Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

বাংলাদেশ হকিতে জিমির বিকল্প অনেকেই আছে

বাংলাদেশ হকি দলের কোচ আ ন ম মামুন উর রশিদ। ছবি: সংগৃহীত

আগামী এপ্রিলে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় হবে এশিয়ান হকি ফেডারেশন (এএইচএফ) কাপ। তা সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচের পদে ফিরিয়ে আনা হয়েছে আ ন ম মামুন উর রশিদকে। আজকের পত্রিকার সঙ্গে নিজের লক্ষ্য ও হকির সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনোয়ার সোহাগ

প্রশ্ন: ৯ বছর পর কোচ হিসেবে জাতীয় দলে ফিরতে পেরে কেমন লাগছে?

আ ন ম মামুন উর রশিদ: জাতীয় দলে কাজ করাটা সম্মান ও গৌরবের বিষয়ে। ২০১৫ সালে জাতীয় দলে কাজ করার পর চার বছর বিভিন্ন পর্যায়ে কোচিং করিয়েছি। জাতীয় দলে এখন ফিরে এসে ভালোই লাগছে। শুধু এএইচএফ কাপের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন: এএইচএফ কাপে গত চার আসরের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। দুই মাস আপনার জন্য কম সময় হয়ে গেল না?

মামুন: আসলে ফেডারেশনও দেখতে চাচ্ছে, কোচ হিসেবে আমি কেমন পারফর্ম করি। পেশাদারত্বের দিক থেকে যদি দেখি, কোচের জবাবদিহি বা পারফরম্যান্সেরও একটা বিষয় থাকে। এটা চ্যালেঞ্জ আমার জন্য। আগে যারা কাজ করেছে, তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আমি যদি চ্যাম্পিয়ন হতে না পারি, তাহলে এটা আমার ব্যর্থতা। আশা করি, ভালো রেজাল্ট আনব। তখন হয়তো ওনারা ভবিষ্যতের জন্য চিন্তা করবে।

প্রশ্ন: সার্চ কমিটি আপনাকে ডাকার পর হকি অঙ্গনে অসন্তোষ দেখা গিয়েছিল। কারণ কী?

মামুন: আমার কোনো মন্তব্য নেই। এটা যারা করেছে, তারা বলতে পারবে। আমি দেখেছি, আমাকে কেন ডেকেছে, এ নিয়ে অনেকে মন্তব্য করেছে। কিন্তু আমি তো স্বপ্রণোদিত হয়ে যাইনি। সার্চ কমিটি ডাকায় গিয়েছি।

প্রশ্ন: ফেডারেশনের কাছে আপনার পরিকল্পনাগুলো কী ছিল?

মামুন: জাতীয় দলের ম্যাচগুলো আমি নিয়মিত দেখি, বিভিন্ন অ্যানালিসিস করি। খেলোয়াড়দের সম্পর্কে আমার ধারণা আছে। সেটা বিচার করেই আমি হকির ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরেছি। ফেডারেশনের কী চাওয়া থাকতে পারে, সেটাও জানতে চেয়েছি। খেলোয়াড়দের ইনডিভিজুয়াল প্রোফাইল করা উচিত, ফিডব্যাক দেওয়া উচিত, মোটিভেশনাল কাজ করা উচিত। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ আরও ভালো কী করতে পারে, এই জিনিসটা আমরা তাদের দেখিয়েছি।

প্রশ্ন: ইতিবাচক-নেতিবাচক দিকগুলো আসলে কোথায়?

মামুন: ইতিবাচক দিক হলো, আমাদের খেলোয়াড়েরা খুবই প্রতিভাবান। তাদের কোনো ঘাটতি দেখি না। তবে তাদের ম্যাচ এক্সপোজার কম। তারা খুব বেশি ম্যাচ খেলে না। একটা টুর্নামেন্ট যখন হয়, তখন একটি ক্যাম্প হয়। সেই ক্যাম্প থেকেই সরাসরি খেলতে যায়। এটা একটা নেতিবাচক দিক। ক্যাম্পভিত্তিক জাতীয় দল না করে, ক্যাম্পের পেছনে যে খরচ হয়, তা দিয়ে কিন্তু আমরা বাইরে কিছু ম্যাচ খেলতে পারি। এক মাস ক্যাম্প করার চেয়ে ম্যাচ খেলা ডাবল বেনিফিটের।

প্রশ্ন: জাতীয় দলে আপনার আসা-যাওয়ার মাঝে লম্বা সময় কেটে গেছে। এই সময়ে হকিতে ঠিক কতটা বদল এসেছে?

মামুন: এই ৯ বছরে আগের চেয়ে অনেক ভালো মানের খেলোয়াড় এসেছে। হকিতে খুব ভালো একটা সময় যাচ্ছে। জুনিয়ররা বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। এটা কিন্তু সিনিয়রদের কাছে অনুপ্রেরণা হতে পারে। সব খেলোয়াড়ই প্রতিভাবান। তারা মন থেকে চায় ভালো ফল করার জন্য। সে ক্ষেত্রে আমি বলব, খেলোয়াড়দের মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতি আগের চেয়ে বেশ ভালো। তবে হ্যাঁ, হকি নিয়মিত মাঠে ছিল না। এটা সাংগঠনিক সমস্যা।দুই বছর আগে কিন্তু ফ্র‍্যাঞ্চাইজি লিগ হয়েছিল, তারপর আর হয়নি। ওটা কিন্তু একটা বড় প্ল্যাটফর্ম। বছরে রেগুলার একটা লিগ ও চ্যাম্পিয়নস ট্রফি মিলিয়ে যদি ৫-৬টা টুর্নামেন্ট করা যায়, তাহলে খেলোয়াড়েরা খুশি থাকে। কারণ, তাদের রুটি-রুজিরও একটা ব্যবস্থা হয় এবং খেলারও স্পৃহা আসে।

প্রশ্ন: দলের ভেতর সিন্ডিকেট নিয়ে আগেও কথা উঠেছে। তা আপনার চোখে পড়েছে?

মামুন: আমি দলে গ্রুপিংকে কখনোই প্রশ্রয় দিই না। আমি ডিসিপ্লিনে বিশ্বাসী। জুনিয়র হোক বা সিনিয়র খেলোয়াড়—তাকে নীতি অনুযায়ী চলতে হবে। ফেডারেশন থেকে খেলোয়াড়দের একটা গাইডলাইন দেওয়া হবে। সেটা আমার জন্য ভালো হবে। এতে করে খেলোয়াড়েরা টিমের প্রতি ফোকাস থাকবে।

প্রশ্ন: হকির অন্যতম বড় তারকা বলা হয় রাসেল মাহমুদ জিমিকে। এএইচএফ কাপের ফিটনেস ক্যাম্পে তাঁকে না ডাকার পেছনে কারণ কী?

মামুন: এটা ফেডারেশনের সিদ্ধান্ত। যেহেতু আমি ফেডারেশনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। তাই এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না। ৬২ জনের তালিকাটা ফেডারেশন থেকে হয়েছে। আমার যে কোচিং দর্শন, সেখানে ইনডিভিজুয়াল খেলোয়াড়ের কোনো গুরুত্ব নেই। এখানে নির্দিষ্ট কোনো খেলোয়াড়কে গুরুত্ব দিলে বাকি খেলোয়াড়দের ওপর প্রভাব পড়ে, দলের ভেতর একটা বৈষম্য তৈরি হয়। টিম ইউনিটিকে আমি বেশি গুরুত্ব দিই।

প্রশ্ন: জিমি না থাকায় দলে শূন্যতা তৈরি হবে?

মামুন: আমি তা মনে করি না। জিমির বিকল্প এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে। এক-দুজন নয়, অনেকে আছে তার জায়গা পূরণের জন্য। হকি দলীয় খেলা, যে কেউ যেকোনো পজিশনে খেলতে পারে। আমি একজন সাবেক মিডফিল্ডার বা ফরোয়ার্ড হিসেবে অনেক খেলোয়াড়কে দেখি, যারা ভবিষ্যতে আরও ভালো করবে। কোনো নির্দিষ্ট খেলোয়াড় না থাকলে দলে ব্যাঘাত ঘটবে, তা আমি বিশ্বাস করি না।

প্রশ্ন: হকির সঙ্গে বিশৃঙ্খলা শব্দটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তা হকিকে কতটুকু পিছিয়ে দিয়েছে?

মামুন: অনেক। হকিতে যে নেতিবাচক জিনিসগুলো হয়, এটার বিভিন্ন কারণ আছে। যারা বিভিন্ন ক্লাবের সঙ্গে থাকে, তারাই কিন্তু ফেডারেশনের সঙ্গে জড়িত। দিনশেষে ক্লাবের লোকগুলো ফেডারেশনে গেলে ক্লাবের স্বার্থ দেখে। এখানে স্বার্থের সংঘাত ঘটে। এখানে পরিবর্তন আনা উচিত। ফেডারেশনে ক্লাবের লোকই থাকবে, কিন্তু কাজের ধারা এমনভাবে তৈরি করা উচিত, যেন স্বার্থের সংঘাত না ঘটে। ফেডারেশনের এদিকে নজর দেওয়া উচিত।

প্রশ্ন: হকিকে নিয়মিত মাঠে রাখতে কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?

মামুন: অন্তর্বর্তী সরকার অ্যাডহক কমিটি দিয়েছে। তারা একটা গঠনতন্ত্র তৈরি করছে। ফেডারেশনকে সরকারের জবাবদিহির আওতায় আনতে হলে গঠনতন্ত্রের ভেতরে ফ্র‍্যাঞ্চাইজি লিগ, প্রিমিয়ার লিগ, ফার্স্ট ডিভিশনসহ আরও কিছু টুর্নামেন্ট রাখতে হবে। এগুলো করতেই হবে, না হলে অনুদান কেটে দেওয়া উচিত। তাহলে কিন্তু ফেডারেশন বাধ্য টুর্নামেন্টগুলো করতে।

প্রশ্ন: সম্প্রতি জুনিয়র হকি বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ...

মামুন: বাংলাদেশের জন্য এটা একটা মাইলফলক। এদেরকে এখনই প্রিপারেশনে নেওয়া উচিত। তাদের ইউরোপে খেলানো উচিত। বিশ্বকাপে সব মহাদেশ থেকেই দল আসবে। গ্রুপে বাংলাদেশের সঙ্গে কোন কোন দল পড়বে, আমরা জানি না। দলটার প্রতি এখনই ফোকাস দেওয়া উচিত। যেহেতু একটা সুযোগ এসেছে বিশ্বমঞ্চে পারফর্ম করার। এই ছেলেগুলো খুবই প্রতিভাবান। আমার ক্যাম্পে তারা প্রায় সবাই আছে। দলে জায়গা পেতে হলে তাদের সিনিয়র খেলোয়াড়দের চ্যালেঞ্জ জানাতে হবে। তাদের বলেছি, তোমরা পারফর্ম করো, তোমাদের ফ্রিডম আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চকরিয়া থানার ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজের আগেই বের হয়ে যেতে বলা হয় জেলেনস্কিকে

‘আমাদের অনুমতি ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করলে থানা ঘেরাও করব’, সরকারি কর্মকর্তার বক্তব্য ভাইরাল

সৈয়দ জামিলের অভিযোগের জবাবে যা লিখলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা

এনসিপির কর্মীদের ঢাকায় আনতে সরকারের বাস রিকুইজিশন, সমালোচনার ঝড়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত