Ajker Patrika

যুক্তরাজ্যে হামলার সাইবার সতর্কতা

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image
যুক্তরাজ্যের সাইবার পরিসরে অপরাধমূলক কাজ অনেক বেড়ে গিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যে সাইবার হামলা বেড়ে গিয়েছে। ২০২৪ সালে গতবছরের চেয়ে ১৬ শতাংশ বেশি সাইবার অপরাধ সামলাতে হয়েছে বলে জানালেন দেশটির সাইবার নিরাপত্তা প্রধান রিচার্ড হন। তিনি আরও বলেন, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৪৩০টি সাইবার অপরাধের তদন্ত করেছে, যা গত বছর ছিল ৩৭১ টি। জ্বালানি, পানি, পরিবহন, স্বাস্থ্য ও টেলিযোগাযোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলো র‍্যানসমওয়্যার হামলার লক্ষ্য হয়ে উঠেছে।

আজ মঙ্গলবার এক সতর্কবার্তায় রিচার্ড হর্ন বলেন, যুক্তরাজ্যের সাইবার পরিসরে অপরাধমূলক কাজ অনেক বেড়ে গিয়েছে। ধরনেও এসেছে পরিবর্তন। প্রযুক্তির উন্নয়নের সুযোগ নিয়ে সাইবার জগত ধ্বংসের চেষ্টায় লিপ্ত আছে আমাদের প্রতিপক্ষরা।

ব্রিটেনের গোয়েন্দা সংস্থা জিসিএইচকিউর অংশ এনসিএসসি। সংস্থাটির সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জানা যায়, চলতি বছর র‍্যানসমওয়্যার নিয়ে যত রিপোর্ট এসেছে, তার মধ্যে বেশির ভাগ—শিক্ষা, উৎপাদন, তথ্যপ্রযুক্তি, আইন, দাতব্য সংস্থা ও নির্মাণ খাতের। কম্পিউটার বা অন্যান্য ডিভাইস থেকে, অননুমোদিত, গোপন ডেটা স্থানান্তরের ঘটনা ৩৪৭টি এবং ২০টি ছিল র‍্যানসমওয়্যারজনিত। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ৫৪২টি সাইবার হামলার সতর্কতা এবং প্রতিরোধজনিত পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ সংখ্যা গত বছরের (২৫৮) দ্বিগুণেরও বেশি।

এনসিএসসি জানায়, সাইবার অপরাধীরা তাদের টার্গেটের আইটি সিস্টেম পঙ্গু করে দেয়। গোপন ডেটা চুরি করে। পরে তারা চুরি হওয়া ডেটা ফেরত দেওয়ার জন্য বিটকয়েনের মাধ্যমে মুক্তিপণ দাবি করে। সম্প্রতি ব্রিটিশ লাইব্রেরি এবং দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে থাকা হাসপাতালগুলোর রক্ত পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা সিনোভিস নামক প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলা চালানো হয়।

সাইবার প্রধান সতর্ক করে বলেন, হ্যাকাররা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সুযোগ নিয়ে আরও উন্নত সাইবার আক্রমণ চালাতে পারে। হামলার ঝুঁকির তীব্রতা ব্যাপকভাবে অবমূল্যায়িত হচ্ছে বলে মনে করছি আমরা। কোনো রাষ্ট্রের বা অপরাধীদের সাইবার হামলা হুমকির মাত্রা নিয়ে না ভেবে সন্তুষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই।

সাইবার প্রধান আরও বলেন, রাশিয়ার ’আগ্রাসন ও বেপরোয়া আচরণ’ এবং চীনের ’অত্যন্ত উন্নত’ প্রযুক্তির ব্যবহার করে যুক্তরাজ্যে সাইবার হামলার ঘটনা তিন গুণ বেড়েছে। তাঁরা অন্য দেশের ওপর প্রভাব বিস্তার করার উচ্চাকাঙ্ক্ষা লালন করে।

এনসিএসসির প্রতিবেদনে আরও সতর্ক করা হয়েছে, ইরান যুক্তরাজ্যে হামলা চালাতে সাইবার সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় নিশ্চিতভাবে উত্তর কোরিয়ার কর্মীদের টার্গেটে পরিণত হচ্ছে। উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার করে রাজস্ব সংগ্রহ করছে এবং পিয়ংইয়ংয়ের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং সামরিক সক্ষমতা উন্নত করার জন্য প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত ডেটা চুরির চেষ্টা করছে।

গত সপ্তাহে দেশটির ক্যাবিনেট মন্ত্রী প্যাট ম্যাকফ্যাডেন সতর্ক করে বলেন, রাশিয়া সাইবার হামলার মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের পাওয়ার গ্রিড বন্ধ করে লাখ লাখ মানুষকে অন্ধকারে ঠেলে দিতে পারে। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির মতে, রাশিয়ার একটি সাইবার অপরাধী দল ইভিল কর্প রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার নির্দেশে ন্যাটো দেশগুলোর বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়েছে।

যুক্তরাজ্যের সরকারি—বেসরকারি সংগঠনগুলোকে সতর্ক করে সাইবার প্রধান হর্ন বলেন, ’এনসিএসসির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আমাকে সবচেয়ে বেশি কাজ করতে হয়েছে—আমাদের সামনে থাকা ঝুঁকি এবং প্রতিরোধ ক্ষমতার মধ্যে ক্রমবর্ধমান পার্থক্য নিয়ে। এটা স্পষ্ট যে প্রতিপক্ষদের থেকে এগিয়ে থাকতে হলে আমাদের কাজের গতি বাড়াতে হবে।’

যুক্তরাজ্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি সংস্থাগুলোর জন্য সাইবার হুমকির ব্যাপকতা সম্পর্কে ’জোরালো সতর্কতা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এনসিএসসি প্রধান রিচার্ড হর্ন। সারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে অধ্যাপক অ্যালান উডওয়ার্ড বলেন, এনসিএসসি সরকারি—বেসরকারি সতর্ক করছে যেন তারা ’অমনোযোগী’ না হয়। সরকার এখন একটি জোরালো সতর্কতা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে মনে হচ্ছে এখনো সবাই এই সতর্কবার্তাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত