Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

তারাও আমাকে স্যালুট দেবে

Thumbnail Image

মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে দুর্দান্ত বোলিং করে আলোচনার কেন্দ্রে ইবাদত হোসেন। ম্যাচে ৭ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা পুরস্কার পাওয়া এই পেসারের সঙ্গে গতকাল ফোনে কথা বলেন রানা আব্বাস। কথা হয়েছে তাঁর পারফরম্যান্স, তাঁকে নিয়ে সমালোচনা, ‘স্যালুট’ উদযাপনসহ নানা বিষয়ে।

প্রশ্ন: নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের প্রথম জয়, আর সেই জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে ম্যাচসেরা হওয়া—অনুমিত প্রশ্ন, এই মুহূর্তটা কাটছে কেমন? 
ইবাদত হোসেন: অবশ্যই ভালো লাগছে। দেখুন ক্যারিয়ারটা এমনভাবে আমার শুরু হয়েছে...চাই না আমার মতো ক্যারিয়ার আর কারও হোক।

প্রশ্ন: কেন এমন উপলব্ধি হচ্ছে? 
ইবাদত: দেশের হয়ে যারা খেলবে, তাদের ক্যারিয়ার আমার চেয়েও ভালো হোক। অভিষেকেই ৫ উইকেট, ৭ উইকেট, ১০ উইকেট মারবে। সেটা অনেক বেশি ভালো লাগবে। আমার ক্ষেত্রে হয়েছে কী, ছোট ছোট সাফল্য যেমন—অনেক কষ্ট করে এক-দুইটা করে উইকেট পাওয়া, এটা অনেক আনন্দের। আজ (গতকাল) এটা নিয়ে কোচের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তাঁকে বলছিলাম, আমি একটা উইকেটও সহজে পাইনি। তিনি আমাকে বলছেন, ওয়েলকাম টু টেস্ট ক্রিকেট। ফলে এটা মোটেও সহজ ছিল না।

প্রশ্ন: আপনাকে লম্বা সময় একটা ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হলো। ক্যারিয়ারের ১১তম টেস্ট এসে অবশেষে দুর্দান্ত ইবাদতকে দেখা গেল। 
ইবাদত: এ কারণেই বেশি আনন্দ লাগছে। ১০-১২টা ম্যাচের পর আপনি যখন সফল হবেন, তখন বুঝলেন, শিখতে শিখতেই আপনি পেলেন। এসেই যদি ইনিংসে ৫-৭ উইকেট পেয়ে যেতাম, তাহলে মনে হতো আমার পুরোপুরি শেখা হয়নি। ছোট ছোট ধাপে শিখতে শিখতে আজ এ পর্যায়ে এলাম, তাতে মনে হচ্ছে, কিছু শিখে এটা পেয়েছি। চেষ্টা করব, এটার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে। 

প্রশ্ন: গত তিন বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারে সমালোচনাই বেশি সইতে হয়েছে আপনাকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কত ট্রলিং হয়েছে। এ সময় মানসিকভাবে শক্ত থেকে নিজের কাজ করে যাওয়া কতটা কঠিন? 
ইবাদত: প্রথমে চিন্তা করতে হবে, আপনাকে নিয়ে যে কথা বলছে, সে কে? সে কি ওই বিষয়ে ভালো জানে? কতটা জানে? এসব পরিমাপ করতে হবে। এসব আমি কানে নিই না। শুধু আমি কেন, আমার সতীর্থদের কেউই এসব নেয় না। ক্রিকেট বোর্ডও নেয় না। ক্রিকেট বোর্ড যদি কানে নিত, তাহলে আমাকে দলে রাখত না। নির্বাচক প্যানেলে যাঁরা আছেন, সবাই ক্রিকেট খেলে এসেছেন। যিনি টিম ডিরেক্টর, তিনিও ক্রিকেট খেলে এসেছেন। তাঁরা তাই ভালো জানেন। যারা ভালো বুঝবে, তারা অহেতুক সমালোচনা করবে না। অজ্ঞরাই শুধু করবে। আমাকে নিয়ে কেউ যখন কথা বলছে, তাই বোঝার চেষ্টা করি, সে বিষয়টা কতটা জানে। আরেকটি বিষয়, দেশ বা পরিবারকে বাইরে কীভাবে উপস্থাপন করবেন, এটা আপনার ব্যাপার। আমি আমার দেশ বা খেলোয়াড়দের নিজের পরিবারের সদস্য মনে করি। সেই সদস্যদের যদি অহেতুক হেয় করতে চাই, করতে পারেন। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি তা পারি না। 

প্রশ্ন: এই টেস্টে আপনার বোলিংটা নিয়ে যদি জানতে চাই, কোন সূত্র ধরে এই সাফল্য পাওয়া? 
ইবাদত: সুজন স্যার (খালেদ মাহমুদ), মুশফিক ভাই, আমাদের অধিনায়ক (মুমিনুল হক) যেভাবে আমাদের দলটা এক সুতোয় গেঁথেছেন—দুর্দান্ত। এখানে আসার পর সুজন স্যার প্রথম মিটিংয়ে বলেছিলেন, সর্বশেষ ১১ বছর কেউ (এশিয়ার) এখানে কোনো টেস্ট ম্যাচ জিততে পারিনি। বিষয়টি নিয়ে আমি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানেও বলেছি। আমার ভাঙা ইংরেজি সবাই কতটা বুঝতে পেরেছে, কে জানে (হাসি)! তবে মনের অনুভূতিটা বলার চেষ্টা করেছি। যেটা বলছিলাম, এখানে সর্বশেষ ১১ বছর (কোনো এশিয়ার দল) জেতেনি। এখানে আসার পর টিম ডিরেক্টর বলছেন, আমরা সবাই হাত ওঠাব। কাউকে না কাউকে জিততে হবে। আগে কেউ জেতেনি বলে কখনোই জিতব না? সবাই হাত তোলো, প্রতিজ্ঞা করো, আমরা এই দল নিউজিল্যান্ডকে হারাব। আমরাই ইতিহাস সৃষ্টি করব। বিশ্বাস করুন, এই কথাটা ভেতরে এমনভাবে স্পর্শ করেছে। তখন মনে হয়েছে, হয় এটাই আমার ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলব, তবু দলকে জিতিয়েই ছাড়ব। বিশ্বাস করুন, লাঞ্চের আগে দলকে জিতিয়েই ফিরেছি। 

প্রশ্ন: সত্যি শিহরণ জাগানো বিষয়...। 
ইবাদত: এই টেস্টে প্রতিটি সেশন, প্রতিটা দিনের খেলা দেখুন। আমরা যারা খেলেছি, যারা একাদশের বাইরে ছিল—প্রত্যেকের চেষ্টা ছিল। সবার বিশ্বাস ছিল, এই টেস্ট ম্যাচটা আমরা জিতব...এটা শুরু মাত্র। আপনার সব সহকর্মীকে বলে দিতে পারেন, যেদিন দেশের ১৬ কোটি মানুষ একসঙ্গে বিশ্বাস করবে—বাংলাদেশ দল জিতবে, সেদিন আমাদের কেউ আটকাতে পারবে না। আমরা ম্যাচ জিতব। প্রতিটা ম্যাচ জিতব। আমাদের নিয়ে যারা মজা করে, তাদেরও বলে দিতে পারেন। বিষয়টা দেখুন, ওরা (নিউজিল্যান্ড) টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ বিজয়ী দল। ওদেরকে ওদের মাটিতে হারানো, ইটজ নট আ জোক। আমরা যদি ওদের মাটিতে হারাতে পারি; তাহলে ইংল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তানের মাটিতেও জিততে পারব ইনশা আল্লাহ। এই বিশ্বাসটা শুধু আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যেই নয়, দেশের সবার মধ্যেই থাকতে হবে। যেদিন ১৬ কোটি মানুষ একসঙ্গে বিশ্বাস করবে, বাংলাদেশ সবাইকে হারাতে পারে, সেদিন আমরা সবাইকে হারাতে পারব। বাংলাদেশের ক্রিকেট ধারাবাহিক জিতবেই ইনশা আল্লাহ। 

প্রশ্ন: উইকেট পেলেই স্যালুট দেন, আপনার ট্রেডমার্ক উদযাপনের বিষয়টা শুনতে চাই। 
ইবাদত: আমাকে যারা আপনারা চেনেন, জানেন, আমি বিমানবাহিনীর একজন সদস্য। গর্ববোধ করি এই বাহিনীর সদস্য হিসেবে। একটু আগে চিফ অব এয়ার স্টাফের সঙ্গে কথা হলো। তিনি অনেক প্রশংসা করলেন। আসলে বিমানবাহিনী থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে প্রতিনিধিত্ব করা—দুটোই আমার জন্য অনেক আনন্দের আর গর্বের বিষয়। এটা ভাষায় বোঝাতে পারব না। বিমানবাহিনী আমাকে ট্রেনিং করিয়েছে। নিখুঁতভাবে কীভাবে স্যালুট দিতে হয়, আমি সেটা জানি। এটা বিমানবাহিনীর জন্যও অনেক গৌরবের ব্যাপার। 

প্রশ্ন: এখন তো সবাই আপনাকে স্যালুট দিচ্ছে! 
ইবাদত: (হেসে) ম্যাচের পর সতীর্থরা আমাকে বলছে, তারাও আমাকে স্যালুট দেবে। ফেসবুকে এমন একটা ছবি পোস্ট করার পর এখন অনেকেই দেখি স্যালুট দিচ্ছে! এটা আমার জন্য অনেক বড় ব্যাপার। 

প্রশ্ন: ভবিষ্যতে আপনার কাছ থেকে নিয়মিত স্যালুট দেখতে চাইবে বাংলাদেশ দল। এ ব্যাপারে কতটা আশাবাদী? 
ইবাদত: যেটা বলেছি, যত দিন ১৬ কোটি মানুষ আমাদের সঙ্গে থাকবে, আমাদের কেউ হারাতে পারবে না ইনশা আল্লাহ। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত