Ajker Patrika

পানির ভেতরে থ্রিডি প্রিন্টিং কৌশল উদ্ভাবন, ইলেকট্রনিকস হবে পরিবেশবান্ধব

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২৫, ১২: ৩৭
সাধারণ প্রিন্টিংয়ের ক্ষেত্রে প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। ছবি: প্রতীকী ছবি
সাধারণ প্রিন্টিংয়ের ক্ষেত্রে প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। ছবি: প্রতীকী ছবি

পানির ভেতরে থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের অভিনব কৌশল উদ্ভাবন করলেন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি অ্যান্ড ডিজাইনের (এসইউটিডি) একদল গবেষক। বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, কীভাবে গাছ থেকে তৈরি ‘প্লাস্টিক’ ও পেনসিলের গ্রাফাইট ব্যবহার করে পানি ভেতরে ৩ডি প্রিন্টিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পরিবাহী উপাদান বানানো সম্ভব। তাই এখন পরিবেশবান্ধব হতে পারে ইলেকট্রনিকস। তাদের এই নতুন পদ্ধতি শুধু টেকসই নয়, বরং জটিল আকৃতির নমনীয় সার্কিট ও সেন্সর তৈরি করার পথও করে দিচ্ছে সহজ।

সাধারণত ইলেকট্রনিকস তৈরি করতে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্লাস্টিক ও ধাতু ব্যবহার করা হয়, যেগুলো পুনর্ব্যবহার করা কঠিন। তবে এসইউটিডি দলের নতুন উদ্ভাবনে ব্যবহার করা হয়েছে সেলুলোজ অ্যাসিটেট, যা উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায় এবং সহজেই পরিবেশে মিশে যেতে পারে।

তবে এই উপাদান তাপ সহ্য করতে পারে না, যেটা বেশির ভাগ ৩ডি প্রিন্টারে প্রিন্টিংয়ের জন্য প্রয়োজন। আবার তরল ফিল্ম ঢালার পদ্ধতিতে সূক্ষ্ম ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ তৈরি করা যায় না।

এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে গবেষকেরা ব্যবহার করেছেন ডাইরেক্ট ইংক রাইটিং নামের একটি কৌশল, যেখানে স্বাভাবিক ঘরের তাপমাত্রাতেই প্রিন্ট করা যায়।

এই সক্ষমতা অর্জন করতে প্রথমে তাঁরা তৈরি করেন এক বিশেষ ‘ইংক’, যা অ্যাসিটোনের সেলুলোজ অ্যাসিটেট দ্রবীভূত করে এবং তাতে গ্রাফাইট (পেনসিলে ব্যবহৃত উপাদান) মিশিয়ে তৈরি করা হয়। গ্রাফাইটের কারণে ইংকটি বিদ্যুৎ পরিবাহী হয়ে ওঠে।

উল্লেখ্য, ‘ইংক’ হলো একধরনের তরল মিশ্রণ, যা কোনো বস্তু বা গঠন প্রিন্ট করার জন্য ৩ডি প্রিন্টারে ব্যবহার করা হয়। তবে শুরুতে সমস্যা দেখা দেয়—পানি ছাড়া প্রিন্ট করলে ইংক ছড়িয়ে পড়ে, কাঙ্ক্ষিত আকৃতি ধরে না।

ফলে প্রিন্ট করা বস্তু বিদ্যুৎ পরিবাহী হয়ে এলইডি বাতি চালানোর মতো শক্তি রাখে, ছবি: এসিএস অ্যাপ্লাইড ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যাটেরিয়ালস
ফলে প্রিন্ট করা বস্তু বিদ্যুৎ পরিবাহী হয়ে এলইডি বাতি চালানোর মতো শক্তি রাখে, ছবি: এসিএস অ্যাপ্লাইড ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যাটেরিয়ালস

অবশেষে গবেষকেরা এক অভিনব সমাধান খুঁজে পান—তাঁরা ইংকটি পানির ভেতরে প্রিন্ট করতে শুরু করেন। পানিতে অ্যাসিটোন দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ায় (প্রক্রিয়াটি ইমারশন প্রিসিপিটেশন নামে পরিচিত) ইংক তৎক্ষণাৎ জমে যায় এবং সঠিক আকারে রূপ নেয়।

ফলে প্রিন্টিং হয় পরিষ্কার, নিখুঁত ও ঝামেলামুক্ত।

এই পদ্ধতির সবচেয়ে চমকপ্রদ দিক হলো—তাতে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত গ্রাফাইট ব্যবহার করা সম্ভব হয়েছে, যা সাধারণ প্রিন্টিংয়ের তুলনায় অনেক বেশি। এর ফলে প্রিন্ট করা বস্তু বিদ্যুৎ পরিবাহী হয় এলইডি বাতি চালানোর মতো শক্তি রাখে, আবার নমনীয় হওয়ায় বাঁকানো সার্কিট বা সেন্সরে ব্যবহার সম্ভব।

এ ছাড়া গবেষকেরা দেখিয়েছেন, একধরনের জেল ব্যবহার করে জটিল আকৃতির (যেমন: সর্পিল আকৃতি) প্রিন্টও সম্ভব, বাড়তি কোনো সহায়তা ছাড়াই।

যেহেতু এতে ব্যবহৃত উপাদানগুলো বায়োডিগ্রেডেবল এবং অ্যাসিটোন দ্রুত বাষ্প হয়ে যায়, তাই পদ্ধতিটি পরিবেশবান্ধব এবং নিরাপদও বটে।

গবেষকেরা এখন এই প্রযুক্তিতে আরও প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার ও ব্যবহারিক পরীক্ষার পরিকল্পনা করছেন। তাঁদের লক্ষ্য কম খরচে, সহজে তৈরি করা যায় এমন পরিবেশবান্ধব, নমনীয় ইলেকট্রনিকস তৈরি করে একটি টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা।

গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে ‘এসিএস অ্যাপ্লায়েড ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যাটেরিয়ালস’ নামক জার্নালে।

তথ্যসূত্র: নো রিডজ সায়েন্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত