির প্রতি সম্মান জানানো হয়। ছবি: অ্যাপল

আদম-হাওয়ার নিষিদ্ধ ফল

আরেকটি জনপ্রিয় ব্যাখ্যা হলো, এই লোগো আদম ও হাওয়ার নিষিদ্ধ ফলের প্রতীক। বাইবেল অনুসারে, আদম ও হাওয়া ‘জ্ঞান বৃক্ষের’ ফল খাওয়ার পর তাঁরা জ্ঞান ও সচেতনতা লাভ করেন। অনেকে মনে করেন, অ্যাপল এই প্রতীক ব্যবহার করে মানুষকে জ্ঞানের পথে নিয়ে যেতে চায়। তবে অ্যাপল এবং লোগো ডিজাইনার রব জ্যানফ উভয়েই এই ব্যাখ্যাকে অস্বীকার করেছেন।

এলান টিউরিংকে সম্মান জানিয়ে

সবচেয়ে আলোচিত এবং আবেগঘন একটি তত্ত্ব হলো—অ্যাপলের লোগোটি কম্পিউটার বিজ্ঞানের জনক এলান টিউরিংকে সম্মান জানিয়ে তৈরি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি কোড ভেঙে ফেলায় তিনি বিশ্ব ইতিহাসে বিশেষ জায়গা করে নেন।

১৯৫২ সালে সমকামিতার অভিযোগে যুক্তরাজ্যে টিউরিংকে দণ্ডিত করা হয়।  ছবি: ব্রিটানিকা
১৯৫২ সালে সমকামিতার অভিযোগে যুক্তরাজ্যে টিউরিংকে দণ্ডিত করা হয়। ছবি: ব্রিটানিকা

১৯৫২ সালে সমকামিতার অভিযোগে যুক্তরাজ্যে টিউরিংকে দণ্ডিত করা হয়। কারাবরণের পরিবর্তে তিনি হরমোন থেরাপি গ্রহণ করেন, যা তাঁকে মানসিক ও শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। ১৯৫৪ সালে এলান টিউরিং সায়ানাইড বিষক্রিয়ায় মারা যান। তাঁর মৃতদেহের পাশে একটি অর্ধেক খাওয়া আপেল পাওয়া যায়। এর পর থেকেই ধারণা তৈরি হয়, অ্যাপলের কামড় দেওয়া লোগোটি তাঁর স্মরণে তৈরি।

এমনকি ১৯৭৭ সালে উন্মোচন হওয়া রংধনু রঙের অ্যাপল লোগোটি অনেকেই সমকামী সম্প্রদায়ের গর্বের প্রতীক বলে মনে করেন। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। লোগোর রং দেওয়া হয়েছিল নতুন ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে রঙিন ডিসপ্লে চালুর খবর জানানোর উদ্দেশ্যে। ডিজাইনার রব জ্যানফ বলেন, এলান টিউরিং সম্পর্কে তিনি তখন কিছুই জানতেন না।

আসল কারণ: সাধারণ একটি সিদ্ধান্ত

২০০৯ সালে ক্রিয়েটিভ বাইটসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব তত্ত্ব সম্পর্কে তাঁর মত জানান অ্যাপলের লোগো ডিজাইনার রব জ্যানফ। তিনি স্পষ্টভাবে নিউটন, বাইবেল এবং টিউরিং তত্ত্বগুলোকে অস্বীকার করেন। অ্যাপলের লোগো ডিজাইনের জন্য স্টিভ জবস তাঁকে কোনো নির্দেশনাও দেননি বলে জানান তিনি।

জ্যানফ বলেন, লোগো ডিজাইনের সময় অ্যাপলের পক্ষ থেকে তাঁকে বিশেষ কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তাই তিনি পুরোপুরি নিজস্ব চিন্তায় একটি সহজ, পরিষ্কার এবং যুগোপযোগী লোগো তৈরি করেন।

তবে আপেলটির কামড় দেওয়া অংশটি কেন রাখা হলো তা জানতে চাইলে জ্যানফ ব্যাখ্যা দেন, এটি রাখা হয় যেন লোগোটি আপেল বলেই স্পষ্ট বোঝা যায়—লোগোটি চেরি বা অন্য ফলের নয়।

আর ইংরেজি ‘bite’ (কামড় দেওয়া) শব্দটির সঙ্গে কম্পিউটারের ‘byte’ শব্দের মিলও ছিল নিছক কাকতালীয়।

তথ্যসূত্র: বিজিআর ডট কম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত